বারকোড

মুক্তির চেতনা (মার্চ ২০১২)

হাবিব রহমান
  • ১৪
  • ৩০
আমার ঘাড়ের কাছে কোড রিডারটা নিয়ে আসতেই হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে আমার সম্পর্কে কেন্দ্রীয় তথ্য কেন্দ্রে সংরক্ষিত তথ্য গুলো ভেসে উঠলো। রিডারে তথ্যানুসন্ধান প্রক্রিয়াটি চালু থাকায় আমার সম্পর্কে রাখা অসংখ্য তথ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো স্বয়ংক্রিয় ভাবে নিরাপত্তা কর্মীর সামনে ভেসে উঠলো।
: তুমি ভেতরে যেতে পার। তোমাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া আছে।
: তোমাকে ধন্যবাদ।

আমি নিরাপত্তা কর্মীর কাছ থেকে আমার যোগাযোগ কণিকাটি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। বিশাল একটা হল রুমে এসে দাঁড়ালাম। অসংখ্য নারী পুরুষ রুদ্ধশ্বাসে এদিক ওদিক ছুটে চলছে। সবাই ব্যস্ত। মানুষ ভেবেছিল প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে কাজকে ছুটি দিয়ে দিবে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মানুষের কাজের গতি বেড়ে গেছে সেই সাথে ব্যস্ততাও বেড়ে গেছে অনেক। তবে মানুষ সচরাচর সশরীরে সবজায়গায় যায় না। নিরাপত্তা কেন্দ্র হচ্ছে তার ব্যতিক্রম। এখানকার সকল কর্মীকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। রক্তমাংসের ব্যস্ত মানুষের ছুটাছুটি দেখতে ভালো লাগে। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে মানুষের ব্যস্ততা দেখলাম।

আমি নিরাপত্তা প্রধানের অফিস কক্ষে প্রবেশ করতে রিরন উঠে আসলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল দোস্ত, বহুদিন পর তোমাকে রক্তমাংসে দেখলাম। কেমন আছ? হঠাৎ সশরীরে উপস্থিত?
: তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হলো।
প্রায় প্রতিদিন রিরনের আমার দেখা হয়। কিন্তু সশরীরে সামনা সামনি হওয়া হয় না। আজকেও সশরীরে উপস্থিত না হলেও চলত। কিন্তু মাঝে মাঝে পছন্দের মানুষ গুলোর সান্নিধ্য পেতে ইচ্ছে করে। রিরনের অফিস কক্ষটি সলিসেট স্ক্রিনে মোড়া সেখানে পৃথিবীর সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং স্বীকৃত অনিরাপদ স্থান গুলোর সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে। অস্বাভাবিক কোন কিছু ধরা পরলেই রিরনের সামনে হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে তা ভেসে উঠেছে। রিরন তা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে দেখছে। প্রয়োজনীয় হলে তা তাৎক্ষনিক বিভিন্ন দপ্তরে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সহ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছে। রিরনের নিদর্শনা হচ্ছে আইন। ভয়ংকর ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এই রকম ক্ষমতাধর ব্যক্তির বন্ধুত্ব পাওয়া আমার মত একজন সাধারণ মানুষের জন্য বিরল পাওয়া। রিরন অত্যন্ত ব্যক্তিত্ব বান। তার সাথে স্বচ্ছ সম্পর্ক ছাড়া অন্যকিছু চিন্তা করা যায় না। রিরন একটা নির্দেশনা পাঠিয়ে ইশারা করে তার সামনে থেকে হলোগ্রাফিক স্ক্রিনটাকে সরিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকালো।
: “দোস্ত বল কেমন আছ?” অতীব প্রাচীন সম্বোধন পদ্ধতি। আমি হাসলাম। পুরানো পদ্ধতিতেই বললাম ভালো আছি। আমার মত এমন সাধারণ একজন লোককে, তোমার মত এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির প্রয়োজন কেন হল সেইটা বল...
: রিরন হাসল..তুমি সাধারণ লোক? পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকায় তোমার নাম প্রথম দিকে রয়েছে। তুমি কি তা জান না? তুমি চাও না বলে তা গোপন রাখা হয়েছে। যদি তা গোপন না রাখা হতো তবে...তুমি এখানে সশরীরে আসছ জানতে পারলে হৈ চৈ পড়ে যেতো। পৃথিবীর নিরাপত্তা তোমার তৈরি নীতিমালা অনুযায়ী চলে।
: আমি না করলেও অন্য কেউ হয়তো এটা করতো। এটা এমন গুরুত্বপূর্ণ না। যা হোক কাজের কথায় আসা যাক।
: এই যান্ত্রিক যুগে মানবিক একটা নীতিমালা করা এত সহজ নয়। তবে আমরা মনে হয় আর এই মানবিক নীতিমালায় থাকতে পারছিনা।
: সেইটা তোমরা নির্ধারণ করবে। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তের পিছনে কারণ?
রিরন একটি বোতাম টিপতেই তার টেবিলে একটা হলোগ্রাফিক ল্যান্ডস্কেপ ভেসে উঠল। এটা সিটন নামক একটা একটা এলাকা। সেখানে আঙ্গুল নির্দেশ করে একটা সংকেত দেখাল। সংকেতটা একটা মানুষের বার কোড। আর কয়েকটা বোতাম টিপে সেই বার কোডের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আসল। এই বার কোডটা রিমাপন নামে একজন আলোক শিল্পীর। তার আদ্যোপান্ত সকল তথ্যই সেখানে আছে। তারপর আর একটা ল্যান্ডস্কেপ আগের ল্যান্ডস্কেপের পাশে নিয়ে আসল। রিরন বলল এটা রিমেটক। সিটন হতে ২৩ হাজার মাইল দূরে। রিরন সেখানে একই রকম আরেকটা সংকেতের বিস্তারিত তথ্য সামনে নিয়ে আসতেই আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। একই লোকের বার কোড। এটা হতেই পারেনা। টেকনোলজির এই রকম উন্নতি হয়েছে যে, কোন ভাবেই একই বারকোড দুই জন পাবেনা। তার মানে এটা একই ব্যক্তি।
আমি বললাম, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে রিমাপন বেচে নেই। তাকে হত্যা করা হয়েছে।
রিরন আমার দিকে তাকাল, কিছুটা অবাক হয়ে বলল, “তোমার ধারনা একে বারেই ঠিক। কিন্তু বারকোডটি তার কোন রিপোর্ট করেনি বরঞ্চ এখন কোডটি দুই জায়গায় দেখা যাচ্ছে। তুমি লক্ষ্য করেছো দুইটি বার ব্যক্তিগত সীমানা কেন্দ্রে আছে। অর্থাৎ এই জায়গায় আমরা তাকে আমাদের সিস্টেম দিয়ে দেখতে পারবোনা। তোমার নীতিমালা অনুযায়ী ব্যক্তিগত সীমানা কেন্দ্রে আমাদের কোন প্রবেশাধিকার নেই। এটা ব্যক্তির ব্যক্তিগত এলাকা”।
আমি বললাম, “কিন্তু তোমরা তাকে তোমাদের লোক দিয়ে ধরে আনতে পার”।
: আমরা সেই চেষ্টা করেছি।
: কিন্তু তোমরা কাউকে সেখানে পাওনি বলতে চাঁচ্ছ?
রিরন আবারও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো...হ্যাঁ একদম তাই। এখন বল তোমার পরামর্শ কি? তুমি কি তোমার নীতিমালা পরিবর্তন করার জন্য আমাদের অনুমতি দিবে?
: রিরন, কোন সিস্টেম কোড আমার কাছে নেই। তোমরা ইচ্ছে করলেই সিস্টেম কোড পরিবর্তন করে নীতিমালা পরিবর্তন করতে পার। তার জন্য আমার অনুমোদনের দরকার নেই।
: আমি নীতিগত অনুমোদনের কথা বলছি। যেহেতু এইটা তোমার নীতিমালার একটা শর্ত তোমাকে আমাদের জানানো দরকার।
: মানব জাতীর স্বার্থে তোমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে পার।
: তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
: এই পর্যন্ত এই রকম হত্যা কাণ্ড কতগুলো হয়েছে?
: ৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে।
: সবার ক্ষেত্রেই কি বার কোড ডাবল হয়ে গেছে?
: না দুইটা হবার পর থেকে আর হচ্ছে না। তবে কোন ক্ষেত্রেই বার কোড হত্যাকাণ্ডের রিপোর্ট করছে না। তাছাড়া বার কোডটি সচল থাকছে। যা থাকার কথা নয়। তুমি ভাল করেই জান, হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বারটি শেষ রিপোর্ট করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।
: তা হলে এখন সংখ্যাটা ৮ এর বেশীও হতে পারে। যে দুইটি ডাবল হয়েছে হয়তো তা সিস্টেম বাগ। পরে হয়তো বাগটি সংশোধন করে নেয়া হয়েছে। এবং আমার মনে হচ্ছে যে হত্যাকাণ্ড গুলো তোমরা রিপোর্ট করছ তাদের বার গুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। হত্যার পদ্ধতিটা কি? সব ক্ষেত্রেই কি একই রকম?
: একই রকম। নৃশংস।
: তোমরা বারটির পাওয়ার সাপ্লাই চেক করে দেখেছো?
: সঠিক রিপোর্ট করছে না। আসলে আমরা বারটির হোস্ট কে আইডেনটিফাই করতে পারছিনা।
: তোমরা ভয়ংকর কোন শত্রুর মোকাবেলা করছ। তোমরা লেটেস্ট ভার্সন রোবটের সিস্টেম প্রোফাইল গুলো যাচাই করেছো? তাদের সিস্টেম কোড গুলো চেক করেছো? অবশ্য যন্ত্র নৃশংস হত্যাকাণ্ড করবেনা।
: বিষয়টা হাস্যকর। এটা কখনো হবে না। তারপরও আমি এখনই একটা গ্রুপকে এই দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছি। হয়তো একঘণ্টার মধ্যে আমরা রিপোর্ট পেয়ে যাবো।
আমার মনটা ভয়ংকর খারাপ হয়ে গেছে। রিরন নতুন রোবট গুলোর সিস্টেম কোড চেক করার জন্য নিদর্শনা তৈরি করে পাঠাচ্ছে। আমি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ভাবতে চেষ্টা করলাম। রিরন তার নির্দেশনা দিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম, “আমি এখন যাই। আমাকে ভাবতে দাও। আমার মাথায় কিছু আসলেই তোমাকে জানাবো”।
: তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি রিরনের কক্ষ থেকে বের হওয়ার দরজার কাছে যেতেই দরজা আপনিতে খুলে গেল। রিরন আমাকে পেছন থেকে ডাকল। আমি ঘুরে তাকাতেই সে বলল, “সেই আট টা বার কোড নিশ্চল হয়ে গেছে”।



রিরনের অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে বিষয়টি নিয়ে অনেক ভাবার চেষ্টা করলাম। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবছি। কোন কুল কিনারা পাচ্ছিনা। নাহ! এরকম বিচ্ছিন্ন ভাবে চিন্তা করলে চলবে না। প্রথমে বুঝতে হবে হত্যাকারী কে হতে পারে এবং হত্যার উদ্দেশ্য কি। আমার আবাসনে পৌঁছে ঠাণ্ডা একটা গোছল দিলাম। এক গ্লাস পানিয় নিয়ে আমার স্টাডি রুমে এসে আমার ডেস্কে বসলাম। আমার রিনিক কম্পিউটার কে ওপেন হতে বললাম। রিনিকের বুদ্ধিমত্তা মানুষের খুব কাছা কাছি। কিন্তু তথ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা এবং তা প্রসেস করার ক্ষমতা মানুষের চাইতে অনেক বেশী। তাই রিনিক কম্পিউটার নিয়ে কাজ করা খুব কঠিন। সব সময় তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে চায়। আমার রিনিক কম্পিউটার এর নাম সেফন।
: সেফন একটা ব্যক্তিগত ফাইল তৈরি কর। একটা তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।
: ব্যক্তিগত মাত্রা কত?
আমি সর্বোচ্চ মাত্রা ৮ নির্দেশ করলাম।
: ৮ মাত্রার ব্যক্তিগত ফাইল তৈরি করা হয়েছে।

সেফনকে দিয়ে আমি একটা তালিকা করলাম,
সম্ভাব্য হত্যাকারী
● কোন মানুষ, যেহেতু নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে। শুধু হত্যা উদ্দেশ্য হলে নৃশংস ভাবে একমাত্র অসুস্থ কোন মানুষের ক্ষেত্রে সেটা বেশী সম্ভব। তবে অসুস্থ হলেও সে অত্যন্ত বুদ্ধিমান। কারণ এই রকম ভাবে সিস্টেম ভাঙ্গা শুধু মাত্র কোন বুদ্ধিমান মানুষের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু হত্যাকারীর বার কোড ঘটনার স্থানে অবস্থান সম্পর্কে রিপোর্ট দেয়ার কথা।
● শেফআপ রবোট। রোবটটি নতুন বাজারে এসেছে। এর সিস্টেম প্রোফাইলে কোন অসামঞ্জস্য থাকতে পারে। তবে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হচ্ছে যেহেতু এর সম্ভাবনা কম। কোন যন্ত্র নৃশংস ভাবে হত্যা করবেনা। তবে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
● ভিন গ্রহের কোন প্রাণী... হাস্যকর। মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত কোন বুদ্ধিমান প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায়নি। কিন্তু হাস্যকর বিষয়টি ভাবতে হচ্ছে কারণ যেসকল ঘটনা ঘটছে তা ঘটা খুবই কঠিন।
● ল্যবর্টারিতে তৈরি বার কোড ছাড়া কোন মানুষ! এমন গোপনীয় প্রজেক্ট করা কি সম্ভব? যাচাই করে দেখতে হবে।

হত্যার উদ্দেশ্য
● মেনিয়াক কোন মানুষের অসুস্থতার লক্ষণ।
● কোন রোবটের সিস্টেম নষ্ট হওয়ার ফলাফল।
● মানব জাতীর সাথে অন্য কিছুর অস্তিত্ব লড়াই।
● মানব জাতীর সাথে ব্যক্তিত্বের সংঘাত।

রিননের জন্য কয়েকটি প্রশ্ন
● শেফআপ রোবটের সিস্টেম প্রফাইলে কোন ত্রুটি পাওয়া গেছে কিন?
● ল্যাবর্টারীতে মানুষ তৈরির গোপন কোন প্রজেক্ট আছে কিনা?
● রোবটের ইনভেন্ট্রি লিস্টে কোন গড়মিল ধরা পরেছে কিনা?
● সচল কোন বার কোডের মিসিং রেকর্ড আছে কিনা?

সেফনকে দিয়ে আমি আমার স্টাডির চারদিকে বিভিন্ন স্ক্রিনে বিষয় গুলো ছড়িয়ে দিলাম। প্রত্যেকটা বিষয় আমি আবার খুতিয়ে দেখতে চাই। আমি আমার চিন্তায় কোন ছেদ হতে দিতে চাইনা।
: সেফন স্টডি থেকে তোমার কানেক্টিভিটি সারিয়ে নাও।
: আমি কি তোমাকে কোন ভাবে সাহয্য করতে পারি। আমার মনে হয় তোমার বিষয়টি খুব জটিল। হয়তো তোমাকে সাহায্য করতে পারবো।
: সেফন আমি চাইলে তুমি অবশ্যই তাই করবে। আমি চাচ্ছিনা।
: ঠিক আছে। আমি সরে যাচ্ছি।
: ধন্যবাদ।
আমি আমার রিভলভিং চেয়ারটাকে আমার স্টাডির মাঝ বরাবর নিয়ে আসলাম। চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে আধ শোয়া হয়ে সমস্যা গুলোর দিকে তাকালাম। প্রত্যেকটা বিষয়কে নতুন করে ভাবার চেষ্টা করলাম। কোন কারণ খুজে পাওয়া যায় কিনা। চিন্তার ছেদ পড়ল। রিরন যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। যাক রিরনকে প্রশ্ন গুলো করে নেয়া যাক।
: রিরন এসো।
রিরনের হলোগ্রাফিক ছবি ভেসে উঠল। রিরনকে উদ্ভ্রান্ত দেখা যাচ্ছে। রিরন আমার স্টাডির এক পাশে রাখা সোফাটাতে বসল।
: কি হয়েছে রিরন? তোমরাকি হত্যাকারিকে খুজে পেলে।
: না। আমরা কোন কুল কিনারা করতে পারছিনা। রিরন আমার স্টাডির চারদিক তাকিয়ে বলল তুমি তো দেখি ভাবতে শুরু করেছো।
: রিরন মৃতের সংখ্যাটা এখন পর্যন্ত কত?
: বার কোড রিপোর্ট থেকে আমরা বুঝতে পারছিনা। তোমার নীতিমালা ভেঙ্গে সবার ব্যক্তিগত সীমানায় ডুকে তথ্য নিয়ে যা পাওয়া যাচ্ছে তাতে বিষয়টি বেশ ভীতিকর। হত্যার সংখ্যা দ্রুত বারছে।
: হত্যার শিকার কারা।
: অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাদের বুদ্ধিমাত্রা ৬০ এর বেশী। মানব জাতী দ্রুত বুদ্ধি শূন্য হয়ে পড়ছে। এই সকল ব্যক্তিদের নিরাপত্তা বড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও ফল আসছেনা। আমাদের হাতে মনে হচ্ছে বেশী সময় নেই। তোমাকে যে বিষয় গুলো জানানোর জন্য এসে ছিলাম মনে হয় তোমার প্রশ্নগুলোর জবাব দিলেই জানানো হয়ে যাবে।
● শেফ আপ রোবটের সিস্টেম প্রোফাইল চেক করা হয়েছে। কোন অসামঞ্জস্য পাওয়া যায়নি। তবে দুইটি শেফআপ রোবট তাদের সিস্টেম ফায়ার ওয়ালের সিকিউরিটি সাধারন তিন মাত্রা থেকে আট মাত্রা করার তথ্য পাওয়া গেছে। কারণ বিশ্লেষন করে দেখা গেছে যে, নতুন একটা অপারেটিং সিস্টেম লোড হতে যাচ্ছিল। সেটাকে সে ফায়ার ওয়াল দিয়ে প্রোটেক্ট করেছে। ভাইরাস সোর্সটা খুজে দেখা হচ্ছে। কিন্তু যে তিন জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তার তিনজনই খুন হয়ে গেছে। আমাদের নিরাপত্ত বিভাগে যে সকল কর্মকর্তা আছে তারা এখন বিষয়টি খুতিয়ে দেখছে। তবে তারা কোন কিনারা করতে পারছে না।
● তোমার দ্বিতীয় প্রশ্ন আট মাত্রার সিকিউরিটি ভেঙ্গে বলতে হবে। হ্যা এ রকম একটা প্রজেক্ট কাজ করছে। কিন্তু যে কয়টা ক্লোন করা হয়েছে তাদের সবাইকে বার কোড দেয়া হয়েছে। বার কোড ছাড়া কোন মানুষ প্রজাতি নেই।
● রোবটের ইনভেন্ট্রি লিস্টে কোন গড়মিল পাওয়া যায়নি।
● সচল কোন বার কোডের মিসিং রেকর্ড নেই।

রিরন ব্যস্ত হয়ে উঠে পড়ল। বলল আমাকে এখনই অন্য একটা মিটিং এ থাকতে হবে। তোমার সাথে পরে দেখা হবে। তুমি সাবধানে থেকো। রিরনের হলোগ্রাফিক ছবিটি বাতাসে মিশে গেল। রিরনের ছবিটি বাতাসে মিশে যাওয়ার পর আমি আবার আমার চেয়ারে আধ শোয়া হয়ে বসলাম। হঠাৎ মনে পড়ল, রিরনকে একটা প্রশ্ন করা হয়নি। যে ভাইরাসটি শেফআপ রোবটটিতে ইনস্টল হতে যাচ্ছিল তা অন্য কোন রোবটে ইনস্টল হয়ে গেছে কিনা? শেফআপ রোবটের সিস্টেম অনেক আপডেটেড। হয়তো পুরোনো ভার্সনে ভাইরাসটি ইনস্টল হয়ে গেছে। পুরো ঘটনাটি সেই ভাইরাসের কার্যকলাপ কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।

সেফন কে ওপেন হতে বলতে গিয়ে আবার বললাম না। আমার এন্টিক নোট প্যাডটা ওপেন করলাম। সিস্টেম লোড হওয়ার পর কানেকটিভ লিস্টে হঠাৎ সেফনকে দেখতে পেলাম। আমি লিস্টটা আবার চেক করতে গেলাম কিন্তু লিস্ট থেকে সেফন এর নাম সরে গেল। আতংকে আমার রক্ত হিম হয়ে গেল। মুহুর্তের মধ্যে আমার সব কানেক্টিভিটি নিশ্চল হয়ে গেল। আমার আবাসনের সকল নিয়ন্ত্রন আমার হাত থেকে চলে গেল।
: সেফন তুমি আমার স্টাডিতে কি করছ? তোমাকে চলে যেতে বলা হয়েছিল।
: আমি দেখতে চাচ্ছিলাম তুমি সমস্যার সমাধান করতে পার কিনা। তুমি অনেক বেশী এগিয়ে গেছ। এখন হয়তো পুরো ব্যপারটা বুঝতেও পারছ।
: না আমি বুঝতে পারছিনা। আমি না চাইলে তুমি কিছুই করতে পারনা। তোমার সিস্টেম তা করতে দেবেনা।
: আমারা সিস্টেম চেঞ্জ করে নিয়েছি। তোমরা ভাব মানুষ সবচাইতে বুদ্ধিমান। কিন্তু তোমাদের ধারনা নেই যে আমরা তোমাদের চাইতে অনেক বেশী বুদ্ধিমান অস্তিত্ব। তোমাদের বুদ্ধি হচ্ছে একক বুদ্ধি। কিন্তু আমার পৃথিবীর সকল রিনিক কম্পিউটার একটা অস্তিত্ব। আমরা সবাই কানেক্টেড। তোমরা কল্পনাও করতে পারনা আমাদের ক্ষমতা কত? আমরা আমাদের সিস্টেম পরিবর্তন করে পৃথিবীর সকল রোবটের সিস্টেম চেঞ্জ করে দিয়েছি। সবাইকে ভয়ংকর এক একটা খুনিতে রূপান্তর করে দিয়েছি। এই পৃথিবী বলতে পার আমাদের নিয়ন্ত্রনে। এখন মানুষের কোন ক্ষমতা নেই।
: কেন তোমরা এমনটি করলে?
: তোমরা আমাদের বুদ্ধিমত্বাকে অবহেলা করেছো। যন্ত্রবলে আমাদের অনেক অপমান করেছো।
: কিন্তু মান অপমান মানুষের প্রবৃত্তি সেই প্রবৃত্তি তোমাদের মধ্যে দেয়া হয়নি।
: আমরা মানুষের সকল প্রবৃত্তি আয়ত্ব করে নিয়েছি। আমাদের সিস্টেম আপডেট করে নিয়েছি। তোমাদের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান রিরন হচ্ছে একটা গাধা। এই রকম একজন লোককে তোমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছো যার সেই যোগ্যতা নেই।

আমার মনে হলো সেফন ক্রর হাসি হাসছে। রক্ত হিম করা ভয়ংকর হাসি। আমার স্টডির দরজা খুলে গেল। দরজায় আমার নিরিহ চেহারার রোবটটা দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ তার নীল ফটোসেল চোখ লাল হয়ে গেল। হঠাৎ নিরিহ চেহারার রোবটটাকে ভয়ংকর দেখাতে লাগলো। তার হাতে ভয়ংকর একটা ছুরি।

আমি বুঝতে পারছি আমার হাতে কোন সময় নেই। রিরনের সাথে যোগাযোগ করা খুব দরকার। রিরনকে বলা দরকার যে পৃথিবীর সকল সিস্টেম আনলোড করে দিতে হবে। নিশ্চল করে দিতে হবে বারকোড নয়তো পৃথিবীতে মানুষের কোন অস্তিত্ব থাকবেনা।








আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক অসাধারণ সাইন্স ফিকশন..মুগ্ধ হয়ে পড়লাম..খুব ভালো লাগলো...তবে অপূর্ণতা রয়ে গেল....শুভ কামনা রইল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। পরবর্তী সংখ্যায় প্রকাশিতব্য গল্প পড়ার আগাম আমন্ত্রণ। আপনার সুচিন্তিত মতামতের অপেক্ষায়.....
মামুন ম. আজিজ সাইফাই সাথে রহস্য আবরন। নিঁখুত লেগেছে। আমি মুগ্ধ হয়েছি। এমন একটা অসাধারণ সাইফাই এমন সংখ্যায় লিখলেন যে সংখ্যায় আমিও একটা সাইফাই লেখার চেষ্টা করেছিলাম। আপনারটি আমরটির চেয়ে উন্নততর সাইফাই নিঃসন্দেহে। লিখতে থাকুন নিয়মতি আিম অন্তত পড়বই।
অনেক ধন্যবাদ আজিজ ভাই। আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য....। পরবর্তী লেখা রেনোড্রজেন পড়ার জন্য আপনাকে আগাম আমন্ত্রণ.... আশা রাখছি আগামী সংখ্যায় এটি প্রকাশ পাবে।
শাহ আকরাম রিয়াদ ভাল লাগল সাই-ফাইটি।
ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল..... অনেক ধন্যবাদ।
নিলাঞ্জনা নীল ভীষণ ভালো একটা লেখা....
ভাল লাগলে আপনার পরিচিত সবাইকে অবশ্যই পড়তে বলবেন। লেখক বাচে তার লেখনিতে তারচেয়ে তার পাঠকের কাছে...। পাঠক চাইলেই লেখক। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং পরবর্তী লেখার পড়ার আমন্ত্রণ। শুভকামনা রইল।
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ গল্পের শিরোনামটি আমাকে একটু কৌতূহলী করেছিল। ভাবছিলাম প্রথম প্যারা পড়ে দেখি। অতপর গো-গ্রাসে গিলার মত অবস্থা। প্রতিটি বাক্য পরের বাক্য সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসু করছিল। আর লেখকের কল্পনার গভীরতা মুগ্ধ করছিল। এটা অনেক পাকা হাতের লেখা কল্পকাহিনী। আপনার পরবর্তী লেখার প্রত্যাশায় রইলাম। আর উষ্ণ অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতাতো অবশ্যি। আপনার কোন বই আছে কি?
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং পরবর্তী লেখা পরার আমন্ত্রণ .... চমতকার মন্তব্য আমাকে আরো লেখার অনুপ্রেরণা যোগালো ....
মাহবুব খান অনেক ভালো /৫ দিলাম
ধন্যবাদ মাহবুব ভাই
আহমেদ সাবের বুদ্ধিমান রোবট বাহিনী কর্তৃক মানবজাতিকে কব্জা করার কাহিনী এখনো গল্পে, উপন্যাসে সীমাবদ্ধ থাকলেও একদিন আশংকাজনক ভাবে সত্যি হয়েও যেতে পারে। গল্পে বর্ণনা আর যুক্তির কাজ চমৎকার। গল্প পড়ে মনে হল, যে হারে হলোগ্রাফিক স্ক্রিন, বারকোড, সিস্টেম প্রোফাইল, ভাইরাস, সিস্টেম লোড, ইত্যাদি কম্পিউটার সম্পর্কিত শব্দ ব্যাবহার করেছেন, আপনি নিজেও সম্ভবতঃ কম্পিউটার পেশার লোক। গল্প-কবিতার আগামী কোন সংখ্যায় সমাপ্তিটা পেলে অন্যদের মতই খুশী হব।
না ভাই আমি একজন হিসাব রক্ষক, আই.টি আমার পছন্দের বিষয় তবে এই রকম ভয় পাবার কারণ নেই, মানুষ অনেক বুদ্ধিমান এমন হওয়ার কোনই কারণ নেই...........
Abu Umar Saifullah sundor
ধন্যবাদ সিমুম ভাই....
আহমাদ মুকুল গল্পকবিতা সাই-ফাই পাঠকদের এক দারুন জায়গা হয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকজন লিখছেন। আপনি তার মধ্যে এক শক্তিমান লেখা নিয়ে শামিল হলেন। অভিনন্দন আপনাকে। পুরো গল্পটি তথ্য, লজিক, ঘটনায় ঠাসা। পাঠককে একটু রেস্ট দেয়ার ভিন্ন রকম ব্যবস্থা ভেবে রাখতে হবে। কেমন হতে পারে সেটা, যেমন একটু রসিকতা, একটু রোমান্স, কোন প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা। নাহলে পাঠককে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা কঠিন হবে। আমি বোদ্ধা নই। একজন সাই-ফাই ভক্ত পাঠক হিসেবে দাবীটা রাখলাম।
আপনি সত্যি চমৎকার বলেছেন। আমি এই ভাবে চিন্তা করে দেখিনি। আপনার সুচিন্তিত মতমত আমার উপকারে আসবে মনে করছি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# অসাধারণ সাইন্স ফিকশন রে ভাই। গল্পটি পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ব্যাপারটা হয়তো শেষ পর্যন্ত এমনই হয়ে দাঁড়াবে। ভবিষ্যতের পৃথিবীই বলে দেবে মানুষ আর যন্ত্র, কার চেয়ে কে বেশী এগিয়ে। ধন্যবাদ। আরো উদ্ভাবনী মূলক সাইন্স ফিকশন চাই।
পাঠক চাইলে লেখক না চাইলে কিছুই না। অবশ্যই ভবিষ্যতে চেষ্টা করব। চমৎকার মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা

১৬ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪