ক্ষণিকের দেখা

প্রিয়ার চাহনি (মে ২০১২)

প্রদীপ
  • ২২
ছোটো শহর তমলুক, মেলা চলছিল- তমলুক জনস্বাস্থ্য কৃষি ও কুটির শিল্প মেলা। ছেলেটি তখন তমলুকের একটি কলেজে ফাস্ট-ইয়ার এ পড়ছিল, নাম দীপ। তমলুক এ হোস্টেল এ থাকতো। বাড়ি দিঘার কাছাকাছি। একদিন দীপ বন্ধুদের সঙ্গে ঐ মেলাতে গিয়েছিল। বন্ধুদের সঙ্গে খুব আনন্দ ফুর্তিতে ডুবে ছিল। নাগর দোলায় চাপা, ফুচকা খাওয়া সে দারুণ ফুর্তি। ঐ দিন ঐ অনুষ্ঠানে বলিউড এর একজন শিল্পী আসবে। মেলাতে খুব ভিড় ছিল। যে যার আসন দখল করে নিচ্ছিল ঐ শিল্পিকে দেখার জন্য। দীপ ও তার বন্ধুরা রীতিমতো ঐ শিল্পিকে দেখার জন্য অনেকটা জায়গা দখল করে দাঁড়িয়ে ছিল। দীপ ওর বন্ধুদের খুব ভালোবাসতো, বন্ধুরা ও তাকে কম ভালোবাসতো না। হলেও বন্ধুদের সঙ্গে তার খুঁটিনাটি ঝগড়া লেগেই থাকতো। ওখানে ও তাই হলো, চিমটি কাটা নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি। দীপ ঝগড়া করে বন্ধুদের সঙ্গে আলাদা হয়ে গেল। বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে রাগে টানতে লাগলো। সিগারেট শেষ হতেই একা মন ভারি করে মেলাতে ঘুরতে লাগলো। মনে হল যে আর ভাল লাগছে না এবার হোস্টেল এ চলে আসবে এই ভেবে বন্ধুদের কাছ থেকে হোস্টেল চাবি চাইতে এলো বন্ধুরা দু-চারটা গালি দিয়ে চাবি দিয়ে দিল। তখনও দীপ ঠিক
করতে পারেনি যে থাকবে না চলে যাবে। এভাবে যখন ফাঁকা একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাবছিল তখন পাশে একটি মেয়ে এসে দাঁড়ালো, হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে কি একটা করছিল। কি মনে করে মেয়েটি বলল hi! দীপ তার রিপ্লে করে বলল hi!। মেয়েটি বলল যদি কিছু না মনে করো তাহলে একটা প্রশ্ন করতে পারি? দীপ বলল হ্যাঁ বলো, মেয়েটি বলল তুমি কি এই তমলুক এ থাকো? দীপ বলল হ্যাঁ তুমি? আমি কোলকাতাতে থাকি।তা এখানে কোনো আত্মীয় এর বাড়িতে এসেছো বুঝি? না প্রোগ্রাম রয়েছে তাই আসতে হলো। দীপ বলল প্রোগ্রাম মানে? তোমার নাম কি একটু বলবে? আমার নাম- আমার নাম যদি শুনে থাকো তাহলে হয়তো চিনতে পারবে, আমার নাম সুমনা, জী-বাংলায় সারেগামা পা তে পারফর্ম করেছিলাম। দীপ বলল ও sorry! আসলে আমি tv প্রোগ্রাম খুব কম দেখি তাই হয়তো তোমাকে চিনতে পারি নি, কিছু মনে করো না কিন্তু। সুমনা বলল আরে না না ঠিক আছে! আচ্ছা তুমি কি করো? আমি বলতে গেলে কিছু করি না ফাস্ট ইয়ার এ পড়ি। আর তুমি? আমি এখন ক্লাস xi তে পড়ি আর গানের শখ ছিল তাই গান নিয়ে চর্চা করি। দীপ বলল ও তা মেলা কেমন দেখলে? মেলা! মেলা কি করে দেখবো? একা তারপর এক-দেড় ঘণ্টা ধরে প্রোগ্রাম রয়েছে। দীপ বলল অবশ্য তোমাদের কোলকাতাতে অনেক বড় বড় মেলা, উৎসব হয় আমাদের তো অনেক ছোটো মেলা!

সুমনা:- আরে না না নতুন জায়গা একা রয়েছি তাই, তুমি তো এখানেই থাকো তো তোমার কোন বন্ধু-বান্ধবী আসেনি

দীপ:- বান্ধবী নেই বললেই চলে, বন্ধুরা ছিল এই তো ঝগড়া করে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি

ঝগড়া:- ঝগড়া মানে?

দীপ:- না না তেমন কিছু নয়, একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল

সুমনা:- তোমার ঠাণ্ডা লাগছে না? শুধুমাত্র একটা গেঞ্জি পরে রয়েছ!

দীপ:- না, এই একটু পরে চলে যাবো তাই, যদি কিছু না মনে করো তাহলে একটা কথা বলবো?

সুমনা:- হ্যাঁ বলো

দীপ:- মেলায় একটু ঘুরবে?

সুমনা:- হ্যাঁ তাই চলো

এগোতে এগোতে দীপ বলল যে বোধহয় আমি খুব ভাগ্যবান

সুমনা:- কেন?

দীপ:- তুমি আজকে অনেক বড়ো জায়গায় পৌঁছে গেছো। আর আমার খুব ভাগ্য ভালো যে আমি একজন জী-বাংলার শিল্পীর সঙ্গে কথা বলতে পারছি

সুমনা:- আরে না না, এখানে অনেক বড়ো বড়ো শিল্পীরা আসছেন তারা কোথায় আর আমি কোথায়!

দীপ:- তবুও তুমি তো অনেকের মনে জায়গা করে নিয়েছ। যারা তোমাকে চেনে তাদের কাছে তুমি অনেক বড়ো। আমার ও অনেক স্বপ্ন আমি ও অনেক বড়ো হবো বড়ো কিছু করবো। কিন্তু কি জানো তো আমার একটাই দুঃখ যে আমার স্বপ্নের কোন শেষ নেই। ছাড়ো তুমি নাগরদোলাতে কোনোদিন চেপেছ? আশা করি তো চেপেছ! কারণ তোমার কোলকাতাতে তো অনেক বড় বড় মেলা হয় ওখানে কতরকমের নাগরদোলা বসে
সুমনা:- নাগরদোলা! ওরে বাবা আমি কোনোদিন চাপিনি খুব ভয় করে! কি উঁচু!

দীপ:- কোনোদিন চাপোনি তো কি করে জানলে যে ভয় লাগে?

সুমনা:- না কোনোদিন চাপিনি কিন্তু বান্ধবীরা চেপেছে ওরা আমাকে অনেক রিকুয়েস্ট করে কিন্তু আমি কোনোদিনও চাপিনি

দীপ:- চলো আমি আজ তোমাকে রিকুয়েস্ট করছি চলো চাপবে চলো!

সুমনা:- না বাবা কোনোমতেই নয় তাহলে আমি আজ প্রোগ্রাম করতে পারবো না

দীপ:- একটা কথা বলছি কিছু মনে করো না কিন্তু যদিও এটা তোমার পার্সোনাল ব্যাপার
তবুও জিগ্যেস করছি প্লিজ কিছু মনে করো না কিন্তু!

সুমনা:- আরে বোলো না

দীপ:- তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড আছে? সত্যি করে বোলো কিন্তু!

সুমনা:- হু...... অনেকে অফার করেছিল ঠিকই কিন্তু আমার মনপছন্দ হয় নি

দীপ:- ও তাই! চলোনা নাগরদোলাতে চাপি

সুমনা একটু রেগে বলল না বললাম না! আমার খুব ভয় করে

দীপ:- তুমি আমার ক্ষণিকের বন্ধু, আমি জানি না যে তুমি আমাকে বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে পেরেছ কিনা,আর আজকের কথা কাল তোমার মনে থাকবে কিনা তা ও আমি জানি না। কাল হয়তো তুমি অন্য কোথাও যাবে প্রোগ্রাম করতে হয়তো সেখানে বা তোমার জীবনে অনেক অনেক বন্ধু আসবে, তাদের সঙ্গে হয়তো তুমি অনেক আনন্দ করবে। তাদের ভিড়ে হয়তো তুমি কালই আমার কথা ভুলে যাবে। চলো না তোমার এই ক্ষণিকের বন্ধুর রিকুয়েস্ট! প্রত্যেক দিনই তো আনন্দ করবে আজ না হয় একটু ভয়ই পাবে

সুমনা:- বলছ...! এত করে যখন রিকুয়েস্ট করছ চলো না হয়... কিন্তু ভয় পেলে

(সুমনা হেঁসে বলল) এই বলে দীপ দুটো কুপন কিনে সুমনার সঙ্গে এগিয়ে গেল

দীপ:- কি এখন থেকেই ভয় করছে নাকি?

সুমনা:- হ্যাঁ... আমার পা কাঁপছে!

দীপ:- কই তুমি কোলকাতার মেয়ে যে তোমার এতো ভয়!
ওরা দুজন নাগর দোলাতে চাপল, দীপ বলল

দীপ:- একদম ভয় করবেনা আমি রয়েছি তো!

যেই নাগর দোলা ঘোরা শুরু হল সুমনা চোখ বন্ধ করে বসে রইলো আর অন্যেরা আনন্দে চিৎকার করতে লাগলো

দীপ:- আরে তুমি চোখ বন্ধ করে রেখেছ কেন? চোখ খোলো!

সুমনা ভয়ে দীপের একটি হাত জাপটে ধরে রাখল এবং দীপ আস্তে আস্তে তার চোখ থেকে হাতটি সরিয়ে দিলো

দীপ:- এবার তাকাও! দেখবে কোন ভয় নেই

এবার সুমনা চোখ মেলে তাকাল এবং পরপর তার একটু একটু করে ভয় কাটতে লাগলো। এবং দেখল সবাই উল্লাসে চিৎকার করছে। পর পর তার আনন্দ লাগলো।সে ও যেন তাদের মতো উল্লাসে চিৎকার করতে চাইল কিন্তু লজ্জায় সে পারল না। দীপ শুধু তার চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল, সুমনা ও তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো তার সেই দৃষ্টি যেন দীপের মনটাকে কেমন একটা করে দিল।

দীপ:- কি এবার কেমন লাগছে?

সুমনা:- একটু হেঁসে আনন্দে বলল খুব ভালো

এইবার সে গলা ছেড়ে একবার উল্লাসে চিৎকার করে নিলো। এবার নামার পালা! ওরা দুজনে নামলো ,সুমনা নেমেই বলে যেতে লাগলো উফ! বাবা! যখন প্রথম বার নামে আমি ভাবলাম বোধহয় মরেই যাবো, কিন্তু পরে এতো মজা পাবো ভাবতেই পারিনি। দীপ কিন্তু দেখল সুমনার মুখ তখনো ভয়ে লাল হয়ে আছে! দীপ বলল কিছু খাবে না?

সুমনা:- না না দেরি হয়ে যাবে

এই বলে দুজন দুজনের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো! হটাৎ সুমনা বলল দীপ যাই হ্যাঁ দেরি হয়ে যাচ্ছে। দীপের মুখ থেকে কোন কথা বেরল না। সুমনা একটু এগিয়ে যেতে দীপ পিছু ডাকল, সুমনা পিছু ফিরতে দীপ নাগর দোলার দিকে আঙ্গুল দেখাতে সুমনা একটু মুচকি হাসল। কিন্তু সেই হাঁসির মধ্যে কেমন একটা অসম্পূর্ণতা থেকে গেল। দীপ ভাবল সুমনার মোবাইল নাম্বারটি চাইবে, কিন্তু কি করে চাইবে ভাবে পেলো না। কিছুক্ষণ পরে স্টেজে সুমনার ডাক পড়লো। সুমনা এসে গান গাইল, কিন্তু তার মুখে কোন হাসি দেখা গেল না। সুমনার গান শেষ হতে দীপ অনেক চেষ্টা করলো সুমনার সঙ্গে দেখা করতে কিন্তু মেলা কমিটির বাধায় সে যেতে পারল না। দীপ অনেকক্ষণ সামনে দাঁড়িয়ে রইলো যদি সুমনা একবার আসে। দীপ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। অনুষ্ঠান প্রায় সেসের মাথায়। দীপ দেখল সামনে দিয়ে দুটো গাড়ি বেরিয়ে গেলো। দীপ দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু দেখতে পেলো না। দীপ ভাবল সুমনা বোধ হয় ঐ কালো কাঁচের মধ্য দিয়ে তাকে দেখতে পায় নি। তখনো অনুষ্ঠান পুরো শেষ হয়নি, দীপ দোকান থেকে আর একটি সিগারেট কিনে বিষণ্ণ মনে একা হোস্টেল এ ফিরে এলো। তখনো তার বন্ধুরা ফেরে নি। সুমনার কথা ভাবতে ভাবতে সে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাঙ্গল বন্ধুদের কথা শুনে। অনুষ্ঠান কেমন হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করছিল। হটাৎ সুদীপ বলল এই দীপ তোকে সা রে গা মা পা এর সিংগার সুমনা মাইকে আন্যাউন্স করেছিল। দীপ ধড়পড় করে উঠে বলল সত্যি? সুদীপ বলল ডেকেছিল ঠিক কিন্তু তুই কি করে ভাবলি যে তোকে ডাকবে তোর নাম কি একা দীপ আরও কতো দীপ রয়েছে। দীপ বন্ধুদের আর কথাটি বলল না। শুধু নিজের ভুলটি বোঝার চেষ্টা করলো।

জানিনা সুমনা কোনোদিন আসবে কিনা দীপের খোঁজে, কিন্তু দীপ আজও খোঁজে সুমনাকে। নাগরদোলা দেখলেই তার চোখে ভেসে ওঠে সেই ক্ষণিকের পরিচয় ও সুমনার সেই মিষ্টি চাহনির কথা।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অষ্টবসু bhalo hoeche.tamluck sahare ami 3 bachar chilam.and hamilton school e parechi.
আদিব নাবিল বাহ দারুন লিখিয়ে তো আপনি। বেশ গল্প।
সূর্য গল্প সুন্দর হয়েছে। (প্রদীপ তুমি কি পশ্চিম বঙ্গের?)
হ্যাঁ দাদাভাই। আপনি?
ঝরা এরকম কত ভালোলাগা হারিয়ে যায় মানুষের জীবনে।
মৃন্ময় মিজান বেশ রোমান্টিক....বাক্যগঠনে আরেকটু মনোযোগী হতে হবে। শুরুর দিকে এত পরিমান 'ছিল' এর ব্যবহার রয়েছে যা পীড়াদায়ক।
আহমেদ সাবের বেশ সুন্দর মিষ্টি গল্প। পথে হল পরিচয় - পথেই হারাল।
মিলন বনিক গল্প বলার ধরনটা ভালো লাগলো...শুভ কামনা...
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ পথে হলো পরিচয়! আর দীপ কেমন করে ক্ষণিকেই আপন করে নিল সুমনাকে । কিছু মধুর সময় কাটলো দু'জনের। এ মধুময় স্মৃতিই হয়তো তাঁদের টেনে নিয়ে আসবে বকুল তলায়। তাদের জন্য শুভকামনা রইলো। শুভকামনা প্রদীপের জন্য, এমন মিষ্টি একটা গল্প উপহার দেয়ার জন্য।
Sisir kumar gain অনেক সুন্দর গল্প।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি Besh valo laglo prodip tomar golpo....to olpo boyse pripkko vabnar bohiprokash dekhe mugdho holam...onek onek suvo kamona...tomar jonno.4

০৩ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪