নিহারিকা

মুক্তির চেতনা (মার্চ ২০১২)

এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম
  • ১৬
সি এন এন চ্যানেলটা ওপেন করে হঠাৎ আঁতকে উঠল রাহাত । নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।

- একটা বাস কি এক অদৃশ্য শক্তির টানে ফুটপাথের একটু ওপরে লটকে আছে । মানুষ ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে হুড় মুড় করে নেমে যাচ্ছে । সবাই আতঙ্কে দৌড়াচ্ছে ।

আবার দেখা গেল, এক সাথে চারজন লোক যুগলবন্দী অবস্থায় উড়ে যাচ্ছে। একটার পর একটা কৌতুহলী ঘটনা ঘটেই চলেছে।

রাহাত ভাবল, এটি বোধহয় কল্প কাহিনী বিষয়ক কোন ডকুমেন্ট্রি প্রচার করছে। কিন্তু , নাঃ ! ঢাকা সিটির উপর লাইভপ্রোগাম ! মাথাটা ঘুরে গেল । ব্যাপার কী !

দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে এল সে। কোন সন্দেহ রইল না ।

এটা কোন কল্প কাহিনী নয়। মানুষ, গাড়ি-ঘোড়া, বিভিন্ন সামগ্রী কাগজের টুকরোর মত উড়ে যাচ্ছে।

মানুষের চিৎকার কানে ভেসে আসছে। ইয়ানফসী, ইয়ানফসী রবে আকাশ বাতাস আলোড়িত হচ্ছে আর পাগোলের মত ছুটোছুটি করছে। মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হচ্ছে ঃ

"আপনারা এভাবে কেউ ছুটাছুটি করবেন না। এটা কেয়ামতের কোন আলামত নয়। যে যেখানে আছেন, সেখানে থেকে সবাই এসতেগফার পড়ুন। আল্লাহকে স্মরণ করুন। তাঁর সাহায্য কামনা করুন ।"

কোন রকম নাস্তা শেষ করে ক্যামেরা আর ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ল রাহাত।

-হ্যাঁ, স্যার , এই মাত্র বের হলাম। হ্যাঁ, শিডিউল্ড প্রোগ্রাম বাতিল করে আমি অলরেডি কাজ শুরু করে দিয়েছি । জি , স্যার ।

এক্সিলেন্ট ! আমি জানতাম, আপনি আমার আদেশের অপেক্ষায় না থেকে অজানা এ পরিস্থিতি নিয়ে কাজ শুরু করবেন। আচ্ছা, আপনি ভয় পাচ্ছেন না তো ?

-না, স্যার । তবে এসব কেন হচ্ছে, তা কি জানা গেছে ?

না। আমাদের অফিস থেকে আসিফ আর কামালকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে । শক্ত হোন, ঘাবড়াবেন না।

তাৎক্ষণিকভাবে একটু হোঁচট খেল সে। তার কলিগদের এভাবে হারাতে হবে, এটা সে কল্পনাও করে নি। মনটাকে আরো শক্ত করে এগিয়ে চলেছে।

- বলেন কি স্যার ! আর সবাই ?
কয়েকজন তা দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল । তাদের হসপিটালে পাঠানো হয়েছে । আমি জানি, আপনি অনেক শক্ত হৃদয়ের মানুষ। এ অবস্থাকে সামাল দিয়ে এগিয়ে যাওয়া আপনার পক্ষে অসম্ভব নয়। আপনার উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আপনি কাজ করুন। পরে কথা হবে । কেমন ?

-জি , স্যার ।

কিছু ভিডিও করে অফিসে গেল সে। সবার মাঝেই প্রচণ্ড আতংক বিরাজ করছে। কিন্তু প্রোফেশনটাই এমন যে, এরকম কঠিন পরিস্থিতিতেও তাদের বিবেক, বুদ্ধি, মেধা পরিপূর্ণ বিনিয়োগ করে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে হয় ।

অন্য একটা টিভি চ্যানেলের টক শো অনুষ্ঠানে চোখ পড়ল রাহাতের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক বলছেন ঃ

-- দেখুন, এ ঘটনা ঘটছে আকস্মিকভাবে, সারা দুনিয়া ব্যাপী । প্রায় আট ঘণ্টারও বেশী সময় অতিবাহিত হয়ে গেল । জানি না আমরা কতক্ষণ আছি, আর কখনইবা তাদের পথ আমাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। গোটা বিশ্বই এখন উদ্বিগ্ন । আমি নাসায় কর্মরত আমার বন্ধুদের সাথে ইতোমধ্যে কথা বলেছি, মত বিনিময় করেছি, এখনও পর্যন্ত এর কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি । তবে যে সমস্ত বিজ্ঞানীরা এখনও এলাইভ আছেন, তারা কেউই বসে নেই । বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন, এরই মধ্যে আপনারা দেখেছেন, কয়েকজন বিজ্ঞানী বিমান নিয়ে পর্যবেক্ষণ করার সময় বিধ্বস্ত হয়ে মারা গিয়েছেন । আমরা তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং প্রর্থনা করছি আল্লাহ উনাদের যথাবিহিত ফয়সালা করুন । আপনারা একটা বিষয় লক্ষ্য করে থাকবেন, আমরা যারা টার্গেটের বাইরে আছি তারা ভিকটিমের কাছেও যেতে পারছিনা । অর্দশ্য এক বিকর্ষণ শক্তি অনুভব করেছি। টার্গেটেড বস্তটা একটা নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধের মধ্যে কিছুক্ষণ আবর্তিত হচ্ছে এবং পরে তা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে । আরো লক্ষ্য করেছেন, এ বৃত্তের ব্যাসার্ধও কিন্তু খুব বেশী নয় মাত্র দু'গজের কাছাকাছি । খুব সহজেই তার আওয়াজ আমাদের শোনার কথা । কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি , টার্গেটেড ব্যক্তি হঠাৎ করেই স্ট্যাচু হয়ে যাচ্ছেন এবং বাকশক্তিও তার থাকছেনা । এক পর্যায়ে হেলিকপ্টারের মত জামপ করে উড়ে যাচ্ছে । পাশাপাশি আমরা এসব শক্তির খুব কাছে অবস্থান করেও এখনও পর্যন্ত টিকে আছি। অর্থাৎ আমার কাছে এটা মনে হচ্ছে, অদৃশ্য শক্তিটা কারো দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । এ মুহূর্তে আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারে যা আছে তার সীমাবদ্ধতা মাথায় নিয়ে আমি বলতে চাই যে, এটা হচ্ছে, কি এর কারণ, কি সে শক্তি ? এর উদ্দেশ্য কি? এটা কি আল্লাহ প্রদত্ত কোন সুপার পাওয়ার, নাকি অন্য কিছু - এসবের বিচার বিশ্লেষণের সময় এখনও হয়নি । এ নিয়ে গবেষণা চলছে । আমরা যতক্ষণ এ ধরাধামে আছি ততক্ষণ এ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাব । আপনারা ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করুন ।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব ডঃ আনোয়ারুল হক বলছেন--

আস্সালামুআলাইকুম। পরম দয়ালু আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাত কামনা করছি । সেই সাথে গোটা বিশ্বের মানুষের প্রতি আমি আহ্বান করছি, আসুন, আমরা আল্লাহর কাছে আত্ম-সমর্পণ করি । আমরা সবাই বলি - "র'ব্বি আন্নী মাগলুবুন ফানতাছির "। অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক, আমি পরাজিত/পরাভূত, আমি আপনার কাছে আত্দ-সমর্পন করছি । আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানী, আমাদের কত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন আমাদের অতি নিকট থেকে চলে গেছেন। আমরা এখনও এখানে আছি । জানিনা আমরা এখানে এভাবে থাকতে পারব কি না। প্রত্যেক জীবিত প্রণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর এ মৃত্যু কখন হবে, কোথায় হবে, কোন বয়সে হবে, তা কেউ বলতে পারে না। ডঃ ইফতেখার সাহেব যেমনটা বললেন, সারা বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীরা এর বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি খুঁজছেন । হয়ত এর গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যাও তারা পেয়ে যাবেন । তবে আমি এ বিষয়ে যা ভাবছি, তা একান্তই আমার নিজস্ব ভাবনা ।

আমাদেরকে খুঁজে খুঁজে দেখতে হবে, যারা চলে গেছেন, তারা কারা ? কি ছিল তাদের পরিচয় ? তাদের কি পরিবারের সবাইকে নিয়ে গেছে, না কি বেছে বেছে কাউকে নিয়ে গেছে । আমার জানা মতে আমাদের ক্যামপাসের একজনকে তুলে নিয়ে গেছে । আমি সে পরিবারের সবার সাথে কথা বলেছি । তাদের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেছি । তারা ভয়ে আতঙ্কিত । তার ছেলে মেয়েরা কেউ কিছুই বলতে পারছেন না । কিছুক্ষন আগে আমি ভাবীসাহেবার সংগে কথা বলেছি, তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু কথা আমাকে বলতে চান, তবে টেলিফোনে নয় । তিনি আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন, আমি যেন উনার বাসায় যাই । আমার মনে হয়, আমরা সবাই আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে আত্দ-সমর্পন করে তার ফয়সালার অপেক্ষায় থাকি । পাশাপাশি এ নিয়ে অবশ্যই আমাদের গবেষনা চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে ধৈর্য্যধারন করে এ অবস্থার মোকাবিলা করার তৌফিক দান করুন, আমীন। আসসাসালামুআলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ ।
**
-হ্যালো, রাহাত বলছি ।
আমি, রোমেনা ।
-আবার ? নিউইয়র্ক থেকে বার বার ফোন করছ, তোমার খরচ কত হচ্ছে, তা কি ভাব ?
প্লীজ লাইনটা কেট না। তোমাকে আমি আর বিরক্ত করব না। আমার ছেলেদের কাছে ফোনটা দাও, আমি ওদের সংগে কথা বলব ।
- কেন, তুমি বুঝতে পারছ না ? তুমি যখন ছেলেদের ফেলে চলে গেলে তখন কি প্রমিজ করেছিলে, ভুলে গেছ ?
না, ভুলিনি ।
- তাহলে এখন তাদের সাথে কথা বলতে চাও কেন ? দুনিয়াজুড়ে যা হচ্ছে, তা এখনো দেখনি ?
তুমি টি,ভি খুলে যে কোন চ্যানেলে দেখ সারা দুনিয়ায় এখন কি হচ্ছে ।
ছেলে ভোলানোর মত তুমি আমায় বার বার টি ভি দেখতে বলছ ?
- দুত্তরি ! তুমি টি,ভি খুলে দেখ, দেখে যদি কিছু বোঝ তাহলে আবার ফোন করো। ফোন করলে বাসায় করোনা, মোবাইলে করো। কেননা আমাকে এক্ষুনি বাইরে যেতে হচ্ছে । তোমাকে একটা কথা বলি, টিভিতে দৃশ্যগুলো দেখে যদি ভয় পাও, তাহলে আর দেখবে না। আমাকে আবার ফোন কর, আমি তোমাকে সংগ দিব।
আচ্ছা, রাখছি ।

রোমেনা রাগে, দুঃখে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল । অনেকক্ষন পাথরের মত বসে থেকে রাহাতের শেষ কথাগুলো মনে করতে লাগলো । কত বড় সেয়ানা । আমাকে টি, ভি দেখতে বলে কথার মোড় ঘুরিয়ে অন্য দিকে চলে গেল ? দাঁড়াও, আমিও দেখে নেব তুমি কত বড় পন্ডিত । আমি কোর্টে যাব, আইনের আশ্রয় নেব । আমার নাবালক বাচ্চাদের উপর এখন আমারই অধিকার । আমি ওদেরকে আইনের মাধ্যমেই আমার কাছে নিয়ে আসব । আমার লাইফটাকে হেল করে দিয়েছ । তোমার একগুয়েমীর অবসান আমি করবই করব। আমিও দেখে নেব, তোমরা কতবড় সাধু ।

রাগের চোটে রিমোটটা হাতে নিয়ে চ্যানেল আই ওপেন করল । কিছুক্ষন লাইভ দেখে ভয়ে শীতল হয়ে গেল। এ কি !

-- হ্যলো, আমি রোমেনা
- বল ।
-- এসব কি হচ্ছে ?
- তুমি কি এই ১০ ঘন্টা পরে জানলে ? এতগুলো ডিগ্রী ঘাড়ে নিয়ে বড়াই কর। এইতো তোমার শিক্ষার দৌড়। তুমি বাইরে যাওনি ?
-- না, আমি ঘুমুচ্ছিলাম, আজ কাজে যাই নি । আর জানইতো, আমার টি,ভি দেখার অভ্যাস কম। কিন্তু এসব হচ্ছে কি ? আমার খুব ভয় করছে।
- তাহলে এসব আর দেখ না।
-- কিন্তু আমার যে ভীষন ভয় হচ্ছে । বাইরে গেলেই যদি -------
- ঘরেই থাক। এই ১০ ঘন্টা যখন রয়ে গেছ, তখন মনে হয় তোমার আর ভয় নেই ।
--আমার বাচ্চারা ?
- পরীক্ষা শেষ। তাই ওরা সারাদিন খুব মজা করে খেলেছে । এখন ওরা ঘুমাচ্ছে। তুমি ওদের নিয়ে টেনশান কর না । দোওয়া, দরূদ পড়, আল্লাহকে স্মরণ কর । নো টেনশান, পরে আবার কথা হবে , ছাড়ছি ।
***********
সাত দিন পার হয়ে গেল । এখন উড়ে যাওয়ার পরিমান একটু কম । তবে থেকে থেকে এখনও যাচ্ছে। রাহাতের মাথায় একটা আইডিয়া এল । সে একটা ডায়রী আর কলম নিয়ে বেরিয়ে পড়ল । কেন জানি মনে হচ্ছে, যারা চলে গিয়েছে, তাদের পরিচয় জানতে পারলে এর একটা সুরাহা হতে পারে । মধ্য বাড্ডা এলাকার যেখান থেকে একসাথে চারজনকে নিয়ে গেছে সেখানে যারা প্রত্যক্ষ দর্শী ছিল তাদের কাছে এল রাহাত ।
- আচ্ছা, আপনি বলুন ত, ওরাত আপনার হোটেলে বসে খাচ্ছিল । কি হয়েছিল তখন?
-- আমি কিছু বুঝতে পারলাম না স্যার । ওরা চারজন ডাল পুরি আর চায়ের অর্ডার দিয়ে কেবল বসল। এর মধ্যে দেখি, ওরা একসংগে টেবিলের ওপর দিয়ে ওপরের দিকে সোজা উঠে গিয়ে ছাদের সাথে মিশে গেল । আর দেখলাম না । তার পর বাইরে থেকে লোকেরা চিৎকার করছে, এ ভাই ঐ লোকগুলো উড়ে যাচ্ছে কি ভাবে ?
- হুু! এটাত দুনিয়াবাসি সবারই এখন চিন্তার বিষয় । কেউ কিচ্ছু বলতে পারছে না। তবে ভাই, আপনি যে বললেন, বাবলু ভাই সহ চারজন, মানে আপনি কি উনাদের চিনতেন ?
-- হ্যা, সবাইকে চিনি । ওনাদের না চেনে কে ? আপনি চেনেন না ওনাদের ?
- না তো ।
-- না চিনে ভালোই করছেন ।
- কেন ?
-- আজ তো ওরা নাই । মনে হয়, আর আসবেও না। তয় স্যার , ওরা যদি দুনিয়ায় আবার ফেরৎ না আসে, তাহলে আমরা বাঁচি । কিন্তু যদি আবার আসে ? না, না, স্যার , আমি কিছু জানি না । আপনি কে স্যার ? আমাকে এত কথা জিজ্ঞাসাই বা করছেন কেন ?
- আপনার কোন ভয় নেই । এ পর্যনত যারা গিয়েছে তারা কেউই ফেরেনি । আর নিশ্চিনত থাকেন, কেউ ফিরবেও না । আপনি নির্ভয়ে বলুন । আমি একজন সাংবাদিক, আমাকে আপনি বলুন ওদের পরিচয় কি? আপনার পরিচয় গোপন থাকবে।
-- স্যার, ওরা চারটাই খুনী । চাদাবাজি আর সনত্রাসই ওদের কাজ ছিল । আমার হোটেলে ওরা ফ্রি খাইত। টাকা চাইলে বলত, যদি আমাদের কথা মত চলিশ তোর টাকার অভাব হবে না । এ শহরে চান্দা না দিয়া কেউই ব্যবসা চালাইবার পারবো না। তুই আমাগো আড্ডায় আর খাওয়ায় বাঁধা না দিলে তোর সারা জীবনের চান্দা মাফ । তারপর থেকে ওরা আমার এখানে নিয়মিত আড্ডা দেয় আর ফ্রি খায়। আমি জানের ভয়ে আর ব্যাবসার খাতিরে ওদের কোনদিন কিছু বলিনাই ।
- ওদের বাসা কোথায় আপনি চেনেন ?
-- শুধু বাবলু ভাইয়ের বাসা চিনি । আর কারোরটা আমি চিনি না ।
- আচ্ছা, ঠিকানাটা দিন ।
-- তয়, স্যার, আল্লার দোহাই, আমার কথা কিছু বলবেন না । ঠিকানা যে আমার কাছ থেকে পাইছেন, এ কথা কাউকে আপনি বলবেন না ।
- আপনি নিশ্চিনত থাকতে পারেন । আমার দ্বারা আপনার কোন ক্ষতি হবে না । আপনি নির্ভয়ে বলুন ।

ঠিকানা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রাহাত।
********
ক্যালেন্ডারের পাতায় অনেকগুলো দিন , মাস , বছর গড়িয়ে গেছে। গোটা পৃথিবীর মানুষ বদলে যাচ্ছে, সমাজ বদলে যাচ্ছে । বিষ্ময়কর পরিবর্তন! কী যে আনন্দ! পৃথিবীর তাবৎ সুস্থ্য লোকেরা তাদের অনতরে এরকম স্বপ্ন লালন করে আসছিল। আজ যেন তা সত্যি হলো।

-- হ্যালো, আমি রোমেনা।
- আহা ! এভাবে কাঁদছো কেন ? কোন ভয় নেই। বল।
--কি বলব ? এতদিন ধরে যা দেখছি, আর যা শুনছি ,তাতেতো মনে হচ্ছে কোন পাপীই ছাড়া পাবে না।
- তুমি এখনও মুক্তই আছ, তো ? তোমার ভয় কি ?
-- ( আরো জোরে কেঁদে ) কিন্তু আমিও যে পাপ করেছি।
- করে থাকলে তওবা কর।
-- আমার এ পাপ ক্ষমার যোগ্য নয়। আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে নিয়ে আমার শশুর-শাশুড়ির সংসার থেকে আলাদা হয়ে যাবার জন্য এসব করেছি। তোমাদের আমি চিনতে ভুল করেছি। আমার এ পাপের কোন ক্ষমা নেই।
- দু-উ-র বোকা। তুমি যে এসব চিনতা করতে -সেতো আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম।
-- কিভাবে ?
- শোন, তুমি যা ভেবেছিলে এটা কোন পাপ নয়। এটা হচ্ছে নিবর্ুদ্ধিতা। পাপ আর নিবর্ুদ্ধিতা এক নয়।
-- আমাকে ক্ষমা করতে পারবে তো? আমি কথা দিচ্ছি, সারা জীবণ এ ভুল আমি আর করব না। আমি দেশে আসছি। বল, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ ?
- পাগলী ।
আচ্ছা, আমি দু'চারদিনের মধ্যেই আসছি।
-এস, আমি অপেক্ষায় থাকবো।


জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সূর্য উঁকি মারছে। আজ ছুটির দিন। একটা ছুটির দিন পেলেই ফজরের নামাজ পড়ে একটুখানি ঘুমিয়ে নেয় রাহাত। বেরসিক হকারের নিক্ষেপিত পত্রিকা কপালে আছড়ে পড়ায় ঘুম ভেংগে গেল। লাফ দিয়ে উঠল । ক্যামেরা ? ক্যামেরা ? . . .
চোখ থেকে ঘুমের ঘোর কাটতে আর একটুখানি আড়মোড়া দিয়ে কিছুক্ষন গড়িয়ে নিল।
একটু মুচকি হাসি দিয়ে পত্রিকাটার শিরোনামে চোখ বুলিয়ে নিল ।

" দু'নেত্রীর চুলোচুলি এখন তুংগে ''

"মালীবাগে ট্রিপ্ল মার্ডার ''

"সারা দেশে প্রশাসনের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ভেংগে গেছে ''

"মুরগী চোর লাল্টু 'ক' দলের টিকেটে নির্বাচনে লড়ছেন ''

"শিশু খাদ্যে ভেজাল আতংকে দেশের সব শিশুর মা বাবা ''

" দেশে এখন এইড্স্ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ''


পরদিন ডাকবক্স খুলে নিউইয়র্ক থেকে রোমেনার পাঠানো ডিভোর্স নোটিশ পাওয়া গেল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুন ম. আজিজ দারুন। সাইফাই ভাব ভাবতে দেখি রিযেলিটি কল্পনা, শান্তি র আহ্বান মনে প্রানে। বেশ।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি " দু'নেত্রীর চুলোচুলি এখন তুংগে '' "মালীবাগে ট্রিপ্ল মার্ডার '' "সারা দেশে প্রশাসনের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ভেংগে গেছে '' "মুরগী চোর লাল্টু 'ক' দলের টিকেটে নির্বাচনে লড়ছেন '' "শিশু খাদ্যে ভেজাল আতংকে দেশের সব শিশুর মা বাবা '' " দেশে এখন এইড্স্ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। '' পরদিন ডাকবক্স খুলে নিউইয়র্ক থেকে রোমেনার পাঠানো ডিভোর্স নোটিশ পাওয়া গেল। // Osadharon ! legechhe....golper angik ta oti sundor......bolar voggi tao valo laglo.......5
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ এ স্বপ্নটা সত্য হবে একদিন। নিশ্চয়ই সত্যি হবে। স্বরণকালের গুটিকয় দিন এটা বাস্তবে ঘটেছিলো -- আমার স্পষ্ট মনে আছে। আপনার কল্পনাশক্তি, লেখনীর ধার অপরিমেয়। বার বার আপনার লেখার প্রত্যাশায় থাকবো। আমি চাই সবক'টা মানুষ আপনার লেখা পড়ুক নিয়মিত। সালাম ভাই ইমদাদুল ইসলাম। ভালথাকুন প্রতিনিয়ত।
আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
আহমেদ সাবের ভাবছিলাম, একটা চমৎকার বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনী পড়ছি। শেষে স্বর্গ থেকে পতন।
রোদের ছায়া পাপ থেকে দুনিয়াটাকে মুক্ত করার এই যদি একটা উপায় হতো!!!!! ভালই লাগলো গল্পটি ....
জাফর পাঠাণ স্বপ্নের সেই প্রলয়ে বেছে বেছে খারাপ লোকগুলি উধাও হয়ে যাচ্ছিল ।ফলশ্রতিতে দুনিয়া থেকে পাপও উধাও ! অথচ সেই কাল্পনিক উধাওয়ের মত বাস্তবিক মৃত্যুর মাধ্যমে কিন্তু মানুষ প্রতিদিন উধাও হচ্ছে ।কিন্তু মানুষের সেদিকে চিন্তা বা ভয় নেই ।সবাই নগদকে ভয় পায় ।এই বাস্তব মৃত্যু ভীতিটাই যদি সবাই মনে ধারন করত তাহলে ভয়ে লেখকের স্বপ্নের জগৎটাই বাস্তবে ফিরে আসত ।জুলুমবাজদের দ্বাড়া দেশ আক্রান্ত হতোনা ।লেখক ক মনের অন্তকরন থেকে ধন্যবাদ একটি শিক্ষনীয় গল্প উপহার দেওয়ার জন্য ।সাথে পাঁচ পয়েন্ট ।
আপনার বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য আমাকে আরো বেশী অনুপ্রাণীত করল । আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
অসংখ্য নয় আমাকে একটি ধন্যবাদ দিলেই যথেষ্ঠ ।
মাহবুব খান ভিসন ভালো /৫ দিলাম
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । নম্বরের চেয়ে সমালোচনা পেলে আরো বেশী খুশী হতাম ।
নিলাঞ্জনা নীল মেষ আগ্রহ নিয়ে পড়লাম সুন্দর লিখেছেন.....
মিলন বনিক গল্পের পটভুমি খুব ভালো লেগেছে। একটা সম্মোহনী আবেশ নিয়ে গল্পটা পড়লাম শেষের দিকে গল্পের গাথুনিটা কেমন খাপছাড়া মনে হলো...অসাধারণ গল্প লিখেছেন ভাই! শুভ কামনা থাকলো.....
আপনার পরামর্শমূলক মন্তব্য আমাকে আরো বেশী অনুপ্রাণীত করল । অনেক ধন্যবাদ বন্ধু ।
মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস ভালো হয়েছে তবে সংলাপগুলোর দিকে আরেকটু নজর নিতে হবে মনে হয়। গল্পের পটভুমি ভালো লেগেছে। পাপী মানুষগুলো এভাবে বিদায় নিলে সমাঝ সত্যিই বদলে যেত।
আপনার মহামূল্যবান মন্তব্য আমাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে । আপনাকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ ।

২৯ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী