একটি অসমাপ্ত প্রেমের কাহিনী [শেষ পর্ব]

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

ধুমকেতু
  • ২৬
তান্নি’র কথাঃ
..................
ওর সাথে আমার বেশ ভালোই দিন কাটছে। সাংসারিক ছোটখাট বিষয় ছাড়া সবকিছুই খুব স্বাভাবিক। মানুষ হিসেবে অত্যন্ত চমৎকার। সেই বিয়ের প্রথম দিন থেকেই তাকে দেখে আসছি। আমার স্বামী আমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসে। বেকার অবস্থায় বিয়ে করার পর প্রথম প্রথম বন্ধুদের কাছে ধারদেনা করে এটাসেটা কিনে দিতো আমাকে। বিষয়টা আমার নজরে পড়লে তাকে আমি ওসব করতে মানা করি। ভাবতে থাকি মাস্টার্স পাশ করেই কোথাও ভালো কোন চাকরী জোগাড় করে নেবো। আর এর মধ্যে ওরও নিশ্চয়ই কোথাও কোন ভালো ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তখন দু’জনের আয়ে ভালোই চলবে সংসার। আমার অনার্স পরীক্ষার মাঝামাঝি আমাদের বিয়ে হয়। ভাবলাম ভালোয় ভালোয় মাস্টার্স পাশ করেই বাচ্চাকাচ্চা যা নেবার নেবো। কিন্তু বিয়ের পর সে এমন পাগলামো শুরু করলো যে আমাকে মাস্টার্স পাশ করার সুযোগ দিলো না। আমি পিল খেতে চাইলে সে আমাকে মুটিয়ে যাওয়ার ভয় দেখালো এবং প্রাকৃতিক নিয়ম মানার পরামর্শ দিলো। আমি অত হিসাব-টিসাব বুঝতাম না। কিন্তু সে আবার ওগুলো অল্পতেই শিখে ফেললো। আমি নিশ্চিন্ত হলাম। আর এখানেই আমার ভুল হয়ে গেলো। হিসাবের গড়মিলে ফেলে আমাকে বাধ্য করলো বাচ্চা নিতে। আমি একটু রাগ করলেও মাতৃত্বের কথা ভেবে মেনে নিলাম সবকিছু। তাছাড়া আল্লাহর ভয় তো ছিলই, আল্লাহ দয়া করে যা দিয়েছেন তার প্রতি কঠোর হবার কোন অধিকার আমার নেই। আল্লাহর ওপর ভরসা করে আমি সন্তান নিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগলাম। মাস্টার্স পরীক্ষা দিলাম, পাশও করে ফেললাম। এর ভেতরই আমার ফুটফুটে বাচ্চা হলো।
মজার ব্যাপার হলো কি, আমি সন্তান ধারণের পরের মাসে আমার স্বামীর চাকুরী হয়ে যায়। খুব ভালো বেতন না, কিন্তু প্রথম চাকুরী যা হয়েছে তাতেই আল্লাহর শোকর আদায় করলাম। ভাবলাম, আমার সন্তানই এই সৌভাগ্য এনে দিলো আমাদের সংসারে। এর পর তো খুব ঘন ঘন বেশ ক’টা চাকুরী বদল করলো আমার স্বামী। একটার পর একটা করে চাকুরী বদলাতে বদলাতে খুব ভালো অবস্থানে চলে গেলো সে। আমি চাকুরী করতে চাইলে সে আমাকে বাধা দিল। বললো, মহিলাদের চাকুরী করার দরকার নেই। বিসিএস পরীক্ষা দিতে চাইলাম। ও আমাকে কোনরকম উৎসাহ দিল না, না ও করলো না। ফর্ম ফিলাপ করলাম, পরীক্ষাও দিলাম। কিন্তু লিখিত পরীক্ষাও পাশ করতে পারলাম না।
আমার বাবার বাড়ীর কাছেই একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করতে চাইলাম। বাধা দিল না। ততদিনে আমার দ্বিতীয় সন্তানের বয়সও দুই বছর ছুঁই ছুঁই করছে। আমি স্কুলে কোনমতে এক বছর কাজ করলাম। তারপরই শুরু হলো জ্বালাতন। আমাকে চাকুরী ছাড়তে হবে। তার একটাই যুক্তি, সন্তানদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। সন্তানদের যত্ন নেয়া হচ্ছে না। ওদের মানসিক গঠন জটিল হয়ে যাচ্ছে, বড় বাচ্চাটার স্কুলে ভর্তির সময় হয়ে গেছে। ওর দিকে সারাক্ষণ নজর দিতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
অনেক যুদ্ধ করলাম স্কুলের চাকুরীটা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ওর গোস্বা বেড়ে গেল আমার প্রতি। আমি ভেবেই পাই না, স্কুলে চাকুরী করলে তো দুটো টাকা বাড়তি আয় হয়। তাতে সমস্যা কি? আমার আয়ের টাকা তো আমি সংসারেই খরচ করি। তাহলে সমস্যা কোথায়? আমি তো ওর ইগোতে হাত দিচ্ছি না, তাহলে!
চাকুরীটা একেবারে না ছেড়ে দু’মাসের ছুটি নিলাম। বেশ কাজ হলো ওতে। এই দু’মাসে আমি ওকে বোঝাতে পারলাম আমারও কিছু একটা করা দরকার। তা না হলে মাস্টার্স পাশ করলাম কেন? ওই কষ্টটুকু না করলেও তো এমন আহামরি কোন ক্ষতি হতো না। আমার স্বামী কি মনে করে আবার নরম হলো। দু’মাসের ছুটি শেষ করে আবার স্কুলে জয়েন করলাম।
এবারে কিন্তু একটা অদ্ভূত কাণ্ড করে বসলো আমার স্বামী বেচারা। বলা নেই, কওয়া নেই। হুট করে একদিন চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে বাসায় মিষ্টি নিয়ে আসলো কেজি দশেক। আমি ব্যাপারখানা জিজ্ঞেস করতেই বললো, আর বলো না আজকে প্রমোশন হলো আবার। আর অফিসে যেতে হবে না। তাই সবাইকে মিষ্টি মুখ করাতে চাই এই আর কি।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম, তোমার প্রমোশন হয়েছে অথচ অফিসে যেতে হবে না! তার মানে কি? তুমি কি রিজাইন দিয়ে এসেছ?
আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো আমার স্বামী বেচারা। হাসতে হাসতে দম বন্ধ হবার জোগাড় আর কি। এটা একদম ব্যতিক্রম তার জন্য। যদিও সে হাসিখুশী থাকে সব সময়। তারপরও এ রকম পাগলের মত হাসে না কখনো। এক সময় হাসি থামিয়ে বললো, জানো আমি রিজাইন না করলে হয়তো আগামী মাসে আমাকেই ছাটাই করতো। কারণ, কোম্পানীর ভীষণ মন্দা যাচ্ছে, সিঙ্গাপুর আর ইউকে’তে দু’দুটো বড় ডিল বাতিল হয়ে গেছে। এরপর থেকেই হাই প্রোফাইল কয়েকজন অফিসার রেখে মিড রেঞ্জের সেন্ট পারসেন্ট অফিসারকে ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানী।
এর মাস খানেকের মধ্যেই আত্মকর্মসংস্থানে নেমে পড়ে আমার স্বামী বেচারা। তেমন কিছু না, একটা কম্পিউটার-ফটোকপি’র দোকান দিয়ে বসে বাসার কাছেই। শুরু হয় তার নতুন জীবন। একা একা সামলাতে পারে না বলে এক বন্ধুকে দিয়ে গ্রাম থেকে এক ছেলেকে আনিয়ে নেয় দোকানের জন্য। একেবারে গেঁয়ো ছেলে। লুঙ্গি পড়েই দোকান করে প্রথম কয়েকদিন। নামটাও গেঁয়ো, আবুইল্যা। আমি তো শুনে হাসতে হাসতেই শেষ। ওর নাম পাল্টে রাখলাম আব্দুল আলী। আলী বলেই ডাকতে থাকতে থাকে সবাই। দোকানেই থাকে, দোকানেই ঘুমায়, ঘরে এসে খেয়ে যায় তিন বেলা। খাবার ব্যাপারেও তাকে দেখি খুব সাধারণ। আমার স্কুল বন্ধের দিন তিন বেলাই আমি নিজ হাতে খাবার বেড়ে পর্দা ফাঁক করে খেতে দেই। ও হাত বাড়িয়ে নেয়। আর অন্যান্য দিন আমার রান্না করে রেখে যাওয়া খাবার আমার স্বামী আর ও মিলে ড্রইং রুমে নিয়ে খেয়ে নেয় নিজেদের মতো করে। ও হ্যা, এই ফাঁকে আমার অনুপস্থিতিকালীন সময়টুকু বাচ্চাদের পিছনে ব্যয় করতে শুরু করে আমার স্বামী। আমিও একটু দুশ্চিন্তামুক্ত হই।
যেদিন আমার ছুটি থাকে, সেদিন সকালের নাস্তা আমি নিজ হাতে বেড়ে দেই। ছেলেটা একাই খেতে আসে, আর আমার স্বামী দোকানে বসে। ছেলেটা নাস্তা খেয়ে যাওয়ার পর খেতে আসে আমার স্বামী। আব্দুল আলী নাস্তা খেতে আসলে জোগাড়যন্ত্র করে পর্দার ওপার থেকে এগিয়ে দেই আমি, আর ও ড্রইং রুমে বসে খেয়ে নেয়। এ রকম একদিন দু’দিন করতে করতে প্রায় তিন বেলাই আমার স্বামী আর আলী পালা করে খেতে আসতে শুরু করে।
এভাবেই চলছিল ঠিকঠাক মতো সবকিছু। আমি পর্দার আড়াল থেকেই ওর খাদ্যাভ্যাসের ভালোমন্দ সবকিছুই জেনে ফেলি এক সময়। পান্তা খেতে ভীষণ পছন্দ তার। বলে কিনা পান্তা খেলে তার পেট ঠাণ্ডা থাকে। রুটি বেশি খেলে তার জন্ডিস হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। পান্তা পেলে ডিম ভাজি আর কাঁচা মরিচ দিয়ে চটকে ঝাল করে খায়। আমি আড়াল থেকে দেখি পর্দা ফাঁক করে। ওর মজা করে খাওয়া দেখে আমিও মাঝে মাঝে টেস্ট করি। মাঝে মাঝেই ছেলেটার বাড়ীর খোঁজখবর নেই। তার মা’র কথা জিজ্ঞেস করি। বাবার কথা জিজ্ঞেস করি। ওর বাবা থাকে দুবাই, অনেক বছর হলো। দুয়েক বছরের মধ্যেই চলে আসবে। ওর বড় ভাই দুটোও বাবার সাথেই দুবাই থাকে। ওরা সবাই কয়েক বছরের মধ্যে দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করবে এমনই চিন্তা-ভাবনা। আমি তার কথায়-কাজে মজা পাই। বেশ ভালো লাগে, মায়া হয় ছেলেটার জন্য। এরই মধ্যে বছর না ঘুরতেই একবার জন্ডিসও হয়ে যায় তার। তখন আমার স্বামীই একজন লোক দিয়ে জোর করে তাকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়।
মাসখানেক পরে অসুখ থেকে উঠে আবার ঠিকই দৌড়ে চলে আসে ছেলেটা। এই মাসখানেক কেমন যেন ছন্দপতনের মতো মনে হচ্ছিল আমার সবকিছুতে। আমার স্বামীর সাথে তো আমার গল্প করাই হতো না, যাও একটা মানুষ ছিল- সেও নেই। রাত নয়টা না বাজতেই বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়ে আর আমি বসে বসে অপেক্ষা করতে থাকি আলী’র জন্য। ও খেতে এলে প্রায় ঘন্টাখানেক লাগিয়ে দেয়। আমার স্বামী তাতে কিছু মনে করে না। বরং খুশিই হয় একটু রিলাক্স দিতে পেরেছে বলে। এই একটু টিভি দেখে, একটু কথা বলে, আবার খায়, খেতে খেতে গল্প বলে, ছেলেমানুষী সব গল্প, দোকানে কাস্টমারদের সাথে আমার স্বামীর মজার মজার কথাবার্তা ইত্যাদি ইত্যাদি।
ততোদিনে আলীর বছর দেড়েক পার হয়ে গেছে আমাদের বাড়ীতে। সে এখন এই পরিবারেরই সদস্য। যারা চেনে না, তারা সবাই ওকে আমার কোন তুতো ভাই মনে করে বসে থাকে। অনেক পরিবর্তন হয়েছে তার। গেঁয়ো ভাবটি একদমই উবে গেছে, একদম কচি খোকা খোকা ভাবটা কেটে গেছে, কথাবার্তায় অনেক স্মার্ট হয়ে গেছে সে। আর তার আচার-আচরণও কেমন বদলে গেছে বলে মনে হলো আমার কাছে। কারণ, হঠাৎ করেই আমি খেয়াল করতে শুরু করলাম পর্দার ফাঁক দিয়ে খাবার এগিয়ে দেয়ার সময় আমার হাতের সাথে তার হাত লেগে যাচ্ছে। ভাবলাম হয়তো অনিচ্ছাকৃত। বিষয়টা মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করতেই বুঝলাম ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত। আমি না বোঝার ভান করে বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু দিন দিন ব্যাপারটা আরো ঘনিষ্ঠভাবে করতে শুরু করলো সে। আগে শুধু হাতে হাত ঠেকাতো, কিছুদিন যেতে না যেতেই আমার আঙ্গুলের ওপর ওর আঙ্গুল ফেলতে শুরু করলো। এটাকেও আমি স্বাভাবিকভাবে নিতে চেষ্টা করলাম। আর সত্যি বলতে কি, আমারও একটু একটু করে বিষয়টা ভালো লাগতে শুরু করলো। মাঝে মাঝে হাতের স্পর্শ না পেলে থমকে যেতাম আমি।
একদিন ঘোর বর্ষার ভেতর রাতের খাবার খেতে এলো সে। ও যখন ঘরে ঢোকে তখন হালকা বৃষ্টি ছিলো, কিন্তু ঘরে ঢুকতেই শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। সেদিন সেই বৃষ্টি থেমেছিলো রাত বারোটার দিকে। সেদিনই ঘটলো সেই আশ্চর্য ঘটনাটি। খাবার দেওয়ার পরও অনেকক্ষণ বসে থাকলো, খেলো না। আমি পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখলাম খাচ্ছে না ছেলেটা, কি যেন ভাবছে নিবিষ্ট মনে। আমি দরজায় নক করে বললাম, এই আলী খাচ্ছ না কেন?
ছেলেটি পর্দার দিকে একবার তাকিয়ে অনেকটা আপন মনেই বললো, এমনিই, ভাল্লাগতাছে না।
আমি মিষ্টি ধমক লাগালাম, ভালো না লাগলে চলবে, খাও খাও। বলে পর্দার এপারে দাঁড়িয়ে রইলাম। ছেলেটা কেমন যেন ঘোর লাগা কণ্ঠে বললো, শোনেন।
ওর কথা শুনে মনে হলো খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে কিছু। পর্দার ফাঁকে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলাম, কি বলো?
এইটা ধরেন। বলে কিছু একটা দেওয়ার ভঙ্গি করে হাত বাড়ালো। আমি সত্যি মনে করে হাত বাড়ালাম। ছেলেটা বললো, এক হাত না দুই হাত।
এবার দুই হাত বাড়িয়ে পেতে দিলাম কিছু নেওয়ার জন্য। ছেলেটা করলো কি, আমার দুই হাত খপ করে ধরে ফেলে চুমুর পর চুমু দিতে শুরু করে।
বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি, কিছুটা ঝড়ো বাতাসও বইছে সাথে। বাচ্চারা ঘুমিয়ে, বাসায় আমরা দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই। এমন সময় এ রকম একটি কাণ্ড কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা কল্পনাতীত। আলী’র এই দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডে বিস্ময়ে, ভয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই আমি। আমি এতটাই বিস্ময়াহত হয়ে পড়ি যে, আমার হাত টেনে নেওয়ার কথাও ভুলে যাই বেমালুম। ছেলেটা আমার হাতে চুমু দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে থেমে যায়। আমার হাত তার গালে চেপে ধরে করুণাপ্রার্থীর প্রলাপ বকতে থাকে, আমি আপনাকে ভালবাসি ম্যাডাম, আমি আপনাকে ভালবাসি। এটাই আমার জীবনের প্রথম ভালবাসা, দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না, পিস্নজ...। আরো কি সব বলতে থাকে।
ততক্ষণে আমি ভয়ে, দ্বিধায়, উত্তেজনায় ঘেমে-নেয়ে একাকার। আমার কি হলো কে জানে, আমি ছেলেটার উপর রাগ করতে পারলাম না। জোর করে ছাড়িয়েও নিলাম না হাতদুটো।
আমার জীবনে এই প্রথম কোন পুরুষ মানুষ ভালোবাসার করুণাপ্রার্থী হলো। আমাকে আর কেউ কখনো এভাবে ভালবাসার কথা বলে নি। আমার স্বামীর সাথে আমার সম্পর্ক তো স্বাভাবিক স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্ক। এর বাইরেও যে ভালবাসার সম্পর্ক থাকতে পারে তা এই প্রথম আমি জানলাম। তার ভালবাসাকে আমি অস্বীকার করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারলাম না। আমার মনে হলো একজন মানুষ আমাকে ভালবাসে তো বাসুক না, ক্ষতি কি। এতে তো আর মহাভারত শুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে না! আর তা ছাড়া ভালবাসলেই তো আর সবকিছু শেষ হয়ে গেল না! আমার মায়া লাগলো ছেলেটার প্রতি, আমিই নাকি তার জীবনের প্রথম ভালবাসা, আহ্ কি অবিশ্বাস্য উচ্চারণ! একজন বিবাহিত নারী, দু’সন্তানের জননীকেও কেউ ভালোবাসতে পারে, আশ্চর্য! আমি তার প্রথম ভালবাসাকে দলিত-মথিত করে দিতে পারলাম না। আমি শুধু কম্পিত কণ্ঠে বললাম, তুমি সত্যিই আমাকে ভালবাস?
ছেলেটা তার ধরে আসা, বুঁজে আসা কম্পিত কণ্ঠে বললো, হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালবাসি।
আমি এবার দ্বিধা ঝেড়ে ফেললাম, বেশ তো। এখন হাত ছাড়ো, বাচ্চারা উঠে যাবে।
ছেলেটা আমার হাত ছেড়ে দিলো। পর্দার এপারে আমি, ওপারে আলী নামের দুঃসাহসী ছেলেটা। সে কিনা আমাকে ভালবাসে! কি আশ্চর্য কথা, আমার স্বামী-সংসার সব কিছুই তার চোখের সামনে, তারপরও সে আমাকে ভালবাসে! ছেলেটা আমার স্বামীর দোকানের শিক্ষানবিশ কর্মচারী, তারপরও সে আমাকে ভালবাসে! আমি এই ভালোবাসা রাখবো কোথায়! আমি অস্থির হয়ে পড়ি।
বেশ কিছুক্ষণ কেটে যায় এভাবে। ছেলেটার কথায়ই আমার ঘোর ভাঙে। পর্দার ওপাশ থেকে সে ফিসফিসিয়ে বলে, আমি আপনার চেহারাটা দেখব একটু, পিস্নজ।
আমি এবার স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। স্কুলের আঙিনা পার হবার পর আমি কঠোরভাবে ধর্ম পালন করা শুরু করি। নাক-মুখ ঢেকেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করি। আমার স্বামী ছাড়া আর কোন পুরুষকে আমি দেখা দেই নি। অথচ এই পুঁচকে ছেলেটা কি না আমাকে ভালোবাসার কথা বলছে, আবার সেই দাবী নিয়ে দেখতেও চাইছে, আশ্চর্য! ছেলেটা আবারও আমাকে একবার দেখার জন্য মিনতি করে। আমি ভাবি, যে ছেলে আমাকে এত ভালোবাসে, সে একবার দেখুক না আমাকে, ক্ষতি কি! আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি, অস্ফুটে বলি, পর্দা সরিয়ে দেখে নাও, শুধুমাত্র একবার।
আমি প্রচণ্ড ঘামতে শুরু করি। অনুভব করি ছেলেটা পর্দা সরিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ে, লজ্জায় চোখ খুলতে পারি না। এ আমার কি হলো! আমি তো এত তরল ছিলাম না কখনো! এত সহজেই গলে যাবার পাত্রী তো কখনোই ছিলাম না আমি! আজ এ কি হলো আমার!
এভাবে কেটে গেলো বেশ কিছুক্ষণ। বাইরে ঝড়-বৃষ্টি কমে এলো। বৃষ্টি কমতে শুরু করেছে, হয়তো থেমে যাবে অল্প কিছুক্ষণের ভেতর। ছেলেটা কম্পিত কণ্ঠে বললো, আপনি কাঁদছেন কেন?
তার কথায় আমার ভেতরের অস্থিরতা আশঙ্কায় পরিণত হলো। ভাবলাম হয়তো ছেলেটা সীমালংঘন করে ফেলবে। আর অগ্রসর হতে দেয়া যায় না। একটু কঠিন স্বরেই বললাম, তুমি সীমালংঘন করছো, যাও, বৃষ্টি কমে গেছে, খাওয়া শেষ করে চলে যাও।
কাজ হলো কথায়, পর্দার ওপারে সরে গেলো সে। সোফায় বসে নাকে-মুখে দু’চারটে খেয়ে কমে আসা বৃষ্টির ভেতরই ভিজতে ভিজতে চলে গেলো।

সেদিন থেকে আমার ভেতরে ভাংচুর শুরু হলো প্রবলভাবে। আমার স্বামীর প্রতি আমার ভালোবাসা যদিও কমে নি। কিন্তু আলীর প্রতি আমার মায়া জন্মে গেলো খুব।
আমাদের ঘরটা লম্বা স্কুল ঘরের মতো একচালা টিনশেড বিল্ডিং। মূল বাড়ীর উত্তর পাশে মেস ঘর ভাড়া দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। আমাদেরকে একান্নবর্তী সংসার থেকে আমাকে আলাদা করে দেবার পর এ পাশে চলে আসি। তখন রাস্তার সাথের একটি রুম দোকান বানানো হয়, তার পরের রুমটা ভাড়া দেওয়ার মতো করে রেখে ঐ রুমের দরজা পার করে বড় লোহার গেট বসানো হয়। ভিতরের সার সার তিনটা রুম নিয়ে আমরা বসবাস শুরু করি। ওই তিন রুমের ভিতরে স্নাইডিং দরজা করে রুমগুলোয় একটা থেকে আরেকটায় যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়। আমাদের রুমের সামনে ছয় ফিট চওড়া লম্বা উঠোন। উঠোনের শেষ প্রান্তে আমাদের রুমের বিপরীতে বাথরুম আর রান্নাঘর পাশাপাশি। উঠোনের উল্টো দিকটা আমার শাশুড়ীর ঘরের পিছন দিক। যোগাযোগের জন্য একটা দরজা খোলা হয়েছে আমরা এ পাশে থাকতে শুরু করার পর। বাইরের রুমটা আমার স্বামীই পরিচালনা করতো। সেখানে আলীর থাকার ব্যবস্থা করে আরো তিনটি সিট ভাড়া দেওয়া হতো।
গেটের ভেতরের অংশে আলীর রুমের জানালা পড়েছে, যা সাধারণত খোলা হতো না। কিন্তু সেদিনের পর থেকে সেই জানালার একটা কপাট সব সময় খোলা থাকতে শুরু করে। কারণে অকারণে যখনই আলী রুমে আসে গেটে একটা নির্দিষ্ট ছন্দে আওয়াজ তুলে রুমে ঢুকে যায়। আর আমার কি হয়, আমি সমস্ত কাজ ফেলে হয়তো কাপড় নাড়ার ছুতোয় কিংবা উঠান ঝাড়ু দেওয়ার ছল করে জানালার কাছে চলে আসি, কথা বলি, একেবারেই অপ্রয়োজনে নক করলে কখনো কখনো ধমকেও দেই। সে জানালা একটু ফাঁক করে আমাকে দেখে, আমি বুঝি, পুলকিত হই এবং কিছুক্ষণ পর আবার আমার সংসারের কাজে মনোযোগ দেই।
এ এক শিহরিত অনুভূতি। আমি উচ্চ শিক্ষিত এবং পর্দানশীন হওয়ার পরও উচ্ছল কিশোরীর মত আচরণ করতে শুরু করি। খাবার খেতে প্রায়ই হাত ধরে ফেলা, ওর হাতে চাটি মারা, পর্দা ফাঁক করে আমাকে সময়ে অসময়ে দেখা এসব এখন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারি নি। এমনো ভেবেছি, সব কিছু খুলে বলি আমার স্বামীকে। তাহলে ছেলেটাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিলেই আমি বেঁচে যাই। কিন্তু কোন এক প্রচণ্ড দ্বিধায় আর সেই কর্মটি করা হয় নি।

এবারের বর্ষাটা অনেক লম্বা হয়েছে। সেই যে শুরু হয়েছে আর থামার লক্ষণটি নেই। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা কখন যে বৃষ্টি শুরু হবে তার কোন ঠিকঠাক নেই। তবে রাত ন’টার পর বৃষ্টি শুরু হলে আমি খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠতাম। কারণ, তখন আলী বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই খেতে আসতো, আর বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত বের হতো না। আমি কামনা করতাম বৃষ্টি যেন না থামে মাঝ রাত পর্যন্ত।
কিন্তু এই বৃষ্টির কারণেই যে আমার এত বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে তা কে জানতো! আমার এখনো ভয় হয় সেদিনের কথা ভাবলে! সেদিন রাত দশটার দিকে খেতে আসে আলী। ও আসার পর প্রবল বর্ষন শুরু হয়। আমি ওকে খাবার বেড়ে দেই। ও বসে থাকে, খাওয়া শুরু করে না। অন্যদিন প্যান্ট পরে আসে ঘরে, কিন্তু আজ ওকে লুঙ্গি পরা দেখলাম। হয়তো প্যান্ট বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে থাকতে পারে ভাবলাম।
বাইরের দরজা দিয়ে বৃষ্টির ছাট আসছিলো দেখে বন্ধ করে দিলাম। বাচ্চারা ঘুমিয়ে আছে খাটে। ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে দুটো মোটা কাথা দিয়ে কোন রকমে শোয়ার ব্যবস্থা করলাম একটু বিশ্রাম নেব বলে। এমন সময় মাঝের
স্নাইডিং দরজার কাছে পর্দার ওপাশ থেকে ডাকলো আলী, ম্যাডাম।
আমি উঠে গিয়ে পর্দার এপাশে দাঁড়িয়ে ধমকে উঠলাম, কি ব্যাপার খাওয়া শুরু কর নি এখনো?
না, খেতে ইচ্ছা করতাছে না।
তাহলে?
আপনাকে দেখতে ইচ্ছা করতাছে।
একেবারে অনুনয়ের সুরে বলে ওঠে সে, টের পেলাম তার কণ্ঠ কাঁপছে উত্তেজনায়। আমার একটু অবাক লাগলো। এমন তো ইদানিং হয় না তার, প্রথম প্রথম হতো দেখার আব্দার করলে, তাহলে আজ কি হলো!
আমি এমনতরো কিছু ভাবছিলাম। বাইরে বৃষ্টি মাত্রা বেড়ে গেলো, বাতাস বইতে শুরু করলো ঝড়ের রূপে। চালের ওপর মেহেদী গাছের ডালপালা বাড়ি খেতে লাগলো। আর আলী হঠাৎ করে ঝড়ের বেগে পর্দা সরিয়ে এপাশে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। সে পাগলের মতো আমার চোখে-মুখে-গালে চুমু খেতে লাগলো। আমার বিমূঢ় ভাবটা কাটতে না কাটতেই আমি ওকে দু’হাতে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইলাম। সে আরো শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরলো আমাকে। আমার ঠোঁটে দীর্ঘ চুমু খেলো। আমি ওকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে ঢিল ছেড়ে দিলাম। আর এই সুযোগে সে আমাকে নিয়ে মেঝেতে পাতা বিছানায় গড়িয়ে পড়লো।
এবার আমি সর্বশেষ চেষ্টা করলাম নিজেকে বাঁচাতে, কিন্তু পারলাম না। আলী পূর্ণাঙ্গ পুরুষ হয়ে উঠলো। ততক্ষণে সে আমাকে সম্পূর্ণ দখল করে ফেলেছে। আমি তার শরীরের নিচে পিষ্ট হতে হতে কেঁদে ফেললাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম, এ তুমি কি করলে আলী? আমার এত বড় সর্বনাশ তুমি করতে পারলে?
আলী আমার কান্নাকে পাত্তা দিল না। জিহবা দিয়ে আমার চোখের জল শুষে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, আজ আমার ভালবাসা পূর্ণ হলো সখি। তুমিই আমার জীবনের একমাত্র নারী, তুমিই প্রথম, তুমিই শেষ। আমি তোমাকে ভালবাসি। ভালবাসবো চিরকাল। তোমার জন্য আমি সারাটি জীবন অপেক্ষা করব। এই কথা বলতে বলতে আলী তার সমস্ত ভালবাসা এবং পৌরুষ ঢেলে দিল আমার ভেতর। অসহায় আমি লজ্জা-বেদনা-ঘৃণা-আনন্দের মিশ্র অনুভূতিতে মৃয়মান হয়ে গেলাম। আমার একেকবার মনে হচ্ছিল একটি ভয়ংকর কুকুর আমাকে খুবলে খুবলে খেয়ে ফেলছে, আবার মনে হচ্ছিল আমাকে ভালবাসায় পূর্ণ করে দিচ্ছে এক কামার্ত পুরুষ। একেকবার মনে হচ্ছিল আমি নোংরা হয়ে গেছি, আবার মনে হচ্ছিল- ভালবাসায় পূর্ণ আমার দেহ।
ঝড় তার পূর্ণ বেগ ধারণ করলো, চালের ওপর পূর্ণ বেগে আছাড়িবিছাড়ি খেতে লাগলো মেহেদী গাছের ডালপালা। প্রচণ্ড শব্দে কাছাকাছি কোথাও বজ্রপাত হলো। বিছানায় বাচ্চারা চমকে উঠে কেঁদে দিয়েই আবার ঘুমিয়ে পড়লো। আর আমাকে ছেড়ে লাফিয়ে উঠে ঘর থেকে সন্তর্পনে ভিজতে ভিজতে বেরিয়ে গেলো আলী ।
এমন একটি ঘটনা আমার জীবনে ঘটে যাবে কোনদিন আমি কল্পনাও করি নি। সেই ঘটনার পর আত্মহত্যা করার ইচ্ছা জেগেছিল আমার ভিতর। কিন্তু কেন আত্মহত্যা করব? আত্মহত্যা করা তো মহাপাপ। আর আমি তো স্বেচ্ছায় এমনটি করি নি। আমি তো আমার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম নিজেকে বাঁচাতে, কিন্তু পারি নি।
আমাকে ক্ষমা করে দাও প্রভু, ক্ষমা করে দাও। আমি নামাজের বিছানায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।
নিজের ওপর প্রচণ্ড ঘৃণা জন্মায় আমার, ছেলেটাকে এতটা প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হয় নি। প্রথম থেকেই কঠোর হওয়া উচিত ছিল আমার। কিন্তু কি করবো, আমি তো অতশত চিন্তা করি নি। বিয়ের আগেই যে একটা পুঁচকে ছেলে এমন পুরুষ হয়ে উঠবে সে কথা আমার মাথায়ও ঢোকে নি কখনো। আমি আলীর ভালবাসাকে খেলা খেলা বলেই ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন, এখন কি হবে আমার? আমি এই ঘৃণিত, নোংরা শরীর নিয়ে কি করে যাবো আমার স্বামীর কাছে? ভাবতে ভাবতে আমি অস্থির হয়ে পড়ি এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নেই, এ জীবনে আর স্বামীর শয্যাসঙ্গী হবো না। সধবা হয়েই বৈধব্যব্রত পালন করব।
পরদিন সকালে স্কুলে যাবার সময় স্বামীকে টিফিন ক্যারিয়ার কিনে আনার কথা বললাম। সেদিন থেকেই খাবার পাঠিয়ে দিতে লাগলাম দোকানে। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, খাবার যেভাবে পাঠাতাম সেভাবেই ফেরত আসতে থাকে প্রতিদিন। স্বামীকে জানালাম খাবারের বিষয়টা। উনি ধমক লাগালেন ছেলেটাকে। তাতেও কাজ হলো না। টানা এক সপ্তাহ এমন হলো, এই ক’দিন একবারও তার সাথে দেখা করি নি। আগে-পরে সব সময় স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় দোকানে উঁকি দিয়ে দেখা করে যেতাম। দুয়েকটি কথা বলতাম। রিক্সা খুঁজে দিতে বলতাম। কিন্তু এই এক সপ্তাহ আমি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেলাম আলীকে।
সপ্তাহ পার হওয়ার পরও যখন দেখলাম আগের মতই খাবার ফেরত আসছে তখন ভীষণ মায়া লাগলো ছেলেটার প্রতি। ছেলেটা তো না খেয়ে না খেয়ে বড় কোন অসুখ বাঁধিয়ে ফেলবে। আমার স্বামীই আমাকে বোঝালো- ঘরে খেতে খেতে ওর অভ্যাস হয়ে গেছে, এজন্যই বোধহয় টিফিন ক্যারিয়ারে খেতে চায় না। তাছাড়া না খেতে খেতে ওর শরীরটা এই কয় দিনে বেশ খারাপ হয়ে গেছে। খেয়াল করে দেখ তুমি, কি অবস্থা হয়েছে ওর? তুমি এক কাজ কর, টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার দেয়া বন্ধ কর। ঘরে বসেই খাক না, তাতে কি এমন ক্ষতি? না হয় একটু দেরীই করলো, আমি সে সময়টা দোকান চালাচ্ছি না! ওকে ঘরেই খেতে দাও।
আমার দয়ালু স্বামী কি সুন্দর করেই না বললেন ওকে ঘরে খেতে দেয়ার কথা। কিন্তু কি যে জ্বালাতন সে আমি বুঝি। কি করে আমি স্বামীকে সবকিছু খুলে বলি ভেবে পাই না। একবার বলি বলি করে বলেই ফেলেছিলাম আর কি, কিন্তু আবার চেপে গেলাম। উনি যত ভালোই হন না কেন, সবকিছু জানার পর কি তিনি আমাকে আর বিশ্বাস করবেন কখনো? সারা জীবনেও না। তাহলে? আমি সবকিছু চেপে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করলাম।
স্বামীর ইচ্ছা, উপদেশ মেনে অনেকটা অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও আলীকে ঘরে খেতে আসতে বলে দিলাম স্কুল থেকে ফেরার সময়। সেদিন রাতে সে খেতে আসলো, কিন্তু খেলো না কিছুই। বসে বসে ভাত নাড়াচাড়া করলো অনেকক্ষণ, তারপর উঠে চলে যেতে উদ্যত হতেই আমি আড়াল থেকে ধমকে উঠলাম- এই দাঁড়াও দাঁড়াও। তুমি খাচ্ছ না কেন আজকাল? কি হয়েছে তোমার? হ্যা, কি হয়েছে? রাগ করার কথা আমার, সেখানে তুমি রাগ দেখাচ্ছ কেন?
এতগুলো কথা বলে আমি হাঁপিয়ে উঠি। থামতেই আলী বলে, না রাগ না। খেতে ইচ্ছে করে না, তাই খাই না।
ইচ্ছে করে না কেন? হ্যা, তুমি কি কচি খোকা, তোমাকে জোর করে খাওয়াতে হবে?
না জোর করতে হবে না, আপনার হাতটা দেন, তাহলে খাবারে রুচি হবে।
কি আশ্চর্য, কি স্পর্ধা ছেলেটার! ওর কথা শুনেই আমার শরীরটা ঝিম ঝিম করে উঠলো। এই ছেলেটা তো আমাকে ঘরছাড়া করে ছাড়বে? আমি থমকে গেলাম। দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম সিলিং ফ্যানের দিকে। বন বন করে ঘুরছে ফ্যান, আমার মাথা আর বুকের ভেতরও যেন এ রকম অনেকগুলো ফ্যান ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু।
তাহলে আমি গেলাম। ঠিক আছে? ওপাশ থেকে বলে উঠলো ছেলেটা।
আমি স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। চলে গেলো আলী। কিছুই বললাম না। শুধু আমার দু’চোখ বেয়ে নেমে এলো অবাধ্য অশ্রম্নধারা।

আমার স্বামী ঘরে আসলে আমি কিছুই বললাম না। শুধু বললাম, তোমার সাগরেদ তো খায় না কিছু। ওকে ডাক্তার দেখাও, আবার কি না কি অসুখ হয়ে যায়।
ও খুব চিন্তিত হলো, আচ্ছা কি করা যায় বলো তো? কি হলো ছেলেটার? সারাক্ষণ দেখি মনমরা হয়ে থাকে। কাজ-কর্মেও তো মনোযোগ নেই দেখি।
এক কাজ করো। ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দাও। দুদিন বাদেই তো রোজা শুরু। একেবারে রোজা আর ঈদের ছুটি কাটিয়েই আসুক না হয়।
আচ্ছা ঠিক আছে, কালকেই ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দেব, ক’টা দিন বিশ্রাম নিয়ে আসুক।
আমার স্বামী বেচারা ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখতে শুরু করলো। ও ড্রয়িং রুমের খাটে আলাদা ঘুমায়, প্রয়োজন হলে আমি তার সাথে শুই, তা না হলে বাচ্চাদের সাথেই ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু সেদিনের সেই দুর্ঘটনার পর থেকে আর আমি তার সাথে ঘুমাতে যাই নি একবারও। ও ঘরে এলেই আমি নামাযে দাঁড়িয়ে যাই। লম্বা নামায পড়ি। আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে টিভি দেখতে দেখতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে ও। আমি টিভি অফ করে মশারি ঠিকঠাক করে দিয়ে বাচ্চাদের সাথে ঘুমিয়ে পড়ি।

পরদিন ছুটি পেয়েই বাড়ী চলে যায় আলী। আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। রোজা শুরু হয়ে যায়। আমি সব কিছু ভুলে ব্যস্ত হয়ে পড়ি ইবাদতে।

এমনিতে আমার মাসিক নিয়মিত। কিন্তু রোযা শুরু হয়ে প্রায় শেষ হতে থাকে। এমন সময় আমার খেয়াল হলো আমার মাসিক হচ্ছে না। অথচ হিসাব মত রোজা প্রথম সপ্তাহেই আমার পিরিয়ড শুরু হওয়ার কথা। আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম। এমন তো হওয়ার কথা নয়! এটা কি কোন অনিয়ম, নাকি কোন কিছু ঘটে গেলো আবার! হিসাব করে দেখলাম প্রায় দুই মাস হতে চললো আমার মাসিক বন্ধ। এর মধ্যে আমি স্বামীর সাথে একবারের জন্যও বিছানায় যাই নি। তাহলে কি আলীর কারণে আমি কনসিভ করে ফেলেছি? ভাবতেই আমি ভীত হয়ে পড়লাম। সববনাশ, কি হবে এখন? আমি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। আমার স্বামী যদি বিষয়টা খেয়াল করে তবেই সেরেছে। অবশ্য আমাকে নিয়ে তার উল্টাপাল্টা কিছু ভাববার মতো কোন কারণ ঘটে নি আজো অবধি। তাহলে কি করা যায়? ডাক্তারের কাছে গিয়ে খালাস করে আসবো? ভাবতেই আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠলো। না না, তা করা যাবে না, তাতে আমি ধরা পড়ে যাবো। তাহলে?
ভাবনায় আমার ঘুম-খাওয়াদাওয়া হারাম হয়ে যায়। আমি অথৈ পানিতে পড়ি। কারো সাথে শেয়ারও করতে পারি না বিষয়টা। শেষে নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নেই স্বামীর বাহুবন্ধনে ধরা দেবার। বিষয়টা যদি কনসিভ হয়ে থাকে তবে মাসখানেক পরে জানালেই হবে তাকে। তাহলে এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ হবে না তার। স্বাভাবিক ব্যাপারই মনে করবে সে।
এতসব কিছু কিছু ভেবে ভেবে মনস্থির করতেই ঈদ চলে এলো। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগালাম। স্বামীকে প্রলুব্ধ করার জন্য খুব সেক্সি স্টাইলে শাড়ী পড়তে শুরু করলাম। তাতে কাজ হলো। স্বামী বেচারা আমার দিকে মনোযোগী হলো খুব। বহুদিনের অপ্রাপ্তি যেন চাগিয়ে তুললো তাকে। খেয়াল করলাম, এখন আর টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যায় না। একটার পর একটা চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে আমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ভোর ছুঁই ছুঁই রাত অবধি।


আব্দুল আলী:
.................
আমি জানি না আমার কি হবে, অপেক্ষা ছাড়া আমার আর কোন কিছুই করার নেই। কিন্তু কিসের জন্য অপেক্ষা! মায়া, মরীচিকা, কুহেলিকা, নাকি কোন রমনী মাতা’র জন্য? জানি না আমি, কিছুই জানি না। আজ মোবাইলে সে আমাকে যা বলল, তাতে সারা জীবন অপেক্ষা করা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই।
দুইবার টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করে মেট্রিক পাশ করার আশা ছেড়েই দিলাম। ঘরে বসে সারাক্ষণ ছবি আঁকি, গান শুনি আর প্রহর গুণি দুবাই যাবার। বাবা আর ভাইদের মতো আমিও দুবাই যাব, চাকরি করে টাকা জমাব, আর এক সময় দেশে ফিরে এসে বড় কোন ব্যবসা করব, এ রকমই চিন্তা। ঠিক এমন সময় ছোট মামার এক বন্ধু আমাকে ঢাকায় কাজ করবো কি না জানতে চাইল। মালিক নাকি খুব ভালো, অমায়িক এবং সহজ-সরল। আপন ছোট ভাইয়ের মতোই রাখবেন আমাকে। কম্পিউটার-ফটোকপির দোকান। খাওয়া-দাওয়া মালিকের বাসায়ই। থাকার কোন ভাল ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত দোকানেই থাকতে হবে। মামার প্রস্তাবটা শুনেই আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। হাতের কাছে কম্পিউটার পাব ভাবতেই আমার দেহে শিহরণ জাগলো। শখ করে কম্পিউটার কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম ক্লাস নাইনে ওঠার পর। কিন্তু চর্চার অভাবে তা ভুলেই গেছি এতদিন। সেটা ঝালাই হয়ে যাবে। তাছাড়া পড়ালেখা তো করিই না, সময়টা কেটে যাবে তরতর করে। দুবাই যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওখানেই থাকতে পারব মনের আনন্দে।
তারপর একদিন চলে এলাম ঢাকায়। পাড়া-মহল্লার ছোটখাট দোকান একটা। একটা কম্পিউটার, একটা ফটোকপি ছাড়া আর কিছু নেই দোকানে। স্যার প্রথম দিনই আমাকে মায়ায় ফেলে দিলেন। ড্রয়িং রুমে নিয়ে বাড়ীর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ভিতরের বাথরুমে গিয়ে গোসল করতে দিলেন আর যত্ন করে খাওয়ালেন। জীবনে এই প্রথমবারের মতো বাড়ীর বাইরে কারো বাসায় গিয়ে খেলাম। খুব ভালো হয়েছে এমন নয়, তবে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। ম্যাডাম আমার সামনে আসেন নি। উনি খুব কড়া পর্দা করেন। আড়াল থেকেই আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, আবুইল্যা। শুনে তো উনি হাসি আর ধরে রাখতে পারলেন না। হাসতে হাসতেই আমার স্যারকে বললেন, এই তুমি এ কোন আবুল আনলা দোকানে, হ্যাঁ! তারপর তিনি পর্দার ওপার থেকেই সমন জারি করলেন, এই ছেলে শোন তোমার নাম আজকে থেকে আব্দুল আলী, বুঝলা?
আমি একটু হতভম্ব হয়ে গেলাম ম্যাডামের এই ব্যবহারে। তারপরও আমার মনে হলো নামটা তো বেশ হয়েছে। আব্দুল আলি, বাহ সুন্দর নাম। মনে মনে বেশ ক’বার আওড়ালাম। আর কেমন যেন ম্যাডামের প্রতি একটু দুর্বল হয়ে গেলাম সেই প্রথম দিনই। আমি ছোট মানুষ, মাত্র ষোল পার হলো, কিন্তু ম্যাডামের প্রতি যে আকর্ষণ তৈরি হলো তা কোনভাবেই ষোল বছরের বালকের নয় এ আমি বিলক্ষণ বুঝতে পারলাম।
সে যাক, সেই প্রথম দিনের মুগ্ধতাই আমাকে ম্যাডামের দিকে কেবলই চুম্বকের মতো আকর্ষণ করতে থাকে। ম্যাডাম স্কুলে চাকরি করতেন। স্কুলে আসা-যাওয়ার ফাঁকে দোকানে ঢুকে খোঁজখবর নিতেন, রিক্সা করে দিতে বলতেন, রিক্সা ভাড়া চেয়ে নিতেন ইত্যাদি ইত্যাদি। যতবার আমি ম্যাডামকে দেখতাম, ততবারই আমার ভেতর কি একটা যে হতো বোঝাতে পারব না। উনি বয়সে আমার মায়ের বয়সী হবেন নিঃসন্দেহে, কিন্তু দেখতে ছোটখাট বালিকাসদৃশ। উনার আঙ্গুলগুলো চাপাফুলের মতো, চোখজোড়া হংসবলাকার মতো সুন্দর। চেহারা তো তখনো দেখি নি। কি এক উদগ্র বাসনা বার বার চেপে বসতো উনাকে দেখার জন্য।
আমি আর স্যার পালা করে খেতে যেতাম ঘরে। বেশির ভাগ সময়ই দোকান রাত বারটার দিকে বন্ধ করতাম। স্যার কম্পিউটারে বসে ইন্টারনেট চালাতেন, মুভি দেখতেন অথবা কোন বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতেন। ঘরে যেতেই চাইতেন না। ঘুম আর খাওয়া ছাড়া যেন তার ঘরে যেতে মানা। আমি রাতের খাবার খেতে যেতাম রাত ন’টার দিকে। ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখতাম। এই ফাঁকে ম্যাডাম খাবার বেড়ে এনে পর্দার ওপাশ থেকে ডাক দিতেন। আমি হাত বাড়িয়ে নিতাম।
ম্যাডামের প্রতি আমার প্রথম দিনের মোহ কোনদিনই কমে নি। বরং খেয়াল করলাম প্রতিদিনই তা কেবল বাড়ছেই। খেতে খেতে ম্যাডামের সাথে কথা বলতাম, খুব ভালো লাগতো আমার। আর কেবল ইচ্ছে করতো ম্যাডামকে দেখার। তো একদিন ইচ্ছে করে
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান গল্পের গড়নটাই শুধু বিশাল নয়, বিষয়বস্তুর বিশালত্বও ব্যাপক। কুশলী হাতের অনবদ্য সৃষ্টি।
জাফর পাঠাণ কিরে ভাই এত ধৈর্য কোথ্থেকে পান আপনারা ? আপনাদের লিখায় ধৈর্য হারায় না অথচ আমি গল্প পড়তে গেলে ধৈর্য হারিয়ে ফেলি তার উপর গল্পের ট্রেন লাইনটি যদি হয় দীর্ঘ তাহলেতো কথাই নেই।আর কতদুর ষ্টেশন ? মোবারকবাদ ।দোয়া করি আল্লাহ আপনার ধৈর্য টেনে লম্বা করে দিক আকাশ সম !!!
ধন্যবাদ বাবুল পাঠান।
শিউলী আক্তার ভিন্ন ধারায় ভীষণ ভাল লাগলো ------- শুভ কামনা ধুমকেতু ।
ধন্যবাদ শিউলী আক্তার।
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন কয়েকবার আসতে হল শেষ করতে। তবে ভাল লাগল বেশ।
ধন্যবাদ
আশিক বিন রহিম amar mobailer skin coto..(komputar nai) tobu-o dirgho somoy dhore golpoti ses korlam..ato comotkar likhecen bissas korun aktu-o kosto hoyni
ধন্যবাদ আশিক বিন রহিম, এত ধৈর্য ধরে পড়েছেন জেনে আপ্লুত হলাম।
জিয়াউল হক ধুম কেতুর মতই প্রক্ষেপন তার ...অভিনব কায়দা ।কিন্তু গল্পের নায়িকা ম্যাডাম না হয়ে হাজারো নারী রুপ ব্যবহার করা যেত । কেন্ না আমাদের দেশে ম্যাডাম বলতে যে কোন সম্মানিত নারী কে বুঝায় না বরং সম্মানিত শিক্ষয়িত্রী দের বোঝায় । তাকে নিয়ে যৌনতা, সুড়সুড়ি বা জড়িয়ে ধরা বা চুমু খাওয়ার ইচ্ছা করে লেখার স্ট্যান্ডার্ড যথেস্ট কমানো হয়েছে বলে মনে হয় ।।যদিও লেখকের লেখার যথেষ্ট হাত পাকা ।
ধন্যবাদ জিয়াউল হক, খুব তীর্যক মন্তব্যের জন্য।
রোদেলা শিশির (লাইজু মনি ) গল্পটি যদি ও অনেক বড় .... তবু পড়ে শেষ করতে পারলাম .... !! তবে পড়তে কষ্ট হয়নি মোটে ও .... !!
এশরার লতিফ সাবলীল লেখা, সাথে চেতনা-প্রবাহ, শুভেচ্ছা.
আহমেদ সাবের তান্নি আর আব্দুল আলীর (আবুইল্যা) নিষিদ্ধ সম্পর্কের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব দারুণ ভাবে ফুটে উঠেছে আপনার মায়াবী কলমের টানে। অসাধারণ গল্প।
ধন্যবাদ সাবের ভাই। ভালো লাগলো আপনার উপস্থিতি।
নৈশতরী ভাই আপনার বর্ণনার তুখড় ক্ষমতা দেখে, আমি না, যে কেউ চমৎকার চমৎকার বলে চেঁচিয়ে উঠবে ! অসাধারণ বিচক্ষণতা না থাকলে, কেউ এভাবে তীক্ষ্ণ বিষয় গুলোকে ভেঙ্গে সাজাতে পারে না ! কিন্তু গল্পের থিম টা অন্যরকম হলেও কিন্তু আপনার লিখা বা গল্প খারাপ হবে না ! আর ভাই আমি ব্যক্তিগত ভাবেই সেগুলতে কিছু থাকলেও খুজে দেখতে ভয় পায়, যদি সেগুলই আমার ভাললাগা হয়ে যায় ! যাই হোক ভাই, অনেক বক বক করলাম, আসলে পুরা গল্পটা পড়ে বার বার শুধু মনে হচ্ছিল থিমটাই আমার না; বাকি সব আমার !
এত আপন করে কথাগুলো বললেন- মনটা ভরে গেল। ভালো থাকবেন এবং দোয়া করবেন।

২৫ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪