শুন্য ব্যবধান

শাড়ী (সেপ্টেম্বর ২০১২)

জাকিয়া জেসমিন যূথী
  • ৫৭
  • ৫৯
।।একঃ নিশাতের কথা- ‘দূর অতীতে আমি একা’।।

আমার ঘুম ভেঙ্গেছে। মাথাটা খুব ভার ভার লাগছে! ঘাড় কাত করে বোঝার চেষ্টা করছি কোথায় এখন! ঘরটা খুব অন্ধকার! এত অন্ধকার! এত রাত এখনো! ধুর! সকালটা বড় বেশি দেরীতে আসে।
ডান কাত থেকে গড়িয়ে বাম কাত হয়ে আবার একটু ঝিমিয়ে পরি। ঘুমোতে চেষ্টা করি। ঘুমোলে সময় পেরোবে।
জেগে জেগে অন্ধকারে ছাদের দিকে চেয়ে থাকি কিছুক্ষণ। কতক্ষণ সেই হিসেব জানা নেই। ফ্যানটা ভোঁ ভোঁ শব্দ করে চলেছে। একটানা। শব্দহীন ফ্যান দরকার একটা। নিশ্চুপ একটা জায়গা পেলে ভালো হতো। আশেপাশে লোক না থাকলে আরো ভালো হতো। বিশেষ করে চেনা লোক।
বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে আছি। এভাবে জেগে থাকলে খুব ক্ষুধা পায়। এই ক্ষুধাবোধ যদি না থাকতো তাহলে আরো ভালো হতো। সারাদিন এই ঘরটায় বন্দী থাকতে ভালো লাগে না। ইচ্ছে করছে ফ্রিজে কি আছে গিয়ে খুঁজে দেখতে। কিন্তু, কাউকে মুখ দেখাতে ইচ্ছে করে না যে। বিশেষ করে দুলাভাইয়ের সামনে মুখ দেখাতে ইচ্ছে করে না। বেচারা আমার জন্য কত কথা শুনলো।
আমার চারপাশের মানুষগুলোই যেন কেমন! এমন একটা মানুষ নেই যার সাথে একটু মন খুলে মনের কথা বলা যায়। পিদিমাপুর সাথে অনেক দিন কথা নেই।

বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা এমন যে এখানে রোগী যতটা না অসুস্থ থাকে তার চারপাশের মানুষ তাকে নানা প্রশ্নে ও পুরনো কথা মনে করিয়ে আরো বেশি অসুস্থ করে তোলে। এরা কেন বোঝে না যে আমি অসুস্থ নই।
আমার মানসিক অবস্থা চেঞ্জ করার জন্য আমাকে যদি এরা দূরে কোথাও নিয়ে যেতো! আমি আমার অতীতকে ভুলতে চাই। নিজের জীবনটাকে নতুন করে সাজাতে চাই। আমি আগের মত ঝলমল সোনা রোদের মত ঝিকমিক করতে চাই।
কিন্তু এরা আমাকে সতেজতা দেয় না। এখন প্রতিটি জীবন্ত দিন পাথর চাপা হয়ে আসে বুকের ভেতর! এরা কেউ বুঝে না আমাকে। আমাকে নতুন করে বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করতে চায় এরা। কিন্তু বিষন্ন মুখটায় কি আমার অতীত লেখা আছে? আমি হেরে যাচ্ছি বার বার।
কেউ একজন এসে যদি জয় করে নিতো আমায়!
‘যেভাবে বেঁচে আছি- এটা বাঁচা নয়, জীবনের সাথে প্রহসন। মৃত্যুর বিষাদে দীর্ঘ অপেক্ষায় তবুও পথচলা!’

।।দুইঃ নিবিড়ের মায়ের কথা- ‘আনন্দ বুঝি এলো এই দোরে’।।
‘এই নিরু, আমি কিন্তু হাবিবের গান গাবো!...’
‘ধুর! কি যে বলো ভাইয়া! হাবিব কেন, বালাম। বালাম’ মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে উঠে তানি।
‘আসিফ ইকবাল হলে কেমন হয়!’ বলে উঠে মাহী।
‘আরে যাহ মাহী! তোরা সব পিছনে পরে আছিস। বিয়েশাদীতে এইসব বাংলা গান টান মানায় না। হিন্দী হিট ফিল্মগুলোর গান সিলেক্ট কর্। তারপর ঠিক কর্ কে কোন্ পার্ট করবি!’ কথাগুলো ওদের মধ্যে সবার চেয়ে সিনিয়র ও মাত্র কলেজে পা দেওয়া মুকুলের।
বসার ঘরে আমার ভাই বোনের ছেলেমেয়েগুলো হৈচৈ করছে। ওদের আনন্দ টের পাচ্ছি। অবশেষে ওদের সবচেয়ে বড় খালার ছেলে বিয়ে করতে যাচ্ছে! ওদের খুশি হবারই কথা।
আমি চিন্তায় আছি। একমাত্র ছেলের বিয়ে। নিবিড় আমার একমাত্র ছেলে। খুব মা নেওটা ছেলে আমার। কিন্তু এমন একটা কাজ করে বসবে ভাবতেও পারিনি।
কোন মেয়েকেই পছন্দ করতে পারে না। একবার বলে খুব ট্যালেন্ট মেয়ে চায়। বাইরে গিয়ে ওর মত পিএইচডি করবে। ঠিক আছে। খুঁজলাম। বুয়েট থেকে দারুন মেধাবী মেয়ে খুঁজে দেখালাম। তখন বলে চেহারা সুইট হলে ভালো হতো। কারো ক্ষেত্রে বললো চেহারা এখন ঠিক আছে, কিন্তু পরে মুটিয়ে যাবে। হেন তেন কত খুঁত ধরে এখন সে যাকে পছন্দ করেছে তাকে অন্তত আমার পছন্দ হয়নি। নাক বোঁচা। কেমন উপজাতীদের মত লাগে। এই মেয়ে কোন দিক দিয়ে সুন্দরী হলো কিছুতেই বুঝতে পারছি না।
মেয়ে আমার মোটেও পছন্দ না। তবুও কিছু বলছি না। একবার নিজের পছন্দ চাপিয়ে দিতে গিয়ে যে কষ্ট পেয়েছি এবার সেটা আর করছি না। সবকিছুই নিবিড়ের পছন্দমত করার চেষ্টা করছি।
তবে, পুরোপুরি শান্তি পাচ্ছি না। বুকের ভেতরে চাপা একটা উত্তেজনা। কষ্ট! কেমন থম ধরে যাচ্ছে। একটা সাধারণ মেয়েকে শুধু শুধু কষ্ট দিয়েছি। জানি না মেয়েটা এখন কেমন আছে। যোগাযোগই করবো কোন মুখে!
এমন মা নেওটা ছেলে যে আমাকে এভাবে ডোবাবে আমি কি জানতাম! এই বিয়েটা নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি। শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিক থাকবে তো। নিশাতের একটা ব্লাউজ এখনো আলমারীতে পরে রয়েছে। আর শাড়িগুলোরও কিছু কিছু রয়ে গেছে। এখনো। একটা বিয়ের জন্য কেনা এত্তগুলো শাড়ি কি কোন উপলক্ষ্য ছাড়া সবাইকে দেয়া যায়! মনে রেখো’তে শুধু প্রথম তিনটে শাড়ি ফেরত নিয়েছে। তাও শান্তি! পার্লারে পরাবার মত শাড়ি বাসায় রেখেও তো লাভ নেই। বাকিগুলো থেকেও কিছু কিছু নিজের বোনদের মধ্যে বিলিয়েছি। মেয়ের জন্য রেখেছি কিছু। এর পরেও রয়ে গেছে কিছু। দেখা যাক এখন সেগুলো কাজে লাগানো যায় কিনা। তবে ভেবে চিন্তে দূরে কাউকে দিতে হবে যাদের সাথে ছেলের বৌয়ের দেখা হবার সম্ভাবনা কম। নইলে কথায় কথায় আবার কি ফাঁস হয়ে যায়!
ছেলেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মুখ চোখ লক্ষ্য করি। বুঝতে চাই ছেলে খুশি হয়েছে তো? আসলেই রাজী তো? আগের বার অত নাটকীয়তার কি দরকার ছিলো! এবারেও তো...! আর ভাবতে পারি না। বুকে হাঁপ ধরে যায়।
ছেলেটা যে কি চায়! নিজে পেটে ধরেছি তাও নিজেই বুঝতে পারি না। মাঝে মাঝেই দীর্ঘশ্বাস চলে আসে। উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ তুমি এবার সবকিছু ঠিক ঠাক মিটিয়ে দিও। কোনমতে কবুল করা হয়ে গেলে আর ছেলে বউ নিয়ে ফিরে গেলে শান্তি পাই। এই চাপ আর সহ্য করতে পারছি না। আমি একা আর কত দিক সামলাবো! নিবিড়ের বাবা যদি বেঁচে থাকতো! লোকটা মরে বেঁচেছে। এত অশান্তি চোখে দেখতে হচ্ছে না!

।।তিনঃ নিবিড়ের কথা-‘বর্তমানে অতীতের সুর’।।
আমার ইদানিং ঘুম হচ্ছে না। ক’দিন পরে আমার বিয়ে। সব ঠিক ঠাক। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে খুঁজে খুঁজে অবশেষে একজন সুন্দরী পেলাম। সবাই বলে আমি নাকি অতিরিক্ত বাছাই করছি। এত খোঁজাখুঁজি করতে করতে নাকি একটা যাচ্ছেতাই জীবন সংগী জুটবে আমার। বরং আপু ছিলো কিছুটা ব্যতিক্রম। ওর কথাই ঠিক হলো অবশেষে। আমার জুটির জন্যই আমি অপেক্ষা করছি। তাই এত মেয়ে দেখেছি। আগেরগুলো থেকে পছন্দ করতে পারিনি। তাদের মধ্য হতে কাউকে দেখেই মনে হয়নি, ‘এতদিন কোথায় ছিলে!’
অবশেষে পেলাম। অবশেষে পেলাম আমি তারে। ‘তোমাকেই চাই নির্নিমেষ নয়নে শুধু তোমাতেই হারাতে চাই!’ কি সুন্দর হাসলে গালে টোল পরে। একদম প্রিতি জিন্তার মত লাগে!
অবশেষে কাল বিলম্ব না করে ওর সাথে বাঁধা পরলো ডায়মন্ড রিং এ আমার জীবন।
কিন্তু- প্রতি রাতে আমার দু’চোখ বুজলেই নিশাত এসে দাঁড়ায় কেন? এতদিন পরে! আমার কি তবে কোন দোষ ছিলো? আমি কি ভুল করেছিলাম?
চোখ বুজলেই ওর সাথে রেগুলার এই রকম কথা হচ্ছে-
‘নিবিড়, তুমি তাহলে বিয়ে করতে ফিরেছো?’
‘হ্যাঁ, কেন করবো না?’
‘নিশাতের স্বামী হবার কথা কার! এই পুষ্প আসে কোত্থেকে!’
‘পুষ্প তার নিজের জায়গায় এসেছে। ভালোবাসার বাগান নিয়ে। তুমি তো আমাকে সময় দিলে না। তাই তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে আমি ঠিক কাজটিই করেছিলাম। পরে শুধু শুধু দুটো জীবন নষ্ট হতো। তুমি কষ্ট পেতে!’
‘কিভাবে? কি দোষ ছিলো আমার?’
‘তোমার কোন দোষ ছিলো না! দোষ আমার নিয়তির!’
‘মানে?’
‘আসলে আমার পরিবার তোমাকে নিয়ে অনেক বেশি তাড়াহুড়া করেছিলো। তোমাকে আরো একটু বুঝতে সময় দরকার ছিলো আমার।’
‘নিতে সময়। কে মানা করেছিলো? তার বদলে তুমি পালিয়ে গেলে!’
‘না! আমি পালিয়ে যাইনি। বিশ্বাস করো। তোমার জন্য মানে আমাদের দুজনের জন্য কক্সবাজারে হানিমুনের রুমও বুকিং দেয়া হয়ে গিয়েছিলো। যেটা আমি তোমার জন্য সারপ্রাইজ রেখেছিলাম। প্রথম দেখার দিন তোমার ঐ একটা ইচ্ছের কথা আমি ভুলিনি।’
‘তুমি মিথ্যে বলছো, নিবিড়!’
‘না! না! নিশাত, তুমি জানো না! তুমি অনেক কিছুই জানো না।’
‘সব মিথ্যে, নিবিড়। তোমার ফ্যামিলি। তোমার বোন। মা। সবাই আমাদের ভালোমানুষীর সুযোগ নিলো। কি পেলো ওরা? কি পেলে তোমরা আমার মনটা ভেঙে দিয়ে, বলো? কি পেলে?’
‘না, নিশাত, না! নাআআআ! তুমি...’ জেগে উঠে বসি ঘুম হতে। জেগে বসেও আনমনে বলতেই থাকি, ‘আমি কাউকে ঠকাই নি। আমি তোমার ভালো চেয়েছিলাম।
যখন আমি বাসায় এসে কথাটা তুললাম, মেয়েটা যেন একটু কম রোমান্টিক! তখন একেক জন একেক মন্তব্য ছুঁড়ে দিলো। তোমার ফিগার ফিট না! এর চেয়েও সুন্দরী আছে! হেন তেন! আমি তো তোমাদের কিচ্ছু জানতাম না। শুধু মাঝে মাঝে ছবি দেখেছি। দেশ থেকে আমার মা আমাকে ছবি পাঠাতে বড় আপুকে কনভিন্স করতো। আমি বুঝতে পারতাম। সব সময় ‘ভালো’ শুনতে শুনতে একটা সময় আমি হ্যাঁ বলে ফেলি। বিয়েতে রাজী হয়ে যাই। কিন্তু, নিশাত, তুমি তো আমাকে ততটা জানার সুযোগ পাওনি। একটা অচেনা ছেলেকে এভাবে অন্যদের কথায় কনভিন্স হয়ে বিয়ে করে তুমি কি নিজেও একটা বিশাল ভুল করতে না? তোমাকে আমি এই নষ্ট হওয়া জীবন হতে রেহাই দিতে চেয়েছিলাম। আর তুমি আমাকে ভুল বুঝলে!’
অনেকক্ষণ থম ধরে বসে রইলাম। অনেকটা সময় পরে আবার বালিশে মাথা ছোয়ালাম। পুরনো ঘটনাগুলো কেন বারে বারে ফিরে ফিরে আসছে বুঝতে পারছি না!
কাউকে যে জিজ্ঞেস করে একটু হালকা হবো তারও জো নেই। আম্মার মুখের দিকে তাকালে কষ্ট হতে থাকে। আগের বার যখন এসেছি, মায়ের মধ্যে সে কি উচ্ছ্বলতা! একে তাকে শাড়ি দেবে। কত লিস্ট! নিজের বান্ধবীদেরই এক বিশাল বাহিনী আসার কথা ভেবেছিলেন। এবার মায়ের ভাব ভংগীই বলে দিচ্ছে যা কিছু একটা হোক। হয়ে গেলেই যেন তিনি বেঁচে যান। শুধু আমার ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি। কিছুটা যেন ভয়ে ভয়ে। যেন অনাকাংখিত কিছু হয়ে যাওয়ার দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। কিন্তু, এমনটা তো আমি চাইনি। আমি যদি শুধু নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে বিয়ে করব তাহলে এখানে আসতে হয়! ফ্লোরিডায় কি বাঙ্গালী মেয়ে নেই? শুধু বাবা-মায়ের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে ছুটে আসলাম এখানে। অথচ এরা সব আমাকেই দোষী করে রেখেছে! আগে বুঝতে পারিনি।
আমি কি করবে? জীবনসঙ্গিনী হিসেবে এমন কাউকে চেয়েছি যাকে দেখলে হৃদয়ে কম্পন উঠে। সময় থমকে যায়।
শুধু প্রেম নয়। আমার পছন্দ ক্যারিয়ার সচেতন হাসিখুশি মেয়ে। তা নইলে ঘরে বসে বসে ফরেন কান্ট্রিতে বোর হয়ে যাক বউটা তেমনটি চাই নি। এজন্যেই ভালো রেজাল্ট জরুরী। যাতে ভালো জায়গায় সুযোগ পায়। দেশের মত পড়াশুনায় চলবে নাকি!
ভালো চাকরি বা গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। মন ফ্রেশ থাকবে। আমি যতটা সময় কাজ নিয়ে ল্যাবে ব্যস্ত থাকব ততটা সময় তার নিজেরও একটা জগত থাকবে।
নিশাতের মধ্যে সবকিছু না পেলেও ওর ইউএসএ’তে উচ্চ ডিগ্রি নিতে চাওয়ায় আমার বরং ভালোই লেগেছিলো।
কিন্তু প্রবলেম বাধালো ওর বর্তমান পড়াশুনাটা। এক বছর সময়ের মধ্যে ও মাসখানেক ছুটি পাবে জেনে প্রস্তাব করেছিলাম, ‘আমি রিটার্ন টিকেট করে দেব। তুমি তাহলে আম্মার সাথে ঐ ছুটিতে আমার কাছে গিয়ে থাকতে পারবা।’
কিন্তু জবাব শুনে থ মেরে গিয়েছিলাম। উত্তরটা ছিলো এরকম, ‘যে ছুটি পাবো সে সময় আমাকে ভালো করে পড়াশুনা করতে হবে না? ছুটিতে বাইরে গেলে পরবো কিভাবে? ভালো রেজাল্ট না করতে পারলে আমি কিভাবে বাইরে পড়ার সুযোগ পাবো?’
‘বাহ! ও যদি এখন এখানেই থাকবে তাহলে কি লাভ বিয়ে করে। বিয়েটা না হয় পরের বছরই তাহলে হোক।’
একটা ইয়াং মেয়েকে বিয়ে করে দেশে রেখে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ওকে পাহারা দিয়ে রাখবে কে! তার চেয়ে কথাবার্তা সব ঠিকঠাক থাক। এক বছরে ইচ্ছের মন যদি পরিবর্তন না হয়ে থাকে বিয়েটা এখানেই হবে। কিন্তু এখন নয়।
কিন্তু, না। ওর বুবু-দুলাভাই বা মামা বাড়ির কেউ এটা মেনে নিতে পারলো না। নিশাতেরও নিজের যেন বলার কিছু নেই। তখন আরো বিশ্বাস হয়ে গেলো যে, আসলে আমাকে বিয়ে করার ব্যাপারে সেরকম আগ্রহ নেই। উন্নত বিশ্বে পড়বার এমন মাধ্যমকে ও বা ওর ফ্যামিলি কিছুতেই ছাড়তে রাজী নয়! তাই বিয়েটা তখনি হয়ে যাওয়াটাই ওরা চাইছে।
বিয়ের নামে একটা রোবট চাইনি কখনই। আমার দরকার একটা কথা বলার মানুষ। দুজনের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে দূরে থেকেও কাউকে মানসিক সংগ দেওয়া যায়। এই মেয়ে কি তা দেবে? মানসিক গ্রোথ কম আছে মনে হচ্ছিলো, মেয়েটির।
কেউ বুঝলো না। কেউ বুঝলোনা মেয়েটির মধ্যে কি সমস্যা। শুধু সুইট দেখতে দেখেই সবাই পাগল হয়ে গেছে।
ফ্যামিলি থেকে কেউ বুঝতেই চায় না, আগে ছেলে মেয়ের পরস্পরকে বোঝা দরকার। তারপর বিয়ে ঠিক করা দরকার। তা নয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ সেটেল ম্যারেজে বিয়ের কথা সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে আসল দুজনের কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। ততদিনে পছন্দ না হয়ে উঠলেও অনেক মেয়েই সেই বিয়ে মেনে নেয়। এমনটা একজন শিক্ষিত সংস্কৃতিবান সচেতন পুরুষ, আমার জীবনেও ঘটবে!
আমি জাস্ট আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না। আমার একটু একা হওয়া দরকার ছিলো। তাই আমাকে ফিরে যেতেই হলো।

।।চারঃ নিশাতের বোন দুলাভাই এর কথা ‘কাগজের খেলাঘর’।।
নিশাতের জন্য আমার খুব কষ্ট হয়। আমি ওর একমাত্র দুলাভাই। দুলাভাই মানে তো আপন বড় ভাইয়ের চেয়ে কিছু কম না। অনেক ভেবে চিন্তে মিসেস আজিজ এর ছেলেটাকেই উপযুক্ত ভেবেছিলাম। সব সময় শুনতাম ছেলেটা নাকি মায়ের কথা একটুও অমান্য করে না। সেই ছেলের বিয়ের পাত্রী হিসেবে তিনি যখন আমার নিশাতকে পছন্দ করলো তখন বেশি কিছু ভাবতে যাইনি। একবারও মনে হয়নি আজকালকার ছেলে। মায়ের কথার অবাধ্য হবে না অবশ্যই। এমনটাই ভেবেছিলাম। এতিম শিশুর সাথে নাকি সবসময়ে ভালোই হয়ে থাকে। তাহলে আমাদের নিশাতকে কেন এমন কষ্ট পেতে হলো!
আমি এখনো জানি না কেন ওরা বিয়েটা ভেঙে দিয়েছিলো। শুধু নিশাতের কাছে শুনেছিলাম, নিবিড়ের নাকি ওকে বুঝতে সময় দরকার। নিবিড় সময় চেয়েছে।
সবকিছু ঠিক ঠাক হয়ে যাওয়ার পরে আবার সময় কিসের! কমিউনিটি সেন্টার ঠিক করে ফেলার পরে এই ধরনের কথা শুনলে কার মেজাজ ঠিক থাকে। আমার মনে তখন কুঁ ডাক দিচ্ছিলো। মামাদের সাথে পরামর্শ করে আরো দ্বিধান্বিত হয়ে পরেছিলাম।
সব শেষে ওরা জানিয়েছিলো- নিবিড়ের বড় বোন পিদিমের বিয়ে না দিয়ে ছোট ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হওয়ায় নাকি ওর চাচা ফুপুরা রাগ করেছে। তাই ওরা বিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে।
এত আজব লেগেছিলো কথাটা। কারো সাথে পরামর্শ না করেই কি উনি আমাদের সাথে সম্বন্ধ ঠিক করেছিলেন? অবশ্যই না! আসল কথাটি কি তা সম্ভবত ঐ নিবিড়ের মধ্যেই রয়েছে। যে সমস্যাটি ওরা খোলাসা করেন নাই।
‘আমরা কি এক বছর অপেক্ষা করবো?’ জিজ্ঞেস করেও কোন সদুত্তর মেলেনি।
নিশাত খুব ভেঙ্গে পরেছিলো। কিন্তু বোধহয় অপমানিত বোধ করেছিলো তাই ঐ সময় আর কোন প্রশ্নে না যেতে অনুরোধ করেছিলো।
কিন্তু আমি জানি সেটা আমার শালীর অভিমানের কথা। শিক্ষিতা মেয়ে! মানসম্মান বোধ প্রবল! বুক ফাঁটবে তবু মাথা নত হতে দেবে না।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নিবিড় যখন ছুটি শেষে ইউএসএ তে ফিরে যাবে তখনো তো কেউ এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে এলো না!
পরের কয়েকটা মাস খুব খারাপ সময় গেছে আমাদের। নিশাতের বিশেষ করে। ওর মধ্যে অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেলো। ও একদম বোবা হয়ে গেলো। নিজেকে গুটিয়ে নিলো অনেকখানি। কোনরকমে শুধু পড়াশুনাটা চালিয়ে গেলো। বিয়ে ভাঙ্গার পর পর কয়েক সাবজেক্টে একটু কম পেলো। ফার্মেসী বিষয়টাতে পূর্ণ মনযোগ না দিতে পারলে চলে না। আমি ওকে আবার উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করবো। ওর বাইরে পড়ার শখ ছিলো সেটা আমি অপূর্ণ রাখবো না। আমার শশুড় মশায় বেঁচে থাকলে মেয়ের জন্য এটা অবশ্যই করতেন।
এই শেষ কয় মাসে মেয়েটাকে যেন একটু সুস্থির লাগছে। সব শোক কাটিয়ে উঠতে পারলেই ভালো।
‘কি ভাবছো?’ বউ কখন এসেছে পাশে টের পাইনি। একটু হকচকিয়ে গেলাম।
পিদিমকে শপিং করতে দেখেছি তা কি ওকে বলা ঠিক হবে?
বউ আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘কি ব্যাপার, ভাবছো বোধহয় কিছু? তোমাকে যেন কেমন লাগছে! শরীর খারাপ?’
আর কি করবো! এই একজন। আমার একেবারে ভেতরটা পড়ে ফেলে যেন। কিচ্ছু লুকানো যায় না। সব শুনে বউ প্রায় চিৎকার করে উঠলো,
‘পিদিমকে? তুমি কি বলছো, এইসব?’
‘হ্যাঁ, আমার তো তাই মনে হয়। নইলে এত্ত কেনাকাটা। তুমি বুঝে দেখো, নিজের বিয়ের কেনাকাটা করতে কি কোন মেয়ে বের হয়? পিদিমের হাতে আমি এত্ত শপিং ব্যাগ দেখলাম। আর তাছাড়া নিবিড়ের দেশে আসার সময় এটা।’
‘তোমাকে দেখেনি?’
‘হ্যাঁ, দেখেছে। একটু আগেই যেখানে আনন্দ ঝিলিক দিচ্ছিলো চোখেমুখে। আর যখনি আমার দিকে চোখ পরেছিলো, কেমন যেন আনন্দটা দপ করে নিভে যেতে দেখলাম। আমাকে ওখানে আশা করেনি বোঝাই যায়। কেমন বিব্রত হয়ে গেলো। এগিয়ে এসে কথাও বললো না একটু।’
‘ওরা তো জানিয়েছিলো পিদিমের একটা কিছু ব্যবস্থা হয়ে গেলে নিবিড় আর নিশাতের কথাটা নিয়ে ভাববে।’
‘তুমি যে কি বলো না! ওরা যদি সেটাই ভাবতো তাহলে এই এক বছরে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখতো। পিদিমের বিয়ে একটা ওযুহাত মাত্র।’
‘থাক, কণ্ঠ নামাও। তোমার শালী শুনতে পাবে।’

।।পাঁচঃ নিশাতের কথা- ‘যেভাবে বেঁচে আছি’।।
‘কোন কোন রাতে হঠাত ঘুম ভেঙে যায়
মধ্যরাতে একাই নিঃস্বংগ জেগে থাকি।
ঘরের ভিতরে সোডিয়াম বাতির জন্ডিস আলো
ছায়া ফেলে অগোছালো বিছানায়।
ঘরময় আলোস্রোতে ভেসে যাই—
তারুনয়ের বুকের দরজায় করাঘাত
অবাধ্য কিশোরের ধুলো মেখে গোল্লাছুট খেলা
স্মৃতি দুরন্ত বাতাসে এলোমেলো
সাঁতার কাটি যমুনার এপার ওপার। ...’

উঠেছিলাম ওয়াশ রুমে যাব বলে। এতক্ষণে আপু ও দুলাভাইয়ের প্রতিটা কথাই শুনেছি। যতই ভুলতে চাই, ততই এরা দৃশ্যের পরে দৃশ্য তৈরি করতে থাকে। এদেরও কি মান সম্মান নেই কিছু! একটা জীবনের সব আশা না হয় শেষ। স্বপ্ন শেষ। তাই বলে একটা পরিবারের সবার এটা নিয়ে সময় নষ্ট করার কোন মানে আছে! এরা কেউ এটা নিয়ে ভাবাভাবি বন্ধ করে না কেন?
আকাশে ছোট ছোট তারা। অনেক দূরে। ইচ্ছে করলেই ওদের ছোঁয়া যায় না। মানুষের মনে ভালোবাসাও বুঝি এমনি। অনেক দূর বাসিন্দা। যাকে ভালোবেসে ফেলেছে এই মন সে যখন দূর আকাশের তারার মত দূরত্বে চলে যায় তখন আর ছোঁয়া যায় না। এই এক বছরে মানসিক পরিবর্তনও হয়েছে অনেক। অথচ, বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়ে গেলো যখন তখনো তেমন কোন ফিলিংস কাজ করেনি। নিবিড় ভালো কথাই বলেছিলো। দুজন মানব মানবীর আসলেই সারা জীবনের শক্ত বন্ধনটিতে জড়াবার আগে একটু হলেও বুঝে নেয়া উচিত। পরে ডিভোর্স হবার চেয়ে অন্তত!
মানুষটা পড়াশুনার সুযোগ দিতে চেয়েছিলো। ভালোই ছিলো। শিক্ষিত। মন মানসিকতাও ভালো ছিলো। তবু যে কেন তখন অত উদাসীন হয়ে ছিলাম সত্যি এখন খুব বোকা লাগে নিজেকে। সেই তো পড়াশুনার পাট চুকে গেলো ঠিকই। এখনো একা পরে আছি। নিঃস্বংগ! একটু ভয়! পারবো কি নতুন কাউকে জুড়ে নিতে?
রাত তিনটা বাজে। ভোর হতে আর বেশি দেরী নেই। বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পরেও দু’চোখ আর এক করতে পারি না। চোখ বুজতে বুজতে ফজরের সময় হয়ে আসে। প্রায়ই।
ঘুমাতে চেষ্টা করেও না পেরে কিছুটা সময় পরে আবার উঠে বসলাম।
নিবিড় তাহলে ফিরেছে। এক বছর পরে ঠিকই ফিরে এলো। বিয়ে করবে নিশ্চয়ই। ওয়ার্ডরোব খুলে শাড়ির পাল্লাটা খুলে তাকিয়ে রইলাম। বোকার মত। নিবিড়দের বাড়ি থেকে পাঠানো সব শাড়ির মধ্যে একটা শাড়ি এখনো রয়ে গেছে। কিভাবে যেন এটা আর ফেরত যায়নি।
জামদানী শাড়ি! বাটা মেহেদী রঙের। এখনো পিদিম আপুর কণ্ঠ বাজে কানে। ‘ফর্সা টুকটুকে নিশাতকে মানাবে ভালো।’ বলে মিষ্টি হেসেছিলো আপুটা। বিয়ের প্রথম রাতের পর সকালে পরার জন্য দিয়েছিলো ওরা। সেই মিষ্টি সকালটা জীবনে আর এলো না।
বুকের ভেতরে হাহাকার ওঠে! জীবন মাঝে মাঝে ছলনা করে ভীষণ। যার কথা শুনতে শুনতে না দেখেই একটা আবছা ভালোবাসা গেড়ে ফেলেছিলাম হৃদয়ে তার সাথে শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটা না হওয়ার জন্য নিজেই দায়ী আমি!
বিয়েটা কার? কার বিয়ের শপিং করছে ওরা? পিদিমাপুর সাথে অনেকদিন যোগাযোগ নেই। খুব ভালো আপুটা। ভেঙে পরা সময়টাতে খুব জোর দিয়েছিলো মনের। অতটা ভেঙ্গেও শুধু ঐ একজন দূর থেকেও দূর কিন্তু আপন হয়ে পাশে থেকেছিলো বলে কেমন একটু একটু করে জোড়া লাগছিলাম আমি। আপুরা কেউ জানে না। বোধহয় নিবিড়ও জানে না।

।।ছয়ঃ পিদিমের কথা- ‘পূর্ণতা পাক ইচ্ছেগুলো’।।
এক বছর সময় পেরিয়ে গেছে। এই এক বছরেও আমার বিয়ের কোন সম্বন্ধ ঠিক করা হয়ে উঠলো না। অবশ্য আমার বিয়ের কথা কেই বা ভাবে। ছ’বছরের ছোট ভাইটার বিয়ে নিয়েই মেতে আছে সব। আর এদিকে যে বড় সন্তান ক্রমশঃ বুড়িয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। খেয়াল নেই কারো। বাবা থাকলে কি ভাবতো! কি জানি! সব মায়েরাই মেয়ের ভাবনাটা আগে ভাবে। আমি পেলাম উলটো!
আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে আমার মনে কোন আক্ষেপ নেই। শুধু মায়ের নির্লিপ্ততা আমাকে কষ্ট দেয়। নিবিড়ের প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নেই। হিংসা নেই। শুধু মনে হয়, মায়ের ভাবনাগুলো এমন হওয়া উচিত ছিলো না।
আমার বিয়ে নিয়ে যাদের এতটুকু ভাবনা ছিলো না সেই আমাকে দিয়েই নিবিড়ের বিয়ের ফাঁড়া কাটালো ওরা! সেই শেষ মুহুর্তে পিদিম নামক অস্তিত্বটা ছিলো বলেই না বেঁচে গেলো ওরা।
নিবিড়ের বড় বোন আছে যে! ছেলের ছোট বোন থাকলেই আগে বোনকে বিয়ে দিয়ে তারপরে ছেলেরা বিয়ে করে। আর এতো বড় বোন। তাকে রেখে ছেলের বিয়ের কথা পাকাপাকি মগের মুল্লুক নাকি!
এই কথাগুলো তো আগে কাউকে ভাবতে দেখিনি। বরং, সবসময় শুনেছি ‘এখন দিন পাল্টেছে। ছোট বড় যে কারোই প্রয়োজনে সিরিয়াল ভেঙে বিয়ে দিলে কোন সমস্যা হয় না। আর, পিদিমেরও কোন আপত্তি নেই।’
হাহ! পিদিমের আপত্তি! পিদিমকে কে জিজ্ঞেস করে দেখেছে! মায়ের মুখের কথাগুলো শুনলে না সত্যি খুব করূণা হয় আমার।
এসব আমি আর ভাবতে চাই না। তবু, দামী শাড়িতে হাত দিলে এই ঘটনাগুলো মনে পরে যায়। ঐ বিয়ে ঠিক হবার আগে যেখানে আমাকে একটা দু’হাজার দামের শাড়িই কখনো কিনে দেয়া হয়নি। সেখানে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে শাড়ি যখন দোকান থেকে আর ফেরত নিলো না তখন সবাই হৈ হৈ করে বাঁচলো এই ভেবে যে, আরে ঘরে তো নিবিড়ের একটা বোন আছে। ওর জন্যই রেখে দাও না সব। বউয়ের জন্য কেনা শাড়িগুলোও রেখে দাও। মেয়ের শাড়ির শখ আছে। ভাইয়ের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গেলে এইসব দামী শাড়ি পরে যাওয়া যাবে। আর ওর বিয়ের জন্যও অগ্রিম কেনা থাকলো। মেয়ের বাড়ি থেকে মেয়ের অবিবাহিত সময়ের জমানো শাড়ি নিয়ে যায় না?
সহজ সমাধান। আম্মাও বেঁচে গেলো। কিন্তু, শাড়িগুলো অতটা আনন্দে পরতেও পারছি না। শাড়িতে হাত দিলেই নিশাতের মিষ্টি মুখটা মনে পরে যায়। ওকে শেষ একটা কবিতা ইমেইল করেছিলাম। সৈয়দ আলী আহসানের ‘পারতে হবে’-
‘মরার মতো বেঁচে থেকে
শুকনো পাতার মতন থেকে
ধুলোর মত মূল্য নিয়ে
বেঁচেও তুমি বাঁচবে না।

তোমার জীবন তোমার হাতে,
ব্যস্ত হবে দিনে রাতে,
সকল সময় শুধুই চলা-
তা না হলে বাঁচবে না।

বিরাট নদী পার হয়ে যাও,
অনেক দূরের পথ চলে যাও,
অনির্দেশে যে পথ ওঠাও
হয়তো সেথায় সর্বনাশ;
সর্বনাশের সংগে তুমি
খেলবে খেলা রংগভূমি
দেখবে তখন বিরাট তুমি
সর্বনাশের তখন ত্রাস!

দেখবে আকাশ মাথার কাছে,
তারারা সব হাতের মুঠোয়,
কঠিন বলে কোন কিছুই
তোমার কাছে থাকবে না,
পারতে হবে সব কিছুই,
পারবে তুমি সব কিছুই
জীবনকে আজ অবহেলায়
উড়িয়ে দিতে পারবে না।’

কবিতাটি কোন বই থেকে তুলেছিলাম মনে পরে না। কিন্তু- যখনই আমার মন খুব খারাপ থাকে তখন আমি মনে মনে আওড়াই এটা। আমার এখন এটা মুখস্ত হয়ে গেছে। এটা পড়ে মাঝে মাঝে নিজের মধ্যেই হারানো শক্তি খুঁজে পাই! সংসার বাস্তবতার বাঁধাগুলো পেরিয়ে যাওয়ার শক্তি এই কবিতাটি।

অনেকদিন নিশাতকে খুঁজি না। ওর প্রথম কষ্টের দিনগুলোতে ওর পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। আমিও একটা মেয়ে। কিভাবে যে বিয়েটা ভেঙে গেলো তার সঠিক কারণ আমি এখন আর খুঁজে পাই না। সবার ধারনা ‘বিয়েটা হয়ে গেলেই নাকি বেশি সমস্যা হতো। না হয়ে বরং ভালোই হয়েছে।’ বিয়ের ঠিক আগে আগে নিশাত আর নিবিড় একা দেখা করেছিলো। কি হয়েছিলো ঐদিন যা জীবনে জটিলতা এনে দিলো? কিছু কিছু সময়ে ম্যাচিউর মানুষকে প্রশ্ন করা যায় না। বা বলা ভালো প্রশ্নও করা যায় না। একেই কি নিয়তি বলে!

নিবিড় অবশেষে খুঁজে পেয়েছে ওর মনের কাংখিত মানুষটিকে। ক’দিন পরেই বিয়ে! হবে তো শেষ পর্যন্ত! হোক। বিয়েটা হয়েই যাক। নিশাতের জন্যও অন্তর থেকে দোয়া করি নিবিড়ের চেয়েও বেশি সফল একজন মানুষ এসে ভালোবাসায় ভাসিয়ে নিক ওকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জগজিৎ ঘরময় আলোস্রোতে ভেসে যাই,,,গল্পটা পড়ে আলোর স্রোতে ভেসে গেলাম,,,ভিন্ন মাত্রার অসাধারন সৃষ্টি,,,
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
আপনার দেওয়া মন্তব্যটাও আমার কমেন্টের খাতায় একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করলো। অনেক ধন্যবাদ, এই শেষ বেলায় হলেও এসে পড়লেন বলে, বন্ধু জগজিৎ।
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
পাপিয়া সুলতানা অনেক ভাল ।
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা সহ শুভেচ্ছা।
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
এশরার লতিফ ভালো. গতিময় ভাষা.
ভালো লাগেনি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
সেলিনা ইসলাম একটু অন্য ধাঁচের নোতুন স্বাদের গল্প বেশ ভাল লাগল ! শুভকামনা রইল লেখিকার জন্য
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২
আপু, অনেক ধন্যবাদ, গল্পটি পড়ার জন্য।
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২
Sisir kumar gain সুন্দর গল্প,বেশ ভাল লাগলো।
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২
ধন্যবাদ, গল্পটি পড়ার জন্য।
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২
প্রিয়ম অনেক অনেক ভালো লাগলো আপু |
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২
অষ্টবসু Danger colour er sari para mukhhin elo chuler chabi dekhe lekhate asar sahas pai ni...apnar comment peye ektu sahas holo,asambhab bhalo lekhen apni.....sikriti asbei akdin...wishes from me.
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ সঞ্জীব চ্যাটার্জ্জী ভাইয়া। লেখায় ভুল পেলে নির্দ্বিধায় ধরিয়ে দেবেন। পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# বেশ চমৎকার জুঁইফুল। চরিত্রের মনস্তাত্তিক বিশ্লেষণগুলো বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
অশেষ কৃতজ্ঞতা, পড়ার জন্য। কিন্তু সালেহ ভাই, আমার গল্পবাড়িতে এইবার আপনাকে অনেক দেরীতে পেলাম।
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
আসলে গল্পবাড়িতে একটু দেরী করেই এসেছি। আর তাছাড়া ব্যস্ততার কারণে এখনো অনেক গল্প পড়া বাকী আছে। জানি না পড়ে শেষ করতে পারব কি না। আগামী সংখ্যায় আরো আগেভাগে পড়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
কাগুজে বইয়ের পাতা যেমন দ্রুত পড়ে নেয়া যায়, ইন্টারনেটের পাতা সেভাবে আরামে পড়া যায় না। নইলে অনেক দ্রুত মাত্র ১০৫ টা কবিতা আর ৫৫টা গল্প পড়ে নেয়া সমস্যা হতো না। প্রতিদিনই অনেকগুলো লেখা পড়ি। তবুও কিছু না কিছু বাকি থেকেই যায়। ধন্যবাদ, আবারো জবাব দিতে আমার প্রোফাইলে প্রবেশের জন্য, সালেহ ভাই।
ভালো লাগেনি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
ঈশান আরেফিন পরিসমাপ্তি অসাধারণ ছিল.........শুভোকামনা রইলো..........
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা, ঈশান আরেফিন।
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
হাসান মসফিক ভালো লাগলো ...
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

১৭ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪