ঝুমুর যাত্রা

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
  • ২৯
  • 0
  • ৯৩
[[ গল্পে ”আব্দুল” চরিত্রের স্বাচ্ছন্দ্যময় আচরণ এবং সহজ সরল ভাষায় কথোপকথন, ওর অবস্থান থেকে চিরচেনা একজন অশিক্ষিত গ্রাম্য রাখালের মতই শাশ্বত ও সুন্দর। তাই অসুস্থ্য ধারার সংস্কৃতির আলোকেস্বিভাব সুলভ আব্দুলের সরলতা’কে বাঁকা চোখে দেখার কোন অবকাশ আছে কিনা সে দিকটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে আগে..............]]

[এক]
যাত্রা পালা শেষ হয়েছে বেশ কিছুক্ষন আগে । সারা রাত জেগে যাত্রা শুনে এক আকাশ টলমলে ঘুমের ক্লন্তি চোখে জড়িয়ে প্যান্ডেলে বসে বসে ঝিমুতে থাকে আব্দুল। তখনও আঁধার কাটেনি রাতের আকাশে।
বাড়ির পথে বড় একটা বিল পেরুতে হবে ওকে। সেই বিলের মাঝ খনটায় পকেট খালির মোড়। পকেট খালির মোড়ে রাত বিরাতে কাউকে একা পেলে তার আর রক্ষা নেই।
আব্দুলের পকেটে যদিও তেমন কিছুই নেই। তবুও কোন কিছু না পেলে ওরা ভীষণ মার ধোর করে। তাই খামাখা মার খাওয়ার ভয়ে বেচারা রাতে পা বারাতে সাহস পায় না বাড়ির পথে।

সেকেন্ড ক্লাসের একটা ব্রেঞ্চে চুপচাপ বসে থাকে আব্দুল। মনে মনে ভাবে কিছুক্ষণ আগেও এখানে প্রাণ চাঞ্চল্যে মুখর ছিল পরিবেশ। আলো ঝলমলে স্টেজটা এখন ওরই মতো পড়ে আছে নীরব অন্ধকারে একা। মনটা বিষন্নতায় হু হু করে ওঠে। যাত্রার দৃশ্য গুলো চোখের সামনে এখনো ভাসছে। একদিকে ঘুমের আবেশ অন্য দিকে যাত্রার রেশ, দুয়ে মিলে খুবই বেহাল অবস্থায় সময় কাটাতে হচ্ছে ।
এর মধ্যে ভোরের আকাশে পাখীদের হালকা কিচিন মিচির শব্দ কানে ভেসে আসে। পুবের আকাশটা কিছুটা ফরসা বলে মনে হয়। আস্তে আস্তে যাত্রা প্যান্ডেল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে, তার পর সোজা বাড়ির পথ ধরে এগুতে থাকে।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে শেষ পর্যন্ত সূর্যটা দিগন্ত জোড়া তাল গাছ গুলোর মাথার উপরে উঠে যায়। তরিত গোয়ালে ঢুকে আগে গরু গুলোকে বের করে আনে। তার পর বিলম্ব না করে সোজা পাথারের দিকে নিয়ে যায় চরাতে।
মোড়ল বাড়িতে বছর চুক্তি গরু চরায় আব্দুল। বাবা মা নেই ছোট থেকে দাদীর কাছে মানুষ। খুব সহজ সরল আর বোকা স্বভাবের ছেলেটা। বাক বচনে সরলতার ছাপ থাকায় গ্রামের অনেকে ওকে নিয়ে হাসি মশকরা কোরে সন্ধ্যার অলস সময় গুলো পার করে।
গরু গুলোকে মাঠে ছেড়ে দিয়ে এসে বসে বয়স্ক শিমূল গাছটার তলায় । বসে বসে ঘুম তাড়ানোর উদ্দেশ্যে গলা ছেড়ে যাত্রার সেই গানটা গাইবার চেষ্টা করে “ ও বন্ধু লাল গোলাবী কোই গেলারে....। কিন্তু না বেশী দুর এগুতে পারেনা সে .....রাত জাগা শরীরটা ওর রসিকতায় খুব একটা সায় দেয়না।
পরিশ্রান্ত শরীরটা নিয়ে তাই কি করবে ভেবে পায়না। ট্যাকে একটা বিড়িও নেই যে ধরাবে। বিড়ির নেশা ওকে এই মূহুর্তে ভীষণ পেয়ে বসেছে। জয়নাল থাকলে অবশ্যি এমনটি হতনা। কিন্তু জয়নাল ছোড়াটাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে মনটা আরো খারাপ হয়ে যায় ওর। ভাবতে ভাবতে শিমূল গাছের চওড়া গুড়িটায় আলসে মাথাটা রাখে। তারপর নিজের অজান্তে এক সময় গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। এভাবে ঘুমের রাজ্যে কেটে যায় বেশ কিছুটা সময়.........................।
দুর থেকে শিমূল তলায় বালির বস্তার মতো কাউকে পড়ে থাকতে দেখে কৌতুহলি সতীর্থ রাখাল জয়নাল কাছে এগিয়ে আসে।
ও যেমনটি ভেবেছিল ঠিক তাই। হ্যা বেভোর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ে আছে বেচারা আব্দুল!...................
প্রতি দিনের মতো ভেবেছিল দুজন মিলে আড্ডা দেবে। কিন্তু তা বুঝি আর হবার নয়, যে ভাবে ঘুমে অচেতন ছোড়াটা, ডাকতে ভয়ও হচ্ছে আবার মায়াও হচ্ছে। কি করবে স্থির করতে পারেনা। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি আসে আব্দুলের কাছে এসে বসে। তার পর শুরু করে দেয় কবিরাজীটা ।

গামছাটা মাটিতে বিছিয়ে শিমূল গাছটার সাথে হেলান দিয়ে আয়েশ করে একটা বিড়ি ধরায় জয়নাল । এবার ফুস ফুস করে বিড়ি টানে আর আব্দুলের নাকে ধোয়া ছাড়ে। এভাবে দুই দুইটা বিড়ি টেনে টেনে নিঃশেষ করে ফ্যালে ছোড়াটার নাকের ডগায়। জয়নালের বিশ্বাস বিড়ির নেশা ওর ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেবে। বাস্তবে হলোও তাই.....নিকোটিন থ্যারাপিতে কাজ হয়েছে বলেমই মনে হয়।
চার হাত পা টান টান করে রাত জাগা করমচা লাল চোখ দুটো মেলে ধসমস করে উঠে বসে আব্দুল । লম্বা একটা হাই তুলে ঘুমের আবেশটাকে কিছুটা হালকা করে নেয়। তারপর আরাম করে জয়নালের মুখোমুখী হয়ে বসে....................
ঃ জয়নাল আসিছু ....? দে একটা বিড়ি দেদিনি.......ঘুমের গুয়াত আগুন না দিলে শালা ঘুম হামাক ছ্যাড়বে না...জয়নালের হাত থেকে বিড়িটা নিতে নিতে আর একটা হাই তুলে ঝাপসা চোখে পাথারের দিকে তাকায় । গর“ গুলোর কথা মনে হতেতেই আবার ব্যস্ত হয়ে ওঠে.............
ঃ ক্যারে জয়নাল...তুই ক’কন আসিছু .......হামার গর“ গুলান কুটিরে.....? হামার গর“ গুলানোক তালে এনা দেখপু ন্যা......শালা ইঙ্কা সর্তপর তুই..............................?
সতীর্থের কাছে অধিকারের সুরে এক টানে কথা গুলো বলে দম নেয়। জয়নাল অবশ্য ইতিপূর্বেই গর“ গুলোকে ঠিকঠাক করে এসে বসেছে ওর পাশে তাই ওকে আশ্বস্থ করে......................
ঃ তুই অতো টেনশন লিচ্চু ক্যা হে.....হামাক কি তুর মুতোন বেইমান ভাবিছু নাকি... ?......সেই স্যাকুন থিন তুই মজার শুয়্যা শুয়্যা ঘুম্যাইচ্চু......আর হ্যামি তুর গর“ গুল্যানোক দেকিচ্চি......আবার উইল্ট্যা হামারি উপুর তাপ লিচ্চু......? জয়নালের কথার মাঝে যেন পাল্টা অভিমানের সুর কানে বাজে। নিজেকে সামলে নিয়ে কৌতুহলি হয়ে মুখের দিকে তাকায়............... ..
ঃ ক্যানো হে তুর সাতে কিসের বেইমানি ড্যা হচে ক’দিনি...........? অভিমানে পাথারের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চিবুকে হাত দিয়ে জয়নালের মনোযোগ আকর্ষণ করে .............................
ঃ ক্যারে কতা কইচ্চু না ক্যা.....কয়েক না ক্যা হ্যামি কি বেইমানি করিচি তুর সাতে ক’দিনি....? জয়নাল পূর্ববৎ অভিমানের জের ধরে বলে..........................
ঃ কি কমো ...? উ’দিনক্যা তুই নিজে মুকেই তো কোলু বাজারে যাত্রা গান হইচ্চে.... হামাক লিয়া তুই যাত্রা শুইনব্যা যাবু ..সেটি হামাক না লিয়া তুই এ্যাকলাই গেছিলু তাই লয় ক’দিনি.........................?
ঃ হয় ঠিকিতো আছে..... এ্যাকলাইতো গেছিনু ......তুক লিয়া যাবার চাছুনুই ত.....কিন্তু শালা সাঁজ আইতে (রাতে) যে তুর এ্যাত ঘুম তাতো হ্যামি জাইনব্যা পারিনি......কাইল আইতে তুক ড্যাক্যা ড্যাক্যা যে হামার গলা ফাটানু সে কতা তো একবারও কইচ্চু ন্যা ? তুক ড্যাক্যা ড্যাক্যা না পায়া স্যাকুন হ্যামি এ্যকলাই যাবার বাধ্য হোচি হে শালা চোঁদনা কুটিক্যার ।
আব্দুলের কথা শুনে এবার অনেকটা হতাশা গ্রস্ত হয়ে পড়ে জয়নাল। মুখের অবয়বে বিষন্নতার ছায়া ফুটে উঠে। কাল সাঁঝ রাতে ঘুমিয়ে পড়ে কি ভুলটাই না সে করেছে। ঘুমের কারনে ওর এত বড় একটা ক্ষতি হয়ে যাবে এ কথা সে মেনে নিতে পারে না সহজে।
[দুই]
গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের কাছে যাত্রা গানের কদর আসলে এমনটিই সংবেদনশীল এবং স্পর্শ কাতর। সীমিত আর আকাশ সংস্কৃতির কারনে যাত্রা গান, পালা গান, মনসা মঙ্গল, নছিমন, আলকাফ, গ¤ী¢রা, মাদার গান, কিষ্ট যাত্রা, ঝুমুর যাত্রা, পদ্ম পুরান, ঘেটু যাত্রা, ময়মরসিংহ গীতিকা এ ধরনের সরাসরি চিত্তবিনোদন মূলক লোক সংস্কৃতির মাধ্যম গুলো গ্রামীণ জনপদে আজ আর নাই বললেই চলে।
সুতরাং বেচারী জয়নালের আফশোচ হবারই কথা। কি আর করবে এ ভুলের মাসুল তো আর উঠে আসবার নয় তাই মনে মনে আর একটা বুদ্ধি আঁটে জয়নাল। আব্দুলের কাছ থেকে যাত্রার গল্প গুলো শুনলেও তো মন্দ হয়না....তাই ওর একান্ত সান্নিদ্ধ পাবার আশায় আর একটা বিড়ি খরচ করতে হয় ওকে...........................
ঃ তে লেহ ...যা হওয়ার তা তো হচেই ঐ লিয়া আর কতা কয়া লাব নাই....দোষ হামারি হচে লে... ক্যারে মামা তুই যকন যাত্রা দেকিচু তকন হামার কিসের সমিস্যা হে ক’দিনি ? কাইল আইতে যাত্রাত কি কি দেকিছু আর কি কি শুনিছু এ্যানা সেই গপ্পো গুল্যান করেক না ক্যা শুনি .................................?
জয়নালের মুখ থেকে এই কথাটাই শুনাতে চেয়েছিল আব্দুল । কেননা সতীর্থের কাছে কালকের যাত্রা শোনার অভিজ্ঞতা বিনিময় না করতে পারলে রাত জেগে যাত্রা শোনার আনন্দ অনেকটা পানসে বলে মনে হয় ওর কাছে। তাই বিড়িতে কোষে দুটো সুখটান দিয়ে গল্প বলতে শুর“ করে দেয় .............
ঃ তে লেহ শুনব্যাই যখন চাইচ্চু ....তাহালে শুনেক.... যাত্রার নাম হোলো .....ঝুমুর যাত্রা ’’বেদের মিয়া জোছনা’’..............
ঃ প্রথমে তিন ব্যার ’বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ কয়া ধ্বনী দিয়া যাত্রা শুর“ কইরলো.... ২০Ñ২৫ টা ডবকা ডবকা মিয়া গুল্যান টেজোত আইস্যা ঘুর‌্যা ঘুর‌্যা একটা দ্যাশের গান কোলো ......“আমারো দেশেরো মাটিরো গন্ধে ভড়ে থাকে সারা মন”......এই গানডা......
ঃ তার পর ....গানডা শ্যাষ কইর‌্যা মিয়া গুল্যান টেজ থিনি নাইমতে না নাইমতে.... নাইচতে নাইচতে উইঠ্যা আইসলো মনে করেক এক্কে......পরীর মুতো সুন্দরী একটা মিয়া মানুষ...... গায়ে কাপড় নাই কোলেই হয় এক্কে ন্যাংটার মুতন............................
একটা ঢোক গিলে দুরে মাঠের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ থেমে যায় আব্দুল। জয়নালের গায়ে মৃদু নাড়া দেয়........................
ঃ ওই জয়নাল ...যা ত গর“ গুলানোক এ্যানা সরায়া দিয়া আসেকগা । সেই ককন থিনি একই জাগাত গর“ গুন্যান চরিচ্চে ওরকে প্যাট ভরা লাগবিনা ক’দিনি ? যা আগে গর“ গুল্যানোক সরায়া দিয়া আসেক তার পর কইচ্চি.................................
কিন্তু রোমাঞ্চ কর একটা দৃশ্যের মাঝে ছেদ পড়ায় জয়নালের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সাথে সাথে সে অনুরোধ করে .....
ঃ যাইচ্চি লে ..এইকনা কয়া শ্যাষ করেক আগে....তার পর যাইচ্চি .....কি হোলো কয়েক হে........কোনুই তো যাইচ্চি............
কিন্তু না ওকে আবার গর“ গুলো সরিয়ে আসতে বলে। অবশেষে এক প্রকার বাধ্য হয়েই জয়নাল ভোঁ দৌড় দিয়ে ছুটে যায় মাঠে গর“ গুলোর কাছে।
চটপট গর“ গুলোকে সরিয়ে সব কিছু ঠিকঠাক করে আবার ভোঁ দৌড় দিয়ে ছুটে আসে শিমূল তলায়। আব্দুলের মুখোমুখি বসে হাপাতে থাকে ...............................
ঃ লে কয়েক ...... আর কোনো সমিস্যা নাই লে......তুর গর“ গুল্যান তো দেকনু খুবি খাইচ্চে প্যাট ভর‌্যা যাব্যেনি...লে কয়েক গল্প কয়েক তার পর কি হোলো.................জয়নালের তোষামোদ মার্কা কথা শুনে আব্দুল এবার উচ্চ ¯^রে করে হেসে উঠে.........
গল্পে জয়নালের আগ্রহ দেখে মনে মনে ভীষণ পুলকিত হয় আব্দুল। কোথা থেকে শেষ করেছিল এবার তা জানতে চাইলে জয়নালও সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়.............................
ঃ ঐ যে পরীর মতো সুন্দরী ন্যাংটা একটা মিয়া মানুষ টেজে আইসল উঁই আইস্যা কি কইরলো এ্যাকুন সেই কতা কয়েক..............
ঃ ও হয় ঠিকি ধরিছু.....কি কইরলো আবার মিয়াডা টেজোত আস্যাই একখ্যান গান ধইরলো .....সেই রকম গান বুজিছু ..........
গানটা নিজের মুখে গলা ছেড়ে গেয়ে উঠে “ ও বন্দু লাল গোলাবী কোই গেলারে.....এস এস প্রিয় হৃদ মাঝারে ’’......এই গানডা............
ঃ হেব্বি গানতো .....হু হু কয়েক তারপর কি হোলো .........................
ঃ তারপর....ও মামারো কি আর কমো তুক.....মিয়াডা গানের এইটুক কোতেই সব মানুষ তো হৈ হৈ কোর‌্যা চিল­ায়া উইঠলো......তার পর শুর“ হয়া গ্যালো মনে করেক ড্যান্স....ওরে ড্যান্স রে...... মাথাই লষ্ট মামা......বাজনার সাতে সাতে মিয়াডা খালি ঝুক্যাই গেলো বুজিছু ...... এক্কে খালি ঝুক্যাই গেলো......জুরি বাজাইচ্ছিল যে শালা উইতো জুরি দিয়া টেজের চোকি বাজাব্যার লাগ্যা গেলো। সব থাক্যা মিয়াডার দুধ দুড্যা স্যাখুন কি ঝুকাই যে ঝুকিচ্চিল... সে কতা তুকি কি আর কমো মামা......না দেখলে তুক বুজান্যা য্যাবেনা.............কি হামার কতা কিছু বুজ্যা পারিচ্চু............?
ঃ হু হু তুই কয়েক হ্যামি ঠিকি বুজ্যা পারিচ্চি.......তার পর কি হলো সেই কতা কয়েক......হ্যামি ঠিকি বুজিচ্চি লে.............
সাথে সাথে জয়নালের কথার সরাসরি বিরোধিতা করে আব্দুল ..........................
ঃ তুই হামার বাল বুজিছু হে চোঁদনা কাটি.....হ্যামি কাইল আইতে (রাতে) চোখে দেইক্যাও বুজ্যা পারিনি ....ঐড্যা আসল না নকল....আর তুই হামার মুখে শুন্যাই সব বুজ্যা পারিচ্চু........চ্যাটের গপ্প দিচ্চু হামাক লয়......................................?
ঃ লে হচে লে ....তুই চোখে দেক্যা এন্যা বেশী বুজিছু......আর হামি তুর মুখে শুন্যা এন্যা কম বুজিচ্ছি.....তাইতো কবার চাইচ্চু.....................? একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জয়নাল এবার আফশোচ করে নিজের উপর ধিক্কার জানাতে থাকে...................
ঃ শালা ভাগ্যড্যা হামার এ্যাতই খারাপ ....কাইল আইতে না ঘুমালে হামিও তুর মতন সব দেখ্যা পারনুনি......শালা কঠিন তাকের একটা ভুল হয়া গ্যাছেরে মামা ........ .....যা হচে তা হচে লে এখুন তার পর কি হোলো তাই কয়েক...........................
ঃ তার পর....? শুনেক .....তার পর ....শালা ফাশ্ট কেলাসের একটা মানুষ ৫০০ টাকার একটা লোট মুখে লিয়া মিয়াডার সামনে ধইরলো......আর মিয়াডাক ইশার‌্যা কর‌্যা কি ব্যান কোলো......উ..মা তার পর মিয়াডা নাইচতে নাইচতে মানুষডার মুখ থেক্যা দাত দিয়া কামড় দিয়া টাকাডা লিয়া বুকের ভিতর থুলো। তার পর নাচ শ্যাষ কোর‌্যা যাওয়ার সুময় মিয়াডা মানুষডার সামনে যায়া উপুর হয়া দুধ দুড্যা বাইর কর‌্যা এক্কে পষ্টো দ্যাকালো........সে সুময় মানুষের চিল­ানি দেকপু কি মামা......মিয়াডার নাম হলো ’লাকী’। মাইনষে খ্যালি....লাকী....লাকী কয়া চিল­াবা লাইগলো.....হ্যামি স্যাকুন কোছা মোছা সব ঝ্যাড়া ঝুড়্যা লিয়া একটা বিড়ি ধরানু।
[তিন]
গল্প শুনতে শুনতে ¶নিকের জন্য জয়নাল অনেকটা উদাসী পাখীর মতো নিজ¯^ কল্পনার আকাশে উড়ে যায়। চোখের সামনে ভেসে উঠে উঠতি বয়সের কিশোরী বালিকা ফুলজানের প্রতিকৃতি ওর ভালোবাসার নস্টালজিয়া। পরিনয়ের আবেগ অনুভুতিকে কল্পনায় সাজিয়ে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যায় গল্পের সাথে সাথে পরিনামের দিকে........গল্পের প্রতি কিছুটা অন্যমনস্ক দেখে ওকে আচমকা জিজ্ঞেস করে .........
ঃ ক্যারে জয়নাল .....ওরম ঝিম মারিচ্চু কিসোকরে কি হচে তুর ক’দিনি............ হঠাৎ আব্দুলের কথায় সম্ভিত ফিরে পেয়ে মাথা ঝাড়া দিয়ে ¯^লজ্জ্য হাসিতে গল্পে মনোযোগ ফিরিয়ে আনার চেস্টা করে। আগ্রহের সীমানায় তখন ঝড় বইতে থাকে তাই গল্পের গতি বাড়াতে আবার জোর তাগিদ দেয়...................................
ঃ কয়েক হে .....অতো থামিচ্চু ক্যা ক’ ত.......... তারপর কি হোলো তাড়াতাড়ি কয়েক............................?
ঃ তারপর শুর“ হয়া গ্যালো সেই বেদের মিয়া জোছনার ভানুর অভিনয় “ ও বন্ধু বলি যে তোমারে রে .....আমি একা থাকি ঘরে রে”....... গানডা এইকনা কোতেই ....আর যাবু কুটিরে মামা..... সব মানুষ স্যাখুন খেপ্যা গ্যালো। গান থামায়া দিয়া জোছনা ভানুক কোলো তুই যায়া একলা ঘরে শুয়্যা থাকগা....আর লাকীক আইসপ্যা’ ক.....এই কতা কয়া মানুষ আবার চিল­াব্যা লাইগলো..লাকী... লাকী...লাকী...লাকী....লাকী..............................................
জোছনা ভানু তো সাত চুদুর এক চুদু হয়া টেজ থিনি লজ্জ্যাত ন্যাম্যা গেলো.....তার পর মনে করেক লাকী স্যাখোন নাইচতে নাইচতে আবার টেজোত আস্যা সেই রকম একটা গান ধোইরল “ মুন্নি বদনাম হুয়ি ডারলিং তেরে লিয়ে ” ? কি দেকপু স্যাকুন মানুষ খালি হৈ হৈ কোর‌্যা লাকীর সাতে সাতে ন্যাচপ্যা লাইগলো....লাকীও নাচিচ্চে.....মাচুষও নাচিচ্চে ....কি কমো তুক মামা ....এক্কে মাথাই নষ্ট................................
ঃ এ্যার পর কি হোলো কয়েক .....তাড়াতাড়ি কয়েক হে ....................................
ঃ তারপর... টেজোত লাকী তো খালি ঝুক্যাই যাইচ্চে বুজ্যাই পারিচ্চু.....আর মানুষও মনে করেক সেই রকম চিল­াইচ্চে......ফাশ্ট কেলাসের সেই শালা মানুষটা আবার মুখোত ৫০০ টাকার একটা লোট লিয়া ইশার‌্যাত আবার কি ব্যান কোলো তার পর লাকী নাইচতে নাইচতে আগের মুতোই দাত দিয়া টাকাডা লিলো তারপর...... ঐ শালা মানুষটার মুখের কাছে যায়া দুই হাত দিয়া নীচের কাপড় উপরে তুল্যা সব দ্যাখালো.....তারপর এক দোড় দিয়া টেজ থিনি ন্যাম্যা চোল্যা গ্যালো.....হায়রে মানুষের চিল­্যানি স্যাকোন দ্যাকে কেডারে মামা সে কতা তুক কি আর কমো..................................................................
গল্পের এই পর্যায়ে জয়নালের চোখে মুখে যেন এক ধরনের লজ্জ্যা এবং ভয় এসে ভর করে। তাই সে আব্দুলকে আর একটু সাবধানে অর্থাৎ আস্তে করে কথা গুলো বলার জন্য তাগিদ দেয়....আর এদিক ওদিক তাকিয়ে দাঁত দিয়ে জ্বিভ কেটে অনুভূতি প্রকাশ করে......
ঃ ই....ছি ছি ছি ....আস্তে কয়েক হে মামা ..... আস্তে কয়েক .....ম্যানুষ শুন্যা প্যালে শালা ক্যোবে কি হে ক’দিনি................?
কথাটা শুনে জয়নালের উপর ভিষণ বিরক্ত আর হতবাক হয়ে যায় আব্দুল....গলাটা এবার একটু চড়িয়ে রেগে বলে উঠে......
ঃ ক্যানো হে শালা আস্তে কওয়ার কি আছে......কেউ শুইনলে শুইনবে হামার কি তাতে.......? আহে চোঁদনা কুটিকার ......কাইল আইতে (রাতে) যখন হাজার হাজার মানুষ ঐ মিয়াডার দুধ ঝুক্যান দেইকলো তকন তুই কুটি গেছিলু হে....? তার পরের কথা তো তোক এখুনো কবাই পারিনি তাতি ইঙ্ক্যা করিচ্চু.........................?
আব্দুল যে ওর উপরে বিরক্ত হয়েছে এটা জয়নাল সহজেই বুঝতে পারে......তাই এত আকর্ষণীয় গল্পের সমাপ্তি ঘটুক এটা সে মোটেও চায়না। তাই ওকে উৎসাহ দিয়ে আবার গল্পে ফিরে যেতে বলে.............................
কিন্তু না গল্পের মাঝে অনাকাক্সিখত ভাবে বাধা পেয়ে আজ আর গল্প বলতে ইচ্ছে করছেনা এ কথা সাফ জানিয়ে দেয় ওকে।
কারণ জয়নালের এই ধরনের সতর্কতার কোন রকম ধার ধারেনা আব্দুল। নিজ¯^ সরলতা বা সাবলিরতায় সে বাস্তবতাকে একান্তই নিজের মতো করে ব্যাক্ত করবে এটাই ¯^াভাবিক।
একটা সরল সোজা রাখালের কাছে এর বেশী আশা করাটাও যেন আর এক ধরনের বোকামী।
গল্পে আব্দুলের ¯^াচ্ছন্দ্যময় আচরণ এবং সহজ সরল ভাষায় কথপোকথন ওর অবস্থান থেকে একজন চিরচেনা অশি¶িত গ্রাম্য রাখালের মতই শাশ্বত ও সুন্দর।
জয়নাল মনে মনে ভাবে সত্যিই তো আব্দুলের কথার যথেষ্ট যুক্তি আছে। কেননা কাল রাতে যখন হাজার হাজার মানুষের চোখের মণি হয়ে, লাকী তার মোহের সাগরে ডুবিয়ে রেখেছিল সমাজের সচেতন বিবেকবান মানুষ গুলোকে, তখন তো কেউ এতটুকুও লজ্জ্যা পায়নি। প্রতিবাদ থাক দুরের কথা বরং প্রকাশ্য লজ্জ্যাকে আরো উৎসাহিত করা হয়েছে অর্থের প্রাচুর্য দিয়ে।
তাই নিজ¯^ লজ্জ্যা বোধের সাথে জয়নাল ঐ সব বিবেকবান মানুষদের লজ্জ্যা হীনতার কোন মিল খুঁজে পায়না সহজে। হাতের সবকটি আংগুল মুড়িয়ে গালে ঠেস দিয়ে খোলা আকাশের দিকে শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে । সপ্তর্শিমন্ডল তারার মতো রেখায়িত ¯^াভাবিক প্রশ্ন বোধক চিহ্নটা তখন জ্বলজ্বল জ্বলতে থাকে ওর অন্ধ মনের আকাশে।

অথচ আলোকিত মানুষদের উপরেই কিন্তু সামাজিক দায়ভার খুব বেশি নির্ভর করে। আব্দুল জয়নালের মতো মানুষদের অন্ধ মনের সেলুলয়েডে যে আলোর রেখা দাগ কেটে বসে, সে দাগ তারা সহজে মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনা। তাই আমরা কি পারিনা ঐসব আব্দুল জয়নালদের মন মানসিকতাকে সুস্থ ধারায় প্রবাহিত করার উপযুক্ত ¶েত্র সৃষ্টি করতে ?

সারা রাত যাত্রা গান শুনে গ্রাম বাংলার এই সহজ সরল মানুষেরাই তো একদিন সুরেলা আবেগে কন্ঠে তুলে নিয়েছে লোাক সঙ্গীতের অমিয় রসের ধারা। যার একান্ত সান্নিধ্য পেয়ে উর্বর হয়েছে এ দেশের ফসলের মাঠ। মাঝির কন্ঠে বয়ে গ্যাছে তরী ভরা নদীর বুকে। মুগ্ধ করেছে গর“র রাখাল বাঁশের বাঁশী বজিয়ে। প্রাণ চাঞ্চল্যে জেগে উঠেছে প্রতিটি গ্রামীণ জনপদ। আর যুগে যুগে সমৃদ্ধ করে এসেছে আমাদের মূল ধারার লোক সংস্কৃতির অঙ্গনকে।

তাই অসুস্থ্য ধারার সংস্কৃতির আলোকে ¯^ভাব সুলভ আব্দুলের সরলতাকে বাঁকা চোখে দেখার কোন অবকাশ আছে কিনা সে দিকটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে আগে। সূধী পাঠক, যে উদ্দেশ্যে গল্পটি বলা তা কিন্তু ইতোমধ্যেই বলা হয়ে গ্যাছে। তাই সুস্থ্য সমাজ গঠনে ¯^ ¯^ অবস্থান থেকে সবাইকে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকার আশাবাদ জানিয়ে......আমার কথাটি ফুরলো নটে গাছটি মুড়লো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাফর পাঠাণ লোক সংস্কৃতি জাগৃতিতে এবং ধারণ করার ক্ষেত্রে এ গল্প একটি অনন্য আলোকচ্ছটা ।লেট ঈদ মোবারক ও মোবারকবাদ আপনাকে ।সাথে পূর্ণ ভোট ।
ঈদ মোবারক সাথে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে বাবুল ভাই...............
মামুন ম. আজিজ কথোপকথোনের ভাসা বেশ প্রাণ জুড়াল। যাত্রা দেখার সুযযোগ হয়েছিল একবার ....তাই ভিজুয়ালাইজেমনটাও হচ্ছিল। রিয়িলিটি পাচ্ছিলাম। ..
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মামুন ভাই..........
মিলন বনিক নিঃসন্দেহে একটি শিল্পমানসম্মত গল্প..যবনিকাটুকুর মধ্যে যে আশাবাদ তা আলোকিত মানুষগুলোর মনের কথা..এবং সেটাই হওয়া উচিত..অনেক ভালো লাগল...শুভ কামনা সতত....
নিঃসন্দেহে একটি শিল্পমানসম্মত গল্প..যবনিকাটুকুর মধ্যে যে আশাবাদ তা আলোকিত মানুষগুলোর মনের কথা..এবং সেটাই হওয়া উচিত..অনেক ভালো লাগল.. .....// ত্রিনয়ন এত সুন্দর কমেন্ট করে আমাকে অনুপ্রেরনা দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ.........
খন্দকার মশিউর রহমান তাই অসুস্থ্য ধারার সংস্কৃতির আলোকে ¯^ভাব সুলভ আব্দুলের সরলতাকে বাঁকা চোখে দেখার কোন অবকাশ আছে কিনা সে দিকটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে আগে। ..........// তথ্যবহুল শিক্ষনীয় সুন্দর একটি গল্প.....বরাবরের মতো এটিও অনেক ভাল লেখা.........
মশিউর আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ............
এশরার লতিফ বেশ লাগলো গল্পটি, লেখককে অভিনন্দন ।
আপনাকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি...............
শেখ একেএম জাকারিয়া দুজন রাখালকে নিয়ে গ্রাম্য জীবনের চালচিত্র খুব সুন্দর ভাবে চিত্রায়ন করেছেন। বরাবরের মত এবারের লেখনি ও খুব ভাল হয়েছে। ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ অনেক ধন্যবাদ জাকানিয়া আপনাকে....
Abu Umar Saifullah valo laglo
শুভেচ্ছা সাইফুল তোকে............
শিউলী আক্তার আনিস ভাই, দারুণ দারুণ সব ডায়ালগ ------- অসাধারণ !
শিউলী আপু আপনাকে অনেক মোবারকবাদ.........
আনিসুর রহমান মানিক ভালো লাগলো /
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
রোদেলা শিশির (লাইজু মনি ) আঞ্চলিক শব্দগুলো ..... ভাষার নিজস্ব সম্পদ ..... !! আপন আপন সংস্কৃতির বিকাশ দেশের ভাব মর্যাদাকে ..... বহুলাংশে সমৃদ্ধ করে .... সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আনে অকৃত্তিম ভিন্নতার .... স্বাদ .... !! কথা ফুরায় না ... রেশ থেকে যায় হাজার বছর .... !!
ঐ মুহুর্তের জন্য কথা যা বলার বলে শেষ করেছি ...আপনার মন্তব্য খুব ভালো লেগেছে....আপনাকে অনেক অনেক মুবারকবাদ......

১০ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪