ভাপা পিঠা

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

Jontitu
  • ৪০
  • 0
আজ অনেক দিন পর পেট পুড়ে ভাত মাংস খেয়ে আর নড়তে পারছে না। মনে আনন্দ ধরে না। রকেটের গতিতে এক দৌড়ে খেলার মাঠে চলে যায় বাবু।

মধ্য বয়সী জমিলা। খাস জমিতে পলিথিনের ডেরায় থাকে। তার স্বামী কামলা দিতে গিয়ে রোড এঙ্েিডন্টে মারা গেছে। বাড়ি বাড়ি চেয়ে চিমটে অভাবে অভাবে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে দিন পার করে, সে আর তার এক মাত্র আট বছরের ছেলে বাবু। পাশের গ্রামের এক বাড়িতে আজ বিয়ে। গ্রাম ঘুরতে ঘুরতে সে বাড়িতে গিয়ে উঠে। সেখান থেকেই উপরি খাদ্য গুলো পলিথিনে ভরে নিয়ে এসেছে তার মা। মা' ছেলেতে আজ বেশ কথা হয়। অন্য দিন তা হয় না। বেশীর ভাগ চুপ চাপ থাকে। যেদিন ভালো কিছু খাবার পায় সে দিন মা'র মন ও ভালো থাকে। ছেলের খাওয়া দেখে তার বুক ভরে যায় আনন্দে। চোখের জল বেয়ে পরে আচলের আড়ালে। একটু শান্তি যেন তার হৃদয় ছুঁয়ে গেল। বাবুকে হাসি মুখে দৌড়ে খেলার মাঠে যেতে দেখে, তার আরো সুখ লাগল। বাচ্চাদের হাতে আঙ্গুর আপেল কলা, একএক জনের হাতে একএক ধরনের ফল আর বিস্কিট জাতীয় কিছু। ও দিকে আর চোখ যায় না বাবুর খেলার দিকে মন। শীতেও তেমন কষ্ট হচ্ছে না। আজ পেট ভর্তি। পেটে খেলে পিঠে সয়।

কনকনে শীতের মধ্যে গরম কাপড় পড়ে খেলতে আসা বাচ্চাদের জামা কাপড় দেখে শখ জাগে। ছিড়া ফারা কাপড়ে হাটু কাঁপানো শীতে মৃগি রোগীর মতো কঁপতে থাকে বাবু।
আর এমন কিছু বাচ্চা আছে শুকনা কোন খাদ্য ঘরে বসে খেলেই পারে। কিন্তু না, তারা হাতে নিয়ে আসে খেলার মাঠে। খেলে আর একটু একটু করে খায়। গরীব বাচ্চারা চেয়ে চেয়ে দেখে। আফসোস করে। এগুলো মুখে উঠবেনা কোন দিন তা জানে তবু আশায় থাকে। একটু যদি পেতাম। বাবুও তাকিয়ে থাকে। ও জানে তার কপালে এগুলো নেই। আজ তার মাকে বলবে স্থীর করে, কিন্তু ধমক খাওয়ার ভয়ে আর বলতে পারে না। বায়না ধরে আগে অনেক ধমক খেয়েছে। মারও খেয়েছে কোন কোন দিন। পাশের বাড়ীতে কত কিছুই রান্না করে। খেলার সময় ছেলেমেয়েরা জেকেটের পকেট থেকে বের করে হাতে নিয়ে খায়, আর খেলে। বাবু শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে। তাদের যেমন খাওয়া দাওয়া ভিন্ন তেমনি চালচলন কথাবর্তাও ভিন্ন। বাবুকে খুব একটা খেলায় নেয় না। সংখ্যায় কম হলে তখন মাঝে মধ্যে ডাক পড়ে। তখন সে মন ভরে খেলে। খেলায় মন ভরে কিন্তু পেট তো ভরে না। পেট ভরার জন্য চাই খাদ্য। পর্যপ্ত খাদ্য তাদের নেই। তাই মাঝে মধ্যে না খেয়েই খেলার ছলে কাটাতে হয় দিনের, বেশীর ভাগ সময়।

শীতের আগমনে বাড়িতে বাড়িতে নানা পিঠার আয়োজন। আজ খেলতে আসা বাচ্চাদে হাতে পিঠা। বাবু হাত বোগল তলে চেপে রেখে গরম করে শীতের সাথে যুদ্ধ করছে। এক জনের হাতে গোল লোগ ভাপা পিঠা। দেখে তার মন ধরে রাখতে পারে না। এক ধ্যানে চেয়ে আছে পিঠার দিকে। খেলার ফাকে একটু একটু করে খায়, বাবু চেয়ে থাকে। কোন দিন ভাপা পিঠা খায়নি। বাড়িতে এসে ডর ভয় ত্যাগ করে তার মা কে বলে । মা আজ রাগ না করে ছেলেকে ধরে কাঁদতে থাকে। শান্তনা দিয়ে বলে - আচ্ছা বাবা তরে অনেক ভাপা পিঠা বানাইয়া দিমু। তুই পেট ভইরা খাইস। এদিকে মা ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। অনেক দিন ছেলে কিছুই চায় না। পেলে খায় না পেলে না খেয়ে থাকে। অনেক দিন আগে কমলা খেতে চেয়েছিল তখন থাপ্পর দিয়ে ছিলাম। কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে ছিল। মার মন কষ্টে ভরে যায়। ছেলের জন্য খুব মায়া অনুভুত হয়। কি ভাবে এত কিছু জোগার করবে। চাউলের গুড়া, গুড়, নাড়কেল। তবু স্থীর করে যত কষ্টই হোক পিঠা বানিয়ে ছেলেকে খাওয়াবে।

মা অনেক কষ্টে নারকেল চাউলের গুঁড়ি যোগার করে। দোকানে দোকানে গিয়ে গুড় চায়। দোকানদার ভিক্ষারিনীকে নিচে রাখা পুটলি থেকে এক খাবলা গুড় দেয়। দেখতেই মনে হয় অনেক পুরানো। গুড়ের রং নষ্ট হয়ে কালো ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। কয়েক দোকান থেকে এভাবে গুড় এনে পিঠা তৈরী করে। কোন মা'ই ছেলেকে না খাইয়ে নিজে খায় না। বাবুর মা'ও বাবুকে আগে খেতে দেয়। খাওয়া দেখে হাসে। বাবুও মায়ের দিকে হাসি মুখে তাকায়। একটা খাওয়া শেষ না হতেই আরেকটা পিঠা হাতে তুলে নেয়। গরম গরম ফু দিয়ে ফু দিয়ে মুখে দেয়। মা' য়ের মন আত্ম তুপ্তিতে ভরে উঠে। কয়েকটি পিঠা খেয়ে বাবু আর খেতে চায় না, বলে মা আর খাবোনা। পেটে জায়গা নেই। খেলতে যাব। মা' বলে আর একটা পিঠা খা বাবা, তার পর খেলতে যাস। বাবুর হাতে একটি পিঠা জোড় করে তুলে দেয় মা। বাবু পিঠাটি নিয়ে আর খেতে পারে না। তখনি পেট ব্যথায় কাতর হয়ে উঠে। মা মা পেট বিষ করে, পেট বিষ করে মা। উ . . . মা . . . মা . . . । বাবুর চিল্লাচিলি্লতে মা বেহুস হয়ে পরে। আশপাশের লোকজন ছুটে আসে।

বাবু আর খেলতে যেতে পারেনি। খেলবে না কোন দিন। মা'র কাছে ধরবেনা কোন বায়না। মেডিক্যালে যাবার আগেই অভাবের পৃথিবীতে মা' কে একা ফেলে চির বিদাই নেয়। মা'র কাঁন্নায় আকাশ বাতার ভারী হয়ে উঠে। মা কেঁদে কেঁদে বলে বাবা তোরে ছাড়া কিভাবে আমি বাচমু। তুই ফিরে আয় বাবা। তুই মরবি তাই পিঠার জন্য বায়না ধরে ছিলি। তোরে পেট ভইরা কোন দিন ভাত খাওয়াইতে পারি নাই, শীতের মধ্যে জামা কাপড় দিতে পারি নাই। তু্ই আমারে ক্ষমা করিস বাবা।

মা'র জানা হলনা জানবে না কোন দিন তার ছেলে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মারা গেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তানি হক মা'র জানা হলনা জানবে না কোন দিন তার ছেলে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মারা গেছে। ....... ,,,,,যারা ভেজালে জড়িত তাদের বেপারে সজাগ রই ...ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১২
Jontitu হেলেন : ধন্যবাদ আপু।
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১২
Jontitu মামুন ম.আজিজ : এখন প্রায়ই সংবাদ দেখি ভেজাল খাদের জন্য বিভিন্ন অসুখ হচ্ছে, মৃত্যু হচ্ছে। কয়েক দিন আগে পত্রিকায় দখলাম গুড়ে ভেজাল করার জন্য দুজনকে জরিমানা করেছে। গুড় পরিষ্কার করার জন্য হোক, ওজন বাড়ানোর জন্য হোক তা ব্যবসায়ীর লাভের জন্য। সাধারণ জনগণের কথা তারা ভাবে না। ঠিক এভাবেই ভেজাল গুড় অনেক দিন থাকার কারণে গুড় বিষাক্ত হয়ে গেছে। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১২
Jontitu রোমেনা আলম : ধন্যবাদ আপু।
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১২
Jontitu লুতফুল বারি পান্না : ধন্যবাদ পান্না ভাই।
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১২
হেলেন গরীব মানুষের কষ্টের কথা, পড়েও খুব কষ্ট হলো। বেশ সুন্দর।
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১২
মামুন ম. আজিজ মন খারাপ হয়ে যায় , চোখ ভাসে দরিদ্র শিশুর কষ্ট। কনইত তারপর সব ভুল যাওয়ার কাব্য। ...গুড়ে বিষক্রিযা কিভাবে হলো সেটা খোলাশা হলোনা।
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১২
রোমেনা আলম গরীব মানুষের বাস্তব লেখা, খুব ভালো।
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১২
Lutful Bari Panna সত্যি মন খারাপ হয়ে গেল। আমরা কি এ বৈষম্যের হাত থেকে মানুষকে বাচাতে কিছু করতে পারি না? গল্প খুবই ভাল লেগেছে...
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১২
Jontitu মিজানুর রহমান রানা - ধন্যবাদ রানা ভাই। শুভ কামনা আপনাকেও।
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১২

৩০ আগষ্ট - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪