গ্রাম-বাংলার একটি গল্প আর একটি আক্ষেপের কথা

গ্রাম-বাংলা (নভেম্বর ২০১১)

Tahasin Chowdhury
  • ১৮
  • 0
  • ৫৩
একটা গল্প বলি, শুনুন। কোন একসময় গ্রামে একটা পরিবার ছিলো যাদের সবাই কানে কম শুনে , মা-বাবা , ভাই-বোন এই চার জন । তো ভাইটাকে বিয়ে দেয়া হল , মজার ব্যাপার হল তার বউটাও কানে কম শুনত ।
বিয়ের সময় শ্বশুর বাড়ি থেকে জামাইকে দুইটা গরু দেয়া হল । একদিন জামাই গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছে । হঠাত পুলিশ তাকে পেয়ে জিজ্ঞেস করলঃ
পুলিশঃ রাম গোপালের বাড়িটা কোনদিকে । ( সে শুনল ; গরু দুইটা কই থাইক্যা চুরি কইরা আনছিস ! )
জামাইঃ না , না স্যার ! সত্যি কইতাছি , গরু দুইটা আমি চুরি করছি না ।
পুলিশঃ (রেগে গিয়ে) আরে! তোরে চুরির কথা কেডায় কইল , আমি তো রাম গোপালরে খুজতাছি !
জামাইঃ (আরো ভয় পেয়ে) সত্যি কইতাছি স্যার , গরু দুইটা আমারে শ্বশুর বাড়ি থাইক্যা দিছে ।

পুলিশ রেগে গিয়ে জামাইকে চরম মাইর দিলো । জামাই রেগেমেগে আসল বাড়িতে তার বউকে ধরতে ।
জামাইঃ ( বউকে ) তোর বাড়ি থাইক্যা আমারে চুরির গরু দিছে , কত্ত বড় সাহস !
এই বলে বউকে মারতে শুরু করল । ওদিকে বউ শুনল যে তার স্বামী কেনো ভাত দেয়া হচ্ছে না সেটা নিয়ে মেরেছে ।
বউঃ কইলাম ভাত ফুইটা গ্যাছে , খালি নামানের বাকি । হ্যার পরও আমারে মারছে । আমি মা’রে আজকে গিয়া বিচার দিমু ।
এই বলে বউ গেলো ছেলের নামে মায়ের কাছে বিচার দিতে -
বউঃ দ্যাখেন আম্মা , আমি কইলাম ভাত হইয়া গ্যাছে তারপরও আফনের ছেলে আমারে ভাতের লাইগ্যা আজকে মারছে , আফনে এইটার বিচার করতেই হইব আজকে ।
মাঃ কি কইলা বউ? তিন দিন হয় নাই এইখানে আসছ আর অখনই আমার সাথে কাইজ্জা ( ঝগড়া ) করতে আসছ ! কউ আমার চুলে ধইরা টান দিতায় । খাড়াও , আজকে যদি আমি তোমার শ্বশুরের কাছে বিচার না দিছি ।
শ্বশুর বাইরে থেকে আসার পর শ্বাশুড়ি তাকে বিষয়টা জানাল -
শ্বশুরঃ আমি অত কাম কইরা অখন খালি আইলাম , আর তুমি কউ জাল লইয়া মাছ মাইরা আনতাম । তোমার মাথা ঠিক আছে নি ?
শ্বশুর খুব রাগ করল , সে তার মেয়েকে গিয়ে বলল কথা গুলো । তার মেয়ে অবাক বিষ্ময়ে (সাথে সামান্য লজ্জায়) তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল -
মেয়েঃ আব্বা ! আফনের কিতা হইসে ? আফনে আমার বিয়ার মাত আমার লগেই মাতুইন ( আপনার কি হয়েছে ? আপনি আমার বিয়ের কথা আমার কাছেই বলেন !!)

এই গল্পটা আমি শুনি আমার এক চাচীর কাছ থেকে । উনার গল্প বলার ধরন দারুন ! সাধারন ভাবে যখন কথা বলেন তখন কোণ সমস্যা নেই , কিন্তু গল্প বলার সময় উনার স্বর একদম নীচুতে নেমে যায় , এতো নীচুতে যে একদম মনযোগ দিয়ে না শুনলে শুনা যাবে না । আগ্রহ ধরে রাখার কি চমতকার উপায় !
আঞ্চলিক ভাষায় বলায় কারন , আমার মনে হল এই গল্পটা যদি সাধারন ভাষায় বলা হত তবে তেমন শুনার মত কোন গল্প হত না !

যাক সে কথা , আমার আক্ষেপের কথা বলি । আমার আব্বার এই সব গল্পের বই সংগ্রহের অনেক ঝোক । সেই সুবাদে এই সব গল্পের অনেক বই পড়া হয়েছে । কিন্তু আমার দাদুর মুখে , বা চাচীর মুখে যেসব গল্প শুনি তা কোথাও খুজে পাইনা । আমার ধারনা হল যেসব বই বেরিয়েছে সেসব আসলে আমাদের লোক গল্পের বিন্দু পরিমান ও না । আমাদের পূর্‌ব-পুরুষেরা তাদের , তাদের ছেলেমেয়েদের মনোরঞ্জনের জন্য না জানি কত কত গল্প বানিয়েছেন । আমরা তার কতটুকুই বা জানি বা শুনছি । এসব গল্প তখন মা-বাবার সাথে , চাচা-চাচী , খালা- খালুর সাথে , দাদা-দাদীয় সাথে কত মধুর সম্পর্‌ক তেৈরি করেছে । আমার পরবর্‌তি প্রজন্ম কে আমি কি বলব । আমি তো এসব জানি না । কার কাছ থেকে জানব ? কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাবে ??
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রোদের ছায়া এটা তো অনেকটা কৌতুকের মত হয়ে গেল/.তবে হাসি পেল খুব/.
sakil lekhar dike valo kore monojog dile valo hobe
মোঃ আক্তারুজ্জামান আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো| আপনার শেষে করা প্রশ্নগুলি আমারও মাঝে মাঝে মনে জাগে| আগে কনের বাড়িতে বিয়ের গান হত পাড়াপ্রতিবেশী, আত্মীয়া মহিলারা হাস্য রস কিংবা বিদায়ের করুণ গান করত এখন ওসবে বিয়ে বাড়ীর লোকজনের মান সম্মান যায় তাই উচ্চ বিটের হিন্দী গান আমাদের সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়েছে|
প্রজাপতি মন আপনার গল্পটা এবং গল্পের ম্যাসেজটা খুব ভালো লেগেছে। আমিও যখন গ্রামে বেড়াতে যাই তখন বয়স্ক দাদী, চাচী যাকেই পাই তার কাছেই গল্প শুনতে চাই। এতো ভালো লাগে যে কি বলবো। অনেক শিক্ষণীয় ম্যাসেজও থাকে গল্পগুলোয়। কিন্তু কোন বইয়ে গল্পগুলো পাইনা। মনেও থাকেনা গল্পগুলো আঞ্চলিক ভাষায় বলায়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে গল্পগুলো লিখে রাখি কোন খাতায় আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। কারণ উনারা চলে যাওয়ার সাথে সাথে এসব মজার মজার গল্পও আমরা হারিয়ে ফেলবো। কিন্তু সময়ের অভাবে তা আর করে উঠা হয়ে উঠেনা।
বিষণ্ন সুমন চটুল বর্ণনার মাধ্যমে একটা মেসেজ দেবার চেষ্টাটা ভালো লাগলো। পরিপূর্ণ লিখার অপেক্ষায় থাকলাম ।
আবু ওয়াফা মোঃ মুফতি বিভিন্ন কারনে পরবর্তী প্রজন্মের সাথে আমাদের দুরত্ব ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে | এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা আমাদেরকেই পালন করতে হবে | আমাদেরকেই এগিয়ে যেতে হবে, ওদের কাছে টেনে আনতে হবে | আমরা আমাদের আগের প্রজন্মের কাছ থেকে যা জেনেছি শিখেছি তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার দাযিত্ব আমাদেরই | --ভাল লাগল আপনার ভাবনা |
আশা পড়লাম, খুব মজাও পেলাম। তাই আপনার কাছে আমার চাহিদা বেড়ে গেল। ভবিষ্যতে আরো ভালো লেখা আশাখরছি।
মামুন ম. আজিজ এটা আপনার সৃজন নয় সেটা তো বললেনই। ...এই লোকমুখে গল্পগুলো লিখে সংগ্রহ করুন। একদিন প্রকাশের চেষ্ট করবেন। মানুষের উপকার হবে। অনেক হাসতে পারবে। আর এখানে অবিষ্যতে সুজনশীল গল্প পড়ার আগ্রহ জাগিয়ে রাখলাম।
M.A.HALIM হাস্য রসে ভরপুর খুব মজা পেলাম পড়ে। মুব কামনা রইলো বন।দুর জন্য ওহ! সাথে ঈদ শুভেচ্ছা ও।

০৮ আগষ্ট - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী