আজ আমবশ্যা নয় তবু আমবশ্যাকে হার মানানো অন্ধকার । কাঁটাবনে কিছু লাল-সবুজ আলো দেখা যাচ্ছে জোনাক পোকার পাখনার কিন্তু ,সেই আলোই পথ দেখার কোন সুযোগ নেই । তবু সেই চিরচেনা মেঠো পথ ধরে প্রায় ১২ কিলো পথ হাঁটলেই সুধির কবিরাজের বাড়ি । এই অন্ধকারের পথ খুব দ্রুত পাড়ি দেবার চেষ্টা করছে কামরুল ।হালকা শীতল হাওয়া বয়ছে তবু তার অঙ্গ ভিজে যাচ্ছে ঘামে । নগ্ন পায়ে ছুটে চলছে সে রানারের মত ।তার দুর্বার গতিতে ছুটে চলা দেখে যে কারো মনে হবে কামরুল উম্মাদ হয়েছে ,নয়ত একটি জিবন বাঁচাতে আরেকটি জীবনের বলিদান করছে সে ।
এটিই তার শেষ ছুটে চলা । বোনের সংসার বাঁচাতে হলে তাকে আজ রাতের মধ্যে কবিরাজের কাছ থেকে পানিপড়া ও তাবিজ বানিয়ে নিতে হবে । মচারু বাঘা জিন কে দিয়ে বস করতে হবে কামরুলের বোনের শশুড় বাড়ির মানুষ গুলো কে । কাল সকালের মধ্যে পনের টাকা না দি্লে তারা তার বোনকে তালাক দিয়ে দিবে । আর এই বোনের যৌতুক এর টাকা সংগ্রহ করতে তার যে ছুটে চলা শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগেই ।দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করে ছুটে চলা কামরুলের খুব স্বাভাবিক ব্যপারে পরিণত হয়েছে । জীবনের তালের ছন্দ পতন এখন আর কামরুল কে ভাবায় না ।
কামরুলদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ তার পড়েও দুধেল গাভী টি ৭ দিনের একটি্ বাছুর রেখে কয়েকদিন আগেয় মারা গেছে তাদের । আর এই গািভিটি ছিল কামরুলদের শেষ সম্বল ।এই গাভী বিক্রি করে বোনের পনের টাকা পরিশোধ করা ও নিজের জন্য একটি লাল সার্ট কিনে মুক্ত বিহঙ্গের মত সবুজে সবুজে ছুটে বেড়ানোর পরিকল্পনা ছিল কামরুলের । কিন্তু তা আর হলনা গাভীটি মারা গেল । এই গাভীটি নিজের হাতে কবর খুঁড়ে মাটি দিল কামরুল ।
সবুজ স্বপ্ন হলুদ বা সোনালী হবার আগেই নিয়তি তাদের স্বপ্নের প্রাসাদ ভেঙে দেয় ।কয়েক বছর আগে ।কামরুলের বড় ভায় কাজল কে পটুয়াখালী কৃষি কলেজে পড়তে পািঠয়েছিল , কামরুলের বাবা । সোনার হরিন এর মত মহৎ স্বপ্ন নিয়ে । কাজল একদিন কৃষিবিদ হয়ে ফিরে এলে এই গ্রামের চির সবুজ মানুষ গুলো সবুজের অরন্যে রবে । কৃষি খাতে এই গ্রাম উজ্জল দৃষ্টান্ত রাখবে । কাজল কে কৃষিবিদ বানাতে গিয়ে ,সামান্য জায়গা জমি বন্দুক রাখতে হয়েছিল সুদের উপরে ।কৃষিবিদ হলে ঋন মুক্তির মুকুট মাথায় পড়বে কাজলের বাবা । চার বছর শেষে কাজল কৃষিবিদ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু , রাজনীতির ছায়াতলে থাকা ছাত্রদের গণ্ডগোলে প্রান হারাতে হয় কাজল কে । পুলিশি ঝামেলা ও গাড়িভাড়া করে শব নিয়ে আসতে গিয়ে , তাদের অভাবের মাথার উপর ঋন নামক শাকের আঁটি চাপিয়ে দেয় আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা , কাজলের পরিবারের স্বপ্ন গুলো হারিয়ে যেতে লাগল সবুজ অরন্যে , কিন্তু সুদের টাকা কমলনা বেড়ে চলল । কয়েক বছর সবুজ ধান ক্ষেত হলুদ হতে দেখতে দেখতে ।বোন শেফালীর বিয়ে দিলো কামরুল ও তার বাবা । পনের টাকার জন্য গাল মন্দ , শারীরিক মানসিক অত্যাচার শেফালীর নিত্য দিনের সাথী । সূর্যের উপর যেমন অনুরাগ করে শেফালীরা মুখ লুকিয়ে ঝরে পড়ে । সেফালি ও তেমন দুঃখে কথা বলেনা তার বাবার সাথে । এই পরিবারের সকল দায়িত্ব এখন কামরুলের উপরে । সে ও বর্গা করে , জাল বুনে ,হাট বারে কুলির কাজ করে ইত্যাদি ভাবে পরিবারের জন্য ক্ষয়ে যাচ্ছে মরা নদীর মত ।একটু অবসর পেলেই কাজলের কথা ভেবে কফোটা অশ্রু ঝড়ায় সে ।
কবিরাজ দাঁত দিয়ে , কাঁসার কলস চেড়ে , মনামুনি মন্ত্র পাঠ করেদিয়েছে । শেফালীর এখন সুখের অসুখ হয়েজেতে পারে । লাগাম জিন কে পাঠিয়ে দিয়েছে শেফালীর স্বামীকে বস করতে । শেফালীর শাশুড়ি কে বান মেড়ে দিল , বুড়ী আর সাড়া জীবন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবেনা । কবিরাজ মশায় এক বোতল পানি পড়ে দিলো । এই পানি দিয়ে মুখ ধুলে সেফালি পরীদের মত সুন্দরী হয়ে যাবে ।
কবিরাজের মিষ্টি কথায় মন ভরেনা কামরুলের , কবিরাজ দের বিশ্বাস ও করেনা কামরুল । তবু যদি এই কবিরাজ এর জন্য যদি তার বোনের সংসার বাঁচে । তাই সময় নষ্ট না করে ,খুশিতে আত্নহারা হয়ে ,কামরুল পানির বোতলউ তাবিজ হাতে পেয়ে বাড়ির দিকে দৌড় দিলো ।
পথে তার পায়ে খুব বিষাক্ত গাছের কাঁটা বিঁধেছে , নয়ত সাপে কেটেছে ।তার শরীর কাঁপছে । নিজেকে নিয়ন্তন করতে পারছেনা । তবু ছুটছে বড় বোনের সুখের জন্য তাকে একটু কষ্ট করতে ই হবে ।কামরুল ভালো করে জানে শেফালীর জন্য এই দৌড় শেষ দৌড় ,সে জানেনা এই দৌড়ে সে বিজয়ী হবে কিনা ? দৌড় দিতে দিতে ক্লান্ত কামরুল ,থমকে দাঁড়ালো , একটি শব্দ শুনেই ,সেফালি গলায় ফাঁস দিয়েছে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
স্বাধীন
যত চমৎকার করে এ গল্পগুলো বলা যায় লেখা যায় ভুক্ত ভুগিদের জীবন কিন্তু অত সহজে চলে না বা থেমেও যায় না। যখন থেমে যায় অনেকগুলো স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েই থামে। সুন্দর একটা গল্পের জন্য ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।