মায়ের রুপ

গ্রাম-বাংলা (নভেম্বর ২০১১)

মনির খলজি
  • ৪২
  • 0
  • ৪৯৪
‘হালো, শোহাইল? কান ইউ প্লিজ এলাউ মি সাম টাইম টু টক আফটার ইওর ল্যাব ওয়ার্কস ? ইট’স ভেরি সিরিয়াস এন্ড আর্জেন্ট’, ফোন রিসিভ করে অপর প্রান্ত থেকে সোহেল শুনতে পেল ডরথীর কন্ঠস্বর । ‘ডিয়ার অলরাইট আই উইল, বাট আফটার 6.00 pm এট মাই ডর্মিটরী অর এট দা রেস্টুরেন্ট কুপার চিমনি’ সোহেল এপ্রান্ত থেকে বলল । ডরথী বলল, ‘ওয়েল আই উইল ফীল বেটার টু মিট ইউ এট ইওর রুম, দা রেস্টুরেন্ট ইস রাশ এন্ড ক্রাউদ । ‘ ‘ওকে, ইউ কাম, বাই’ বলে সোহেল ফোন রেখে দিল । সোহেলের মনে শুরু হয়ে গেল বিশেষ কৌতুহুল হটাৎ ডরথী এভাবে তো কখনো এসময়ে আমার সাথে কথা বলে না …তখন বাজছিল সকাল এগারো টা. আর ও তো কথা বলার ইচ্ছে থাকলে সরাসরি আমার ল্যাবে চলে আসে ! ডরথীর ব্যাপরে আগে থেকেই ল্যাবে বলা আছে ওকে প্রবেশ দিতে । এছাড়াও, কোনো জরুরী কথা থাকলে আমার সাথে কেন্টিনে দেখা করে আর উইকেন্ড তো আছেই যখন আমরা প্রায়তো এখানে ওখানে বেড়াতে যাই। কিন্তু কি এমন কথা যে ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে সে আজ ফোনে এপয়েন্টমেন্ট করে নিল ! এখনতো ডরথীর চাকুরিতে যাবার কথা কিন্তু .......সোহেলের খটকা লেগেই থাকলো, আর লাবের কাজে মন বসাতে পারছে না ।
মহাম্মদ আনিসুজ্জামান ডাক নাম সোহেল, মধ্যবিত্ত পরিবারে রংপুর শহরে জন্ম ।ওরা দুই ভাই এক বোন. বাবা মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান (রফিক) একজন শিক্ষিত মানুষ, প্রথমে সোনালী ব্যাংক -এ রংপুর শাখায় কিছুদিন চাকুরী করে ছেড়ে দিয়েছেন যে ব্যাংকের বেতন দিয়ে তার নিজের সংসার আর মায়ের সংসার ঠিকমত চলে না । সোহেলের দাদা কামরুজ্জামান একজন রংপুর শহরে ভালো ব্যবসায়ী ছিলে । বয়সের ভারে তিনি তার ব্যবসায় ঠিকমত নজরদারি করতে পারছিলেন না । তাই সোহেলের বাবা দুটো কারণে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বাপের ব্যবসা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আর ভালোভাবেই সংসারাদী চালাচ্ছেন । সোহেলের দাদাও একদিন ওপারে চলে গেলেন । সন্তানদের মধ্যে সোহেল সবার বড়, দেখতে মোটামুটি সুন্দর আর ভালো স্টুডেন্ট হিসেবেই মলিকুলার বায়োলজিতে ইউনিভের্সিটির গন্ডি পেরিয়ে আজ আমেরিকার কেলিফোর্নিয়া ষ্টেট ইউনিভের্সিটিতে ডায়বেটিস -এর উপর Ph-D করার জন্য ল্যাবে গবেষণা করে যাচ্ছে । ইউনিভের্সিটি থেকে আধাকিলো দুরে কুপার চিমনি রেস্টুরেন্ট সেখানেই ডরথীর সাথে সোহেলের পরিচয় । সোহেল একদিন সেখানে বিকেলের নাস্তা সেরে বিল দিতে গেলে দোকানের কেশিয়ার জিগ্গেস করে যে সোহেলের হোম কান্ট্রি কোনটা ? সোহেল বলে বাংলাদেশ বাস যায় কোথায় …সেই ক্যাশিয়ার জোরে ডাক দেয়া শুরু করে ‘হ্যালো ম্যাডাম ডরথী, কাম অন প্লিজ’ ….ডরথী বলে, ‘হোয়াট হেপেন্ড ?’ …সঞ্জয় দেব (একজন ভারতীয়)বলল, ’দিস ইজ মিস্টার আনিসুজ্জামান সোহেল ফরম বাংলাদেশ।’ ‘ওয়াও--,আই গট ইট ...বলে অনেকটা চিত্কারের মতই সোহেলের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, ‘হ্যালো, দিস ইস ডরথী’ ..সোহেল বলে ‘হ্যালো, মি সোহেল ।‘ আর শুরু হয়ে গেল ডরথীর একটার পর একটা প্রশ্ন ----- .
বাংলাদেশকে নিয়ে তার কৌতুহল যেন শতগুনে বাড়িয়ে গেল সোহেলের সাথে পরিচিত হবার পর থেকে ! তখন থেকেই তার যেন মনে মনে বাংলাদেশ ভ্রমন শুরু হয়ে গেছে । সে ষ্টাডিকালে “সোসিও ইকোনোমিক কন্ডিশন ইন লিষ্ট ডেভেলপ কান্ট্রিস” -এই টপিকের উপর তার এম এস ডিগ্রীর জন্য এসাইনমেন্ট তৈরীতে ফিল্ড ওয়ার্কে বাংলাদেশে আসে । তখনই বাংলাদেশ সর্ম্পকে যতটুকু পেরেছে জেনেছে । তারপর এ বাংলার গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ঘুরে মানুষের আর্থিক, পারিবারিক ও সামাজিক দিকে বিভিন্ন ধারণা নিতে হয়েছে । তার মনকে যেটা সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে তা হলো বাংলাদেশী পরিবার বা যৌথ পরিবার ও পরিবার সদস্যদের মধ্যে যে আন্তরিকতা, যে আত্মিক টান তা সে অন্য কোনো ভাবে তাদের সমাজের সাথে মিলাতে পারেনা । এত দু:খ-কষ্টের মাঝেও বাংলাদেশীদের মধ্যে সমপ্রিতী, যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী তা তাকে মুগ্ধ করে । অন্তরে তার বাংলাদেশের প্রতি একটা টান অনুভব হতে থাকে....
ডরথীর মনে কেমন যেন একটা বিষন্নতা দেখা দিছে ইদানীং ! তার বয়স যখন নয় তখন তার বাবা এলান রস মাকে ডিভোর্স দেন আর দুই বোনকে মায়ের সাথে রেখে চলে যান ! ডরথীর বাবা তার মেয়ে দুটোকে সঙ্গেই নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু আইন তার পক্ষে ছিল না বলে হয়নি । তার মা ডোরিস কাথরিন একটা ইন্সুরান্স কোম্পানীর ডিরেক্টর এর PS হিসেবে চাকুরিরত.. অবশ্য, ডিভোর্স হয় তার মায়ের কোম্পানীর বসের সাথে বেশী মাখামাখির কারণেই .. ডিভোর্সের ৪ বছর পর কাথরিন বিয়ে করে ওই ইনসুরেন্স কোম্পানীর সেই ডিরেক্টর জন ক্রিস্টোফারকে যা ডরথীর পছন্দ হয়নি ! ছোটবোন লুসিকে নিয়ে মা তার নতুন স্বামী সহ দিন যাপন করতে থাকে ! ডরথীর নিজের বাবাও বিচ্ছেদের তিন বছরের মাথায় আরেকটা বিয়ে করেন একাকিত্তের অবসানের জন্য ! তিনি দুরে চলে গেলেও মেয়েদের সাথে তার প্রায় যোগাযোগ হতো । তিনি ডরথীর মায়ের বিয়ের পর ডরথীকে হোস্টেলে রেখে পড়াশুনা করাতে লাগলেন ! ছোট বোনের সাথে ডরথীর ফোনে যোগাযোগ হতো । ইকোনোমিক্সে পড়ালিখা শেষ করে ডরথী এখন চাকুরিটা করছে অন্য স্টেট কেলিফর্নিয়াতে ।
অবশেষে সোহেল কৌতুহুল ধরে না রাখতে পেরে ....সে নিজেই ল্যাব থেকে বের হয়ে যায় ১.০০ টার মধ্যেই সে ডরথী কে ফোনে করে বলে ‘হাই ডার্লিং কান ইউ প্লিজ কাম শার্প বাই ১:৩০ ...আই কান্ট হোল্ড দা কিউরিসিটি লঙ্গার.... উই'ল হাভ লাঞ্চ টুগেদার’ .....ডরথী বলল 'ইয়েস এম খামিং ডার্লিং' ডরথীর কাছে অনেকটা চমক মনে হলো সে আর দেরী না করে সাথে সাথে কুপার চিমনির উদ্দেশে রওনা হয় ....ডরথীর মনে আজ যেন ঝড় বইছে ...সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মত তার মনের শংকা গুলো যেন তীরে এসে আছরে পড়তে লাগলো ... তার সমস্ত শরীর বেয়ে হীমশীতল শীহরণ মাঝে মধ্যে কাপাতে লাগলো ! সেই কুপার চিমনি যেখানে সোহেলের সাথে প্রথম পরিচয় ...সেখানে আজ মনে হচ্ছে নতুন করেই আবার দেখা হতে যাচ্ছে .....পরিচয় হতে যাচ্ছে ! ইতিমধ্যে সোহেল আর ডরথীর মধ্যে বন্ধুত্বের এক পরম ও পবিত্র সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ...তারা পশ্চিমা কালচারের কাছকাছি থেকেও সে কালচারের কাছে আসতে পারেনি ! দুজনেই খুবই একে অপরজনের প্রতি ভীষণ শ্রদ্ধাশীল ...তাই তাদের এই সুন্দর সম্পর্ককে আশেপাশের সকলে ভালো চোখেই দেখেন ! 'হাই ডিয়ার সিট ডাউন প্লিজ' সোহেল ডরথীকে বলে ! ডরথী অনেক সংশয় আর শঙ্কিত মনে মাথা নিচু করেই বসে পরে মুখোমুখী ! সোহেল বলে 'হোয়াট হ্যাপেন্ড ডিয়ার ...আই নেভার সী ইউ সো এংসাস লাইক টুডে ..হোয়াট হ্যাপেন্ড’ ...ডরথীর সোজা -সাপটা উচ্চারণ, 'আই লাভ ইউ, আই ওয়ানা টু ম্যারি ইউ ...প্লিজ ডোন্ট রিফিউস মি ....আদারওয়ায়িজ আই উইল ডাই' --সোহেল যেন আকাশ থেকে পড়ল ''হোয়াট ইউ সে ? ....ওহ মাই গড !'
ডরথী কথাটা বলেই মাথা নিচু করে বসেই থাকলো..আর ওদিকে ইতস্তত আচরণে সোহেল একবার মাথার চুলের ভিতরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে সামনে পিছনে চিরুনীর মত আচরাতে থাকে আর একবার ডরথীর দিকে আরেকবার উপরে ছদের দিকে ছটফট করতে থাকে ....কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না, সে তাকে পরম বান্ধবী হিসেবে কল্পনাতেই রেখেছিল ...কারণ জানে দুদেশের কালচারে, দুদেশের মানুষের চিন্তাধারা এতটাই ভিন্ন সামজিক কিংবা পারিবারিক দিক থেকে তাকে এক করে কাছ্কাছিতে আনার কোনো উপায় নেই, আর ধর্মীয় বাপারটাতো আছেই । সোহেল কিছুক্ষণ পর দেখে ডরথীর নিচু মাথার দিক থেকে টপ টপ করে পানি পরছে সোহেল তার মাথায় হাত দিয়ে কিছু বলার আগেই ডরথী মাথা উঠিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে আবারও বলতে লাগলো, ‘আই কান্ট লিভ উইথআউট ইউ শোহাইল, আই ডোন্ট লাইক মাই ফামিলি, আই ডোন্ট লাইক মাই সোসিও কালচার এন্ড ডোন্ট লাইক টু স্টে হিয়ার'…..সোহেল মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ওকে ডিয়ার কূল ডাউন প্লিজ, উই হাভ টু টক এন্ড থিন্ক মোর ।’ তারপর, সোহেল ওকে খুব শান্ত মাথায় বোঝাতে লাগলো দেখো ডরথী আমরা দুজন একজন আরেকজনের খুবই ভালো বন্ধু আর তুমি যে সম্পর্কের কথা বলছ এতে অনেক সমস্যা হবে, অনেক ঝামেলা হবে ...ডরথী কথা কেড়ে নিয়ে বলছে সমস্যা, ঝামেলা তো অনেক আগেই শুরু হয়েছে.... সোহেল বলল তার মানে ? ও বলল যে আমি আমার বাবাকে, মাকে অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছি ...সোহেল বলে ওনারা কি বলেছেন ....ও বলল কেউই রাজী নয় .. ওনারা বলে কখনই আমরা মেনে নিব না ...অন্য কালচার, অন্যদেশ .....ডার্টি পীওপল, পুওর পিওপল ।পুওর পিওপল
দেখো ডরথী , তোমার সমাজের, দেশের যে কালচার , যে খাদ্য অভ্যাস তা কোনক্রমেই আমার দেশের সাথে মিল নেই । শুধু তাই নয় , তুমি যে সকল সুবিধাদির মধ্যে মানুষ হয়েছো আমাদের দেশে তার ৭০% ই নেই । তো এটা কি করে তোমার জন্য সম্ভব হবে ? কথাগুলো ইংরেজীতেই হচ্ছিল । ডরথীর উত্তর হলো , তুমি আমাকে ভালোবাস কিনা ? আগে বল । সোহেল তখন একটু ভেবেই কিছু সময় নিয়ে বলল হ্যা আমি তোমাকে বন্ধু হিসেবে অনেক ভালবাসি । কিন্তু কখনও বিয়ের কথা চিন্তায় আনিনি । দেখো সোহেল তুমি যে যে সমস্যার কথা গুলো বললে , ভালবাসার কাছে এসব কিছুই নয় । আমি বাংলাদেশের সামাজিকতা , কালচার ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞাত । তবে , আমাকে তোমার পছন্দ না হলে বলে দাও । বিয়ে করবে কিনা তাও জানিয়ে দাও । আমি তাহলে তোমাকে কোনদিন বিরক্ত করবো না, দেখাও করব না । আর আমি কোথায় চলে যাব, কি করব নিজেও জানি না । সোহেল বললো , ডরথী প্লিজ আমাকে একটু ভাবার সময় দাও , আমার সাথে আমার পুরো পরিবার আছে, আমার থেকে তারা অনেক কিছুই আশা করছে । আর আমার পি.এইচ.ডি কম্পিলিট করতে এখনও প্রায় ৯/১০ মাস বাকি রয়েছে । ডরথীর উত্তর ,পরিবার ? হা-হা , তোমার পরিবারের কথা বলছো ? জানো আমার পরিবার আমাকে কি দিয়েছে, কি শিখিয়েছে? অবশ্য তুমি কি জানবে? তুমি আমাদের সমাজের কটা পরিবারের সাথে মিশেছো, কটা পরিবারকে জানো? আমাদের পরিবার আমাকে কিছুই দেয়নি । শুধু পেয়েছি একাকিত্ম, একঘেয়েমির জীবন আর প্যারেন্টসদের প্রতি বিতশ্রদ্ধ মনভাব । বল, আমার বাবা মা আমাদের কি দিতে পেরেছে? তারাতো দুজনই শুধু নিজস্ব ভাললাগার, নিজের ডেভেলপমেন্ট নিয়েই চিন্তা করেছে । কখনই দু’বোনের কথা ও ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেনি । তারাই বা এরকম কেন করবে না । এদেশের সামগ্রিক কালচারই যে এরকম । আমার কেউ নেই সোহেল, কেউ নেই । কিন্তু তোমাদের দেশে পরিবারগুলোকে দেখেছি কত সুন্দর, প্রায় প্রতিটি পরিবারেই সন্তানদের প্রতি বাবা মায়ের কি যে মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান তা আমাদের কল্পনাতীত । তোমাদের অনেক পরিবার আছে যে সকলেই মিলেমিশে দাদা-দাদী, চাচা-চাচী সকলের সন্তানদের নিয়ে একান্নে বসবাস করছে । আমার ভীষন ভাল লাগে, ভীষন, ভীষন ----বলে ডরথী কাঁদতে কাঁদতে আবারও বলছে আমি তোমার পরিবারকে ভালবাসবো, ইসলাম গ্রহণ করব, সকলের মন জয় করে নিব । আমি শুধু চাই ঐ ধরনের বাঙালী ভালবাসা আর কিছুইনা কিছুইনা । আর তোমাকে নিয়েই তাতে শামিল হতে চাই বলে হু হু করে কাঁদতে থাকে ডরথী ।

সোহেল অবাক চোখে তার কথাগুলোকে অতীব মনসংযোগে শুনে যাচ্ছিল, শুধু বলল কেঁদোনা ডরথী কেঁদোনা । আমাকে একটু সময় দাও, একটু, প্লিজ । ডরোথী ঠিক আছে বলে--- চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে যায় ।
ডরথী চলে যাবার পর সোহেল বেশ খানিকটা দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে চুপ করে বসে থাকলো আর চিন্তা করতে থাকলো যে আসলেই ওযে কথা গুলো বলল সেগুলোর মধ্যে বেশকিছু বাস্তবতা আছে আমাদের দেশের বাপারে ....আর ওদের সমাজে যা ঘটছে, খারাপ যতটুকু ঘটে অর বেলায়তো তাই হয়েছে, প্রকৃত পিতা মাতার স্নেহ, প্রকৃত পারিবারিক বন্ধন পায়নি বললেই চলে । আমাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ওর যে ভালো ধারণা তা বাস্তবতার চেয়েও অনেক অনেক বেশী । থাক না অর মনে এটাতে ক্ষতি কি ? ওযদি এটাকে একটু সুখ ভেবে আনন্দ পেতে চায় কিছুটা দুখের তো নিবারণ হবে ! সোহেলের মনে কেমন যেন ওর প্রতি একটা মায়ার অনুভুতি কাজ করতে লাগলো । আর ডরথীকে যতটা দেখেছে সব পজিটিভ মনে হয়েছে, অসম্ভব ভালো মেয়ে, সুন্দর ব্যবহার, সুন্দর মনের মেয়ে, সুন্দরের ছাপটা তার রূপেও রয়েছে বেশ । সোহেলের দুর্বলতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে । ও ভাবতে লাগলো ও যদি আমাদের পরিবার, কালচার, জীবনযাপন মেনে নিতে পারে তাতে অসুবিধা কোথায় । আরো অনেকক্ষণ চিন্তা করে অবশেষে ভাবলো বাবাকে বাপারটা জানবে আর মতামত জানতে চাবে । রাত তখন প্রায় সারে দশটা, প্রথমে ডরথীকে একটা কল দিল তার অবস্থা জানার জন্য ! ডরথী ফোন ধরেই কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো সোহেল তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না আমাকে রিফিউজ কর না প্লিজ । আমি বাঁচতে চাই তোমাকে নিয়ে আর কান্না যেন থামছেই না । সোহেল বলল আচ্ছা তুমি একটু ধৈর্য ধর । আমাকে বাসায় যোগাযোগ করতে হবে, কাল একটা কিছু তোমাকে জানাবো । বলেই সে ফোন থেকে বিদায় নিল ।
সোহেল বাড়িতে বাবাকে ফোন করলো আর সব বাবাকে খুলে ব্যাপারটা সিরিয়াস আর আর্জেন্ট বলেও বলে দিল । ওর বাবা শুধু বলল তোর পছন্দ, সুখই আমাদের সুখ, তারপর আমি একটু বাসার সবার সাথে আলাপ করে তোকে জানাবো ।
সোহেলের বাবাও যেন চিন্তিত । কারণ এদিকে সোহেলের মা এক মেয়েকে তার ছেলের জন্য পছন্দ করে রেখেছে, ছোটো ভাই বোন দুজন তাই জানে । কিন্তু পাকাপাকি কথা পারা হয়নি মেয়ে পক্ষের সাথে । যাহোক, সোহেলের মা যখন শুনতে পেল ঘটনা তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না, সাথে তার ছোট ভাই বোনদের দুটিও । ওরা সকলেই বলে এবাপারে সোহেলের সাথে কথা বলবে ফোনে । রফিক সাহেব অনেকটা কড়া ভাবেই সকলকে বলে দিল কেউ সোহেলের সাথে এ বাপারে কথা বলতে পারবে না । ওর মন যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে ওর এত কষ্টের পড়াশুনা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এই বলে সকলকে দমিয়ে রাখল । নানা ভাবে, অনেক বুঝিয়ে ভালে রফিক সাহেব তার স্ত্রীকে রাজী করলেন । কিন্তু তারপর ওদের মন খারাপ হয়ে থাকলো ।
সোহেল সারা রাত ছটফট করতে লাগলো, ঘুমানো চেষ্টা করলো তাও বার বার ভেঙ্গে যাচ্ছে, ভোর হলো, ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা পানি সেরে প্রায় সকাল ৮:৩০ মি: -এ বাবার কাছে ফোন দিল । বাবা বললেন তোর যদি মনে হয় সব ঠিক আছে তাহলে তোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নে ।
ডরথীকে সোহেল ফোন করে বলে, ‘ডিয়ার, বি রিলাক্স, এভেরিথিং অলরাইট''....ডরথী বলে 'হোয়াট!' ‘ইয়া উই গোট্টা মেরি ইনশাল্লাহ’ সোহেল বলে ফোনে বেশ হাসতে থাকে, আর ওদিকে ডরথী খুশীতে কান্নায় ভেঙ্গে পরে আর বলতে থাকে, ‘আই কান্ট বিলিভ, ইস ইট রিয়াল?’ সোহেল বলে ‘ইয়া ইয়া ডার্লিং!’ … ‘ইট'স সো সারপ্রাইজ । আই ওয়ানা টু মিট ইউ সোহেল নাউ’ ডরথী বলে ....সোহেল বলে ‘ইট'স ঠু লেট টুনাইট, উই'ল মিট টুমরো ওকে?’ ‘অলরাইট’ ডরথী বলে ফোন ছেড়ে দিল !
তারপর দুজনে পরদিন মিট করলো সেই তাদের কুপার চিমনি রেস্টুরেন্টে আর অনেক কথা বলার পর তারা দুজনেই সিদ্ধান্ত নিল পি.এইচ-ডি কমপ্লিট করে বিয়ে করবে, আর তত দিনে ডরথী এ বাপারে আর সোহেলের সময় অপচয় হতে দিবে না । ডরথীও নিজে বাংলা শিক্ষার জন্য কোর্সে ভর্তী হলো । মাঝে মধ্যে দু-চারবার দেখা হলো দুজনের ।
পি.এইচ-ডি. কমপ্লিট হলো সোহেলের, কথা যেমন কাজ তেমন, ডরথী ইসলাম গ্রহণ করলো এক মসজিদে যেয়ে, পরে এফিড-অপিড করে দুজনে কোর্ট মেরেজ করলো । পাশাপাশি সোহেল ইউনিভার্সিটি থেকে সমস্ত পেপারস, সার্টিফিকেট তুলে বিদায় নিল । দুজনে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হলো । ডরথির যে মনে কি আনন্দ বইছে তা কল্পনার বাইরে । সে ফ্লাইটে বসে কত কথা বলতে লাগলো, 'সোহেল তোমাদের দেশ কত সুন্দর ! তোমাদের সুন্দরবন দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, তুমি কখনো গিয়েছিলে ?-আধো আধো বাংলায় ডরথির ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নে সোহেল কিছুটা লজ্জা পেল আর বলল না । তারপর আবারও জিগ্গেস করলো, কক্স-বাজার, রাঙামাটি দেখনি ? সোহেল কি বলবে নিজেকে খুব ছোট ভাবতে লাগলো আর বলল না কোনটাই না । ডরথী বলে ওহ মাই গড ! তোমাদের বাংলাদেশ এত সুন্দর তুমি তো কিছুই জানো না ! সোহেল সুযোগ হয়নি বলে পার পেতে চাইল....কিন্তু ডরথী বলল কোনো চিন্তা কর না আমি তোমাকে এসব জায়গায় নিয়ে যাব । আরো আছে বান্দরবনের চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি, নীলাচল, সিলেটের শ্রীমঙ্গল-মাধবকুন্ড আরো কত যে বিউটি নিয়ে তোমাদের এদেশ তা মনে হয় পৃথিবীর কোথাও আছে কিনা জানি না, তোমাদের নদী নালাগুলো যেন আরেক স্বর্গের সৃষ্টি করেছে ! এত নদী এত খাল ..এত মাছ আমি এসবের কথা ভুলতেই পারিনা !
সোহেল শুধু ভাবতে লাগলো, একটা বিদেশী মেয়ে হয়ে আমার দেশকে যতটা দেখেছে, এদেশ সম্পর্কে জেনেছে আমি তো তার কানাকড়িই জানি না । ও আরো যে কত দর্শনীয় স্থানগুলোর কথা বলতে লাগলো আমি অনেক জায়গার নামই শুনিনি .....এসবকে কি তার মেধা বলব নাকি আমাদের অজ্ঞতা বলব ? সেই রবি ঠাকুরের অসাধারন চারন মনে পরে, "দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দু'পা ফেলিয়া, একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু ।"
এদিকে বৌমার কষ্ট হবে বলে রফিক সাহেব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রংপুর শহরের বাসায় যেখান থেকে তার অন্য দু' ছেলে-মেয়ে মুরাদ ও সারথী পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে নব-দম্পতিকে রাখবেন ।
মুরাদ রংপুর মেডিকেলে ইন্টার্নী করছে আর সারথী কেবল এস.এস.সি. পরীক্ষা দিচ্ছে । এ দু'ভাইবোনের বয়সের ফারাক হয়ে গেছে বাবা মার অসাবধানতার জন্য । রংপুরের বাসায় রফিক সাহেবের মনে খুশীর ভাব ছাড়া বাকী সবার মনে যেন অমাবশ্যার ছাপ । মেনেই নিতে পারছে না বিদেশীনী আগুন্তককে ।
অবশেষে বাংলার মাটি স্পর্শ করলো থাই এয়ার লাইন্সের এয়ার-বাসের চাকা । সাথে সাথে ডরোথীর মনের সাগরে কি যে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে । বলছে, ‘ওহ মাই গড, এম এগেইন ইন বাংলাদেশ, আই কান্ট বিলিভ।’ সোহেল ডরোথীর আনন্দ দেখে শুধু মুচকী হাসি দিয়ে বললো, ‘ তোমার শ্বশুর বাড়ী এসে গেলে অনেকটাই।’ তারপর যথারীতি ঢাকা এয়ার পোর্টে যেখানে যা দিতে হয় তা দিয়ে ঝামেলা মুক্ত হয়ে লাগেজের ট্রলি নিয়ে এয়ারপোর্টের বাহিরে চলে আসলো দুজনে । ‘বাবা’ বলে হাত নাড়িয়ে রফিক সাহেবের উদ্দেশ্যে সোহেল বললো ‘কেমন আছো তোমরা ? ওরা কেউ আসেনি ? এই তোমার বউমা ডরোথী।’
ডরথী ইনি আমার বাবা মোঃ রফিকুজ্জামান । ডরথী বললো ‘সালামালেকুম, আফনি কেমন আসেন বাবা ?’ সালামের উত্তর দিয়ে রফিক সাহেব বলেন খুব ভালো আছেন ।আর তোমাদের জন্য মনটা খুব ছটপট করছিল । এখন আর চিন্তা নেই তোমরা এসে গেছো । সোহেল বলে আচ্ছা আব্বা আমরা কি আজই রংপুর রওনা হবো নাকি ঢাকায় থাকতে হবে ? …..হ্যা তোর ফুপু বলছিলেন ২ দিন ঢাকা থাকতে ….রফিক সাহেব বলেন । ডরথী সাথে সাথে বলল ‘না বাবা আমি আগে রংপুর যাব । সবার আগে আম্মা, মুরাদ, সারথীর সঙ্গে দেখা করব ।’ ‘তোমরা অনেক দুর থেকে এসেছো একটা দিন রেস্ট নেও আগে মা’, রফিক সাহেব বলেন । ডরথী বলে ‘আমরাতো ব্যাঙ্ককে আজ অনেক রেষ্ট নিয়েছি । আমি আজই রংপুর যাব বাবা।’ সোহেল বলরো, ‘হ্যা বাবা তুমি রংপুরই যাবার ব্যবস্থা কর ।’ ওরা বাপ-বেটা ও নতুন বউ নিয়ে রাতেই রংপুর রওয়ানা হয়ে গেল । এর মধ্যেই রফিক সাহেবের বেশ অন্তরঙ্গ হয়ে গেছে ডরথী আর বাবা, বাবা, বাবা বলছে । রংপুর শহরে আর.কে. রোডের বাড়ীতে ওরা ভোর সকালে উঠলো । তখন শুধু সোহেলের আম্মার সাথে পরিচয় হলো । সোহেলের মা তো জিনিসটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতেই পারেনি । রফিক সাহেব ওদের দুজনকে বলেন বাবা তোরা ফ্রেশ হয়ে চা খেয়ে নে । সোহেল বলে না বাবা আমরা আগে একটু ঘুমিয়ে নেই সারারাত বাসে ঘুমোতে পারিনি । আচ্ছা তোরা বিছানায় যা ।
প্রায় সকাল দশটায় সোহেল ও ডরথী নাস্তা সেরে নিল । এদিকে কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলে দিল কাজের মেয়ে দুলালী । রফিক সাহেব বাজার নিয়ে ঢুকলেন আর সোহেলকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে তোরা কি খেতে পছন্দ করবি ? উত্তরে সোহেল বলল , তোমরা ইচ্ছামত রান্না করো , কারন তোমাদের বউমা বাঙ্গালী খাবারে অনেকটাই অভ্যস্ত । তবে ঝাল যেন বেশী না হয় । দুপুরে একসাথে সবাই খাবার সেরে নিল । কিন্তু খাবার টেবিলে কিছু কথোপকথোন হলেও সোহেলের মা ,মুরাদ ও সারথী সে আলাপচারিতার মাধ্যমেই একটা ফরমাল পরিচিতি হয় ডরথীর ।
ডরথী পাচ-সাত দিনের মধ্যে পরিবারের সব সদস্যদের মন জয় করে নেয় । ওদের পরিবারে যে সংশয় ছিল এক বিদেশীনীকে কিভাবে আমাদের সংসারে খাপ খাওয়াবে তা অনেকটাই দুর হয়ে গেল । নিয়মিত রান্নাবান্নায় ওর মাকে সহযোগিতা ছাড়াও বাসার টুকটাক কাজগুলো সামলিয়ে নেয় । তারপরও ডরথীর মনে একটা অশান্তির ছাপ দেখা দেয় কারন রংপুর শহরে গ্রাম বাংলার ছাপ তেমন খুঁজে পাচ্ছে না । যেটা সে বিগত চার বৎসর পূর্বে বাংলাদেশে এসে দেখে গেছে । মনে মনে ভাবলো এই কয় বৎসরে হয়তো বাংলার রুপটা পরিবর্তন হয়ে গেছে ।
তখন সকাল আটটা ত্রিশ মিনিট । কেবল মাত্র সকালের নাস্তা সেরে ডাইনিং টেবিলেই চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিল সকলে । হঠাৎ করে গ্রামের বাড়ী থেকে ফোন এলো ---, সোহেলের দাদী মাথা ঘুরে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে গেছে এবং ভীষন ভাবে অসুস্থ্য অবস্থায় পরে আছে । খবর শুনে একটি মাইক্রো ভাড়া করে সকলেই বউমা সহ গ্রামের বাড়ী বড়াইবাড়ীর দিকে রওনা দিল । কিছুক্ষন পরে পথিমধ্যে খবর পেল তার দাদীর জ্ঞান ফিরেছে । তার কিছুক্ষন পরেই তারা গ্রামের বাড়ীতে পৌছে গেল ।
বড়াইবাড়ীতে আসার পথে ডরথীর সেই আগের দেখা বাংলার রুপটা নজরে এলো । এবং ভাবলো এখনো বাংলা তার রুপ সৌন্দর্য সবটুকুই ধরে রেখেছে । মন তার আবারো সুখ-মায়ায় ভরে যেতে লাগল ।

বাড়ীতে ফিরে সকলেই দাদীমার কাছে ছুটে গেল । দাদীমা নাতী-নাতনীকে দেখে যেন কিছুটা সতেজ হয়ে উঠলো । সকলেই জিজ্ঞাসা করল দাদুমনি তোমার কি হয়েছে ? দাদী উত্তর দিলেন ‘তেমন কিছু নয়’ একনা মাথা ঘুরি পরি গেছনু । কিছু কবার পাও না । যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি ছলিম ডাক্তর চিনির সরবত খিলাইছে । তাতে মোর হুশ ফিরে । মুরাদ তখন সকলের উদ্দেশ্যে বলল সুগার লেবেল কমে যাওয়াতে হাইপো গ্লাসেমিক শক-এ চলে গিয়েছিল । ও কিছু না । গ্লুকোজের শরবত খেলে ঠিক হয়ে যাবে । তবে আর যেন না হয় । সোহেল দাদীমাকে বলল এই তোমার বিদেশী নাতবৌ । ‘এত্তি আয় বইন তোক বুকোত জড়াই ।’ দাদীমা এই কথা বলে ডরথীকে বুকে জড়ায় ধরে রাখল , ‘হামার নাতবৌ দেখি আকাশের চাঁন্দ ! কি সুন্দর !’ তারপর আধো আধো বাংলায় দাদীমার সাথে ডরথীর কথোপকথোন কিছুক্ষন চলল ।
তারপরে খাবার-দাবার চলা-ফেরা থেকে শুরু করে গ্রাম্য রীতি-নীতি গুলো ডরথী খুব সহজেই রপ্ত করে ফেলল । সকাল বিকাল গ্রামের আশপাশ থেকে বিদেশীনীকে দেখার জন্য প্রতিদিনই বাড়ীতে ভীর জমে আর ডরথী হাস্য মুখে সবাইকে সমাদর করে ।।
ইতিমধ্যে দশ/বার দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে আর সারথীর সাথে ডরথীর একটা ভীষন সক্ষতা গরে উঠেছে । ভাবীকে নিয়ে প্রতিদিনই গ্রামে ঘুরতে বের হয় । গরীব ধনী নির্বিশেষে সবার সাথে প্রান খুলে মিশতে থাকে । খুব অল্প দিনের মধ্যেই ডরথী আশেপাশে সবার প্রিয় হয়ে উঠে । গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখে সে সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দেয় । গ্রামের প্রায় সবারই মুখে মুখে এখন ডরথীর বদলে দরদী বইন নামে পরিচিতি পেয়েছে বেশী । মাঝে একদিন ডরথী সারথীর উদ্দেশ্যে বলছিল তোমরা কি জানো তোমাদের বাংলাদেশ কত সুন্দর । বিশেষ করে তোমাদের এই গ্রাম বাংলা । গ্রামীন জীবন যাত্রা কত মধুর ? উত্তরে সারথী বলে ভাবী আমাদের দেশতো অনেক গরীব । এখানে ভাল কিছুই তেমন নেই । বরং তোমাদের আমেরিকা আমার অনেক ভাল লাগে । কি সুন্দর আইন শৃংখলা নিয়ম কানুন । সুন্দর সুন্দর বাড়ী বিল্ডিং কত ধরনের সুযোগ সুবিধা কত উন্নত জীবন যাত্রা । আনন্দ উচ্ছাস করার কত রকম ভেদ ! তোমাদের যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা কত উন্নত ! ডরথী উত্তরে বলল যে হ্যাঁ দুর থেকে তোমার কাছে ঐসব খুব সুন্দর মনে হবে । কিন্তু প্রায় ওগুলোর সবকিছুতেই কৃত্রিমতা ,যান্ত্রিকতা, দূষনতা রয়েছে । সেখানে নেই কোনো পারিবারিক সুখ, মনের সুখ । মানুষ ছুটছে শুধু সময়ের পিছনে আর টাকার পিছনে । সেখানে প্রকৃতির দান পর্যবেক্ষনের কোনো ফুরসত নেই । নেই কোনো খাঁটি ভালোবাসা । কিন্তু তোমাদের এই গ্রাম বাংলা উপরওয়ালা যেন নিঁখুত ভাবে গড়িয়ে দিয়েছে । এর রুপ সৌর্ন্দয ও দুষন মুক্ত পরিবেশ কত যে নির্মল আনন্দ দেয় ! সারথী তখন বলে এদেশ তোমাকে কি খুব ভাল লাগে ভাবী ? ওবলে শুধুই ভালই লাগে না এদেশের মাটিতে যেন মিশে আছে আমার দেহ মন । ভীষন ভাবে ভালবাসী । সারথী বলে ভাবী আসলেই তুমি খুব সুন্দর মনের মানুষ । তুমি যে মন নিয়ে এদেশকে দেখেছো আমরা অন্ধের মত আজ তার একটুও আঁচ করতে পারি না । সারথী বলল ভাবী তোমাকে আমি আর একটা জায়গায় নিয়ে যাব । পরদিন সোহেল সারথী ডরথী কাছেই তিস্তা নদীর পাড়ে বেড়াতে যায় । সেখানে যেয়ে দেখে মাঝিরা নৌকায় করে এপার হতে ওপারে যাত্রি পারাপার করছে । আর ছোট ছোট অনেক নৌকা দিয়ে জেলেরা মাছ ধরায় ব্যস্ত । ডরথী মনের উচ্ছাস প্রকাশ করতে শুরু করল এমন সুন্দর দৃশ্য সে জীবনে কখনো দেখেনি । সে মুগ্ধতার সাথে চেয়েই থাকতো । হঠাৎ সারথীকে বলল তোমাকে অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর সাইট সিইং এর জন্য । সোহেল বলল চলো নৌকাতে ওপার ঘুরে আসি । ডরথীর মনের কথাটাই যেন বলে দিল । নৌকায় ঘুরে ওপারের চর অঞ্চল দেখে বাড়ীতে ফিরে আসল । আর ডরথী বলতে লাগল আমার চোখ জুড়িয়ে গেল ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না বাংলার এই রুপ । এভাবে আরো কিছুদিন গ্রামের বাড়ীতে কেটে গেল । হঠাৎ একদিন ডরথী মাথা ঘুরে বাড়ীর উঠোনে মাটিতে পরে যায় । আমার যেন কেমন কেমন লাগছে । সোহেল বলল আসলে গ্রামের ছেড়ে এখন রংপুর শহরে ফিরে যাওয়া উচিত । তোমাকে ডাক্তার দেখানো উচিত । কিন্তু ডরোথী বলে না আমি দাদীমার সাথেই থেকে যাই তোমরা যাও । তখন সোহেল ওকে বুঝিয়ে বলল যে কেন বুঝছো না তোমার চেকআপের দরকার আছে । তাছাড়া সারথীর পড়াশুনারও ব্যঘাত হচ্ছে । অবশেষে রংপুর শহরে ফিরে এলো । দুইদিন পরে সন্ধা বেলা আবার হঠাৎ করে মাথা ঘুরে বিছানায় বসে পরল । মুরাদ বাসায়ই ছিল । সোহেল মুরাদকে ডাক দিল । দেখতো তোর ভাবীর কি হলো ? গায়ের তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে । মুরাদ তখন বলল ভাইয়া ভাবীর একটা থ্রোলী চেকআপ করা উচিত । কিছুদিনের মধ্যেই এরকম পরপর দুবার পরে যাওয়া আমার কাছে ঠিক লাগছে না । কারন তার ব্লাড প্রেসার সবই ঠিক দেখছি । বলল আমি এখনই আমাদের মেডিসিনের হেড স্যারের কাছে ভাবীকে নিয়ে যাচ্ছি । তুমিও চলো । ডরথীর সেই একই আচরন আমার কিছু হয়নি ডাক্তার দেখাতে হবে না ।সোহেল বলে ওসব কথা বাদ দাও । চলো এখুনি । ডরথী আর কথা না বাড়িয়ে তৈরী হলো এবং ঐ ডাক্তারের কাছে গেল । ডাক্তার সাহেব বেশ কিছু ব্লাড টেষ্ট করতে দিলেন । পরদিন টেষ্ট করে মুরাদ দেখতে পেলো রক্তে টোটাল কাউন্ট অনেক বেশী । সাথে সাথে স্যারের সাথে দেখা করে ব্যপারটা নিয়ে আলাপ করল । স্যার ডরথীর ‘বোন-ম্যারো ষ্টাডি’ করতে দিলেন জরুরী ভিত্তিতে । মুরাদ দেরী না করে রংপুরের বিখ্যাত হেমাটোলজিষ্ট এর দ্বারা টেষ্টটা করিয়ে নেয় । রিপোর্টে ধরা পরে ‘লিউকোমিয়া’ ।
রিপোর্ট দেখে মুরাদ কান্নায় ভেঙ্গে পরে । সাথে সাথে ঐ ল্যাব থেকেই সোহেলকে ফোন দেয় আর কাঁদতে থাকে । সোহেল বলে তুই বাসায় চলে আয় । তখন বাসায় অধীর চিন্তায় সবাই বসে আছে । সোহেল কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে ডরথীকে নিয়ে ঘরের ভিতরেই বসে থাকে । রিপোর্ট হাতে মুরাদ বাসায় ঢোকে আর সারথীকে বলে ভাইয়াকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে আয় । সোহেল ডরথীকে বলে একটু বসো আমি আসছি । এই কথা বলে বাবা মার ঘরে সকলে চলে যায় । সেখানে অশ্রুসিক্ত চোখে মুরাদ ওর ভাইয়ার হাতে রিপোর্টটা দিয়ে জোরে জোরে কাঁদতে থাকে । সোহেল রিপোর্ট খুলে দেখে অস্থির হয়ে যায় । ও ভাবতেও পারে নি এত সিরিয়াস রিপোর্ট আসবে । তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরল । সোহেল নিজে কান্নাজড়িত কন্ঠে বাবামাকে বলতে লাগল তোমাদের বৌমার ‘ব্লাড ক্যান্সার’ হয়েছে । কি বলিস বাবা ! এটা বিশ্বাস করা যায় না । রিপোর্ট ভুল । তুই বউমাকে নিয়ে ঢাকায় যেয়ে পরীক্ষা করাও । মুরাদ বলে কোনো লাভ নেই । একথা বলে উচ্চ স্বরে কাঁদতে লাগল । সোহেল বলে স্যারের সাথে এব্যপারে আলাপ করেছিস ? মুরাদ বলল হ্যাঁ । স্যার কি বলেছেন ? স্যার বলেছেন কেমো কতটা কাজ হবে জানিনা । তবে ঢাকা নিয়ে যেয়ে চেষ্টা করো ।
সোহেল ঘর থেকে বের হয়ে দেখে ডরথী দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে ! ডরথী মুরাদের উচ্চ স্বরের আওয়াজ শুনে আগেই ঘর থেকে বেড় হয়ে বাইরে দাঁড়িয়েছিল । সোহেল ডরথীকে জড়িয়ে ধরে ওদের নিজ রুমে যায় । সোহেলের চোখ বেয়ে ঝর ঝর করে পানি নেমে আসে ! ডরথী বলে এতে কাঁদার কি আছে ? সব ঠিক হয়ে যাবে, সোহেল বলে হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি ঠিক হবে আমিও তাই চাই ...তাই চাই ।

ডরথীকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হলো সব চেক-আপ করা হলো নতুন করে, কিন্তু রিপোর্ট একই । বড় নামকড়া ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া হলো "বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন" করতে হবে । এর জন্য সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে রেফার করলো । কিন্তু খরচ হবে প্রচুর টাকা প্রায় ২৫/৩০ লাখ তো বটেই, কিন্তু এত টাকা কোথায় পাবে সোহেলরা ? সোহেলের বাবার এত পয়সা নেই আর গ্রামের অমিজমা সব বিক্রি করলেও এত টাকা আসবে না । ঢাকায় কিছুদিন চিকিত্সা চলল কিন্তু দিন দিন ডরথীর অবস্থা খারাপের দিকেই যেতে লাগলো । একবার রফিক সাহেব ভাবলেন রংপুরের বাড়িটা বিক্রি করে দিবেন । ডরথীর কানে সেটা পৌছল আর অমনি সে দিব্যি দিয়ে বসলো তোমরা বাড়ি বিক্রি করলে আমি তাহলে আর থাকবনা, আমাকে আর খুঁজে পাবেনা কেউ । এদিকে বাড়ীর সকলে ভেঙ্গে পড়ছে ডরথীর এঅবস্থা দেখে ! গ্রামের বাড়িতেও জানাজানি হয়েছে, সকলের মুখে একই কথা ‘হামার দরদী বইনের বলে কান্সার হইছে' আর চোখের জল মুছে সবাই । কে এই ডরথী, কে এই ভিন দেশের নারী, কেন তার জন্যে মানুষের এতো সহমর্মীতা ? .....এই নারীর গ্রাম-বাংলার প্রতি এতো নিবিড় সম্পর্ক, গ্রামীন মানুষের সাথে সে যে বিনেসুতার মালা বানিয়েছিল আজ তা এক অশুভো প্রভাবে ছিড়ে যেতে চলছে তাইতো গ্রামের সহজসরল মানুষ গুলো দরদী বোনের জন্য এতটা উদগ্রীব, এতটা মলিন !
ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছেন, পথ যা ছিল বাতলিয়ে দিয়েছেন যা তাদের সম্ভব নয় ! ডরথীও যেন বুঝতে পেরেছে তার হাতে সময় আর নেই তাই তার শেষ ইচ্ছে গ্রামের বাড়িতে যাবে সেখানে বাংলার চিরায়িত রূপের মাঝে একটু হলেও যাবার পথে সেই গ্রামীন সুবাস সাথে নিয়ে যাবে । ‘সোহেল, বাবা, ভাই মুরাদ আমাকে তোমরা বড়াইবাড়ি নিয়ে চল, আমার একথাটা রাখবে তোমরা প্লিজ’, ডরথীর আকুতি । কারো মুখে কোনো শব্দ নেই, সকলেই শুধু আড়ালে চোখের জলই মুছে, আর বলে হাঁ তুমি যাবে, অবশ্যই তুমি যাবে একটু সুস্থ্য হও । ডরথী বলে, ‘এখনো আমার একটু নড়াচড়ার শক্তি আছে পরে তাও থাকবে না । প্লিজ আমি গ্রামের বাড়িতে যেতে চাই।’ ডাক্তারদের সাথে আলাপ সেরে অবশেষে সোহেল আর মুরাদ ওদের বাবাকে বলে, ওকে বাড়িতে নিয়ে যাই কারণ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীন । রফিক সাহেব বলেন তোরা, যেটা ভালো বুঝিস তাই কর বলে হু হু করে কাঁদতে থাকে আরো বলেন চোখের সামনে এভাবে একজন চলে যাবে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব ? সোহেল কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে থাকে, কি আর করার আছে বাবা. আমারতো চেষ্টা করলাম । না আমরা কিছুই করতে পারলাম না রে কিছুই না ....অনেক করার ছিল অনেক অনেক কিন্তু আমাদের সাধ্যের বাইরে রে বাবা গরীব হওয়াটা অভিশাপ !
পরদিনই অবশেষে, সকালে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে তিন বাপ-বেটা ডরথীকে নিয়ে মাইক্রো করে রংপুর রওনা দিল ! ডরথী জানালা দিয়ে দুচোখ ভরে শুধু বাইরে তাকিয়ে থাকে ।

আগেই সারথী আর ওর মা গ্রামের বাড়িতে রওনা হয়ে পৌছে গেছে, ওরা চোখ মুছতে মুছতে দাদীমাকে বলে তোমার নাতবৌ আসছে তোমার কাছে দাদিমা । ওর দাদিমা রংপুরের ভাষায় বুঝায় যে হাঁ বোন রে কি করবি উপরওয়ালার খেলা, দেখ একটা মেয়ে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে, সব কিছু ছেড়ে, আমাদের কাছে এলো, এতো সুন্দর মনের একটা মানুষকে কেন যে তুলে নিচ্ছে আল্লায়, আমাকে নিলেই তো পারে, আমিতো অনেক কিছু দেখে ফেলেছি, ওরতো কেবল বিয়ে হলো, কি যে হলো বোন, ভালো মানুষ থাকে না । আমাদের মত পাপী মানুষেরা দেখ কতদিন বাঁচে ! হয়েছে দাদিমা, তুমি খারাপ কোথায় এগুলো সব আল্লাহর ইচ্ছে, আমাদের করার কিছুই নেই বলে সারথী ওর দাদির গলা ধরে কাঁদতে থাকে ।

তখন বিকাল ৫টা, গাড়ী এসে থামল বড়াইবাড়ির বাড়ির সামনে । সারা গ্রাম ছড়ায় গেল দরদী বইন এসেছে ! ইতিমধ্যে তাকে ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে । পাড়ার লোকেরা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এক নজর ওকে দেখার জন্য । ডরথী আস্তে আস্তে সারথীর গায়ে ভর দিয়ে দরজা দিয়ে বাহিরে বের হয়ে আসে, একটা মুচকি হাসি দিল সবার দিকে তাকিয়ে । আর বলে ….আমার খুব ভালো লাগছে তোমাদেরকে দেখে, আরে তোমাদের চোখে পানি কেন ? আমিতো এখানেই থেকে যাব, কোনদিন কোথাও আর যাব না, এটা আমার গ্রাম, এটা আমার দেশ, এতো সুন্দর দেশ ছেড়ে কি কেউ কোথাও যেতে পারে ? দেখবে আমি তোমাদের পাশেই থাকব ! কিন্তু, তোমরা সকলে তোমাদের ছেলে মেয়েদের প্রতি যত্ন নিবে, পড়াশুনা করাবে, খুব ভালো হবে, অনেক কথা বলতে থাকে, ….চারিপাশের সবাই কান্না আড়াল করে শুধু মাথা নাড়িয়ে ওর কথায় সম্মতি জানাচ্ছে । ডরথী বলে, ‘আমি আজকে তোমাদের চা খাওয়াতে পারছি না, মনে কিছু নিবে না । পরে ডরথীকে ঘরের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়’।
দাদিমা ডরথীকে কত দোয়া পড়ে ফু দিচ্ছে অনেকে পড়া পানি এনে দিছে ওকে খাওয়ানোর জন্য, অনেকের বিশ্বাস যে এতে দরদী বইন ভালো হয়ে যেতে পারে ।
রাতে ঘুমাবার আগে ডরথী সোহেলকে বলে আমি যদি মরে যাই, তবে আমাকে যেন ওই যে তোমাদের নিজেদের কবর স্থান আছে, যেখানে দাদা ঘুমিয়ে আছেন ওই জায়গাটা খুব সুন্দর ! এক পাশে ধান খেত আরেকদিকে একটা বড় পুকুর, আসে পাশে কত গাছ আমাকে ওখানেই কবর দিবে । সোহেল জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে । ডরথী বলে আমি তোমার জীবনটাকে নষ্ট করে দিয়ে গেলাম তাই না, আমাকে ক্ষমা করবে, আমি নিজেও ভাবিনি এতো তাড়াতাড়ি আমাকে যেতে হবে ! এখন আমাকে বাঁচতে ইচ্ছে করে তোমাদের এদেশে এসে মরতে ইচ্ছে হয়না ....দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে !
আরো দুদিন পর সব মায়ার বন্ধন ছিড়ে ডরথীকে চলে যেতে হলো এদুনিয়া ছেড়ে, কিন্তু গ্রাম-বাংলা, বাংলাদেশ ছেড়ে নয় !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তানি হক মনির ভাইয়া ..আপনার গল্পটি পড়তে পড়তে বার বার .হুমায়ুন আহমেদ সারের ..আয়নাঘর ..মনে পরছিল ..খুব ভালো লাগলো ..যদিও শেষ করতে করতে ..কেদে ফেলেছি ..dorthi কে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি যে ..সেই জন্য ..আপনাকে ধন্যবাদ
মনির খলজি আমি প্রথমেই আমার অতি মূল্যবান পাঠকবৃন্দকে তাদের মতব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ....আপনার সকলে ধৈর্য ধরে এত সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করেছেন বা পরামর্শ দিয়েছেন ...তার জন্য আমি আপনাদের কাছে ঋণী রইলাম ....আর আপনাদের অনেকের মন্তব্যের মাঝে এটুকু বুঝা যায় আমার লিখাটি কিছুটা হলেও আবেগতাড়িত যা আপনাদের মনকে ছুয়ে গেছে ...আমার মনে হয় লিখাটা অনেকটাই সার্থক......আমার সময় স্বল্পতার জন্য আর বাস্ততার জন্য -আমি ক্ষমা চাচ্ছি আপনাদেরকে আলাদা করে মন্তব্যের জবাব না দিতে পেরে ....আবার সকলেকে অসখ ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার লিখাটি পরার জন্য !! ভালো থাকুন সকলে !!
মামুন ম. আজিজ সুন্দর বিষয়বস্তু। ভাল লেগেছে।
মোঃ আক্তারুজ্জামান মনির ভাই আপনার লেখাটি পরে মনে হলো এটা সুন্দর একটা টিভি নাটক হতে পারে| একটু চেষ্টা করুন বানিয়ে ফেলুন একটা নাটক আমরা গর্ব করে বলবো- আমাদের মনির ভাই! অনেক অনেক শুভ কামনা|
রওশন জাহান অনেক লম্বা কিন্তু খুব আবেগময় গল্প। পরেরবার গল্পের সাথে কবিতাও আশা করছি ।
প্রজাপতি মন প্রিয়তে রেখে দিলাম আর অসাধারনে ভোট দিয়ে সম্মান জানিয়ে গেলাম ডরথীর দেশপ্রেমকে।
প্রজাপতি মন ;( এতো আবেগ দিয়ে গল্পটা লিখেছেন যে কি বলবো, সবার মত আমিও এখন কান্না করছি ডরটথীর জন্য। এতো ভালো একটা মেয়েকে কেন মেরে ফেললেন? এ বড় অন্যায় ।
আশা একজন বিদেশিনীর বাংলাদেশের প্রতি যে ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে, তাতে লেখক অনেক আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছেন। এতে করে গল্পের প্রতি বেশি বেশি আকৃষ্ট হওয়া গেছে। প্রথমে একটু বিরক্ত বোধ করেছি ঠিকই, কিন্তু পরে ঠিক হয়ে গেছে। লেখককে ধন্যবাদ ভালো একটি গল্প উপহার দেয়ার দেয়ার জন্য।
Shopnarani পড়ে খুবি ভালো লাগলো।

২৫ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪