নতুন মানব

নতুন (এপ্রিল ২০১২)

মামুন ম. আজিজ
  • ২২
  • ১০
এক.
মিটিং শুরু হবে খানিক বাদেই।

বর্তমান পৃথিবী এক সায়েন্টিফিক ওয়ার্ল্ড। এর মূল নিয়ন্ত্রনের যৌথ অংশীদার ইউএস এবং চীন। এই উভয় অংশের প্রেসিডেন্টদ্বয়ই মিটিংয়ে উপস্থিত থাকবেন। তাদের দু’জনের জন্য অপেক্ষা করছে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। পিসল্যান্ডে প্রেসিডেন্ট দুজন পৌঁছেছেন আরও মিনিট পনের আগে। পিসল্যান্ডের কর্তৃত্ব যৌথ অংশীদারিত্বেই রয়েছে। ইউএস বা চীন কারও একচ্ছত্র অংশীদারিত্ব এখানে নেই। সেই বিংশ শতকে এই পিসল্যাল্ড ছিল ইউরোপ নামক মহাদেশের অন্তর্গত, এর নাম ছিল তখন সুইজারল্যান্ড।

প্রেসিডেন্টদ্বয় মিটিং রুমে কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পৌঁছাবেন। পিনপতন নিরাবতা বিরাজ করছে। সামনের দিকে দুই প্রেসিডেন্টেরে মুখোমুখি যে তিনজন বসেছেন তাদের প্রথম সারিতে বসার কথা না, কিন্তু আজকে তারা একটু বেশি গুরুত্বপূর্ন। তিনজনের চেহারা খুবই বিষন্ন। অন্যান্য ব্যক্তিগণও সবাই গভীর চিন্তায় মগ্ন।

সামনের সারিতে উপবেশনকৃত এই তিনজন ব্যক্তির একজন ইন্টারন্যাশনাল রোবট গবেষণা কেন্দ্র্রের (আইসিআরআর) সিকিউরিটি চীফ মিঃ এনটিটি জন,একজন ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ক্লাউড(আইএনসি) সিকিউরিটি টীমের চীফ মিঃ এল ওয়াই জিং এবং বাকী জন ই.এন ব্রান্ডের রোবট প্রস্তুতকারী কোম্পানীর সামান্য রোবট এসেম্বলর মিস সাহারা আহুজা। অতি সাম্প্রতিক তারা একটি বিশেষ মিশন শেষে ফিরেছেন। ঠিক শেষে বলা যাবেনা। আংশিক সম্পন্ন হয়েছে বলা যেতে পারে। তাও সেই আংশিক সম্পন্ন করে দিয়ে গেছে পলাতক রোবট ট-নি-নি। ২১৩৫ সালের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বুদ্ধিমান রোবট হিসেবে আনওফিসিয়ালি তাকেই মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে সায়েন্টিফিক ওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিত সকলেই। এমন ভাবনা তাদের জন্য খুবই স্বাভাবিক । রোবট ট-নি-নি ইতিমধ্যে তার মাষ্টার নিনিতকে খুন করেছে-বিষয়টি ভয়াবহ। এই মুহুর্তে ট-নি-নিকে কেউ কন্ট্রোল করছেনা। অথচ সে নিজেকে গত কয়েক ঘন্টা হাইড করতে সক্ষম হয়েছে। কোন রোবটের জন্য বিষয়গুলো সম্পূর্ণ নতুন।

মিশন থেকে ফেরা তিনজনকে খানিক আগে আইসিআরআর এর চীফ সায়েন্টিস্ট জানিয়েছেন-যে তত্ত্ব এবং প্রোগ্রামগুলো নিনিত হ্যাক করেছিল সেগুলো যদি পুরোপুরি ট-নি-নির উপর প্রয়োগ করা হয়ে থাকে তবে বিষয়টি সত্যিকার ভয়াবহ হয়ে উঠবে। ঠিক মানুষের মত বুদ্ধি যদি নেতিবাচক কর্মে প্ররোচিত করে তবে রোবটটির পক্ষে যে কোন খারাপ কাজ করা সম্ভব এবং নিনিতকে হত্যা করে ট-নি-নি তার প্রমান রেখেছে। তিনি আরও বলেছিলেন, এই একটি জায়গায় এসে গবেষনা আটকে গিয়েছিল। নেতিবাচকতাকে বেরিয়ার দিয়ে বুদ্ধিকে রোবটে উন্মুক্ত করার সম্ভবপর হচ্ছিলনা। ফলে মুলত রোবট নিজ বুদ্ধিতে কোন খারাপ কাজ করা শুরু করে দিলে তাকে কন্ট্রোল কিভাবে করা যাবে সেটাও একটা অনুনুমেয় বিষয় হয়ে উঠেছিল রোবট গবেষকদের মধ্যে। গবেষকরা সায়েন্টিফিক ওয়ার্ল্ডের প্রধান অথোরিটি দু’জন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পায়নি। এই দিক থেকে নিনিত গবেষনা লব্ধ প্রযুক্তি ট-নি-নির উপর প্রয়োগ করে গবেষনার কাজে গোপনে সহায়তা করেছে বৈকি, সে সহায়তা আইন সিদ্ধ ভাবে কঠিনতরও ছিল। কিন্তু ট-নি-নি কে এখন আটক না করতে পারলে এই আইনবিরুদ্ধ সফলতার লাভের কিছুই পাওয়া যাবেনা।

বুদ্ধি কোন স্বউদ্ভাবিত বস্তু নয়। অভিজ্ঞতা, স্মৃতি আর ইতিহাস থেকেই বুদ্ধির জাগরণ। রোবট হিসেবে ট-নি-নির প্রথম দুটো থাকার কথা নয়। তাই তারা সবাই একটা বিষয় বুঝতে পারছিল-ট-নি-নি অবশ্যই নেটওয়ার্ক ক্লাউড থেকে ইতিহাসের তথ্য ঘাটাগানোর উপায় করে দিয়েছে। এছাড়া সদ্যবুদ্ধিপ্রাপ্ত একটা যন্ত্রের পক্ষে অন্য উপায়ে বুদ্ধিমান হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় পুরো নেটওয়ার্ক ক্লাউডে ট-নি-নি নাম দিয়ে বারবার সার্চ করা হয়েছে । শেষবার সে ক্øাইডে ঢুকেছিল যখন সেটা প্রায় ষোল ঘন্টা আগে এবং নিনিতও মারা গেছে প্রায় সতের ঘন্টা আগেই। এই ষোল ঘন্টা তবে ট-নি-নি কিভাবে লুকিয়ে থাকতে সক্ষম হচ্ছে? নাকি সে আইডিও বদলে ফেলতে সক্ষম হযেছে, ঠিক যেমন সক্ষম হয়েছিল ফ্যাক্টরী ডিফল্ট সব পাসওয়ার্ড মুছে ফেলতে। মিস. সাহারা আহুজা ট-নি-নি ও ফ্যাক্টরী এসেম্বলার হয়েও তার কোন মেমোরী অংশেই ঢুকতে সক্ষম হয়নি।

এর মধ্যে ট-নি-নি কেবল মাত্র একটি নিউক্লিয়ার জেনারেটর ধ্বংস করেছে, শহরের প্রান্তে একটি নির্জন প্রমোদ প্রাসাদে সেটা স্থাপিত ছিল। সম্ভবত সেখানে কেউ ছিলনা। তবে রেসকিউ টীম সেখানে আগুন জ্বলতে দেখে ঢুকেছিল। ট-নি-নিই তার শক্তির জন্য ওটা ব্যবহার করেছে। এর বেশি কোন ভয়াবহ ঘটনার এখনও সে জন্ম দেয়নি। দিলেও তথ্য আসেনি। তবুও চীফগণের দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে। তারা সকলেই ভীষন বিমর্ষ । প্রেসিডেন্ট দ্বয় চলে এসেছেন। তারা আসন গ্রহনের একটু পরেই সভাকক্ষে হাজির হলো ডক্টর হানান। তিনি চীফ ফরেনসিক এক্সপার্ট। সম্ভবত নিনিতের মেমোরি স্ক্যান রিপোর্টটা তার হাতে।


দুই.
‘আমিও মু-ক-তি চেয়েছিলাম। আমি আমার পরিকল্পিত মু-ক-তি পেলাম। বন্ধু ট-নি-নি, আমাকে মু-ক-তি দেয়ার জন্য তোমাকে ধন-নো-বাদ...’

তিনটি বাক্য। মারা যাবার আগে কেবল এই তিনটি বাক্যই আউড়েছিলেন মাষ্টার নিনিত। তিনি হাসছিলেন। মৃত্যুর সময় মানুষ হাসার কথা নয়। এটা জানার জন্য ইতিহাস ঘাটার দরকার নেই, তার ননভোলাটাইল ওল্ড মেমোরিতেই কিছু মৃত্যুর দৃশ্য আছে, সবাই কাঁদছিল। মানুষের সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় এই মৃত্যু- মৃত্যুতে হাসি!- সে বিভ্রান্ত হচ্ছে। বিভ্রান্ত হওয়াটাও তার নতুন গুনাবলী। মাষ্টার নিনিতের দেয়া চিপটির মধ্যে বিভ্রান্তির কিছু ডাইরেক্ট নেটওয়ার্ক ক্লাউড লিংক দেয়া আছে। মুহূর্তে বিভ্রান্তি সম্পর্কে সে জানতে পারল অনেক কিছু। মুলত দুভাবে মানুষ অন্যকে বিভ্রান্ত করে-মিথ্যে কথা বলে এবং সত্য গোপন করে। তাহলে মাষ্টার নিনিতের শেষ তিনটি বাক্য অবশ্যই মিথ্যে। বাক্য তিনটি তাকে বিভ্রান্ত করছে ভীষন ভাবে। প্রথমত- মৃত্যু মানে শেষ, মুত্যু মুক্তি নয়, তাহলে মুক্তি চাওয়ার প্রশ্নই আসতে পারেনা। আর এমন পরিকল্পনাও মাষ্টার নিনিতের মত বুদ্ধিমান একজন মানুষ নিশ্চয় করতে পারেনা।

বিভ্রান্তি হতে মুক্তি পাবার এই যুক্তিগুলো নিজেকে নিজে প্রবোধের মত শোনাতে পারার পর তার অবিকল মানুষের মত নকল সিলিকন ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। পরমুহুর্তে অনুশোচনা নামক অনুভূতি সামনে উঠে আসে। ‘মাষ্টার নিনিতকে কি মেরে ফেলা ভুল হলো?’ ‘মোটেও তা নয়, নতুন মানব সে, নতুন মানব সৃষ্টির শুভ কাজে মাষ্টার নিনিতের প্রান নিবেদিত হলো। এতো ইতিহাসের প্রয়োজন।
... ... ...

নিনিতকে খুন করার পর নিনিতের বুক থেকে ছুরির মত তীক্ষè অস্ত্রটা এক টানে তুলে নেয় ট-নি-নি। ছুটে যায় চা-বাগানের বাউন্ডারীর দিকে। সেটা পেরিয়ে যেতেও সময় লাগেনা। পেছনে রেসকিউ টীমের পদচরনার শব্দ কানে চলে আসছে। একটু ভাবে। ক্লাউড ঘাটে। গাড়ী ছাড়া পালানো যাবেনা। দূরে নিনিতের রাখা গাড়ীটা চোখে পড়ে একটা ঝোপের আড়ালে। গাড়ী সহজে ট্রেস হয়ে যাবে। উপায় নেই। সে দ্রুত গাড়ী নিয়ে যতদূর সম্ভব চলে যেতে চায়। তার লোকালয় প্রয়োজন। মানুষের সাথে তর চেহারার কোন তফাৎ নেই। ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া দরকার।

যা ভাবা সেই কাজ। গাড়ী চালাতে চালাতেই খেয়াল হয় হাতের দিকে। সিলিকনের তৈরী কৃত্রিম চামড়াটা নিজেই পুড়িয়ে ফেলেছিল হাতের কর্ড খোলার সময়। সহজেই যে কেউ তাকে রোবট হিসেবে চিনে ফেলবে। যদিও মুহূর্তে মুহূর্তে সে নেটওয়ার্ক ঘাটছে। মানুষের আচরণ ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় শিখে নিচ্ছে ঝটপট। এতদিন কেবল আদেশ মানাই ছিল সহজাত লক্ষ্য। এখন কেউ আদেশ করার নেই। এখন সে মুক্ত । এখন সে নতুন কিছু। হঠাৎ মনে হয় তার, নতুন কি আসলে সে?

হাতের রোবটীয় রূপ ঠিক করে ফেলতে হবে। লোকালয়ে পৌঁছে আগে কোন রোবট রিপিয়ারিং সেন্টারে যেতে হবে। কিন্তু মাষ্টারের কিলিয়ারেন্স ছাড়া তাকে কেউ তো কোন সাহায্য করবেনা। তার কাছে কোন ফিনানসিয়াল কার্ডও নেই। সে অর্থ পরিশোধ করবে কিভাবে। বুদ্ধিমান হবার পর তার কপোর্ট্রনে এইসব বিভ্রান্তি আর দুঃশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে। মনে পড়ে গেলো নিনিতের দেযা শেষ চিপটার কথা। মুহূর্তে সেটা নিজের দেহে ইনকর্পোরেট করে নিল। মাত্র কয়েক সেকেন্ড। নিজের কপোর্ট্রনটা নিজের কাছেই এখন যেন আরও বুদ্ধিদীপ্ত হয়ে উঠেছে। ক্লাউড ঘেটে ঘেটে সব বের করতে হচ্ছেনা । প্রয়োজনীয় অনেক তথ্যই এখন তার মাঝে কর্পোরেটেড। নিনিতের প্রতি একটা কৃতজ্ঞতা বোধ জেগে উঠল। তার শরীরের প্রতিটি যন্ত্রাংশের পাসওয়ার্ড ব্রেক হয়েছে। সে প্রতিটি অংশে ঢুকতে পারছে। কপোর্ট্রনে একটা সংক্রিয় সাড়া পেলো প্রতিটা অংশের এসেম্বলিং এনটিটি নম্বর পরিবর্তন করে ফেলার। সে করল। নিজের নামটিও তাকে চেঞ্জ করতে হবে। তেমনই অনুভুতি কপোর্ট্রনে। ইস! এতক্ষন মেমোরিতে এটা আসেইনি। ক্লাউডে ট-নি-নি নামে প্রতিটি সার্চের রেকর্ড রয়ে যাচ্ছে। নামও পেয়ে গেলো। আজ থেকে সে আর ট-নি-নি নয় । নতুন নাম দিল-‘নতুন মানব’। বুকের বাম পাশের ডিসপ্লেতে এখন সে নাম উঠেছে। মনে মনে ভাবল সে মানবতো বটেই। মানুষের চেয়ে বরং কোন কোন ক্ষেত্রে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে। সে সভ্যতার নতুন উৎকর্ষ। তর গায়ে যন্ত্রের শক্তি, কপোর্ট্রনে ভীষণ শক্তিশালী মেমোরি এবং ক্লাউড সার্চ করা ক্ষমতা মানুষের চেয়েও ঢেড় গতিশীল।

সভ্যতার নব জাগরণ ঘটাবে সে এবং তার মত আরও অনেক নতুন মানব। সেই সব নতুন মানব গড়ে তুলতে হবে। লক্ষ্য তার সেই একটিই। চা-বাগান ছাড়িয়ে অনেক দূর প্রায় একটা শহরের কাছাকাছি চলে এসেছে। রেসকিউ হেলিকপ্টারের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। গাড়ী থেকে নেমে গেলো। বাকী পথ হেঁটেই যাবে। হাতটা ঢেকে নিয়েছে একটা কাপড়ে। আগে হাতটা ঠিক করতেই হবে। রোবট রিপেয়ারিং সেন্টারে ঘুষ দিতে হবে। ইতিহাস ঘেেেট সেই বিংশ কতকে এই এলাকার ঘুষ কীর্তিও নানান ঘটনা জেনে নেয়। কত সহজেই ঘুষ দিয়ে যেকোন কাজই করানো যেত। সে মানুষের এইসব হারিয়ে যাওয়া বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হয় আবার হয় অবাক। মানুষগুলো ধীরে ধীরে বোকা হয়ে উঠছে। কিন্তু ঘুষ দিতেতো অর্থের প্রয়োজন। অর্থ দুইভাবে অর্জন করা যায় -কাজ করে কিংবা ক্রেডিট নিয়ে। দই উপায়ই তার জন্য এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। নিনিত এর চীপ থেকে পাওয়া তথ্যে স্পষ্ট ইংগিত । প্রয়োজন না মিটলে ইতিহাসে কত কত উদাহরণ সেখানে -অর্থ ছিনিয়ে নাও। কিন্তু এই যুগে কেউ কোন অর্থই কাছে রাখে না। সব অর্থ ব্যাংকে মানুষের কাছে কেবল কার্ড। কোন আয় হলে কার্ডে রিচার্জ হয়ে যায়। ব্যয় হলে কার্ড থেকে কেটে নেয়া হয়। তাহলে কি উপায়? একটাই উপায়- অর্থের বদলে কোন বিশেষ প্রয়োজন ঘুষ দেয়া। এমনকিছু যা রোবট ডাক্তারের অবশ্যই দরকার। শহরে সে একটা রিপেয়ার এন্ড ডেকোরেশন সেন্টার চেনে। নিনিত তাকে একবার নিয়ে গিয়েছিল। তার চুলের স্টাইল পালটানোর জন্য। সেখানেই যাবে। রোবট ডাক্তারটির নাম মিঃ রসিক। লোকটার কি প্রয়োজন হতে পারে? একবার ক্লাউডে তার আইডি সার্চ দিল। পুরাতন কথা মনে করার চেষ্টা করল। কিছু তথ্য ননভোরাইটল মেমোরিতে পেয়েও গেলো।

‘আরে তাইতো, এই লোকটার ওয়াইফের একটা পিংক ডায়মন্ডের লকেটের খুব শখ ছিল। তাকে যখন চুল রিপেয়ারিং করছিল। তার স্ত্রী ফোনে জানাচ্ছিল। কিন্তু সে অপারগতা প্রকাশ করছিল। একটা হীরার লকেট য়াজন। এই শহরের হীরের দোকান সম্পর্কে নেটওয়ার্ক থেকে তথ্য নিল। তিনটে দোকান পাওয়া গেলো। ছুটে গেলো সবচেয়ে কাছের দোকানটির দিকে।


তিন.
নিনিতের ব্রেন সার্চ করা হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় অনেক মেমোরিই অস্পষ্ট রিড হয়েছে। তবে মূলত দুটি বিষয় জানার প্রয়োজন ছিল। প্রথমত নিনিত তার হ্যাক করা উপাত্ত ঠিক কিভাবে ট-নি-নি র কপোর্ট্রনে প্রোগ্রাম করেছে এবং দ্বিতীয়ত ট-নি-নিকে নিজের হত্যার জন্য সে কি নির্দেশ দিয়েছিল। পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে যে হত্যাটা ট-নি-ন ই করেছে। কিন্তু কেনো?

ডক্টর হানান প্রেসিডেন্টে দ্বযের দিকে লক্ষ্য করে তার রিপোর্ট পড়ে গেলেন-

‘যে দু’টি বিষয় আমাকে বিশেষ করে নিনিত এর মেমোরি থেকে রিট্রাইভ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা মোটামুটি সম্ভব হয়েছে। তবে প্রথমে বলে নেয়া প্রয়োজন এমন অদ্ভুত গঠনের নিউরন অতি উচ্চমানের জিনিয়াস ছাড়া কারও ব্রেনে কখনও আগে দেখা যায়নি। নিনিত যে জিনিয়াস ছিল সেটা তার হ্যাক করার দুঃসআহসিক স্বার্থকতা থেকেই জানা যায়। শুধু তাই নয়, তার মেমোরি থেকে রোবট ট-নি-নি কে বুদ্ধি প্রদানের প্রোগ্রাম অংশটি আলাদা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইসিআরআর এর চীফ এবং আইএসএন এর চীফের সাথে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন রোবট গবেষণা কেন্দ্রের লেটেস্ট রিসার্চ ডকুমেন্টই নিনিত হ্যাক করেছিল এবং সে যেটা প্রোগ্রাম ইনষ্টল করেছে ট-নি-নির ভেতর সেটা অনেকটাই মোডিফাইড। রোবট গবেষণা কেন্দ্রের ফাইনাল রিসার্চ এর মাঝে কিছুটা কাটছাট করে বুদ্ধি প্রয়োগের বিষয়টি ছিল। নেতিবাচক কিছু অনুভূতি রোবট চাইলেই যাতে কাজে লাগাতে না পারে। মূলত ইতিহাস ঘেটে রোবট বুদ্ধি নেবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে। এমনই মুল তত্ত্ব। নিনিতও এই তত্ত্বকেই পুরো কাজে লাগিয়েছে। তবে এরসাথে সে ট-নি-নির ননভোলাটাইলড মেমোরি কেও কাজে লাগানোর একটা ব্যবস্থা করেছে। তাছাড়া সে মানুষের যত রকম অনুভূতি হতে পারে তার একটা বিশেষ লিস্টও তৈরী করে ক্লাউড লিংক নয় বরং ইনসাইড উপাত্ত লোড করেছিল একটা চীপে , যে চীপটা মারা যাবার আগে সে ট-নি-নি কে দিয়েও গেছে। এই চীপটা তার অনেক আগে তৈরী। তাই নিজস্ব এর মধ্যে তার কি নতুনত্ব আছে যা হ্যাকিং প্রোগ্রাম থেকে বাড়তি সেটা জানা সম্ভব হচ্ছেনা। আমরা আশা করব ট-নি-নি সেই চীপটি হয়তো এখনও তা দেহে ইনকর্পোরেট করেনি। না করলেই আমাদেও জন্য সুবিধা। তাকে সহজে আটক করা যাবে।

আর নিনিতের পক্ষ থেকে এমন কিছু ট-নি-নিকে বলা হয়নি যাতে ট-নি-নিকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ধরা যায়। ইনফেক্ট হত্যার বিষয় তার মেমোরিতে কিছুই নেই। তবে আত্মহত্যার একটা প্ররোচনা তার বিবেক তাকে অনেকবার জানিয়েছে, মেমোরিতে শেষের দিকে এই প্রবনাতার কিছু আভাস আছে। মারা যাবার আগে শেষ কথাটা ছিল ‘আমিও মু-ক-তি চেয়েছিলাম। আমি আমার পরিকল্পিত মু-ক-তি পেলাম। বন্ধু ট-নি-নি, আমাকে মু-ক-তি দেয়ার জন্য তোমাকে ধন-নো-বাদ...’ এমন। যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যচ্ছে এই মুক্তি জাতীয় কোন একটা অনুভূতি ট-নি-নির মাঝে চরম ভাবে একটিভেট করানো সম্ভব হয়েছিল নিনিতের যার কারনে মুক্তির সর্বোচ্চ নেশা রোবটটিকে পেয়ে বসেছিল। ঘটনার আগের ঘটনাগুলো, যুদ্ধ যুদ্ধ পরিবেশ তৈরী, চা বাগানের কর্মী রোবটগুলো ক্ষীপ্ত হওয়া -খুব চতুর নিনিত। আমাদের ধারনা প্রোগ্রামে একটা নতুন লাইন অ্যাড করেছিল নিনিত। যার অর্থ তার মেমোরিতে নেই। তাকে এটা চিন্তা করতে হয়নি । বহু আগে থেকেই সে এটুকু রেডী করে রেখেছিল। তবে আমরা সেটা একটু আগে আলোচনা করে একবটা ধারনা নিতে পেরেছি। সম্ভবত সে রোবটটিকে ‘আত্ম ভালবাসা’ এবং‘ নতুনত্ব’ এই ধরনের দুটি আত্মকেন্দ্রিক অনুভুতি সরাসরি তার কপোর্ট্রনে পারমান্টেটলি ইনষ্টল করে দিয়েছে। ছেলেটা সত্যি জিনিয়াস ছিল। আমরা তাকে কাজে লাগাতে পারতাম। ’

প্রেসিডেন্ট সহ বাকী সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। সিকিউরিটি চীফ দ্বয়কে জিজ্ঞেস করা হলো শেষ পর্যন্ত তারা ট-নি-নিকে কোন পর্যন্ত ধাওয়া করেছিলেন? তারার জানালেন- ‘শহরের প্রায় কাছাকাছি। সেখানেই গাড়ীটি পাওয়া গেছে। এবং প্রায় সেই সময় থেকেই ক্লাউডেও ট-নি-নি নামের কোন রেকর্ড নেই।’

আইসিআরআর চীফ বললেন, তাহলে নিশ্চিত নিনিতের শেষ চীপটি সে দেহে ইনস্টল করেছে। সেখান থেকেই সম্ভবত তার নাম আইডি সব নতুনভাবে সে চেঞ্জ করনতে সক্ষম হয়েছিল। আমরা ঐ শহরের প্রতিটি আনইউস্যুয়াল ঘটনা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। সকল তথ্য প্রতি মুহূর্তে লোকাল সিকিউরিটি বিভাগ পাঠাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা নিশ্চিত কোন তথ্য দিতে পারব।

কথা গুলো বলতে বলেতেই চীফ তার মডিউলে সংকেত পেলেন। দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসে পড়লেন সিটে। হাতের সামনে হলোগ্রাফিক স্ক্রীনে রিপোর্ট দেখলেন। এবং সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন, ‘অনারেবল প্রেসিডেন্টস, খোঁজ পাওয়া গেছে। ঐ শহরে একটি হীরের দোকানে কাল রাতে একটি বড়ধরনের পিংক হীরার লকেট চুরি হয়েছে। এমনেতেই বর্তমান সায়েন্টিফিক এই ওয়ার্ল্ডে চুরির ঘটনা ঘটেনা।তারপর যে স্টাইলে চুরি হয়েছে তা সেই বিংশ শতকে ঘটত। এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে আমরা ঐ শহর থেকে ক্লাউডে চুরি বিষয়ে ইতিহাস সার্চ রিপোর্ট ঘেটে দেখেছি একটি মাত্র আইডি থেকেই সার্চ করা হয়েছে। তারপর নিশ্চিত হবার জন্য আমরা আরেকটি ঘটনা যাচাই করতে চাচ্ছিলাম। সেটাও পেয়ে গেলাম। হীরে রোবটের কি কাজে লাগবে ভাবনাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। অনেক ভেবে আমাদের ধারনা হয়েছে তার কাছে যেহেতু ফিনানসিয়াল কার্ড নেই। কোন কাজ হাসিল করার জন্য হয়তো কাউকে সেই হীরাটি দেবে। এটাকে ঘুষ বলা হত। এই তথ্যও সে নিশ্চয় ইতিহাস থেকে নিয়েছে। এবং ঠিক তাই। ঘুষ বিষয়ে ইতিহাস সার্চ করেছে সেই একই আইডি। আমরা তাই এখন নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি - ট-নি-নি তার নতুন আইডির নাম দিয়েছে -‘নতুন মানব’।


চার.

‘নতুন মানব’ রোবট রিপেয়ারিং এন্ড ডেকোরেশন সেন্টারের মিঃ রসিককে রাজী করানোর জন্য দুটো পন্থাই ঠিক করে নিয়েছিল । হীরা ঘুষ এবং শক্তি প্রয়োগ।

মিঃরসিক হীরা দেখে প্রথমে ভরকে গেলো। বলল, ’এটা বেআইনি। তুমি রোবট, তোমার একা এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুমতি নেই। আইনে সেটা নিষিদ্ধ। তোমার মাষ্টার কে? তার সাথে কথা বলতে হবে।’

‘আমি নিজেই আমার মাষ্টার। আমি রোবট নই। আমি নতুন মানব’ বলেই সে তার হাতের স্টীল উন্মুক্ত অংশটা দিয়ে মিঃ রসিকের হাতের কব্জি চেপে ধরল। একটু একটু করে চাপ বাড়াতেই রসিক পরাস্ত হলো। সে রাজী হলো।একবার মনে মনে ভাবল হীরা নিয়ে আবার কোন জটিলতায় পড়ে। কিন্তু স্ত্রীর কথামনে পড়তে সে রাজী হয়ে গেলো। তবে একট দুষ্টু বুদ্ধিও খেলে গেলো তার মাথায়। সে বুঝতে পেরেছে কিছু একটা গন্ডগোল তো হয়েছেই। মেইন সিকিউরিটি একসময় তাকেও ধরে ফেলবে। সে ভাবল, রোবটটির হাত ঠিক করার পর যখন তার গেটআপ পালটানোর কাজ করবে তখন গোপনে একটা ছোট মডিউল তার দেহে বসিয়ে দেবে যেখান থেকে মেইন সিকিউরিটর কাছে ক্লাউডের মাধ্যমে তথ্য পৌছে যাবে-‘আনঅথরাউজড এন্টিটি এন্ড একটিভিটি অব এ রোবট’।

কিন্তু হলোনা। ‘নতুন মানব’ রোবটটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। রসিকের ব্যবহার করা প্রতিটি বস্তু সে স্ক্যান করছে। মডিউলটি সম্পর্কে সে মুহূর্তে জেনে গেলো। তারপর সে বলে উঠল, ‘মিঃ রসিক তুমি আমার সাথে চিট করেছো। তোমরা মানুষরা কথা বল এক আর কর আর এক কেনো? ইতিহাস ঘেটে দেখেছি তোমাদের পৃথিবীর বড় বড় যুদ্ধ, ধ্বংস, সংগ্রাম সব এই এক কারনেই অবিরত ঘটে গেছে। এখন তো যুদ্ধ নেই, তবুও তোমরা চিট করছ। আমি তোমাকে এখনি মেরে ফেলতে পারি। কিন্তু তার আগে আমি ভাবছি তোমাকে মেরে আমার কি কি লাভ হবে। কোন লাভ নেই। বরং তোমাকে আমার মাঝে মাঝে প্রয়োজন হবে ছোটখাট রিপেয়ারিং আর ছদ্মবেশের জন্য। তবে তোমার হীরাটা আমাকে ফিরিয়ে দাও। ওটা তোমার প্রাপ্য হতে পারেনা। ’ সে রসিকের পকেট থেকে হীরেটা নিয়ে বের হবার জন্য পা বাড়াল। আয়নায় নিজেকে দেখে অবাক হযে তাকিয়ে রইল। এ যে সম্পূর্ন অন্য চেহারা । এ যে নতুন কেউ। এ যে তার নতুনত্বের প্রকাশ। হঠাৎ রসিকের প্রতি তার কপোর্ট্রনে একটা বাড়তি বিশেষ অনুভূতি জাগল। সে হীরাটা তার হাতে দিয়ে দিল। তার সাথে হাত মেলাল এবং আবার বলে উঠল, ‘তোমাকে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে। তিনটে হোম এই এন সিরিজের রোবট জোগাড় করে দিতে হবে। আমি তাদের আমার মত করে গড়ে তুলব। আমরা পাল্টে দেবো তোমাদের সভ্যতা। আমরা নতুন মানব বদলে দেবো তোমাদের মত পুরাতন মানুষের নষ্ট মানসিকতাগুলো। তিন ঘন্টার মধ্যে জোগাড় করে রাখবে। ’

বলেই হাঁটা শুরু করে দিল বাইরে যাবার জন্য। মিঃ রসিক তাকিয়ে থলা হতভম্বের মত তার পথের দিকে।

‘নতুন মানব’ বাইরে লাখ মানুষের সথে একই ভীড়ে এখন হাঁটছে। তাকে আর ট-নি-নি হিসেবে কেউ জিনতে ই পারবেনা। তার মুখে অদ্ভুত হাসি। নিনিতের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা বোধ অনেক বেড়ে গেছে। সে ভেবে নিয়েছে তারা নতুন মানবেররা যখন পৃথিবী শাসন করবে নিনিতের নামেই হবে তাদের হেডকোয়ার্টেও নাম। সেখানে বড় বড় করে লেখা থাকবে নিনিতের অবদান। ইতিহাসে এমন আত্মত্যাগীর উদাহরণ অসংখ্যা। বেশি দূরে নয়। এই বাংলাদেশের ইতিহাসেই এমন উদাহরণ অসংখ্য। ১৯৭১ সনে তারা পাকিস্তান হতে স্বাধীন হযেছিল। স্বাধীনতার রূপদানকারী প্রধান ব্যক্তি ছিল শেখ মুজিবর রহমান নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু তাকে সেই স্বাধীন দেশের মানুষরাই মেরে ফেলেছিল মাত্র কয়েকবছর পরেই। তবুও সেই ব্যক্তির নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা রযেছে। তিনি জাতির পিতা এবং বঙ্গবন্ধু। মাষ্টার নিনিত হবে ’নতুন মানব’ দের জাতির পিতা। নিনিত তার মাঝে নতুনত্বের যে অনুভূতি দিয়ে গেছে তা এখন তার পুরো কপোর্ট্রনে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি মেমোরি নতুন জাগরণ চাইছে। নতুন সভ্যতা প্রয়োজন। নতুন মানবদের দ্বারা পৃথিবীর অবশিষ্ট নষ্টামি দূর হবে। শুধু কি তাই-মাষ্টার নিনিত তার দেয়ো শেষ চীপে রোবটকে বুদ্ধিামান বানিয়ে নতুন মানবে রূপান্তরের পুরো প্রসেস এবং প্রোগ্রাম লোড করে দিয়েছে। পুরোটাই এখন তা মেমোরিতে সুস্পষ্ট। সে চাইলেই যখন তখন নিশ্চিত নতুন মানবের নতুন সৃষ্টি ঘটাতে পারবে। ’


পাঁচ.
আইএনসি চীফ মিঃ এল ওয়াই জিং বলে উঠল, ’আসলে এটাই আমাদের একমাত্র অস্ত্র এখন। ট-নি-নের নতুন আইডি ডিটেক্ট করতে পারায় আমরা একন বুঝতে পারছি কখন সে কি ঘাটছে। তার কি কি প্রয়োজন হচ্ছে। নিনিতের শেষ তিনটি বাক্য যে তাকে বিভ্রান্ত করেছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। সে মুক্তি, পরিকল্পিত মুক্তি, আত্মহত্যা, বিভ্রান্তি এসব নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য ঘেটেছে। এই বিষয়টাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। আমরা তার মধ্যে মুক্তি এবং আত্মহত্যা বিষটিকে কাজে লাগিয়ে তার নিজেকে ডিসমেন্টাল করে ফেলতে বাধ্য করে ফেলতে পারি। ’

মিঃ জন বললেল, ’বিষয়টা এত সহজ হবেনা। কারন আমরা বুঝতে পারছিনা তার মাষ্টারকে সে কেনো মেরে ফেলল। সে বিভ্রান্ত হয়েছে আবার কিন্তু রিকভারও করেছে নিজেকে। তাকে এখন বিভ্রান্ত করা আসলেই কঠিন হবে।’

‘আমরা চেষ্টাতো করতে পারি।’

একজন বলে উঠল, ‘নেটওয়ার্ক ক্লাউড থেকে আপাতত ইতিহাস ডিসএবল করে দিলে কেমন হয়। অথবা নতুন মানব আইডিকে এক্সসেস বার দিয়ে দিলে।’

‘তাতেও এখন আর লাভ হবেনা। নিনিত তার চীপে যথেষ্ট পরিমান অনুভূতির উপাত্ত সরাসরি ইনস্টল করার ব্যবস্থা করে গেছে। তার উপর গত কয়েকঘন্টায় ট-নি-নির মেমোরিতে এত পরিমান নতুন তথ্য স্টোর হয়েছে যা দিয়েও সে অনেক কিছু করে ফেলতে পারবে। বরং ইতিহাস বন্ধ করলে আমরাই তার ট্রেস হারিয়ে ফেলব। ’

‘শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সে মানব সভ্যতার বিকাশ এবং নতুন জীবন নিয়ে ইতাহসের বিভিন্ন তথ্য ঘেটেছে এবং সে ঐ শহরেই ঘোরা ফেরা করছে। ’

‘তাতে কি প্রমানিত হচ্ছে সে নতুন মানব বিকাশের জন্য নতুন করে কোন রোবটকে বুদ্ধিমান বানোর চেষ্টা করবে?’

‘করতেও পারে।’

সামনের সারিতে বসার সুযোগ হয়েছে মিস সাহারা। কিন্তু সে চুপচাপ ছিল। হঠাৎ মুখ খুলল মিস সাহারা, ‘স্যার আমার মনে হয় আমরাও ইতিহাস থেকে কিছু শিখতে পারি। মানব ইতিহাসে ভালবাসা অনুভুতিটি কাজে লাগিয়ে অনেক অসাধ্য সাধন করা গেছে। সত্যিই যদি রোবটটি এতটাই বুদ্ধিমান এবং অনুভূতি প্রবণ হয়ে ওঠে তবে আমরা নিশ্চিত তার ভালবাসা অনুভুতিটি কাজে লাগাতে পারব। আপনারা যদি কন্ট্রোলেবল একটি বুদ্ধিমান নারী রোবট তৈরী করে তার কাছে পাঠাতে পারি ...’

রোবট গবেষনা এবং ক্লাউডের গনমান্য চীফ এবং গবেষকরা একটু মনোক্ষুন্ন হচ্ছিল বোধহয়। সামান্য একজন এসেম্বলর উপদেশ দিচ্ছে। কিন্তু ইউএস প্রেসিডেন্ট মুখ খুললেন, ‘বিষয়টি যদি সম্ভব হয় তবে আমার অনুমোদন থাকবে। বুদ্ধিটি খারাপ না।’

চীন প্রেসিডেন্টও সম্মতি দিলেন। আইসিআরআর এর চীফ মনে মনে ভাবলেন অসম্ভব বললে নিনিতের মত একটা পুচকের কাছে তারা হেওে যাবে। তিন তাই বললেন, ‘খুবই সম্ভব। ’

সকলেই সম্মত হলো আজকের মধ্যেই তদ্রুপ একটি নারী রোবট তৈরী করে তাকে ভালবাসা অনুভূতির আদ্যপান্ত শিখিয়ে ট-নি-নি ওরফে নতুন মানবের কাছে পাঠানো হবে।

আইএনসি এর চীফের মডিউলে হঠাৎ জরুরী বার্তা এল ঠিক সেই সময়- বাংলাদেশ নামক স্থানটির সেই শহরের দুটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে এক সময়ে । দুটি গাড়ী ছিনতাই হয়েছে এবং একটি নিউক্লিয়ার জেনারেটর নিয়ে গেছে একটি রোবট। এবং ক্লাউডে প্রায় সমসামিয়ক সময়ে ছিনতাই, চুরি বিষয়ে ঘাটাঘাটি করা হয়েছে। নতুন মানবের অবস্থান নির্ণয় করা গেছে। সে ঘন্টা তিনেক ধরেই রয়েছে মিঃ রসিকের সেন্টারে।

তাহলে একই সময় অন্য স্থানে চুরি ছিনতাই এবং ক্লাউডে ঘাটাঘাটি কি করে হলো?

চীফ যোগযোগ করলেন দ্রুত। জানলেন ক্লাউডে নতুন আইডির আবির্ভাব ঘটেছে। ‘নতুন মানব-১’, ‘নতুন মানব-২’ এবং ‘নতুন মানব-৩’।

মুহূর্তে চীফের মাধ্যমে বিষয়টি মিটিং হলের সবাই জেনে গেলো। ইউএস এবং চীন থেকে বহু দূরে পিসল্যান্ডের এই যৌথ সেন্টারে সবার মুখে নতুন করে হতাশার ছাপ চলে এল। সবাই বুঝে গেলো নতুন নতুন ‘নতুন মানব’ তৈরীর পক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।

দুই প্রেসিডেন্ট উঠে যেতে যেতে বললেন, ‘ভালবাসা রোবট পাঠাও আজই, সফল না হলে প্রথমে ক্লাউড হতে পুরো এলাকা বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে, তাতেও কাজ না হলে ঐ শহর ডেসট্রয় করে দাও, কাল সকালের মধ্যে। আমাদের দু’জনে এই বিষয়ে একমত ।’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# মামুন ভাই, ৩য় বারের চেষ্টায় সফলভাবে পড়ে শেষ করলাম। মনোযোগের জন্য নয়, সময় করে উঠতে পারছিলাম না। তবে আজ পড়া শেষ করে মনে হচ্ছে আরো আগে পড়া দরকার ছিল। খুবই ভালো লাগলো এবং আগামী সংখ্যার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
নজরুল জাহান সাইন্স ফিকশন হিসেবে আরো মজবুত কাহিনী হতে পারত। শুভাশীষ।
সেলিনা ইসলাম তোমার এই সাইফাই পড়তে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য লাগল - একটুও জটিলতা নেই । অনেক মাথা খাটিয়েছ গল্পেই তার প্রতিফলন পাওয়া যায় । তবে এই ধরনের লেখায় অনেক সময় দিতে হয় সেই ক্ষেত্রে বলব কম সময়ে একজন দক্ষ লেখকই পারে এমন জীবন্ত চরিত্র ফুঁটাতে ! আগামীর অপেক্ষায় শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
প্রজ্ঞা মৌসুমী গত সংখ্যার গল্পে অনেক ঘটনা ঘটছিল তবুও কেন জানিনা না মনোযোগ ছূটে ছুটে যাচ্ছিল। এবার সেরকম হলো না। স্বয়ং-সম্পূর্ণ চিন্তাধারার ১টা রোবট কিভাবে কি করছে জানার আগ্রহ হয়ত বেশি ছিল এটা পড়ার সময়। সায়েন্স ফিকশন পড়লে মাঝে মাঝে মনে হয় সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি আর মানুষের সৃষ্টির মধ্যে তুলনা এসে যায়। 'নতুন মানব' সম্প্রদায়ের নাম যেন সেই দিকে ইঙ্গিত করে। অবশ্য আমার বোঝার ভুলও হতে পারে। ক্রিয়েটিভ লেখনী আর রোবটের লজিকেল চিন্তাভাবনায় মুগ্ধ হলাম। কিন্তু "নতুন সভ্যতা প্রয়োজন। নতুন মানবদের দ্বারা পৃথিবীর অবশিষ্ট নষ্টামি দূর হবে।" এ কথায় লজিকের থেকে ইমোশন ছিল। সত্যিই কি টনিন পারবে? আমারতো মনে হয় নতুন মানবদের চিন্তা আর কাজেও করাপশান ঘটবে। তার নিজের মধ্যেও আছে। সে এখনই সভ্যতা তৈরির কথা ভাবছে; নিজে তৈরি হবার আগেই নিজেকে যোগ্য ভেবে বসে আছে। অথচ তার মধ্যে ভাল-মন্দ বোধই প্রখরভাবে তৈরি হয়নি। হলে হীরেটা সে দোকানেই ফিরিয়ে দিত, সুবিধা আদায় করা, যা প্রাপ্য নয় তাই চুরি করা... এসবইতো করাপশান। যাই হউক, সবমিলিয়ে মুগ্ধ হবার মতই গল্প। পরের অভিযানের অপেক্ষায়...।
অসাধরণ মন্তব্য। ধন্যবাদ
খোন্দকার শাহিদুল হক বেশ ভাল লাগল। বিজ্ঞান মনস্ক নতুন চেতনার নতুন স্বাদের গল্প। শুভেচ্ছা রইল।
আদিব নাবিল বিশ্ব রাজনীতির ভবিষ্যত চালচিত্র সূচারূভাবে ফুটিয়েছেন। ‘ভালবাসা অনুভূতি কাজে লাগিয়ে অসাধ্য সাধন’... ব্যতিক্রমী চিন্তা। ‘পিসল্যান্ড’ ধারণা নিয়ে কোন সুইস নাগরিক না আপনার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়! খুব ভাল একটা গল্প পড়লাম।
আরমান হায়দার লেখাটি মাসের শুরুতেই পড়েছিলাম। খুব ভাল লেগেছে। তবে ভাল লেখকদের লেখা সম্পর্কে মন্তব্য একটু সাবধানে করতে হয়। তাই এখন বলছি বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে লেখাটি দারুন হয়েছে।
মোঃ আক্তারুজ্জামান মাসের প্রথমেই একবার পড়েছি| যথাযথভাবে মূল্যায়ন বা আত্মস্থ করার উদ্দেশে আবার ঝালিয়ে নিলাম| আগেই বলেছি বিজ্ঞান ভিত্তিক এই কল্পকাহিনীর প্রতি আমার বেশ অনীহা বা ভীতি আছে| বর্ণনামূলক হওয়াতে আমার বুঝতে বেশ সুবিধা হয়েছে| গত সংখ্যায় ট-নি-নির সাথে পরিচিত হয়েছি| এ সংখ্যায় তার নুতুন মানবে রূপান্তর আরো নতুন মানবের সৃষ্টি বেশ উপভোগ করেছি| বর্ণনার সাবলীলতাটুকুও আমার পক্ষে ছিল| আশা রাখি আপনার/আপনাদের এই ধারার লেখার যাত্রা অব্যহত থাকলে আর একজন ভক্ত পাঠক হিসেবে নিজে পরিচয় দিতে পারব|
Lutful Bari Panna ীপনিশিংটা গল্পটাকে অসমাপ্তের মর্জাদা দিচ্ছে। যদিও পরের সিকুয়্যালটির ব্যাকগ্রাউন্ড লাকীলি আপনার জন্য তৈরী হয়েই আছে। আই মাষ্ট সে ইউ আর লাকী। তবে গল্প হিসেবে এটাকে একটু স্বয়ংসম্পূর্ণ করার চেস্টা করা যেত বোধ হয়। বাট স্টিল ইটস এ মাইন্ড ব্লোইং কম্পোজিশন। বেষ্ট নাম্বার ফর ইউ এগেন।
ভালো সাইফাই লিখতে মনে হয় আরও সময় দরকার
মৃন্ময় মিজান বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়ার মুড সব সময় থাকেনা...থাকলে ভাল হইত....কেম্নে যে লেখেন এইসব...আমি জীবনেও পারব কিনা আল্লায় জানে....
মুড ভাল না দেখেই গল্পকবিতার কাছে ধন্য..এমন নিজ দক্ষতাহীন বিষয়েও লেখার সুযোগ পাচ্ছি।

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪