ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী ধ্বংসময়

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

মামুন ম. আজিজ
  • ৭৬
  • 0
  • ১১
\\১\\
'দূর! এত নীতি কথা কেনো বলছিস। নীতি মানার কেউ নেই এ দেশে, এখানে বলাটাই যা সহজ। মানার কোন স্বচ্ছতা নেই অথচ দেখ নীতি ভরপুর। নীতির ভারে ভারাক্রান্ত জাতি বড্ড স্বেচ্ছাচার। আত্মনীতিই হয়ে উঠেছে পালন নীতি। '

তন্ময়ের কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ থামল রায়ান। তারপর সে আবার মুখ খুলল, 'হুম ঠিক, নীতি বেশি দেখেই হয়তো এখানে কেউ মানে না। অথবা মানে না দেখেই একের পর এক নীতি তৈরি হতেই থাকে।'

'হ ঐটাই, ক্ষুধা যেমন বেশি, ক্ষুধার্ত মুখের সংখ্যা তেমনি বেশি, তাই ক্ষুধা মেটার আগেই আরেক ক্ষুধার্তের জন্ম।'

'তাই তো , ভালো মিলাইছোস রে নাঈম। হাতের মশলা ভালো মিলাইছোস তো, হেল্প লাগবে নাকি?'

রায়ানের কথায় উঠে দাঁড়ায় নাঈম। টেবিলের সামনে সে চেয়ারে বসে ছিল। বাম হাতটা টেবিলের উপর ঠেস দেয়া। সে হাতের তালুর মধ্যে সিগারেটের থেকে বের করা তামাক মেশানো মসলা নিয়ে ডান হাতের বুড়া আঙ্গুল দিয়ে ডলেই চলেছে । সে এক নিষিদ্ধ শিল্পকর্ম যেন। ডলতে ডলতেই সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, 'রায়ান বানাবি মাল? তাইলে তো হৈছে রে। কেউ পৃথিবীতে আসে কেবল খাইতেই, আর কেউ আসে খাওয়াতে...'

'তুই কোনটারে নাঈম?'

'আমি এ দুইটার বাইরের । তৃতীয় পক্ষ। না খাওয়ার দলে।'

তন্ময় দেয়ালে টানানো একটা কার্টুনের দিকে তাকিয়ে ছিল তন্ময় হয়ে। সেটার সামনে থেকে সরে এসে বলল, 'নিষাদের মত উদার ধনী যার বন্ধু সে না খাওয়ার দলে থাকে কি করে রে?'

'হ ঠিকই কইছিস, নিষাদের বদৌলতেই তো নাঈমের মত রাস্তার একটা ছেলে এই আলিশান ফ্লাটে বসে দামী মদ, গাঁজা, ইয়াবা যতসব নেশার আসরে পেটের সাথে নেশার ক্ষুধাও মিটিয়ে চলেছে। নিষাদের দয়ার শরীর।'

রায়ানের সে কথার প্রতিবাদে নাঈম মুখ খোলে আবার, 'দয়া কেনো হবে, এই যে পুরিয়া, ইয়াবা এনে দিচ্ছি. ্ এ কি কাজের বিনিময়ে খাদ্য পাবার বিষয় নয়?'

নিষাদ সে কথায় হো হো করে হেসে ফেলে। হাসতে শুরু করে বাকী সবাই। তারপর নাঈমের হাত থেকে সদ্য বানানো গাঁজার স্টিকটা নিয়ে ধরায় রায়ান।

তন্ময় টানে না। লিকুইড ছাড়া তার গাঁজা রচে না। যতই ক্ষুধাই লাগুক শুধু ধোঁয়ায় তার হবে না। সে রুচিশীল নেশাচর্চাকারী। বাকী তিনজন গাঁজার ধোয়ায় স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে আর সে তখনও শিল্প ক্ষুধায় মত্ত হয় । নিবিষ্ট তাকিয়ে থাকে আবার দেয়ালের ছবিটার দিকে।

নিষাদ টান শেষে এগিয়ে আসে। বলে, 'কিরে এ ছবিতে মজলি কেনো?'

'কোত্থেকে কিনেছিস রে?'

'বাবার এক বন্ধু বাবাকে দিয়েছিল। ডায়ালোগটা বেশ লাগায় বাবাকে বললাম আর উনি হাসতে হাসতে দিয়ে দিলেন। শুনেছি এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধ আন্দোলনের সময় কোন কবি এটা লিখেছিলেন।'

'আমিও শুনেছি আগে। -ভাত দে নাইলে মানচিত্র খাব- আচ্ছা নিষাদ,. এটা কি নীতি কথা?'

'না নীতি কথা না, এটা ফাউল কথা।'

নীতি কথা হচ্ছে শুনেই রায়ান ছুটে আসে। 'হ হ । যে ভাত খাইতে পারে না, সে আবার মানচিত্র খাবে কেমনে। ধরি , মানচিত্র খাওয়াটার দুটো রূপক অর্থ হতে পারে। আন্দোলন, কিংবা ধ্বংস। ক্ষুধার্তের জন্য দুটোই অকার্যকর। পেটে ভাত না থাকলে কোন ক্যারিকাচারই কামে লাগে না। আর পেটে ভাত থাকলে হাগার সময় চিলাপির প্যাচও মারা যায়।'

তন্ময় একটু রেগে যায়। বলে, ' আবার নীতি! আয় তোর জন্য একটা কবিতা মনে পড়েছে, এইটা ব্যাখ্যা কর-
একটি ক্ষুধা , দুইটি ক্ষুধা, তিনটি ক্ষুধার জন্ম
চারটি ক্ষুধার জন্ম হলেই স্বাধীনতা কাম্য।
স্বাধীনতা পাবার পরে হারাল ক্ষুধা ঐ?
চারদিকে তাকিয়ে দেখ ক্ষুধার অভাব কই?
ভাবতে থাক, আরেক ছিলিম লাগবে নাকি। কিংবা একটা ইয়াবা !'

'দূর ওরে থাকতে দে তো' বলেই নিষাদ আর নাঈমকে নিয়ে ড্রইং রূমে টিভির সামনে গিয়ে বসে। নাঈমকে নিচে দারোয়ানের কাছে কল দিতে বলে নিষাদ। কল দেয়ার আগেই কলিং বেল বেজে ওঠে। ইন্টারকমে কথা শুনে বোঝা যায় দারোয়ান চলেই এসেছে। কেএসফি থেকে কিছু খাবার দাবার আনতে পাঠিযেছিল তাকে নিষাদ।

দারোয়ান চলে যাবার পর তন্ময় এবটা প্যাকটে খুলে ফ্যাঞ্চ ফ্রাই চিবাতে শুরু করে। কিন্তু বাকী কোন খাবারের প্রতি কারও কোন মনোযোগ দেখা যাচ্ছে না। সবাই উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে। সবাই অন্য ক্ষুধায় ক্ষুধার্ত। নিষাদ চিৎকার করছে একটু পরে পরেই 'শালার মুন্নাটারে কখন পাঠালাম। এখনও আসার নাম নেই।'

'ঢাকা শহরের জ্যামের বিষয়টাও তো চিন্তা করতে হবে।'

তন্ময়ের সে কথায় রায়ান ক্ষিপ্ত হয়ে বলে ওঠে, 'হ ঠিক কইছোস। শালার সব ক্ষুধার্ত মানুষ এই শহরে এসে জড়ো হয়েছে। সব খেদিয়ে বিদায় করা উচিৎ। রাজধানী শহর , এখানে বাস করবে সব রাজকীয়ার ক্ষুধার উেেধর্্ব থাকা মানুষ জন।'

নাঈম প্রতিবাদ করে, 'তাহলে তো আমারেও বিদায় করে দিতে হবে রে। '

'তুইতো আমাদেও জীবনে সাথে সাথে জড়িত। তুই তো প্রয়োজনের।'

'এমনই সব ক্ষুধার্ত গরীবমানুষগুলো কিন্তু ক্ষুধাহীন বিত্তবানদেও কারও না কারও প্রয়োজন।'

'্আসলেই কি কেউ ক্ষুধাহীন হয়রে...'-তন্ময় এমন কিছু লতে যাচ্ছিল, তখনই পাশের ঘর থেকে রায়ান ছুটে এসে বলল,.' তন্ময় , ক্ষুধা বলতে কি কবিতায় বিশেষ কোন আন্দোলন কে বুঝিয়েছিস।'

কথাটা বলেই তার চোখ যায় খাবারের প্যাকটেগুলোর দিকে। একটা বার্গারের প্যাকেট নিয়ে খেতে বসে। কিন্তু এক কামড় দিয়েই তার আর খেতে ভালো লাগে না। ক্ষুধা নেই।

নাঈম হাসে। বলে' নিষাদের আর তোদের মত বন্ধু পেয়ে এই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, ক্ষুধা লাগে না। আমরা ক্ষুধাকে জয় করেছি।'

\\২\\

বিকেল হয়ে গেছে। মুন্না গাড়ী ড্রাইভ করেছ। চারটে বোতল জোগাড় করেছে। গাড়ী নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়ি কেবল একটা ফোন । আগেই নিষাদ বলে রেখেছিল। কার্টনে মুড়ে গাড়ীতে উঠিয়ে দিল লোকটা। গুনে গুনে বারোহাজার টাকা দিলো মুন্না লোকটার হাতে। তারপর আর দেরী করেনি। গাড়ী নিয়ে সোজা টান দিযেছে বনানীর দিকে। নিষাদের পারসোনাল ফ্লাটটা ওদিকেই। হাতির পুল বাজার দিয়ে শর্টকার্ট মারতে গিয়ে উল্টো ঘন জ্যামে আটক গেছে। যানজটগুলো সূতোর গুটির মত। সহজ খুঁজতে গেলে আরও বেশি প্যাচ খেয়ে যায়। নিষাদ দু'দুবার ফোনে খোঁজ নিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে। বেচারা বন্ধু চারজন ক্ষুধায় কাতর। মুন্না আছে টেনশনে। লাষ্ট টাইম পুলিশে ধরেছিল। মোবাইলে টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল তার আগেই। কপাল! নিষাদকে একটা কলও করতে পারছিলনা। তিন ঘন্টা থানায় গিয়ে থাকতে হয়েছিল। আজ মোবাইরল ভারো লোড করে এনছে। পুলিশি ঝামেলা হলেই নিষাদ তাকে কল দিতে বলেছে। তড়িৎ সমাধান হবে। নিষাদেও প্রাচুর্যের মাঝে ওতটুকু ক্ষমতা তার খুবই স্বাভাবিকতা এ দেশে।

বিরক্ত লাগছে । গাড়ীগুলো অনঢ়। বাজারের কোনায় ডাস্টবিনটার দিতে চোখ যায় মুন্নার পাগল পাগল একটা মহিলা ডাস্টবিন হাতড়াচ্ছে। গায়ে তার এক টুকরো কাপড় কোনমতে ঝুলছে কেবল। ডাস্টবিন থেকে সে খবার খুঁজে খুঁজে খাচ্ছে। এটা সভ্য এ রাজধানীর একটা অসম ঘুনে খাওয়া দৃশ্য। খুব মায়া হয়।

বড় লোক বন্ধুদল জুটেছিল কপালে মুন্নার। বিশেষ করে নিষাদ। নিষাদের কোন কিছুর অভাব নেই। বরং সবকিছুই বেশি বেশি। তবে গাড়ী ড্রাইভ করার সাহস নেই। সে ভয় পায়। কলেজে পড়ার সময় একবার একসিডেন্ট করেছিল। সেই ভয় মাথায় বসে গেছে। কপাল খুলেছে তাই স্কুলের গরীব বন্ধু মুন্নার। গভঃ ল্যাবে তারা একসাথে পড়ত। স্কুলটাই মুন্নার এক সময় পেরোনো হলোনা। পারিবারিক দারিদ্রতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছিল। দুর্ভাগ্য দেবতার শোন দৃষ্টি পড়েছিল। প্রথমে মারা গেলো বাবা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তিনিই। তারপর গ্রামের যতটুকু জমি জমা ছিল সেগুলোও চাচাদের ক্ষুধিত পেটের দুষ্টু তাড়না গ্রাস করল।

মা টুকটাক কাজ করে চলতে পরিবার চালাতে শুরু করল। মুন্নাও লেখাপড়া ছেড়ে গ্যােেরজে কাজে লেগে গেলো। তারপরও ক্ষুধা নিবারণ হয় না। বাবা বেঁেচে থাকতে এই ক্ষুধা যেন লুকিয়ে ছিল। তখন কিছু চোখের ক্ষুধা ছিল। ঠিক ক্ষুধা না । সেগুলো ছিল লালসা। বড়লোক ক্লাশমেটদের অনেক অকারন আয়েসের প্রতি এক গভীর লালসা। কিন্তু হীন দরিদ্র অবস্থায় যখন পরিবারের পাঁচজনের পেটের ক্ষুধায় মেটেনা তখন সেই লালসার কোন স্থান সে আর খুঁজে পেত না মনে। ছোট একটা ভাই, সে নিজে, বড় দুইবোন আর মা। ভয়াবহ ক্ষুধা মেটানোর সংগ্রাম। সেখনে জগতের আর কোন কিছু কোন ভাবান্তর ঘটাত না।

মা আর পারছিলন না। বড় বোনটার একটা বিয়ের ব্যবস্থা। বর বিপতি্নক। বয়স ৫০ এর উপরে। ওদিকে তার বোন এর বয়স মাত্র ২৫ । দ্বিগুন বয়সের এবং দুই সন্তানের জনককে বিয়ে করতে কোন আপত্তিবই সে জানাল না। ক্ষুধার বড় শক্তি। বিশেষ করে পেটের ক্ষুধা। অন্য সকল ক্ষুধা পেটের ক্ষুধার কাছে তুচ্ছ। সেদিন বোনের অশ্রুহীন চোখ দেখে সে সেটা বুঝেছিল। ছোট ভাইটাকে বড় বোন নিয়ে গেছে। ওখানে থেকে পড়ে সে।

মুন্নাকে গ্যারেজে কাজ করতে দেখে ফেলেছিল একদিন ধনীর দুলাল নিষাদ। বন্ধু কাম পারসনাল ড্রাইভার হিসেবে মুন্নার পরিবারের ক্ষুদা মিটানোর পর্ূণ একটা ব্যবস্থা হলো। এমন বন্ধুর সকল কর্মে সে নিঃসন্দেহে আত্ম নিয়োগ করতে পারে।

মুন্না ্তু নেশার আসরে বসে ঠিকই , মদ গাঁজা কোনটাই তার মুখে ওঠে না। কেবল সিগারেটই তার জন্য যথেষ্ট। খাবারের অভাব যাকে একবার ভুগিয়েছে পোড়া ইটের মত শক্ত করেছে সে পেটে আর ওসব নেশার ক্ষুধা ঠাঁই পায়! ঘয়তো অনেক ক্ষেত্রে বেশিই পায়। তার ক্ষেত্রে পায়নি। নাঈমও গরীবের সন্তান হলেও এই বিষয়ে নাঈম তাকে হেয় করার চেষ্ট চালায়। সে গায়ে মাখে না।

ডাস্টবিনের থেকে খাবার সংগ্রহ করার দৃশ্য এ শহরে খুব বেশি ব্যতিক্রম না। অনেকেই এ দৃশ্যে অভ্যস্থ। যানজটটাই মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে, না হলে সবাই গতির রাজ্যে হারিযে যেত কখন।

মুন্নার ঠিক পাশের গাড়ীটিতে একটি ছোট মেয়ের হাতে পিজা হাটের প্যাকেট দেখা যাচেছ। পিজার এক টুকরোয় কামড় দিতে দিতে মেয়েটার চোখ চলে যাচ্ছে ডাস্টবিনের ময়লা খেকো নারীর দিকে। পাশে বসা তার মা সেটা বুঝতে পেরে মেয়ের দৃষ্টিকে আড়াল করা চেষ্টা করছেন। মুন্নার কষ্ট আরও বেড়ে যায়। ইচ্ছে করে ঐ নারীর ক্ষুধা নিবারনের জন কিছু অর্থ দিয়ে আসতে। তার গাড়ীতে হাজার হাজার টাকার মদ। আর কেউ খুব কাছেই মানবতার সবচেয়ে নিকৃষ্ট অব্যবস্থায় ক্ষুধা নিবারন করছে।

না! সে মনে মনে ভাবল একবার। নিষাদেরও কল এল তক্ষুণি। ক্ষিপ্ত মনে হলো বন্ধুকে। মুন্নার জন্য অপেক্ষা করছে চারজন। সেই সময় যানজট খুলল। মোবাইল রেখে গাড়ী টান দিল মুন্না।


\\ ৩\\
রায়ান একটা প্যাকেট খুলে কেবল আধখানা বার্গার খেয়েছে। তারপরও তারও ক্ষুধা হারিয়ে গেছে। গাঁজার প্রভাবে ঝিমুচ্ছে। টিভি দেখেতেও ভালো লাগছে না কারও। নাঈম এর মধ্যে আরও দুটো স্টিক বানিয়ে ফেলেছে। সেগুলো টেনে ক্ষুধা আরও বাড়ছে যে ক্ষুধা নিবারনের উপাত্ত এখন মুন্নার কাছে। অথচ দুপুরে তাদের কারও লাঞ্চ করা হয়ে ওঠেনি। তারা অপেক্ষায় বিরক্ত।

নিষাদ আয়োজন আরও পরিপূর্ণ করার জন্য গ্রিল আর বিফের কাবার আনিয়ে নিয়েছে। সেগুলোও পড়ে আছে। দারিদ্রক্লীষ্ট বস্তির বাসিন্দা ছিল নাঈম এককালে, কত রাত কত দিন ক্ষুধার্ত থেকে কাটিয়েছে। আজ তার পেটে আর ক্ষুধা লাগে না। এ নিষাদের অবদান। নেশার রাজ্যে পৃথিবী পেটের ক্ষুধাহীন।

না্ঈম তার মনের এই কথা ব্যক্ত করল। তন্ময় ঝিুমনি ছেড়ে নড়ে চড়ে বসল। টিভির দিকে চোখ ঘুড়িয়ে নিয়ে বলল, 'ঠিক রে নাঈম- ক্ষুধার রাজ্য পৃথিবী গদ্যময়, আর নেশার রাজ্যে পৃথিবী কাব্যময়...পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।'

রায়ান বলে, 'দূর ভুল। বুঝলি রে আমরা ক্ষুধার্ত, কাব্য তো স্বল্প আর গদ্য হলো দীর্ঘ, ক্ষুধার রাজ্যে আমরা তাই গদ্য এখন। রাতও নেই। চাঁদও নেই। তাহলে ঐ ওপাশের লেকের জলই যেন ঝিলিক দেয়া ভদকা। ...

বাকী তিনজন জানালা দিয়ে দূরে লেকের জলের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকায় একবার। নাঈম আরেক চক্র গাঁজা ধরায়। তন্ময় চিরাচরিত নিয়ম ভেঙেছে। মদ ছাড়া গাজা টেনেছে। মদের ক্ষুধা চেতনা লোপ করছে চার যুবকের ধীরে ধীরে। রায়ান ফ্রিজ খুলে মিষ্টি খুঁজে আনল। সবাই খেয়ে নিতেই মাথাটা ধরল আরও বেশ ।

মুন্না এখন ফোনও ধরছে না। নিষাদের মেজার চরমে উঠেছে। নিষাদের মেজাজ চরমে উঠলে নাঈম , রায়ান এরা সকল নীতি ছেড়ে নীতিহীন হয়ে ওঠে। সবাই ক্ষ্যাপছে।


\\পরিশিষ্ট\\
মুন্না সিগন্যাল পেরিয়ে ওপাশে খালি জায়গা খুঁজে গাড়ী সাইট করে। মাথায় ডাস্টবিনের ময়লাখেকো নারীটার দৃশ্য যন্ত্রনা দিচ্ছিল। এ যন্ত্রনা ক্ষুধা তার সহ্য হবে না। গাড়ী থেকে নেমে নারীটির কাছে যায়। তাকে ধরে নিয়ে একটা হোটেলে বসিয়ে দিয়ে আছে । সাথে তার খাবার জন্য ম্যানজোর কে দিয়ে আসে টাকা।

নারীটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ক্ষুধার্তের বোধহয় কোন ভাষা থাকে না। এ নারীরও ভাষা নেই। সে গোগ্রাসে গিলছে। মুন্না চেয়ে তাকে মায়ার দৃষ্টিতে। তারপর মুন্না রওয়ানা দেয়।


ওদিকে নেশার ক্ষুধায় যুবক চারজনের মাথা গুলো ধীরে ধীরে অকেজো হচ্ছিল। নিষাদ রাগে মোবাইলটা আছাড় দিয়ে ভেঙেও ফেলেছে। হঠাৎ বেল বেজে উঠল।

মুন্না ঘরে ঢুকতেই নাঈম ছুটে গিয়ে হাত থেকে বোতলের কার্টন ছিনিয়ে একটা বোতল বের করে মুখের ভেতর ঢালতে লাগল। দীর্ঘকালের ক্ষুধার্ত যুবক। মুৃন্না চেয়ে থাকে অবাক দৃষ্টিতে।

তারপর কি থেকে কি যেন হয়ে গেলো।

রায়ানের মাথাটা পুরো বিগড়েছিল। সবচেয়ে নীতি কথার যুবক রায়ান। সে পাঁচটি জন্মের রহস্য নিয়ে ভাবচিল। কোন কূল কিনারা হচ্ছিলনা। তন্ময় কোন সমাধান দিচ্ছিলনা। হঠাৎ একটা বোতল হাতে নিয়ে মুন্নার মাথায় বসিয় দিল এক ঘা। দরদর করে রক্ত গড়িয়ে পড়ল কপাল আর গাল বেয়ে। মুন্না ঢলে পড়তে লাগল।

তন্ময়ের হুস লোপ পাইনি। মুন্নার দিকে দৌড়ে ধরে ফেলল তাকে। অন্যহাতে ইন্টারকম উঠিয়ে কল দিয়ে অ্যামবুলেন্স ডাকতে বলল দারোয়ানকে।

নিষাদ সোফায় বসে এক হাতে একটা বোতল ধরে হাসছে তো হাসছেই। পাশ থেকে নাঈম পা বাড়িয়ে টলতে টলতে বলে উঠল , 'ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী ধ্বংসময়... '
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজমুল হাসান নিরো ৩০ তারিখ তো শেষ হয় নি। কিন্তু ভোট অপশন কোথায়?
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
নাজমুল হাসান নিরো রনীলের সাথে একমত না আমি, কারণ মনে হয়েছে লেখক পাশ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে গল্পটি লিখেছেন। নাহলে জুতার কালি, গোবর(অপশনাল), চানাচুর, চকোলেট, জিলাপি আরো অনেক কিছুই উঠে আসত। যাহোক ক্ষুধা সংখ্যায় এমন একটি বিচিত্র ভাবনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ তুলে ধরার মাধ্যমে লেখককে ধন্যবাদ। একেবারে আনকমন থট। হাজার হাজার টাকা খরচ করে শুধু ঝিম মেরে বসে থাকার যে কোন মানে নেই এটা কেউ বুঝুক সেই কামনা।
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মামুন ম. আজিজ ঝরা পড়েছ এটাই অনেক পাওয়া। অনেকদিন পর এখানে কমেন্ট করল। এবং পড়লও
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ঝরা মন্তব্য কি করব বুঝছি না।ভালোতো অবশ্যই।
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মামুন ম. আজিজ প্রচারের পক্ষে বিপক্ষে বুঝিনা। নিজের ঢোল নিজে পেটাতে পারি না সব সময়।
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১
বিন আরফান. আমি এসে গেছি চিন্তার কারণ নেই. প্রচার ওপেন হয়েছে, শুরু করতে পারেন. আমি সব সময় প্রচারের পক্ষে.
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মামুন ম. আজিজ গল্পটি শেষ কেউ মন্তব্য করেছে গত সপ্তাহের মঙ্গলবর....এরপর আর কেউ কেেনা====--- মন্তব্য করল ন।
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মামুন ম. আজিজ কুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১১
Akther Hossain (আকাশ) 'ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী সত্যই ধ্বংসময়"
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
M.A.HALIM দারূণ হয়েছে বন্ধুর গল্প। 'ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী ধ্বংসময়... 'আমি আরো কিছু ......................... জুড়ে দিলাম।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১১

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪