নিদালি ও তার হর্ডার স্বামী

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

মামুন ম. আজিজ
  • ৫৭
  • 0
\\এক\\

গুমোট পরিবেশ। তা জানালাগুলোর ওপাশে মুক্ত পরিবেশে যেমন তেমনি নিদালির মনেও।

সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। সেই সূর্য ওঠা ভোরে শিশু আলোকরেখাগুলোর সাথে বৃষ্টির কণাগুলো খেলছিল - একে অন্যকে ছোঁয়ার খেলা। খেলতে খেলতে বৃষ্টি থেমেছিল। সূর্যটা হেসে উঠেছিল। সেটা যেন মুচকি হাসি। চিকন রোদের রেখা আসতে আসতেই আবার হারিয়ে গিয়েছিল দিগন্তের শেষে কোন অদেখা কুয়ায়। তারপর মেঘগুলো আকাশজুড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তখন থেকেই গুমোট পরিবেশ। মায়াময়। এটাই বোধহয় নৈঃশব্দ।

নিদালির মনটা ভালো না আজ। সে জানে বাইরের এ গুমোট পরিবেশ প্রবল বর্ষনের আভাস। বাতাস ক্ষ্যাপে উঠল বলে। ঝড় আসবে। বৃষ্টি আবার শুরু হবে। তার মনের নৈঃশব্দের হাহাকারটুকুও কম কিসে। কি ঝড় আর আসবে বাইরে, সে ঝড় তো মনের কল্পনায় আরও ব্যাপক। জানালাগুলো খোলার তো উপায় রেখে যায়নি ফাহিম। বেড রুমের বড় জানালা হাতখানেক খোলা যাচ্ছে বড়জোড়। সেখান দিয়ে হিমেল বাতাসের একগোছা পরশ ছুটে আসছে। নিদালির তাতে মন ভরবে কেনো। সবগুলো জানালা খুলে দিতে পারলে কতই না ভালো হতো। বাতাসের দূরন্ত আবেশে মিশে যেত মন, ভরে যেত দেহের যাতনাটুকু। আটতলার উপরে অতটা বালু্ও উড়ে আসে না।

বারান্দাটা কাল রাতে হাফ ছেড়ে বেঁচেছে যেন। পুরোটাই এখন ফাঁকা। ওখানে গিয়ে দাঁড়ানো যায়। কিন্তু ওপাশেই যে পাশের বাড়ীর বারান্দা মুখোমুখি। মাত্র ফুট চারেক দূরত্ব হবে। অস্বস্তি ভোগায়। একটা তরুন সিগারেট টানতে আসে মিনিট দশেক পর পরই। তাছাড়া কতক্ষনইবা আর বারান্দায় বাতাসের নেশায় নিশ্চল দাঁড়িযে থাকা যাবে। সে তাই খাটেই শুয়ে আছে। শুয়ে আছে সেই সকাল থেকে। মন আর দেহ যখন একসসাথে থাকেনা, শুয়ে থেকেই কেবল তাদের আটকে রাখা যায়।

ফাহিম খেয়ে বের হয়নি। নাস্তা তৈরীর মুডই ছিল না স্বামী স্ত্রীর কারও। নিদালি শুয়ে শুয়ে চোখ দুটো একটু বন্ধ করে ভাবে - এত কিছু বলা কি ঠিক হয়েছে? সে একজন এমবিবিএস ডাক্তার। এত দ্রুত টেম্পার হারালে কি মানায়। পরক্ষণেই সে স্ববিরোধী কথার তোড়ে ভেসে যায় - ঠিকই হয়েছে, ডাক্তার দেখেই তো বুঝতে পেরেছে। ফাহিম মানসিক বিকারগ্রস্থতো বটেই। অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসওরডারে (ওসিডি) আক্রান্ত। এ বিষয়ে সে নিশ্চিত। এত ব্রিলিয়ান্ট একটা ছেলে, এত ঠান্ডা ব্রেন যার সে কেনো এমন মনঃরোগে ভুগছে!

আশ্চর্যজনক ভাবে তার এই রোগ লালনে পরিবারের আর সবাই লাই দিয়ে গেছে আজীবন। সে নিজেও তো একসময় ফাহিমের বিসদৃশ অভ্যাসগুলোকে বরং তার বিশেষ পার্সনালিটি হিসেবেই ভেবেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম সবই কি ভালো? তখন যে প্রেমডানার বর্ণালী পালক এসে আবেগের পরশ বুলিয়ে দিত বোধের চোখে। কিন্তু আজ যদি সেই বিসদৃশ্য অভ্যাসে তাদের সূক্ষ্মকারুকাজে বোনা ভালবাসার চাদরে ছিদ্র তৈরী হয়, তখন আর কি করে থাকবে নিদালি। কাল রাতে তাইতো টেকেনি সহ্যের বাঁধ।

গতসন্ধ্যা থেকেই ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। মাঝখানে বৃষ্টি থেমেছে , মানুষদের ঘরে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছে। আবার বেড়েছে রাত প্রথম প্রহরের পর থেকেই। বাতাস প্রবল হয়েছে, বৃষ্টির ধারা নেমে এসেছে ইচ্ছেমত। এক ছাদের তলে দুজন নিবির ভালবাসার বন্ধনে নিবন্ধিত প্রাণ। শীতল একটা আমেজ কামনার বিশুদ্ধ সেতু গড়ে দিয়েছিল। স্বল্প খোলা জানালাটা দিয়ে বৃষ্টির পরশে পরিণত শীতের বাতায়ন এসে জড়িয়ে ধরছিল দু'জনের গায়। তেমনি দু'জনকে জড়িয়ে রেখেছিল এক চাদরের অবিচ্ছিন্ন আলিঙ্গন। ফাহিমের একটা হাত জড়িয়ে ছিল তার বুক। আঙ্গুল গুলো সুনিপুণ শৈলীতে হুকগুলো খুলে চলেছিল। অন্যহাতটি কপালের চিকুরে আদরের সুর তুলছিল। নিদালির দেহে বয়ে যাচ্ছিল অনুভূতির সাগরে অবারিত ঢেউ। খোলা বুকে হাতের ছোঁয়ায় শ্রেষ্ঠ সব চারুশৈলী গড়ে উঠছিল। সুস্মিত অধরের উন্মুখ স্বর্গের দুয়ারে নিরব ভালবাসার মিষ্টি পরশ ছড়াতে অধর ছুটে এসেছিল। হাত থেকে দেহে, অধর থেকে অধরে ভালবাসার তানপুরা ভৈরবী সুরের মূর্ছনা বাড়িয়ে চলেছিল। ওদিকে বাইরে বাতাসের গতিও বেড়ে চলেছিল। বৃষ্টিও ক্রমাগত আরও তীব্র বর্ষনে নেমে এল ভূমিকে জড়িয়ে ধরতে । চারদিকে মিলনের প্রাণবন্ত উচ্ছাস। বৃষ্টির ফোঁটা এসে প্রেমাসক্ত নর নারীর আবেগেকে আরও সিক্ত করা প্রয়াস চালাতেই নিদালি একটাহাত প্রসারিত করে জানালাটা টেনে দেয়। তারপর...

..হঠাৎ সেই ঘন আবেগের তীব্র আলোড়ন ভুলে বিছানা ছেড়ে উঠে যায় ফাহিম। নিদালির কণ্ঠে মৃদু ধ্বনি, 'কি হলো ফাহিম, কোথায় যাচ্ছ?' বলেই সে হাতটা টেনে ধরে।

'লক্ষ্মীটি , এই তো বৃষ্টি বেড়েছে, ভুলেই গিয়েছিলাম, বারান্দায় অত গুলো জিনিস ভিজছে। একটাবারও মনে করলে না। সন্ধ্যা থেকেই তো ভিজছে। তুমি না! একটু ওগুলো সরিয়ে আন...'

'পরে গেলে হয় না...'

'এই তো জান। আসছি..'

তারপর অনেকক্ষণ কেবল নিদালি চেয়ে চেয়ে দেখল। সে অনেকটা সময়। ফাহিম নির্বিকার চিত্তে একের পর এক বারন্দা থেকে জঞ্জালের স্তুপ সরিয়ে ঘর নিয়ে আসছিল। কত কাল ধরে জমানো খবরের কাগজ, পত্রিকা আরও কত কি।

নিদালি একটু সামলে নিয়ে এক সময় বলল, 'আমি কি হেল্প করব?'

'দরকার নেই, তা করতে পারলে তো সন্ধ্যা থেকে এতক্ষণ এগুলো ভিজে নষ্ট হতো না।'

তারপরও সহ্য করার চেষ্টা করছিল। নিদালিতো বুঝেই গেছে এ ক'মাসে। এ যে ফাহিমের এক গহীন মানসিক রোগ। সেতো ওসিডিতে আক্রান্ত । তার ধরনটা কমপালসিভ হর্ডিং। সে পুরোমাত্রায় একজন হর্ডার। যাবতীয় পুরাতন জিনিসের জঞ্জালের ভাগাড় জমিয়েই চলেছে সে। এর কি সমাধান নেই?- সে ভাবতে থাকে। মানসিক রোগের উপর উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার তার খুব ইচ্ছে। সুযোগ পেলেই সাইকল্যজিক্যাল ডিসওর্ডার গুলো নিয়ে বিস্তর পড়তে চেষ্টা করে। সবে মাত্র মাস চারেক হলো ইন্টারনি শেষ করেছে। একটা ক্লিনিকে জব নিয়েছিল। বিয়ে জনিত কারনে সেটা আপাতত ছেড়ে দিয়েছে। উচ্চ শিক্ষার্থে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছে। আর তার স্বামীটিই এমন রোগের শিকার! সেই কত বছরের প্রেম তাদের। এত আবেগী একটা ছেলে। এত নিবিষ্ট প্রেমিক। মানুষের মন কত আজব!

\\২\\
মাত্র পাঁচদিন হলো নিদালি আর ফাহিম আটতলার ফ্লাটে এসে উঠেছে। ছোট ফ্লাট । মাত্র ১১০০ বর্গফুট। ফ্লাটটা নিদালির নিজের। নিদালির মা অনেক আগে কিনেছিলেন তার নামে। বুঝে পাবার পর থেকে ভাড়া দেবে দেবে করে আর ভাড়া দেয়া হয়নি। এখন কাজে লেগেছে। যদিও ফাহিমের প্রবল আপত্তি ছিল এখানে উঠে আসতে। কিন্তু এছাড়া উপায়ও ছিলনা।

গোরান এলাকায় ফাহিমের বাবা ছয় কাঠার উপরে এক চালা টিনশেডের পাকা বাড়ি বানিয়েছিলেন। সে অনেক বছর আগে। তিনদিক জুড়ে বড় বড় অনেকগুলো ঘর। সামনে কিছুটা ফাঁকা জায়গা। একটা ছোট বাগান মাঝে। একপাশে একটা বড় আম গাছ। খুব মিষ্টি আম হতো গাছে। সেখানেই কেটেছে ফাহিম আর তার বড় ভাই ফিরোজের শৈশব। আসে পাশে উঁচু উঁচু বাড়িঘর তখন তৈরী হয়নি। পেছনে অনেক ডোবা ছিল। বৃষ্টির পানি সেইসব ডোবায় গিযে মুখ লুকাত। রাস্তা উঁচু হলো, উঁচু উঁচু দালানে ভরে গেলো এলাকা। ভরে গেলো সব ডোবা নালা। ফাহিমদের শুরু হলো বর্ষা যাতনা। বাগানের গাছ ডুবে যেত। জেগে থাকত সরু সরু ডাল, ডালের শিখরে শেষ একটা দুটো রঙিন ফুল। আমের শুকনো পাতা বদ্ধ জলে পড়ে নৌকার মত ভেসে যেত।

বাবা মারা যাবার আগেই ফিরোজের বিয়ে হয়ে যায়। ঐ বাড়িতেই জন্ম হয় তার দুই সন্তানের। বড়টা ছেলে আর ছোটটা মেয়ে। বাবা ততদিনে পারি দিয়েছেন অন্য জগতে। ফাহিম তখন বুয়েটের ছাত্র। বর্ষার দিনে ঘর থেকে বেরে হতে কষ্ট হত সবার। ফিরোজ অফিসে যেত জুতোদুটো বগল দাবা করে। নকশাকরা দরজাটা পেরিয়ে রাস্তায় এসে অফিসের গাড়িটাতে উঠেই তবে জুতো পায়ে দিত। সন্ধ্যায় কোন অবসরে ফাহিমের মা, তার ভাবী সবাই সেই বর্ষার কষ্ট আর বৃষ্টির সুখ ছন্দ নিয়ে মিশ্র অনুভূতিতে আনন্দে মাতত। ছোট সুখি পরিবার তাদের। ফিরোজের ছোট ছেলে মেয়েদুটো উঠোনে জমা পানিতে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে খেলত রোজ। একদিন সেখানে একটা ঢোরা সাপ দেখে ভাবি ভীষণ সংকিত হলেন।

ফিরোজ মাকে বারবার বোঝাতো বাড়িটা আর এইভাবে রেখে কি লাভ। ডেভলপাররা ভাল অফার দিচ্ছিল। সে নিজেও সিভিলি ইঞ্জিনিয়ার। ভাল জানাশোনা আছে। মা রাজী হয় না কিছুতেই। নষ্টালজিক মন তার। এখানে প্রতিটি ইটের মাঝে, ঘুনে ধরা চৌকাঠের গায়ে, আস্তর খসে পড়া ইটের উপর তিনি স্বামীর স্মৃতি হাতড়ান। সে কথা বলেন না ছেলের কাছে কিন্তু তিনি বাড়ি ভাঙতে নারাজ। ফাহিম কোন মতামতে যায় না। তার ঘরটা তো ঘর না, গুদাম ঘর। আজীবনের ব্যবহৃত কোন জিনিস সে ফেলেনি। সব তার সংগ্রহে আছে। সেই ক্লাশ ফাইভ থেকে চশমা উঠেছে চোখে। এক সময় নিয়মিত তার চশমা ভাঙত। এত বছরে যত চশমা সে পড়েছে প্রতিটা তার সংগ্রহে আছে। কোনটার ডান্ডি নেই। কোনটার একটা কাঁচ নেই। কোনটার আবার ভাঙা কাঁচই পড়ে আছে তার সংগ্রহ শালায়। শুধু কি নিজের জিনিস। বাবা কিংবা ভাইয়ের ফেলে দেয়া কত কিছুই রয়েছে তার কাছে। বাবার সেই পুরাতন রেডিওটা। অকেজো। কিন্তু যদি কোনকালে কোন পার্টস কাজে লাগে। তাদেও বাসার প্রথম সাদাকালো টিভিটা তার সংগ্রহে। এ পরিবারের সবাই যতগুলো ঘড়ি ব্যবহার করেছে সবগুলো জমিয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র সে। ইলেকট্রনিঙ্রে কোন কিছু পেলেই আরও জমানোর সাধ বেড়ে যায়। কোনদিন এসব ভেঙে , জুড়ে কত কি আবিষ্কার করা দীঘল স্বপ্ন মনে তার। কল্পনায় সে সেগুলো উপযুক্ত ব্যবহার দেখে নেয চোখে। অথচ অদ্যবধী খুব কমই লেগেছে কাজে।

পাড়ায় কারও কোন পত্রিকার কোন চাকুরী বিজ্ঞপ্তি প্রয়োজন হলে ছুটে আসত তার কাছে। তার কাছে থাকে দুই তিন বছর আগের পত্রিকাও। ম্যাগাজিনের পাহাড় জমে আছে। বাবার একটা ছোট লাইব্রেরী ঘর ছিল। সেটাও তার দখলে। সেখানে পা দেয়ার জায়গা নেই। ফিরোজ মাঝে মধ্যে বিরক্ত হলেও মার আবদারে তার বিরক্তি ধুলোয় মিশে গেছে।

সেবার বৃষ্টির পানি সরে যাবার পর শ্যাওলার স্তরটা বেশ পুরো হযেছিল উঠোনে। ফিরোজের ছেলেটা আছাড় খেলো। বামপাটা মচকে একাকার। তারপর মা একটু নরম হয়েছিলেন। তবে একটা শর্ত ছিল । ফাহিমের বিয়েটা তিনি এই বাড়িতেই দিতে চান।

বিয়ে হয়ে গেলো ফাহিমের। তারপর থেকে তোড়জোড় শুরু হলো। ভালো ডেভেলোপরকে খোঁজা হলো। ফিরোজ ব্যবস্থা করে ফেললো দ্রুত। ১৩ তলা এপার্টমেন্ট উঠবে। দুটো করে ফ্লাট প্রত্যেক ফ্লোরে। ফাহিম আর ফিরোজ প্রত্যেকেই পাবে তিনটি করে ফ্লাট। সময় লাগবে দেড় বছরের মত। কিন্তু এই সাময়িক সময়টাতে তারা সবাই কোথায় উঠবে সে প্রশ্নে বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো।

ফিরোজের শশুর বাড়ি সেই মিরপুর রূপনগরে। একটা ফ্লাট খালি আছে। তারা সেখানেই উঠতে চায়। ফাহিম হাসে। বলে, 'ভাইয়া তুমি না শশুর বাড়ি থাকার বিরুদ্ধে ছিলে সব সময়।' ভাইয়া বলেন, 'এতো সাময়িক রে।'

মা সেখানে যেতে রাজী হয় না। ফাহিম কে একটা বাসা ভাড়া করতে বলেন আশেপাশে।

নিদালি নতুন বউ হলেও এ বাসার সাথে তার সম্পর্ক বহু বছরের । সেই প্রেমের মাস ছয়েক পরেই সবাই তাকে চিনেছিল। তাদেও প্রেমটা লুকোছাপা ছিল না। সেটার মাঝেও এক আলাদা মজা ছিল। নিদালি তবুও মার সামনে বলতে ভয় পায়। গোপনে ফাহিম কে জানায় নিকেতেনে তার ফ্লাটটিতে উঠার কথা। ফাহিম একটু রাগ করলেও সেটাই যুক্তিপূর্ন মেনে নেয়। মোবাইলে কোম্পানীতে তার চাকুরী। অফিস বনানীতে। সবদিক দিয়ে সুবিধা।

মা এবার উভয় শংকটে পড়ে যান। দুছেলেই শুশুরালয়ে। তিনি কি করবেন। বৃদ্ধকাল যেন এক নিরুপায় কাল। মাত্র তো একদেড় বছর। দু ছেলের বাড়িতেই ঘুরে ফিরে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন তাই।


\\৩\\
১১০০ বর্গফুটের তিন রুমের ছোট ঘরেই ফাহিম তার রাজ্যেও জমানো ভান্ডার এনে জড় করেছে। কৌটা ভর্তি ভর্তি ইলেকট্রনিঙ্ পার্টস। পড়েছেও সেই বিষয়ে। অথচ কোনদিন কিন্তু সময় হয়নি একটা সার্কিট বানানোর। তবুও তার কোন কিছূ ফেলতে মন মানে না। এসবই তার আজীবনে জল্পনা। এইসবই তার জীবন।

বাতাসের বুকে উল্লাসের গর্জন শুরু হয়েছে। বৃষ্টির দু'এক ফোঁটাও পড়ছে। সে শব্দ কানে আসছে নিদালির । চোখেও তার কয়েক ফোঁটা জল কণা। এখানে নোনা ওখানে মিষ্টি স্বাদ। চোখর বৃষ্টি আর প্রকৃতির বৃষ্টির মূল তফাৎ একটাই। একটার মেঘ দেখা যায় অন্যটার দেখা যায় না।

রাতের দুঃসহ স্মৃতিই তো তার মনের মেঘ। উড়ছে, জমছে, ঘন হচ্ছে। ঝরছে চোখের জলে। পুরো বারান্দা খালি করে ফেলল ফাহিম। ওখানের সবগুলো পত্রিকা পেপার ঘরের দেয়াল বেয়ে উঁচু হয়ে উঠে গেছে হিমালয়ের শিখরে। জানালাগুলো খোলার উপায় থাকলো না। সে সবও ভাবছে না ফাহিম। আজীবনের জমানো ভান্ডারে বৃষ্টির আঘাতে সে নিজেও যেন জর্জরিত। দুটো নষ্ট মনিটরও ছিল বারান্দার এক কোনে। উঠিয়ে আনল ঘরের ভেতের। একটা দৌড়ানোর মেশিন। হয়তো শেষ দশ বছরেও সেটা ঘোরেনি। বারান্দায় ভিজছিল। ময়লা গুলো ঝরে যাচ্ছিল বৃষ্টির আদরে। কিন্তু কেনো ভিজবে। সব ঘরে এনে জড় করছে সে।

গোরানের বাড়ী থেকে আসার সময় এগুলো আনতে মানা করেছিল নিদালি। বলেছিল একটু সময় নিয়ে বেছে বেছে যা প্রয়োজন সেগুলোই কেবল নাও না। কষ্ট করে জঞ্জালের স্তুপ কেনো বয়ে নিতে হবে। ফাহিম মনে মনে রেগে গিয়েছিল। কেবল ভালবাসর উৎকর্ষতার কাছে থেমে গিয়েছিল রাগের গতিবেগ। ভাতিজা ভাতিজি মজা করে বলেছিল,' চাচ্চু ভাল করে দেখে নিও কিছু যেন বাদ না পড়ে।'

পুরো পরিবারে ফাহিমের আচরণের এই ব্যতিক্রম দিক নিয়ে এক ব্যাপক মজা চলে । নিদালি নিরুত্তাপ হয় নিরব থাকতে বাধ্য হয়। প্রতিটি খুঁটিনাঁিট জিনিস ফাহিম বস্তা ভরে, গাড়ীতে উঠিয়ে নিজে নিয়ে যায়। নিদালি ভয়ে ভীত হয় ভবিষ্যত ঘনঘটায়।

বৃষ্টি আরও বাড়ছিল রাতে। মন বড্ড উচাটন টানে নেমে যাচ্ছিল সাগর জলের সোপানে। জঞ্জাল নিয়ে মহাব্যস্ত তখন ফাহিম। অথচ বিয়ের আগে সেই সেদিন। ও বাড়িতে কেউ ছিল না। ভাবী বাচ্চা দুটো নিয়ে বাবার বাড়ীতে গিয়েছিলেন। মা গেছেন দেশের বাড়িতে। তখন ফাহিম আর নিদালি দুজনেই ষ্টুডেন্ট। একা বাড়িতে কে রেঁধে খাওয়াবে? নিদালি চলে এল। সেটা ছিল ও বাড়িতে দ্বিতীয়বার আসা। এর আগে একবার এসে অল্প সময় ছিল। মার সাথে সেটা ছিল পরিচয় পর্ব । দ্বিতীয়বার আসার সেই সুনশান পরিবেশে প্রথমবার ফাহিমের বেড রুমে ঢোকে। সেদিনও বৃষ্টি ছিল ভীষন। দুপুরে খিঁচুিড় আর ডিম ভাজি দুজনে মিলে জম্পেশ খেয়েছিল। বৃষ্টি কমছিল না। আবেগের গতিও কমছিল না বিশ্রামের দুপুরে। ফাহিমের ঘর সেই সে দিন প্রথম দেখেছিল এক বিশাল জঞ্জালের ভাগাড়। ফাহিম তখন আবেগে ভেসে গেছে। হাতদুটো ছাড়ছেই না। জড়িয়ে নিতে চায় প্রাণ দিয়ে প্রান। নিদালি মানা করে। সংশয়ে দূরে সরে আসে। ফাহিম কে বলে ভাগাড়া রাখা যাবে না তার বাসর ঘরে। ফাহিম সেই আবেগের মুহূর্তে মেনে নেয় এবং সত্যি বিযের আগের দিন নিজে ঘর থেকে সব নিয়ে পাশের আরেকটা খালি ঘরে পুরে দেয় তার প্রাণের প্রিয় সব পুরাতন অকেজো জিনিসের ভান্ডার। বৃষ্টি কমে আসতে থাকে। ফাহিমের হাতদুটো ধরে এক পা দূরত্বে দাঁড়িয়ে কপালে দুটো চুমু দিয়েই দৌড় দেয়। বলে ওঠে, 'এত তাড়াতাড়ি কেনো জান, আরেকটু ওয়েট করো না...'

সেই ফাহিম আজ নিদালির উচাটন মন বিছানায় ফেলে রেখে মহাব্যস্ত। আর পারে না। বলেই ফেলে, 'ফাহিম, তুমি শান্ত হও। এসব কি পাগলামী তোমার মধ্যে। তুমি কি জান তুমি মানসিক বিকার গ্রস্থ। তুমি একজন কমপালসিভ হর্ডার। এ একধরনের মানসিক রোগ। কেউ কেউ একে বলে ডিসপোসোফোবিয়া। তুমি অসুস্থ । কারন অকারনে তুমি পুরাতন সব জঞ্জাল জমিয়েই চলেছ। এসব কিন্তু আদৌ কাজে লাগবেনা। কাজে লাগেনা। জান, তোমার চিকিৎসা দরকার।'

ফাহিম তখন একটা বস্তা মুখ খুলছে। বস্তাটা কিছুটা ভিজেছে। খোলা জানালাটার নিচে ছিল। একটা বড় বাঙ্ বের করল। তার মধ্যে অনেক গুলো ঘড়ি। একটা ঘড়ি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না। হঠাৎ সেটাই যেন তার দরকার। ঘড়িটা তার বাবা নিয়ে এসেছিল বিদেশে থেকে। পুরোটা কালো রঙের। স্কুলে থাকার সময় সেই ঘড়ি পড়ে বন্ধুদের মাঝে কত আকর্ষণ জাগিয়েছে। আরও একটা বস্তা খুলল। কিন্তু নেই। কি যেন মনে পড়ছে। পড়ে গিয়েছিল তারপর আর বোধহয় উঠান হয়নি।

'ফাহিম , আমি তোমাকে বলছি। আমি তোমার স্ত্র্রী। তুমি আমাকে কোন পাত্তা দিচ্ছনা। তুমি ঠিক করছ না। '

'এই তো ডিয়ার, এই তো শেষ। একটা ঘড়ি পাচ্ছিনা। '

'ঘড়ি!, ঘড়িতো এই যে এখানে এইতো বালিশের পাশে। বাঙ্রে ওগুলো তো অকেজো - নষ্ট জঞ্জাল। '

'কোনটা কোন কাজে লাগে তুমি কি বুঝবে? তোমার মেডিক্যালের বইগুলো সব জমিয়ে রেখেছো কেনো?'

'ফাহিম, তুমি বুঝতে পারছ না। তুমি অসুস্থ। বই আর জঞ্জাল এক কেনো করছ। আমরা এক স্যার আছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তুমি কি একবার আমার সাথে যাবে?'

'কেনো যাব। এই দেখ। আমি সুস্থ। এই যে তোমার কাছ চলে এলাম। এস আমার বুকে এস। চল বারান্দায় গিয়ে বৃষ্টির ঝিরঝিরে ধারায় একটু সিক্ত হই। তারপর তোমাকে কোলে করে নিয়ে আসব আনন্দ অবগাহনে। আমাদের ভালবাসার শয্যায়। '

' আমার এখন আর মুড নেই। '

'তাহলে বোঝ, তুমিই তো অসুস্থ। '

তারপর ঝগড়া চলে আরও অনেক রাত। বৃষ্টিও চলে । কেউ থামেনা । না বৃষ্টি না ফাহিম না নিদালি। মানেও না কেউ কাউকে।

ফাহিমে শত আলিঙ্গনের কাছেও নিদালি আজ আর নিজেকে সঁেপ না। এক সময় চুপ হয় ফাহিম। তারপর ঘুমিয়ে পরে। সে আজ ক্ষ্যাপেছে। ভীষন ক্ষ্যেেপছে। একটা নির্ঘুম রাত কাটে নিদালির।


\\চার\\
একবার ভাবে তার স্যারের কাছে বিষয়টা খুলে বলে। পরক্ষণে আবার থেমে যায়। ফাহিমকে বলেই তো ভুল হয়ে গেলো। এখন তো আর সে মানবেনা। যাবেই না। তাকে ওসিডির কথা না জানিয়ে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া যেত স্যারের বাসায়। সেটাই ভালো হতো। অনেকক্ষণ ভাবে সে। নিজেই তারপর একটা সিদ্ধান্ত নেয়। ল্যাপটপটা অন করে। ইন্টানেটে ঢুকে সার্চ দিয়ে বেশ অনেকক্ষণ পড়াশুনা করে কমপালসিভ হর্ডিংয়ের উপর। রাগটা আরও বাড়তে থাকে। পড়তে পড়তে চারদিকের জঞ্জালের স্তুপে চোখের দৃষ্টি মিশে যায় বারবার।

যা ভাবা সেই কাজে নিজেই লেগে যায়। কয়েকটা বস্তা জোগাড় করে আনার জন্য কেয়ারটেকার ছেলেটাকে ডেকে। মনের মেঘের এখন পূর্ণ ঘনীভবন। বাইরেও বৃষ্টি প্রবল । কোমরে ওড়না প্যাচিয়ে লেগে যায় জঞ্জাল বাছাই করতে। খুব দরাকারী কিছু জিনিসি, কিছু জিনিস যা সাজিয়ে রাখার মত। এই যেমন দুএকটা সুন্দর ঘড়ি কিংবা যা মনে ধরে, এইসব বাদে আর সব বস্তায় ভরতে থাকে। একা একা। সবগুলো জানালা খোলার জন্য জানালার পাশ থেকে সব কিছু টেনে হিঁচড়ে মেঝেতে নামিয় আনে। জানালা খুলে দেয়। হু হু করে বাতাস ঢুকতে থাকে। বাতাসের গতির সাথে তাল মিলিয়ে ঢোকে বৃষ্টির কণা। কিছুক্ষণ মুখটা সেদিকে এগিয়ে দেয়। ঘামগুলো হারিয়ে যায় বৃষ্টির আদরে।

কেয়ারটেকার ছেলেটাকে দিয়ে একটা সিএনজি ডাকিয়ে সে বৃষ্টির মধ্যেই পত্রিকার বস্তা, পুরাতন ভাঙা কম্পিউটার , নষ্ট টিভি আর কয়েকটি জঞ্জালে ভরা বস্তাা ভাঙারির দোকানে পাঠিয়ে দেয়। বাকী বস্তাগুলো সরিয়ে একটা ঘরে জড়ো করে। শোয়ার ঘরটার চারদিকে সে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। অনেকটা খোলামেলা হয়েছে। প্রশান্তির ঢেউ বয়ে যায় শরীরে। ঘর মোছে সে। বারন্দায় দাড়িয়ে ঝিরিঝির বৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ভেজে। গোসল করে দুপুরে খাবার মত কিছু স্যান্ডউইচ আর নুডলস বানিয়ে নেয়। তারপর বিছানায় শুয়ে পরম শান্তিতে চোখদুটো বন্ধ করে ।

তন্দ্রা এসেছিল । মোবাইলের আওয়াজে জেগে ওঠে। বৃষ্টি আবার বেড়েছে। একবার সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। খোলা জানালা দেয় ঢুকে মেঝেতেও জমা হচ্ছে পানি। সে জমানো বৃষ্টিগুলোও যেন হাসছে। মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টির মাঝ সে বুঝতে পারছেনা সন্ধ্য হয়েছে নাকি হয়নি আদৌ। মোবাইল রিসিভ করতে গিয়ে খেয়াল করল সন্ধ্যা হবে হবে প্রায়।

ফোনটা রিসিভ করল। ফোন করেছে ফাহিমের বড় ভাই।


\\পাঁচ\\
অফিস থেকে একটু আগে আগে বেরিয়েছিল ফাহিম। তখনও বিকেল হয়নি। বৃষ্টি তখন ঝিরঝিরিয়ে পড়ছিল। নিদালিকে ফোন করতে গিয়েও করে না। একটা প্রচ্ছন্ন রাগ কাজ করে মনে। সে বোঝেনা এত ভালবাসে যাকে সে তাকে অসুস্থ ভাবে কি করে। তার মাথায় ঢোকে না। কখন কোন জিনিস কাজে লাগে সে কি কেউ জানে। সে অসুস্থ কেনো হবে , সেতো সাবধানি। সেতো দূরদর্শী। তারপর নিদালিকে মাথা থেকে পুরো ঝেরে ফেলে দেয়। সিএনজি নিয়ে ছুটে যায় গোরানে তাদের পুরাতন আবাসনের দিকে। এখনও ভাঙার কাজ শুরু হয়নি। আয়োজন চলছে। বৃষ্টির জন আটকে আছে। দাড়োয়ানটা তাকে চেনে। সহজেই ঢুকতে দিলো। উঠোনে এক হাঁটু পানি জমে আছে। পানিতে নেমেই এগিয়ে যায়। এক ভীষন নস্টালজিক ভাব কাজ করে। আমগাছটি অর্ধেক কাটা হযে গেছে। ভীষণ মায়া হয় তার। তবুও মেনে নেয়। সে ভাবে সে তো মায়াসক্ত নয়। সে সুস্ত স্বাভাবিক প্রাকটিক্যাল। এসব মায়া দিয়ে কি হবে। সবই একদিন ধ্বংসের জন্য। ঘরের দিকে এগিযে যায়। ধুলার আস্তর পড়েছে। নষ্ট ঘড়িটা খুঁজে পায়। সে এক অমোঘ আনন্দ তখন তার মনে। বৃষ্টি ঠেলে আসা পরিপূর্ন স্বার্থক।

দাড়োয়ানকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে বের হবে তখনই আবার বৃষ্টির প্রতাপ বেড়ে যায়। এ যেন তার প্রতি কোন সুপ্ত আক্রোশ। অনেক কষ্টে একটা সিএনজি পায়। তাও গুলশান এক নম্বর চত্বর পর্যন্ত কেবল। ঘড়িটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। সিএনজি এগিয়ে যায়। এবারের বর্ষায় পুরো ঢাকা শহরের রাস্তার যে করুন অবস্থা তার থেকে মোটেও মুক্ত নয় ঐ এলাকার রাস্তাও। বিরক্ত হয় ফাহিম। কোথাও কোথাও রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয়েছে। পানি জমে বোঝাও যাচ্ছে না কোনটা কত গভীর। কি যে রাস্তা বানায়। কেবল ফাঁকি দেয়ার অভ্যাস এ জাতির মানুষগুলোর মাঝে। কে আসলে কাকে যে ফাঁিক দিচ্ছে?

হঠাৎ কি থেকে কি হলো বোঝা গেলো না। মুহূর্তের ব্যাপার। একটা গর্তে চাকাটা পড়ে সিএনজি ব্যালেন্স হারালো। উল্টে গেলো, একটা ডিগবাজি খেলো সিএনজিটা। ভেতরে খাঁচায় একা বন্দী ফাহিম। প্রবল বৃষ্টি তবুও মানুষ জন ছুটে আসে সাহায্য করতে। বোঝা যায় এত কষ্ট, এত যাতনা পদে পদে তবুও এ দেশের মানুষগুলো ঠিকই আজও - মানুষ মানুষের জন্য। তারপর হুঁশ হারায় ফাহিম।


\\পরিশিষ্ট\\
ভাসুরের ফোনে খবরটা জেনে পোষাকও পাল্টায় না। সেই অবস্তায় ঘরটা কোনমতে লক করেই হাসপাতালের দিকে ছুটে যায় নিদালি।

তার আসার আগেই পৌছে গেছেন শাশুরী আর ভাবী। ওনারা সান্তনা দেন। চোখ মুছিয়ে দেনে।

ফাহিমের হুঁশ ফিরেছে। তার মাথায় ব্যান্ডজ আর বাম হাতটাতে প্লাষ্টার। ডান হাতটা দিয়ে বুক পকেট থেকে ঘড়িটা বের করে আনে। কালো কুচকুচে একটা ঘড়ি। যেন কালো ক্রিষ্টাল। কাদা লেগে আছে। সেদিকে তাকিয়ে প্রশান্তির হাসি দেয় । একসিডেন্টের মুহূর্ত ঘড়িটা ঠিক পকেটে ঢুকিয়েছিল।

নিদালি কাছে এসে বসে। কপালে হাত দেয়। চোখে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। বলে, ' ফাহিম, এখন কেমন লাগছে?'

'ভালো। কিন্তু তুমি ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে এসেছো তো। বারান্দার দরজাটা! সব ভিজে যাবে কিন্তু। এতদিনে জমানো সব জিনিস আমার...'

নিদালির চোখেও জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। ঝরে পড়ে ফোঁটায় ফোঁটায়। সে কান্নায় উদ্ভাসিত চোখে ভেসে ওঠে বেডরুমের পরিষ্কার মেঝে। সেখানে বৃষ্টির জল আর অফুরন্ত বাতাস এসে ছুটাছুটি করছে। সব ক'টা জানালা সে খুলে রেখে এসেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুন ম. আজিজ ধন‌্যবাদ আক্তার ভালো লাগাতে পেরে
Akther Hossain (আকাশ) ভালো লাগলো গল্পটি
মামুন ম. আজিজ ছোট বেলা ম্যাম আমারও এই রোগ ছিল। নিজে নিজেই বুঝিছি একদিন এসব আকাজের
ম্যারিনা নাসরিন সীমা খুব সুন্দর ব্যাতিক্রম ধর্মী গল্প ।বর্ণনাও অনেক ভাল লাগলো । কিন্তু আমার এখন চিন্তা হচ্ছে আমার ছেলেকে নিয়ে । কারণ খুব ছোটবেলা থেকে সে পুরনো জিনিশ জমাতে শুরু করেছে । এবং স্টোর রুম ,খাটের নীচ্‌ , দরজার আড়াল ভর্তি । আমি অতিষ্ঠ । অবশ্য আমার ভয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করতে পারেনা ।
মামুন ম. আজিজ মানসিকতার পার্থক্য
Israt ফেলে দিল কেন সব কিছু? জমানো জিনিস ফেলে দিলে খুব রাগ লাগে. আমার সাথে কতবার গোলমাল বেধেছে এই নিয়ে !
মামুন ম. আজিজ না আর বলতে হবে না। গল্পের মানসিকতা বুঝতে পেরেছ তাতেই খুশি
খন্দকার নাহিদ হোসেন মামুন ভাই, আমি সাইকোলজির পাগল আর সেটা যদি এবনরমাল সাইকোলজি হয় তাহলে তো কথাই নেই। লেখালেখির প্রথম শর্তই নাকি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসওরডার থাকতে হবে!! নাহলে হয়তো লেখাগুলি কখনোই শেষ হতোনা। আমার ক্ষেত্রে আমি লাইন এর অবসেশনে ঢুকে পড়ি আর কম্পালশন হল কবিতা! আশার কথা কবিতাটি লিখতে পারলেই ঘোরটুকু কেটে যায় যদি লেখাটি আমায়(ভিতরের আমি কে) তৃপ্ত করে! তো বড় সুন্দর করে গল্পটিতে বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পটি পছন্দে নিলাম। আর কিছু বলতে হবে?
খোরশেদুল আলম অনেক অনেক ভালো লাগলো আপনার নতুন বিষয়ে সুন্দর শব্দ বুননে একটি মেসেজ পেয়ে, তবে নিদালি চুপিচুপি ফাহিমের অজান্তে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারতো। হর্ডার, নিজেকে নিয়ে ভীষণ ভয় লাগছে আমারও কোন কোন বিষয়ে .... পাগল যেমন পাগল স্বীকার করে না।

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী