একমুঠো অন্ধকার এবং একটি দুঃস্বপ্নের গল্প

অন্ধকার (জুন ২০১৩)

জলধারা মোহনা
  • ১২
  • ৭৯
একমনে কাজ করে যাচ্ছে শফিক। অন্যদিন নিজের কাজটা তার ভালোই লাগে.. কাজ করতে করতেই অন্যদের সাথে টুকটাক গল্পেও মেতে ওঠে সে। কিন্তু আজ অসম্ভব বিরক্ত লাগছে তার। কি দরকার ছিলো এতখানি ঝুকি নিয়ে কাজ করার? মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আজই শেষ, কাজটা ছেড়েই দেবে সে। হয়তো কিছুদিন বেকার হয়ে ঘরে বসে থাকতে হবে। পোয়াতি বউটার ভালোমন্দ খাবার কিনতে পারবেনা। কিন্তু কষ্ট হলেও সেটা তো মাত্র কয়েকদিনের ব্যাপার। ঠিকই অন্য কোথাও কাজ জুটিয়ে নেবে সে। আচমকা ভাবনায় ছেদ পড়লো তার.. অন্যমনস্ক হওয়ায় আঙ্গুলটা অনেকখানি কেটে গেছে। রক্ত বন্ধ করতে আঙ্গুলটা মুখে নিতেই মেশিনটা হঠাত্‍ কাপতে লাগলো। আজব তো.. কি হলো মেশিনটার। চারপাশে তাকিয়ে বুঝলো শুধু মেশিনটা নয়, পুরো ঘরটাই কাপছে.. প্রথমে মৃদুভাবে, তারপর বেশ জোরে জোরে। সবাই কাজ থামিয়ে দিয়েছে। এবার এত দ্রুত আর ভয়াবহ ভাবে সবকিছু কাপতে লাগলো যে ছাদের দেয়াল ধীরে ধীরে খসে পড়তে শুরু করলো। অসম্ভব আতঙ্কে সবাই বেরিয়ে যাবার জন্য ছোটাছুটি করছে.. কিন্তু বাইরে যাওয়ার পথটা দেয়াল ভেঙ্গে আটকে গেছে। শফিক ভাবলো জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়াটাই এখন বাঁচার একমাত্র উপায়।
কিন্তু জানালার কাছে কোনরকমে পৌছে হতভম্ব হয়ে গেলো সে.. ভয়াবহ গতিতে দালানটা তখন নিচে নামছে। তার চোখের সামনেই আকাশটা উধাও হয়ে গেলো। মুহূর্তে মাটির গভীর থেকে গভীরে যেতে থাকলো তারা। এদিকে ভেতরে নরকের মত ভয়াবহতা। ছাদের বীম, দেয়ালের পিলার আর মেশিনের আঘাতে চোখের সামনেই মারা গেলো অনেকে। একপাশের কিছুটা অক্ষত দেয়ালের পাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়লো শফিক, সাথে আরো কয়েকজন। তার সামনে দাড়িয়ে থাকা একজন খসে পড়া বিশাল একটা অংশের নীচে চাপা পড়লো। আচমকা ছুটে আসা একটা মেশিনের আঘাতে তার চারপাশে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেলো...
তীব্র ব্যথা নিয়ে চোখ মেললো শফিক। নিকষ অন্ধকার চারিদিকে। বাম পাটা অবশ হয়ে আছে.. বাম পায়ের কাছে হাত রাখতেই প্রচন্ড ব্যথা আর অবিশ্বাস নিয়ে আবিষ্কার করলো হাটুর পরে আর কিছুই নেই। কাটা অংশ দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়ছে। কাঁদতে কাঁদতে অন্যদের ডাকতে লাগলো সে.. কেউ সাড়া দিলো না। একটু পরেই শফিক বুঝতে পারলো সে একা বেঁচে আছে এখানে.. তার চারপাশে আছে শুধু অন্ধকার আর মৃত্যুর গন্ধ। যদি কেউ আসে তাকে বাঁচাতে, এই অপেক্ষায় একেকটা দিন পার করতে লাগলো সে। পুরোটা সময় সে কাটালো তার বউ হাসনা আর অনাগত বাচ্চাটার কথা ভেবে। মনে পড়ে গেলো হাসনা আর তার বিয়ের কথা। মাত্র দুইটা বছর কাটাতে পারলো সে শ্যামলা মায়াবতী ঐ মেয়েটার সাথে। আর কি কখনো দেখতে পাবে হাসনাকে? আর তাদের অদেখা বাচ্চাটা.. যার নামও ঠিক করে রেখেছিল ওরা। মেয়ে হলে নাম রাখবে হেনা আর ছেলে হলে শরীফ। বাচ্চাটাকে অন্তত একবার যদি দেখে যেতে পারতো.. এইসব ভাবতে ভাবতে ক্ষুধা, ব্যথা আর অপেক্ষার পালা শেষে শফিকের মুখোমুখি হলো অসহ্য যন্ত্রনাময় মৃত্যু...

আতঙ্কে ছটফট করতে করতে ঘুম ভাঙলো সোহেল রানার। কি ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন.. অনন্তকাল ধরে যেন তার এই দুঃস্বপ্নের সাথে বসবাস। আর সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো গত কয়েকদিন ধরেই সে এই একই দুঃস্বপ্ন দেখছে বিভিন্ন মানুষের রূপ নিয়ে.. গতকাল রাতের দুঃস্বপ্নে সে ছিলো জামাল, মধ্যবয়স্ক একজন লোক। আর আজ রাতে সে ছিলো শফিক, ২৭/২৮ বছরের এক যুবক। এখনো নিজেকে শফিক মনে হচ্ছে তার। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি অবস্থায় শফিকের হৃদয়ে কি অসহ্য শূন্যতা.. সেই অনুভূতির কথা ভাবতেই শিউরে উঠলো সে। ছুটে পালাতে গিয়ে লোহার শিকগুলোয় ধাক্কা খেতেই তার মনে পড়লো এটা জেলখানা! বাইরে পাহারায় দাড়ানো পুলিশদের দেখে অনুনয় বিনয় করে ঘুমের ওষুধ চাইতে লাগলো সে। পুলিশ দুজন তার কথা শুনে হেসে উঠলো। একজন নির্বিকার ভাবে বললো, 'ঘুমের ওষুধ তো দিতে পারবোনা.. তবে বিষ এনে দিতে পারি!' অন্যজন জানতে চাইলো, 'আবার সেই দুঃস্বপ্ন, তাইনা? খুব ভালো লাগলো জেনে!' নিস্ফল রাগে ফুসতে ফুসতে ঘুরে দাড়ালো সে। শুনতে পেলো পুলিশ দুজন একে অন্যকে বলছে, 'দোয়া কর.. ব্যাটা যেন কাল রাতেও ওই একই স্বপ্ন দেখে!'

পুলিশ দুজনের প্রার্থনা বৃথা যায়নি। পরের রাতে সোহেল রানা আবারও একই দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হলো। এবার সে রেবা, ১৯ বছরের এক তরুনী.. যে তার বৃদ্ধ বাবা মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। আজ সে নতুন কেনা চুড়ি পড়ে কাজ করতে এসেছে। বেশ কয়েকদিন ধরে বাড়তি টাকা জমিয়ে কাল বাড়িতে ফেরার সময় কাচের চুড়িগুলো কিনেছে সে। কাজ করতে করতেই বারবার তার চোখ চলে যাচ্ছে রঙবেরঙের চুড়িগুলোর দিকে.. কি সুন্দর মানিয়েছে তাকে।

সোহেল রানার বন্ধ চোখের ওপারে এখন দুঃস্বপ্নের সূচনা.. তাই প্রথম থেকেই ঘামছে সে। ঘুমন্ত এই অমানুষটা তখনো জানেনা সহস্র মানুষের মৃত্যুর জন্য তাকে সহস্রবার একই দুঃস্বপ্ন দেখতে হবে। এই দুঃস্বপ্নের হাত থেকে বাঁচতে হলে তার প্রয়োজন একমুঠো অন্ধকার। আর একমুঠো অন্ধকারের মূল্য একটাই... মৃত্যু!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # রানা পলাজার ঘটনা অবলম্বনে মনে হয় গল্পটি লিখিত । সে যাই হোক---, গল্পের থীম ও এর চলার গতি অসাধারন । শেষের দিকটা অনেক অনেক সুন্দর ও চমৎকার । অনেকটা মায়াবী বাস্তবতার মত ।।
তানি হক মুগ্ধ হলাম আপুনি ... কিছু বলার ভাষা পাচ্ছিনা ... কি জানি হয়ত এমন বাস্তব স্বপ্ন সে দেখেলে দেখতেও পারে ... কারন আমরা প্রতিশোধ নিতে পারি আর না পারি ... বিধাতা ঠিক ই নেবেন ... শুধু একবার নয় ... হাজার বার নিবেন ...তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ আপু
মিলন বনিক অসাধারণ ভাবনা....এত সুন্দর পরিপাঠি ভাবনা এটায় প্রমাণ করে যে একজন লেখক তার নিজস্ব জগত নিয়ে থাকে তাতে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই...খুব ভালো লাগল...
জায়েদ রশীদ হয়তো রানা এ স্বপ্ন কখনই দেখবে না কিন্তু এটাও ঠিক - বিজ্ঞান বলে মানুষ অন্যায় করলে তার একটা প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। কে জানে এই দুঃস্বপ্ন সেই প্রতিক্রিয়ার অংশ হবে কি না! যাই হোক, লেখিকাকে অভিবাদন - পুরনো কে নতুন স্বাদে উপস্থাপন করেছেন।
মোঃ আক্তারুজ্জামান সুন্দর দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে রচিত গল্প| খুব ভালো লাগলো|
সূর্য আমরা অনেকেই এ হত্যাকান্ড নিয়ে লিখেছি। তবে এ গল্পের উপস্থাপনা সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকের। একটা স্বপ্ন হাজার বার দেখলে সেটা আবেদন হারাবে, হয়ে যাবে রুটিন। যেমন এ দেশে হত্যাকারীদের কোন ভাবান্তর হয় না। তারচে সোহেল রানাকে এমন একটা ধ্বংসস্তুপে হাজার দিন ফেলে রাখা যায় যাতে সে অনুভব করতে পারে জীবন আর মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ কতটা ভয়াবহ হতে পারে। ভিন্ন আঙ্গিকের গল্প বেশ ভালো লাগলো।
এশরার লতিফ চমৎকার থিম গল্পের। তবে সোহেল রানা কখনো এমন দুঃসপ্ন দেখবে কিনা এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
তাপসকিরণ রায় গল্পটার কোথাও যেন মনে হোল অস্পষ্টটা থেকে গেছে--নাকি আমার বোঝার ভুল?তবে লেখার ভাষা ভাব ধারাবহতা সুন্দর লেগেছে।
Lutful Bari Panna সোহেল রানারা দুঃসপ্ন দেখে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। এত ফেন্সির বোতল তাহলে আছে কেন? কিন্তু গল্প পুরো অন্য মাত্রার।

১৪ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪