আজকের রূপকথা

ভোর (মে ২০১৩)

মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন
  • 0
‘হারামজাদাটা এলো,’ ফুলগাছের বেডের গুঁড়ো মাটিতে থুথু ফেলে বিড়বিড় করে বলল রমিজ।
দারোয়ান গেটটা খুলতে শুরু করেছে, কিন্তু গেটের সামনের গাড়িটার হর্নের শব্দ এমন কি কমছেও না। গেটটা পুরোপুরি খোলা না হওয়া পর্যন্ত সেটা এভাবেই বাজতে থাকবে। তবে শব্দটা কর্কশ নয়।
‘মেদো মাতাল... হারামখোর,’ সে আবার বলল। সে মুখ ঘুরিয়ে বসে হাতের নিড়ানি দিয়ে নরম গুঁড়ো মাটিতে আঁচড় কাটতে লাগল্। যেন সে এমন কি গাড়িটাও দেখতে চায়না। অথচ লোকটা তার মালিক- তার মালিকের ছেলে...। তার একমাত্র সন্তান। একদিন হয়তো এই ছেলেরই চাকরি করতে হবে।
তার শান্তনা, তার ফোটানো ফুলের সাথে এই শয়তানটার কোন সম্পর্ক নেই।

শহরের অভিজাত এলাকায় বিঘে তিনেক জমির উপরে দাঁড়িয়ে থাকা নিঃসঙ্গ বিশাল দোতলা বাড়িটা যেন জবুথবু ভাবে মাঝখানে পড়ে আছে। সাদা দেহের সারা গায়ে বিশাল বিশাল জানালাগুলো হালকা নীল কাঁচে ঢাকা। তাদের গায়ে নীল আকাশের সাদা মেঘের প্রতিফলন। সূর্য যেন সারাদিন ঘুরেঘুরে এর চারিদিকটা আলোকিত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।

বার ফুট উঁচু পাঁচিলের প্রায় গোড়া থেকেই বেশ কয়েক ফুট চওড়া মৌসুমি ফুলগাছের বেডগুলো যেন সুন্দর করে ছাটা ঘাসের লনের সাথে ঝালরের আকারে লেগে আছে। পিছনে, ডান দিকে ঝালরটাকে বিব্রত করার জন্যই হয়তো দেওয়ালের গায়ের কাছ ঘেসে এক সারি সারভেন্টস কোয়াটার।

বড় ধরণের গাছপালার বালাই নেই- একটা ছাড়া।

বাড়িটার পিছন দিকে কিছুটা দূরে একটা বিশাল পুকুর। সবুজাভ নীল পানি। বাড়ির দিকটার পাড়ের মাঝামাঝি শান বাঁধানো ঘাট। বাকি তিন দিকে বর্ডারের আকারে মৌসুমি ফুল গাছের ঝাড়।

শান বাঁধানো ঘাটের দুপাশে দুটো কাঠের ছাউনি, যার ভিতরে গোল টেবিলের চারিদিকে চেয়ার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বাড়ির পিছন দিকের খিড়কি দরজা থেকে এই পর্যন্ত ছয় ফুট চওড়া একটা সিমেন্টে বাধানো পথ যার দু’দিকেই ফুলের গাছ।

বাম দিকের ছাউনি আর পুকুরের কোনাটার প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় বিশাল একটা আমগাছ- এটাই হচ্ছে সেই একমাত্র বৃক্ষ। এটার পাশে এক সারিতে কয়েকটা বেতের ইজি চেয়ার ধরণের আসন পুকুরের দিকে মুখ করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

গেট থেকে সোজা চলে আসা কাল কাঁকর বিছানো আট ফুট চওড়া রাস্তাটা সোজা চলে এসেছে গাড়ি বারান্দার দিকে। তবে সেটার কয়েক গজ আগে পথটা দুই ভাগ হয়ে একটা পাথরের গোল বেদিকে ঘিরে তারপর বারান্দায় উঠেছে।

বেদিটাকে ঘিরে রেখেছে সাড়ে তিন ফুট উঁচু মোটামোটা কাল লোহার শিকের একটা বেড়া- যেটা শুধু প্রতিরক্ষার একটা অনুভূতিই দিতে পারে, বাস্তব কোন প্রতিরক্ষা নয়।

তিন ফুট উঁচু বেদিটার মাঝখানে শ্বেতপাথরের পাঁচফুট লম্বা একটা শিক্তবসনা নারীমূর্তি। মাথার ভেজা চুল ঘুরিয়ে বাম গলার পাশ দিয়ে বুকের উপরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাম হাত বাঁকিয়ে বুকের সাথে চেপে রেখে ডান কাঁধ ধরে রেখেছে। হাঁটু সামান্য ভাঁজ করে ডান হাত দিয়ে পরনের ভিজে কাপড়ের হাঁটুর নিচের অংশ যেন টেনে আরো নিচে নামানোর অন্তহীন চেষ্টা করে যাচ্ছে।

পায়ের কাছে দুটো ওয়াটারপ্রুফ ফ্লাডলাইট আর ঘিরে থাকা পাঁচটা জেট নল। হয়তো পাথরের শিক্ত বসন আরো বেশী শিক্ত করার ইচ্ছা জাগে কারো কখনো কখনো।

...গেটটা ক্লিক শব্দে বন্ধ হতে পারার আগেই গাড়িটা ঝড়েরমত বেদিটাকে পাশ কাটিয়ে বারান্দায় উঠল। বারান্দার প্রায় শেষ প্রান্তে চকলেট রঙ্গের একটা টয়োটা লেক্সাস হালকা ধূলার আস্তারন গায়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেটার কাছাকাছি একটা সাদা পিকআপ।

বারান্দার প্রায় মাঝ বরাবর ভিতরে ঢোকার বিশাল আর কারুকার্য করা সেগুন কাঠের দরজা যার দুটো পাটই খুলে রাখা হয়েছে। সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনের শীতল বাতাশ বের হয়ে আসছে। ভিতরে দেখা যাচ্ছে সুসজ্জিত বিশাল ড্রয়িং রুম। বিপরীত প্রান্তের দেওয়ালের মাঝখানে ছাই রঙ্গা কার্পেটে ঢাকা চওড়া সিঁড়ি। সেটার দুপাশে দুটো দরজা। বন্ধ।

দোতালায় সিঁড়িটার সাথেই একটা কাঠের দরজা, সেটাও বন্ধ। ডানে বামে দুদিকে দুটো প্যাসেজেরমত চলে গেছে। কোথাও কোন জনপ্রাণী নেই। কিন্তু ড্রইংরুমের বিশাল টিভিটা অন করা। ইমতিয়াজ দ্রুত লঘু পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে ডান দিকের প্যাসেজ ধরে এগিয়ে গেল। এটা তার একার রাজ্য। সে বাড়িতে উপস্থিত থাকলে একমাত্র তার ব্যক্তিগত চাকর আলী ছাড়া আর কারো সেখানে থাকার বা ঢোকার অনুমতি নেই।

বাম দিকে পাশাপাশি দুটো দরজা- খোলা। এ দুটো ঘরের ভিতর দিয়ে একটা থেকে অপরটায় যাওয়ার পথ রয়েছে।

প্রথমটা একটা অপিস ঘরের মত করে সাজানো। দরজার অপর দিকের দেওয়ালের কাছে বিশাল একটা গ্লাস
টপ সেক্রেটারিয়েট টেবিল। সেটা থেকে একটু দূরে একটা ষ্টিলের আলমারি। টেবিলের পিছনে একটা চামড়া মোড়া রিভলভিং চেয়ার, কিন্তু সামনে কোন চেয়ার নেই। টেবিলের উপরে একটা ল্যাপটপ, একটা টেলিফোন সেট আর সামান্য কয়েকটা ফাইল- আর কিছু নেই। কোনার দিকে একটা ষ্টান্ডের উপরে একটা বড়সড় লেজার প্রিন্টার।

ডান দিকে ঘরের প্রায় মাঝামাঝি দেয়ালের কাছে বড়সড় একটা সোফা, সামনে একটা টি-টেবিল। অপর দিকের দেওয়ালের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে একটা সত্তর ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন। তার নিচে জটিল একটা সাউন্ড সিষ্টেম, স্পিকার। সেটার কাছেই ছোট একটা ফ্রিজ। ঘরে আর কিছু নেই।
পাশের ঘরটা তার শোবার ঘর।

দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল আলী।
ইমতিয়াজ ঘরে ঢুকল, আলী তার পিছন পিছন। কোট খুলে ছুড়ে ফেলল টি-টেবিলে। টায়ের নট ঢিলা করতে করতে শুয়ে পড়ল সোফায়। আলী তার জুতো মোজা খুলে হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত পরে ইমতিয়াজ উঠে শোবার ঘরে গেল। শার্ট প্যান্ট আর অন্তবাসগুলো খুলে বিছানার উপরে ছুড়ে ফেলল, তারপর বাথরুমে ঢুকল।

ড্রইংরুমের সিঁড়ির বাম পাশের দরজাটা খুলে গেল। সেখান থেকে বের হয়ে এলো সিল্কের সাদা শাড়ি পরা মিসেস তাহমিনা- ইমতিয়াজের মা। তার পিছনে তার আয়া। সে সামনের দরজার কাছে গিয়ে সেটা বন্ধ করে আবার তাহমিনার কাছে ফিরে এলো।

মাঝের সোফার উপরে হাত পা ছড়িয়ে আরাম করে বসে টিভির অনুষ্ঠানের দিকে চোখ রাখল তাহমিনা। আর প্রায় সাথে সাথেই তার পিছনে দেওয়ালের সাথে ঝুলিয়ে রাখা কর্ডলেস টেলিফোনটা বেজে উঠল। সে আয়ার দিকে তাকাল।

‘সাহেব,’ এক মুহূর্ত শুনে আয়া বলল। তারপর মিসেসকে হাত বাড়াতে দেখে তার কাছে এগিয়ে এসে তার হাতে দিল।
‘হ্যালো?’
‘খোকা এসেছে?’
‘হ্যা,’ তাহমিনা বলল। ‘তোমার শরীর ভাল নয়, বেশী দেরী না করে তাড়াতাড়ি চলে এসো।’
‘ডাক্তার আসবে, তার অপেক্ষাতে আছি,’ জবাব এলো।
‘দুলুর কোন খবর আছে?’
‘দু’মাস পরে একেবারেই চলে আসছে। একটু আগেই কথা হল।’
‘কেন যে আমরা ওকে বিদেশ পাঠালাম,’ তাহমিনার কন্ঠে বিষাদের সুর। ‘একটাতো বিদেশ থেকে...।’
‘থাক ওর কথা।’ কিছুটা রাগি স্বরে জবাব এলো। ‘দুলুর এমন কিছু হবেনা। রমিজ ওর ব্যাপারে সব কিছু আমাকে নিয়মিত জানাচ্ছে। তুমিতো জানই, ভাইকে আমি দুলুর ব্যাপারে কী কথা দিয়েছি।’
‘না হলেই ভাল। ছেলেটা ভালোয় ভালোয় বাবা-মার কাছে ফিরে আসুক...।’

সে মাথা ঘুরিয়ে সিঁড়ির দিকে তাকাল, আলী নেমে আসছে। সে এখন গাড়ি থেকে ইমতিয়াজের ব্রিফকেস আর সাইডব্যাগ উপরে নিয়ে যাবে। তারপর তাকে আরো দু’বার নিচে আসতে হবে, একবার এখনই, ইমতিয়াজের জন্য নাস্তা নিতে আর রাত ন’টার সময় নিজে খেয়ে তার রাতের খাবার নিতে। ওদের ওদিকে ছোটখাট একটা রান্নাঘর আছে, টুকিটাকি প্রয়জনে আলী নিজেই সেটা ব্যবহার করে থাকে।

‘মা, সাহেব এসেছেন?’ আলী তার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলল। আলী জানে, সাহেব এলে তাহমিনার পক্ষে এখানে বসে থাকা সম্ভব নয়। তারা থাকবে ঘরে। সন্ধ্যার পরে এলে আবহাওয়া কোন ব্যাঘাত না ঘটালে সাহেব এসে পোশাক পাল্টে মুখহাত ধুয়ে বেগমকে নিয়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসবে। তার রশদ বয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। বোতলে ভরা অমৃত, বরফের টুকরা ভরা পাত্র আর গ্লাস আর সেই সাথে কিছু খাবার। হার্টের সমস্যা বলে আজকাল পরিমাণে একটু কম। রাতে চাঁদের আলোয় বা তারার আলোয় নিজেকে উপভোগ করবে, তারপর এক সময় ফিরে আসবে।

আর এদিকে নিজের ঘরে বসে তার ছেলে সেই একই সূধায় চুমুক দিতে থাকবে। আর সামনে টিভির পরদা জুড়ে থাকবে তার পছন্দের কোন ছায়াছবি। খুব সম্ভব ছেলেটা কোন মানষিক যন্ত্রণায় ভুগছে। কেন যে এরা আলাদা বাড়িতে থাকছেনা তা তার মাথায় ঢোকেনা।

‘না, আলী।’ তাহমিনার কন্ঠে স্নেহের আভাস। এক বাড়িতে থেকেও যার সাথে মুখ দেখাদেখি নেই, সেই সন্তানকে কি সে পরোক্ষ ভাবে স্নেহ বিলাতে চাচ্ছে? হয়তো।

সে এই বাড়িতে সাত বছর ধরে আছে। অসম্ভব মেধা সম্পন্ন ছাব্বিশ বছরের ছেলেটা যখন বিলেত যায়, তখন এমন ছিলনা। দুয়েক বার যে বাবার বোতলে চুমুক না দিয়েছে তা নয়, কিন্তু কখনই নেশা করেনি। বিলাতে সে কি করেছে না করেছে তা সে জানেনা, কিন্তু সেখান থেকে আসার পরে সে কারো তোয়াক্কা না করেই মদ খেতে শুরু করে। সেটা তার বাবা মাকে মেনে নিতে হয়েছিল। তাকে জরুরি ভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

তাদের ফ্যাক্টরিটা বিশাল একটা রাজ্য। সাহেবের প্রথম স্ট্রোক হবার পর কিছুটা অব্যবস্থাপনার কারণে খুব দ্রুত ডুবতে শুরু করল সেটা। দেশে ফিরে আসার পরপরই ইমতিয়াজকে না চাইতেই অর্ধেক মালিকানা দেওয়া হল। মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যেই সে সেটাকে আবার আগের অবস্থায়- বরং বলা যেতে পারে আরো ভাল অবস্থায়- ফিরিয়ে আনল। তাকে কিছু কর্মচারি আর কর্মকর্তা ছাটাই করতে হয়েছিল।

বাড়িতে তাদের মুখ দেখাদেখি নেই, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তাদের আচরণ সমান অংশিদারেরমত। সেখানে তারা পিতা-পুত্র না।

তবে বাড়িতে তাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হবার কারণ মদ খাওয়া নয়।

মাস খানেক আগের ঘটনা। তখন কারো তার সামনে যাওয়ার কোন বিধি নিশেধ ছিল না। সেদিন বিকালে সে যখন ঘরে ঢোকে তখন তার মা সোফায় বসে টিভি দেখছে। মালির মেয়ে চায়ের পাত্র তার সামনে টি-টেবিলে নামিয়ে সবেমাত্র ঘুরে কয়েক পা এগিয়েছে, ইমতিয়াজ দ্রুত এগিয়ে এসে তার বাহু ধরে সিঁড়ির দিকে ইংগিত করল।
‘চল,’ সে বলল।মেয়েটা হতভম্বের মত ফ্যালফ্যাল করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।
‘খোকা!’ তার মা চিতকার করে উঠল। ‘ছিঃ-ছিঃ!’
সে হাত ছেড়েদিল, মেয়েটা ছুটে পালাল।
‘তোমার হাত ধরে তো আর টানিনি।’ ইমতিয়াজ কিন্তু তখন মদ খেয়ে আসেনি।
‘ছিঃ!’

‘...তাহলে ওকে অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে বলি।’ সব শুনে তার বাবা বলেছিল।
‘না!’ যেন আর্তনাদ করে উঠেছিল তার মা। ‘ওকে আমার কাছ ছাড়া করতে পারবনা।’ বিবাহিত জীবনে এই প্রথম সে তার স্বামীর কোন কথার প্রতিবাদ করল। ‘আমি শান্তি পাবনা...। কে তার খোঁজ খবর রাখবে?’
‘কিন্তু...?’ সাহেব বেশ বিরক্ত।
‘ওর একটা বিয়ে দিয়ে দাও।’
‘আমার কথায় বিয়ে করবে সে?’
সে কথার জবাব না দিয়ে অসহায়ভাবে স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল তাহমিনা।

এর ঠিক তিন দিন পর থেকে ইমতিয়াজ রাত দশটায় ঘর থেকে বের হতে শুরু করল। তবে সে বারটার ভিতরে ফিরে আসে। নিজের অতীত জীবনের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল তার বাবা। সে ছেলের জন্য কী করতে পারে? বিয়ে দিয়ে দিলে কি সুফল আসবে কিছু? দেখা যাক দুলু কী বলে।

...খবরের কাগজ পড়েই জমিটার খোঁজ পেয়েছিল ইমতিয়াজ। তাদের ফ্যাক্টরি থেকে আট মাইল দূরে বিশ্বরোডের কাছাকাছি বিশ বিঘা জমি বিক্রি হবে। নিজে গিয়ে দেখে এসেছে- যুতসই।

‘শহরটা বাড়লে এদিকেই বাড়বে,’ সে তার পার্টনারকে বলেছিল। ‘আমরা যদি কিছু নাও করি, কয়েক বছরের ভিতরে এটার দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। আমাদের হাতে টাকা আছে, আমরা এটা কিনে ফেলি?’

তার বয়স আর শারিরিক পরিস্থিতি তাকে নতুন কিছুতে হাত দেওয়ার অনুমতি দেয়না। কিন্তু তার সন্তান যদি নতুন কিছু একটা করতে চায়, তবে তাকে সেটা করতে না দেওয়ার কোন যুক্তি থাকতে পারেনা। তাছাড়া ছেলেটা নিজের যোগ্যতা ভালভাবেই দেখাতে পেরেছে। সে অমত করে কেন নতুন প্রজন্মের কাছে পরিহাসের পাত্র হতে যাবে?
‘ঠিক আছে, কোন ঝামেলা না থাকলে এটা করা যেতে পারে।’ খবরের কাগজে ঠিকানাটা দেখতে দেখতে তার বাবা বলল। ‘আমি কাল সকালে নিজে সেটা দেখে আসব।’

...জমিটাতে অপছন্দ করারমত কিছু নেই। এদিকে এখনই দু’একটা বাড়ি হতে শুরু করেছে। বেশীরভাগই ক্ষেত খামার। জমির মালিক এমন একটা সময়ে এটা বিক্রি করতে চাচ্ছে সেটা একটা ভাবনার বিষয়।

‘স্যার, এদিকে আধা মাইল পরেই আমার বাড়ি।’ ফিরে আসার সময় আর মাইল কয়েক থাকতে ড্রাইভার মোমিন বাম দিকে হাত বাড়িয়ে দেখিয়ে বলল। তার মনে কি এই অসম্ভব আশা ছিল যে তার সাহেব তাকে সেখানে গিয়ে পরিবারের সাথে দেখা করার অনুমতি দেবে? সে সপ্তাহে একদিন ছুটি পায়।
মতিন সাহেবের মাথায় তখন সবে দেখা জমি, ফ্যাক্টরি আর আর তার পরিবারের বিষয়গুলোর একটা জট পাকানো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু সেই জটটা তার মনে কোন চাপ সৃষ্টি করছিলনা, শরতের আকাশের হালকা মেঘেরমত ভাসাভাসা। তার মনে হল গ্রামের বাড়ির এলাকার সাথে এটার একটা মিল আছে। সে অকারণেই হেসে উঠল।
তারা বাম দিকের পথটা ছাড়িয়ে এসেছে। এলাকাটা শহুরে রূপ ধরতে শুরু করেছে। বাড়িঘর দোকানপাট লোকজনের ভিড়। সে বুকের কাছে একটা চাপ অনুভব করতে শুরু করল। পিপাশা পাচ্ছে।

‘তোমাদের ওদিকে ডাব পাওয়া যাবে না? চল, তোমাদের ওদিকটা একটু দেখে আসি।’ মুহূর্তের জন্য গাড়িটা ঝাঁকি খেল, গতি কমল। ‘গাড়ি ঘোরাও।’
শহরতলির সেই একই চিত্র। ছাড়াছাড়া বাড়িঘর এলোমেলো দোকানপাট, নোংরা খাল, চাষাবাদের জমি।

মোমিনের বাড়ির কাছে একটা আধাপাকা বাড়ির সামনের ছোট্ট একটা ফাঁকা জায়গায় গাড়ি রাখল মোমিন।
‘আমার বাড়িটা একটু দেখবেন না স্যার?’ সে বলল।
‘না, তুমি দেখা করে এসো, আমি গাড়িতে বসি। দেখ, দুএকটা ডাব পাওয়া যায় কিনা। এই নাও..।’ সে একশ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে ধরল। ‘...না হলে মিনারেল ওয়াটার কিনে এনো।’
মোমিনের মুখে হাসি ফুটল। আজকাল আর ডাব কিনতে পাওয়া যায়না। কিন্তু তার নিজের বাড়িতেই দুটো নারকেল গাছ আছে। আর সে নিজেই গাছে চড়তে পারে। একান্ত দরকার না হলে সে ডাব পাড়েনা, নারকেল বানিয়ে খায় অথবা বিক্রি করে দেয়।
‘না স্যার, আমার বাড়িতে ডাব আছে।’ সে টাকা না নিয়ে হেটে চলে গেল।

সাহেব বাম দিকে বাড়িটার দিকে তাকাল। পাশাপাশি দুটো ঘর। পিছনে কী আছে না আছে বোঝার উপায় নেই। একটা ঘরের খোলা দরজা দিয়ে ভিতরের বেশ অনেকটা দেখা যাচ্ছে।

বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের দিয়ে সেটা প্রায় ভর্তি। তাদের সবার হাতেই কাপড় আর সেলায়ের সরঞ্জাম- সেলাই শিখছে। তাদের বার বার গাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখা দেখে সাহেবের মনে হল গাড়িটা বোধ হয় এখানে রাখা ঠিক হয়নি, এদের কাজে ব্যাঘাত ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু কোন একজনও কিছু বলার জন্য বের হয়ে এলোনা।

শুধু একটা মেয়ে বিপরীত দেওয়ালের কাছাকাছি দরজার প্রায় সোজাসুজি একটা সেলাই মেসিনে কাপড় সেলাই করছে আর মাঝেমাঝে মাথা তুলে কিছু বলছে। সম্ভবত এটাই এদের মাষ্টারনি।

হালকা নীল শাড়ি আর কমলা রঙ্গের হাফ হাতা ব্লাউজ পরা মেয়েটার বয়স বিশ থেকে পঁচিশের ভিতরে হবে। চেয়ারে বসে থাকার কারণে সে কতটা লম্বা সেটা বোঝা সম্ভব নয়, তবে একেবারে খাটোও নয়। মেয়েটার মুখে একটা কমনীয় ভাব, যেটা সাহেবের সাথে সাথেই ভাল লেগে গেল। সে গাড়ি থেকে নেমে সেদিকে এগিয়ে গেল। দরজার কাছে এক মুহূর্ত থেমে ভিতরে ঢুকল। কিন্তু সাথে সাথেই বুঝল, সে একটা ভুল কাজ করে ফেলেছে।

সে ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই সবাই উঠে দাঁড়িয়েছে। দশ বার জন, তাদের মধ্য কয়েকজন বয়স্কাও আছে। তাদেরকে সে উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল।
‘আমি মোমিনের সাথে এসেছি, তোমাদের কাজ একটু দেখতে ইচ্ছা হল...। তোমার সবাই বসো।’ সে আত্মসমর্পণের ভংগিতে দুই হাত উঁচু করে বলল।
‘এটাতে বসেন।’ মেসিনের পিছনে বসা মেয়েটা নিজের চেয়ারটা বের করতে গেল।
‘না না, আমি এখানেই বসি।’ সাহেব দরজার কাছে মেঝেতে ঝপ করে বসে পড়ল।

কাপড়ের কাটা টুকরা আর সূতায় ভরা হলেও মেঝেটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ঘরটাতে ফ্যান নেই কিন্তু মেঝের শীতলতা তার দেইটাকে যেন জুড়িয়ে দিল। তার এমন একটা ঘর হলে খুব কি খারাপ হত? মনে হয় না।

‘...রুমা কলেজে ভর্তি হয়েছিল। ওর মা মারা গেল দু বছর হয়, তার পড়া শেষ। ভাই বোন কেউ নেই, একা। বাপটা অসুস্থ, আগে স্কুলে মাস্টারি করত, এখন একটা বইয়ের দোকানে চাকরি করে। মেয়েটা কী করে তাতো দেখলেন। জমিটুকু নিজেদের। আর কিছু নেই। ভাল একটা পাত্র যদি পাওয়া যেত...।’ মোমিন বলেছিল।

ভাল একটা পাত্র।
সাহেবের মনে হল, এটা যেন তার নিজের দায়, মেয়েটার জন্য একটা ভালপাত্র তাকে খুঁজে বের করতেই হবে। হঠাত তার মনে পড়ল, একটা পাত্র তার নিজের কাছেই আছে। ইমতিয়াজ কি একে বিয়ে করতে রাজী হবে?

কিন্তু ইমতিয়াজ কি ভাল পাত্র? অর্থের দিক দিয়ে হ্যা- কিন্তু চরিত্রের দিক দিয়ে? নিজের ছেলে?

...সেদিন সন্ধ্যার আগেই ফিরে এলো সাহেব। ঘরে গিয়ে কাপড় পাল্টে হাতমুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে ড্রইংরুমে এসে বসল। হাতে খবরের কাগজ। তার ছেলেকে কিছু বলে আসেনি। বাবার গাড়ি দেখে কিছুটা অবাক হল ইমতিয়াজ। এত তাড়াতাড়ি সে কখনো আসে না। শরীর কি খুব বেশি খারাপ হয়ে পড়ল?

ভিতরে খবরের কাগজ হাতে বসে থাকতে দেখে আস্বস্ত হল। পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছিল, কিন্ত তার বাবা তাকে ডাকল। সে ঘুরে বাবার দিকে এগিয়ে গেল।
‘তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।’ এটা তার পার্টনার নয়, বাবার কন্ঠস্বর।
‘বল।’
‘তুমি ফ্রেস হয়ে নাও, তারপর নিচে এসো... নাহয় খবর পাঠিও আমিই উপরে যাব।’
‘না, এখনই বল,’ সে তার বাবার সামনের সোফায় বসতে বসতে বলল। ঘরে আর কেউ নেই।
‘ঠিক আছে,’ তার বাবার কন্ঠস্বরে কিছুটা চিন্তার ছাপ। ‘তোমার আচরণ আমাদের ভাল লাগছেনা...।’
‘আমাকে কী করতে হবে?’ তার মুখে বিদ্রুপের হাসি। তার বাবা সেটা উপেক্ষা করল।
‘তোমার ব্য়স হয়েছে...তোমাকে বিয়ে করতে হবে।’
‘না হলে?’
‘তোমাকে এই বাড়ি ছাড়তে হবে।’
‘বেশ, ছাড়ব,’ ইমতিয়াজ উঠতে উঠতে বলল।
‘বসো, আমার কথা শেষ হয়নি।’ ইমতিয়াজ বসল। ‘আর আমার সম্পত্তি থেকে তোমাকে বঞ্চিত হতে হবে।’
‘বেশ’ ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়াল। ‘তাই হোক। ফ্যাক্টরির মালিকানা?’
‘সেটা তোমার থাকবে।’
‘দরকার নাই, সেটা তোমাকে লিখিত ভাবে ফেরত দিয়ে দেব।’
‘না, সেটা আমি চাচ্ছি না।’ সাহেবকে বেশ বিব্রত দেখাল। ‘কিন্তু তারপরও তুমি বিয়ে করতে রাজি নও?’
‘শুধু তোমার কথামত বিয়ে করলেই হবে?’
‘হ্যা।’
‘ঠিক আছে, আমি বিয়ে করব। কিন্তু শুধু বিয়ে, আর কিছু নয়।’ তার কন্ঠস্বরে তিক্ততা। সাহেব কথাটার অর্থ নিয়ে মাথা ঘামাতে গেলনা।
‘তোমার যদি পছন্দের কোন মেয়ে থেকে থাকে...যেই হোক...।’
‘না। তুমি যেটা ঠিক করবে সেটাই হবে। আমি এমন কি দেখতেও চাই না।’
‘বেশ।’

...কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হল। জাকজমক আর অতিথিদের দেখে রুমার তাক লেগে গেল। এটা কি তার নিজের বিয়ে? রাত দশটায় অনুষ্ঠান শেষ। বিদায় লগ্নে বাবা মেয়ে দু’জনে দু’জনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল।

...বাসর রাতটা রুমা তার স্বামীকে ঘুমন্ত পেল। পরের রাতগুলো তার কাটতে লাগল একাএকা। রাত দশটা থেকে বারটা সে বাড়িতে থাকেনা। এটা কী হল? সে কাকে কী বলবে?

এক মাস হয়ে গেছে। শ্বশুর শ্বশুড়ি আর কাজের লোকেরা অহরহ তার খোঁজ নিচ্ছে। তার বাবা কয়েকবার এসে তার খোঁজ নিয়ে গেছে, সাথে দু’জনকে নিয়ে যেতে চেয়েছে, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তার বড়লোক জামাইকে কোথায় নিয়ে যাবে? কোথায় রাখবে? রুমা একা যেতে পারত, সবাই রাজি ছিল, কিন্তু সেটাও সম্ভব নয়। কোন মুখ নিয়ে সে যাবে?

‘বাবা, আমি আপনাদের কী ক্ষতি করেছিলাম?’ ছুটির দিনটাতে সকালে ড্রয়িংরুমে সাহেবকে একা পেয়ে রুমা বলল। ইমতিয়াজ সকালে বের হয়ে গেছিল। ‘আমার তো বেশ চলে যাচ্ছিল, কেন আমাকে এভাবে...?’
‘কেন মা, কী হয়েছে? তোমার কি কোন...।’ বৃদ্ধ মানুষটা উঠে হাত ধরে তাকে নিজের পাশে বসালো।
‘আপনি জানেন, আপনার ছেলে...।’ সে আর কিছু বলতে পারলনা
‘জানি মা।’ সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ‘আমার একমাত্র সন্তান...। এটা হয়তো কিছুই না, আন্তত আমাদেরমত সম্পদশালীর কাছে। সে তারমত চলতে চলতে একদিন হয়তো নিজেই ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু মা, আমার শরীরের যা অবস্থা, আমি হয়তো আর বেশীদিন নেই। একটা বংশধরের আমার বড় লোভ মা। ভেবেছিলাম তোমাকে পেলে সে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে...।’
‘কিন্তু তা হয়নি, আর হবে বলে মনে হয়না। আমাকে আপনারা মুক্তি দিন।’
‘তুমি মুক্ত, মা। তোমার কাছে যেটা ভাল মনে হবে, তাই করতে পার।’
‘আমি বাবার কাছে চলে যাব।’
‘সেটাই যদি চাও, তাই করবে। কিন্তু তখনো তুমি আমার মেয়ে, তোমার সব দায়িত্ব আমার।’
‘সেটাও তো সেই একই বন্ধন।’
‘ডিভোর্স চাও? তাহলে সেটাই পাবে।’ রুমার মুখ লাল হয়ে উঠল। ‘তারপর তোমার পছন্দের কারো সাথে আমি তোমার বিয়ে দিয়ে দেব। সেটা তো মুক্তি?’ রুমা কিছু বললনা। ‘আমার শুধু একটা অনুরোধ, আর পনেরটা দিন আমাদের সময় দাও। আমার আর একটা ছেলে আসছে...।’
‘আপনার আর একটা ছেলে!’
‘আমার ভাইয়ের ছেলে। কিন্তু তার সব দায় দায়িত্ব আমার। সে বিদেশ থেকে আসছে। তার সাথে পরামর্শ করে দেখ, তারপর তুমি যে সিদ্ধান্ত নেবে, তাতেই আমরা রাজি। কি, আমার কথাটা রাখবে, মা? আমরা গভীর অন্ধকার একটা রাত্রি কাটাচ্ছি। ভোরের আলোর দেখা পাওয়ার আশায় তোমাকে আমরা এনেছিলাম, মা। কিন্তু সেটা বোধ হয় সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা নয়...।’ সাহেব গভীর বেদনার সাথে বলল। অসমাপ্ত।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান বিষয়টাতো করেই আপনার লেখার খুঁটিনাটিগুলিও খুব চমৎকৃত করে। সমাপ্তিটা দেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। অনেক অনেক ভাল থাকুন।
ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগল। খুঁটিনাটির জন্য বড় হয়ে যায়। অনেক ধ্ন্যবাদ্গ আপ্নারাও ভাল থাকুন।
Lutful Bari Panna গল্পটা খুবই ভাল লাগল। কাহিনীর মধ্যে উপন্যাসের উপাদান আছে। যদি সেদিকে টার্ন করান দারুণ হবে। পরের অংশ জানার প্রতিক্ষায় থাকলাম।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগল।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি অসাধারণ ভাষার দখল.....বর্ণনাশৈলী সাবলিল অনেক ভাল একটা গল্প বলতে যা বুঝায়..........ওয়াহিদ ভাইজান আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ........
ভাল লেগেছে আশা করি। পড়া আর মন্থব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
Sisir kumar gain সুন্দর বর্ননাশৈলী,সুন্দর গল্প।বেশ ভাল লাগলো।
পড়া আর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল।
এশরার লতিফ ডেভিল ইজ ইন দা ডিটেইল্‌স্‌। আপনার গল্পেও প্রচুর ডিটেইল্‌স্‌ আছে। কেউ যদি এটা থেকে সিনেমা বানায়, তাদের বেশী ভাবতে হবে না। গল্পটি সুন্দর এগুচ্ছিলো এবং ইমতিয়াজের আসল সমস্যাটা জানার জন্য আগ্রহ তৈরি করছিল। শেষে গিয়ে অসমাপ্ত দেখে বুঝলাম আরও এক সংখ্যা হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। লেখার ভঙ্গী আগের মতই চমৎকার।
চমৎকার বলেছেন! কিন্তু ভাবছি এথেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেখতে চেয়েছিলাম অতি সাধারণ কিছুকে পছন্দ করানো যায় কি না। এই জন্যই এত ডিটেলস- এরাই আমার নায়ক। পড়া আর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মিলন বনিক ওয়াহিদ ভাই আপনার প্রতিটা গল্পই মনে হয় খুব কাছে থেকে দেখা...প্রতিটা চিত্রই খুভ জীবন্ত..সুক্ষ বিশ্লেষণ...বিশদ বর্ণনায় মন ছুয়ে যায়...খুব ভালো লাগলো....
কোথাও পড়েছিলাম- চীনা শিল্পী তিনটানে বাঁশ আর পাতা আঁকে, দেখে মনে হয় যেন বাতাশে নড়ছে। সেভাবে লিখতে পারিনা, বড় হয়ে যায়, আপনারা কষ্ট পান। পড়া আর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সূর্য অনলাইনের এই একটা সমস্যা গল্প বড় হলে পাঠক ধৈর্য হারা হয়ে যায়, আবার বড় না করলে গল্পকারের মন মতোও হয় না। ঘটনার দৃশ্যের বর্ণনা গুলো উপন্যাসের আবহ সৃষ্টি করেছে আর বর্ণনাশৈলীর কারনেই যেন প্রতিটা দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছিল। যাক পরেরটুকু পড়লে পুরো স্বাদটা হয়তো পাব। আপনার গল্প গড়ার ক্ষমতা অসাধারণ।
সত্যি সূর্য ভাই, ছোট করে লিখে দেখেছি এমন খাপছাড়া মনে হয় কারো সামনেই রাখতে ইচ্ছা করে না। এটা অবশ্য আমার অক্ষমতা, সেটা আমি স্বীকার করছি। কারণ আপনাদের অনেকের খুব ভাল ছোটগল্প আমি পড়েছি। পড়া আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আপনার লেখা কবে পাচ্ছি?
রওশন জাহান পারিপার্শিকের বর্ণনা গল্পের অর্ধেকের বেশি গ্রাস করে ফেলেছে যা কাম্য নয়.গল্পটির সমাপ্তিতেও কোনো বক্তব্য ছিলনা. তবু ভালোই বলতে হবে.
গল্প কবিতার পছন্দটা এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। ভুল হয়ে যাচ্ছে, চেষ্টা করব আপনাদের কাম্যের কথাটা মনে ভাখতে। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
তাপসকিরণ রায় বড় গল্প লিখেছেন--ভূমিকা অনেকটা জাগা নিয়ে নিয়েছে।শেষে অসমাপ্ত শব্দটি দেখে মনে হল গল্প এখানে সমাপ্ত হয় নি--লেখার ধারাবাহিকতা ভাল লাগলো।কাহিনীর নতুনত্ব আছে--শুরু থেকে ধীর ও বিস্তৃত বর্ণনা দেখে বোঝা যাচ্ছিল গল্প অনেক দূর এগবে।ধীর হলেও পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা নিয়ে লেখা সুন্দর এগিয়ে চলেছে...অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
বড় ছোট যাই হোক যারা পড়ার তারা ঠিকই পড়েন- কষ্ট করে হলেও। বড়গল্প পড়তে সমস্যা হয় এটা কেউ বলেননি। কাজেই মন মত না হলে নিজেকে কষ্ট দিয়ে ছোট গল্প লিখব না। ধন্যবাদ ভাই, অনেক ধন্যবাদ।

০৪ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪