অনন্তর!!

মুক্তিযোদ্ধা (ডিসেম্বর ২০১২)

মোঃ মুস্তাগীর রহমান
  • ১৩
আজ।সারাদিন ভাল গেল না, সাবের আলীর।মস্তিস্কের মধ্যে, এখনো টেনশন কাজ করছে।টেনশন মুক্ত কবে হবে,এরুপ তথ্যই জানা নেই সাবের আলীর।সময়টা ভাল যাচ্ছে না।থেকে থেকেই ককটেল আর বোমার বিস্ফরণ, রাত-ভোর চলছেই।যতই বিস্ফোরণের শব্দ হচ্ছে,নেসের আলীর যুদ্ধের নেসা ততই জাগছে।আজ সারা দিন যুদ্ধ , যুদ্ধ আর আঙ্গুল তোলে ঢি-ঢি করেছে।সন্ধ্যের একটু পরে,ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে,ঘুম পাড়ানো হয়েছে।সকালে আবার কী হয়,কে জানে? এ দিকে স্ত্রী মর্জিনার ঝাঁঝালো বকবকানি, ফেলে দাও, রাস্তায় ফেলে দাও, এ অভিশাপ আমি আর পালতে পারব না।কত পাগল ত রাস্তায়, রাস্তায় ঘোরছে।তোমার এক ভাই নেসের আলী ঘোরলে, রাস্তার এমন কোনো ক্ষতি হবে না।অভিশাপ শব্দটা শোনে,সাবের আলীর চোখ দু’টো বড় হয়ে যায়। বড় বড় চোখে মর্জিনার দিকে তাকায়।তাতে কী এসে যায়;এ রকম বড় চোখ আজ বহু বছর ধরে দেখছে মর্জিনা।

সাবের আলি আজ কয়েকদিন থেকে,নেসের আলির পাশেই থাকছে।ক্লান্ত শরীর।আর পারে না।তবুও থাকতে হয়।কোনো ভাবে,নেসের আলি রাস্তায় নেমে গেলে,তাঁকে আর পাওয়া যাবে না।ক্লান্ত শরীর,ভারাক্রান্ত মন,সাবের আলির মাথায় নানান চিন্তা এস ভর করল।ভাবতে ভাবতে সে, ভাবতে লাগল সে সময়ের কথা...

উনিশ শ উনসত্তরের কথা। সে সময় নেসের আলী বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র।সাবের আলী দশম শ্রেণিতেই শেষ করেছে।অনেক বলেও,তাকে লেখা-পড়া করাতে পারেনি।শেষ অব্দি বাবা আসগর আলীর ব্যবসায় লেগে যায়।আসগর আলী রাজনীতির পোকা।বঙ্গবন্ধু ছাড়া কিছুই বোঝে না।রাজনীতি নিয়েই তাঁর বেশী সময় চলে যায়।তিনিও ভাবলেন,একজনকে না একজনকে ত, তাঁর অবর্তমানে কাজ করতে হবে; ভালোই হল!

সাবের আলী ব্যবসায় ঢোকে,কিছুদিন না যেতেই,বিযের বায়না।বাবা আসগর আলী সাফ বলে দিলেন, হবে না।আগে দু’মেয়ে,বড় ছেলে, তারপর তোমার।কিন্তু সাবের আলী নাছোড় বান্দা।সেও কম যায় না।তারও সাফ কথা, হয় বিয়ে;নয ত বা নিরুদ্দেশ।নেসের আলী বলল, বাবা, ও যখন লেখা-পড়াই করবে না,তখন আর দেরী কিসের? দিয়ে দাও না।সাবের আলীর বিয়ে হয়ে গেল,উনসত্তরের পঁচিশে জানুয়ারী।

বিয়ের এক বছর না যেতেই, সত্তরের মার্চ তের তারিখে, সাবের আলী পুত্র সন্তানের বাবা হল।একাত্তরের ২৫ মার্চ।ববর্র্র পাকিস্তানী সেনারা,হামলা শূরু করল নিরীহ বাঙালির ওপর।

আজ চব্বিশ এপ্রিল।নেসের আলীর কোনো খবর নেই।কোথায় গেল? কী হল? কেউ জানে না।বাবা আসগর আলী,সাবের আলীকে ডেকে বল্লেন,তুমি বৌ মাকে,তার বাবার বাড়ি রেখে আস।শহর থেকে গ্রাম অনেক নিরাপদ।পরিস্থিতি বোঝে আমরাও কোথাও চলে যাব।বিশেষ করে হাসনা আর মালেকার জন্যই যেতে হবে।মা রেবেকা বল্লেন,আমার বড় ছেলে নেসেরের কী হবে?
ও বুদ্বিমান,ঠিক আমাদের খোঁজে বের করে নিবে।–বাবা বল্লেন।

সব কিছুই ঠিক মত হল।সাবের আলী তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে,তার শশুর বাড়ি রেখে এল।পরের দিন সকালে তাদের ঋষিকূল গ্রামে চলে যাবার কথা।সেখানে আসগর আলীর চাচাত ভাই থাকে। কথা হল,যুদ্ধকালীন সময় সেখানেই তারা থাকবে।কিন্তু মা রেবেকা সাবের আলীকে বলল, তুই তোর ছোট খালার বাড়ি যা।তোর ছোট খালু পাকিস্তান সি আই ডি তে চাকরী করে।সে অনেক তথ্য জানে।তাকে তোর ভাই নেসের আলীর কথা বলবি।বলবি, আজ পর্যন্ত তার কোনো খবর নেই।কথাগুলো বলতে বলতে রেবেকা কাঁন্নায়
ভেঙ্গে পড়ল।আসগর আলী রেবেকাকে সান্তনা দিয়ে বলল, তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছ!নেসের আলীর প্রতি আমার আস্থা আছে,সে ঠিক চলে আসবে।কিন্তু মা’র মন বোঝে,কেবল মা ই ত!সে কী আর বাবা বোঝে!রেবেকা বলল,নেসের আলী না আসা পর্যন্ত, আমি এখান থেকে কোথাও যাব না।তুমি দুই মেয়েকে নিয়ে,ঋষিকূল চলে যাও।

একটু কিছু হলেই,আসগর আলীর মাথা গরম হয়ে যায়।কিন্তু আজ হল না।সে ঠান্ডা মাথায় রেবেকাকে বোঝাতে চেষ্টা করল।কিন্তু রেবেকা যখন কিছুতেই বোঝল না,তখন সাবের আলীকে তার খালার বাসায় যেতেই হল।যাবার সময় বাবা,ভালো করে তাকে বলে দিল,সাবধানে যাবি, আর আজকের মধ্যেই ফেরার চেষ্টা করবি।না পারলে সকালেই চলে আসবি,বিকেল করিস নে আবার।

পরের দিন সকালে,সাবের আলী বাড়ি ফিরল।গোটা মহাল্লায় থমথমে।মহাল্লায় কোনো মানুষ আছে বলে, তার মনে হল না।বাড়ির মধ্যে ঢুকতে তার ভয় হল।কিন্তু তাকে ত ঢোকতেই হবে।সেখানে ত তার মা আছে,বাবা আছে,দুই বোন আছে।

সাবের আলী বাড়ির মধ্যে ঢোকতে যাবে,ঠিক এ রকম মূহুর্তে,পাড়ার করিম চাচা তাকে ধরে, বাড়ির পিছন দিকের জঙাগলা পুকুর পাড়ের নিচে নিয়ে গেল।সাবের আলীর মুখ হতে কোনো কথাই বের হল না,শুধু করিম চাচার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।করিম চাচাও নিশ্চুপ।এক সময় করিম চাচা হো হো করে কেঁদে ফেল্ল।সাবের আলি মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল,কী হয়েছে চাচা?করিম চাচার গলা হতে কন্ঠ বের হয় না যেন।কী করে বলবে?বুকের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রনা।পানি পান করতে গিয়ে,পানি গলায় আটকে গেলে যেরুপ হয়,করিম চাচার অবস্থা,সে রকমই হল।করিম চাচা মাথা নিচু করে নিল।

সাবের আলির হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পেল।তার ভয়ানক ভয় হল।এমন কী হল যে, করিম চাচা বাড়ির মধ্যে,ঢোকতে দিল না?সাবের আলি করিম চাচার মুখের দিকে তাকাল।করিম চাচা,সাবের আলির মুখটা দেখে হো হো করে,কাঁদতে কাঁদতে বলল,ওরে সাবের সব্বোনাস হয়ে গেছে।মহল্লায় কেউ নেই।আমিও ছিলাম না।তোদের নুন খেয়েছি ত;আবার ফিরে এলাম।সে কিছুক্ষণ থামল।তারপর সাবেরকে বলল,তুই কোথায় ছিলি?
ছোট খালার বাসায়।
তোর বাবা,মা,বোনদের নিয়ে যেতে পারলি না?বলেই করিম চাচা আবার কাঁদতে লাগল।
কী হয়েছে?
ওরে, ওরা আর নেই!
আমি তোমার কথা বোঝতে পারলাম না।
কাল!সেতাব উকিলের বড় ছেলে,বাচ্চু রাজাকার এল পাক আর্মিদের নিয়ে।ঠিক সন্ধ্যের একটু
আগে।এসেই তোদের বাড়ি খিরে ফেলল।সন্ধ্যের একটু পর হতেই,শুধু গুলির শব্দ শোনা যেতে
লাগল।ঠিক ইসার আযানের পরপরই তোর বাবার,তোর মা’র কণ্ঠ শোনা গেল।বাঁচাও,আমার
মেয়ে দুটোকে বাঁচাও!তোর বোন দুটোর গুঁগড়ানি চিৎকার!আমি আর বলতে পারছি
না......এসব কান্ড দেখে,মহাল্লার সবাই, যে যেদিকে পারল, পালিয়ে গেল!ফজরের নামাযের পর
আমি চুপি চুপি ফিরে এলাম।দেখলাম কেউ নেই। তোদের বাড়ি ঢোকলাম..........তোর বাবা-
মা’র লাশ পড়ে আছে............তোর বোন দুটো নেই!

সাবের আলি যেন পাথর হয়ে গেল।করিম চাচাকে সে কোনো কথায় বলল না।সে সোজা বাড়ির দিকে রওনা হল।করিম চাচার মুখ হতেও কোনো কথা বের হল না।সে বাড়ির মধ্যে ঢোকল।দেখল,তার বাবা- মা যেন,মেঝেতে ঘুমিয়ে রয়েছে।বেশ কিছুক্ষণ সে তাকিয়ে রইল,তার বাবা-মা’র দিকে।তারপর বাড়ি হতে বেরিয়ে এল।সামনেই করিম চাচা দাঁড়িয়ে ছিল।সে করিম চাচাকে বলল,চাচা,দাফনের ব্যবস্থা হবে না?
করিম চাচা,সাবেরকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল।

সাবের আলির চোখে ঘুম নেই;ছুটে বেড়াই গ্রাম থেকে গ্রাম।খোঁজে বোড়ায় তার দু বোনকে।কখনো খেতে পাই,কখনো পাই না।এ ভাবেই তার দিন কাঁটে।তার দেহ-মন এখন ক্লান্ত,শ্রান্ত!সে উদভ্রান্ত!তার বৌ-ছেলের কথা মাঝে মাঝে মনে পড়লেও,তার মনে হয়েছে, তারা ভালো আছে।এ ভাবেই তার পথ চলা;চলে না,তবুও চলতে হয়।পেটে খাদ্য নেই;দেহে জল নেই।ক্ষুধার্থ-তৃষ্ণার্থ দেহ নিয়ে,ধরমপুরের পথ ধরে সে হাঁটছে।পা চলে না,তবুও সে ছলছে।এক সময় আর চলতে পারল না।পথের ওপর সে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল।

সাবের আলির যখন জ্ঞান ফিরে এল তখন সে নিজেকে দেখল,একটা ঘরের মধ্যে, দড়ির খাটে সে শুয়ে রয়েছে।সে ঘরের চারদিক তাকিয়ে দেখতে লাগল।তার কোনো কিছু বোঝে উঠার আগেই,৫৭/৫৮ বয়সের এক ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করল।তাঁর পেছনে রয়েছে, ২৫/৩০ বছরের একজন যুবক।তাঁকে সালাম দেবে,এ জ্ঞান তখন সাবের আলির ছিল না।সে শুধু লোকটিকে দেখতে লাগল।তাঁর শুধু,মনে হতে লাগল,এমন মুখমন্ডল ব্যক্তিকে,যে কেউ শ্রদ্ধা করবে।লোকটি বলল,তোমার পরিচয় কী,আমি জানি না।তবে এটা জানি,তুমি ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্থ।তোমার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে,তুমি খেয়ে নাও।এখন আসরের সময়।আমি নামায আদায় করে আসি,তারপর তোমার সাথে কথা হবে।

সাবের আলি খাওয়া-দাওয়া করে,দড়ির খাটে বসে ভাবছে।কী ভাবছে,সে নিজেও জানে না!সব এলো-মেলো ভাবনা।ঠিক এরকম সময়ই লোকটি,তার পাশে এসে বসল।তার মাথায় হাত রেখে বলল,তোমাকে দেখলে মনে হয়,তুমি শোকাহর্ত!তোমার পরিচয়টা আমি পরে জানব।আগে আমার পরিচয়টা জেনে নাও।
আমি এই গ্রামের পিস কমিটির চেয়ারম্যান।আমার নাম ইসলাম।সবাই ইসলাম রাজাকার বলেই জানে।এ কথা শোনতেই সাবের আলির বুকটা ধক করে উঠল।তাঁর মনের মধ্যে হীংস্রতা জেগে উঠল;কিন্তু সাহসে নম্রতারই প্রকাশ ঘটল।সে ইসলাম রাজাকারের দিকে তাকিয়ে রইল।ইসলাম রাজাকার বলল,বাবাজি,তুমি কী কিছু ভাবছ? সাবের আলি ঘৃণা ভোরে বলল,জ্বি, না,আপনি বলেনে। ইসলাম রাজাকার বলা শুরু করল- আমার একটা বাহিনী আছে।যারা এ গ্রাম পাহারা দিয়ে থাকে,যেন কোনো রকম ভাবেই শত্রু এ’গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে।সেই বাহিনীর সদস্যরাই তোমাকে এখানে নিয়ে এসছে।এ গ্রামে ত,তুমি এর আগে আসনি।তাই তোমার জানাও নেই; কোন দিকে কী রয়েছে।দক্ষিণের দিকে,এখান থেকে আট/দশ মাইল দূরে,প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।সেখানেই রয়েছে আর্মি ক্যাম্প।স্কুলের পিছনে,প্রায় অর্ধ মাইল দূরে রয়েছে,জঙ্গলাই ভরা একটা পুকুর।পুকুরটা কচুরি-পানায় ভরা।সে পুকুরের উপর দিয়ে অনায়াসে হেঁটে পুকুর পার হওয়া যায়।এসব কথা,তোমাকে কেন শোনাচ্ছি জান?থাক,পরে জানতে পারবে।ইসলাম রাজাকার কিছুক্ষণ থামল।তারপর আবার শুরু করল।আমি রাজাকার,এটা শোনে তোমার রাগ হচ্ছে না?

জ্বি না। সাবের আলি বলল।
বাবা,মা ভাই-বোন,এরা সব এখন কোথায়,তুমি জান?

বাবা-মা ওপরে!আমরা দু’ভাই।ভাই কোথায় জানি না।দু’টো বোন ছিল-তাদের আজ সাত
আট মাস যাবত খোঁজে বেড়াচ্ছি।তাদের কোথায় পাব জানি না।

বাবা-মা ওপরে,একটা ভাই ছিল,কোথায় আছে জান না,দু’টো বোন ছিল,তাদের খোঁজে বেড়াচ্ছ!
তোমার কথা কেমন অসংগতিপূর্ণ!আমাকে একটু খোলে বলে ত বাবাজি।

আপনাকে বলে কী হবে?আমার বাবা-মাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন? আমার বোন দু’টো
কোথায় আছে বলতে পারবেন?আমার ভাইয়ের ঠিকানা জানাতে পারবেন?

আমি শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান,ইসলাম রাজাকার।ইসলাম রাজাকার অনেক কিছুই পারে
বাবাজি।........ তোমাকে আমি কষ্ট দেব না।আমি তোমার অবস্থা বোঝতে পেরেছি।তুমি
রাজাকারদের ঘৃণা কর,রাজাকারদের ওপর অনেক ক্ষোব, তোমার শক্তি থাকলে,তুমি সমস্ত
রাজাকারদের হত্যা করতে।আমিও তাই বাবাজি,আমরও যদি শক্তি থাক ত,আমিও সব
রাজাকারদের হত্যা করতাম।কিন্তু কী আর করা বল,আমার বা তোমার ত অত শক্তি
নেই।.... ঐ যে, তোমাকে আর্মি ক্যাম্পের কথা বললাম না।ওখানের দায়িত্বে রয়েছেন ক্যাপ্টেন
মির্জা। ক্যাপ্টেন মির্জার আগে ছিল,মেজর ইকবাল।ঐ মেজর ইকবালের সময়ই আমি শান্তি কমিটির
চেয়ারম্যান হলাম।এই বদমাইশটা ছিল,নারী পিপাসু।যুদ্ধ-টুদ্ধ নিয়ে এর অত মাথা ব্যাথা ছিল
না।নারী পেলেই সে খুশি।এই কুত্তাটার জন্য,এ গ্রামের অনেক নারীই আত্মহত্যা করেছে।এ কুত্তাটার
হাত থেকে নারীদের রক্ষা করার জন্য,আমি সব যুবতীদের এ গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পাঠিয়ে
দিলাম।এ কুত্তাটার চরিত্র,এমনই জঘন্য যে,যুবতী না পেয়ে;বয়স্কাদের ওপর অত্যাচার শুরু
করল।.............সবই আল্লার রহম!বোঝলে বাবাজি,সবই আল্লার রহম।মেজর ইকবাল এখানে আর
বেশী দিন থাকল।ওর জায়গায় এল ক্যাপটেন মির্জা।এ আবার অন্যরকম।নারীর ওপর কোনো লোভ
নেই।কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা পেলেই গুলি করে মারে।..........আমি চিন্তা করলাম,একটা মুক্তিযোদ্ধাও মারতে
দেওয়া যাবে না।কিন্তু বুদ্ধি কী?অবশেষে ঠিক করলাম,মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়লেই ছুটে যেতে
হবে।মির্জার সামনেই অমানবিক অত্যাচার করতে হবে,যেন বোঝে,আমি যা করছি তা মির্জার
জন্যই করছি।তারপর সুযোগ বোঝে,সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাকে বের করে নিয়ে আসতে হবে।

সাবের আলির কোনো মনোযোগই ছিল না,ইসলাম রাজাকারের কথা শোনবার।এতক্ষণ তাঁর মনোযোগ
হল।সে হঠাৎ করেই বলে ফেলল,তারপর.........

তারপর............একদিন শোনলাম,বড়বড়িয়া হতে একটা মুক্তিযোদ্ধা ধরে আনা হয়েছে।পা দু’টো
বেঁধে,গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।আমি ছুটলাম।গিয়ে বল্লাম,স্যার,একে কখন মারা হবে?মির্জা সাহেব
আমার দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে বলল,কেন?
না স্যার,এমনি....।
ও...
আমি বল্লাম,স্যর,যারা মুসলমান হয়ে,মুসলমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে,যারা হিন্দুস্তানের দালাল,তারা
ইসলামের শত্রু,তাদের গুলি করে মেরে ফেলা ঠিক নয়।গুলি করে মারলে ত কষ্ট পেল না,বোঝে
উঠতে পারল না,মৃত্যু যন্ত্রণা কত কঠিন।এদের এমন কষ্ট দিয়ে মারতে হবে যে,আর কেউ সাহস না
করে,মুক্তিযুদ্ধে যেতে।আর কাজটা আমাকে করতে দিলে,আমি কৃতজ্ঞ থাকব স্যার।.................এত
সহজে মির্জা সাহেব রাজি হয়ে যাবে,আমি ভাবতেই পারিনি।মির্জা সাহেব হো হো করে হেসে বল্ল,দেখি
তোমার অত্যাচারের ধরণ।.........ইসলাম কিছুক্ষণ দম নিয়ে,আবার বলতে শুরু করল,
বাবাজি,প্রতিটা রাত আমার কাটে অসহ্য যন্ত্রনায়,ঘুম হয় না,সারা রাত জেগে থাকি।
কেন? সাবের আলি বল্ল।
বাবাজি, আমি যখন মুক্তিযোদ্ধাদের উপর অত্যাচার করি,যে দেখে,তার শরীরের পশম খাড়া হয়ে
যায়, পশু চিৎকার করে ক্রন্দন করে,পাখিরা উড়ে পালিয়ে যায়।মির্জা সাহেব পর্যন্ত চিৎকার করে
বলে,বন্ধ বন্ধ কর, কর ইসলাম।আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
তারপর কী করতেন?
তারপর............তারপর অত্যাচার বন্ধ করে দিতাম।আমি ক্লান্ত,দেহ ক্লান্ত।মির্জা সাহেবকে বলি,স্যার
মরে গেছে।মির্জা সাহেব চিৎকার করে বলেন,ফেলে দাও,ফেলে দাও ও কুত্তার বাচ্চাকে।আমি সেটাই
চাই,তারপর নিয়ে গিয়ে ফেলে দিই,ঐ জঙ্গলা পুকুরে।রাত নেমে এলে,আমার লোকেরা খুব সাবধানে
তোলে নিয়ে আসে এখানে। তারপর সেবা-যত্ন করে বাচিয়ে তুলি।তারপর তাঁকে বলি,যাও
বাবা....যুদ্ধে যাও...যুদ্ধ কর....এ দেশকে শত্রুদের হাত হতে মুক্ত কর।হতবাক হয়ে যায় তখন
মুক্তিযোদ্ধা।হতবাক হয়ে বলে,আপনি না..........আমি বলি,এছাড়াত তোমাকে বাঁচাতে পারতাম না
বাবা।

সাবের আলি দড়ির খাট হতে ওঠে দাঁড়ায়,স্যালুট করে ইসলামকে।তারপর বলে,আপনি
রাজাকার না;আপনি মুক্তিযোদ্ধাদের মু্ক্তিযোদ্ধা।আপনাকে হাজারও স্যালুট।

আমার এ গ্রামে কোনো রাজাকার নেই বাবাজি।আমার যে বাহিনী দেখছ,এরা সবাই মুক্তি
যোদ্ধা।কিন্তু সকলেই জানে,আমার সবাই অত্যাচারী রাজাকার।ইতিহাসও হয় ত তাই লেখা
হবে।ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে,ইসলাম রাজাকার নামে।

যে মুক্তিযোদ্ধাদের আপনি বাঁচিয়েছেন,তাঁরা ত স্বাক্ষি,আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

আমার ভয় হয় বাবাজি!যে জাতি,জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে করে, দেশ স্বাধীনের পর,সে জাতি,
জাতিতে-জাতিতে যুদ্ধ বেধে যায় কিনা!সে জাতি, বঙ্গবন্ধুকে মর্যদার কোন আসনে
বসাবে?........আমার ভয় হয়............যাকগে সে সব কথা,ভবিষ্যত অনেক পরের
কথা!এখনকার কথা শোনো,গত কয়েকদিন থেকে,আমার মনটা তোলপাড় করছে।কেন
জান?গতকয়েক দিন আগে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অমানবিক অত্যাচার করে,সেখান থেকে উদ্ধার
করে নিয়ে আসি।তাঁকে বাঁচাতে পেরেছি বটে,কিন্তু স্মৃতিভ্রম ঘটেছে।আমি ভাবতেই পারিনি
এমনটি হবে!তুমি দেখবে তাঁকে?

আমি দেখে কী করব বলুন?

এমনও ত হতে পারে,তোমাকে দেখে তাঁর স্মৃতি জাগ্রত হতে পারে।

কোথায় ও?

এস,আমার সাথে এস।

সাবের আলি,ইসলামের পিছে পিছে গেল।স্মৃতিভ্রম মুক্তিযোদ্ধা একটা চৌকির ওপর শুয়ে
রয়েছে।সাবের আলি ভেতোরে ঢোকে,তাঁর মুখটা দেখতে পেল না।ও বলল,ও কী ঘুমাচ্ছে
চাচা?আমি ত ওর মুখ দেখতে পাচ্ছি না।

এই প্রথম তুমি আমাকে চাচা বলে ডাকলে!খুব ভালো লাগল বাবাজি!......ও ঘুমাচ্ছে না।বেশীর
ভাগ সময়ই ও, ওদিকে মুখ করে থাকে।কেন থাকে জানি না।ইসলাম মুক্তিযোদ্ধার পাশে গিয়ে বসল।তাপর ওকে বলল,বাবাজি,দেখ,কে এসছে......ও ইসলামের সাড়া পেয়ে মুখ ঘোরাল।ও মুখ ঘোরাতেই সাবের আলি চমকে গেল!সে দেখল,এ আর কেউ নয়;ও তারই ভাই,নেসের আলি।সাবের আলি দোড়ে গিয়ে নেসের আলিকে জড়িয়ে ধরল।হাওমাও করে, জোরে চিৎকার কেঁদে বলে উঠল,ভাই,আমার ভাই।তুই এখানে ভাই?........বাচ্চু রাজাকার সব শেষ করে দিয়েছেরে ভাই......বাবা-মা কেউ নেই!সবাইকে মেরে ফেলেছে, হাসনা আর মালেকাকে তোলে নিয়ে চলে গেছে,তারা কোথায় জানি না।দিনের পর দিন তাদের খোঁজে ফিরছি,কোথাও তাদের থোঁজে পাইনি ভাই।ভাই তুই কথা বলছিস না কেন ভাই?ভাই,ভাই,ভাই!

নেসের আলি যে স্মৃতিভ্রম,পাগল!সে ত কথা বলে না।ইসলাম বলল।

সাবের আলিরও কথা বন্ধ হয়ে গেল।এক দৃষ্টিতে ইসলাম মুক্তিযোদ্ধার দিকে তাকিয়ে রইল।তারপর সে ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল।............


হঠাও এরশাদ-----বাঁচাও দেশ!
জ্বালো,জ্বালো..........আগুন জ্বালো।
এরশাদের গদিতে
আগুন জ্বালো এক সাথে!
স্বৈরাচার নিপাত যাক,
গণতন্ত্র মুক্তি পাক!

এমন শ্লোগানের মধ্য দিয়ে,সাবের আলির ভাবনাচ্যুতি ঘটল।তাঁর ভাবনাচ্যুতি ঘটার সাথে সাথে,তাঁর অস্থিরতাও বৃদ্ধি পেল।এই বুঝি, নেসের আলির ঘুম ভেঙ্গে গেল।ঝুটিকা মিছিল।বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না।বাঁ দিকের রাস্তা দিয়ে দ্রুত চলে গেল।হঠাৎ করেই সাবের আলির মনে পড়ে গেল,ইসলাম মুক্তিযোদ্ধার সেই উক্তি, ..... আমার ভয় হয় বাবাজি!যে জাতি,জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে করে, দেশ স্বাধীনের পর,সে জাতি,
জাতিতে-জাতিতে যুদ্ধ বেধে যায় কিনা!সে জাতি, বঙ্গবন্ধুকে মর্যদার কোন আসনে বসাবে?সাবের আলির আরও মনে পড়ল, আমার এ গ্রামে কোনো রাজাকার নেই বাবাজি।আমার যে বাহিনী দেখছ,এরা সবাই মুক্তি
যোদ্ধা।কিন্তু সকলেই জানে,আমার সবাই অত্যাচারী রাজাকার।ইতিহাসও হয় ত তাই লেখা হবে।ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে,ইসলাম রাজাকার নামে!

ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে নেই।যুদ্ধ শেষে,বিজয়ের মাসেই,মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে মেরে ফেলে।তাঁর বাহিনী প্রতিরোধ গড়েছিল বটে,রুখতে পারেনি।সে সহ তার বাহিনীর সকলেই মারা যায়।এখনও ধরমপুর গ্রামে,ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাকে,ইসলাম রাজাকার বলেই জানে।কোনো শিশু ঘুম না গেলে,শিশুকে ভয় দেখানোর জন্য বলে,ঐ দেখ,ইসলাম রাজাকার আসছে।দীর্ঘ নি:শ্বাস ফেলে সাবের আলি!......বিড়বিড় করে বলে,আজব এদেশ!একজন মুক্তিযোদ্ধাকে সবাই রাজাকার বলে জানে, আর রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে,রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ঘোরে!মন ভেঙ্গে যায় সাবের আলির যখন বাচ্চু রাজাকার মঞ্চে দাঁড়িয়ে,দাপটের সঙ্গে বক্তব্য দেয়!মন ভেঙ্গে যায় সাবের আলির,যখন একজন রাজাকার বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে সংসদ ভবনে যায়!সব কিছু এলো-মেলো হয়ে যায় সাবের আলির।ক্লান্ত দেহ আর ধরে রাখতে পারে না,সে ঘুমিয়ে পড়ে।

ফজরের নামাযের পরপরই মর্জিনার ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘুম থেকে ওঠে দেখে,নেসের আলি ড্রইং রুমে,হাত-পা তোলে সোফায় বসে রয়েছে।বদ বুদ্ধি আসতে মর্জিনার একটুও দেরী হল না।সঙ্গে সঙ্গে সে বলল,এই পাগল বাইরে যাবি?বাইরে,রাস্তায়?ওখানে যুদ্ধ চলছে।যুদ্ধে যাবি না?নেসের আলি ফ্যাল করে হাসে।মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,হ্যা যাব।মর্জিনা একটুও দেরী করেনি।সঙ্গে সঙ্গে সদর দরজা খোলে দিয়ে বলে, যা,এ দিক দিয়ে যা......।নেসের আলি দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়।বেরিয়ে গিয়েই,দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকায়।তার মুখমন্ডল ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।মর্জিনা দ্রুত দরাজা বন্ধ করে দেয়।

সাবের আলির এক মাত্র ছেলে,জাহের আলি, চাচা নেসের আলির আদর্শে আদশির্ত।চাচা নেসের আলি ছাত্রাবস্থায় বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।জাহের আলিও বাম সংগঠন করে।এরশাদ বিরোধী আন্দেলনে,প্রথম সারির ছাত্র নেতা।রাতে বাড়িতে থাকে না,মাঝে মধ্যেই পুলিশ হানা দেয়।মাঝেমধ্যে দিনের বেলাই এসে দেখা করে যায়,বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে।সাধারনত,সে সকালে আসে না।আজ সকাল সকালই এসছে।বাড়িতে এসে সে প্রথমেই চাচা নেসের আলির ঘরে যায়।চাচার সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে বাবা-মার সঙ্গে দেখা করে।আজও তার ব্যতিক্রম হল না।চাচা নেসের আলির ঘরে ঢোকে দেখল,বাবা সাবের আলি, চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছে।চাচা নেসের আলি ঘরে নেই।বাবাকে না জাগিয়ে,সে চাচা নেসের আলির খোঁজ করতে লাগল।কিন্তু সে কোথাও চাচা নেসের আলিকে দেখতে পেল না।রান্না ঘরে মা কাজে ব্যস্ত।সে সেখানে গিয়ে,ও ওর মাকে জিঞ্জেস করল,মা,চাচাকে দেখেছ?ওর মা সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দিল,আমি ত আর পাগল নয়; যে, সারাক্ষণ তার সঙ্গে বসে থাকব।জাহের আলি আর কোনো কথা বলল না।সে সোজা নেসের আলির ঘরে ঢুকে বাবাকে ডাকল।বাবা ঘুমের ঘোরে বলল,কে?জাহের?কখন এলি?
এই ত।বাবা, চাচা কোথায়?
কেন?এই ত বিছানা......বিছানায় আর বলতে পারল না।দেখে নেসের আলি নেই।সে ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়াল।বলল,কোথায় গেল!
আমি বাড়ির সব জায়গা দেখেছি বাবা।কোথাও নেই।
সাবের আর সেখানে দাঁড়াল না,সে সোজা রান্না ঘরে গিয়ে মর্জিনাকে বলল,ভাই কোথায়?
আমি কী করে বলব।মর্জিনা বলল।
আমি তোমাকে জিঞ্জেস করছি,ভাই কোথায়?
তোমার ভাইয়ের ত একটা লেজ আছে, আর আমি সেই লেজ ধরে সব সময় বসে থাকি,তাই
আমি জানি,তোমার ভাই কোথায়........খোঁজে দেখ,কোথায় সে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে।
সাবের আলি, মর্জিনা বলে জোরে চিৎকার করে হাত তোলে।মর্জিনা বলে,আমি জানি,তোমার হাত ঐ পর্যন্তই উঠবে,এর বেশী নয়।সাবের আলি বলল,কাজটা তুমি ভালো করনি মর্জিনা।পাশে দাড়িয়ে ছিল জাহের আলি।সে মাকে,ছি:মা,ছি: বলে ধিক্কার দিল।

সাবের আলি তাঁর ছেলেকে বলল,বাবা,তোর মা,এ জঘন্য কাজটি বেশীক্ষণ আগে করেনি।তোর চাচাও বেশীদূর যেতে পারেনি।তুই এখই রাস্তায় নেমে পড়।মা বলল,জাহের তুই যাবি নে।রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ খোরে বেড়াচ্ছে....তুই যাবি না।জাহের বলল,পুলিশের ভয়ে বসে থাকলে ত,আমি আমার আর্দশকে হারিয়ে ফেলব মা।এত কিছু বোঝার পর,এত কিছু জানার পর,আমি ত আমার আদর্শ হারাতে পারি না।জাহের আলি তার চাচার খোঁজে বেরিয়ে পড়ল............................

নেসের আলি,রাস্তায় নেমে দেখল,সামনের মোড়ে,রইফেল হাতে বিডিআর পাহারারত।নেসের আলি বিডিআর বোঝে না,পুলিশ বোঝে না,আর্মিও বোঝেন না,বোঝে রাইফেল।যখন সে বিডিআর এর ঘাড়ে এবং কারও কারও হাতে রাইফেল দেখল,তাঁর যুদ্ধের নেসা জেগে উঠল।সে আঙ্গুল তোলে,ঢি ঢি করতে করতে বিডিআরের দিকে দোড়ে গেল।সেখানে গিয়েই সে বলল,শালা পাকিস্তানি কুত্তা,আমার দেশ খেতে এসেছ,শালা তোমাকে গুলি করে মেরে ফেলব।বলেই সে বিডিআরের এক জোয়ানের উপর ঝাপিয়ে পড়ল।বিডিআর জোয়ান তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে,রাইফেল দিয়ে পেটাতে লাগল।রাইফেলের একটি আঘাত তাঁর মাথায় লাগল।সে চিৎকার করে,মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

বিডিআর জোয়ান দেখল,ওর কোনো সাড়া শব্দ নেই।কাছে গেল,সে বলল,শালা ত মরে গেছে।আর একজন বলল,শালাকে ঐ ডাস্টবিনে ফেলে দে।অন্যজন বলল,না,গাড়িতে তোলে নে।ফাঁক বোঝে,কোনো খাঁদে ফেলে দেব।বিডিআর বাহিনী নেসের আলিকে গাড়িতে তোলে নিল।

নেসের আলির যখন জ্ঞান এল,তখন পড়ন্ত বিকেল।সে নিজেকে একটি খাঁদের মধ্যে দেখল।অধার্ঙ্গ জলে আর অধার্ঙ্গ ভূমিতে।সে এখানে কেমন করে এল,ঠিক বোঝে উঠতে পারল না।তাঁর শুধু মনে হতে লাগল,তাঁকে ত পাক আর্মিরা যুদ্ধক্ষেত্র হতে ধরে নিয়ে গেছিল।তাঁর ত বেঁচে থাকার কথা নয়।তবে!সে উঠে দাঁড়াল।চারদিক খোরে দেখল।না,জায়গাটা তাঁর একদমই চেনা নয়!সে কিছুই বোঝে উঠতে পারল না।মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।তাপর মুখে হাত দিতেই চমকে উঠল।সে নিজেকেই প্রশ্ন করে বসল,মুখ ভর্তি দাড়ি কোথায় হতে এল।সে ভালভাবে দাড়ি গুলো নেড়ে এবং টেনে দেখল।এমন সময় একটি ঝটিকা মিছিল,স্বৈরাচার নিপত যাক,গণতন্ত্র মুক্তি পাক,এরাশাদের গদিতে-আগুন জ্বালো এক সাথে,খালেদা তুমি এগিয়ে চল-আমরা আছি তোমার সাথে – ম্লোগান দিতে দিতে,ডান দিকের রাস্তা ধরে দ্রুত বেরিয়ে গেল।নেসের আলি হতবাক হয়ে মিছিল চলে যাবার দিকে তাকিয়ে রইল।এমন সময় বাঁ দিকের রাস্তা হতে,আর একটি মিছিল জয় কাংলা শ্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে এল।তারাও,স্বৈরাচার নিপাত যাক-গণতন্ত্র মুক্তি পাক!শেখ হাসিনা ভয় নেই,আমরা আছি তমার সাথে।তারই পিছন হতে,জয় সর্ব হারা, মাকর্স বাদ,লেলিনবাদ শ্লোগান উচ্চারিত হল।তারাও স্বৈরাচার নিপাত যাক-গণতন্ত্র মুক্তি পাক শ্লোগান দিতে দিতে রাস্তা ক্রস করল।নেসের আলি কিছুই বোঝে উঠতে পারল না।সে নিজেকে বার বার প্রশ্ন করতে লাগল,কে খালেদা?কে হাসিনা?কে এরশাদ?কে?কে?কে?

মিছিলের শ্লোগানের ধ্বনি,গোটা এলাকায় প্রতিধ্বনি হতে থাকল।নেসের আলির মস্তিস্কের সেল গুলো,ততো বিশী কম্পন হতে থাকল।হিসাবের অংকটা তার কাছে জটিল থেকে জটিলতর হতে লাগল।সে কোনো ভাবেই হিসাব মেলাতে পারল না।সে হিসাব মেলাবার জন্য,মাকর্সবাদ-লেলিনবাদ মিছিলের পিছন পিছন চলতে থাকল।এমন সময় দাঙ্গা পুলিশ এসে হাজির হল।সমস্ত এলাকাটা একটা রণক্ষেত্রে পরিনিত হল।পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করল।কাঁদুনে গ্যাসের জ্বালতনে,যে যেদিকে পারল ছুটতে লাগল।নেসের আলি কিছু বোঝে ওঠবার আগেই,সেও ছুটতে লাগল।

নেসের আলি ছুটছে,সে ছুটছে.........তাঁর পথ চেনা নেই, গন্তব্যস্থলও জানা নেই।তার শুধু মনে হচ্ছে,এ বাংলায় যুদ্দ চলছে............সে দোড়ছে..........দোড়তে দোড়তে এক সময় সে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল।মাথা তোলতেই দেখল,সামনে এক মস্ত দেওয়াল,আমাদের স্মৃতিসৌধ, স্মৃতিসৌধের পাশে লাল-সবুজ পতাকা পত পত করে ওড়ছে।সে নিচ থেকে আকাশের দিকে তাকাল,দেখল,তাঁর মনে হল,এটা কোনো মধ্যযুগীয় স্থাপত্য,কোনো মিনার!দাঁড়িয়ে রয়েছে.......

দূর থেকে ভেসে এল,
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে,
বাংলার স্বাধীনতা আনল যাঁরা’
আমরা তোমাদের ভুলব না,
আমরা তোমাদের ভুলব না
............................
অনন্তর................?
অনন্তর..............!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তাপসকিরণ রায় গল্পটির আকার বিস্তৃত.অনেক চরিত্রের সমাগম ঘটেছে এখানে.আলাদা আলাদা করে চরিত্রগুলিকে বেছে নেওয়া অসুবিধা হচ্ছিল.রাজারারের মধ্যেও ভালো মানুসও ছিল এমন এক চরিত্র নিয়ে লেখা আপনার গল্পটি.গল্প ভালো লাগলো,এর ভাব ভাষা ভালো.
এশরার লতিফ একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি অত্যাচারের কারণে মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন, আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি রাজাকার পরিচয়ে মানুষের উপকার করে শেষ পর্যন্ত পরিচয়জনিত জটিলতার কারনে (?) মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত, এরশাধবিরোধী আন্দোলন, সহানুভূতিহীন স্ত্রী...অনেকটা উপন্যাসের পরিধি... ভালো লাগলো আপনার গল্পটি...অনেক শুভেচ্ছা
আহমেদ সাবের গোপনে অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। যুদ্ধ শেষে সাহায্যপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারাই তাদের প্রাপ্য সম্মান দিয়েছেন। "যুদ্ধ শেষে,বিজয়ের মাসেই,মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে মেরে ফেলে।" - কথাটা মেনে নিতে পারলাম না। শান্তি কমিটির কেউই জানলো না, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ইসলাম রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যকারী - এটা কেমন করে হয়? সে যা হোক, গল্পের থিমটা বেশ সুন্দর। লেখাও সাবলীল।
ম্যারিনা নাসরিন সীমা দুটো সময়কে চমৎকার ভাবে বেধেছেন খুব ভাল লাগলো ।
Lutful Bari Panna ভাল লাগল, অনেক ভাল লাগল মোস্তাগীর ভাই।
রোদের ছায়া অনেক বড় গল্প আর গল্পের কাহিনী ৭৯, ৭১ থেকে ৯০ পর্যন্ত বিস্তৃত ..........ভালই লাগলো কিন্তু সূর্য ভাইয়ের মন্তব্যের সাথে একমত ইসলাম রাজাকার এর ভুমিকা তেমন জোরালো মনে হলো না , মুক্তিযোদ্ধাকে বাচাতে হলে তাকে এভাবে নির্মম অত্যাচার করতে হবে কেন ?
তানজিয়া তিথি মনে রাখার মত কাহিনী ------ ভাষা ও সহজ সরল । খুবই ভাল লাগলো ।
বিষণ্ন সুমন যুদ্ধের অনেক অজানা কাহিনী উঠে এসেছে আপনার গল্পে । ইসলাম রজাকারের মত মানুষেরা এভাবেই নিজেকে ধিকৃত করে দেশের জন্য গোপনে কাজ করেছে । তবুও ইতিহাস তাদের কলংকিত বলেই স্বীকৃতি দিয়েছে । এরকম অসংখ্য দেশপ্রেমীদের জন্য জ্বলন্ত স্বাক্ষর হয়ে থাকলো গল্পটি । ভাইয়াকে ধন্যবাদ ভিন্নতর কিছু দেবার জন্য ।
আজিম হোসেন আকাশ দূর থেকে ভেসে এল, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনল যাঁরা’ আমরা তোমাদের ভুলব না, আমরা তোমাদের ভুলব না ............................ ভাল লাগল।
শাহ আকরাম রিয়াদ অনেক বড় গল্প.. গল্পের কাহিনী বিন্যাস ভাল লাগল... শুভ কামনা রইল (অফলাইনে পঠিত)
রাত-ভোর, নেসা, ঘোরছে এই বানানগুলো ঠিক করে দিন।

২৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী