ভালবাসার ফল্গুধারা

বন্ধু (জুলাই ২০১১)

সেলিনা ইসলাম
  • ৫০
  • 0
বন্ধুত্বের বন্ধনে প্রতিদান বলে কোন শব্দ থাকতে নেই । বন্ধু সেই হয় , যে দুঃখের সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় । সব দুঃখ- কষ্ট ,আনন্দ -বেদনা খোলা বইয়ের মত বন্ধু , বন্ধুর সামনে মেলে ধরবে এবং সবকিছু সমানভাবে ভাগা ভাগি করে নে্বে এটাই যেন বন্ধুত্বের মুল শর্ত । বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট হয় বিশ্বাস আর পরম শ্রদ্ধাবোধ থেকে । জীবনে একশ বন্ধুর কোন প্রয়োজন নেই , যদি সত্যিকার একজন বন্ধুর দেখা মেলে । এমনি একজন বন্ধু পেয়ে আজ জয়া অনেক সুখী। জীবনের এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে যখন সে জীবন যুদ্ধে পরাজিতা , ঠিক সেই মুহূর্তেই কিশোরী বেলার বন্ধু বিন্দুর সাথে তাঁর আবার দেখা । বিন্দুই তাঁকে খুঁজে বের করেছে । জয়া ছোট বেলায় মায়ের কাছে শুনেছিল -" আল্লাহ মানুষকে কষ্ট দিয়ে তাঁর ধৈর্য শক্তি পরিক্ষা করেন । আর যখন এই মানুষটা ধৈর্য ধরতে ধরতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়্ , তখন আল্লাহ মানুষ রূপী একজন ফেরাস্তা পাঠান । যে সব দুঃখ কষ্ট শুষে না নিলেও , কাঁধে হাত রেখে সাহস জোগাবে , নতুন করে বাঁচতে শেখাবে । আজ দীর্ঘ দশ বছর পরে জয়ার জীবনে ফিরে আসে ,বিন্দু নামের হারিয়ে যাওয়া সেই বন্ধুটি ।


ভালবাসার ফল্গুধারা

(১ )

জয়া পড়াশুনায় বরাবরই খুব ভাল । কিন্তু বাবা মারা যাবার পর থেকে ওদের সংসারে দারিদ্রের অপ্রতুলতার যে ছায়া , তা তাঁকে স্বপ্ন শিখরে পৌছাতে দিল না । ওরা তিন ভাইবোন । বড় বোনকে ক্লাস নাইনে থাকতেই মামারা বিয়ে দিয়ে দেন । ভাই বখাটে ছেলেদের সাথে মিশে বাউন্ডুলে হয়ে গেছে । সবার ছোট জয়া । সে দেখতে খুবই সুন্দরী । এতদিন ওর পড়ার খরচ বড়বোন বহন করে আসছিল । কিন্তু তার স্বামী গত দুমাস ধরে অসুস্থ , তাই সেও টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে । অনেক প্রতিকুলতার মাঝে থেকেও জয়া এস এস সি পরিক্ষায় "এ প্লাস" পেয়ে পাস করে । কিন্তু কলেজে কিভাবে ভর্তি হবে ? ওদিকে মামারা জয়ার বিয়ের প্রস্তাব এনেছে । কি করবে সে ! জয়া জানে না ওর কপালে কি আছে । এমন মুহূর্তে হাত বাড়ায় বন্ধু বিন্দু । বিজ্ঞের মত বলে
- "আরে তুই এত ভাবছিস কেন ? আমি থাকতে তোঁর পড়াশোনা বন্ধ হবে কি করে ভাবলি ! " এই আশ্বাস জয়াকে আশ্বস্ত করলেও বিবেককে শান্ত করে না আর তাই মাকে বলে-
- " মাগো , আমি দেখ এইচ এসসিও অনেক ভাল করব । তারপর একটা চাকরী নিতে পারব । যে যাই বলুক এখন আমাকে বিয়ে দিও না মা প্লিজ " মা নিরুপায় , বয়স হয়েছে । বেঁচে আছে শুধু কিছু ওষুধের জোরে । খক খক করে কাশি দিয়ে চোঁখের পানি মুছে আর বলে-
- " মারে , আমি পারলে কি আর কারও কাছে ছোট হইতে হয় আমার মাইয়ার , কি করুম ক ? ছেলে ভাল , ব্যাংকের কেরানী , দুইবেলা ভাত তো খাইয়া থাকতে পারবি । " একটু থেমে আবার বলে "সাথে শুধু বুড়া মা , এক বোন হের বিয়া হইয়া গেছে , তুই অনেক ভালা থাকবি রে মা ।"
জয়া জানে আর কোন উপায় নেই ।বিন্দুর বাবার টাকা সে কোনভাবেই নিতে পারবে না । বিন্দুরা অনেক বড়লোক , এরকম কয়েকজন জয়ার খরচ বহন করার মত ক্ষমতা আছে । কিন্তু সে কেন এমন করে নিজেকে ছোট করবে বন্ধুর বাবার টাকার কাছে ! বিন্দুর নিজের হলে একটা কথা ছিল । এর চেয়ে বিয়ে করাই ভাল ।
ছেলে পক্ষ নিজে থেকে জয়াকে পছন্দ করেছে । যেদিন দেখতে এসেছিল বিন্দুও জয়ার পাশে ছিল । দুজনের কারোরই ছেলে পছন্দ হল না । ছেলে অনেক কালো তার উপর শুকনা , ছোট্র একটা ভুড়ি আছে । গরমের মধ্যে আবার স্যুট টাই পরে এসেছে । কালো কোন ব্যাপার না কিন্তু জয়াকে দেখে কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিল আর ফ্যাস ফ্যাস করে কথা বলে -
- "তুমি কোন ক্লাসে পড়"?
বিন্দুকে এমনভাবে বলেছে ভেবেছে বিন্দু জয়ার ছোট । মনে মনে হেসে খুন জয়া । আর বিন্দুটা ফ্যাস ফ্যাস গলায় নকল করে বলে -
-"হামি এইটে পড়ি " বলে কি হাসি সে ।
এই ছেলেকে জয়া বিয়ে করবে না , মনে মনে স্থির করে ফেলেছে ।
বিন্দু একটু মস্করা করে ছেলেকে বলে
আচ্ছা আপনি এত কম বয়সে কেন বিয়ে করছেন ?
ছেলে বেশ লজ্জা পায় কিন্তু বেশ খুশি হয় কথাটা শুনে ছেলের বন্ধু , সে উত্তর দেয়
-"জী আসলে আমার বন্ধুর অনেক শখ বাচ্চা বয়সে বিয়ে করবে । তাহলে ইয়াং থাকতে থাকতে আরও তিনটা বিয়ে করতে পারবে ।তারপর সব কটাকে একসাথে নিয়েই হানিমুন করতে পারবে " ছেলেটা মুখ টিপে হাসছে তাই দেখে বিন্দু আরও দুষ্টুমি করে
- " আচ্ছা আপনি কি পার্লার থেকে সেজে এসেছেন ? অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে " কথাটা শুনে একটু নড়েচড়ে বসে ছেলে ।
-" এমন সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলে ওয়ান পিসই পাবেন " এবারও বন্ধুটিই উত্তর দেয় ।
বিন্দু চোখঁ কপালে তুলে বলে "তা যা বলেছেন , আপনার বন্ধুকে দেখে নাগ অর্জুনও লজ্জা পাবে " কথা আর বাড়াতে পারে না মামা ঘরে ঢুকে ।জয়াকে নিয়ে ভীতরে যেতে বলে ।
ভীতরে গিয়ে সেকি হাসি বিন্দু
- "ইস জয়া তোর বর সারা বছর ঘোড়ার মত চিঁ চিঁ করে কথা বলবে , যা দারুন হবে না " বিন্দু ফ্যাস ফ্যাস করে বলে-
- "জয়া সোনা আমার বুকে আস , একটু আদর কর বউ , এই বলে তোকে......" কথা শেষ করে না বিন্দু দেখে জয়ার চোঁখে জল ।
-"কিরে পাগলি আমিত মজা করছি" কথাটা বলেই কেঁদে ফেলে সে জয়াকে জড়িয়ে ধরে । কারও কিছুই করার নেই সবাই নিরুপায় । কিছুক্ষন কেঁদে দুজনে শান্ত হয় ।
- "জয়া তুই আমাদের বাসায় চল , আমি আব্বুকে বললে দেখবি তোর মামাদের বোঝাবে ,এ বিয়ে হতে দেবে না " বিন্দু কথাটা বলে ঠিকই কিন্তু বিয়ের পাকাঁ কথা যে দেয়া হয়ে গেছে । দুজনে ভেবে পায় না কি করবে ।

আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা জয়ার বিয়ে । বাসা ভর্তি সব আত্মীয় স্বজন , আজ গায়ে হলুদ । সবাই খুব খুশি কিন্তু জয়া কোথায় ? জয়া পালিয়ে গেছে বিন্দুদের বাসায় । বিন্দু ওর বাবাকে সব ভেঙ্গে বলল-
-"জানো বাবা জয়া অনেক ভাল ছাত্রী, আমি কোচিং এ পড়ে , বাসায় মাষ্টারের কাছে পড়ে যে রেজাল্ট করেছি , জয়া এসব কিছুই না করে সেই একই রেজাল্ট করেছে " জয়াকে যে সব নোট গুলো বিন্দু দিয়েছে তা কি বলা যায় ? বাবার গম্ভীর কন্ঠ
- " তার মানে তুমি বলতে চাইছ , তোমার চেয়ে জয়া অনেক ভাল ? তুমি বলতে চাইছ আমি তোমার পিছনে মিছে মিছি টাকা খরচ করেছি "? বিন্দু একটু ঘাবড়ে যায়
-"জ্বী মানে , আ…..মি ঠিক তা বলতে চাচ্ছি না," বিন্দু আমতা আমতা করতে থাকে
- "এই সব মিডল ক্লাস মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করেছ বলেই , আজ তুমি এই দেশ ছেড়ে যেতে চাও না । আমি এমনটা আশা করিনি ।মানুষ বিদেশে পড়ালেখা করতে যাবার জন্য পাগল হয়ে আছে , কিন্তু সুযোগের অভাবে যেতে পারছে না , আর তুমি? " একটু থেমে আবার শুরু করেন
- "আর যার সমস্যা তাকেই মিটাতে দাও , তুমি কেন আগ বাড়িয়ে ঝামেলায় জড়াচ্ছো "? গম্ভীর স্বরে বলে বাবা , রাগে তার সারা শরীর কাপছে
- " বাবা জয়া আমার সব চেয়ে ভাল বন্ধু......... "সমুদ্রের সবটুকু নোনা জল আজ বিন্দুকে যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তবুও ক্ষীন স্বরে বলে বিন্দু ।
বাবাকে এমন করে জবাব দিতে হবে সে কোন দিন ভাবেনি । বাবা যেন সিংহের মত গর্জে উঠলেন
-" ভীতরে যাও "!
মাথা নীচু করে নীজের রুমে যাবার আগে একবার জয়ার দিকে তাকাতে খুব মন চাইল কিন্তু চোঁখ তুলতেই দেখে জয়া নেই , জয়া চলে গেছে । বিন্দু ভাবে বাবা নয় , সে নিজে জয়াকে ডেকে এনে এমন গুরুতর অপমান করেছে । সে নিজেকে কোন দিন ক্ষমা করতে পারবে না । এই মুখ নিয়ে কি করে সে জয়ার সামনে যাবে? বাবা এমন ব্যবহার করবে বিন্দু কোন দিন ভাবেনি । সে এই বাবাকে চেনে না । মা মারা যাবার পর থেকে বাবাই তাকে দুজনের ভালবাসা দিয়ে বড় করেছে । বিন্দুর চোঁখে পানি আসে এমন ধরনের কোন কাজতো দূরে থাক , বাবা জোরেও কোন দিন কথা বলেনি । তবে বাবার আজ কি হয়েছে?

(২)

বাসর ঘরে জয়া কেঁদেই যাচ্ছে , তার কান্না কোনভাবেই থামছে না । জীবন তার জীবনে আসা প্রিয়তমার কান্না কিভাবে থামাবে বুঝে উঠতে পারছে না । ভাবছে রাজুকে একটা কল দেবে কিনা । বলবে "এই শালা , তোর বউকি বাসর রাতে এত কানছিল ? "
কিন্তু এখন এত রাতে কল দেয়া ঠিক হবে না । কি বলবে ভেবে পেল না সে । কিন্তু কিছুতো বলা দরকার । জয়া এমন করে কাঁদছে তা দেখে তাঁর নিজেরই কান্না পাচ্ছে । মেয়েরা মায়ের বাড়ী ছেড়ে আসতে এত নিশ্চয় কাঁদে না । বহু সাহস সঞ্চয় করে জীবন বলে-
- "জয়া এত কেন কাঁদ ! প্লিজ বলনা আমাকে । এত কেঁদো না , কাল আমি নিজে নিয়ে যাব মায়ের কাছে , প্লিজ কেঁদ না " কথাটা শুনে যেন আরও জোরে কাঁদে সে ।
জয়া কি করে বলবে যে সে আসলে সবাইকে ছেড়ে আসার জন্য কাঁদছে না , কাঁদছে তার প্রিয় বন্ধুটিকে জীবনের চরম রোমাঞ্চকর মুহুর্তে কাছে পায়নি বলে । হু হু করে কেঁদে যায় জয়া । জীবন আর সইতে পারে না এবার সে বের হয়ে বাথ্রুমে যায় । ফোন করে রাজুকে
-"হ্যালো " ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে রাজু । জীবনের গলা শুনে ঘুম ছুটে যায়
-" আরে হালা বাসর ঘর থাইক্কা কল দিসোত " আনন্দে উত্তেজিত সে ।
- " শোন " জীবন ভুলে যায় আসলে কেন কল দিয়েছে ।
- " হ ,ক , কি কইবি " আগ্রহভরে জিজ্ঞাসা করে রাজু ।
জীবন আমত আমতা করছে , কলটা করেই সে বেকুব বনে গেছে আবার কি ভেবে বসে রাজু তাই ভাবছে ।
- " না কিছু না , নার্ভাস লাগছে , তাই কল দিলাম " জীবন কোন রকমে কথাটা বলে ।
- " যা হালা ঘুমডাই মাডি হরলি , ভাবলাম না জানি কি , ধুর " বিরক্তিতে ভরা কণ্ঠে বলে রাজু ।
- "সরি" বলে লাইন কেটে দেয় জীবন ।
ঘরে ঢুকে দেখে জয়া কান্না থামিয়েছে । ভীষন খুশি হয় সে কিন্তু এখন কি করবে ভেবে পায় না । সে ভাবে সেই কিশোর বয়স থেকে কত স্বপ্ন দেখেছে এই রাতটাকে নিয়ে । অথচ আজ নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে । হঠাৎ মনে পড়ে যায় রাজুর একটা কথা -
" শোন , বউকে প্রথম রাত থাইকা বউ না ভাইবা , যদি একজন বন্ধু ভাবিস , তাইলে দেখবি অনেক জড়তা কাইটা যাইবো ।"
জীবন ঠিক তাই করল । জয়ার পাশে গিয়ে বসে খুব নরম সুরে বলল
-" জয়া পানি খাবে?" জয়া অবাক হয়ে গেল ।
বিয়ের পরে এই প্রথম জীবনের দিকে তাকাল সে । মনে মনে ভাবল , জীবন কি করে ওর মনের কথা বলতে পারল ! আসলেইত তার অনেক তৃষ্ণা পেয়েছে । একটু পরে চোঁখ নামিয়ে নিয়ে "হ্যাঁ "সুচক মাথা নাড়ে জয়া । আর ভাবে নাহ্ যতটা খারাপ দেখেছিল প্রথমদিন , এতটা খারাপ দেখতে সে না । কথাটা ভাবতেই একটা শিহরন খেলে গেল মনে । শুধু পানি না , সাথে মিষ্টিও এনেছে জীবন । ইস্ খুব ক্ষিদা পেয়েছে , মনের যে একটা বন্ধন হয় তা কি এখনই বাঁধা পড়েছে ? না হলে জীবন কি করে জয়ার মনের কথা বুঝতে পারছে ? হাত বাড়িয়ে মিষ্টি নিতে যায় জয়া , কিন্তু তার আগেই জীবন তাঁর মুখের কাছে কাঁটা চামুচে গাঁথা মিষ্টি তুলে দেয় পরম ভালবাসায় । জয়া নিজেও জানে না কেন আরও অনেক বেশী কান্না পাচ্ছে তাঁর ।
-" চল ঘুমিয়ে পড়ি , অনেক ধকল গ্যাছে আর সকালও হয়ে এসেছে " জীবন কথাটা বলে তাকায় জয়ার দিকে । জয়া বলে
-"ঠিক আছে " মনে মনে ভাবে মানুষ এত ভাল হয় ?
কিছুক্ষন দুজনে নীরবে কাটিয়ে দেয় । তারপর জীবন নিরবতা ভেঙ্গে বলে-
- " জয়া , আমার জন্য যদি তোমার কোন দুঃক্ষ বা কষ্ট হয়ে থাকে, প্লিজ আমাকে বল , আমি তোমার চোখের পানি দেখতে চাই না । তার জন্য আমাকে যা করতে হয় , আমি জীবন দিয়ে হলেও করব । শুধু তুমি হাসি খুশি থেক ।"
এবার জয়ার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নেয় জীবন । একটু থেমে আবার বলে
- "তুমি চাইলে আমি তোমাকে অনেক দূর পড়াশুনা করাব " কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবার শুরু করে
-" আজ থেকে আমার এবং তোমার দুজন মা , আর এই দুটি পরিবারের আনন্দই আমাদের আনন্দ। আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী আমাদের পরিবারের সবার দ্বায়ীত্ব পালন করব ।"
জয়া অবাক ! যে মানুষটাকে ঘিরে সে আজ কয়টা দিন কত বাজে চিন্তা করেছে , সে আসলে অনেক ভাল একজন মানুষ । জীবন অনেক ভালবাসে জয়াকে । না হলে এমন করে কেউ বলতে পারে না । এমন একটা জীবন সঙ্গীইতো জয়ার দরকার । যে কিনা বন্ধুর মত পরম স্নেহে বুকে টেনে নেবে , দুঃখ -কষ্ট বেদনা সব ভুলিয়ে দেবে । জয়া এই মানুষটাকে অনেক বেশী ভালবাসবে , সবার চেয়ে অনেক বেশি ভালবাসবে । নির্দ্বিধায় , পরম শ্রদ্ধা আর নির্ভরতায় , অফুরন্ত ভালবাসায় , জয়া নিজেই আত্বসমর্পন করে জীবনের বাহুডোরে । সে আজ অনেক সুখি এই মানুষটাকে পেয়ে । জয়া শুধু ভাবছে বিন্দু জানলে না জানি কত খুশি হবে । কথাটা বিন্দুকে জানানো দরকার । আজ দুদিন দেখা হয় না দুজনের । সেদিন ওদের বাসা থেকে চলে আসার পর থেকেই অস্থির হয়ে আছে জয়া । কিন্তু বিন্দু বিয়েতে এল না কেন ? কাল ফোন করবে সে ,বিন্দুকে পরিচয় করিয়ে দেবে জীবনের সাথে ।

( ৩)

বিন্দুর বাবা কানাডা চলে যাবার জন্য সম্পূর্ণ তৈরী হয়ে ছিলেন । অনেকদিন ধরেই বিন্দুর ফুফু ভিসা পাঠিয়েছেন কিন্তু বাবা জানেন মেয়ে এই দেশ ছেড়ে,এই শহর ছেড়ে যেতে চাইবে না । কিন্তু যেভাবেই হোক বিন্দুকে নিয়ে এই শহর ছেড়ে ,এই দেশ ছেড়ে যেতে হবে কারন বাবা ব্যাবসায় মার খেয়েছেন । বাবার সব চেয়ে কাছের বন্ধু , যাকে কিনা সে অনেক বেশি বিশ্বাস করেছেন সেই বন্ধুই পিঠে ছুরিটা বসিয়েছেন বেশ গর্বিত ভাবেই । বিন্দুদের সহায় সম্পত্তি বেশির ভাগই ব্যাঙ্কের ঋন শোধ করতে চলে গেল । অনেক খারাপ অবস্থা বিন্দুর বাবার আর তাই তিনি ঐদিনই বোনকে ফোন করে বলেছিলেন বিন্দুকে নিয়ে দুদিন পরেই কানাডা আসছেন । দেশের সাথে বাবা আর কোন বন্ধন রাখতে চাননা । তার জীবনে এই দেশে পিছুটান বা কোন আকর্ষণ কোন কিছুই নেই। বিন্দু কোনদিন বাবার কোন কিছুতেই কখনও মাথা ঘামায়নি । তাই এসবের কিছুই সে জানে না । বাবার দুঃসময়ের সব কিছু জানতে পেরে বিন্দু বাবার বিরুদ্ধে যাবার আর সাহস পেল না । আসলে সে বাবাকে কিছু বলে কষ্ট দিতে চাইল না আর তাই চলে গেল বাবার হাত ধরে । প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে , সুদূর কানাডায় । সারাটা প্লেনে বসে বিন্দু জয়ার কথা ভাবে । সে ভাবে জয়া তাকে ছাড়া বাসর করবে না । সে জানে জয়া অনেক কাঁদছে তাকে না পেয়ে । বিন্দু জানে না কেন একটা অপরাধ বোধ প্রতিনিয়ত তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে । আর তাই সে জয়ার সাথে শেষ দেখাটাও করে আসতে পারেনি । তবে সে যখন প্লেনে ঊঠেছে বিন্দু সিওর একই সময়ে জয়া তখন শ্বশুর বাড়ীতে যাবার জন্য ফুলে সাজানো গাড়ীতে উঠেছে । বিন্দু চোঁখ মুছতে মুছতে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে "আমি আসব আবার ফিরে মায়ের কোলে , জয়া শুধুই তোঁর জন্য , তোঁর বন্ধুত্বের টানে " ।

জীবন আর জয়ার সংসার বেশ সুন্দর চলছে । কিন্তু সংসারে অসুস্থ শাশুড়ি আর দুমাস না যেতেই প্রথম সন্তানের আগমন জয়াকে আর কলেজে ভর্তি হতে দিল না । তাতে কোন রকম আফসোস নেই জয়ার , সে ভাবে আল্লাহ এটাই লিখেছিল কপালে । জীবন জয়াকে অনেক ভালবাসে । দেখতে দেখতে আঁটটা বছর কেটে যায় , এরই মাঝে তাদের ঘর আলো করে দুই ছেলে আর এক মেয়ের জন্ম হয় । একদিন কাজ থেকে বাসায় ফেরার পথে জীবন অসুস্থ হয়ে পড়ে । সবাই ধরাধরি করে রিক্সাই তুলে নিয়ে যায় পাশের একটি ক্লিনিকে । কিন্তু ততক্ষনে দেরী হয়ে গেছে । জয়ার সাথে শেষ দেখাটাও হয় না জীবনের । ডাঃ বলে সে হার্টএটাক করেছে । জয়া জানে জীবন ইদানিং অনেক দুশ্চিন্তায় ছিল , আর তাই সিগারেটের পরিমানটাও বেড়ে গিয়েছিল । জীবন যা আয় করে তা দিয়ে সংসার চালাতে সে হিমসিম খাচ্ছিল । জয়া পড়ে গেল অথৈ সাগরে । সে কোন দিন তার এই মফঃস্বল শহর ছেড়ে কোথাও যায়নি । কিন্তু বাঁচতে তাকে যে হবেই । এখানে সে কেমন করে বাঁচাবে সবাইকে ? তার যে যোগ্যতা তাতে সে কোন চাকুরী পাবে না আর যে কাজ সে করবে তা এই শহরে পরিচিত জনদের সামনে করা সম্ভব না । আর তাই তিনটা অবুঝ বাচ্চা আর পুত্র শোকে অন্ধ মাকে নিয়ে জয়া পাড়ি জমায় বিলাস বহুল ঢাকা শহরে ।

(৪ )

শুরু হয় নতুন জীবন যুদ্ধ । জয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে" জীবন , তুমি আমাকে কাঁদতে নিষেধ করেছিলে । অথচ দেখ , সেই কান্নাই যে চীর সঙ্গী হয়ে গেল আমার । এমন করে কেন আমাকে একা করে গেলে? আমাকে যে অনেক বড় গুরু দায়িত্ব দিয়ে গেলে , আমি কি পারব সফল হতে ?” একটা চাঁপা দীর্ঘশাস মনের গভীর থেকে বের হয়ে আসে নিজেরই অজান্তে।"
যেহেতু জয়া পড়াশুনা বেশিদুর করেনি সেহেতু সে কোন চাকুরী পায়না কিন্তু সবাইকে তো খেয়ে বাচঁতে হবে । প্রথমে সে গার্মেন্টেস-এ চেষ্টা করে কিন্তু সেখানে পরিচিত কোন মাধ্যম থাকতে হবে ,কিন্তু জয়ার যে কেউ নেই । আর তাই সে নিরুপায় হয়ে বাঁচার তাগিদে বাসায় বাসায় কাজ করে । দেখতে সুন্দরী বলে অনেক বাসায় কাজ দিতে চায় না । জয়া নাম বদলে ফেলে , মুখে কালী মেখে এক হাত ঘোমটা টেনে ছুটা কাজ করে যায় কয়েকটা বাসায় । বড় ছেলেটা রাস্তায় , পার্কে বাদাম বিক্রি করে ।ছোট মেয়েটা আর ছেলেটাকে নিয়ে শাশুড়ি থাকে বাসায় । বাসা বলতে রেল লাইনের ধারের এক বস্তি । একটা ঘর কিন্তু ভাড়া অনেক বেশি , তার চেয়ে মাস্তানের উৎপাত আরো বেশি । রাত হলে যেন এক বিভীষিকার থাবা নেমে আসে এই বস্তির উপরে । জয়া এমন করে বেশীদিন এখানে থাকতে পারবে না । নিজেকে যতটা সম্ভব কাপড়ে ঢেকে রাখে সে । ভাবে ফিরে যাবে নিজের শহরে কিন্তু সেখানে কি করবে? কেমন করে এই মাসুম বাচ্চাদের বাঁচাবে ? তার উপর অন্ধ মায়ের দায়িত্ব । আধ পেটা খেয়ে দিন চলে যায় কোন রকমে ।প্রায় জয়ার মনে পড়ে বিন্দুর কথা "জয়া লেখাপড়া মেয়েদের জন্য খুব দরকার । দিনে দিনে দৈনন্দিন অবস্থা যা হচ্ছে , তাতে একজনের আয়ে সংসার চলবে না । আর তুই যত শিক্ষিত হবি , তত তোর ফ্যামিলির সবার কাছে সম্মান পাবি । বিপদের দিনে এই শিক্ষাই তোর ঘরে আলো জ্বালবে ।" জয়া সব বুঝেছিল কিন্তু জীবন যাদের দৈব জালে বাঁধা , তাদের যে স্বপ্ন দেখাও মানা ।

এভাবে কেটে যায় কষ্টের জীবন । সারাদিন শত ব্যাস্ততায় সব ভুলে থাকা যায় কিন্তু রাত যত গভীর হয় , কষ্টগুলো হু হু করে ঝড় বাতাসের মত হ্রদয়ের আঙ্গিনায় কশাঘাত করে । বিন্দুকে মনে পড়ে । আজ বিন্দু যদি পাশে থাকত তাহলে কিছু না হোক কষ্টগুলোকে ভাগাভাগি করতে পারত । আচ্ছা বিন্দু নিশ্চয় এতদিনে ভুলে গেছে জয়াকে ! ও নিশ্চয় বিয়ে করে এত দিনে সংসারি হয়েছে । বিন্দুঁর কয়টা বাচ্চা ? আজ যদি জয়া ওর সামনে দাঁড়ায় ওকি চিনতে পারবে ? জয়া জানে না । ভাবছে ছোট ছেলে আর মেয়েটাকে কষ্ট করে হলেও স্কুলে পাঠাবে । বুড়ি সারাদিন শুধু খক খক কাঁশে আর চিল্লা চিল্লি করে অহেতুক । আর যাই হোক এভাবে বেশি দিন বেঁচে থাকা যায় না । কিন্তু কি করবে সে?

শেষ

ওদিকে আজ দীর্ঘ দশ বছর পরে দেশে ফিরে বিন্দুঁ ছুটে যায় জয়াদের বাসায় । কিন্তু জয়ার ভায়ের কাছ থেকে যে ঠিকানা পেয়েছে সেখানে জয়াকে সে পায় না । আজ আবার সেই ঠিকানায় আসে বিন্দু । একজন মহিলাকে হেটে যেতে দেখে জিজ্ঞাসা করে
- "শুনুন , এখানে জয়া নামে কাউকে কি চেনেন আপনি ?"
মহিলা নিজের ঘোমটা টা টেনে আরো দীর্ঘ করে । কথা বলতে পারছে না সে , নড়তে পারছে না সে । মহিলা এ কাকে দেখছে তাঁর সামনে ? আজ এতটা বছর পরেও একটুও পরিবর্তন হয়নি সামনে দেখা মানুষটির । বিন্দু এখনো মনে রেখেছে জয়াকে ? ছুটে গিয়ে প্রিয় বান্ধবীর ঘাড়ে মাথা রাখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল কিন্তু ......!
-"আপনি কি চেনেন ?"
বিন্দুর প্রশ্নে এবার যেন বাস্তবে ফিরে আসে মহিলা , মাথা ঝাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে সে
- "নাহ্ চিনি না "
আর দাঁড়ায় না মহিলা দ্রুত গতিতে হেটে যায় । বিন্দু কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না । কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যায় সে । কিন্তু ওর সমস্থ, মন , হ্রদয় বলছে এই মহিলাকে সে চেনে । কেন এমন অস্থির লাগছে তাঁর ? মহিলার কন্ঠ শুনে কেন বিন্দুর হৃদয়ে একটা মৃদু ঘন্টা বেজেঁছিল ? কেন সমস্ত ইন্দ্রীয় ধ্বনিত হয়ে বারবার মহিলার কাছে নিজেকে টেনে নিতে চাইছে ।
বিন্দু পরের দিন সকালে সেই মহিলা যে দিকে হেঁটে গিয়ে অদ্রশ্য হয়ে গিয়েছিল , সেই দিকেই ছুটে যায় । দেখে একটা অন্ধ বুড়ী সাথে ছোট ছোট দুটো বাচ্চাকে নিয়ে বসে মুড়ি খাচ্ছে ।
- "আচ্ছা এখানে জয়া কোথায় থাকে বলতে পারেন "? বিনয়ের সুরে শুধায় বিন্দু ।
মেয়েটার নাক বেয়ে সর্দি পড়ছে , মুড়ি চিবুতে চিবুতে একটু স্বাদ নেয় সে । তারপর কি যেন বলে ফিস ফিস করে ছেলেটার কানে কানে । ছেলেটা বলে উঠে
- "ও দাদী মায়রে না জয়া কইয়া ডাহে মামু '?
বিন্দু চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয় , এই খানে তার প্রান প্রিয় জয়া থাকে ! যে কিনা সেই ছোট্র বেলা থেকে বিন্দুকে কিছু না খাইয়ে নিজে খায়নি । পিঠা, মোয়া , নারিকেলের নাড়ু, নিজের ভাগটুকু সে বিন্দুর সাথে ভাগাভাগি করেই আনন্দে আত্বহারা হয়েছে । জয়ার বাসায় সামান্য কিছু ভাল রান্না হলেও বিন্দুকে না নিয়ে কোন দিন জয়া খায়নি । মা, ভাই বোন না থাকার কষ্টটা সে এই মানবীর কারনেই ভুলে থাকতে পেরেছিল । আজ সে কি অমানবীক কষ্টের শিখরে জীবন যাপন করছে । নিজেকে অনেক ভাগ্যবতি ভাবে বিন্দু , এমন বন্ধুর টানে আজ এতটা বছর পরে দেশে আসতে পেরে । চোখ দুটো জলে ভিজে যায় ।
-"তোমাদের মা কি বাসায় আছে?" বিন্দু জিজ্ঞাসা করতেই বাচ্চা দুটো না সুচক মাথা নাড়ায় ।
-"কখন আসবে সে?" এবার বুড়ি কথা বলে খক খক সুরে
- " কেডা আপনে , এত কতা জিগান ক্যা ? খাওন নাই কাল থাইক্কা , কারো এত কতা কউনের শক্তি নাই । "
বিন্দু আর দাঁড়ায় না , চলে আসে । সহ্যের সীমানার বাঁধ ভেঙ্গে যায় । আর নিজেকে দাঁড় করিয়ে রাখতে শরীর মন সায় দেয় না । বিন্দু সব সময় ভেবেছে জয়া অনেক সুখে আছে । হাজার ব্যাস্ততার মাঝেও সে জয়ার কথাই ভেবেছে আর জেদ ধরে পড়া শুনা , চাকুরী সব করেছে , নিজেকে মাতৃভূমির যোগ্য করে তুলতে । সে ফিরে আসলে যেন এই দেশ তাকে গ্রহন করে । যেন নিজের দেশে নিজেকেই বোঝা না ভাবতে হয় ।
বিন্দু অনেক বাজার করে । মাছ মাংস , ফল, চাল ,ডাল, বিস্কিট , জুস, সব নিয়ে সোজা হাজির হয় জয়ার দ্বারে । কিন্তু একি ! দরজা খোলা কিন্তু কেউ নেই ভীতরে । বুকের ভীতরটা খচ খচ করে বিঁধে । নিশ্চয় জয়া বুঝে গেছে যে বিন্দু তাকে ধরে ফেলেছে আর তাই চলে গেছে । কিন্তু কেন? কেন জয়া বিন্দুকে এড়িয়ে চলছে? কোন সে অভিমানে? ঠায় বসে রইল সে ।
একবার বিন্দু পুকুরে পা ধুতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল পানিতে । আর জয়া পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সেকি চিৎকার । দুজনে জড়াজড়ি করে কেউই পানি থেকে উঠতে পারছে না । দুজনের কেউই সাতার জানে না । পাশ থেকে হক চাচা হেটে যাচ্ছিল তিনিই দুজনকে তুলে আনে পুকুর থেকে । বিন্দু জয়াকে বলেছিল
-"তুই কেন ঝাঁপ দিলি ? তুইওত সাতার জানিস না " জয়া ফোঁকলা দাঁতে আধোঁ ভাষায় বলেছিল
- "তুই যে ভয় পাবি , তাই আমি তোঁকে ধরে রাখতে ঝাঁপ দিয়েছিলাম "
স্মৃতি মনে করে কান্না ভেজা চোখেও হেসে ফেলে বিন্দু । কতক্ষন বসেছিল এভাবে সে জানে না । বাচ্চাদের কথায় সে চোঁখ তুলে তাঁকায় । দেখে বাচ্চারা ওর আনা খাবারগুলো গোগ্রাসে খাচ্ছে । বিন্দুর চোঁখ জলে ভেসে যায় ।এতক্ষন সবাই বুড়ি দাদীকে নিয়ে হাস্পাতালে ছিল । সে সেখানেই আছে । বিন্দু হাত বাড়িয়ে মহিলাকে কাছে টেনে ঘোমটা সরাতেই , প্রিয় মানুষটার নোনা জলে ভরা চোঁখ দুটো আগে নজর কাড়ে । দুজনেই স্থম্ভিত , ভাষাহীন , অপলক চোঁখে এতদিনের না বলা সব কথা বলে যায় ।
-"আমাকে কাল মিথ্যে কেন বললি হু" নীরবতা ভেঙ্গে অভিযোগের সুরে বলে বিন্দু ।
- "আপনি ভুল করছেন , আমি আপনাকে চিনি না " জয়া ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে কথাগুলো বলে ।
- " এখনও মিথ্যে বলছিস? আমাকে তুই চিনিস না? ঠিক আছে তাহলে আমি চলে যাই " কথাটা বলেই এক পা আগায় সে ।
এবার আর জয়া নিজেকে ধরে রাখতে পারে না ,। বিন্দুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে । দুজনে অনেক কাঁদে , যেন জমে থাকা বরফ আজ এতদিন পর ভালবাসার উষ্ণতায় গলে গলে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে ।
অনেক বোঝানোর পরও জয়া কোনভাবেই বিন্দুর কোন টাকা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে । সে বিন্দুকে বলে
-"এই যে টাকা পয়সা , ধন দৌলত এ সবের কারনেই মানুষের সাথে যত দ্বন্দ্ব আর ভাঙ্গনের সুত্রপাত । আমি সব সইতে পারব , তোর সাথে জীবনে কোন দিন দেখা না হলেও আমি মরে যাব না । কিন্তু তোর সাথে আমার বন্ধুত্বের কোন বন্ধন নেই , এটা মেনে নিতে পারব না । তাহলে যে আমি বেঁচে থেকেও মরে যাব ।"
বিন্দু কোন কথা শুনতে চায় না । পরিশেষে বিন্দুর জেদ আর জয়ার আত্বগরিমা বন্ধুত্বের বিশালতায় আত্বসমর্পন করে । ঠিক হয় বিন্দু দুইটা বুটিকের দোকান দিবে এবং এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব ভার জয়ার । বিন্দু মূলধন দিবে আর জয়ার পরিশ্রম । যেহেতু জয়া ষ্টোর সামাল দিবে সেই জন্য সে মাসোহারা পাবে এবং ব্যাবসার ৩০% শেয়ার জয়ার , বাকী ৭০% বিন্দুর। বিন্দু এতেও খুশি বন্ধুর জন্য এটুকুও করতে পেরে নিজেকে যোগ্য বন্ধু মনে করে সে । জয়া বাচ্চাদেরকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয় । আর পিজি হাস্পাতালে এক মাস রোগে ভুগে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে জয়ার শাশুড়ী শেষাবধী হেরে যায় । মৃত্যুর আগে জয়ার হাত ধরে অনেক কেঁদে বলেছিল
-"মা , পরের জন্ম বইলা কিছু আছে কিনা আমি জানি না , তয় যদি থাকে তাইলে আল্লাহ যেন তরে আমার পেডে জনম দেয়, তুই আমার নিজের মাইয়া হইয়া আমার কোলে আসিস গো মা । "
জয়া মেয়ে হয়ে জন্মাবার তিন রুপের দুই রুপে সফলতা অর্জন করে । যা তাকে নারী হিসাবে গর্বিত করে আপন মহিমায় ।
বিন্দু বছরের তিনমাস দেশে আর নয়মাস কানাডা থাকে । দেখতে দেখতে দুই বছর চলে যায় । বিন্দু দেশে এসে জয়ার সাথেই থাকে । ভাবছে দেশে একটা চাকুরী পেলে থেকে যাবে আর যাবে না ভীনদেশে । স্বর্গসুখ বলে যা কিছু তা এই নিজের দেশেই আছে , পৃথিবীর আর কোথাও নেই । এখন জয়া আর বিন্দুর বাড্ডা এবং গুলশানে চারটা দোকান, ব্যাবসা অনেক ভাল । বিন্দু কানাডাতে বুটিকের তৈরী জিনীষ রপ্তানি করতে কয়েকটা মার্কেটের মালিকের সাথে কথা বলে এসেছে । বিন্দু আর জয়ার আর একজন বন্ধু হয়েছে "রনি" । রনি আর বিন্দু খুব তাড়তাড়ি বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হবে । জয়ার আর কোন কষ্ট থাকে না এই বিন্দু নামের কিশোরী বেলার বন্ধুর কারনে । যে কিনা আজ জীবনের আলোকিত অধ্যায়ের নিখুঁত প্রহরী হয়ে দাড়ায় । জয়া আর বিন্দু , দুজনের এই বন্ধনে ভালবাসা আর বিশ্বাসের বীজ বপন হয়েছিল সেই ছেলেবেলায় , খেলার ছলে কৈশোরের প্রত্যূষে ।

আছে কজন এমন দরদী বন্ধু বল
এ নিঠুর ধরায় ,
বিবর্ণ পৃথিবীকে রঙধনু রঙ দেয়
ভালবাসার ফল্গুধারায় !!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সেলিনা ইসলাম @স্বপ্নীল>এমন কামনা প্রতিটি সমাজ সচেতন মানুষেরই । আল্লাহপাক আমাদের সবার প্রার্থনা কবুল করুন আমীন ।ধন্যবাদ
স্বপ্নীল গল্পটি পড়িয়া ভালোবাসার ফল্গুধারা বহিয়া গেলো। জয়া আর বিন্দুর ভালোবাসা যেন নিখুঁত প্রহরী হয় সমাজের জন্য তাহাই কামনা করি।
সেলিনা ইসলাম সবাইকে অনেক ধন্যবাদ @ বিন আরেফিন > বেশ জটিলই মনে হলো আপনার মন্তব্য তথাপি ভালো লাগলো ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা সবাইকে
বিন আরফান. অসাধারণ বললে বেশি হয়ে যায়. তেলও বটে. তার পরেও অতীব যোগ করেই অসাধারণ বললাম. কেননা গল্পটি সেই মানের. বানানের কিছুটা ভোল চোখে পরছে যেটা আমারও হয়. তথাপিও আগামীতে নজরে রাখবেন. আর সেই অনুরোধ রিপিট করলাম না. শুভো কামনা রইল.
নাঈমা সুলতানা বন্ধুর জন্যই বন্ধুত্ব। ভালো লাগলো।
শাওন খান সুন্দর গল্প. শুভ কামনা ।
Arif Hossain অনেক ভালো।
সেলিনা ইসলাম @সূর্য > হয়ত বা চোখে পড়ে না কিন্তু বন্ধুকে সামর্থ্যের মধ্য থেকে বিপদে সাহায্য সহযোগিতা করবার মত বন্ধু আমি নিজে দেখেছি । ধন্যবাদ ।
সেলিনা ইসলাম @আশা> সাদামাটা ভাষায় লেখা আমি নিজেও খুব পছন্দ করি আর আমার মনে হয় সাদামাটা ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে পাঠকের সংখ্যাই বেশি । আমি মনে করি লেখা সহজ হলে মানুষের মনে দাগ কাটে বেশি । আমি আপনার সাথে একমত এমন বন্ধুত্ব নেই বললেই চলে কিন্তু এই গল্প পড়ে হয়ত এমন বন্ধুর স্রষ্টিও কিন্তু হতে পারে ,হতে পারে জয়ার জীবন লেখাপড়া করে খুব সুন্দর তখন তো এমন বন্ধুর খুব বেশি প্রয়োজন নেই না ? ধন্যবাদ গল্প পড়ে মন্তব্য করেছেন বলে খুশি হলাম। শুভ কামনা সতত ।
সূর্য বন্ধুত্বের এমন উদাহরণ খুব সহজে চোখে পরেনা। ভাল গল্প হয়েছে।

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী