অমানিশার অন্তরালে

অন্ধ (মার্চ ২০১৮)

সেলিনা ইসলাম
  • ১১
  • ২৬
-কী কর? চমকে উঠে মিতি! কথাটা কানে আসতেই তাড়াতাড়ি কম্পিউটার বন্ধ করে দেয়। দরজা খুলে রাজু যে কখন এসেছে মিতি টেরই পায়নি! উফঃ আর একটু হলেই মিতি আজ ধরা খেয়ে যেত। ভাগ্যিস রাজু দেখেনি মিতি কম্পিউটারে কী করছিল।রাজু কিছুই বুঝে পায় না কেন মিতি চমকে গিয়ে কম্পিউটার বন্ধ করে দিয়েছে! আর কেনইবা কোন কিছু না বলে-অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে! কাঁধের ব্যাগটা টেবিলে রাখতে রাখতে আবার জিজ্ঞাসা করে-
- কী করছিলে তুমি?
এতক্ষণে মিতি যেন টের পায় কিছু বলা দরকার। গলায় আটকে থাকা ঢোকটা জোর করে গিলে খেয়ে বলে
- কই কিছু নাতো! তুমি কখন এলে? রাজু ভেবে পায়না ইদানীং কেন মিতি চমকে উঠে? ও দিব্বি শুনতে পেয়েছে যে মিতি কম্পিউটারে কী সব যেন টাইপিং করছিল। কী বোর্ডের খটাস খটাস শব্দ সে দরজায় দাঁড়িয়েই শুনতে পেয়েছে। বুঝতে পারে মিতি কিছু একটা লুকাচ্ছে ওর কাছ থেকে। মনের ভিতরটাতে কে যেন হাতুড়ির বাড়ি মারে! "মিতি কী অন্য কারো সাথে চেটিং করছে? কারো সাথে কে ওর...!" কথাটা মাথায় আসতেই জোর করে সরিয়ে দেয়। গায়ের জামা খুলতে খুলতে মিতির কথার উত্তর দেয়-
-এতই ব্যস্ত ছিলে যে আমি এসেছি টেরই পাওনি!
-না মানে ইয়ে আসলে...। রাজু বুঝতে পারে মিতি কিছু একটা বানিয়ে বানিয়ে বলতে,কথা হাতড়ে বেড়াচ্ছে। যখন দেখল কোন কথা খুঁজে না পেয়ে মিতি আমতা আমতা করছে। তখন রাজুই ওকে চমকে দিতে ঠোঁটে নিজের একটা আঙুল ছুঁয়ে দেয়- "হুসসস...থাক তোমাকে কিছু বলতে হবে না জান।" ফিসফিস করে কথাটা বলতে বলতে মিতিকে জড়িয়ে ধরে। আজ হালকা গোলাপি রঙের একটা জর্জেট শাড়ি পরেছে মিতি। ম্যাচিং করা ব্লাউজ। রাজুর চোখ থমকে যায় মিতির গোলাপি ঠোঁটে! এইতো দুদিন আগেই শপিং করতে গিয়ে পঁয়ত্রিশ ডলার দিয়ে high shine liquid lipstic-টা কিনে এনেছে! পঁয়ত্রিশ ডলার মানে,দেশের প্রায় তিন হাজার টাকা! বিদেশে কেউ এত দামের লিপিস্টিক মাখে? Ninety-nine cents-এর দোকান থেকে একটা কিনে মাখলেই তো হয়। এই তিনহাজার টাকায় দেশে একটা পরিবারের সবাই অন্ততঃ দুইবেলা ভাত মাছ গোস্ত খেতে পারে! বুকচিরে দীর্ঘশ্বাসটা বের হতে হতে আর বের হয় না। এমন সময় মিতি আদুরে কণ্ঠে বলে উঠে
-আরে ছাড়ো না। যাও তুমি হাত মুখ ধুরে fresh হয়ে আসো।
রাজু সব ভুলে যায়। আলতো করে আদর মেখে দেয় মিতির ঠোঁটে।মিতি হাতের উলটো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে কপাল কুঁচকে বলে উঠে
-ইস কী কড়া গন্ধ! তুমি আবার drink করেছো? তোমাকে না বারণ করেছি এসব খাবে না। আমি এর গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারি না।
-আর বল না আজ অফিসে একটা ছোট খাটো পার্টি ছিল।
-পার্টি তো থাকবেই। তাই বলে drink করতে হবে? এসব অজুহাত দিও না please।
রাজুর মাথায় টং করে ঘণ্টা বাজে। মৃদ্যু রাগ দেখায়-
-ঢং কর না। আমি drink করি এইটা জেনেই শুনেই বিয়ে করেছো।
কথাটা বলতে বলতে বাথরুমের দিকে যায়। মিতি ভেবে পায় না ইদানীং রাজু হঠাৎ হঠাৎ কেন এমন কথাবার্তা বলে! মিতিকে চাকরিটাও করতে দিল না।মনে পড়ে সেদিনের কথা। সেদিন রাজুকে মিতি সোজা বলে দিয়েছিল
-বিয়ের পরে কোন চাকুরী করা যাবে না।
-রাজু এটা কী বলছ! আমরা একই অফিসে কাজ করি। বিয়ের পরেও যদি আমরা কাজ করি একসাথে আসব একসাথে বাসায় যাব। কত মজা হবে বল! এটা আমার একটা স্বপ্নও বলতে পারো।
- আরে গুলি মারো এসব স্বপ্ন টপ্ন। তুমি বাসায় ঘর সংসারের কাজ করবে।
-এটা তো অফিস করেও করা যায়। আমরা যাই করব দুজনে মিলেই করব।
-ইস...আমি কেন ঘরের কাজ করব?এটা আমাদের বংশের ছেলেরা করে না। আর...আর তুমি বাসায় আমার জন্য অপেক্ষা করবে। নানা রকম হাতের কাজ করবে এটা আমি চাই।
মিতি রাজুকে ভীষণ ভালোবাসে। রাজু অ্যামেরিকাতে এসেছে তিন বছর হবে। ও দেশের একটা পোশাক কোম্পানিতে বেশ ভালো পদে কাজ করত। সেই অফিসের কাজে এখানে এসে আর দেশে যায় নি। পড়াশুনায় ভালো এবং কাজেও ভালো অভিজ্ঞতা থাকায় এই অফিস ওকে কাজ দেয়। এই অফিসেই মিতিও কাজ করত। রাজু খুব কম কথা বলে। অফিস আর বাসা ছাড়া কোথাও যেত না। মিতির সাথে পরিচয় হবার পরে ওরা দুজন মাঝে মাঝে কাজ শেষে পার্কে হেঁটে বেড়াত। একসাথে দুপুরের খাবার খেত। ধীরে ধীরে ওদের সম্পর্কটা অনেক বেশিই গাঢ় হয়ে গিয়েছিল। দুজন দুজনের কত কথা শেয়ার করেছে। আস্তে আস্তে রাতের খাবারও দুজন একসাথে খেয়ে তারপর বাসায় যেত। বাসায় গিয়েও ফোনে কথা বলতে বলতে মিতি ঘুমিয়ে যেত।

তারপর...পরেরদিন সকালে রাজুকে মিতিই ওর বাসা থেকে তুলে নিত। রাজু একটা ফ্যামিলির সাথে paying guest হিসাবে থাকে। এই অফিসে কাজ পাওয়ার আগে মিতি ওর বাবা মায়ের সাথে ফ্লোরিডা থাকত। ওর খুব ইচ্ছে নিউইয়র্কে এসে থাকার। ডিগ্রী পাশ করে চাকুরীর জন্য দরখাস্ত করতেই চাকরিটা হয়ে গিয়েছিল। ছোট ভাইবোনের লেখাপড়া এবং বাবার কাজের সমস্যা। এসব চিন্তা করে মিতি একাই নিউইয়র্কে এসে একটা এক রুমের Studio বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। রাজু বেশ কয়েকবার বলেছে মিতির সাথে এসে ওর বাসায় থাকবে। কিন্তু মিতি রাজি হয়নি। বিয়ে না করে একসাথে থাকা ঠিক না। মিতি ওর বাবা মাকে কোনভাবেই কষ্ট দিতে পারবে না। বাবা মা-কে মিতি রাজুর কথা বলতেই সোজা এখানে চলে আসে সবাই। তারপর ওদের বিয়ে দিয়ে ওরা চলে যায়। প্রথমে বাবা মা দুজনেই কিছুটা অমত করে কু কা করলেও। পরে মিতির জেদের কাছে হার মেনেছে।

বিগত দিনের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মিতি ভুলে যায় রাজুর জন্য টেবিলে ডিনার দিতে হবে। কাজ থেকে এসে ডিনার। তারপর কীসব কম্পিউটারে নানা রকম কাজ। নানা জায়গায় ফোন করে কথা বলা। তারপর নয়টা বাজলেই সোজা বিছানায় গিয়ে শোবে। আবার সেই সকাল সাতটায় উঠে কাজে যাবে। এই নিয়ম মেনে চলা রাজুর নাকি অনেক আগে থেকে অভ্যাস।
মিতি আজ সারাদিন রাজুর পছন্দের খাবার বানিয়েছে। ওর পছন্দ মানেই দেশের সব মাছ। নিজে চাইনিজ দোকানে গিয়ে বেছে বেছে টাটকা মাছ কিনেছে। আজ মিতি একটু বেশিই গোলাপি গোলাপি সাঁজে সেজেছে। নিশ্চয় রাজু অনেক খুশি!
"মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো... দোলে মন দোলে অকারণ হরষে..." প্রিয় গানের কলিতে মিতির ফোন বেজে উঠতেই ভাবনার তার ছিঁড়ে যায়। ফোনটা কানে নিয়ে মিতি ঘাড় বাঁকিয়ে আশে পাশে দেখে নেয় রাজু বের হয়েছে কিনা! তারপর ফিসফিস করে কথা বলে-
-হ্যাঁ বল...! ওপাশ থেকে বলা সব কথা শুনে মিতি আবার বলে
- ঠিক তো এভাবে সময় সেট করে দিলেই কাজ হবে? হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক রাত নয়টায়...ওকে ওকে এখন রাখি।
-কে ফোন দিয়েছে? রাজুর করা প্রশ্নে মিতি থরথর করে কেঁপে উঠে! ফোনটা প্রায় হাত থেকে পড়েই যাচ্ছিল। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে
-কে আবার? আমার এক বান্ধবী। রাজুর কেন যেন বিশ্বাস হয় না মিতির কথা...। বলে-
-আমি তো তোমার সব বান্ধবীদেরই চিনি... নাম বল!
মিতি কিছু না ভেবেই বলে-
-শাহানা ফোন দিয়েছিল।প্লিজ তুমি খেতে থাকো। আমি একটু আসছি...। মিতি সোজা গিয়ে বাথরুমে ঢোকে। রাজু অবাক হয় মিতির ব্যবহারে।
আজ মনে হচ্ছে মিতি চরম পর্যায়ে চলে গেছে। ওকে যেন রাজু চিনতেই পারছে না! এই মিতি ওকে খুশি করতে কি না করেছে! চাকুরী ছেড়ে ও যেমনটা চেয়েছে তেমনটাই করেছে। সারাদিন ঘরে থাকে,ঘরের কাজ করে। রাজুর মনে পড়ে-বেশ কয়েকদিন আগে মিতি ভীষণ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিল। রাজু তখন অফিসের কাজে upstate-এ। ওর বন্ধুই তো...! সে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। মিতি ফোন করে ভয়ে ভীষণ কেঁদেছিল। বারবার বলেছিল- please রাজু চলে আসো। কিন্তু কাজটাও অনেক জরুরি ছিল।সারা রাত অস্থিরতায় কাটিয়ে দিনে দিনে কাজ সেরে সন্ধ্যায় বাসায় এসে দেখি,একটা ছেলে মিতির পাশে বসে হেসে হেসে কথা বলছে। মিতিকে আমার একটুও অসুস্থ্য মনে হয়নি! মিতির খুব একটা বন্ধু নেই এখানে। তারপরও কোন ছেলে সে বন্ধু হলেও কেন যেন আমার একদম সহ্য হয় না।সেদিন ঐ বন্ধুটাকেও সহ্য করতে পারিনি। ধন্যবাদ দেবার পরিবর্তে ওকে সোজা বলে ফেললাম
-"এখন অনেক রাত হয়েছে। আর আমি চলে এসেছি। আমার মনে হয় মিতিকে দেখাশুনার জন্য আমিই যথেষ্ট!"
ছেলেটাকে আর কিছুই বলতে হয়নি। ঐ যে বলে না "সমঝদারকে লিয়ে ইশারায়ই কাফি হে।" ছেলেটা চলে গেলে মিতি অনেক রাগ হয়েছিল। ও আমাকে ভীষণ বকা দিতে লাগলো। কেন আমি অভাবে কথা বললাম। মিতিকে sorry বলেও কোন কাজ হয়নি।বেশ কিছুদিন মিতি আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিল।"মিতি তোমাকে বুঝতে হবে আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। তোমার পাশে আমি কাউকেই দেখতে পারি না।" কিন্তু মিতি বুঝলই না! নানা চেষ্টায় আমিও যখন ওর রাগ ভাঙ্গাতে পারি নি। তখন সময়ের উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। মেয়েটা যা করে না! তিন সপ্তাহ আমার সাথে কথা বলে নি!
"নিশ্চয় ফোনে বা কম্পিউটারে কারো সাথে কথা বলে। না হলে কেউ একই ছাঁদের নীচে থেকে কথা না বলে থাকতে পারে...?" অফিসেও বেশ ব্যস্ত সময় কাটে আমার। সেই সকালে যাই আর বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত।"আচ্ছা মিতি কী করে বাসায়?"এটা বুঝতে মাঝে মাঝে আমি হঠাৎ হঠাৎ বাসায় আসি। নিজেই চাবি দিয়ে দরজা খুলি। এখন মনে হয় মিতি চাকরি না ছাড়লেই ভালো ছিল। বাড়তি কিছু টাকাও ঘরে আসত। আর ঘরে বসে বসে তেলও বাড়ত না। হাজার হোক চোখের সামনে থাকত! "শালি কানারে তুমি হাইকোর্ট দেখাও...। অ্যামেরিকায় বড় হওয়া মেয়ে তুমি আমার কাছে সতী সাবিত্রী সাঁজ না...?" দাঁতে দাঁত চেপে নিজের সাথেই নিজে কথা বলে উঠে রাজু।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে খাবার একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে যায়।পিছন ফিরে দেখে মিতি কপালে হাত দিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। ভাবখানা সে অনেক অসুস্থ বোধ করছে! "অসুস্থ্ না ছাই। নিশ্চয় ওদের দুজনের মাঝে কোন কিছু নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছে!" মনে মনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মিতিকে খুব খেয়াল করে দেখে রাজু। গোলাপি শাড়ির উপর থেকেই ওর বুকের দ্রুত উঠানামা দেখা যাচ্ছে। ওর ফর্সা কোমরের জায়গাটায় থাকা কালো তিলটা নজরে এলো। অসম্ভব একটা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে এই ছোট্ট তিলটা। একেবারে নেশা ধরিয়ে দেয়।রাজু ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। দেখে ফোনটা পড়ে আছে বালিশের পাশেই।কী ভেবে তুলে নেয় হাতে। শেষ কলটা কাকে করেছে তা দেখতে recent call-এ যায়। রাজু দেখে শেষ ফোনটা দিয়েছে সেই বন্ধুটা। যে কিনা মিতিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলে! ওর নাম শাহান...! মিতি মিথ্যে বলেছে যে শাহানা ফোন দিয়েছে! যেখানে শাহানা নামে কোন বন্ধুই এখানে নেই। যে কজন আছে রাজু তাদের সবাইকেই চেনে। রাগে রাজুর শরীর ঠকঠক করে কাঁপছে! মিতি ওকে মিথ্যে বলেছে। মিতি ওকে ঠকিয়েছে! আর সহ্য হয় না। ধাম করে ঘুষি মারে একেবারে মিতির তল পেটে। ঠিক তিলটা যেখানে তার একটু নিচে। মিতি কিছু বুঝে উঠার আগেই রাজু ওর চিকন শরীরটা ধরে টেনে নামায় মেঝেতে। একহাত দিয়ে মিতির মুখ চেপে ধরে যেন শব্দ না বের হয়। আরেক হাতে ওর কোমর ধরে রাখে। হাঁটু দিয়ে দুই তিনটা গুঁতা মারে মিতির তলপেটে! মিতি মেঝেতে বসে পড়ে! নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে দুই পা মেঝেতে ঘষতে থাকে। রাজু জোর করে চেপে ধরে ওর নাক মুখ। এক সময় মিতি নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়। বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে। রাজু ধপ করে ছেড়ে দেয় মিতিকে।ঠিক তখনই কম্পিটারের স্ক্রিনে ওদের যুগল ছবি ভেসে উঠে। আর ভেসে আসে মিতির মিষ্টি কণ্ঠস্বর-
-আমারে একখান কুঁড়ে ঘর দিবা? আমি সেই ঘরে হ্যারিকেন জ্বালাই থাকপানে। আর যদি কেরাসিন কেনার টাকা না থাহে? চান্দে আলো ভইরা দেবে ঘরখান জুইড়া! আমি তোমার ঘাড়ে মাথা রাইখা,গুনগুন কইরা গান করবানি। আর তোমার বুকের গন্ধ শুঁইকে, নিঃশ্বাস নেবানে ! তুমি শুধু আমারে একখান কুঁড়ে ঘর দিবা? আমি সেই ঘরের রানী হবানি,আর তুমি হবা আমার রাজা।
কী বিশ্বাস হচ্ছে না তো? এই দেখো তোমার অঞ্চলের ভাষায় আমি কবিতা লিখেছি। তুমি বল না আমি সারাদিন বাসায় কী করি? কী করব বল...তুমি এত ব্যস্ত থাকো। তবে খুব শিঘ্রি আমাকে সময় দিয়ে ব্যস্ত রাখতে কেউ একজন আসছে জনাব। তখন তুমিও আমাকে পাবে না বলে দিলাম। হা হা হা কী বুঝলে নাতো...! তুমি কী দেখো না? চোখের দরজা মনের দরজা সব বন্ধ করে রেখেছো? কেন...! তুমি অনেক বদলে গেছো রাজু...। আমি কত ভাবে তোমাকে ইঙ্গিত দিয়েছি যে,আমি অসুস্থ্য। তুমি আমার দিকে দেখোই না...! আর তাই এতদিন ইচ্ছে করেই তোমাকে কিছুই বলিনি। আর কখন বলব? কথা শুনার সময় কই তোমার? সারাক্ষণ কাজ অফিস দেশে ফোন দিয়ে সবার সমস্যার কথা শোনা। সারাক্ষণ দেশের সব সমস্যা নিয়ে ভেবে ভেবে শুধু ডলারের পিছনে ছুটে বেড়াও। সবার জন্য সময় আছে তোমার।কিন্তু আমার জন্য কোন সময় নেই।কেন রাজু? বাড়ি গাড়ী আমি এসব কিছু চাইনা। কুঁড়ে ঘরে থাকব...! অনেক অভিমান করেছিলাম। তবে আর করব না দেখে নিও...।তোমাকে আমি কতটুকু সময়ই বা পাই বল...? এখন থেকে যেটুকু সময় আমার কাছে থাকবে আমরা তিনজন শুধু গল্প করব!

কী কিছু বুঝেছো? আমি sure তুমি এখনও কিছু বুঝনি? আজ সাত সপ্তাহ...জানো ৮ মি. মি. এর মত লম্বা হয়েছে। বুঝনি তো...? আরে বুদ্ধু আমাদের সন্তান। তুমি আমি বাবা মা হতে চলেছি...। তোমাকে surprise দিতে এই রেকর্ডিং করে কম্পিউটারে সময় সেটিং করে দিয়েছিলাম। আজ গোলাপি সাঁজে সেজেছি। কেন...? আমি চাই ঠিক তোমার মত দেখতে,কোঁকড়া চুলের একটা তুলতুলে মেয়ে হবে। আজকের সব খাবার রেঁধেছি তোমার পচ্ছন্দের। জানো কতবার বমি করেছি এসব রাঁধতে গিয়ে? তবুও অনেক আনন্দ পেয়েছি জানো! আজ আমরা একসাথে খেয়ে যখন ঘুমাতে যাব। ঠিক তখন রেকর্ডিংটা বাজবে। আমি তোমার বুকে মাথা রেখে শুনব। আমি শুনব জীবনের এত বড় সুসংবাদটা শুনে তোমার heart beat কত জোরে জোরে আর কত দ্রুত বেজে যায়! ধিক ধিক...ধিক ধিক...ধিক ধিক! আমি জানি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঠিক আগের মত করে বলবে-"মিতি আমি তোমার দামি lipistic টার একটু test নিয়ে দেখি তো ব্যাটারা কেন এত দাম রাখে...!" হিঃহিঃহিঃ তুমি না...! হুমমম তুমি খুব ভালো একটা মানুষ। স্বামী হিসাবে আমার গর্ব তুমি...। আমাকে তুমি অনেক ভালোবাস জানি।এখন ভালো একজন বাবা হয়ে দেখিয়ে দেবে...। অহঃ By the way video টা বানাতে শাহানের সাহায্য নিয়েছি। so some credit goes to শাহান।ওকে আবার বকে দিও না যেন। সেদিন যা করলে...! তাই তোমাকে জেদ করেই জানাইনি ও আমার ছোট ভাই রিফাতের বন্ধু...। আমাকে আপু বলে ডাকে। কী...অবাক হলে? তোমাকে সামনা সামনি এতোগুলো কথা কোনদিনই বলতে পারব না বলেই রেকর্ড করেছি। এখন থেকে যখনই ইচ্ছে হবে এই ভিডিও দেখে আমার সময় কেটে যাবে। আরে...! নিশ্চয় এখন আমার পেটের দিকে তাকিয়ে আছো তাই না...? এই বেশরম! কী দেখছো অমন করে... হিঃহিঃহিঃ।

রেকর্ডিংটা শেষ হতেই ঘরের মাঝে কেমন একটা নিস্তব্ধতা নেমে আসে। রাজু যেন এতক্ষণ মিতির সাথেই ছিল। বুকটা খুব ভারি লাগে...চোখ যায় সামনে।মেঝেতে পড়ে থাকা মিতির নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে! ওর গোলাপি শাড়িটা লাল রঙ হয়ে গেছে। ফর্সা পা বেয়ে টকটকে রক্তের ধারা নেমে যাচ্ছে...।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আজাদ ইসলাম গল্পটির পরিবেশ পাত্র-পাত্রীদের মনস্ত্ব বেশ জটিল। তারপরও ভাল লাগল।
মোঃ মোখলেছুর রহমান ভুল বুঝাবুঝির জটটা সব শেষে এসে খুলেছে,তার মানে পাঠককে বাধ্য করেছেন শেষ লাইন পর্যন্ত পড়ার জন্য।ধন্যবাদ।
সালসাবিলা নকি অনেক ভালো লিখেছেন আপু। প্রশংসার ভাষা নেই...
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী অনেকদিন হয়েছে এ ধরনের লেখাগুলো পড়ি না, এখন পড়তে পেরে নিজেকে বেশ উৎসাহ মনে হল। শুরু থেকে খুব মজা করে পড়তে পড়তে আসলাম। আসতে আসতে গল্পের এক পর্যায় এসে থমকে গেছি। আমার মনে হয় রাজু তাকে নিয়ে পরপুরুষের সাথে সম্পর্কের কিছুটা মাইন্ড করেছে। তাই তাকে মারতে ইচ্ছে করলো, কিন্তু কম্পিউটারে করা রেকর্ডিং মিতির প্রমাণ বের করে দিলো। আর তখনই রাজু বুঝতে পারলো এবং তাকে ভেঙে পড়তে হল। রেকর্ডিংটা খুব দারুণ হয়েছে, বেশ মজা পেয়েছি। মজা পেয়েও সেটা মজা হলো না শেষে মিতির প্রতি রাজুর করুণ কাহিনীর জন্য। শেষে বলবো- অসাধারণ একটি গল্প দিয়েছেন আপু। দারুণ লেগেছে। শুভকামনা রইল, ভালো থাকুন আপু....।
অনেক অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে পড়ার জন্য। শুভকামনা রইল।
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া আমি লেখিকার সাথে একমত। মনস্তাত্বিক অনেক বিষয়ের বিশ্লেষন পাওয়া কঠিন। সন্দেহের পুরোনো স্মৃতিগুলো মস্তিস্কে অপেক্ষাকৃত বেশী সময় ধরে জায়গা দখল করে থাকে-নূতন কোন স্মৃতি আসলে এসকল পুরনো স্মৃতিগুলো জায়গা ছেড়ে দিতে চায় না; তখন মস্তিস্কে এক ধরণের অনুরনন সৃষ্টি হয় এতে কেউ আত্মহত্যা যেমন করতে পারে ঠিক তেমনি আত্মঘাতীও হতে পারে। হয়তঃ লেখিকার ঘটনাটিও এরকম কিছু। দুঃখিত, আমি মনস্তত্ববিদ নয়; তবে আমি এমনটা কোথায় যেনো পড়েছি। যাহোক, ভালো লাগল আপনার গল্পটি। পছন্দ, সর্বোচ্চ সম্মাননা থাকল; সাথে শুভকামনা। সময় পেলে ঘুরে আসুন আমার ‘অন্ধ প্রদেশ’ ‘কাজল জোছনা রাতে’। সিনিয়র লেখকদের মন্তব্যই আমাদের অনুপ্রেরণা। ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভকামনা নিরন্তর।
জান্নাত সামিয়া অনেক ভালো লিখেছেন আপু।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু পরিণতিটা খুবই বেদনাদায়ক। মিতি এত কিছু করলো সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য আর তার স্বামী তাকে ভুল বুঝে অত্যন্ত জঘন্য একটা কাজ করে ফেললো। যাকে সে সন্দেহ করতো সে ছিল মিতির স্নেহতুল্য আর মিতি যে সন্তান স্মভবা ছিল এটা স্বামী হওয়া সত্ত্বেও তার চোখে ধরাই পড়লো না। সত্যিই সে চোখ থাকতেও অন্ধ। গল্পের একটা জায়গায় একটু সমস্যা আছে বলে মনে হলো। সেটা হলো-"সেদিন রাজুকে মিতি সোজা বলে দিয়েছিল-বিয়ের পরে কোন চাকুরী করা যাবে না"। তবে গল্পটা খুবই ভালো। আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করবেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল।
সাদিক ইসলাম মিতিকে মেরে ফেলাটা দ্রুত হয়ে গেলনা? রাজু একটু সময় নিয়ে ভুলের মাত্রাটা বুঝতে আরো দু' একবার বুঝতে ব্যর্থ হতো মিতির বা আরো দু' একটা suspense আসলে পুরোট হতো উৎকণ্ঠা। শুধু ফোনেই একজনের নাম দেখেই খুন করে ফেলা? আরেকটু ভাবানো যেত রাজুকে তাহলে মেরে ফেলাটা justified হতো। যাহোক, ছোট গল্পের সব বৈশিষ্ট্য মেনে হয়েছে গল্পটা আর ভাবনার প্রসারণ আর ঘটনার পরম্পরাকে শব্দমালা সুন্দরভাবে গেঁথেছে। আমাদের। error of judgement থেকেই যায় by the way আমার গল্পটিও error of judgement নিয়ে যদিও ক্লাসিক একটি গল্পের রূপায়ন আমারটা । পাতায় আসলে খুশি হবো।
প্রথমেই ধন্যবাদ সময় দিয়ে পড়ে চমৎকার মন্তব্যের জন্য। রাজু মিতিকে হত্যা করে ফেলার জন্য মারেনি। সে যা করেছে তা না ভেবেই করেছে। আর বেশকিছু ঘটনা দেখানো হয়েছে-হাস্পাতলে ঐ ছেলে থাকা,বাসায় এসে তাকে মিতির পাশে দেখা। সেই ছেলের ফোন কোল নিয়ে মিথ্যে বলা। কম্পিউটারে কী করছিল তা এড়িয়ে যাওয়া...! মেয়েটা অ্যামেরিকাতে বেড়ে উঠা কিন্তু লিভিং রিলেশনে অমত থাকা...। সারাক্ষণ যে মানুষ দেশের পরিবেশ আর প্রবাসের পরিবেশ নিয়ে ভেবে চলে। দেশের সমস্যা নিয়ে টেনশনে দিনরাত দুশ্চিন্তায় থাকে...সে অস্বাভাবিক কিছু করাটাই যেন স্বাভাবিক। তা ছাড়া সন্দেহ খুব খারাপ জিনিষ। একবার মনে গেঁথে গেলে কোন কোন মানুষের জ্ঞান থাকে না। ছোট গল্পে এরচেয়ে বেশি প্রকাশ করলে অনেক বড় হয়ে যায় লেখা। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল। শুভকামনা নিরন্তর।
নাঈম রেজা ভাল লেগেছে
অনেক অনেক ধন্যবাদ।

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী