তিমির রাতের সবুজ সকাল

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১১)

asraful
  • ১৭
  • 0
রফিক জন্ম থেকেই গ্রামের মানুষ। গ্রামের নাম নিঝুম পাড়া। গ্রামটি ছায়া ঘেরা বনে ভরপুরও নয়,আবার ফাঁকাও নয়। গ্রামের পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া খাল আরমনোরমবসতির গ্রামটি তার কাছে অসম্ভব সুন্দর। এই খালে কত দিন সে বাবার সাথে মাছ ধরতে গেছে। কৈ, শিং, গজার আর কত মাছ ধরে বাড়ি ফিরেছে। বর্ষার সময় হলে তাদের গ্রামের বসত বাড়িগুলো দ্বীপের মত জেগে থাকে। চারদিক থই থই করে পানি আর পানি। শাপলা ফুল ফোটা সকাল। চারদিকে সাজানো গোছানো ফুলের মেলা, আর বসত বাড়িগুলো যেন এক একটা পুষ্প বিতান। রফিক কতদিন ঘুম থেকে উঠে সবার আগে বাড়িরসীমানত্দে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখেছে আর মুগ্ধ হয়েছে। শাপলা ফুল তুলে এনে পাপড়ি গুলোকে পুকুরে ছড়িয়ে দিয়ে আনন্দে মেতেছে কত বার।দুপুরে স্বচ্ছ পানিতে সূর্যের আলো পড়লে মনে হয় মুক্তাছড়ানো কোন মায়ালোক। এ রকম দুপুরে নৌকা নিয়ে বর্ষার পানিতে বেরিয়ে যেত সে। মাঝে মাঝে বিকালে বন্ধুরা মিলে নৌকায় মুড়ি ুচানাচুর নিয়েদূরে কোথায়ও চলে যেত। সারা বিকাল এপাড়া ওপাড়া ঘুরে রাত১০টায় বাড়ি ফিরত । শীতের সকালে গ্রামের ডোবাগুলোতে কচুরিপানাগুলো যখন ফুলে ফুলে সেজে উঠত তখন তার দিক হতে চোখ ফেরান কষ্টকর ছিল তার জন্য। আর গ্রামে উঠতিকিশোরিরা সেই ফুল তুলে মাথার খোপায় জড়িয়ে নিত। রফিক তার ভাতিজা আসাদ আর ভাতিজি লামইয়া কে নিয়ে সকাল বেলা কচুরি ফুল ফোটা ডোবার পাড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত ঘন্টার পর ঘন্টা। আসাদ আর লামইয়ার আবদারে তাদের হাতে তুলে দিত কচুরি ফুল।তাতেই তাদের সেকি আনন্দ। শীতের মৌসুমে জমিতে সরিষা ফুল আর নানা রকম সবুজ তরি-তরকারি এবং ধান ফসলে ভরে যেত গ্রামটা। তখন বাড়ি থেকে বের হয়েই সবুজ আর সরিষা ফুলের বিসত্দৃন্ন হলদে মাঠ দেখে চোখ জুড়ে নেমে আসেত স্বর্গীয় শানত্দি। এই সবুজ ফসল আর সরিষা ৰেতের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া মেঠো পথদিয়ে বিকেলের রোদে হেঁটে হেঁটে বহুদুর ঘুরে আসার যে কি আনন্দ, তা রফিকই শুধু অনুভব করতে পরত। আর বিকেল হলেই মাঠে পাড়ার সব ছেলেদের সাথে খেলা করত সে। খেলতে খেলতে সূর্য যখন পশ্চিমে ডুবে যেত, তখন বাড়ি ফিরত রফিক। এজন্য তাকে কত বকাঝকা খেতে হয়েছে বাবার কাছে। তার পরও বিকেল হলে মাঠে যাওয়া তার কেউ ঠেকাতে পারেনি।
গ্রামের দিনগুলি রফিকের কটছিল আনন্দেই। সকালে মায়েরজোরাজুুরিতে চোখ ডলতে ডলতে মুখ ধুয়ে ওযু করে মসজিদে যেতে হত পাড়ার আর সব ছেলেদের সাথে কুরআন পড়তে। যাবার সময় পুকুর পাড়ের আম গাছের মগডালে বসে দোয়েলের শিশ শুনতে শুনতে তার দিকে তাকিয়ে থাকত কিছুৰণ। পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে বন্ধুদের সাথে মার্বেল খেলতে বসে যেত কখনও কখনও, খেলা নিয় ঝগড়া করে বাড়ি ফিরতে দেরি হত। বাড়ি ফিরে মায়ের জোরকরে খাইয়ে দেয়া কিছু খেয়েই বর্ষার সময় শপলা ফুল দেখতে ছুটে যেত বাড়ির সীমানত্দে আর শীতের সময় সরিষা ফুল দেখে,কচুরি ফুল তুলার জন্য যেত পশ্চিম পাশের জমিতে। সেখান থেকে ফিরে তারা তারি গোসল করে বাই খাতা নিয়ে ছুটত স্কুলে। স্কুলে যত না পড়ালেখায় মনযোগ, তারচেয়ে বন্ধুদের সাথে বিরতির সময় খেলাতেই মজা বেশি করত।স্কুল থেকে ফিরে কিছু মুখে দিয়েই ছুটে যেত পাড়ার মাঠে। বর্ষার সময় বৃষ্টি মাথায় কাঁদা মাখামাখি করে চলত ফুটবল খেলা। কখন কখন হা-ডু-ডু। বড়রা অনেক সময় নিতে চাইতনা। কিন্তু রফিকের আগ্রহে যেকোন এক দলে খেলার সুযোগ পেয়েযেত। শীতের সারা বিকালবেলা চলত ক্রিকেট খেলা। বড়রা এক বল দুই বল ব্যাট করতে দিত আর ফিল্ডিং করা। এতেই খুশি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেরি করে বাড়ি ফেরার জন্য মায়ের বকুনি খেয়ে পড়তে বসে যেত । সারা বাড়ি শুনিয়ে শুনিয়ে দুই তিন ঘণ্টা পড়ে রাতে খাবরের পর ঘুম।সারাবাড়ি নিসত্দব্ধ। রফিকের এই নিসত্দব্ধ রাত খুব ভাল লাগত। মাঝে মাঝে রাতে জোনাকি পোকা ধরার জন্য চাচাত ভাই-বোনদের সাথে বাড়ির আঙ্গিনায় বেরিয়ে পড়ত।সে যতই বড় হল ততই রাতে সারা গ্রাম জুড়ে অন্ধকার নিসত্দব্ধ পরিবেশ আরো বেশি ভাল লাগত। সন্ধ্যা হলেই পাড়ার সব ঘরে বাতি জ্বলে। কারো ঘরে হারিকেন, কারো ঘরে বৈদু্যতিক বাতি। প্রত্যেক বাড়ির চার পাশে গাছ গাছালি থাকায় প্রতিটি বাড়ি তার কাছে এক একটা আর্কষণীয় মায়ালোক বলে মনে হত।কিছুৰণ না যেতেই কানে ভেসে আসত ঝিঁঝি পোকা কিংবা ব্যাঙের ডাক। পশ্চিম পাড়া থেকে শিয়ালের ডাকে মনের ভিতর ভয় ধরে যেত এই বুঝি কোন প্রেতাত্মা আসল। পূর্ণিমার রাতে সে ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনের মাঠে দাঁড়িয়ে কত রাত চাঁদের আলোয় মাখা মাখি করেছে তার ইয়াত্তা নেই।অমাবস্যার রাতগুলো রফিকের কাছে রহস্যময় মনে হত। সন্ধ্যা না হতেই সারা গ্রাম জুড়ে অন্ধকারে ঢেকে যেত। আর দাদি, নানীর মুখে শোনা রূপকথার ভুত যেন ভয়ংকর অদৃশ্য হাতেতাকে ঘিরে ধরত। মাঝে মাঝে ভুত দেখার কৌতূহলে ভয়কে সাথীকরেই গভীর রাতে বাইরে বের হত সে। বের হয়েই দূরে কোন আলোর রেখা দেখে ভয়ে আবার তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে যেত। তাতেই বেশ আনন্দ ছিল তার। এভাবেই যেতে পারত তার দিনগুলি।
কিন্তু এসএসসি পর ঢাকার একটি নাম করা কলেজে ভর্তি হয়। এইচএসসি পাশ করার পরে উচ্চশিৰার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমাতে হয় তাকে।
এখন সে লন্ডন শহরে। এই শহরের তুলনায় মধ্যমমানের হলেও তার গ্রাম আর ঢাকার তুলনায় বিলাসবহুল বাড়িতে থাকে। সবকিছুই এখানে সাজানো। রাসত্দা গুলো প্রশসত্দ। কোন যানজট নাই। খাবারগুলো পরিষ্কার আর অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। এখানে কখনসন্ধ্যা নামে, তা সে বুঝতে পারেনা। চারিদিকে ঝলমলে আলোয় আলোকিত। দিন আর রাতের পার্থক্য করা এখানে বড় কষ্টকর। সারা দিন ক্লাস আর বিভিন্ন কাজ শেষে যখন সে বাসায় ফেরে তখন রফিকের প্রচ- কষ্ট হয় তার গ্রামের নিসত্দব্ধ রাতের কথা মনে করে। তার কাছে মনে হয় এখানে কখনো সন্ধ্যা নামেনা, রাতও হয় না। সে তার গ্রামের রাত অনুভব করার জন্য বাসার সব বাতি নিভিয়ে দেয়, জানালারপর্দা টেনে দেয়, যাতে গভীর অন্ধকারে ঢেকে যায় তার ঘর। দেয়াল ঘড়িটা চাবি দিয়ে বন্ধ করে দেয় তার ঘুমের কৰটা নিসত্দব্ধ হয়ে তার গ্রামের অমাবস্যার রাতের মত নিঝুম রাতের জন্য। কিন্তু এসব চেষ্টা তার কষ্টটাই শুধু বাড়ায়। তার গ্রামের সে মায়াবি রাত আসেনা। আর তার বাসার বাইরের লাইট পোস্টের আলোতে ভরে যায় তার কৰ।রাতে এখানে কোন কিছুই ডাকে না। ডাকলেও শক্ত সাউন্ডপ্রম্নপ কাচ ভেদ করে আসতে পারেনা ভিতরে। রাত নেই-দিন নেই-সারা সময় দরজা জানালা বন্ধ করে রেখে কৃত্রিম এক জগতে বাস, তার নিঃশ্বাস আটকে আসে।সকালে ঘুম থেকে দ্রম্নত বাসার বাইরে এসে হতাশায় ডুবে যায় সে। না! এখানে কখনো সকাল হয়না।গ্রামের সেই চির চেনা মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে পাখির ডাক শোনা যায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাসত্দায় গেলে দেখা যায় তুষারের শীত হতে বাঁচার জন্য মোটা মোটা কাপড় পরে যে যার কাজে ছুটছে।ইতসত্দ সে চারদিকে তাকিয়ে শাপলা ফুল খোঁজে,খোঁজে কচুরি ফুল ফোটা সকাল। কিছুৰণ ইতসত্দত ঘুরে আবার রম্নমে ফিরে খানিক সময় বিছানায় গড়িয়ে ছোটে কাজে। কিন্তু কোন কাজেই মন দিতে পারে না। গ্রামের আবহাওয়া তৈরির জন্য সে ইন্টারনেট থেকে শীতের সকালের শাপলা, কচুরি পানা ফোটা ছবি এবং অমাবশ্যাুর রাতের গ্রামের চিত্র ডাউনলোড করে ফ্রেমে বাধিয়ে দেয়ালে টাঙায়। তাতে গ্রামের পরিবেশটা মনে করিয়ে দিয়ে গ্রামের প্রতি তার মায়াকে আরো বাড়িয়ে দেয়।প্রতিদিন সকালে এই ছবির ফ্রেমের সামনে দাঁড়িয়ে সে হারিয়ে যার তার সেই চির চেনা পাখি ডাকা, ফুলে ভরা সবুজ গ্রামে। কিন্তু সে জানে না আদৌ সে তার গ্রামে ফিরতে পারবে, নাকি এই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বাকি জীবনে শুধু তার মায়াবি গ্রামকে কল্পনাই করে যেতে হবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি চলতি সংখ্যার সাথে বিষয় বস্তুর মিল না থাকলেও নিঃসন্দেহে ভালো লেখা। ধন্যবাদ...............
আহমেদ সাবের গল্পটা অনেকটা স্মৃতিকথার মত মনে হল। কাহিনী ডাল-পালা গজানো দরকার ছিল মনে হয়। লেখার হাত বেশ সাবলীল।
M.A.HALIM সুন্দর হয়েছে গল্প। বন্ধুর জন্য শুভ কামনা রইলো।
মামুন ম. আজিজ মুন্ময়ের উপদেশ গুলো ফলো কর।
মিজানুর রহমান রানা প্রতিদিন সকালে এই ছবির ফ্রেমের সামনে দাঁড়িয়ে সে হারিয়ে যার তার সেই চির চেনা পাখি ডাকা, ফুলে ভরা সবুজ গ্রামে। কিন্তু সে জানে না আদৌ সে তার গ্রামে ফিরতে পারবে, নাকি এই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বাকি জীবনে শুধু তার মায়াবি গ্রামকে কল্পনাই করে যেতে হবে।--------------------চমৎকার একটি গল্প।
সূর্য দারুণ আবেগ মাখা- স্মৃতিচারণমূলক একটা লেখা। আর একটু যত্নের প্রয়োজন ছিল। ভোটের সাথে শুভকামনা রেখে গেলাম লেখকের জন্য।
asraful আশা, ভাল লাগল আপনার মন্তব্য পড়ে।সামনে আরো ভাল লেখা উপহার দেবার চেষ্টা করব।
আশা দারুণ আবেগশাখা আর স্মৃতিচারণমূলক একটা লেখা। খারাপ লাগেনি। তবে বেশি বেশি যত্নের প্রয়োজন। লিখতে থাকলে ভালো করবেন। এখানকার কিছু কিছু আবেগ হৃদয় ছুঁয়ে যায়। শুভকামনা রেখে গেলাম লেখকের জন্য।
asraful ছায়া, ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ। আমার গল্পে অনেক ক্ষুদ্র জায়গা থেকে দেশ প্রেমের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।ফুটিয়ে তুলতে পারিনি।

২৬ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী