১. প্রকৃতিতে যখন রূপ বদল ঘটে, গাছের পাতাগুলোকে যখন সকালের শিশির এসে স্পর্শ করে যায় তখনই পাতাগুলোর মনে ভয়ের সঞ্চার হয়। এই বুঝি চলে যাওয়ার ডাক এলো, হয়ত এখনই চলে যেতে হবে সব মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে। পথিককে ছায়া দিতে দিতে আর রোদ বৃষ্টি সাথে খুনসুটি করে ঝড়ো হাওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে করতে যখন পাতাগুলো পরিবেশের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয় তখনই প্রকৃতি এসে ঘোষণা দিল তাদের আর বেশি দিন নেই। সবাইকে এক এক করে বিদায় নিতে হবে, চলে যেতে হবে নিজেদের জায়গা ছেড়ে। নতুনদের আসার রাস্তা উন্মুক্ত করে দিতে হবে। সবাইকে যতটুকু সময় দেওয়া হয়েছিল তা শেষ হওয়ার পথে। যে কোন সময় যে কারো ডাক আসতে পারে তাই সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
কিন্তু এই অল্প জীবন পাতাগুলো আশা করেনি, তারা বাচতে চেয়েছিল অনন্তকাল। গাছটির মৃত্যু পর্যন্ত তার পাশেই থাকতে চেয়েছিল। যে গাছ তাদের এতদিন লালন পালন করেছে, দুঃখ কষ্টগুলো ভাগ করেছে, বুকে আগলে রেখেছে তাকে রেখে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াতে পাতাগুলো নারাজ। তাই তারা আন্দোলনে জড়িয়ে পরল, কোন ভাবেই তারা গাছটিকে একা রেখে চলে যাবে না।
২. সবাই যখন আন্দোলনে নামল নিজেদের জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার বিরুদ্ধে তখন শুধু মাত্র একটি পাতা আন্দোলনে জড়ায়নি নিজেকে বরং অন্যদেরকেউ সে আন্দোলন করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। ঝরে গিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পা বাড়াতে সবাই নারাজ হলেও সেই পাতাটি নতুনদের জায়গা করে দেওয়ার উদ্দ্যশে ঝরে যেতেও আপত্তি প্রকাশ করেনি। সে সবাইকে বুঝাতে চেষ্ঠা করে "আমাদের জন্ম হয়েছে ঝরে যাওয়ার জন্যই। আমাদের পিছনে অনেকে অপেক্ষা করছে নতুন পৃথিবী দেখার জন্য। আমরা যদি জায়গা ছেড়ে না দেই তাহলে পৃথিবীর সাথে নতুনদের সাথে আমাদের বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। আমাদের বুঝা উচিত আমরাও এই জায়গা পেয়েছিলাম অন্য কেউ নিজের জায়গা ছেড়ে আমাদের পৃথিবীতে আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই। তাই আমাদেরও উচিত নিজেদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে নতুনদের আসার পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া, নতুনরা এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশা করা উচিত আমাদের সবার।"
অনেকে তার সাথে সম্মত হলেও অনেকেই আবার স্বার্থপরের মত তার বিরুদ্ধে চলে যায়। তারা মৃত্যুর স্বাদ পেতে চায় না। অমর থেকে তারা প্রকৃতির রুপ দেখতে চায়, কিন্তু প্রকৃতি কারো কোন আন্দোলন মেনে নেয় নি। এক এক করে সবাই প্রকৃতির নিয়মেই ঝরে পরল নিজ নিজ জায়গা থেকে।
৩. আন্দোলন বিমুখ সেই পাতাটি যেদিন তার জায়গা থেকে সরে আসল সেদিন থেকেই তার সংগ্রাম শুরু হল। শুরু হল টিকে থাকার সংগ্রাম নতুন পরিবেশের সাথে, নতুন পরিস্থিতির সাথে। সে জায়গাচ্যুত হওয়ার পর শুন্যে ভাসতে থাকল। তার মনে হল যেন সে পাখি হয়ে পরেছে। সে শুনেছিল মৃত্যুর পর একেক জন একেক রুপ ধারণ করে কিন্তু সেতো কখনো পাখি হতে চায়নি। সে চেয়েছিল কারো সুখ দুঃখের সঙ্গী হতে, নিজেকে অন্যের উপকারে লাগাতে। আগে যেমন পথচারীদের ছায়া দিয়ে তাদের মনে শান্তি এনে দিত এমনই ভাবে ঝরে পরার পরও অন্যের মনে শান্তি এনে দিতে চেয়েছিল সে। উড়তে উড়তে সে যখন পাখিদের কথা ভাবছিল তখন পিচ ঢালা রাস্তায় আছাড় খেয়ে তার ধারনা ভাঙল। সে বুঝতে পারল পাখির কোন রূপ তার মাঝে আসেনি, আগে সে যেমন ছিল এখনো তেমনই আছে। পার্থক্যটুকু হলো আগে সে ছিল উপরে গাছের সাথে আর এখন নিচে মাটির সাথে। কিন্তু এখন কি ঘটবে তার জীবনে এটা নিয়ে সে চিন্তিত। পিচ ঢালা পথ থেকে এক রাশ বাতাস এসে তাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল। পাতাটি উড়ছে গন্তব্য বিহীন ভাবে। সে জানেনা তা নিয়তি কি, কোথায় তার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তার মনে হচ্ছে যেন যুগ যুগ যাবত সে উড়ছে। হঠাৎ বাতাসটি তাকে ছুড়ে ফেলে দেয় পানি টইটুম্বুর ডোবায়। পাতাটি এবার নিজেকে মাছ ভাবতে লাগল, সে ভাবতে লাগল মাছের মতই তাহলে তার বাকি জীবন কাটাতে হবে পানির সাথে। কিন্তু পানিতে বাচার মত প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাব অনুভব করল সে তার শরীরে। তাহলে কি তার জীবন এখানেই শেষ হয়ে যাবে, পচে মিশে যাবে কি সে পানির সাথে?
৪. পাতাটির জীবন শেষ হয়নি, সে নতুন আশা খুঁজে পায় যখন একটি পাখি তাকে পানি থেকে উপড়ে তুলে আনে। পাখিটি পাতাকে তার নীড় তৈরির কাজে লাগায়। নীড় তৈরিতে নিজেকে জড়িত রাখতে পেরে সে নিজেকে ধন্য মনে করল। আর যাহোক সেতো অন্তত কারো উপকারে আসতে পারল। ঐ নীড়ে পাতাটি শান্তিতেই দিন কাটাচ্ছিল। পাখিটি সারাদিন ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যা নামলেই ঐ নীড়ে এসে আশ্রয় নেয় আর পাতাটি তার কাছ থেকে নানা দেশের নানা রঙের গল্প শুনে। পাখিটি পাতাটিকে আশ্রয় দিল আর পাতাটি পাখিকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে আশ্রয়স্থল হিসেবে। প্রকৃতির নিয়মে পাখিটি যখন ডিম দিল তখন ঐ পাতাটিই ডিমগুলোকে রক্ষা করল। ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার পর তারাও পাতাটির সাথে থেকেই বড় হলো।
৫. ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিন। তারপর আসল ঝড়ের মৌসুম, প্রতিদিন ছোট ছোট ঝড় এসে আঘাত হানতে লাগল সেই ঝরা পাতার নীড়টির উপর। পাতাটি ভয়ে ঝড়োসড়ো হয়ে পরল আর ভাবতে লাগল তার জীবন প্রদীপ হয়ত আর বেশী দিন নেই। সে স্মরণ করতে থাকে তার ফেলে আসা স্মৃতি, ফেলে আসা সঙ্গীদের মুখ ভেসে আসে তার মনি কোঠায়, কে এখন কোথায় আছে কারো কোন খবর সে জানে না। ঝড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে পাখিটিও চলে গেল নতুন কোন জায়গায়। পাতাটি শূন্য নীড়ে পরে রইল শুধু। শূন্য নীড়ের শূন্যতা আর একাকীত্ব তাকে গ্রাস করল।
তার ভাবনাই একদিন সত্যি হল, প্রলয়ঙ্করী একটি ঝড় এসে তাকে শুন্যে উড়িয়ে নিয়ে গেল। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল তার দেহের প্রতিটি শিরা উপশিরা। বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গিয়ে হারিয়ে গেল সে অতল গহবরে। পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেলে সেই নতুনের জয়গান গাওয়া পাতাটি। এখনো গাছে গাছে আন্দোলন হয় ঝরে যাওয়ার বিরুদ্ধে, এখনো নতুন পাতা গজায় কিন্তু সেই পাতাটির কথা কেউ মনে রাখেনি। কেউ আর কোনদিন তার কথা স্বরন করল না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।