ক্ষুধা

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL#
  • ৩৪
  • 0

দৃশ্য-১
মধ্যরাতের ঘ্রাণ শুঁকতে শুঁকতে কখন যে আবুল বাশার রাত পার করে দিয়েছে তার খেয়াল নেই। যখন দূরে কোথাও ফজরের আযান দিয়ে উঠল তখন তার খেয়াল হলো সে এক খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। চকিতে সে হাতের দিকে তাকালো, তখনো বদনাটা হাতে ধরা, কোন এক ফুটো দিয়ে খুব ধীরে ধীরে পানি ঝরতে ঝরতে প্রায় খালি হয়ে গেছে বদনাটা। আর তখনি তার পেটটা মোচড় দিয়ে উঠলো। একবার বদনার দিকে তাকিয়ে আবার এক হাত দিয়ে তলপেট চেপে ধরে সে পড়ি কি মরি করে ছুটলো মাঠের পাশের ঝোপে। আগুপিছু কিছু না ভেবে ঝোপের মাঝখানে বসে পড়লো একটু জায়গা করে।
আবুল বাশার যখন ঝোপ থেকে বেরিয়ে এলো তখন আযান শেষ হয়ে গেছে। বদনার সামান্য পানিতে শৌচকর্ম সারায় ঘিনঘিনে ভাবটা তার রয়েই গেছে। সেই ভাবটা কাটাতে সে বদনা উপুড় করে কয়েকটা ফোঁটা পানি হাতে নিয়ে মাটিতে ঘষতে শুরম্ন করলো।
আবুল বাশার গ্রামের বাড়ীতে বছরে দুয়েকবার বেড়াতে আসে, সকালে এসে বিকালে চলে যায়। ঢাকা থেকে মাত্র দুই ঘন্টার রাসত্দা বলে কখনোই থাকা হয় না। সেই কবে ছোটবেলা সবাই মিলে গ্রামের বাড়ীতে এসে থেকেছিলো তা এখন শুধুই সুখ কল্পনা। সে ভালো করে খেয়াল করে দেখে যে, সে বাজারের মাঠে এসে পড়েছে। আশ্চর্য হয় সে। কিসের টানে সে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সেই মধ্য রাতে! বাড়ী থেকে বাজারের হাঁটা দূরত্ব আট-দশ মিনিট। কিন্তু সে এখানে আসতে অনত্দতপৰে এক ঘন্টা সময় লাগিয়ে দিয়েছে!
মাঠের দক্ষিণ পাশে বাজারের খোলা দোকানের খড়ের ছাউনিগুলোর দিকে তাকায় সে। খুব ঘন ঘন ছাউনি। মাঝে মাঝে কিছু মাটির দোচালা/চৌচালা ঘরও আছে। মাঝামাঝি ঠিক মাঠ ঘেঁষে একটা বড় বকুল গাছ। সেই ছোটবেলায় যেমন দেখেছে ঠিক তেমনি এখনো। ঝাকড়া বকুল গাছটার যেন কোন বাড়-বাড়নত্দ নেই। একই জায়গায় যেন থমকে আছে অনাদিকাল ধরে। হঠাৎ করে তার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। ছোটবেলায় যখন দেশে বেড়াতে আসতো তখন খুব সকালে সূর্য ওঠার আগে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে দৌড়ে চলে আসতো বকুল কুড়াতে। এসে কখনো দেখতো সে একা, কখনো অন্য কাউকেও বকুল কুড়াতে দেখতো। লুঙ্গি বা শার্টের কোচড় ভরে বকুল কুড়িয়ে দৌড়ে চলে যেত বাসায়। আর ভাই-বোন সবাই মিলে মালা গাঁথা শুরম্ন করতো। এই সুখস্মৃতিটা মনে হতেই সে হো হো করে হেসে ওঠে। তারপর এক প্রকার দৌড়ে বকুল তলায় যায়, সেই শৈশবের মতো করে বকুল কুড়ায় আর বদনায় ভরতে থাকে। ততৰণে ফর্সা হতে শুরম্ন করেছে চারদিক। বদনা প্রায় ভরে এলে সে ছুট দেয় বাড়ীর দিকে।

দৃশ্য-২
আবুল বাশারের ফুপা বাড়ীর বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে আর অস্থির চিত্তে পায়চারী করছে। বাড়ীর পাশের মসজিদেও ফজরের আজান হয়ে গেছে। মুয়াজ্জিন হাফেজ আলামিন এলাকারই ছেলে। সে মসজিদ ঝাড়পোছে মগ্ন হয়ে গেছে আজান শেষ করে। এই রকম আলো-আঁধারির ভেতর আবুল বাশার বাড়ীর কাছাকাছি আসতেই ফুপা দৌড়ে এসে আবুল বাশারের সামনে দাঁড়ায়। হাতে বদনা দেখে শশব্যসত্দ হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি বদনা লইয়া কই গেছিলা বাথরম্নম থুইয়া? কতখুন আগে বাইরইছ গরেততে? আমি এক ঘন্টা ধইরা খারাইয়া রইছি!"
আবুল বাশার বুঝতে পারে বিষয়টা। তার ঘরের দরজা খোলা দেখে ফুপা নিশ্চয়ই ভয় পেয়ে গেছে। তাই অভয় দিতে সে বলে, "আরে ফুপা কিছু ভাববেন না। ঢাকার অভ্যাস হইল রাত বারোটা-একটায় ঘুম। আর এইখানে ঘুমাইছি রাত আটটায়। তো যখন ঘুম ভাঙলো তখন ভাবলাম রাইত পোহাইয়া গেছে। বদনা লইয়া পইড্যার কলসি থেইকা পানি লইয়া বাথরম্নমে যামু তখন কিমুন জানি একটা ঘ্রাণ পাইলাম। আমার কাছে মনে হইল নিশি রাইতের ঘ্রাণ আমার নাকে আইসা বাড়ী মারতাছে! কি পাগল করা ঘ্রাণ! ঘ্রাণের দিকে ফিরা দেখতে যাই ঘ্রাণটা কোন জায়গা থেকে আসতাছে। কিছুই দেহি না। খালি দেহি জোনাক পোকারা কিলবিল করতাছে। তারপর ঘ্রাণটা সইরা যাইতে লাগল। আমি ঘ্রাণের পিছে পিছে হাটতে লাগলাম। যখন আজ হইল তখন দেহি আমি বাজারের মাঠে।"
আবুল বাশার অভয় দিতে কথাগুলো বললেও ফুপা আমজাদ বেপারী ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়লো। দুই হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো, " আরে কও কি তুমি? তোমারে তো জীনে ধরছিল, বদ জিনে। আজান হুইন্যা তোমারে ছাইড়া দিছে।" বলেই বাড়ীর ভিতরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে ডাকতে লাগলো- "কই গো নাছিমার মা, উঠছ নি? তাড়াতাড়ি বাইরও। তোমার ভাইপুতেরে তো নিছিলো আজকা! কই গো ঘুম ভাঙলো নি তোমার?"
আমজাদ বেপারীর চেঁচামেচিতে ততৰণে দল বেঁধে উঠানে নেমে এসেছে সবাই। আমজাদ বেপারী সমানে বয়ান করতে লাগলো বাশারের জীনে ধরার কাহিনী। ফুপু দৌড়ে এসে দোয়া-কালাম পড়তে পড়তে বাশারের গায়ে মাথায় ফুঁ দিতে লাগলো আর আমজাদ বেপারীকে শাসাতে লাগলো- "তোমারে কইছিলাম না পোলাডার লগে হুইতে? হুইতে পারলা না? তাইলে তো আর এমুন অইতো না। কত জনম পরে পোলাডার শখ অইছে বাইত থাহনের। আর কিয়ের মধ্যে কি শুরম্ন অইলো। তাড়াতাড়ি কইরা দুইজনে অজু কইরা মসজিদে নামাজ পইড়া আসো। ইমাম সাবরে দিয়া একটু ফু দেওয়াইয়া আইনো বাজানরে।"
ফুপু কথা শেষ হওয়ার আগেই তার ফুপাতো ভাই-বোনেরা দৌড়-ঝাঁপ করে তাদের জন্য অজুর পানি, গামছা নিয়ে এসে হাজির উঠানে। ঘটনার আকস্মিতায় আবুল বাশার কিছুই বলতে পারছিলো না, শুধুমাত্র বদনাটা ফুপাতো বোনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ফ্রক পাত নাছিমা। নাছিমা ফ্রক পাততেই ফুলগুলো ঢেলে দিয়ে বললো, আমার লইগা সুন্দর কইরা মালা গাথবি, বুঝলি। বাজারের বকুল তলা থেইকা লইয়া আইছি।" ফুলগুলো কোচড়ে নিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে নাছিমা। বলে ওঠে, "ভাইয়েগো তোমারে মাগি জিনে ধরছিলো"। তার কথা শুনে ফুপু মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হেসে উঠেই ধমক লাগায়- "যা ঘরে যা, শয়তান কোনহানকার"। পঞ্চদশী নাছিমা গায়ে তরঙ্গ তুলে ঝট করে ঘুরে তার ঘরে চলে যায়।
দৃশ্য-৩
আবুল বাশার বিবাহিত এবং তিন সনত্দানের জনক। গ্রামের ছেলে হলেও ঢাকাতেই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। পড়ালেখা, চাকরি, ব্যবসা সবই ঢাকাতে। পুরো পরিবারই ঢাকার বাসিন্দা। বিভিন্ন মৌসুমে সে দেশে আসে বাগানের ফল-পাকড়া খেতে-নিয়ে যেতে, আর বাবার কবরটা জেয়ারত করতে। কখনো সপরিবারে, কখনো একা। ভোর সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিলে ঠিক দুই ঘন্টার মাথায় গ্রামে চলে আসা যায়। সারাদিন হৈ-হুলেস্নাড় করে আবার আসরের পর ঢাকার পথে পা বাড়ায়। কিন্তু এবার একটা মামলা সংক্রানত্দ ঝামেলায় ঢাকা থেকে বাইরে একটু গা ঢাকা দিতেই হলো তার। গ্রামের বাড়ীও নিরাপদ না, কিন্তু ভাবলো কয়েকটা দিন তো থাকা যায়! তারপর না হয় বন্ধুদের বাড়ী-ঘরে যাওয়া যাবে, কি শহরে, কি গ্রামে, কোথাও তার অসুবিধা হবে না। প্রায় দুই যুগ পরে তাই এবার গ্রামের বাড়ীতে রাত কাটানো হলো তার। আর তাতেই বাধলো যত গন্ডগোল। আবুল বাশারের কাছে বিষয়টা অস্বাভাবিক বলে মনেই হচ্ছে না। কিন্তু আর সবাই ব্যাপারটাকে ভৌতিক এবং জীন-পরি সংক্রানত্দ।
এই সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে উঠতেই ফুপু ডেকে নাসত্দা খেতে বসায়। আর বলতে থাকে, 'হোন বাবা, তোমার দাদায় আছিল কবিরাজ। খুব বড় মাপের কবিরাজ। তোমার দাদার ডরে কোন জীন-ভুত এই এলাকায় উৎপাত করতে পারতো না। একবার অইছে কি, দহিনের বেলগাছ তলায় বইয়া অজিফা পড়তাছিলো তোমার দাদায়। হেই সময় বসনত্দ জিনের সাত বইন দহিনের চালা দিয়া উইড়া যাইতাছিল। তোমার দাদায় গলা উঁচাইয়া ডাক দেয় জিনেগো। জিনেরা থামলে তোমার দাদায় জিগাইল, কার সব্বনাশ কইরা আইলা গো তোমরা? জিনেরা তো আর কথা কয় না। তোমার দাদায় এইবার ওগো শাসাইয়া দিলো, আমার এই তলস্নাটে যেন আর তোমগো না দেহি, যাও। হেই বছর বিল পারের একজনের বসনত্দ অইছিল, ভালাও অইয়া গেছিল তোমার দাদার ওষুধ খাইয়া। গাছ-গাছড়া দিয়া কি সব জাদুমন্ত্রের ওষুদ যে বানাই তো, আহ্্ হা!' হোন এই জিনেরাই তোমার দাদারে লেচু গাছ তলায় ফালাইয়া থেতলাইয়া জিহ্বা কাইট্টা ফালাইছে। তোমার বাপ-চাচারা হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি কইরাও তারে বাচাইতে পারলো না। বুঝলা বাবা, হেই জিনেগো চাপা ক্ষিধা রইয়া গেছে অহনো। তুমি সাবধানে থাইকো বাবা।
ফুফুর বলা কথাগুলো সেও জানে এবং বিশ্বাসও করে। তার দাদা যে খুব বড় মাপের কবিরাজ ছিল তাও সে জানে। আশেপাশের দশ গ্রামের মানুষ তার দাদাকে অনেক ভক্তি-শ্রদ্ধা করত। তার দাদা ছিল খুব পরহেজগার মানুষ। সারাৰণ দোয়া-দরম্নদ নিয়াই থাকত। চৌদ্দগ্রামের কারো কোন জীন-ভুতের সমস্যা হলেই তার দাদার ডাক পড়তো। তিনি দোয়া-দরম্নদ পড়ে বিনে পয়সায় চিকিৎসা করে দিতেন। জিন-ভুতের সমস্যা না হলে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। অনেককে তাবিজ লিখে দিতেন। অনেককে গাছ-গাছড়া দিয়ে ওষুধ বানিয়ে দিতেন। আর কি আশ্চর্য, তার দাদার তাবিজ কিংবা ওষুধ জাদুর মতো কাজ করতো। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো তিনি কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিতেন না। এই জন্য সবাই তার অন্ধ ভক্ত ছিলো। দাদার মৃতু্যর পর জানাজায় এত বেশি লোক হয়েছিলো যে তা কল্পনাও করা সম্ভব ছিল না। আশেপাশের দশ গ্রাম যেন শোকে শোকাতুর হয়েছিল তার দাদার মৃতু্যতে।
এত সব কিছু ভাবতে ভাবতে বাশার বাড়ী থেকে বেরিয়ে উত্তরের মুলি বাঁশঝাড়ের ঢালে চলে আসে। তাদের এলাকাটা অনেকটা টিলাময়। নীচু টিলার মতো টেক এলাকা। দুই টেকের মাঝে ঢালু ধানি জমি। ধানি জমি থেকে টেকের সমতলের উচ্চতা প্রায় বিশ-পঁচিশ ফুট। টেকের উপরের বাড়ীঘরের চারপাশ জুড়ে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু আর হরেক ফলের গাছ-গাছালিতে ভরপুর। প্রায় প্রতিটা টেকের প্রানত্দ ঘেঁষে গজারি আর বাঁশঝাড়ের সমারোহ। প্রকৃতি অকৃপণ হাতে যেন সাজিয়ে দিয়েছে তাদের গ্রামকে। এখানে কেউ প্রথম এলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত না হয়ে পারবে না। গ্রামের মানুষগুলোও তেমনি সহজ-সরল। গ্রীষ্ককালীন ফলের মৌসুম ছাড়া সারা বছর তাদের ৰেত-খামার করেই কাটে। অবশ্য ইদানিং গ্রামের অনেকেই হাঁস-মুরগীর খামারের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তাতে অনেকেরই এখন রমরমা অবস্থা। গ্রামের যারাই একটু শিক্ষিত হয়ে ওঠে তারা আর গ্রামে পড়ে থাকে না, চলে যায় শহরে অথবা বিদেশ-বিভূঁইয়ে চাকরি বাকরি নিয়ে। এ জন্য ঈদের ছুটি-ছাটা ছাড়া গ্রামের শিক্ষিত শ্রেণীর কাউকে গ্রামে দেখা যায় না।
আনমনে হাঁটছিল সে ধান ৰেতের আল ধরে। দূর থেকে কেউ একজন গলা উঁচিয়ে ডেকে ওঠে, কই গো বাশারে না! কেমুন আছ বাহে, ভালা না? বাশার ডাক শুনে তাকিয়ে দেখে রাসত্দায় দাঁড়িয়ে আছে গ্রামের ধলু মেম্বার। গায়ের রং মিশমিশে কালো হলেও তার নামটা যে কে ধলু মেম্বার রাখলো কে জানে। ভালো নাম একটা অবশ্য আছে, কিন্তু সে তা জানে না। সে সহাস্যে উত্তর দেয়, কাহা ভালোই না, আমি ভালো আছি। বাশার এগিয়ে যায় মেম্বারের দিকে। মেম্বারও রাসত্দা থেকে নেমে আসে তার দিকে। কাছে এসেই জড়িয়ে ধরে তাকে। আদর করে দেয়। মানুষটা শয়তান প্রকৃতির হলেও এই আদরটুকু তার ভালোই লাগে। নিখাদ আদর, কারণ তার সাথে তো কোন প্রতিযোগিতা নেই। এ কথায় সে কথায় জিজ্ঞেস করে, আছো না কয়দিন? আমগ বাইত দুইডা ডাইল-বাত খাওনা একদিন। যাওনা তো বহুদিন ধইরা।
হ কাহা, আছি কয়দিন। একদিন হুট কইরা যামুগা নে। আমার লইগা দোয়া কইরেন।
আইচ্ছা ঠিক আছে। বলেই একটু থেমে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে বাশারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, হুনলাম তোমারে জিনে ধরছিল, কথাটা ঠিক নি বাবা?
আরে না, কালকা মাঝ রাইতে ঘুম ভাইঙ্গা গেলে আমি হাটতে হাটতে বাজারে গেছিলাম গা। আজান হুইন্যা আবার বাড়ীত চইলা আসি, এই আর কি। আপনে হুনলেন কার কাছে?
তোমার ফুফায় কইলো। বাজারে দেহা হইছিলো সকাল বেলা। তহন কথায় কথায় কইলো তোমার কাহিনী। তো বাবা, রাইত বিরাইতে আর ঘরেরথে একলা বাইর হইয়ো না। তুমি শহরের মানুষ, কোনহান দিয়া আবার কি অইয়া যায় কওন তো যায় না! সাবধানে থাইকো।
এমনতরো ভালো-মন্দ কথা চলছিল। হঠাৎ করে মনে হলো পাশের বাঁশঝাঁড়ের মাঝখানে মুলিবাঁশগুলি হঠাৎ প্রচন্ডভাবে কেউ ঝাঁকাতে শুরম্ন করেছে। পরৰণে কেউ সেখান থেকে নাকি সুরে বলে উঠলো- আজকা রাইতে তরে খাইছি বাশাইরা। কালকা তরে চিনি নাই দেইখা তুই পার পাইয়া গেছস। হেহ্্ হেহ্্ হেহ্্ ...............। বাশার আর ধলু মেম্বার দু'জনেই স্পষ্ট শুনতে পায় কথাগুলো। দুইজনেই একসাথে বলে ওঠে, লা হাওলা অলা কুওয়াতা.....। ধলু মেম্বার বাশারের হাত ধরে দৌড়ে রাসত্দায় উঠে আসে। পেরেশান হয়ে তাকে নিয়ে তাদের বাড়ীর ভিতর ঢুকে ডাকতে থাকে, কই রে নাছিমার কই গেছত, তাড়াতাড়ি আয়।
নাছিমার মা ছাগলকে লবন পানি খাওয়াচ্ছিল উঠানের এক কোনে। ডাক শুনে হনত্দদনত্দ হয়ে ছুটে এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। কি অইছে মেম্বার সাব? বাশারের আবার কিছু অইল নাকি?
অহনও কিছু অয় নাই, তবে রিঙ্ লওনের দরকার নাই। তুই আইজকাই ভাতিজারে ঢাকায় পাঠাইয়া দে। বলেই পুরো ঘটনাটা বলে। ঘটনাটা শুনতে শুনতে নাছিমার পাশে এসে দাঁড়ানো নাছিমার দিকে বার কয়েক কটমট করে তাকায়। আর বলে, অইছে বুচ্ছি। আপনে চিনত্দা কইরেন না। আমি বাড়ি বন্ধক কইরা দিমু সন্ধ্যা বেলা, কোন ভয় নাই। আপনে বাড়ি যান। ধলু মেম্বার অনেক বড় কোন কাজ করে ফেলেছে ভেবে প্রশানত্দ চিত্তে বাড়ী থেকে চলে যায়।
দৃশ্য-৪
ঘটনার আকস্মিকতায় আবুল বাশার তালগোল পাকিয়ে ফেলে সবকিছুতে। ঢাকা চলে যাবে করে সবকিছু গোছগাছ করেও যাওয়া হয় না তার। ফুফু তাকে আর একটা দিন থেকে যেতে বলেন। অভয় দেন কিচ্ছু হবে না তার। সন্ধ্যার সময় বাড়ী বন্ধক দিলে জিনের কোন সাধ্যি নাই বাড়ীর ত্রিসীমানায় ঘেঁষে। সাহস পায় বাশার। ভাবে আর একটা দিন থেকেই যাই না কেন। সন্ধ্যার পর পরই খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ে সে। ফুপা তার সাথে থাকতে চেয়েছিলো। কিন্তু সেই থাকতে মানা করেছে। ঘুমানোর আগে ফুপা তাকে পই পই করে রাতে বাইরে বেরম্নতে মানা করে দিলেন। বাথরম্নম চাপলে বাড়ীর ভিতরের বাথরম্নম যেন ব্যবহার করে সেটাও বলতে ভুললেন না।
বাশার প্রশানত্দ চিত্তে ঘুমিয়ে গেল। তার এতটুকু ভয় করলো না একা একা ঘুমাতে। গভীর রাতে কার ফিস ফিস ডাকে তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। রাত ঠিক কতটা ঠাহর করতে পারলো না সে। ডাক অনুসরণ করে জানালার দিকে তাকিয়ে আঁৎকে উঠলো সে। কে, নাছিমা না! অস্ফুটে তার কন্ঠে বিস্ময় ঝরে পড়লো। হ আমি, ভাইয়ে দরজা খোল। আগের মতই ফিসফিসিয়ে বলল নাছিমা।
বাশার মন্ত্রমুগ্ধের মতো বিছানা থেকে উঠে খুব সাবধানে শব্দ না করে দরজা খুলে আবারও অতি সনত্দর্পনে দরজা লাগিয়ে দেয়। ততৰণে নাছিমাও নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে পড়ে। নাছিমা বয়সে অনেক ছোট হলেও এই রকম পরিবেশে বাশার এলোমেলো হয়ে যায়। কি করবে না করবে ভাবতে না পেরে দাঁড়িয়ে থাকে। নাছিমা লম্বায় কিন্তু প্রায় তার সমান। সে অন্ধকারেই বাশারের মুখোমুখি দাঁড়ায়। বাশারের দুই হাত খপ করে ধরে ফেলে তার শরীরটাকে প্রায় বাশারের শরীরের সাথে লাগিয়ে দেয়। ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি সকালে ডরাইছিলা? বাশারও ফিসফিসিয়ে উত্তর দেয়, হ খুব ডরাইছিলাম। ফিসফিসিয়ে হেসে উঠে নাছিমা। হাসতে হাসতে তার বুকটা ঠেকিয়ে দেয় বাশারের বুকে। নাছিমার উঠতি বুক দুটোর আঘাতে বাশার কেঁপে ওঠে, কিন্তু কিছু বলতে পারে না। নাছিমা আবার বলে ওঠে, আমি তোমারে ডর দেহানের বানঝারের ভিতর থেইকা হেইডা করছিলাম, বুঝছ। তোমার কোন ডর নাই। এইহানে জিন বইলা কিছু নাই। জিন অইলাম আমি। বলেই নাছিমা বাশারের গলা পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরে। বাশার কিছু বুঝে ওঠার আগেই নাছিমা বাশারকে নিয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়ে। বাশারের সমসত্দ চেতনা যেন অবশ হয়ে গেছে এই পুঁচকে মেয়েটার কান্ডকারখানায়। নাছিমা বাশারের পুরো শরীর জুড়ে লেপ্টে থেকে খুব ঘোরলাগা কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি আমারে আদর করবা না?
বাশারের ঘোর যেন কেটে যায় হঠাৎ করে। সেও নাছিমাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে চুম্বন এঁকে দেয়। ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুই এমন করতাছস কে নাছিমা? নাছিমা কোন উত্তর না দিয়ে তার বুকের কাপড় সরিয়ে দেয়। আর খুব অস্পষ্ট অথচ কামজ কণ্ঠে বলতে থাকে, আমার শরীর ভর্তি ক্ষিধা গো ভাইয়ে, আমার শরীর ভরা ক্ষিধা.....।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার নাহিদ হোসেন আপনার গল্পে বর্ণনার হাত ভালো বললে কম বলা হবে বলতে হয় খুব ভালো। একদম একটানে পড়ে ফেলার মতো একটা গল্প। যাক গল্পকাররা একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী পেলো! আপনাকে এ ভুবনে স্বাগতম।
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১১
Lutful Bari Panna পাঞ্চটা অসাধারণ হইছে। দিনদুপুরে জ্বীনের গলা- ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছিলাম না। আপনি তো ভাই জাত গল্পকার...
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
Akther Hossain (আকাশ) বুজতে হবে গল্পের হাত আছে !
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
চৌধুরী ফাহাদ গল্পটি পড়তে পড়তে শেষে এসে ভীষণ ধাক্কা খেলাম। এমন ক্ষুধা কল্পনা করিনি নাসিমার কাছ থেকে।
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১
নাজমুল হাসান নিরো প্রিয়তে নিয়েছি এটা তো বলতেই হচ্ছে...........
ভালো লাগেনি ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
নাজমুল হাসান নিরো বর্ণনাভঙ্গীটা বেশ ঝরঝরে। যেন আসলেই কুশলী সাহিত্যিক, শেষ পর্যন্ত না আসাতক বুঝতে পারছিলাম না কী ঘটবে।
ভালো লাগেনি ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
আহমাদ মুকুল লেখার পুরনো অভ্যেসটি ঝালিয়ে নেয়ার জন্য আমাদের মাঝে এসেছেন, স্বাগতম। মন্তব্য অংশে আপনার পরিচিতিদাতাকে কৃতজ্ঞতা। গল্প নিয়ে কথা- ঘ্রান বিষয়ক ব্যাপারটি আমার দারুন লেগেছে। নাছিমার দিকে ওর মায়ের কটমট করে তাকানোর ব্যাখ্যা কিন্ত গল্পেই প্রচ্ছন্নভাবে আছে, তার মানে বাঁশঝারের ভুতের ব্যাপারে এবং নাছিমার চরিত্রের দুর্বল দিক সম্বন্ধে ওর মা ঠিকই আাঁচ করেছিল।
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১১
বিষণ্ন সুমন আপনার অন্যরকম একটা পরিচয় আছে, যা পুরনো লেখক হিসেবে আমার জানা ছিল । তাই আপনার কাছে প্রত্যাশাটাও বেশি ছিল, যা আপনি ভালোভাবেই মেটাতে পেরেছেন (যদিও বানান ভুলগুলু অনেক ভুগালো) । ধন্যবাদ ।
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মোঃ মুস্তাগীর রহমান সুন্দর ভালো লিখেছেন।
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১১
আবু নাবিল ছোটগল্প’র সংজ্ঞা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেনঃ (ভুলত্রুটি মার্জ নীয়) ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা ছোট দুঃখ কথা, নিতান্তই সহজ সরল প্রত্যহ যেতেছে ভাসি অজস্র বিস্মৃতিরাশি, তারি দু’চারিটি অশ্রুজল নাহি বর্ণনার ছটা, ঘটনার ঘনঘটা, নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ অন্তরে অতৃপ্তি রবে, শেষ করে মনে হবে, শেষ হয়ে হইল না শেষ। - এই সংজ্ঞার আলোকে সালেহ মাহমুদ’র ক্ষুধা গল্পটি প্রকৃতই ছোটগল্প। লেখককে ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১

২৫ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী