মাটি-চাপা ফণিমনসা

অসহায়ত্ব (আগষ্ট ২০১৪)

প্রজ্ঞা মৌসুমী
  • ২৪
দুপুর না পেরোতেই আমাদের পৃথিবীতে এসে পড়ে মিঠে গুড় আর আমরা লাল-কালো পিঁপড়েরা পেয়ে যাই রসদ। 'বউটারে পাওয়া যাইতেছে না' এই পরম ঘটে যাওয়াকে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘুরতে থাকে কেচ্ছা, ধারণা, আমাদের পিঁড়ি, মুখের ভেতর ঘর তোলা পান, পাতিলের জিওল মাছ, ভাতের বলক, মাটির কলস, গাভীর ওলান, তুলে আনা শামুক, সেদ্ধ ধানে গজে উঠা চারা, ভাঙা স্কুলঘরের ভাঙা বোর্ড। আমরা আমাদের সবকিছুতে ওকে খুঁজতে থাকি অথবা ওই আমাদের খুঁজে নেয় অনায়াসে। আমাদের মধ্যে কেউ একজন জানায় গত সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে ঝগড়া... ঝগড়া সেতো সব বাড়িতেই হয়। আমরা সংসারের পুলসিরাত পার হতে হতে স্বামীর পায়ের নিচের বেহেশত কামনা করি। প্রায় সব বাড়িতেই বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই কতৃত্ব, খোঁচা অথবা নির্জলা রসিকতা দিয়ে বিড়াল মারার কাজটি চমৎকারভাবে সম্পন্ন করে শ্বশুর বাড়ির লোক। তবে দু-এক বাড়ির বউ হয় যাদের ভেতরে ফণা গুঁজে থাকে অথবা যারা লীলাবতীর মতো- একটা কাটা জিভ টুপ করে পড়ে যায় আমাদের মাথার ভেতর...

ওই বাড়িতে আমাদের এবং পিঁড়িগুলোর ব্যস্ততা বাড়ে। লাল পিঁপড়া গোছের কেউ একজন বলে, 'যাইব আর কোন চুলোয়? দেখো গিয়ে ফণিমনসা বাপের বাড়ি বসে আছেন।' তারপর চলতে থাকে গালগল্প বউটি কবে কোনদিন ফণা তুলেছিল। সত্যিইতো আমাদের চুলো আর কয়টা! ভাবনায় চলে আসে দৌড়ঝাঁপ, হাঁড়ি-পাতিল, দড়ি লাফ, বউচি এবং চুলো! যে বাঁশির টানে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে, দুঃখ পেলে কিংবা রাগ হলেই ছুটে যেতে পারি এতটা দুঃসাহসতো কখনো হয়নি। আচ্ছা, আমাদের আর খাঁচার ময়না পাখির মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আমরা যে কিনে আনা সেই শখের ময়না। নাহ, খবর এলো বাপের বাড়িতে যায়নি। সম্ভাবনার জানলা এঁটে গেলে, এবার দরজা খুলে দেয়া হলো। একজন ভাবনায় যোগান দিলো, 'পিরিতির টান; ছিনাল, পুরা ছিনাল।' শ্বাশুড়িও সায় দেয় 'একটা গয়নাও নাই।' আমরা তখন সম্ভাব্য পুরুষটিকে কল্পনা করি, বউটিকে কল্পনা করি। মেয়েটির ছিল বড় মায়াকাড়া মুখ, দীর্ঘ চুল; মোহনীয় এক হাসি দিয়ে বলতো "ও ভাবী, আচার খাইবা?" জিভ দিয়ে টকাস টকাস করা সেই শব্দ আমাদের নাড়ায়। বাড়ির সাধু পুরুষেরাও কি মুগ্ধ চোখে দেখেনি মেয়েটির লাবণ্য? আমাদেরও কি ভয় হয় নি পুরুষকে নিয়ে? ভেতরের দূর্বলতা প্রকাশের সুযোগ পেয়ে যাই আমরা; বউটি আর বউ থাকে না।

আমাদের পুরুষদের ভেতরেও ভয় অথবা অস্বস্তি আসে নাকি পুরুষত্বে আঘাত? আদরের সময়ও আমাদের ভাবনা চলে যায় মেয়েটির দিকে। পুরুষেরা ভয় পায় 'বউ ও বউ;' আরো নিবিড় করে চেপে ধরে বুকে। দমবন্ধ লাগে- বউটিরও কি দমবন্ধ লেগেছিল এমন? কোন ঘুড়ি ধরা হাত তার বুকেও কি লেগেছিল কোনদিন? পাপচিন্তার ভয়ে আরো জোরে বটিতে কুঁচিকুঁচি করি পেঁয়াজ, সবজি। আমরাইতো পূর্বজন্মে ছিলাম বেহুলা, সতী, সাবিত্রী। আমাদের সতীত্বের গৌরবে এতটুকু ভাঙাচোরা নেই, হতে দেবোও না। 'শয়তানের ছায়া পড়ছে'- এই সম্ভাব্য ধারণাকে আঁকড়ে ধরি। বউটির শ্বাশুড়ির দুঃস্বপ্নকে নেহায়েত স্বপ্ন বলে ফেলে দিতে পারিনা। তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেই আমরা; আয়োজন করে কলা পাতার পিঠে বানাই, ল্যাংড়া হাঁসটাকে রান্না করি, হাঁসটা বউটার বড় আদরের ছিল। পাঁচ হুজুর আসেন, জোরে জোরে কুরআনের পবিত্র আয়াত দিয়ে ধুঁয়ে দেয়ার আয়োজন করেন সমস্ত ছায়া, সমস্ত পাপচিন্তা। কলঙ্ককে এবার ধুঁয়ে-মুছে বিদায় দিতে চাই; আমরা এবার নটে গাছটি মুড়িয়ে দিতে চাই। তেলাওয়াতের গতি বাড়ে... কেউ একজন গরুর জন্য কচুরিপানা কাটতে গিয়েছিল, সেখান থেকে চিৎকার ওঠে। আমরা দৌড়ুই। আমরা দেখি- ভেজা মাটিতে, দূর্বার মতো, জেগে আছে বড় সুন্দর এক গোছা চুল...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিছবাহ উদ্দিন রাজন অন্যরকম ভালো লাগা রইলো ।
ঝরা অসাধারন।বউটিকি বিধবা ছিল?
তানি হক Apu .apnake dhonnobad janai age. ichce chilo bistarito kore moner onuvuti janai. Mobile diye porlam tai banglay likhte parchina. Amon akti golpo hridoyer majhe onek din dag kete roibe,golper seshe ase chokhe jol ese gelo :-( Amade joboner amon bastobotar ki konodin oboshan hobena? Oboseshe apnake roilo onek onek dhonnobad o shuvechcha ai golpotir jonno
এফ, আই , জুয়েল # অসাধারন এক পারমানবিক চেতনাময় গল্প । এর বাহার , রঙ,রুপ----সত্যিই অপরুপ । সমাজের বিভিন্ন স্তরের বাস্তবতা , নেগেটিভ ধারনা আর বিয়ের পর নারীরর অসহায়ত্বে করুন রুপ মারাত্ক ভাবে এ লেখায় ফুটে উঠেছে । ধন্যবাদ ।।
Azaha Sultan আচ্ছা, আমাদের আর খাঁচার ময়না পাখির মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আমরা যে কিনে আনা সেই শখের ময়না। নাহ, খবর এলো বাপের বাড়িতে যায়নি। সম্ভাবনার জানলা এঁটে গেলে, এবার দরজা খুলে দেয়া হলো। একজন ভাবনায় যোগান দিলো, 'পিরিতির টান; ছিনাল, পুরা ছিনাল।' শ্বাশুড়িও সায় দেয় 'একটা গয়নাও নাই।' আমরা তখন সম্ভাব্য পুরুষটিকে কল্পনা করি, বউটিকে কল্পনা করি।// এ ত আমাদের সংসারে নিত্য ঘটে যাওয়া......সত্য.......আচ্ছা, ও কি আত্মহত্যা করেছিল, নাকি খুন......?
মাইদুল আলম সিদ্দিকী দৌড়ঝাঁপ, হা-ডু-ডু, দড়ি লাফ, বউচি খেলাগুলো মিস করি; লেখাটা পড়ে মুহুর্তেই ছোটবেলাটা মনে পড়ে গেল। শেষভাগের কথন দারুণছিল!
রোদের ছায়া অনেক ভালো লাগলো ছিমছাম গল্পের শব্দের বুনন। অনেক অনেক শুভকামনা ।
সেলিনা ইসলাম অসাধারণ...! চমৎকার সব উপমা সমৃদ্ধ নিগুঢ় বাস্তবতা লেখক সফলভাবে তুলে ধরেছেন যা মন ছুয়ে গেছে। তবে কেন যেন মনে হল "মুখের ভেতর ঘর তোলা পান"-এখানে ঘর তোলা পান না হয়ে ঘোর তোলা পান-হলে মনে হয় আরো ভাল হত- কারন পানের জাবর কাটতে কাটতে অন্য জগতে চলে যাওয়া / ঘোরের ঘুর্ণিপাকে চিন্তা শক্তির গভীরতা / দ্রুত করা অর্থে-আমি এমনটা ভেবেছি লেখক ভাল জানেন কোনটা সঠিক। গভীর মুগ্ধতায় সতত শুভকামনা প্রিয়

১০ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অভিমান”
কবিতার বিষয় "অভিমান”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মার্চ,২০২৪