মধ্যরাতের এক হাজার চোখ

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০১৭)

প্রজ্ঞা মৌসুমী
গেরুয়ারঙা কফি মগে মাছের চোখের মতো 'ট্যাম্প কন্ট্রোল বাটন'টা মুমূর্ষু রোগীর ফুসফুসের ওঠানামার মতো করে জানান দিচ্ছে লাল রঙের সর্তকতা। মিদমাম নিজের অজান্তেই যেন ক্রমাগত বাড়িয়ে যাচ্ছে কফির তাপ। হয়তো ওর মনে পড়ছে- একশ বছর বরফ কাঁধে ছুটে চলা আগুনের খোঁজে সেই তপস্বিনী সিলিকা। অবশেষে একদিন যে খুঁজে পায় আগুন। আহ, এতটা অসহ্য সুখ! তীব্র সুখে, আকাঙ্খায় সিলিকা বুকে জড়ায় আগুন। তিন হাজার ফারেনহাইটের উত্তাপে গলে গলে মেয়ে হয় আয়না। পৃথিবীর প্রথম আত্নাহুতি। পৃথিবীর প্রথম আয়না। আজও সিলিকার মৃত্যুদিনে পতঙ্গরা বেরিয়ে আসে, ঝাঁপ দেয় আগুনে। আজও সিলিকার মৃত্যুদিনে কোথাও না কোথাও কেউ একজন হারিয়ে যায় আয়নায়।

প্যারাকুট গলির বুড়ো আরাকাস যে প্রতিমা শিল্পীর মতো তুলি ধরে রোবটের গায়ে, বাতিল সব রোবটের পার্টস থেকে ছোট ছোট রোবট-পুতুল বানায় পথশিশুদের জন্য, কত যে কিম্ভূত গল্প শোনায় মিদমামকে। ও বলে- রাতের থাকে এক হাজার চোখ। তাই কী চোখে পড়ে নিমগ্ন বসে থাকা মিদমামের গভীরের অস্থিরতা? যে অস্থিরতা বন্ধ জানালায় হঠাৎ আটকে পড়ে ছটফট করতে থাকা এক উড়ন্ত পোকার গভীরে হয়। অথচ 'টুডে'স এন্ট্রি' রিভিউ করলে জানা যাবে আর সব গতানুগতিক বুধবারের রাতের মতোই দিঞাণ-মিরকাস-সেনোরার সাথে কাটানো মিদমামের মধ্যরাত। তুমুল উত্তেজনায় দ্রৌপদীর মতো সেক্সি-রোবট হেভেনের বস্ত্রহরণের রাত। প্রার্থনার মতো উচ্চারণের রাত- আমাদের আকাঙ্খা যৌনসঙ্গ, যৌনসঙ্গী নয়।

কিংবা তারও আগে 'রেন্টিং রোবট সার্ভিস' থেকে জেনিন-৭ আসে, সারা দুপুর বাঁধাধরা কাজ সারে, গুনগুন করে, ভুলোমন মিদমামের চিরুনি খুঁজে নিয়ে চুল আচড়ে দেয়, তারপর দুপুরে উম্মাদনা নেমে এলে মিদমামকে সঙ্গ দেয়। রেটিং পাবার জন্য নয়। আরও কোন গভীরের তোলপাড়ে ডোবে জেনিন। হয়তো তাই ঘুমপাড়ানি রূপকথার মতো ও মিদমামকে প্রিয় লিলির গল্প শোনায় যে লিলি রোবটের প্রেমে পড়েছে। আইনে যেদিন আর বাঁধা থাকবে না, সেদিন ওরা সংসার করবে। ঘুমের অতলে ডুবে যেতে যেতে মিদমামের মনে হয়- ওর বুক জুড়ে বঁধুয়া, মধুমন্তী সংসার। ঝড়ে পড়লে জাহাজে যেমন তোলপাড় হয়, সে তোলপাড় মিদমামেরও হয়। তবে অস্থিরতায় নয়, উন্মাদনায়।

এই রক্সেনডিকের শহরের প্যারাকুট গলিতে পুরনো সব রোবটের বাজার বসে, কেউ পুরনো রোবট কিনতে আসে, কেউ আসে রোবটের পার্টস কিনতে। এ শহরে দেবী গড়ার মতো বুড়ো আরাকাস রঙতুলি ধরে, প্যারাকুটের পাশে রেডস্ট্রিটে নিলামে উঠে শত শত হিউম্যানয়েড/ জেমিনয়েড রোবট, বিক্রি হয় ক্রীতদাস। শত জোড়া লোভাতুর হাত ছুঁয়ে যায় একেকটা রোবটের শরীর। এদের অনেকেই মধ্যরাতের পার্টিতে ধর্ষিত হয় আক্ষেপহীন বিনোদনের নামে। এই গতানুগতিক শহরের, এইসব গতানুগতিক মধ্যরাতে মিদমামের এত ব্যথা, এত অস্থিরতায় দেয়ালে টাঙানো আমার কঙ্কালে দ্বন্দ্ব তৈরি করে!

একেকটা মুগ্ধ দৃষ্টির ভাবনায় কেন সে নিজেকে হঠাৎ এফোঁড় ওফোঁড় করে! ওর কী মনে আসে সেই মুখ যার আদলে তৈরি হয়েছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জেমিনয়েড/ হিউম্যান রোবটের একটি- দ্য ডিভা!  পৃথিবী আলোড়িত হয় অথচ মেয়ে থমকে যায় বিষাদে। ওর মনে হতে থাকে দ্য ডিভা যেন ছাড়িয়ে গেছে মানুষ মেয়েকে। আর ও আলো হতে গিয়ে হয়ে গেছে আড়াল, যেমনটা হয় ছবির মডেল, আঁকা কোন ছবির রঙে। বিষাদী মেয়ে আত্মহত্যা করে। সুইসাইড নোটে অবশ্য নিজেকে দান করে ল্যাবরেটরিকে। দ্য ডিভা আরও নিখাদ হয়, বিষাদী হয় মানুষের মতো। তারপর কোথায় যেন একদিন হারিয়ে যায়। মধ্যরাতের শহরে বুড়ো আরাকাস অমীমাংসিত রহস্যের মতো কিংবা ছোট্ট এক দীর্ঘশ্বাসের মতো উচ্চারণ করে- লস্ট ইন এ মিরর, দ্য ডিভা, মাদার অব মিদমাম।

দু'শ পঞ্চাশ, দু'শ একান্ন... তাপমাত্রা বাড়ে। বাড়ে মুমূর্ষু রোগীর ফুসফুসের ওঠানামার মতো লাল রঙের সর্তকতা। হাজার চোখের রাতে হয়তো কোথাও জেগে উঠে ঘুমন্ত আগুন অথবা কল্পনা নিছক।

প্যারাকুট গলির বুড়ো আরাকাস কখনো কী বলেছিল সিলিকার মৃত্যুর তারিখ?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পের থীম ও বিষয় বের করতে অনেকবার পড়া হয়েছি, তবে এটা যে চমৎকার গল্প তাতে সন্দের নেই..... শুভকামনা রইল দিদি
অনেক ধন্যবাদ। অনেকবার পড়তে হল শুনে খারাপ লাগলো। আপনার গল্পের মতো আমারও বিষয়ও হয়তো মৃত্যু...."যখন গিয়েছে পঞ্চমীর চাঁদ/মরিবার হল তার সাধ..." শুধু সিসিটিভিতে কারণটা ধরা পড়ে না কখনো।
অজয় দেব ভালো লেগেছে ... আপনার কবিতা । আপনার কবিতা অথবা ছোট গল্প রেকড করে আমাকে দিতে পাড়েন আমি ভিডিও বানিয়ে আমার চ্যানেল দেবো ... please click link www.youtube.com/durbinvalobasha যোগাযোগ 01676114538
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত উপস্থাপনা সুন্দর । গল্পের চরিত্রগুলোর চরিত্রায়ন ভাল লেগেছে । শুভকামনা ।
এশরার লতিফ এই গল্পের আস্বাদন পূর্ণ মনোযোগ দাবী করে, মাল্টিটাস্কিং এর অবকাশ দ্যায় না। গভীর, সংহত এবং কাব্যিক কল্পবিজ্ঞান। অনেক শুভেচ্ছা রইলো।

১০ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী