ঝরা পাতা

কষ্ট (জুন ২০১১)

মৃন্ময় মিজান
  • ৬২
  • 0
১.
সর্বস্ব খুইয়ে গাছ থেকে খসে পড়ল একটি সবুজ পাতা। ঝরা পাতার হাহাকারে কাঁপন ধরলনা কোথাও। এখানে সেখানে বাতাসের ঝাপটায় ছিটকে যেতে যেতে বিবর্ণ আর মলিন হল অবয়ব। একটা দুর্বার সাথে কিছুক্ষণ লেপ্টে থেকে জিরিয়ে নিচ্ছিল বোধহয়। আরেকটা দমকা হাওয়া ছিটকে নিয়ে গেল দৃষ্টিসীমার বাইরে কোথাও।

শতবর্ষী গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে অমীয় দেখছিল প্রকৃতির নিষ্ঠুর হেঁয়ালী। সেও কি এমনি এক ছিন্ন পাতা ? প্রশ্নটি মনে আসতেই চোখের কোনে অনুভব করল ঝর্ণার কলকল ধ্বনি। বুকের ভেতর চেনা সেই ব্যাথাটি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। অথচ চোখ বুজলেই ফিরে যেতে পারে স্বপ্নরাঙা সোনালী শৈশবে।

২.
মাঠের আলপথ ধরে হেঁটে যাচ্ছে এক দঙ্গল ছেলেমেয়ে। বাতাস আর রোদের মাখামাখিতে সবুজ ফসলের ক্ষেত পার হচ্ছে স্বাপ্নিক ভাবালুতায়। দিগন্ত বিস্তারী সুবজের সমারোহ পেরিয়ে ছায়াঘেরা স্কুলঘরে ওদের স্বপ্নের চাষ। সেখানে সুর করে নামতা শেখার তালে তালে বিভোর হয় মায়াপুরীর রঙিন স্বপ্নে।

লোখাপড়া শিখে গাড়ীঘোড়ায় চড়ার স্বপ্নই শুধু নয়; সূর্যের সাথে পাল্লা দিয়ে হাড়-ভাঙ্গা পরিশ্রমের বদলে একটু আরাম আর আয়েশের স্বর্ণালী আগামী যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে!

৩.
হঠাৎ করেই হারিয়ে গেল মধ্যদুপুরের গনগনে উত্তাপ আর শিশুকন্ঠের নানান কলধ্বনি। চারদিক ছেয়ে গেল অশরীরি সাপের বিষাক্ত ছোবলে। নেমে এল আঁধারের রাত সঙ্গে নিয়ে সহজাত বিপন্নবোধ।

উঠোনে অনেক মানুষের হাঁকডাকে ঘুম ভাঙে অমীয়’র। ঘরের দরজা খোলা। মা আগেই বের হয়েছেন। হঠাৎ মায়ের কান্না এল কানে। ‘মা কাঁদছে কেন?’ একটু এগুতেই বাবার নিথর দেহ অবাক করল সদ্য ক্লাশ টু-এ ওঠা বালককে। ‘বাবা কেন এভাবে শুয়ে আছে?’ মাকে স্পর্শ করতেই অমীয়কে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। ডুকরে উঠলেন তীব্র বুকফাটা আর্তনাদে। সেই শোকে রাতের আকাশ থেকে ঝরেছিল কি কোন নক্ষত্র ? বাতাসে কি হয়েছিল শিশুপুত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন কানাকানি ? অমীয় জানেনি, জানেনা আজো!

অমীয়, ছোট্ট মনের ছোট্ট বালক, তখনো বুঝেনি শুয়ে থাকা মানুষটি আর কখনো ডাকবেনা তাকে। কখনো আর বাবার কোলে ওঠার বায়না ধরতে পারবেনা। নদীর ভাঙ্গা কূল ধরে একসাথে হেঁটে যাবার দিন ফিরে আসবেনা আর কখনো। গায়ে অনেক ময়লা জমলেও কেউ আর জোর করে গোসল করিয়ে দিবেনা তাকে।

৪.
মায়ের চোখে স্বপ্ন ছিল অফুরান। সেই স্বপ্নের জোরে এইচএসসিতে বোর্ড স্ট্যান্ড করে অমীয় উঠে এল রাজধানীর আলো ঝলমল রঙিন ভূবনে। পড়াশুনো শেষে মাকে নিয়ে আসবে কোন প্রাসাদোপম বাড়িতে- এই স্বপ্নে ধুতরার নির্যাস ঢেলে মা চলে গেলেন না ফেরার ভূবনে।

বাবার মৃত্যুতে শোক প্রকাশের সুযোগ পায়নি বয়সের ফেরে। আর মাকে দেখতেও পেলনা শেষবারের মত। মায়ের কবরে ফাতেহা পড়তে পড়তে চোখজুড়ে নেমে এল বিষাদের শত স্বরলিপি। সারা শরীর কাঁপতে লাগল কান্নার হুহু আবেগে। মাকে আরেকবার দেখার আশায় কবরের দিকে তাকিয়ে থাকল নিষ্পলক। ‘মাগো শুধু একবার দেখা দিয়ে যাও’। কিন্তু হায় ‘এ পথ যে চলার পথ, ফেরার পথ নয়।’

৫.
সব হারানোর বেদনাকে সাথী করে ঢাকায় ফিরে অমীয়। কে বলে, ‘এই শতকে মানুষের শোকের আয়ু বড়জোর দুই মাস?’ শোকের সময় দীর্ঘ বড়। হল, ক্লাস আর লাইব্রেরী করে কাটছিল সময়। হঠাৎ একদিন এক অপ্সরী বসল অমীয়’র টেবিলে। হা হয়ে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। একে কি বলে বজ্রাহত ? মেয়েটি একটু হেসে বলল- ওভাবে তাকিয়ে থাকলে চোখ যাবে ! বেচারা লজ্জায় মাথা নিচু করল। অনেক কষ্টে উচ্চারন করল - স্যরি। তারপর শুরু। কত কথা, কত গান, কত ঝগড়া আর মান-অভিমানের খেয়া পেরিয়ে ওরা পৌঁছে গেল দুজনের মনের নির্দিষ্ট বন্দরে। তারপরই হঠাৎ কালবৈশাখের মত্ত ঝাপটা।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হল অমীয়’র সাধের জীবন। কারো অদৃশ্য ইশারায় ও হয়ে গেল ক্ষমতাচ্যুত দলের আর্মস ক্যাডার। একজন নিরপরাধকে থানায় নিতে বেগ পেতে হলনা পুলিশের। তারপর যেন এক নিঃসীম দুঃস্বপ্নের রাত। রাতের আঁধারে ভেসে উঠতে লাগল শুধুই পিতৃহন্তারক রাতের দৃশ্যপট। রাত ভোর হলে অমীয় জানতে পারে এতদিনে ও হারিয়ে ফেলেছে ছাত্রত্ব। একজন ক্যাডার হারিয়ে গেলে শিক্ষকদের কী এমন আসে যায়, হোক না সে প্রতিহিংসার শিকার!

৬.
অমীয় আজ একা। ওর শিক্ষাজীবন গেছে, প্রেম গেছে, স্বপ্ন গেছে। ছিন্ন পাতার মত বাতাসের ঝাপটায় উড়ে বেড়ায় এখানে ওখানে। মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিঃসীম অন্ধকারে চোখের পাতা ভিজায়; আর ভাবে, ‘হায়! জীবন এত দীর্ঘ কেন ? কেন অবেলায় নিভে গেলনা সাধের প্রদীপ!’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নীলকণ্ঠ অরণি ঝটপট পড়ে ফেললাম গল্পটা...সুন্দর
ধন্যবাদ। আপনি দেখছি অনেক ঝটপটে... (চটপটে)
ওয়াদুদ ফারুক আমার খুব ভাল লেগেছে. ভাইয়া ভাষার ভাব প্রঞ্জলতা আমাকে খুব অভিভুত করে. সত্যি খুব সমৃদ্ধ একটা লেখা.
কাজী Rafi শুভ কামনা ...মৃন্ময় মিজান
খন্দকার নাহিদ হোসেন লেখাটা আমার কাছে বেশ লাগলো। গল্পে লেখকের মায়াটুকু টের পাওয়া গেল।
শাহ্‌নাজ আক্তার বাবা-মা যার নেই একমাত্র সেই বুজতে পারবে অমীয় এর কষ্টটা কি .....খুব কষ্ট লাগছে অমীয় এর জন্য ....খুব ভালো লিখেছেন মিজান ভাই ...ধন্যবাদ
মোঃ আক্তারুজ্জামান বাস্তবতার চাবুকে ক্ষত বিক্ষত এক জীবনের চাল চিত্র একেছেন এবং তাতে নি:সন্দেহে সফলকাম হয়েছেন|
Abu Umar Saifullah amar khace onek onek valo legeche
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) মৃন্ময় মিজান এর ঝরা পাতা ,কষ্টে ভরা আমার হৃদয় খাতা /
মৃন্ময় মিজান যারা গল্পটি পড়েছেন এবং মূল্যবান মতামত দিয়েছেন সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা। ইচ্ছা ছিল প্রত্যেকের মন্তব্যে আলাদা করে কথা বলার। কিন্তু ব্যস্ততা হেতু তা আর হয়ে উঠলনা।আশা করি সবাই বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হাচান আরিফ চোট গল্প ভালো লাগলো;

১০ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী