বউ

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

বিষণ্ন সুমন
  • ৪৫
বিয়েটা হঠাৎ করেই হয়ে গেল। আগে থেকে কোনোরকম প্রস্তুতি ছিল না। ঈদের ছুটিতে ফরিদ গিয়েছিল বাড়িতে। যেয়ে শুনে তার বিয়ে। বাবা নিজেই মেয়ে ঠিক করে রেখেছেন। কথাটা শুনে একটা বড় রকম ধাক্কা খেলেও কিছু করার ছিল না। কারণ বাবার কথার অবাধ্য হবার সাহস তার নেই। ফলে বিয়েটা করতেই হলো। তারপর ছুটি শেষে নতুন বউকে সাথে নিয়েই ফিরে এলো ঢাকায়। সেই থেকে শাহানা নতুন বউ হয়েই তার সাথে আছে। নতুন বলতে হচ্ছে এইজন্যই, যেহেতু ওকে এখনো সে স্পর্শ করনি। আর করবে কি করে, তাকে তো সে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। কোনোদিন পারবেও না বোধকরি। কারণ ওর তো পছন্দ প্রিয়দর্শীনি রুবিনাকে।

রুবিনা ওর সহকর্মী। একই অফিসে কাজ করছে আজ বছর তিনেক হলো। মফস্বলের ছেলে হলেও ভাল ছাত্র হবার সুবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীটা আয়ত্ব করতে ফরিদের কোনো বেগ পেতে হয়নি। ওরকম একটা ডিগ্রী ছিল বলেই দেশের প্রথম শ্রেণীর একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকুরী পেতেও অসুবিধে হয়নি তার। তবে ভার্সিটি থাকাকালীন কোন মেয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া ওর পক্ষে সম্ভব ছিল না। বাবার রক্তচক্ষু বরাবরই তাতে একটা বড় রকম বাধা হয়ে ছিল। কিন্তু, কর্মজীবনে প্রবেশের পর নিজের পায়ের উপর দাড়িঁয়ে যাবার সুবাদে তার চিন্তা-চেতনায় কিছুটা পরিবর্তন এলো বৈ কি। যারই ফলশ্রুতিতে সহকর্মীর সাথে বেশ গভীর রকম একটা সম্পর্কে জড়িয়ে গেল। ভেবেছিল আর কিছুদিন বাদে সে নিজেই মা' কে দিয়ে বাবাকে তার পছন্দের কথাটা পাড়বে। কিন্তু তা আর হলো কই। আচমকা বাবার এরকম একটা সিদ্ধান্ত তার ইচ্ছের গুড়ে বালি ঢেলে দিল।

যেহেতু এই বিয়েটা সে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। তাই সাথে করে নিয়ে এলেও শাহানাকে এখনো স্ত্রীর স্বীকৃতি দেয়নি। একটা নির্দিষ্ট মাপের দূরত্ব বজায় রেখে চলছে প্রতি নিয়ত। যেন তারা দুটি আলাদা নর-নারী, স্রেফ সময়ের প্রয়োজনে এক সাথে বসবাস করছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে অফিসের উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে পড়া, তারপর অনেক রাতে ঘরে ফিরে ডাইনিং টেবিলে রাখা খাবার খেয়ে ঘুমুতে যাওয়া, এই হচ্ছে তার নিত্য রুটিন। পার্থক্য একটাই, আগে নিজেকে সব কিছু করে নিতে হতো। আর এখন শাহানার বদৌলতে সব'ই রেডী পায়।

তবে মফস্বলের মেয়ে হলেও শাহানা শিক্ষিতা। রীতিমত ডিগ্রী পাশ। তাই ফরিদের এহেন আচরনের কোন ব্যখ্যা খুঁজে না পেলেও এটুকু বুঝলো, তার স্বামী আসলে তাকে পছন্দ করতে পারেনি। এটা বুঝতে পেরে তার দুঃখের সীমা রইলো না। সাদাসিধে বাংগালী নারী বলতে যা বুঝায় ও আসলে তাই। শামবর্ণের মাঝারী উচ্চতার হালকা-পাতলা গড়নের মেয়ে। গোলগাল মুখটায় একটা সরল ছাপ লেগে থাকে সবসময়। ওর ঢলো-ঢলো মায়াভরা চোখ দেখে অপছন্দ করবে না কেউ। সেই কারণেই ফরিদের বাবা নিজে ওকে পছন্দ করেছেন জেনে, বিয়েতে কোনো আপত্তি করেনি। যদিও বিয়ের আগে কেউ কাউকে দেখেনি, তবুও ওর ধারনা ছিল যে ছেলে বাবার ইচ্ছেকে সন্মান জানিয়ে না দেখে বিয়ে করতে পারে, সে অবশ্যই তাকে পছন্দ না করে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে এ কি হয়ে গেল !

তবে মেয়ে হিসেবে সে এটুকু বুঝে তার মাঝে সৌন্দর্যের যতটুকু ঘাটতি আছে তা যদি কোনোভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায়, তবে তার স্বামী চোখ ফেরাতে বাধ্য। সেই চিন্তা থেকেই সে নিজেকে সাজাতে বসে গেল।




রাতে বাসায় ফেরার পর শাহানাকে দেখে রীতিমত ভীরমি খেল ফরিদ। সারা মুখ জুড়ে কড়া মেকাপ এর সাথে ভারী গহনায় জুড়ে রেখেছে নিজেকে। এতে তাকে যতটুকু না সুন্দর লাগার কথা, তার চেয়ে বেশী কদাকার মনে হলো ওর কাছে।

কি ব্যাপার,এত সেজেছো কেন ? কিছুটা বিরক্তির স্বরে জানতে চাইলো।

তোমার পছন্দ হয়নি ? আহত বোধ করলো শাহানা। ভেবেছিল তাকে এভাবে দেখে খুশী হবে ফরিদ।

তোমাকে নতুন করে পছন্দের কি আছে ? একজন তো পছন্দ করে গলায় ঝুলিয়েই দিয়েছে। ওকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত বেডরুমে চলে গেল। ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে বলল, মুখ ধুয়ে এসো, তোমাকে একদম সঙ এর মত লাগছে।

সেদিন রাতে ঘুমুবার আগে অনেক্ষণ কাাঁদলো শাহানা। পাশেই তার স্বামী শুয়ে আছে। কিন্তু, তাকে স্পর্শ করার বিন্দুমাত্র সাহস হলো না তার।




ফাস্ট ফুড কর্ণারের এক কোণের টেবিলে বসে আছে ওরা। সামনে ধুমায়িত কফির কাপ। কিন্তু দ'ুজনের কেউই তাতে চুমুক দিচ্ছে না। অফিস শেষে সোজা এখানে চলে এসেছে। এরইমধ্যে ফরিদের কাছে সবই শুনেছে রুবিনা।

কিছুটা ধাতস্ত হয়ে একসময় মুখ খুললো, এখন তবে কি করবে ঠিক করেছো ?

জানি না । কাঁধ ঝাকিয়ে হাল ছেড়ে দেবার ভঙ্গী করলো ফরিদ। তবে ওকে আমি একদমই সহ্য করতে পারছি না।

আমার মনে হয় সব কিছু মেনে নিয়ে ওর সাথেই সংসার করা উচিৎ তোমার। টেবিলের উপর রাখা ফরিদের হাতের উপর নিজের হাতটা রেখে হালকা একটা চাপ দিল রুবিনা। কারণ তুমি নিশ্চয়ই ওকে ডিভোর্স দিতে পারবে না।

মুহুর্তেই মুখটা উজ্জল হয়ে উঠলো ফরিদের। পারবো রুবি। তুমি যদি এখনো আমাকে বিয়ে করতে রাজী থাকো, তবে ওকে আমি ঠিকই ত্যাগ করতে পারবো। ওর হাতের উপর রাখা রুবিনার হাতটাকে নিজের মুঠোয় ভরে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো। তুমি শুধু আমাকে ক'দিন সময় দাও। কন্ঠে অনুনয় ঝরে পড়লো ওর। তারপর মুখটাকে একটু সামনে এগিয়ে নিয়ে রুবিনার কানের কাছে ফিসফিস করে কিছু কথা বলল।

শুনে চোখ স্ফীত হয়ে গেল রুবিনার। ওকে ডিয়ার। কেরী অন। মিষ্টি হেসে ফরিদকে সাহস যোগালো। আই উইল ওয়েট ফর ইউ আনটিল দা গেম অভার।




এই যে নবাবজাদী পড়ে পড়ে ঘুমানোর জন্যেই এখানে এসেছেন বুঝি ? বলি আমার নাস্তাটা কে রেডী করে দেবে শুনি ? আপনার বাবার বাড়ী থেকে কেউ এসে করে দিয়ে যাবে নাকি ? কানের কাছে ফরিদের রীতিমত চিৎকারে ধড়মড়িয়ে উঠে বসলো শাহানা।

রাতে ভালো ঘুম হয়নি বলেই সকাল হয়ে যাবার পরও ঘুম ভাঙ্গছিল না তার। আজ কদিন যাবৎ ফরিদ খুবই বাজে বিহেভ করছে তার সাথে। কারণে-অকারণে এটা-সেটা বলে অপমান করছে। অথচ এর হেতু কি এটাই সে বুঝতে পারছে না। তার খুব কষ্ট হয় এই ভেবে যে, সে তো আর জোর করে ওর বউ হয়ে আসেনি। যেহেতু তাকে বিয়ে করেছেই, তবে কেন এরকম করছে তার সাথে। তার দোষটা কোথায়, তাই সে ধরতে পারছে না। তার খুব ইচ্ছে করে স্বামীকে এ প্রশ্নগুলো করতে। কিন্তু কিসের কি একটা বাধা এসে তার কন্ঠ রোধ করে দেয়। বুকের কথাগুলো মুখের কাছে এসে হামলে পড়ে। বেরুবার পথ পায় না। আর তাই রাতে শুয়ে শুয়ে চোখের পানিতে বালিশ ভেজানো ছাড়া কিছুই করার থাকে না তার।

পাশেই স্বামীকে ড্রেসাপ করতে দেখে প্রায় দৌড়ে কিচেনে ঢুকে গেল শাহানা। তড়িঘড়ি করে কয়েক পিস পাউরুটি ডিম দিয়ে ভেজে নিয়ে এলো। টেবিলে সাজিয়ে স্বামীকে ডাকতে যাবে, এমনি সময় ঝড়ের বেগে তাকে পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে যেতে উদ্যত হলো ফরিদ।
নাস্তা খাবে না ? পিছু ডাকলো শাহানা।

তোর নাস্তা তুই খা । চিবিয়ে চিবিয়ে কথাটা বলেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেল ফরিদ।

হতভম্ব হয়ে গেল শাহানা। ফরিদের শেষ কথাটা তার কানের কাছে রীতিমত গুঞ্জন হয়ে বাজতে লাগলো। দরোজাটা বন্ধ করে তাতে কপাল ঠেকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ও।




হুম্ ঠিক পথেই এগোচ্ছ তুমি। আমার বিশ্বাষ এতেই কাজ হবে। খুব বেশিদিন এরকম অত্যাচার সহ্য করতে পারবে না। দেখো একদিন ঠিকই পালাবে। ফরিদের মুখ থেকে সবকিছু শুনে ওকে আশ্বস্ত করলো রুবিনা। কপালের উপর পরে থাকা চুলের গোছাটাকে হাত দিয়ে ঠেলে পিছনে সরিয়ে দিল। তারপর যোগ করলো, ওর জায়গায় আমি হলে অনেক আগেই চলে যেতাম। এরকম অপমানের পর তোমার সাথে থাকা আমার পক্ষে মোটেও সম্ভব হতো না।

কিন্তু ডিয়ার ওটা তুমি নও। চেয়ারের ব্যাকরেষ্টে গা এলিয়ে দিল ফরিদ। এ হচ্ছে টিপিক্যাল বাংগালী রমনী। একদম কাঠালের আঠার মত। একবার লেগে গেলে আর কিছুতেই ছাড়ানো যায় না। বলে হো হো করে নিজেই হেসে উঠলো ফরিদ। রুবিনাও হাসিতে যোগ দিল। ঠোঁটের বাম কোণটা অতি সুক্ষভাবে বেঁকে উঠছে তার। মনে মনে বলল, বোকা।




দরজা খোলে ফরিদকে দেখেই অাঁতকে উঠলো শাহানা। টকটকে লাল চোখ। চুল উস্কুখুস্কু। এ কি্ব ! কি হয়েছে তোমার ? জানতে চাইলো।

ওকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল ফরিদ। কোনো উত্তর করলো না। দরজাটা বন্ধ করে প্রায় দৌড়ে ওর পিছু পিছু এলো শাহানা।
ততক্ষণে ধপাস করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে তার স্বামী। চোখ বন্ধ। কপালে হাত দিয়ে দেখলো, হাতের নীচে শিরাটা জ্যান্ত কৈ মাছের মত লাফাচ্ছে। অগত্যা পাশে বসে মালিশ করতে লেগে গেল।
কখন যে চোখটা লেগে এসেছিল শাহানার নিজেওে জানে না।
আচমকা মাথার পাশে বেমক্কা ঘুসি খেয়ে বিছানা থেকে ছিটকে মেঝেয় পড়ল। তার মনে হলো মাথার ভেতরে বোমা ফুটেছে। প্রথমটায় কিছুই বুঝতে পারলো না। কানের পাশে তীব্র ব্যথায় চিতকার দিতে গিয়েও চুপ করে গেল। খুনী চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে ফরিদ। হারামজাদী তোর সাহস কত, আমার মাথা টিপতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়িস। হাতের মুষ্টি তুললো। চুপ, একদম চেচাবি না। তাহলে ঘুসি মেরে মুখ ভেঙ্গে ফেলবো। এবার বুঝতে পারলো শাহানা আসলে কি ঘটেছে। ভয়ের একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলে তার পিঠ বেয়ে। দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠলো।

সে রাতে আর ফরিদের সাথে এক বিছানায় শোবার সাহস হলো না শাহানার। তাই ড্রয়িং রুমের সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে পড়ে থাকলো। কি এক অজানা আশংকায় দু'চোখের পাতা মেলাতে পারলো না। তার কল্পনাতেও আসেনি ফরিদ কখনো গায়ে হাত তুলবে। ঘটনাটা মনে হতেই তার দু'চোখ ভরে জল এল। কিন্তু কাঁদতেও ভয় হলো। পাছে ফরিদ শুনতে পায়, তাই নিঃশব্দে ফুপিয়ে চলল। বুকের ভেতরটা তার ভেঙ্গে খানখান হয়ে যাচ্ছে।

সকালে ঘুম ভাঙ্গবার পর ফরিদকে কোথাও দেখতে পেল না। নিজেকে ভীষন অপরাধী মনে হলো শাহানার। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল টেরই পায়নি। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেল। আজো তার স্বামীকে না খেয়ে অফিসে যেতে হলো। গত রাতের ঘটনা মনে পড়ায় একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল বুক চিড়ে। আশ্চর্য ফরিদের প্রতি তার কোন রাগই হচ্ছে না। বরং ওর মন জয় করতে না পারার জন্য নিজেকেই দোষী মনে হলো। মনে পড়ল, কোন কারণে বাবা রাগ করলে মা তার প্রিয় খাবারগুলো রেধে খাওয়াতো। চিন্তাটা তার মাথাতেও খেলে গেল। কিন্তু ও যে কি খেতে পছন্দ করে তাই তো জানে না। অগত্যা ফ্রিজের ভেতর রাখা সবকিছু এক এক করে নামাতে লাগলো। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, আজ সে অনেক কিছু রান্না করবে। এর কোনটা না কোনটা তার স্বামী পছন্দ করবেই।




আমি শিওর আজ ও ঠিক ভেগে যাবে। গত রাতের ঘটনাটা শুনে ফরিদকে জোর দিয়ে বলল রুবিনা। ওর যদি নুন্যতম আত্নসন্মানবোধ থাকে, এরপর আর তোমার ঘর করা সম্ভব হবে না।

তাই যেন হয় রুবি, দোয়া কর তাই যেন হয়। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কথাটা বলল ফরিদ।





রাতে বাসায় ফিরে শাহানাকে দেখে অবাক হয়ে গেল ফরিদ। তার মাথায়ই এল না, এরকম একটা ঘটনার পর কোন মেয়ে তার সাথে থাকতে পারে। এখন তার ভুমিকা কি হওয়া উচিৎ বুঝতে পারলো না। চোখ-মুখ শক্ত করে একটা রাগী ভঙ্গী করে বেডরুমে চলে এল। পিছু পিছু এল শাহানাও। স্বামীর মুখোমুখী হতে ভীষন ভয় হচ্ছে তার। তবুও কি এক অজানা শক্তিবলে বলে উঠলো, আমি খাবার রেডী করছি। তুমি টেবিলে এস।

কথাটা কানে যেতেই রাগে ফেঁটে পড়ল ফরিদ, তোকে কে বলেছে আমার জন্য রান্না করতে ? আমি তোর খাবার খেতে চেয়েছি নাকি ? তারপর দৌড়ে চলে এল শাহানার দিকে। হাত বাড়িয়ে ওর চুল মুঠিতে ধরল। এই মেয়ে তুই কেন বুঝতে পারছিস না। তোকে আমি একদম সহ্য করতে পারছি না। তারপরেও কেন এত পিরিত দেখাচ্ছিস ? তোর কি লজ্জা শরম কিছু নেই। সমান তালে চেচিয়ে যেতে লাগলো। পরক্ষণেই একটা জোরালো ধাক্কা মেরে ঠেলে দিল দরজার দিকে। দুর হ তুই আমার সামনে থেকে। আমি তোর মুখ দেখতে চাই না।
পলকা একটা বালিশের মত হুমড়ী খেয়ে পড়ল শাহানা দরজার উপর। মাথাটা শক্ত করে ঠুকে গেল দরজার সাথে। চিৎকার দিতে গিয়েও মুখ বন্ধ করে ফেলল ফরিদ আবারো তেড়ে আসছে দেখে। লাফিয়ে ওর পায়ের উপর পড়লো। প্লিজ আমাকে তুমি আর মেরো না। তুমি চাইলে আমি কালই চলে যাব। তবুও তুমি খেয়ে নাও। দেখো ঘুম থেকে উঠেই তুমি আর আমায় দেখতে পাবে না। এই তোমার গা ছুয়ে কথা দিচ্ছি। ওর গা স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়ালো।

এক ঝটকায় নিজেকে পিছিয়ে নিল ফরিদ। খবরদার তুই আমাকে স্পর্শ করবি না। আমাকে স্পর্শ করার কোন অধিকার তোর নেই।
কি বলছ তুমি ! অস্ফুট স্বরে বলল শাহানা। মাথার আঘাত পাওয়া জায়গাটা ডলতে লাগল হাত দিয়ে। আমি না তোমার বউ। আমায় যদি তোমার নাই পছন্দ তবে বিয়ে করলে কেন ?

কারেন্টে শক্ খাওয়া মানুষের মত লাফিয়ে উঠলো ফরিদ। তেড়ে এল শাহানার দিকে। ওর মুখ চেপে ধরল। চুপ একদম বাজে কথা বলবি না। আমি তোকে পছন্দ করিনি। যে করেছে তুই তার কাছে যা। তারপর মুখটা ছেড়ে দিয়ে একদম স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, তোর সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই তুই চলে গেলেই আমি খুশী হব। যেন আশ্বাস দিচ্ছে এমন ভঙ্গীতে মাথা নেড়ে যোগ করল, ভয় নেই। আমি তোকে ঠকাবো না। তোর বাড়ীর ঠিকানায় ডিভোর্স লেটারের সাথে দেনমোহরের টাকাটা ঠিকই পাঠিয়ে দেব।

স্থির চোখে তাকিয়ে থাকলো শাহানা। তার নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। মনে হচ্ছে তার পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। তারপর একসময় নিজেই নিজেকে বুঝালো, জোর করে আর যাই হোক সংসার করা যায় না। শান্ত স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো, বেশ তাই হবে। আমি কালই চলে যাব। কিন্তু দয়া করে আমাকে ডিভোর্স দিয়ো না। আমি কোনদিন স্ত্রীর অধিকার নিয়ে তোমার কাছে আসবো না। দূরে থেকেও সারাজীবন তোমাকেই স্বামী ভেবে যাব। প্লিজ এটুকু দয়া তুমি আমাকে কর।


ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কি দেখল ফরিদ, কে জানে। এরপর আর তাকে কিছু বলল না। বিজয়ীর সন্তুষ্টি নিয়ে সে ঘুমুতে গেল। সকালে ঘুম থেকে জেগে ঘরের কোথাও শাহানাকে দেখতে পেল না। যাক আপদ বিদেয় হয়েছে, কাঁধ ঝাকিয়ে শ্রাগ করলো। তারপর বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে ড্রেসাপ করতে লেগে গেল। জলদি অফিসে যেতে হবে। রুবিনাকে খুশীর খবরটা দিতে হবে। এক্ষুনি।




অফিসে যেয়ে রুবিনার ডেস্ক শূন্য দেখে বেশ অবাক হলো ফরিদ। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও ওর পাত্তা না পেয়ে মোবাইলে ফোন দিল। একি ! ওটাও দেখি অফ্ করা। এবার রীতিমত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো। তার মাথায়ই আসছে না এরকম একটা কান্ড রুবিনা করছে কি করে। অফিসে না আসুক অন্তঃত মোবাইলটা তো অন রাখবে।
পরপর কদিন চলে গেল। রুবিনা আর এল না। অবশেষে এডমিন অফিসারের কাছ থেকে জানতে পারলো, ও চাকরী ছেড়ে দিয়েছে। বাই পোস্টে রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দিয়েছে। খবরটা জেনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল ওর। একদিন ওর নামেও একটা চিঠি এল। হতের লিখা দেখেই বুঝতে পারলো এটা রুবিনার। দ্রুত ওটা খুলে পড়তে লাগলো .......ফরিদ, জানি তুমি ভালো নেই। কিন্তু, তোমাকে ভাল রাখবো সে উপায়ও আমার নেই। আমি অনেক ভেবে দেখলাম, তোমাকে বিয়ে করা আমার উচিৎ হবে না। প্রথমতঃ তুমি বিবাহিত। যদিও আমার কারণে বউকে ছেড়ে দেবে বলেছ। কিন্তু একজন ডিভোর্সড পুরুষকে বিয়ে করাটা আমার ফ্যামিলী কখনো মেনে নেবে না। আর দ্বিতীয়তঃ তোমার বর্তমান স্ত্রীর প্রতি তুমি যে রকম নিষ্ঠুর আচরন করছো, তাতে আমিও ভয় পেয়েছি। ভবিষ্যতে এরকম আচরণ তুমি আমার সাথেও করবে না, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ফলে অনেক ভেবেই আমি তোমার জীবন থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছি। তোমার সাথে যাতে আর দেখা না হয়, তাই ওখানকার চাকুরীটাও ছেড়ে দিলাম। আশাকরি তুমি সবই বুঝবে এবং তোমার বউকে নিয়েই সুখী হতে চেষ্টা করবে। ভালো থেক। শুভ কামনায়, রুবিনা।

চিঠিটা হাতের মুঠোয় দুমড়ে-মুচড়ে অয়েস্ট বাস্কেটে ফেলে দিল ফরিদ। বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা লাগছে তার। টের পেল এ শুণ্যতা আসলে ভুল করে সব হারাবার। পাশাপাশি শাহানা ও রুবিনাকে মানসটপটে দাঁড় করিয়ে বুঝতে পারলো, এদ্দিন কি ভুলই না সে করেছে। হীরে ফেলে মিছেই কাঁচের পেছনে ছুটেছে। সহসা মনে হলো তার এই অপরাধের শাস্তি কেবল একজনই দিতে পারে। সে হলো তার বাবা।

সেদিন বিকেলেই বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল ফরিদ। পেঁৗছুতে অনেক রাত হয়ে গেল। নক করতেই দরজা খোলে গেল। মুহুর্তেই চোখ কপালে উঠে গেল ফরিদের। পুরো দরজাটা আড়াল করে ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে শাহানা। মায়ের জায়গায় ওকে দেখে ভীষন আশ্চর্য হলো। কিছু বলতে যাবে, তখনি শাহানার নরোম হাত মুখ চাপা দিল ওর। ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো, কাউকে বলিনি তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছ। পরক্ষণেই মাথা ঘুরিয়ে চিৎকার করে উঠলো, বাবা-মা উঠুন। আপনার ছেলে এসেছে। তারপর আবার ওর দিকে ফিরে স্বাভাবিক কন্ঠে যোগ করলো, আসতে এত দেরী করলে যে। বলেই হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে ঘরে নিয়ে গেল। এই প্রথম একটা না জানা সত্য উপলব্ধি করল ফরিদ, এই সহজ সরল মেয়েটা আসলে তার বউ।


























আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন .................................এমনটা ঘটে থাকে অবশ্যই। তবে ডিগ্রি পাশ একটা মেয়ে হিসাবে শাহানা একটু বেশি সরল মনে হল। গল্পটা ভাল লেগেছে।
বিদিতা রানি বেশ সুন্দর একটি গল্প। নতুন বউয়ের প্রতি এমন অত্যাচারে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। অনেক ভালো গল্প।
ঐশী অনেক ভাল লেগেছে --- শুভ কামনা জানবেন !
হিমেল চৌধুরী সহজ সরল গ্রামের একটি মেয়ে বউ হয়ে এসে, কত অত্যাচার সহ্য করে স্বামীকে কত ভালোবাসে তার সুন্দর প্রমাণ দেখলাম। খুব ভালো লাগলো।
শিউলী আক্তার গল্পের আধুনিক ভাব ধারা খুবই ভাল লাগলো ------- শুভ কামনা সুমন ভাই ।
Mahi pondit পড়লাম ।ভোট দিয়ে গেলাম ।
ফাইরুজ লাবীবা বেশ হয়েছে ভা্ইয়া ।ভালো লাগলো ।শুভকামনা ।
আনিসুর রহমান মানিক অনেক বড় লেখা ,অনেক ভালো লাগলো ...
শিশির সিক্ত পল্লব বাস্তবধর্মী সুন্দর একটি গল্প.......একজন গল্পকার হিসেবে চিরন্তন বাঙালীদের মত পরিনতি টেনেছেন.....খুবই ভাল.....তবে আমি আশা করেছিলাম পরিনতিতে ফরিদের জন্য থাকবে কোন শাস্তি.......কেননা অবলা, সরলা নারীদের যে সব পুরুষ নির্দয়ভাবে কষ্ট দেয়....তাদেরকে বাস্তবে না পারি লেখনীর মাধ্যমে তো সাজা দিতে পারি......যাহোক অনেক সুন্দর ভাবে লেখাটা ফুটিয়ে তুলেছেন....ধন্যবাদ ও শুভকামনা
লুতফুর বারী মান্না সালাম নিবেন । গল্পটি অতৃপ্তদের ভীমরতি কাটানোর পথ্য বা বটিকা হিসাবে মহৌষধ ।অতুলনীয় গদ্য ।

২৪ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী