ভুল বিশ্বাস

কষ্ট (জুন ২০১১)

মোঃ ইকরামুজ্জামান (বাতেন)
  • ২৩
  • ১১০
রুমা তার সিদ্ধান্তে অটল, সেকোন ভাবেই মসজিদের ইমামকে বিয়ে করবে না। রুমার বান্ধবী সাউদা বললো-
দেখ রুমা, আমার মনে হয় তুই খুব ভুল করছিস। বিষয়টা আবার ভেবে দেখ ?
আমার ভেবে দেখা শেষ সাউদা, সিদ্ধান্ত একটাই, আমি হুজুর কে বিয়ে করবো না। রুমার সাফ কথা "আমার আধুনিক মনের সাথে হুজুরদের মনের খাপ খাবে না"।

আশরাফুল উলুম মাদরাসার সুপার (মাওলানা)মোঃ আঃ বাতেন সাহেবের সাথে রুমার বিয়ের কথা চলছিল। পাকাপাকি হয়েও গিয়েছিল এক প্রকার। কিন্ত রুমার অসম্মতির কারনে বিয়েটা হলো না, ভেঙ্গে গেল। পরে রুমার তার নিজের পছন্দে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে মামুনকে বিয়ে করে।

বিয়ের আগে সব মেয়েদেরই স্বপ্ন থাকে, সে একজন ভালো স্বামী পাবে। সে স্বামী তাকে ভালবাসবে, আদর সোহাগে ভরিয়ে দিবে। সে তার মনের মাঝে লুকিয়ে রাখা না বলা কথা স্বামীকে খুলে বলবে। স্বামী শুনবে। মেয়ে হিসাবে রুমার ও এরকম স্বপ্ন আছে।

রুমার ননদ আর রুমার কয়েকজন বান্ধবী মিলে রুমা কে বাসর ঘরে পেঁৗছে দেয়। রুমা বাসর ঘরে পালঙ্কের উপর বসে তার স্বপ্নের পুরুষ প্রিয়তম মামুনকে ঘিরে অনেক কিছু ভাবতে থাকে। ভাবতে থাকে প্রিয়তম স্বামী এসে তাকে বলবে সত্যি তুমি খুব সুন্দর, অপরুপা, আমি তোমার মত মেয়েকে বউ হিসাবে পেয়ে ধন্য হয়েছি। তোমাকে পেয়ে আমি গর্বিত কিন্ত সব ভাবনা মিথ্যা প্রতিপন্ন হল যখন তার স্বামী টলতে টলতে বাসরঘরে প্রবেশ করল। বুট পরেই ধপাস করে রুমার পাশে শুয়ে পড়ে সে। সে বউ এর দিকে এক নজরও তাকিয়েও দেখলো না।

স্বামীর এরকম কান্ড দেখে রুমা চমকে উঠল। নিজের ভাগ্যকে নিয়ে কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে যখন চোখের পানি শুকিয়ে এলো, তখন ভাবলো হয়তো পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্ত না। দিন যতই যায়, মামুনের মাতলামী ততই বেড়ে চলছে।

এদিকে সাউদার বিয়ে হয়েছে তিন বছর হল। তার স্বামী একজন বড় আলেম। একদিন তার স্বামীকে বললো, আমার বিয়ে হয়েছে তিন বছর হয়ে গেল, অথচ এর মধ্যে একদিনও আমার প্রিয় বান্ধবী রুমার সাথে দেখা হল না। আজ তাকে দেখার জন্য মনটা কেমন ছটফট করছে। চলুন না আজ তাদের বাড়ী থেকে ঘুরে আসি?

মুচকী হাসলেন সাউদার স্বামী! বললেন তোমার বান্ধবীতো আবার হুজুরদের দেখতে পারেনা। আমি গেলে তিনি রেগে যাবেন না?
ছিঃ গো, অমন কথা বলবেন না। এতদিনে হয়তো সব ঠিক হয়ে গেছে।

সাউদার স্বামী ভাবলেন তার বিয়ে হওয়ার এতদিন হল, অথচ সাউদা কোন দিন তার কাছে কিছু আবদার করেনি। তিনি যা দিয়েছেন, তা নিয়েই খুশী থেকেছে। আজ যখন একটা ছোট্ট আবদার করেছে, তা তো রাখা দরকার।

তিনি বললেন, ঠিক আছে, ফাহিমাকে নিয়ে যাও। ফাহিমা সাউদার স্বামীর ছোট বোন।
আপনি যাবেন না?
যেতাম! কিন্ত আজ আমাদের উলামায়ে কেরামদের এক বড় বৈঠক আছে। সেখানে না গেলেই নয়। তুমি যাও।

সাউদা ফাহিমাকে নিয়ে রুমার বাড়ীতে যায়। রুমার কথা বলতেই বাড়ীর লোকজন জানায় সেতো হাসপাতালে। আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। ভাগ্যিস আমরা দেখে ফেলেছি..........।
কথাটা শুনে সাউদা চমকে উঠলো। ঠিকানা নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যায় তার বান্ধবীকে দেখতে। সেখানে রুমাকে দেখে আরো বেশী চমকে উঠলো সাউদা। আজকের রুমা আর আগের রুমা নেই। শরীর রুগ্ন ও লিকলিকে হয়ে গিয়েছে। ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো সে।

সাউদা বললো কি ব্যাপার রুমা, তোমার এ অবস্থাা কেন?
উত্তরে কিছু বললো না রুমা। শুধু উদাস গলায় বললো-
তুমি সুখে আছো তো?
হ্যাঁ রুমা! আমি সুখে আছি। কিন্তু তুমি এত কষ্টে কেন? তোমার তো আরো বেশী সুখে থাকার কথা।
এ সবই আমার প্রায়শ্চিত্ত, ভুলের মাশুল।
মানে? চমকে উঠে সাউদা।
তা তোর না শুনাই ভালো। দরদর করে চোখের গরম জল নেমে যায় রুমার দু'গাল বেয়ে।
তুমি আমার কাছে কেন লুকাতে চাচ্ছো বোন? তোমার মনে আছে লেখা পড়ার জীবনে আমরা একের দুঃখ কষ্টের কথা অন্যজনকে না বললে ঘুমুতেই পারতাম না ? আর আজ তুমি কেন আমার কাছে তোমার কষ্টের কথা লুকাচ্ছ? বলো তোমার কি হয়েছে?

যা যা ঘটেছে সাউদা কে সব বললো রুমা। আরো বললো স্বামীর ভালবাসা কি জিনিষ তা আমি কোন দিন পাইনি। স্বামী নেশা করে গভীর রাতে ঘরে ফিরে। আমার সাথে কথা বলে না। যেদিন নেশার টাকা থাকেনা , সেদিন টাকার জন্য আমাকে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দেয়। না গেলে মারপিট করে। মারপিটের ভয়ে বেশ কবার টাকা এনে দিয়েছি। কিন্তু লজ্জায় আর যেতে পারছিনা। তাই আমার উপর চলতে থাকে অমানুষিক নির্যাতন।

কাল রাতে আমাকে বলল,"টাকা এনে দে"। উত্তরে বললাম আমি আর টাকা এনে দিবনা।
কি দিবিনা? ভয়ানক কর্কশ কন্ঠে জানতে চায়।
আমি স্পষ্ট করেই বললাম, না দিবনা।
তারপরেই শুরু হলো লাঠিপেটা। এতেও সে ক্ষান্ত হলোনা। এক পর্যায়ে সে আমার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি চিৎকার করতে থাকলে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। তখন সে লোকজনকে বলতে থাকে আমি নাকি আত্মহত্যা করার জন্য গায়ে আগুন দিয়েছি। এলাকার লোকেরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। রুমা কেঁদে বলতে থাকে আমি খুব ভুল করে ফেলেছি। যে ভুলের মাসুল আমাকে এভাবে দিতে হচ্ছে। হায়! কিভাবে কাটবে আমার বাকি জীবনটা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Paru হুজুর কিংবা নন-হুজুর পুরুষ....মাঝে মাঝে এমন কুকান্ড করে...মনুষত্ব ক্ষয়ে যায়...নারী ও অনেক ভাবে সংসার সংরক্ষণ করতে অপারগ হয়....বাস্তব ঘটনাটা দুক্ষ দিল...লেখা ভালো হয়েছে ...
মোঃ ইকরামুজ্জামান (বাতেন) ম রহমান ভাই জীবনের সব ঘঠনা যুক্তি দিয়ে মাপা যায়না । আর এই গল্পটা যুক্তিহীন হলেও তা একশত ভাগ সত্যি ।
মোঃ মুস্তাগীর রহমান মন্তব্য ত অনেকে ভালোই করেছে..........আমার কাছে যুক্তিহীণ লেখা মনে হয়েছে........
খোরশেদুল আলম হুজুরকে বিয়েকরতে নাচাওয়া এরকম একটি বাস্তব ঘটনা আমি জানি, ঠিকএই বিষয়টি নিয়ে আপনার এ লেখা ভালো হয়েছে।আপনাকে ধন্যবাদ।
এস, এম, ফজলুল হাসান ভালো লাগলো গল্পটি , আরো ভালো করতে হবে , ধন্যবাদ
তান্নি প্রতিটি গল্পই জীবনের সাথে কঠিন জালে আবদ্ধ, কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো সবার অগোচরে.. এমনকি নিজেরও ....তারপরও গল্পের সূচনা শুধু আপন অস্তিত্ব থেকেই.... অনেক ভালো লিখেছেন আপনি... শুভ কামনা রইলো অনেক অনেক........
সাইফ চৌধুরী মোঃ ইকরামুজ্জামান bhai.Mashallah. what i can say..your written sotry is real deal in our society. there are lots of reality which are hard to disclose. ruma pathetic story really touch me..you have writtien a wonderful real story. thanks lot.
এফ, আই , জুয়েল # এটা বিয়ের ভুল , জীবনের ভুল নয় । যে কোনো ভুল কে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়াই মানব ধর্ম । শুধু সময়ের তালে তালে সিদ্ধান্ত নেয়ার কৌশলটা রপ্ত করা শিখতে হবে ।[ গল্পের ভাব ও নিদের্শনা সুন্দর ।।]
প্রজ্ঞা মৌসুমী আমার মা বলতেন কোথায় পড়ছ বড় কথা না। কি পড়ছ ঐটাই বড়। মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা কম শিক্ষিত আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা বিদ্যাসাগর, আধুনিক তা না। সেদিন দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কজন একজনের গায়ের রঙ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করছে। ভাবলাম এখনো কত সেকেল বর্ণবাদী ওরা। কোন আমলে উঁচু বংশের লোকেরা নিজেদের মান বাড়ানোর পন্থা হিসেবে সাদ রঙকে বড় করেছিল। সেটা নিয়ে এখনো কি বিশ্রি রসিকতা। অথচ পুরানো সেকেলে ধর্ম বলে ঈশ্বরের সব সৃষ্টিই সুন্দর। সব রঙেই তার সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। রাবেয়া খাতুন একটা কথা বলেছিলেন 'একটা উন্নতি, আরেকটা বিকৃতি...দুটো দুই জিনিস'। আপনি কাউকে উদ্দেশ্য করে গল্প লিখেননি বলে আমি মনে করি। আপনার উদ্দেশ্য ছিল সেই উন্নতি আর বিকৃতিকে চরিত্র দিয়ে রূপ দেয়া। মনপ্রাণ থেকে চাই বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা প্রকৃত শিক্ষিত হয়ে উঠুক তা ওরা যেখানেই পড়ুক না কেন। আপনার লেখার উন্নতি কামনা করছি।
স্বপ্নচারীনি এটাকি আপনার ঘটনা নাকি? মোটামুটি ভাল

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী