শ্রীমতী

পরিবার (এপ্রিল ২০১৩)

মিলন বনিক
  • ১৭
পাত্র নিরোদ।
নিরোদ বরণ চৌধুরী। অফিসের কেরানী। বি,এ পাশ করিয়া বহুদিন কাটিল। অফিস পাড়ায় ঘুরিয়া ঘুরিয়া চেষ্টাও কম চলিল না। অবশেষে ভাগ্যটা কেরানীগিরিতেই বন্দী হইল। তবুও ভালো। অন্তত কর্মহীন বেকার বলিয়া কেউ উপহাস করিবার সাহস পাইবে না।

বছর দশেক গত হইল বিবাহ করিয়াছে। পিতৃবাক্য পালনের জন্য বাধ্য হইয়া বিবাহের পিড়িতে বসিয়াছিল। একবার মনে হইল এখনি আসন ত্যাগ করিয়া কোথাও নিরুদ্দেশ হইতে পারিলে বাঁচি। পারিল না। ঈশ্বর যেন পিড়িতে পেরেগ গাঁথিয়া রাখিয়াছেন। কন্যার বাবা যখন নিরোদের হাঁটুতে হাত রাখিয়া বলিলেন - বাবা আমার কন্যা আমি তোমাকে-ই সম্প্রদান করিলাম। চন্দ্র সূর্য অগ্নি সাক্ষী রাখিয়া তুমি স্ত্রীর মর্যদা দিয়া গ্রহণ করিয়া লও। তারপর হোম হইল, যজ্ঞ হইল। নিরোদ মন্ত্র পড়িল। নির্বিকার। পুরুত মশায় যেমনটি বলিল ঠিক তেমনটি করিল। শুধু মাল্য বরণ করিতে গিয়া হাত দু’খানা একটু কাঁপিয়া আবার স্থির হইয়া রহিল।

একবার শ্রীমতীর কথা মনে পড়িল। অনেক কষ্টে নিজেকে প্রবোধ দিয়া বুঝাইতে চাহিল-শ্রীমতী এই মালা তোমাকে দিতে পারিলাম না। তুমি আমাকে ক্ষমা করিও। এছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না।

নিরোদ শ্রীমতীকে ভলোবাসিত। শ্রীমতীর অন্তরে বাহিরেও ছিল নিরোদের অস্তিত্ব। ইচ্ছা করিলে বিবাহও করিতে পারিত। বিবাহ করিলে নিরোদ সুখী হইতে পারিত। নিরোদ বুঝিত জীবনে পার্থিব আনন্দের চাইতে প্রেমের আনন্দটাই বেশী। তাছাড়া শ্রীমতী সুন্দর। চালচলনে বাঙ্গালী ছলাকলা। তবুও বিবাহ করিতে পারিল না। যদি বিবাহ করিতেন তবে নিশিকান্ত বাবু নির্ঘাত যমের বাড়ী যাত্রা করিতেন। কারণ শ্রীমতীদের সামর্থ্য ছিল নিশি বাবুদের চাহিদার তুলনায় কম। জ্ঞান বুদ্ধি ছিল বেশী। যা ছিল তার মূল্যায়নও গ্রামে হইল না।

নিরোদ আজ যাহাকে বিবাহ করিল তার শ্যামলা বরণ। ঘন কালো চুল। হালকা পাতলা গড়ন। গলার ভাঁজে ডানদিকে একটা ছোট কালো তিল। এরকম নারী নাকি খুব ভাগ্যবতী হয়। নাম শ্রাবণী। দুইজনের অধ্যক্ষরেই ”শ্র”। শ্রী নিরোদ এর আগেও ”শ্র”। এই মিলটা নিরোধ বুঝিল। আরেকটা মিল ছিল দুজনেই নারী।

দক্ষিণের মানুষ। দীর্ঘ তিনঘণ্টা পথ জলপথে যাত্রা করিয়া আরও দুই ক্রোশ পথ পায়ে হাঁটিয়া যাইতে হয়। প্রস্তাবটি আসিয়াছিল কন্যাপক্ষ হইতে। নিশি বাবু শর্তটা দিতেই কন্যার পিতা বিনা বাক্যব্যয়ে মানিয়া লইলেন। অবশ্য মনোহর বাবু এই শর্তে রাজী না হইয়া প্রত্যাখ্যান করিতেও পারিতেন। কারণ তখনও কন্যা পছন্দ করা হয়নি। নিশি বাবু কন্যা দেখিবার কথা বলিলেও মনোহর বাবু বলিয়াছিলেন - মেয়ে আমাদের সাক্ষাৎ লক্ষ্মী প্রতিমা। পছন্দ আপনাদের হইবেই। আগে কথাটা হইয়া গেলে ক্ষতি কি। পছন্দ না হইলে বিবাহ হইবে না।

নিশি বাবু হাসিমুখে বলিলেন - আমার পছন্দের আর আবশ্যক নাই। ছেলের পছন্দ হইলেই হইল। মনোহর বাবু এ শর্ত প্রত্যাখ্যান করিল না। কারণ শ্রাবণী সৎমায়ের ঘরে পালিতা। দিনে দিনে বয়সও কম হইল না। সতেরো পেরিয়ে আঠারোয় পা দিয়াছে। দশজনে দশকথা বলাবলি করিতেছে। মা লক্ষ্মীর কৃপায় অর্থাগমও ভালো। চাউলের ব্যবসা। শুধু গায়ের রংটা একটু শ্যামলা। বিদ্যা বুদ্ধিও কিঞ্চিৎ। সাত পাঁচ ভাবিয়া শেষ পর্যন্ত কন্যা পাত্রস্থ করাটাই মনোহর বাবু স্থির করিলেন।

ইতিপূর্বেও নিশি বাবু বেশ কয়েকটা পাত্রীর সন্ধান পাইয়ছিল। তথাপি বিবাহ হইল না। কোথায় যেন একটা গরমিল থাকিয়া যাইত। এসব নিয়া নিরোদকে কিছু জানানো হইত না। নিশিবাবু মনে করিতেন, হিসাবটা মিলিলেই নিরোদকে পাত্রী দেখিয়া আসিবার জন্য বলিবেন। তৎপূর্বে কোন কিছু জানাইবার আবশ্যক মনে করিতেন না। নিরোদেরও এসব নিয়া মাথা ঘামাইবার সময় নাই।

প্রাইভেট অফিসের চাকরী। কাজের কি শেষ আছে। নিশিবাবুর শারীরিক অবস্থাও সংকটজনক। আশি বৎসরেরও অধিক কাল বয়স হইয়াছে। সময় ফুরাইয়া আসিয়াছে। সেটা তিনি নিজেও বুঝিতে পারিতেছেন। ঘাটে যাইবার আগে অন্তত নিরোদের বউ এর হাতে ক’দিন রান্না খাইয়া যাইতে পারিলে যেন স্বর্গলাভ হয়। নিরোদ বাঁকিয়া বসিল। বিবাহ করিবে না। একবার সাহস করিয়া বলিয়া বসিল - এখন বিবাহ করিবার কোন আবশ্যক নাই। আগে সংসারে একটু সচ্ছলতা আসুক। এই অবস্থায় বিবাহ করিলে সংসারের দুরবস্থা আরও বাড়িয়া যাইবে বই কমিবে না।

নিশি বাবু সংসারী মানুষ। বিজ্ঞ ব্যক্তির মত বলিলেন - দুরবস্থা আর কি হইবে। আমি একার আয়ের উপর আজ এত বৎসর ধরিয়া সংসারের হাল টানিয়া আসিতেছি। সুখ দুঃখতো এই সংসারে থাকিবে। ভগবানই চালাইয়া লইয়া যাইবেন। তাঁর উপরে ভরসা রাখিতে হইবে। নিরোদ আর কিছু বলিল না। চুপ করিয়া রহিল।

নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা চাহিয়া বসিল নিশি বাবু। বলিল - ছেলে আমার বি,এ পাশ। টিউশানি করিয়া হইলেও আমার বৌমাকে ভাত কাপড় দিতে পারিবে। আমার একটা মাত্র ছেলে বি,এ পাশ করিয়াছে। এই সামান্য বাড়ী খরচটা না হইলে কি চলে। মনোহর বাবু তিরিশের উপরে উঠিতে চাহিলেন না। কয়েক দফা গোপনে বৈঠকও চলিল। শেষ পর্যন্ত নিশি বাবুর কথায় ঠিক রহিল। মনোহর বাবু মানিয়া লইলেন। তবে শর্ত থাকিল বিবাহে আর অন্য কিছু দিতে পারিবেন না। সর্বসাকুল্যে এই পঞ্চাশ হাজার টাকা। নিশি বাবু তবুও খুশী।
গৃহে ফিরিয়া গিন্নিকে সহাস্যে কথাটা বলিলেন। কই নিরোদের মা শুনছো, নিরোদের বিবাহ ঠিক করিয়া আসিলাম। ওরা নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবে। তুমি খুশী হয়েছো তো। গিন্নি মুখ থেকে হুঁকার নলটা নামাইয়া রাখিয়া মুখের কাপড়টা ঈষৎ টানিয়া বলিলেন - বলি নিরোদের মতামতটা একবার নেওয়া হইয়াছে। নিশি বাবু গর্বের সহিত বলিলেন - আমি নিশ্চিত ছেলে আমার অমত করিবে না। তাছাড়া আমি কন্যা স্বচক্ষে দেখিয়া আসিলাম। পরিবারটাও ভালো। শুধু সৎমায়ের ঘরে মানুষ। এই যা। আর নয়তো সব দিক থেকে এমন রাজ যোটক আর হয় না।

নগদ নারায়ণ পাইলে তোমার তো সব কিছুতেই রাজযোটক। বলি ছেলেটার কথা একবার ভাবিলে ভালো হইত না। কথাটা বলিয়া নিরোদের মা উঠিয়া রান্নাঘরের দিকে চলিলেন। নিশিবাবু রাগিয়া বলিলেন - বলি টাকা কি আমার শ্রাদ্ধের জন্য লইতেছি। ছেলের ভবিষ্যৎ বলিয়া কথা। তাও আমাকে এই বৃদ্ধ বয়সে ভাবিতে হইতেছে।
- তোমার ভাবনা তুমি ভাবিতে থাকো। আমি তোমাদের সাথেও নাই, পাঁচেও নাই।
- তা থাকিবে কেন। তোমাকে তো পঁচিশ টাকা দফা দিয়া বিবাহ করিয়া আনিয়াছি। তোমার পিতৃদেবতো পঁচিশ টাকার কমে কোনভাবেই রাজী হচ্ছিলেন না। কত দামদস্তুর, কত অনুনয় বিনয় করিয়া বলিলাম, এইবারের মত কুড়ি টাকায় বিবাহটা শেষ করুন। না কিছুতেই পঁচিশ টাকার কমে হইবে না। মনে নাই, বলিয়া নিশি বাবু ঐ স্থান ত্যাগ করিলেন।

নিশি বাবু ব্যস্ত হইয়া পরিলেন। দিন তারিখ ঠিক হইয়াছে। আর তো বসিয়া থাকা যায় না। সুরেশ বাবুকে জরুরী তার করিয়া পাঠাইলেন। সুরেশ বাবু আসিলেন। নিরোদের ভগ্নীপতি সুরেশ চন্দ্র রায়। তিনি নিরোদকে প্রস্তাব করিলেন কন্যা দেখিয়া আসিবার জন্য এবং এও বলিলেন যে আর অমত করিবার সাধ্য নাই। বাবা তোমাকে বিশ্বাস করিয়া কথা দিয়া আসিয়াছেন। নিরোদ শুধু বলিল - কথা যখন পাকাপাকি হইয়া গিয়াছে তখন আমার আর পাত্রী দেখিবার প্রয়োজন নাই। আমার জন্মদাতা পিতার মুখও আমি ছোট করিতে পারিব না। তাঁর মতের বিরুদ্ধে কিছু করিবার শক্তিও আমার নাই। শুধু এটুকু বলিয়া রাখি আজ আমি বাধ্য হইয়া যে নীচতার পরিচয় দিয়া যার পাণি গ্রহণ করিব তার প্রায়শ্চিত্ত যেন আমাকেই করিতে হয়।

একটু থামিয়া আবার বলিল, আর শুনিয়াছি বাবা নাকি পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে এই বিবাহ ঠিক করিয়াছেন। কথাটা অবশ্য সত্য। তবে আমার একটা শর্ত আছে। এই টাকার একটা কড়িও যেন আমাকে স্পর্শ করিতে না হয়। এই আমার শেষ কথা।
সুরেশ বাবু স্তম্ভিত হইয়া বলিলেন - তবে এ টাকা কে রাখিবে।
- তা জানিনা। সম্ভব হইলে নদীতে ভাসাইয়া দিও বলিয়া নিরোদ দ্রুত প্রস্থান করিলেন। সুরেশ বাবু বার কয়েক ডাকিলেন। নিরোদ আর পিছু ফিরিল না।

নিরোদের মাথায় যেন বাজ পড়িল। মুহূর্তেই তার চিন্তা চেতনা সব ধুলায় মিশাইয়া গেল। কাউকে কিছু বলিতে পারিল না। ছুটিয়া গেল শ্রীমতীর কাছে। ভাবলেশহীন উন্মাদের মত শ্রীমতীর দু’টি হাত ধরিয়া বলিল - শ্রীমতী আমার মূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা। আমি বিক্রি হইয়া গেলাম। আমার আর কিছুই রহিল না। আমি আর তোমার কেউ নই। আরেকজন কিনিয়া লইয়াছে।
শ্রীমতী কিছুই বুঝিল না। শুধু বলিল - তুমি কি পাগল হইয়া গেলে। আগে বসো, শান্ত হও। তারপর আমি তোমার সব কথা শুনিব।
- না না শ্রীমতী। আমাকে সব কথা বলিতে দাও। টাকা, টাকা আমার প্রেম ভালোবাসা সব কিছু কিনিয়া লইয়াছে। ভগবান কেন যে তোমাদের এত টাকা দিল না। শ্রীমতী তুমি দিতে পারো পঞ্চাশ হাজার টাকা। যদি পারো তাই দাও। আমি তোমার গোলাম হইয়া থাকিব। অন্তত আমার ভালোবাসাটা রক্ষা পাইবে। বাবার হাতে টাকাটা তুলিয়া দিয়া বলিব - শ্রীমতী আমাকে কিনিয়া রইয়াছে। আমি তাকেই বিবাহ করিব।

শ্রীমতী মৃদু হাসিল। আদর করিয়া বসাইল। তারপর নিরোদের চরণধূলি মাথায় লইয়া বলিল - আমি সব শুনিয়াছি। ভগবান যাহা করেন ভালোর জন্যই করেন। বাবাও তোমার মঙ্গল চান। তুমি দুঃখ করিও না। শুধু আশীর্বাদ করিও আমি যেন আমার মত করিয়া তোমাকে আজীবন ভালোবাসিতে পারি। তুমি সুখী হও।

আশ্চর্য শ্রীমতী একটুও কাঁদিল না। বাহ্যিক কোন কষ্টের অনুভূতিও প্রকাশ করিল না। মুখে আঁচল গুজিয়া দ্রুত ভিতরে চলিয়া গেল। কিছুক্ষণ পর যখন আবার ফিরিয়া আসিল তখন চোখ দু’টি জলে ভিজিয়া গেল। কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া আসিল। হাসিবার ব্যর্থ চেষ্টা করিল। পারিল না। নিজেকে শক্ত করিবার চেষ্টা করিয়া নিরোদের পায়ের কাছে গিয়া বসিল। নিরোদ নির্বাক, নিথর।

শ্রীমতীর ডান হাতের তালুতে একটি সিঁদুর কৌটা। কিছুই বলিতে পারিল না। দাঁতে ঠোট ছিপিয়া ধরিল। শুধু সিঁদুরের কৌটাটি নিরোদের সামনে মেলিয়া ধরিল। নিরোদ কিছুই বুঝিতে পারিল না। শ্রীমতী কাঁপা গলায় বলিল - আজ আমার বড় আনন্দের দিন। তোমার কাছে আজ একটা জিনিষ চাইব। আর কোনোদিন কিছু চাইব না। বলো দেবে।

তোমাকে তো আমার সব দেওয়া হইয়াছে। আবার নতুন করিয়া কিছু দিতে গেলে--- নিরোদ থামিল। শ্রীমতী আরও কাছে আসিয়া বলিল - এই নাও, একটি বার শুধু সিঁথিতে পরাইয়া দাও। আবার তোমার পায়ে মুছিয়া দিব। ভগবানকে সাক্ষী রাখিয়া বলিতেছি আর কখনও তোমার কাছে কিছু চাইব না। শুধু এই শেষ ইচ্ছাটা আমার পূরণ করো।

নিরোদ কোন উত্তর করিল না। শ্রীমতী যাহা বলিল তাহাই করিল। কেন করিল কিছুই বুঝিল না। পরক্ষণে নিরোদ শ্রীমতীর চিবুক স্পর্শ করিয়া বলিল _ আমি না বুঝিয়া একি করিলাম। আজ আমি যাহা করিলাম তাহা কেবল আমি জানি আর আমার ভগবান জানেন। জানি ভগবান হয়তো আমায় ক্ষমা করিবেন না। তুমি যদি পারো তুমি আমায় ক্ষমা করিও। শ্রীমতী কিছুই বলিল না। শুধু অজ্ঞান অচেতন দেহটা নিরোদের বুকে লুটাইয়া পরিল।

নিরোদ ফিরিয়া আসিল। জোড় গলায় বলিতে চাহিল - বিবাহ যদি করিতে হয় তবে শ্রীমতীকেই করিব। নয়তো বিবাহ করিব না। বলিতে পারিল না। নিশি বাবুর জোড়ে জোড়ে কাশি উঠিল। নিরোদকে পাশে ডাকিয়া বসাইল। কাঁপা গলায় বলিল - বাবা আমি দিব্যি দিয়া বলিতেছি, তুই পাত্রীটা একবার দেখিয়া আয়। আমি জামাইর কাছে সব শুনিয়াছি। তোর বৌ’র মুখটা না দেখিলে আমি যে মরিয়াও শান্তি পাইব না।

নিরোদের চোখে জল আসিল। মানসপটে শ্রীমতীর মুখটা ভাসিয়া উঠিল। নিজেকে ধিক্কার দিল যে মনে প্রাণে যাকে ভালবাসিলাম তার কথাটা মুখ ফুটিয়া বলিতে পারিতেছি না। আমি এমনই কাপুরুষ। বলিতে পারিলাম না যে আমি এই মাত্র একজনের সিঁথিতে সিঁদুর পরাইয়া আসিলাম। সে শ্রীমতী। শুধু বলিল - আমার পাত্রী দেখিবার আবশ্যক নাই। তোমরা যাহা ভাল মনে কর তাহাই কর।

নিরোদ শুধু একটা কথায় ভাবিল - আমি শুধু শ্রীমতীকেই ভালোবাসি। সেখানে আর কাহারও ঠাঁই নাই। শুধু শ্রীমতী। তবে কি শ্রীমতী চির জীবন কুমারীই থাকিয়া যাইবে। আমি কেন না বুঝিয়া তাহাকে সিঁদুর পরাইলাম। আবার মুছিয়াও দিলাম। হিন্দু রমণীর কপালের সিঁদুরই যে একমাত্র অহংকার। বাঁচিয়া থাকিবার একমাত্র অবলম্বন। একমাত্র স্বামী বিয়োগে সেই সিঁদুর স্বামীর পায়ে মুছিয়া দেয়। সেই কথাটা কেন একবারও নিরোদের মনে উদয় হইল না। লোকচক্ষুর অন্তরালে নিরোদ এই কাজটি করিয়াছে। জানা জানি হইলে সমাজের চোখে শ্রীমতী দ্বিচারিণী হইবে। অপবিত্র হইবে শ্রীমতী প্রেম। শুধু ঈশ্বর জানেন - কেন শ্রীমতী সিঁথিতে সিঁদুর পরিল। আর জানে নিরোদ। বিধাতা জানেন তারা কোন কালে সুখী হইতে পারিবে কিনা।

শ্রাবণী নিরোদের সমস্ত অধিকারটুকু কাড়িয়া লইল শুধু শ্রীমতীর অভাবটা পূরণ করিতে পারিল না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Lutful Bari Panna অনেকদিন পরে শরতীয় ভাষার সঙ্গে দেখা হল। গল্প কিন্তু ভালই লাগিল।
পান্না ভাই..অনেকদিন পর আপনাকে পেয়ে ভাল লাগল..কেমন আছেন...খুব ব্যাস্ত সময় কাটছে মনে হচ্ছে....
তানি হক ভীষণ কষ্ট পেলাম :( কেন এমন হলো নিরোদ আর শ্রীমতীর জীবনে !! বুঝতে পারছিনা তাদের এই বিরহর জন্য কাকে দোষ দেব .. কিন্তু এই বিরহের পরিনিতি যে আরো কষ্টের .. বিশেষ করে .. গল্পের একদম শেষ লাইন তাই বলছে .. যাইহোক ভাই ...সবমিলিয়ে খুব ভালো লাগলো কিন্তু গল্পটি ...সাধুভাষাতে ..যেন আরো অনেক অনেক অসাধারণ করে গল্পের সোন্দর্য ফুটে উঠেছে ...খুব খুব ভালো লাগলো ...ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা
আপনার মনকে নাড়া দিতে পেরেছে এই ঢের...অনেক ভালো লাগল...অনেক অনেক শুভেচ্ছা.....
নিলাঞ্জনা নীল সুন্দর
ধন্যবাদ নীল....শুভ নববর্ষ...
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি একটি পরিপক্ক হাতের লেখা বলে মনে হলো....ভীষণ ভাল এবং মান সম্মত লেখা গল্পটি পড়ে তৃপ্তি পেলাম.............কিন্তু ভাই মিলন আপনার ভোটিং বন্ধ দেখে কষ্ট পেলাম.........আগামীতে আবার দেখা হবে এই প্রত্যাশা করি.............ধন্যবাদ আপনাকে........
জ্যোতি ভাই..খুব ভালো লাগল আপনার সুন্দর মন্তব্য...আর ভোটিং বন্ধ আপনাদের ভালোবাসা আর এডমিনের স্বাভাবিক নিয়মে....আগামীর প্রত্যাশায়....শুভ নববর্ষ...
তাপসকিরণ রায় হ্যাঁ,গল্পটি পড়িলাম--পড়িতে পড়িতে বহু কাল আগের অতীত জীবন চোখের সামনে ভাসমান মনে হইতে ছিল !বাস্তবিকই শরত সাহিত্যের কথা স্মরণে আসিতে ছিল--কাহিনীর মধ্যেও সেই পুরাতন লেখার গন্ধ পাইতেছিলাম। সর্ব সাকুল্যে আমি মাত্র ইহাই বলিব যে আমার নিকটে গল্পটি পছন্দ মত লাগিয়াছে,মনে ধরিয়াছে।লেখককে ধন্যবাদ না জানাইয়া পারিতেছি না।
লেখাটি মনে ধরিয়াছে খুবই পুলকিত হইলাম দাদা...তার উপরেও আবার ধন্যবাদ জানাইয়াছেন..ইহা আপনার অতিশয় বদান্যতা...আমি অতিশয় কুতজ্ঞ...তবে মাঝে মধ্যে যদি আমরা এই সাধুরীতির চর্চাটা করিয়া যাইতে পারি তাহা হইলে বোধ হয় মন্দ হইত না....
এফ, আই , জুয়েল # অনেক সুন্দর গল্প । সামাজিক প্রেক্ষাপট ও পারিবারিক টানপোড়ন-----, এর সাথে বিভিন্ন রকম দৃষ্টিভঙ্গি ও করুন বাস্তবতা গল্পটিকে এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে । লেখককে ধন্যবাদ ।।
অনেক ধন্যবাদ জুয়েল ভাই...আপনার মন্তব্য আমার অনেক বড় প্রেরণা....ভালো থাকবেন....
ভূঁইয়া মোহাম্মদ ইফতেখার ভাষাগত কারণেই হয়ত, লেখাটা পড়ছিলাম আর বারবার বাংলা সাহিত্যের শরৎ যুগে চলে যাচ্ছিলাম। এমন ক্ল্যাসিক লেখা এখন আর পাওয়া যায় না, সে বিচারে আপনাকে সাধুবাদ দাদা। ভোট দিতে পারলাম না বলে আফসোস রইল।
অনেক ধন্যবাদ ইফতি ভাই....অনেকের ধারনা শরৎ যুগ এখন অচল...আপনার ভালোবাসা দেখে আমার তা মনে হয়না...বরং নতুন প্রেরণা পেলাম সাথে আপনার অন্তরের ভোটটা তো পেলাম আর কি চাই....ভালো থাকবেন....
রোদের ছায়া আপনার এই গল্পটি পড়ে অনেকদিন পর কেন জানি খুব ভালো লাগলো , আসলে সহজ সরল মানুষের কথা গল্পের আদলে পেলে খুব ভালো লাগে । ভাষার কারনেই কিনা একটু ভিন্নতা পেলাম । শুভেচ্ছা রইল দাদা ।
অনেক ধন্যবাদ ছায়া আপু...আমার কত দ্রুত বদলে যায়...একসময় শরৎ কাহিনী না হলে ঘুম আসতো না..অনেক আগের লেখা...সেই রেশটাও থেকে গেছে....দোয়া রাখবেন....
আদিত্য লেখাটা পড়ে অনেক ভাল লাগল.............
অনেক ধন্যবাদ ভাই আদিত্য...শুভকামনা....
ভোট দেওয়ার জন্য মন চাইছিল
মামুন ম. আজিজ হুম ....ঘটনা বাস্তবকে উঃরে যায় নাই....মনোপটে স্ত্রী হইয়া আবার বিধ:বা হইয়া্ কি শ্রীমতি তাহার জীবকলা পার করিতে পারিবে?...প্রশ্ন থাকিয়া গেলো্ ......ভালো হইয়াছে ....মনে হইতেছিল ....বাবার ঠিক করা পাত্রীই আবার শ্রীমতি না হইয়া যায়....তাহা হইলেও পাঠক হাসিতে পারিত। ...................কিন্তু সাধু ভাষায় গল্প এই যুগে অন্তত লিখিবার কালে কিছূ ত্রুটি হইয়া যায়...যেমন ..তারপর হইবে তাহারপর.,..তার হইবে তাহার...ইত্যাদি....এগুলো একটু খেয়াল রাখিবার অনুরোধ জানাইতেছি।
মামুন ভাই শেষের ত্রুটিগুলোর জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে দন্যবাদ জানাচ্ছি...সাধুরীতিটা বিস্মৃত তাছাড়া 93-এর লেখা...আর প্রথম দিকের প্রশ্ন থাকাটা আমার লেখার সার্থকতা মনে করছি..এখানে সময়ের ব্যাপারটা ভেবেছি...বর্তমানেও ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে সংসার করতে ক’জন পারে...সংসার আর ভালোবাসা দু’টো ভিন্ন জিনিষ...অনেকটা মনে নেওয়া আর মেনে নেওয়ার মত....খুব ভালো লাগল আপনার মন্তব্য....হয়তো শ্রীমতিও এভাবে পার করবে বাকী জীবন নয়তো আবার কাউকে ভালোবাসবে...কিংবা সংসারী হবে....কারণ স্ত্রী হওয়াটা লোকচক্ষুর অন্তরালে....

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অভিমান”
কবিতার বিষয় "অভিমান”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মার্চ,২০২৪