আমার মা

মা (মে ২০১১)

ঝরা
  • ৩৭
  • 0
  • ৯৬৫
আমার মা,তারপর দুমড়ে মুচড়ে বেরিয়ে আসে বুকের গহীন হতে গহিনতর স্থান পেরিয়ে একটি কষ্ট I আমার মা ছোটবেলার মা তারপর কৈশোরের মা তারপর জৈবনের মা তারপর এখনো আমার মা l সব মা এর মধ্যে কত ব্যবধান কিন্তু সব ক্ষেত্রেই তিনি মমতাময়ী তিনি অসাধারণ অতুলনীয় আমি অবাক হয়ে ভাবি l

এই আমার সেই মা যতটুকু আমার মনে পড়ে যখন আমি স্কুলে পড়তাম তখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে সারাক্ষণ মার কোলে গড়াগড়ি খেতাম l রাতে মা ছাড়া কিছুতেই অন্য কারো কাছে ঘুমাতে রাজি হতাম না l যেহেতু আমার বাবা আমার আট বছর বয়সেই সবাইকে ছেড়ে দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন তের উপর আমি সবার ছোট বিধায় প্রতি রাতে মার সঙ্গে ঘুমানো আমার জন্য দুষ্কর কিছু ছিল না l

আমরা তখন আমাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে থাকতাম l আমাদের বাড়িটি ছিল অনেক সুন্দুর ইঅমাদের ইটের ঘরের উপর ছিল টিনের ছাদ l পেছনের দরজার সামনে ছিল একটি প্রকাণ্ড জামরুল গাছ l সে গাছটি টিনের ছাদের উপর হেলানো ছিলো l
পুরো টিনজুড়ে ছড়িয়ে থাকত গাছটি l যে কখনো গাছে উঠেনি সেও চাইলে হেটে তরতর করে উঠে যেতে পারত গাছটিতে l আমার কান্না থামাবার জন্য কতবড় যে মা ওই গাছটিতে চরে আমাকে জামরুল পেড়ে দিয়েছেন তের কোনো হিসেব নেই l বাড়ির অন্য তিন পাশে ছিলো আমাদের তিন জেঠার ঘর মাজখানে সুন্দুর একটি উঠান l যখন বর্ষাকালে প্রকৃতি তার সব রং রূপ ডেলে পৃথিবীকে স্নান করায় l তখন আমরা দু বন ঘরের দুয়ার খুলে বৃষ্টির রিনিঝিনি তালে ভাঙ্গা কণ্ঠে সুর তুলতাম কোনো পরিচিত গানের আর ঠিক তখন মা বড় পাতিলে করে ভুনা খিচুড়ি নিয়ে আসতেন আমাদের কাছে l আমরা বাড়ির সবাইকে ডেকে নিয়ে গোল করে খোলা দরজার সামনে বসে সেই খিচুড়ি খেতাম l উহ ! কি মজাইনা ছিলো তখন l আর এখন আমি শত চেষ্টা করেও ওরকম মজা করে রানতে পারি না l
মাজে মাজে বৃষ্টির দিনে জবুথুবু হয়ে বাড়ি ফিরে দেখতাম মা আমাদের জন্য চাল ভাজছেন বাদাম বুট আরো কত কি l দেখেত আমরা খুশিতে লাফিয়ে উঠতাম l
এখন সেসব দিনগুলি তন্ন তন্ন করে খুঁজি কিন্তু কথাও খুঁজে পাইনা l এখন ভাবি আমার দুঃখিনী মা কিভাবে নিজের দুঃখগুলো লুকিয়ে রেখে আমাদের কিভাবে এত এত সুখ দিয়েছেন এত এত আনন্দ দিয়েছেন l
যার কিনা স্বামী চলে গিয়েছিল মাত্র তেইশ বছর বয়সে l যার বিয়ে হয়েছিল চল্লিশ বছর বয়স্ক আমার বাবার সাথে l আমার বড় খালা তার ছোট ছোট পাঁচটি ছেলেকে রেখে বিদায় নিয়েছিলেন দুনিয়া হতে বিদের সময় সবাইকে অনুরোধ করে গিয়েছেন আমার মাকে মানে তার চোদ্দ বছর বয়সী ছোট বোনকে যেন রেখে দেওয়া হয় এ বাড়িতে l যেহেতু আমার মামা নানী কেও ছিলো না এবং নানা ছিলো মানসিক ভারসাম্যহীন তাই কাজটি সবাই খুব বাধাহীনভাবেই সফল করতে পেরেছিল l
আমার বড় ভাই ছিলো মার চেয়ে তিন বছরের বড় মেজ মার সমান আর তিনজন মার ছোট l পালকিতে যখন মা বসেছিল তখন ছোট ভাইও ছিলো মার কোলে ভাইয়ের তখন মাত্র দু বছর বয়স l
জীবনের সব সুখ, স্বাদ, আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে আমাদের মা আমাদের কত সুখেই না রেখেছিলেন l তার দুঃখের এক ফোটা রক্ত বিন্দুকেও তিনি স্পর্শ করতে দেয়নি আমাদের l
বাবা ছিলো না সেজন্য এতটুকু কষ্ট লাগেনি কোনদিন l মা কখনো বাবার অভাব বুজতে দেয়নি কখনো l পড়ার মাজে যখন আমি আর আপু বাড়ির অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সাথে পড়া ফাকি দিয়ে খেলতে যেতাম রাতের বেলা তখন মা আমাদের ধরে ফেললেও কিছু বলতেননা তিনি নিজেও এসে বাড়ির অন্যান্য চাচীদের নিয়ে আমাদের সাথে খেলতেন l কখনো তিনি আমাদের এতটুকু আনন্দকেও ধ্বংস করতেননা l এখন ভাবি মা কিভাবে পারতেন তার এত দুঃখের মাজেও আমাদের খুশি রাখতে ?
আর কত লিখব ?মার কথাকি লিখে শেষ করা যাবে ?কখনৈনা l আমি এস এস সি পাস করার পর মা আমাকে আর নিজের কাছে রাখতে সাহস পেলেননা পাঠিয়ে দিলেন ছোট ভাই এর কাছে ঢাকায় l এর আপু থাকলো মার কাছে l প্রসঙ্গত উল্লেখ পড়ে আমরা তিন বোন মার গর্ভে এসেছিলাম পৃথিবীতে l বড় আপু চট্টগ্রাম থাকত ভাইদের সাথে l
আমাদের তিন বোনের বিয়ের পর মা একদম একা হয়ে যায় l অনেক একা l কিন্তু আমাদের কিছুই করার থাকেনা l
মেয়েরা তো এর মার কাছে থাকতে পারে না ?এখন আমার মা বড় অসহায় ,পঞ্চাশ বছর বয়সেই ভেঙ্গে গেছে গাল এক এক করে পড়ে যাছে সব দাত l আমার সেই সুন্দর মা হারিয়ে যাছে একাকিত্বের মাজে l তাকে দেখার কেউ নাই l
আমাদের বাড়ির মানুষও কম যায়না একা একজন মহিলা তাকে নিয়ে মিথথে অপবাদ না চড়ালে কি এর চলে !তারা বড় ভাইয়ের নিকট অভিযোক করতেও পিছপা হয়না l আর মা আমার কি করবে দু ফোটা অশ্রুকে বিদায় জানানো ছাড়া আর কিছু করার নাই তার l এত সুখ দেওয়া মাকে আমরা দুঃখ ছাড়া কিছুই দিলামনা l
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ঝরা ধন্যবাদ@jewel
এফ, আই , জুয়েল কঠিন বাস্তবতায় আবেগে ভরা ঘল্পটি বেশ ।।
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) jora ,হলোগো তোমার লেখা পড়া /
ঝরা ধন্যবাদ @নাহিদ ,আরফান,ফরাজী
বিন আরফান. আমার নিকট মনের ভাব প্রকাশ হয়েছে বলে মনে হল. আপনার গল্পটি গল্পের প্রকৃত রূপ পায় নি. তথাপিও লিখতে থাকুন. আমিও ভালো গল্প লিখতে পারিনা না. চেষ্টা করছি. আর এই জন্য বেশি বেশি পড়তেছি. আপনিও তাই করুন তবেই একদিল চমত্কার গল্প লিখতে পারবেন. শুভ কামনা আপনার জন্য.
খন্দকার নাহিদ হোসেন কাহিনীতে কোন টান বা বাঁক নেই। সরল ভাষায় একটানা বলে যাওয়া তবু খারাপ লাগেনি। পুরো লেখায় একটা আকুলতা ছিল, তাই বা কম কি?
ঝরা শাকিল ভাই ঠিক ধরেছেন নতুন ছিলাম বুঝতে পারিনি
sakil সম্ভবত ফোনটিক ফরমেটে লিখেছেন . ভালো লেগেছে . তবে আরো ভালো ভালো লেখা চাই আগামী সংখায়

২৮ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪