কষ্ট কাকে বলে?

কষ্ট (জুন ২০১১)

Meshkat
  • ১৯
  • 0
  • ২০
।।১।।
সা
তক্ষীরার একটি এলাকা পারুলিয়া। সেই এলাকায় বাস রাশেদুল করিম (ছদ্মনাম) নামের একজন স্বল্প আয়ের মানুষ। দুই ছেলে, স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে সুখের সংসার তার। স্ত্রী রাবেয়া বেগম হাসিখুশি মানুষ। শশুর-শাশুরির আদরের পুত্রবধু। রাবেয়া-করিমের দুই ছেলে মন্টু ঔ মিন্টু। বড় ছেলে মন্টুর বয়স আট বছর আর মিন্টুর সাত। সম্প্রতি আরো একজন নতুন অতিথি আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। রাবেয়া সন্তানসম্ভবা।

।।২।।
বাড়িতে অনেক মেহমান এসেছেন। উপলক্ষ আর কিছুই নয়। ঘরের নতুন অতিথি রায়হানের আজ আকিকা। ভীষণ তোড়জোড় আয়জন হয়েছে দুদিন আএ থেকেই। এই নিয়ে মন্টু আর মিন্টুরও আগ্রহের কমতি নেই। বলতে গেলে তারাই সবচেয়ে আনন্দ করেছে। আকিকার ছাগলটি নিয়ে তাদের বেশি আনন্দ। দুই ভাই মিলে ছাগলের মুখে কথা ফোটানোর চেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত। মোদ্দা কথা ছাগলটির সাথে একরকম বন্ধুত্বই পাতিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তারা জানে যে কি বিপদ তাদের সামনে অপেক্ষা করছে।
যাই হোক, নির্দিষ্ট সময়ে আয়োজন শেষ হল। মন্টু মিন্টুর প্রিয় ছাগলটিকেও জবাই করা হল। তারা অবশ্য আপত্তি করেছিল। কিন্তু আদের বাবা বুঝ দিলেন যে এটা করতে দিলে ছাগলটি আর ভাল ও নাদুস নুদুস হয়ে ফিরে আসবে। শৈশবনোত্তীর্ন মন্টু আর মিন্টু এই ছলনাটুকু বুঝতে পারল না। তারা হাসি মুখেই সম্মত হলো।

।।৩।।
আকিকার কয়েক সপ্তাহ পরের ঘটনা এটি।

মন্টুদের বাড়িটি সুন্দর তেতলা। তবে ছাদে পুরোপুরি রেলিং নেই।
রায়হানের বয়স তখন তিন মাস। বেলা ১০ টার হাল্কা রোদে ছাদের সিঁড়ির নিচে উঠানে গামলায় করে পানি নিয়ে রায়হানকে গোসল করাচ্ছেন তার মা। আর দুই ভাই ছাদে খেলছে। হঠাত তার কানে এল মন্টুর তারস্বর চিৎকার। তিনি বেশ বিরক্ত হয়েই কোন পাত্তা দিলেন না। নিশ্চই মারামারি করছে হতভাগা দুটো। কিন্তু পরমুহূর্তেই দেখতে পেলেন সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে জমাট বাঁধা রক্ত। রবেয়া যা বঝার বুঝে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে তার মন্টুর কিছু একটা হয়েছে। তিনি পড়িমরি করে ছুটলেন ছাদের দিকে। ছাদের দরজার কাছে এসে তিনি যা দেখলেন, তাতে তিনি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। মিন্টুর হাতে রক্ত মাখা ছুরি আর তার পাশেই ডাঙ্গায় তলা মাছের মত তড়পাচ্ছে গলাকাটা অবস্থায় পরে থাকা মন্টু..............................।

।।৪।।
মন্টুঃ ইস্, আমি যে কত চিকন! দেখেছিস মিন্টু?
মিন্টুঃ এক্কেবারে শুঁটকি মাছ। হি!হি!হি!
মন্টুঃ চুপ! এমন এক থাবড়া দেব। জানিশ, আমিও মোটা হব। ঠিক
মামার মত। তখন দেখিস। তোকে এই এক হাত দিয়ে তুলব, আর
আছাড় মারব।
মিন্টুঃ কিন্তু, হবে কিভাবে? স্বপ্নে?
মন্টুঃ কেন। বাবা সেদিন বলল না যে জবাই করলে নাদুস নুদুস হয়?
আমাকে জবাই করলে আমিও একদম ইয়া বড় হয়ে যাব।
মিন্টুঃ মা যদি বকা দেয়?
মন্টুঃ মাকে জানাবই না। শোন, আগে তুই আমাকে জবাই কর। তারপরে
আমি মোটা হয়ে এসে তোকেও মোটা করে দেব।
মিন্টুঃ ঠিক আছে। মনে থাকে যেন। তুমি ফিরে এসে আমাকেও জবাই
করবে কিন্তু।
মন্টুঃ নে, নে, আর দেরি করিস না। ছুরিটা ধর।

তারপর মিন্টু সেই কসাইয়ের ছুরি দিয়ে মন্টুর গলায় পোঁচ বসিয়ে দেয়। ছুটতে থাকে গরম রক্তের ফোয়ারা।


।।৫।।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। মাকে অমন ভাবে ছুটে আসতে দেখে মিন্টু ভাবল মা হয়ত পাগল হয়ে গেছে, তাকে কামড় দিতে আসছে। তাই সে ভয়ে উলটো দিকে দৌড় দিল। কিন্ত পালাতে পারল না। নিচু রেলিং এ পা বেধে ছাদ থেকে নিচে পরে গেল সে। সদ্য নির্মিতব্য বাড়ির বেষ্টনী দেয়ালের বেরিয়ে থাকা চোখা রড রক্তাক্ত এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল তার বুক। এই ভাবেই মায়ের চোখের সামনেই বীভৎস মৃত্যু হল দুই ছেলের।


।।৬।।
এখানে শেষ হলেও হত। মা জননি হয়ত শিশু পুত্র রায়হানকে নিয়ে শোক ভুলে থাকতে পারত। কিন্তু ভাগ্যে লেখা ছিল অন্য কথা। হঠাত নিচ থেকে রাবেয়ার শাশুরির প্রাণপণ চিৎকার শোনা গেল। পাড়া বেড়িয়ে সবেমাত্র বাড়ি ফিরছেন তিনি।
কি দেখে চিৎকার করলেন তিনি?
বাড়িতে ঢোকার পথে তিনি দেখলেন ..................
গামলা ভর্তি পানির ভেতর ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে আছে শিশু রায়হানের লাশ...।
আসলে রক্ত দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারেননি রাবেয়া। তাই মনের ভুলে আদরের রায়হানকে গামলার জলে ফেলেই ছুটে যান। সেই গামলা থেকে আর উঠতে পারেনি রায়হান।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Meshkat @কৌশিক ভাইঃ ধন্যবাদ রইল আপনার তরে/
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) তোমার লেখা পরে ,কষ্টে বুকটা গেল ভরে /
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) কষ্ট কাকে বলে?দুর্নীতিবাজেরা যখন দেখি বুক ফুলিয়ে চলে /
ঝরা গোলপটি আমি আমি আর ও শুনেছি।
Meshkat আসলে পাঠকেরাই লেখকের শক্তি। তাদের প্রশংসা পেয়ে আমরা উৎসাহিত হই। আর তারাই আমাদের ভুলগুল শুধরে দেন।
মিজানুর রহমান রানা সদ্য নির্মিতব্য বাড়ির বেষ্টনী দেয়ালের বেরিয়ে থাকা চোখা রড রক্তাক্ত এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল তার বুক। এই ভাবেই মায়ের চোখের সামনেই বীভৎস মৃত্যু হল দুই ছেলের।-----------জীবন চলার পথে কতো কিছু ঘটে। কেউ মনে রাখি কেউ রাখি না। সেই বাস্তবচিত্রগুলো মনের আয়না থেকে কলমের মাধ্যমে গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেন একজন গল্পকার। ভালো লাগলো।
Azaha Sultan একসঙ্গে তিন তিনটি মৃত্যু! অনেক দুঃখের কথা ভাই, এমন কষ্ট কারও কাম্য নয়। এ রকম একটা অভিনব মৃত্যুর ঘটনা আমি শুনেছিলাম বাস্তবে...যাই হোক, আইয়ুব নবির এগারটি সন্তান মসজিদের মিনার ভেঙে একসঙ্গে মারা গিয়াছিল! মুসলিম-ইতিহাসে বড় দুঃখের ঘটনা বোধহয় এটি। মণিহারা ফণী আর সন্তানহারা মাতৃ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুখী...ভাল লিখছ, ধন্যবাদ; শুভজীবন তোমার...
সেলিনা ইসলাম গল্পটা পড়ে সত্যি কেদে ফেলেছি । আল্লাহ কেন এমন নিষ্ঠূর হন মাঝে মাঝে ? আমার দেখা আমার এক কাজিনের টুইন ছেলে সুইমিং পুলে পড়ে মারা গেছে । তবে একটা কথা মুরুব্বিরা কিন্তু বাচ্চাদের সামনে কোন কিছু জবাই করতে নিষেধ করেন এমন কি কোরবানির পশুটিও বাচ্চাদের সামনে জবাই দিতে হয় না । আর বাবা মায়ের এমন কোন কথা বলা উচিত নয় যা বাচ্চাদের মনের এমন ধরনের ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করে । বাচ্চারা বাবা মায়ের কথা সব চেয়ে বেশি বিশ্বাস করে । আপনি চেষ্টা করেছেন গল্পের আকারে একটা ম্যাসেজ দিতে পাঠকদের ,লেখনিতে কতটা সফল হয়েছেন তা যতটা না গুরুত্ব তার থেকে গুরত্ব বাবা মায়েরা এবং যারা ভবিষ্যতে বাবা মা হবেন তাদের জন্য উপকার হয়েছে । আল্লাহ পাক এই তিন সন্তান হারা বাবা মাকে ধৈর্য শক্তি দিন এই কষ্ট সইবার । আল্লাহ হাফেয
Meshkat ভাই, সাতক্ষীরায় আমার নানি বাড়ি। কয়েকদিন আগে নানির সাথে ফোনে কথা বলার সময় আমি ব্যাপারটি জানতে পারি। এক সাথে তিন মৃত্যুর ঘটনাটি সত্য। তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু জায়গা আমি ভালভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারিনি। ভাইরে, এমন ট্র্যাজিক বিশ্বাস করা শক্ত। তবে আমার অনুরোধ, সন্দেহ হলে একটু খোজ খবর নিয়ে দেখবেন। আপনার সস্নেহ সংশোধনের জন্য ধন্যবাদ। চেষ্টা করব আগামিতে আর ভাল লেখার জন্য।

০৭ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪