নীল কষ্টের ছায়া

কষ্ট (জুন ২০১১)

আবু সাঈদ মোল্লা
  • ২৪
  • 0
ক. সন্ধ্যার ছাইচাপা অন্ধকার ক্রমাগত ঘন হয়ে আসে । রেল লাইনের পাশের ঘুপচি গুলোতে জ্বলে উঠে প্রাত্যহিক আলো । গতর খাটা মানুষ গুলো ফিরে আসে ঘুপচিতে । কোন এক জীর্ণ ঘুপচিতে শোনা যায় তদারকির হাঁক--'আর হাইন্ঞ্জা বেলায় বাত্তি জ্বালাইতে অইব না, চাইল ডাইলের লগে লগে ক্যারাসিনের দামও কইলাম বাইড়া গ্যাছে ।' পাশের বুনো ঝোঁপঝাড়ে জোনাকীদের আলো জ্বালাবার প্রস্তুতি । শিল্পপতিদের স্হাপনা আর বস্তি উজাড়ের ইস্যু নিয়ে ইসদাইর বাজারে জটলা করে একদল ভাসমান মানুষ । চায়ের কাপে ঝড় তোলে মজুদদারের নকল সার আর পচাঁ গম । বৃত্ত সেদিকে ফিরেও তাকায় না । রেল লাইনের স্লিপারে পা রেখে এগিয়ে চলে । স্লিপার গুনে-এক, দুই, তিন, চার..... । ঘুপচিতে ফেরা ঐ হিসেবী মানুষটির শেষ কথাটুকু বার বার বৃত্তের কানে বেজে উঠে- 'চাইল ডাইলের লগে লগে ক্যারাসিনের দামও কইলাম বাইড়া গ্যাছে ।' বৃত্তও ঐ হিসেবী মানুষটির মতো তার নিজের সিমাহীন বেপরয়া জীবনের হিসেব মিলায় । হারানোর হিসেব, প্রাপ্তীর হিসেব, অন্ধকারে তলিয়ে যাবার হিসেব । কিন্তু হিসেব মেলেনা । প্রাপ্তীর চেয়ে হারানোর পাল্লা অনেক ভারী ।

খ. সেল ফোনের ক্ষুদ্র বাটনের উপর বৃত্তের অসতর্ক আঙ্গুলের পেষণে আদিব আবিষ্কৃত হয় বৃত্তের কর্ষিত জীবনে । সেই জীবনে প্রতিদিন বৃত্ত তার সব ইচ্ছা, আকাংখা, স্বপ্ন, রঙ্গীন ঘুড়ির মতো ইথারে ভাসিয়ে দেয় । ভাসতে ভাসতে আদিবের মুঠোফোনের ইয়েস বাটনে এসে পৌছোঁয় । দীর্ঘ কথোপকথন, আবেগ, উচ্ছাস, প্রেরণা আরও ঘনিভূত হয় । দৃঢ় হয় । বৃত্তের স্মৃতির ক্যানভাসে আঁকা হয় আরও একটি নতুন ছবি । সে ছবি আনন্দ জাগায়, ভালোবাসা জাগায় তার অস্থি মজ্জায় ।

গ.--প্লিজ, একদিন দেখা করুন ।আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
--দয়া করে দেখতে চাইবেন না আমাকে ।
-- কেন বলুন তো ?
-- আমি দেখতে মোটেও সুন্দর নই । একটা গল্প বলি শুনুন-- 'প্রাশ্চাত্যের একজন খ্যাতিমান চিত্র শিল্পী ভ্যানগ্গ । তিনি দেখতে মোটেও সুশ্রী ছিলেন না । তার প্রেমিকা মনে করতো ভ্যানগ্গের পুরো শরীর জুড়ে শুধু কান দুটোই সুন্দর । তাই প্রেমিকা ভালোবাসার নিদর্শন স্বরুপ ভ্যানগ্গের কান দুটো কেটে উপহার চাইল । আর তখনই ভ্যানগ্গ তার কান দুটো কেটে প্রেমিকার হাতে তুলে দিল ।
আমার তো কান দু'টোও সুন্দর নয়, যা চাইলেই আপনার হাতে তুলে দিতে পারি । তাইতো আমার ভয় শেষে না বন্ধুত্ব টুকুও হারাই ।
-- রসিকতা ছাড়ুন তো । ভালোবাসা মানুষের শরীরে থাকেনা । থাকে হৃদয়ে । আমি আপনাকে দেখতে চাই ।

ঘ.বৃত্তের বুকের মধ্যে ভালোবাসার মেঘ ঘনিভূত হয় । বর্ষিত হতে চায় । বৃত্তের অকৃত্রিম অনুরোধে আদিব দেখা করে ।
ঘড়িতে প্রাক্ দুপুর । Cave way'র নীল টেবিল । আদিবের একান্ত প্রহর গোনা । স্পিকারে পংকজের গান ভেসে আসে -- মোহনায় এসে নদী পেছনের পথটা কি ভুলতে পারে .........!!
মৃদু কোলাহল, গুনজ্ন । আত্নমগ্নতার ঘোর কেটে আদিবের দৃষ্টি চলে যায় সামনের দিকে । এক জোড়া কালো চোখ কাকে যেন খোঁজে । আদিব অন্যদিকে তাকানোর চেষ্টা করে কিন্তু দৃষ্টি ফিরে আসে ঐ নীল টেবিলটার গভীর নীলে । বৃত্তের অনুসন্ধানী কালো চোখ দু'টো আদিবের উপর নিবদ্ধ হয় । আদিব লজ্জা পায় । দ্বিধান্বিত হয় । Cave way'র দেয়ালে সাঁটানো হলুদ ফুলের ছবি দেখে । ছবির মধ্যে দেখে নীল কষ্টের ছায়া ।

ঙ. --নিশ্চয়ই আপনি আদিব ?
-- জ্বি । আর আপনি বৃত্ত । বৃত্ত মানেই তো চারদিকে নিশ্ছিদ্র বেষ্টনী । আর যদি সেই বেষ্টনী কংক্রিটের তৈরী হয়ে থাকে, তবে সেটা ভাঙ্গবার সাধ্য কার ?
-- বেষ্টনীতে শক্ত হাতুরী ঠুকুন, নিশ্চয়ই ভাঙ্গবেন একদিন । বৃত্তের কথায় সোনালী রোদ । হৃদ্যতার বহর আরও বাড়তে থাকে আত্নিক ধারায় । বুকের মধ্যে অচেনা বুদ বুদ । সামনে স্বপ্নের অবারিত মাঠ । পেছনে স্মৃতির গহীনে স্রোতের কলস্বর । স্বপ্নের ঘেরাটোপ । বৃত্ত সহসাই লজ্জার আগল ভাঙ্গে ।
--বিশ্বাস করুন আদিব, আমি আপনাকে প্রচন্ড ভালোবাসি । আদিবের মৌনতা বৃত্তকে আশ্বস্ত করে । নির্ভরতা বাড়ায় । বৃত্তের ভালোলাগা আর দূরাগত স্বপ্নের সহবাসে জন্ম হয় ভালোবাসার এবং তা দু'টি মনের চৌহদ্দিতেই শেকড় গেড়ে বসে । দু'টি ছায়া একই পথে চালান হয়ে যায় ।

চ. দু'জন একই পথে চলে জীবনের খানাখন্দ, দ্বিধা দ্বন্দ্য পেরিয়ে । সমান্তরাল ছায়া হয়ে । আদিবের প্রেরণা, উৎসাহ, সান্নিধ্য বৃত্তের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করে । বৃত্ত স্বপ্ন দেখে বড় হবার, যোগ্য হবার । দেখে জীবনের অনাবিল প্রবাহ । ওরা ক্রমাগত নিবিড় গভীড় হয়ে যায় । প্রনয়ের রং আরও গাঢ় হয়ে আসে । সময় বয়ে যায় সময়ের নিয়মেই ।

ছ. বৃত্তের চন্চলতা, অসহিষ্নুতা, মাত্রাতিরিক্ত বেপরোয়া জীবন যাপনে আদিবের মুগ্ধতা ক্রমশঃ বিস্ময়ে পরিনত হয় । মনে জমে উঠে সন্দেহের কালো মেঘ । আদিবের সামনেই বৃত্তের সেলফোনে ভেসে আসে কোন এক নষ্ট পুরুষের নষ্ট বাণী । বৃত্ত সেই বাণী সোৎসাহে গ্রহন করে । পজেটিভ রেসপন্স করে । আদিব প্রশ্ন করে -- কে ঐ অপর প্রান্তের মানুষটি ? সে উত্তর না দিয়ে কৌশলে প্রসংগ এড়িয়ে যায় । আশ্রয় নেয় মিথ্যের । আদিবের সন্দেহ জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে । বৃত্তের চোখে মুখে নারীত্ব হারানোর সাক্ষর পান্ডুর চাঁদের মতো স্পষ্ট হয় । অভিসারিনি বৃ্ত্ত পাশদোলানি চালে স্বেচ্ছায় ডুবে যায় নারকীয় অন্ধকারে । কোন এক দিন বৃ্ত্ত তার বিভিষিকাময় ফেলে আসা অন্ধকার জীবনের কথা খুলে বলে পরম নির্ভরতায় । আদিব শিহরিত হয় ।

জ. আদিব তার সব টুকু চেষ্টা দিয়ে বৃত্তকে ফিরিয়ে আনতে চায় আলোর পথে । বৃত্তও মুক্তি পেতে চায় তার স্বেছায় কারারুদ্ধ জীবন থেকে । বেরিয়ে আসতে চায় বৃত্তাবদ্ধ জীবনের আগল ভেঙ্গে । বৃত্ত কি আদৌ ফিরে এসেছে ? এই একটি প্রশ্নই আদিবের কাছে অমিমাংশিত থেকে যায় । চোখের সামনে ভেসে উঠে এক মস্ত বড় প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ।

ঝ. ঘড়িতে বিকেলের উপস্থিতি । উঁকি দেয় গোধুলী মাখা সন্ধ্যা । Cave way'র নীল টেবিলে বৃত্ত হাত রাখে আদিবের হাতের উপর । নীল টেবিলের নীল থেকে ওরা নীল মেখে নেয়, দুঃখ মেখে নেয় । উষ্নতা মেখে নেয় প্রতিদিনের স্বপ্নে ও প্রাত্যহিকতায় । কিন্তু স্বপ্ন গুলো পাংসুটে বিবর্ণ হয়ে যায় । ইচ্ছে গুলো নেতিয়ে যায় বৃষ্টিতে ভেজা পাখির ভেজা পালকের মতো । দু'টো কফির মগ নীরবে সাক্ষী হয় । ঝগড়া অভিমান প্রত্যক্ষ করে । কফির মগে ধোঁয়া উড়ে কিন্তু কারো গলা অব্দি পৌঁছোয় না । গোধুলীর আলো শ্লথ হয়ে আসে । ঝগড়ার গতি বাড়তে থাকে ।

ঞ. -- কেন তুমি ফিরে আসতে পারোনা অন্ধকার জীবন থেকে ? কেন নিজেকে ঠকাও ? কেন পথ ভ্রষ্ঠ হও ? ঝড়ের বেগে বৃত্ত বেরিয়ে আসে Cave way'র কাঁচের দরজা দিয়ে । কফির মগ দুটো টেবিলেই পড়ে থাকে গাঢ় অভিমানে । অন্ধকার শুষে নেয় সূর্যের আলো । বৃত্ত চাষাঢ়া থেকে ইসদাইর রেল লাইনের স্লিপারে পা রেখে রেখে এগিয়ে চলে । স্লিপার গুনে এক, দুই, তিন, চার .....!! পেছনে আদিবের দিকে ফিরেও তাকায় না । আদিবও জেনে যায় বৃত্তের জীবনের অমিমাংশিত পান্ডুলিপিতে আদিবের কোন স্থান নেই । বৃত্ত রেল লাইন ধরে হাটতে হাটতে তাদের প্রেমের নীরব সাক্ষী বুড়ো বট গাছটার নিচে এসে থমকে দাড়ায় । আবার বা দিকে মোড় নেয় । দ্রুত পায়ে হেটে চলে । নিতম্ব দুলে উঠে । জীবনের হিসেব মিলায় । প্রাপ্তির হিসেব । হারানোর হিসেব । হিসেব মেলেনা । বৃত্ত বাসায় এসে মূল দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকে । ঘন অন্ধকারে বৃত্ত ক্রমশঃ অদৃশ্য হয়ে যায় । দরজায় আবার আগল পড়ে । ভেতরে উদ্বিগ্ন বাবার হুংকার শোনা যায় -- ফিরতে এত দেরি হলো কেন ? #

(Cave way- নারায়ন গন্জ শহরের একটি রেষ্টুরেন্ট )
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আবু সাঈদ মোল্লা গল্পটি পড়ে যারা মন্তব্য করেছেন তাদের সকলকেই অভিবাদন ।
শাহ্‌নাজ আক্তার কঠিন গল্প কঠিন মনোযোগ দিয়ে পড়লাম , ভোট টাও কঠিন ভাবে করলাম ......কারণ গল্পটি ভালো লেগেছে .........তবে কোনো কষ্ট অনুভব করতে পারিনি . যাই হোক শুভকামনা রইলো I
আহমেদ সাবের আদিবের প্রশ্ন বৃত্তকে – “কেন তুমি ফিরে আসতে পারোনা অন্ধকার জীবন থেকে ?” বৃত্ত বড় কঠিনরে ভাই। আমাদের সমস্যা কণ্টকিত সমাজে বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা কি এতই সোজা? সিম্বোলজিমটা ভাল লেগেছে। গল্পের ফরমেটের নতুনত্বও চমৎকার।
ঝরা আমি অতি সাধারন তাই এমন লিখায়মন্তব্যের কিছু খুঁজে পাচ্ছি না ।
রওশন জাহান অসাধারণ আপনার লেখার হাত. লিখতে থাকুন একদিন বিজয় আসবেই .
রনীল N/A UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# গল্পের শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল...সে হিসেবে শেষে এসে একটু হতাশ হতে হয়েছে... লেখনির মুন্সিয়ানায় মুগ্ধ হয়েছি... তবে মুঠোফোনে পরিচয়, তারপর প্রেম... তারপর নির্মম সত্যের আবির্ভাবে দুজনের মধ্যে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব... গল্পের এই ধারাটি পূর্ব পরিচিত মনে হয়েছে...
এস, এম, ফজলুল হাসান ভালো লাগলো গল্পটি , কিন্ত বৃত্ত যে মেয়ে তা বুঝলাম অনেক পড়ে, ধন্যবাদ
আবু সাঈদ মোল্লা অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আক্তারুজ্জামান । গল্পটি পড়বার জন্য । শুভ কামনা রইলো ।
মোঃ আক্তারুজ্জামান সুন্দর লিখেছেন| কিন্তু আপনার ক, খ, গ ......ভালো লাগেনি|

০৭ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪