বড় কর্তা

পূর্ণতা (আগষ্ট ২০১৩)

খোরশেদুল আলম
  • ১৪
দেবী গতকাল থেকে সিঁদুর পড়তে শুরু করেছে। আজকাল মানুষ মন দেখে না, মান দেখে। জ্ঞান দেখে না, ধন দেখে। যত ধন তত মান। তাই দেবীর বয়স বেড়েগেছে। পঞ্চান্ন বছরের বড় কর্তা মিচমিচে কালো। শক্ত হাতের ধবধবে সাদা বুড়ো আঙ্গুলের মাথা তাকে এ বাড়িতে এনেছে। লালের ঘষা দিয়ে।

বাড়ির ছেলে বুড়ো পরশি আত্মীয় সবার কাছে ঘরের প্রতিটি আসবাব। খাট ঘটি-বাটি এমনকি তোষক বালিশও অনেক পুরনো বয়স্ক মনে হয়। বড় কর্তা নিজের মতোই সেগুলোকে কম বয়সী মনে করে। কি ভাবে দিন যায়। বয়স বাড়ে। বয়স নিয়ে ভাবলে কষ্ট বাড়ে। এই সেদিনও দলবেঁধে প্রাইমারি স্কুলে গিয়েছে। স্কুল থেকে আসার পথে হাফ পেন্ট খুলে এক-দুঘন্টা ডুবিয়ে, সরিষা খেলে ভেলায় চড়ে, তারপর বাড়িতে এসেছে। আশপাশের গাছের আম জাম টালের শশা, তাদের হাতের ছোঁয়া পেয়েই বড় হয়েছে। কিন্তু আজ বয়সের ভারে সবাই নুঁয়ে পড়েছে। তাদের অনেকে বিদায়ও নিয়েছে জগৎ সংসার থেকে। অনেকেই ছেলেমেয়ে বিয়ে দিয়েছে। দাদা নানা হয়েছে। ব্যাচের দুইতিনজন এখনো সন্তানের মুখ দেখেনি। ডাঃ সরাসরি না নাবললেও ঔষধ চালিয়ে যেতে বলেছে। বউয়ের চর্বি কমানোর যত যা নিয়ম কানুন বলেদিয়েছে। ঔষধ চালিয়ে যেতে হবে। ভিটামিনের অভাবে শরীর দূর্বল, শরীরের চামড়া কুঁচকানো, চামড়ায় বৃদ্ধের ছাপ জন্ডিস, ডায়াবেটিস, ব্রেইন স্টোক ক্যানসারের মতো মারাত্নক রোগেও কেউকেউ ভুগছে। সে দিক থেকে শরীর একরকম ভালই আছে কর্তার। চেহারা মেপেও তার এত বয়স অনুমান করা যায় না। শরীরে বৃদ্ধের কোন ছাপ নেই। কিন্তু চুল-দাড়ি পেকে গেছে। চুল-দাড়ি এখন আর বয়সে পাকেনা। ভাতের চাউল থেকে শুরু করে তেল নুন মাছ মাংস ফল দুধ ডিম সহ ঔষধেও ভেজাল। বিনোদনেও ভেজাল। চিন্তা ভাবনার জাতাকলে চুলে পাক ধরেছিল ছাব্বিশ বছর বয়সে। বয়স নিয়ে ভাবা মানে মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করা। এই সব ভেবে আর কষ্ট পেতে চায়না। তাই ভাবেনা। কিন্তু লোকের কাছে এসব বাদ যায় না। - বুড়ো হয়ে গেলা, পরকালে স্বর্গ পাবেনা - বংশের প্রদীপ থাকবে না। শেষদিন মুখে অগ্নি দেবে কে ? - কত কথা বলে। বড় কর্তা এসব কানে তোলে না। কোন পাত্তাও দেয় না। চোখে দেখেও কিছুই দেখেনা। মনের জড়তায় সবকিছু জড় পদার্থের মতো। এগুলোই তার মনের সাথে একেবারে মিশে গেছে। জাত না মিশা, অবর্ণনীয় একটা জেদ। কিছুটা ঘৃণা নিজের উপর। নীরব চুপচাপ নিঃসঙ্গতা প্রিয় স্বভাব। অল্পে তুষ্ট, তাই এ সবই শেষমেশ অসাধারণ লাগে।

টেবিল খাট আর জং ধরা ষ্টীলের আলমারীটার স্তরে স্তরে বসে আছে, বাতাসের সাথে ঘুরে বেড়ানো ধুলাবালী গুলো। নিজের প্রতি যার মায়া নেই। নিজের শরীরের প্রতি যার যত্ন নেই, তার আবার এত কি চাকচিক্য থাকা। ধুলার প্রতিটি কণা তাকে আপন করে নিয়েছে। চোখ মেলে তাকালে সব কিছুই পাথরের মতো আর ভোঁটকা গন্ধ নাকে এসে লাগে। কিন্তু পঞ্চান্ন বছরের জীবনে, কর্তার মনের কল্পনায় ফুল বাগানের খুশবু বয়।

কর্তা হল চা’র দোকানের এক নম্বর আড্ডাবাজ। বন্ধুমহলের প্রাণ। ঘুরে বেড়ানোর পোকা। সে আড্ডায় বড় কর্তার দাদার বয়সী লোক থাকে। সমবয়সী একঝাক লোকের মধ্যে থাকে, তার চেয়ে কমবয়সী কয়েকজন বিধবা। তাদের কপালেও বিয়ে জোটেনি। তাদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। রাজ্যের দুঃখ কষ্টের ছাপ মুখে আয়নার মতো ভেসে উঠে। কপালে বলিরেখার সাথে থাকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস। সবাই তাকে দাদা বলে ডাকে। চা-সিগারেট হাতে সবাই চুটিয়ে আড্ডা দিলেও, বিবাহিতরা মাঝে মাঝে কেমন যেন ব্যবহার করে। খুব একটা পাত্তা দেয়না। বিধবা বলে ডাকে - অনেক তো হল এবার একটা বিয়ে করে সংসারী হও। তখন বড় কর্তা বাস্তেব অবহেলায় গা এলিয়ে দেয়। চা’র কাপের চুমুক নামিয়ে লোকেদের এমন কথার চট করে উত্তর দেয় - জীবন তো শেষ, কয়দিন আর বাঁচব। শেষ জীবনে আরেক জনকে জড়িয়ে লাভ কি। শিবলি খা বলে- দেরি যখন হল আর একটু দেরি করো দাদা। আমার নাতীনের নাতীন হোক তখন তোমার একটা সু-ব্যবস্থা অবশ্যই হবে। আর ক’টা দিন। জগদিশ বলে - ‘চিনি কম’ ছবিটা দেখেছ কি দাদা ? কর্তা হেসে বলে এ করেই তো জীবন গেল। সবাই হেসে উঠে।

দিনেশ বলে - বিয়ে করো বিয়ে করো দাদা, নইলে যে নরকবাসী হবে। রইস বলে - দাদা, ধর তুমি এখন বিয়ে করলা, তোমার সন্তান হল। তাদের কি মানুষ করে যেতে পারবা ? আরেক জন বলে - যারা একটা বিয়া করেছে তারা আরেকটা করুক। আর যারা বিয়ে করেনি তারা যেন আর না করে। নব্বইয়ের কোঠা পার করেছে মন্ডল সাহেব। সেও আড্ডায় তালমিলিয়ে চা'র কাপে চুমুকদিয়ে একটি গল্প বলে- এক লোক বিয়ে করেনা করেনা। চুল দাড়ি সব পেকে গেছে। হঠাৎ করে শেষ বয়সে তার বিয়ে হয়ে গেল। লোকজন সবাই অবাক। বছর না ঘুরতেই তার ঘরে একটি পুত্র সন্তান এল। সে একটু একটু কথা বলতে শিখেছে। অন্য বাচ্চাদের দেখে দেখে পাড়ার পাকনা চুল-দাড়িওয়ালাদের নানা-দাদা বলে ডাকতে শিখেছে। হঠাৎ এক মাঝ রাতে ছেলেটির ঘুম ভাঙে। ছেলেটি দেখে পাকনা চুলওলায়া একজন তাদের খাটে শুয়ে আছে। ঘুমের তালে তালে চোখ কচলাতে কচলাতে তার মাকে বলে - “ মা মা দাদায় আমাগো লগে শোয় কেন ? দাদার কেউ নাই।” গল্প শুনে সবাই হা হা হাসিতে ফেটে পরে। গল্পটি একসময় মুখরোচক হয়ে যায় - মা মা দাদায় আমাগো লগে শোয় কেন, দাদার কেউ নাই। যে যার মতো গল্প বলে তিরস্কার করে।

বড়কর্তা মাঝে মধ্যেই একা একা ঘুরতে যায়। যৌবন কালের পুরোনো অভ্যাস। এবার নাটোর টাউনে এক হোটেলে উঠেছে। প্রতিদিন সকালে নাস্তা খেতে যায় নতুন বাসষ্টেন্ডের এক হোটেলে। তখন দেবীর সন্ধান পায়। তখনো বিয়ের চিন্তা-ভাবনা মাথায় ছিলনা। প্রথমদিন হেটে কলেজে যেতে দেখে পরদিনও দাঁড়িয়ে থাকে। তার পরেরদিন পিছু পিছু যায়। কলেজের গেইটের বাহিরে অপেক্ষা করে। তার পর একসাথে যাওয়া আসা। এভাবে বিশ বছরের যুবকের মতো ডিউটি দেয় কয়েকদিন। কিন্তু সেই সাহসের সাথে ছাত্রীর সাথে কথা বলাতো দূরের কথা, চোখে চোখ তুলে তাকাতেও পারেনা। লাজ লজ্জার ভয়ে বুক কেঁপে উঠে। লোক জানাজানি হলে এই বয়সে আর মানইজ্জত থাকবে না। রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে আসে। শুয়ে শুয়ে ডিসে দেখে অমিতাভের ‘চিনি কম ছবি’ টি। হোটেলে পাঁচদিনের টাকা অগ্রিম দিয়ে রাখে। কয়দিন থাকবে তার ঠিক নেই। হোটেলের কাজের মহিলা আর বয় কে দিয়ে ভি আই পি রুমটি, ভি ভি আই পি করে নিয়েছে।

ফর্সা চেহারায় মলিন ছাপ দেখেই কর্তা বুঝেছিল বাড়ির হীন অবস্থা দেখতে সুন্দর। শুদ্ধ উচ্চারণে কথা শুনে কর্তার খুব ভাললেগে যায়। তিন জনের সংসার। মা আর এক ছোট ভাই। অতিকষ্টে জীবন চলে। নাম গিরিবালা দেবী। ভাল ছাত্রী তাই খাওয়া পড়া চালিয়ে যাচ্ছে বাড়ির জমি বিক্রি করে। বাড়িতে আছে কিছু ফলের বাগান। এককালে বেশকিছু প্রতিপত্তি ছিল তা বাড়ির আঙ্গিনা দেখে বুঝা যায়। আজ এলাকার মানুষ গরিব বলে অবহেলা করে। আত্মীয়রাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই সময় রাম এসে অভাব নামের রাবনের হাত থেকে, সিঁদুর পড়িয়ে সিতাকে উদ্ধার করে। । সেই কারণেই এ বিয়ে হয়েছে। নয়তো এ বিয়ে কোনদিন সম্ভব ছিলনা। মেয়েরা অল্পবয়সে মানিয়ে নিতে পারে। যদিও দেবীর এমন চাওয়া ছিলনা। মা আর পরশিদের দ্বায় সারাতে একদিনেই বিয়ে হয়ে যায়। - টাকা পয়সা জমি শিক্ষা নামডাক সবই আছে শুধু বয়স একটু বেশি। তাতে কি ? - না খেয়েতো আর থাকবে না। আর বয়স ততটা বুঝা যায় না। পরশিদের এমন কথায় দেবীর মা’র বুক জ্বলে যায়। দু'চোখের সিমানায় ঘুরে শাড়ির আঁচল।

হোটেলের ছোট্ট অগোছালো রুমেই উঠায় নতুন বউকে। রুমটি ঠিকঠাক গুছিয়ে নেয় দেবী। হয়ে যায় বাসর রাত। পরদিন সকালে গাড়ীর টিকেট কাটে। বাড়ি নিয়ে আসে। লোকজন নতুন বউ দেখতে এসে মুচকি হেসে বলে - কর্তা কবে হল ? কর্তার সলজ্য উত্তর - গতকাল। গতকালই সিঁদুর পড়িয়েছি। কর্তার চারপাশের সবাই হাসাহাসি করে নানা কথা বললেও শেষ কথা বলে এই - যাক বাবা শেষ পর্যন্ত দেরি হলেও বিয়ে তো হল। না থাক শুশুর বাড়ি। - এ বয়সে আবার শুশুর বাড়ি। মাঝখান থেকে চিরকুমারের কমিটির সভাপতি পদটি ঝন্টু মিয়া পেয়ে গেল। একজন সদস্য হারাল। চিরকুমার পদ থেকে কর্তার নাম কাটাগেল।

গিরিবালা এসে খাট আলমারীর ধুলাবালী আর জংএর মতো কর্তার মন থেকেও জড়তা দূর করে দেয়। আশি থেকে শূন্য বাদদিয়ে আটবছরে নামিয়ে আনে। স্বামীর সুখ তার সুখ। স্বামীর সেবা পরম ধর্ম। স্বামী ছাড়া পরকালে স্বর্গ নেই। সতী নারীর স্বামী ভক্তি, বুকভরা মমতা। ভালবাসার মনোভাব প্রকাশই তাকে আটে এনেছে। ঘরের এ পাশ থেকে ওপাশে হেটে যাওয়া গিরিবালার মুখ বুকের দিকে, শিশুর চোখের মতো তাকিয়ে থাকে। দেবী ভোরে যখন ঘুম থেকে উঠে, তখন শিশুর মতোই ঘুমিয়ে থাকে কর্তা। সকালের রান্নার পর। স্নান সেরে শরীর মুছিয়ে দেওয়ার সময়ও তাই মনে হয়। শুধু ভাতের থালাটা শিশুর থালার মতো নয়। - না আর খেতে পারব না-এতগুলো ভাত রান্না করেছি খাবে কে ? - তুমি খাবে - আমি ? প্রশ্নের সুরে বলতে বলতে আরেক চামচ ভাত নেয় দেবী।

পুনঃজন্ম যদি থেকে থাকে তাহলে আগের জন্মও নিশ্চয় আছে। পূর্ব জন্মের কথা যেমন এ জীবনে মনে পড়ে না। পরজন্মের কথাও কেউ জানেনা। হয়তো গিরিবালা দেবী আমার সাথেই আগের জনমে ছিল। হয়তো গিরিবালা আগের জন্মে দেবী ছিল। মানুষ রূপে ইহলোকে পুনঃজন্ম । হয়তো আবারো পুনঃজন্ম হবে। কল্যাণময়ী ভালোবাসার মহাদেবী রূপে।

শক্ত হাতের ছোঁয়ার অপেক্ষায় যেমন ছিল দেবী । নরম হাতের মধুর ছোঁয়ার আশায় ছিলনা কর্তা। দুজনের চাওয়া এক ছিলনা। মন একছিল না। কিন্তু এখন এক। এক সুতায় গাঁথা দুটি ফুলের একটি মালা। দুই ফুলের এক গন্ধ। দুজনের চোখে এক দৃষ্টি, এক মন। একটি ভাতের থালা।
স্বামীর জন্য সব সময় ভাবনায় থাকে। সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠা থেকে শুরু করে রাত্রে ঘুমপাড়ানো পর্যন্ত। দিনের সমস্ত কাজ, তার পছন্দের খবার, খেতের ফসল ফলানো,পছন্দের কাপড় এমনকি বাহিরে যাওয়ার জন্য জুতা পর্যন্ত দেবীর পছন্দ মতো হয়।

ঘরে সমস্ত কিছু মেনে নিলেও, বিশবছরের ছেলেদের মতো বউয়ের হাত ধরে রাস্তায় হাটতে পারেনা। মার্কেটে যেতে পারেনা। দিনের বেলা বাজার করে নিয়ে আসতে পারেনা। মানুষ হাতে বাজারের ব্যাগ দেখে যদি, নতুন বউ নিয়ে কিছু বলে। হাসে। লজ্জা লাগে। তাই রাতের অন্ধকারে ব্যাগ ভর্তি সদাই নিয়ে রিক্সায় উঠে। বাহিরে যাওয়ার সময় - তোমার কিছু লাগবে ? একটি মাত্র প্রশ্ন করে দেবীর মুখের দিকে বেচাড়ার মতো তাকিয়ে থাকে। দেবী সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের লিষ্ট দেয়। নিজের জন্য কিছুই বলেনা। কর্তা নাবলা কথাগুলো ঠিকঠিক বুঝে নেয়। একটাও আনতে বাদ যায়না। কিছু বেশিও আনে। এমনকি বাচ্চাদের জন্য প্যাকেটে করে হালিম, চটপটি, পুরি সিঙ্গারা, দই মিষ্টি আর গরম জিলাপির মতো কিছুনা কিছু নিয়ে আসে।
ফর্সা গোলগাল মায়াবী মুখ। মুখে হাসি বুক ভরা মমতা। স্বামী ভক্তি। একজন পুরুষ স্ত্রীর কাছে আর কি চায়। বউ হালের বদল না যে কাঁধে হালের জোয়াল তুলেদিবে। রূপ যৌবন ভালবাসা একবুক মমতা এর বাইরে আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। কর্তার মতো ধনী কজন আছে। বউয়ে বউয়ে পাল্লা দিলে সবার নজর কারার মতো রুপ যৌবন, জ্ঞান বুদ্ধি এ সবই আছে দেবীর কাছে। চা’র দোকানের আড্ডায় এখন শুধু দাদা দাদা আর দাদা। পুরো বাজার ছয়লাব। দাঁত বিহীন মুখে সিগারেটের ধুয়া ছেড়ে মন্ডল সাহেব বলে - দাদা বুড়া কালে একটা কাজই করেছে। মন চায় আবারো বিয়ে করি। ঠিকই বলেছেন মন্ডল সহেব। করেছে তাদের সবাই আড্ডায় কর্তাকে নিয়ে নতুন আমেজে মেতে উঠে।

বহু বছরের অভ্যাস রাতে বাড়িফেরা। কর্তা আগে ভীষণ আড্ডাবাজ ছিল। ঘরের কোন টানছিলনা, সংসার ছিলনা, তাই আড্ডামেরেই সময় কাটতো। সেই অভ্যাসটা এখনো পুরোপুরি পাল্টায়নি। দেবীর নিকট থেকে রাত্রের কিছু সময় চেয়ে নিয়েছে। দেবীও মেনে নিয়েছে স্বামীর অনুরোধ ফেলতে পারেনি। জেগে থাকে তার ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত। বাড়ির সমস্ত কিছু দেবীর কথায় চললেও দেবী নিজে চলে কর্তার মন বুঝে। কখন কিভাবে কর্তা পছন্দ করে, কিভাবে ভাল লাগে, কি কি পছন্দ করে দেবী তা সব আয়ত্ব করে নিয়েছে। রাতে সাজাতে খুব পছন্দ করে কর্তা। দেবীও সেজে ঠোঁট লাল করে ঠিক দেবীর মতো হয়ে অপেক্ষা করে স্বামীর ফিরে আসার। কম্পিউটারে গান শোনা, গেম খেলা ছবিদেখা। ডিশের এ চ্যানেল ও চ্যানেল করে করে একা একা কতক্ষণ ভাল লাগে। ঘুমে ডুলু ডুলু চোখে দরজা খুলে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে হাসি দিয়ে মিষ্টি করে বলে- হাত মুখ ধুয়ে এসো।

একপ্লেট ভাত বেরে দুজনে বসে। আগে স্বামীর মুখে ভাত তুলে দিয়ে তারপর নিজে খায়। খাওয়া শেষে জানতে চায় - আজ কটা সিগারেট খেয়েছ ? ককাপ চা’খেয়েছ ? তার পর আসে বাজারের খরচের হিসাব। কর্তা কোনদিন ভাবেনি এ ভাবে কৈফিয়ত দিতে হবে। কিন্তু না কর্তা এখন মানে এ কৈফিয়ত নয়। সংসার চালনার চাবুক। সংসারের চাকা ঠিক রাখতে এ চাবুকের প্রয়োজন। হিসাব করে চলা। যা পুরুষের পক্ষে সম্ভব নয়। হাত খরচ আগের চেয়ে অনেক কমেছে। হোটেলের পোড়া তেল, বাসি খাবার খাওয়া কমেছে। সবকিছুই অনিয়ম থেকে নিয়মে পড়েছে। বেহিসাবী থেকে হিসাবী হয়েছে। নিজের জন্য নয়। দেবীর জন্য। কয়েকদিনেই চেহারার বেশ পরিবর্তন হয়েছে।

আগে চব্বিশ তারিখ আসলেই তলপেট ব্যথা করত দেবীর। আজ মাস শেষ হলেও কোন ব্যথা নেই। গরিব শশুর বাড়ি থেকে কিছু না এলেও পাড়াপরশি আত্মিয়দের বাড়ি থেকে আসে বড় বড় মুরুগ, খাশি। আসে ফলমূল সহ বড় বড় খাবারের চালান। কেউ কেউ বলে হউকনা শেষ বয়সে তবুতো বংশ রক্ষা হবে। বংশের বাতি জ্বলবে। বছর ঘুরতেই পৃথিবীর মুখ দেখে নতুন অতিথি। বৃটিশ রাজপরিবারের মতো ধুমধাম আলোকউজ্জ্বল নয়। চ্যানেল পত্রিকায় পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের মানুষ না জানলেও। পিন্স-কেটের কোলের মতো না হলেও। কর্তা-দেবীর কোল জুড়ে আসে একটি পুত্র সন্তান। পৃথিবীর সব বাবার একি অনুভূতি। বাইশ বছরের মতো সাহস উদ্দাম আর খুশিতে ভেসে যায় কর্তার মন। চা’র দোকানে উলুধ্বনি দিয়ে মিষ্টি খাওযার ধুম পড়ে যায়। প্রতিবেশীরা এবার মুচকিহাসির বদলে সত্যিকারের হাসিতে হাসে। বাবা হওয়ার এত আনন্দ অনুভূতি মুখে প্রকাশ করতে পারেনা। কোনদিন ভাবেনি এ আনন্দ পৃথিবীর অন্য সব আনন্দের চাইতেও অনেক বেশি। মুখের দিকে তাকালে মনের ভীতরের জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠা মন দেখা যায়। বাবা হওয়ার সার্থকতা, জীবনের পূর্ণতার হাসি দেখা দেয় বড় কর্তার ঠোঁটের কোনে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এশরার লতিফ সুন্দর গল্প, খুব ভালো লাগলো।
ইব্রাহীম রাসেল -বেশ লাগলো গল্পখানি।--
বিদিতা রানি বাবা হওয়ার সার্থকতার গল্প। দারুণ বর্ণনা।
হিমেল চৌধুরী অনেক ভালো লাগলো দেবী কর্তার পূর্ণতার গল্প।
রোদের ছায়া সুন্দর পূর্ণতার গল্প। আমার গল্পের বিষয়ও খানিকটা এরকমই । ভালো লাগলো পড়তে।।
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ মজবুত গাঁথুনি ! দারুণ লাগলো।
শিউলী আক্তার কিছু বানান ভুল বাদ দিলে একটি অসাধারন গল্প পড়লাম । কাহিনী খুব সুন্দর লিখেছেন ।
অদিতি ভট্টাচার্য্য বাবা হওয়ার সার্থকতা, জীবনের পূর্ণতার হাসি দেখা দেয় বড় কর্তার ঠোঁটের কোনে। - সেই সঙ্গে আপনার গল্পও পূর্ণতা পেল। ভাল লাগল।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি গল্পের শেষের দিকটা ফাটাফাটি হয়েছে.... বাবা হওয়ার চে বড় স্বার্থকতা আর কি হতে পারে?......খোরশেদ ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ..............
মিলন বনিক অপূর্ব সুন্দর গাঁথুনি...গল্পের ধরন বর্ণনা সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগলো...অনেক অনেক শুভকামনা....

২২ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪