হ্যালো, বাবা! এখনি একটু বাসায় আসতে হবে- মোবাইল ফোনে মেয়ের তাগাদা পেয়ে বিরক্ত হই। দোকানের দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকাই। সবে সকাল দশটা বাজে। সাতটায় বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি। এই তিন ঘন্টার ভিতর বাসায় আমার তেমন জরুরী কোন কাজ বা দরকার থাকতে পারে বলে আমি মনে করতে পারলাম না।
ইচ্ছে করলেই কি দোকান থেকে যখন তখন বেরিয়ে যাওয়া যায়? দোকানের ক্যাশ বাক্স কর্মচারীদের হাতে ছেড়ে দেয়া মানে যেন ওদের চুরির মচ্ছপ করার বন্দোবস্ত দেয়া। দিন কয়েক আগে দেখলাম ক্যাশ বাক্সে কোন ভাংতি টাকা নেই। কর্মচারীটাকে ১০০ টাকা দিলাম খুচরা করে রাখতে। কিছুক্ষণ পরেই ভাংতির দরকার পড়লে ঐ টাকা গুণে দেখি ৯০ টাকা।
আমার চোখ কপালে উঠে গেল ছেলেটার কান্ড দেখে। এই জোচ্চুরটা না জানি আমাকে এভাবে কত ঠকিয়েছে! এই রকম স্বভাব চরিত্রের মানুষ দোকানের মালিক কাছে না থাকলে যা করবে তাকে মচ্ছপ না বলে ডাকাতি বললেও ভূল হয় না।
কেনরে? কী দরকার, বল দেখি বাবা- নিজের রাগ, বিরক্তি যথাসম্ভব অপ্রকাশিত রেখে মেয়ের কাছে অসময়ে বাসায় ডাকার কারণটা জানার চেষ্টা করি।
- দাদা মাছ কিনতে বাজারে যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছে! তুমি তাড়াতাড়ি এসো।
সর্বনাশ- আমার বুকটা ধক্ করে উঠে। বাবার শরীর একদম ভাল না। বাজারে যাওয়া তো দুরের কথা। তার শরীরের যে অবস্থা তাতে করে বাসার বাইরে যাওয়ার শক্তি সামর্থের বিন্দু পরিমান তার মাঝে নেই বললেই চলে। এই মানুষ কীভাবে বাজারে যাওয়ার সাহস করে আমি ভেবে পাই না।
উদভ্রান্তের মত দোকান থেকে বের হয়ে লাফিয়ে একটা রিক্সায় চড়ে বসি। রিক্সা ছুটে চলে। আমি বসে বসে ভাবতে থাকি। বেশ কয়েকদিন থেকেই বাবার খাবার দাবার নিয়ে খুব অসন্তুষ্টি লক্ষ্য করা গেছে। কোন কিছুই নাকি ভাল লাগে না। বিশেষ করে মাছ নিয়ে বাবার ঘোর আপত্তি।
বিলের মাছ আজকাল খুব একটা পাওয়াই যায় না। তবু সাধ্য মত চেষ্টা করি- বিলের মাছটা পাওয়া না গেলে অন্তত তাজা কিছু কিনতে। চাষের মাছে আমারও যথেষ্ট অরুচি। পারত পে আমি তা কিনি-ই না।
একদিন আমরা সকলে বাবার সাথে দুপুরের খাবার খেতে বসেছি। খাবার টেবিলে মুসুরী ডাল, পাট শাক, ভাজা তেলাপিয়া মাছের দোপেঁয়াজা, পেঁয়াজের বড় বড় কুচি দিয়ে চ্যাপা শুঁটকির ‘লাড়া’। ছোট্ট ডেকচিতে বাবার জন্য আলাদা করে কম ঝালে রান্না করা শিং মাছের ঝোল। বাবা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখলেন। তারপর শুঁটকি লাড়ার বাটিটা টানার চেষ্টা করলেন।
গিন্নী আমার দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে বাবার পাতে এক চামচ শুঁটকি লাড়া আর এক টুকরা কাগজি লেবু দিয়ে দিল। আড় চোখে তাকিয়ে ততক্ষণে আমার ছেলে মেয়ে তেলাপিয়া ভূনার উপর হামলে পড়েছে। আমি মনোযোগ দিলাম পাট শাক আর মুসুরি ডালে।
বাবা চুপচাপ শুটকি লাড়া দিয়ে বেশ কয়েক লোকমা ভাত খেলেন। তারপরই বোঝা গেল ওটা বাবার আর ভাল লাগছে না। গিন্নী ব্যাপারটা বুঝতে পেরে প্লেটটা সরিয়ে নিয়ে আর একটা প্লেটে কিছু ভাত দিল, সাথে একটুরা শিং মাছ আর সামান্য ঝোল। সাথে আরও এক টুকরা কাগজি লেবু। কাগজি আর এলাচি লেবু বাবার খুব পছন্দ।
বাবা অনেকটা নিরুৎসাহিতের মত প্লেটে হাত রাখলেন। কিছুণ নাড়াচাড়া করে ছোট ছোট দু একটা লোকমা মুখে তুলেই আমার দিকে তাঁকিয়ে অনেকটা খেঁকিয়ে উঠলেন- টাকা দিয়ে কিনে এসব কী আনিস? মুখে দিলে মনে হয় মাটি খাচ্ছি!
আমি চুপ করে থাকি, বাবার কথার কোন উত্তর খুঁজে পাই না। আড় চোখে তাকিয়ে দেখি আমার ছেলে মেয়ে তেলাপিয়ার দোপেঁয়াজা শেষ করে দাদার শিং মাছের ঝোলে ভাগ বসিয়েছে। ওদের চোখে মুখে রসনা-তৃপ্তির আভা বেশ ফুটে উঠেছে।
কিছুণ পরই বাবার কপাল থেকে বিরক্তির ভাঁজগুলি শুন্যে মিলিয়ে গেল। আমার গিন্নী বাবার এঁটো হাতটা ধুঁইয়ে দিয়ে গামছা দিয়ে তা মুছে দিতে লাগল। বিড়বিড় করে বাবা কি যেন হিসেব করলেন। তারপর বললেন- বৌ মা, এটা জৈষ্ঠ্য মাস চলছে না?
- না বাবা, বৈশাখের আরও দু’তিন দিন বাকী আছে।
বাবা এবার তার নাতি নাতনির দিকে তাঁকিয়ে হাসি মুখে বললেন- জানিস! তোদের মত বয়সে এই দিনে আমরা আমন ধানের ক্ষেতে ঝিংলা বড়শী দিতাম। আট দশ হাত দুরে দুরে এই এক দেড় হাত বাঁশের কঞ্চির মাথায় নাইলনের সুতায় ছোট ছোট বড়শী। আধার দিতাম কেঁচো। সন্ধ্যার দিকে বড়শী পেতে রেখে আসতাম আর এক রকম নির্ঘুম রাত কাটাতাম সকালের অপেক্ষায়। তারপর অনেকটা ভোর না হতেই ছুটে যেতাম বড়শীর মাছ আনার জন্য। প্রায় প্রতিটা বড়শীতেই এই বড় বড় শিং, মাগুর, টাকি, কৈ মাছ পাওয়া যেত। এক একটা ট্যাংরা, গোলসা দেখলে মনে হত যেন আস্ত এক একটা বালিশ! বড় বড় শিংগুলি অদ্ভূত কালচে নীলাভ রঙের হত। বড়শীগুলি পানি থেকে তুলতেই শিং, ট্যাংরা, গোলসাগুলি অদ্ভূত রকমের গোৎ গোৎ আওয়াজ তুলে ছটফট করত। মাঝে মধ্যে সাপও ধরত। এই বড় বড় কাইল্যা ঢোঁড়া। কাইল্যা ঢোঁড়া যা তেজি! একেবারে জাত সাপের মতই স্বভাব ওদের!
আমি খাবার মুখে দেয়ার কথা ভুলে যাই। বাবার দীপ্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা সহসাই যেন কত পিছনে চলে গেছেন। বাল্য কৈশোরের এক অনাবিল আনন্দের পথ পরিক্রমা করে চলেছেন। আমি নিঃশব্দ থেকে নিঃশব্দতর হয়ে থাকার চেষ্টা করি যাতে করে বাবার এই ভাল লাগার ঘোরটুকু তাল না হারায়।
আমার ছেলে মেয়েরাও নিঃশব্দে ওদের দাদার গল্প শোনে। আমি শুধু শুনি না- অন্তর দিয়ে বাবার পিছু টানটাকে উপলব্দি করি। কিন্তু এক সময় বাবা ঠিকই হাঁফিয়ে উঠেন। শ্বাসটা ঘন হয়ে আসে, উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। আমি বাবার একটা হাত ধরি তারপর নিয়ে যাই তার শোওয়ার ঘরে। বাবা পিঠের নিচে বালিশ টেনে নিতে নিতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন আল্লাহকে ডাকেন। আমার কাছে মনে হয় বাবা যেন নিষ্ঠুর বাস্তবতার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে চোখ বন্ধ করলেন- তাতে ফেরা না ফেরা দুটোই অনিশ্চিত।
একটা অস্বাভাবিক খুট খাট্ শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে আমার ঘরের দরজা খোলা থাকে। বাবার ঘরের দরজাও ভেজানো কিন্তু খোলা থাকে। বাবার প্রতি বাড়তি বিশেষ খেয়াল রাখতেই আমি এ ব্যবস্থা করেছি। অসুবিধা হয় না আমাদের- বারান্দায় লোহার একটা গেট বসানো ওতে তালা মেরে রাখলেই চলে।
বাবার ঘরে ঢুকতেই একটা উৎকট গন্ধ আমার নাকে লাগল। লাইটের সুইচ টিপে দিয়েই আমি অনেকটা চমকে উঠলাম। বাবার বিছানা কাপড় চোপড় একেবারে একাকার অবস্থা। আমি দেখলাম খুব অসহায় ভাবে বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। ততক্ষণে গিন্নীও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
এই ভয়টা দিনের বেলায়ই আমার মনে ছায়া ফেলেছিল। বাবাকে আমিও আটকাতে পারিনি। ঠিকই বাজারে গিয়েছিলেন, সাথে আমাকেও যেতে হল। বাজার ঘুরে প্রকান্ড একটা কাতলা মাছ কিনে ফিরলেন। বাসায় ফিরেই আমার গিন্নীকে ডেকে বললেন- মাছের মাথা ফ্রিজে রাখলে গন্ধঁ হয়ে যায়!
ভাজা মুগ ডাল দিয়ে বড় মাছের মাথার মুড়িঘন্ট অনেকের মত বাবারও খুব প্রিয়। কিন্তু বড় মাছের তেল চর্বি একজন বয়স্ক মানুষের জন্য সহজ পাচ্য তো নয়ই বরং বেশ ভয়েরই ব্যাপার বলা চলে! কিন্তু এই কথাটা আমার বাবাকে মনে করিয়ে দিতে একেবারেই ইচ্ছে করল না। আমি ঠিকই ভয় পেলাম, আমার মনের অবস্থাটা বুঝে গিন্নী বলল- আল্লাহ ভরসা!
দুতিন বার টয়লেটে গিয়েই বাবা কাহিল হয়ে গেলেন। দূর্বল শরীরের খিচুনির লক্ষণ দেখেই আমি এম্বুলেন্সের জন্য ফোন করে দিলাম।
পাঁচদিন হাসপাতালে থেকেই বাবাকে বাসায় ফিরতে হল। হাসপাতালের ডাক্তার থেকে শুরু করে আত্মীয় আপনজনেরাও অনেকেই আমাকে আমার নির্বুদ্ধিতার জন্য তিরস্কার করতে ছাড়লেন না। আমি কারো কথার প্রতিবাদ করলাম না। আসলে বাবাকে নিয়ে কী যে করা উচিত আর কী না করা অনেক সময় তার মুখের দিকে তাঁকিয়ে আমি গুলিয়ে ফেলি। যাহোক এ যাত্রায় রক্ষা পাওয়ায় আমি মনে মনে অসংখ্যবার আল্লাহর শুকুর গুজার করলাম।
হ্যালো বাবা! এক্ষুনি বাসায় আসতে হবে- দিন কয়েক পর আবার মেয়ের ফোন পেয়ে মনে মনে ভয় পেলাম। দেরি না করে বাসায় ছুট দিলাম।
বাসায় ফিরে প্রথমেই ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে বাবাকে একবার দেখে নিলাম। বাবা যথারীতি পিঠের নিচে একটা বালিশ দিয়ে খাটে আধ শোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন।
অনেকটা পা টিপে টিপে গিন্নীর কাছে গিয়ে ভ্রু নাচিয়ে ব্যাপার কী জানতে চাইলাম। যা শুনলাম তাতে আমি একেবারে থ বনে গেলাম।
দিন কয়েক ধরেই বাসার পানির লাইনের একটা সমস্যা চলছিল। একটা গেট বাল্বের গোঁড়া দিয়ে অনবরত পানি ঝরছিল। পাড়ার একটা পাইপ ফিটারকে বেশ কয়েকদিন ধরেই তোষামদ করছিলাম ওটা পাল্টে দেয়ার জন্য।
আমি দোকানে যাওয়ার কিছুণ পরই নাকি ঐ পাইপ ফিটারটা একজন হেলপারসহ বাসায় আসে কাজ করতে। কাজ শুরু করার কিছুক্ষণ পরই বাবা নাকি ঐ হেলপার ছেলেটাকে ডেকে নিয়ে কষিয়ে একটা চড় মেরে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন।
কিন্তু কেন?- বাসার কেউই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না। আমি বেশ বিব্রত বোধ করি। এরকম আচরণ নিঃসন্দেহে যে কোন মানুষের মান সম্মানকেই কলুষিত করে।
ব্যাপারটার একটা সুরাহা হওয়া দরকার। বেশ বিরক্ত হয়ে আমি বাবার ঘরে ঢুকি। শব্দ পেয়ে বাবা চোখে মেলে আমার দিকে তাকান। একটু উঠে বসার চেষ্টাও করেন। বেশ কঠিন আর নির্লিপ্ত গলায় আমাকে বলেন- ছেলেটা একটা বদমাশ! ওর চোখ ভাল না!
আমি মাথা নীচু করে বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। গিন্নীর সাথে আলাপ করে ঘটনার একটা স্পষ্ট ধারণাও আমি পেয়ে যাই। আমাদের বাসায় ‘তায়েবার মা’ বলে একজন হালকা পাতলা গড়নের দেখতে বেশ সুন্দরী ভাড়াটিয়া বৌ আছে। ঐ পাইপ ফিটার যখন কাজ করছে তখন সে নাকি কাছেই কলতলায় বসে বাসন কোসন পরিস্কার করছিল। সেই সুযোগে পাইপ ফিটারের হেলপারটি যে অপকর্মটি করেছে বাবার তা নজর এড়ায়নি।
বাবা মানুষটাই এরকম। লঘু আচরণ বা ভাঁড়ামো বাবার মাঝে কোনদিনই দেখিনি। আমরা ছোট ছোট থাকতেই আমাদের মা মরেছেন। অনেকে বাবাকে আর একটা বিয়ের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু বাবা কারো কথায় কান দেননি। মানুষ বউ রেখেও কত রকম ছ্যাবলামো করে আমরা বাবার মধ্যে কোনদিন সেরকম কোন কিছুর বিন্দু পরিমাণও দেখিনি। কামনা বাসনার দীর্ঘ কঠিন পথ কত সহজে পার করেছেন ভেবে ভেবে আমি অবাক হই।
বাবার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব দেখে শিখে নিজে ধন্য হয়েছি। ছোট বেলা বাবার সাথে হাটে যেতাম। কোন কোন দিন ভ্যানে করে বস্তায় বস্তায় ধান যেত বিক্রির জন্য। হাটে নিয়ে বস্তাগুলির মুখ খোলার সাথে সাথেই দেখতাম কোমড়ে গামছা বাধা কদাকার কিছু লোক বাঁশের টুকরি বস্তায় ঠেকিয়ে দুহাতে খাবলিয়ে ধান নিয়ে নিত। অনেকেই কর কি কর কি বলে ঐ লোকগুলির হাত চেপে ধরত। আমার বাবা মোটেও তা করতেন না। আমি বেশ অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকাতাম বাবা বলতেন- সাবধান, মরে গেলেও কোনদিন মেথরের হাত ধরবি না!
আমাদের এলাকায় বিয়ে শাদী বা অন্যান্য আচার অনুষ্ঠানে যারা খাওয়ায় তাদেরকে শাহীদার বলে। প্রতিবেশী মল্লিকা আপার বিয়েতে ছোট বেলায় সমবয়সিদের সাথে খুব ফূর্তি করে শাহিদারি করলাম। বাড়ী ফিরতেই বাবা ডাকলেন।
শাহীদারি করেছিস বুঝি? শোন, একজনকে আপন মনে করে খুব করে খাওয়ালি আর অন্য একজনকে অবহেলা করলি। এরকম করলে আখেরাতে এই পাপের কঠিন শাস্তি ভোগ করবি- বাবা কোন প্রকারের উত্তরের আশায় আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না।
বাবার কথাটার কোথায় জানি খুব জোর ছিল। আখেরাতের শাস্তির ভয়টা একেবারে আমার মনের গভীরে সেঁটে গেল। আমি আর কোন দিন শাহীদারির কাছে দিয়েই হাঁটলাম না। যদিও বা গেছি লবনের বাটিটা নয়তো সালাদের বাটিটা হাতে, ব্যস্ত হয়ে পানির জগ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছি। যে চেয়েছে তাকে দিয়েছি, যে না চেয়েছে তাকেও দেয়ার চেষ্টা করেছি।
কচু পাতার উপর এক ফোঁটা ঝলমলে স্ফটিক স্বচ্ছ পানি নানা ভাবে দুলছে, ঘুরছে, এ মাথা ও মাথা ছুটে চলছে- সীমান্তরেখা ছুঁয়ে দিয়ে আবার মাঝখানটায়ও ফিরে আসছে। স্রষ্টা বাবার জীবনটা নিয়ে খেলছেন চূড়ান্ত খেলা- ইচ্ছে হলেই যখন তখন কাত করে ফেলে দিবেন সীমানার ওপারে। যেখান থেকে বাবা আর কোনদিন এই জীবন রেখার ভিতর ফিরে আসবেন না, আসতে পারবেন না। কোন মানুষই পারে না।
একদিন আমাদের মহল্লার কাসেম ডাক্তারের সাথে কথায় কথায় বাবার আচার, আচরণ বা সমস্যাগুলির কথা বললাম। কাসেম ডাক্তার হাসলেন। বাবার বয়সের কথাটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জানালেন এখন ওপারে পা নামিয়ে টুপ করে হারিয়ে যাওয়াটাই খুব স্বাভাবিক। তবু বাবার এই সীমান্তরেখায় দাঁড়িয়ে থাকাটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। আমি চাই বাবা আমার সব সময় সীমানার এপারে আমার পাশেই থাকুক।
যে মহীরুহের গোড়ায় ভর করে আমি কন্দমূলের চারার মত ৫০ বছরের কাছাকাছি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমার সেই অবলম্বনটা সরে যাবে- যতবারই আমি ভাবি ততবারই আমার ভিতরে একটা ধস্ নামে। আমাকে আন্দোলিত করে ধসটা এক সময় চোখের প্রাচীর ডিঙিয়ে গাল বেঁয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ে।
২২ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৩২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪