এফোঁড় ওফোঁড়

প্রিয়ার চাহনি (মে ২০১২)

মোঃ আক্তারুজ্জামান
  • ৫২
সপ্তাহে অন্তত দুএকটা সিনেমা না দেখলে বাঁচা যাবে না- নিজের সিনেমা প্রীতি নিয়ে হেলালের এরকমই ধারণা! বাড়ীর আম, জাম ফলমূল বা হাঁসমুরগী জেলা শহরে নিয়ে বেচতে পারলে ভাল দাম পাওয়া যায়। সেই সুবাদে সিনেমা দেখাটাও বেশ সহজ হয়ে উঠে।

বাড়ী থেকে চার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে জেলা শহরে পৌঁছাতে হয়। দেড় কিলোমিটার পরে সুন্দরীরটেক থেকে মাঝে মধ্যে দু একটা রিক্সা অবশ্য পাওয়া যায়। হেলাল কোন দিন রিক্সায় চড়ে না, সব সময়ই পায়ে হেঁটে চলে যায়। গুন গুনিয়ে সিনেমার গানের সুর তুলতে তুলতে সে কখন যে শহরে পোঁছে যায় টেরই পায় না।

হাঁটতে বেশ আনন্দই লাগে। আসা যাওয়ার মধ্য দিয়ে কত লোকের সাথে জানা শোনা হয়ে যায়, সখ্যতা গড়ে উঠে। প্রচণ্ড রোদে কেউ ডেকে নিয়ে একটু ছায়ায় বসায় এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি এগিয়ে দেয় একটু খেয়ে যেতে পীড়াপীড়ি করে। ঈদের, পূজার বা নানা সামাজিক অনুষ্ঠানাদির দাওয়াত করে।

হাঁটা পথে অনেক কিছু অন্য ভাবে দেখা যায়, উপলব্ধি করা যায়। মীরপাড়ার দাসদের পূজা মন্ডপের বিশাল চৌচালা ঘরের উপর কৃষ্ণ চূড়ার গাছটা প্রথম কবে হেলাল ফুলে ফুলে লাল দেখেছিল মনে পড়ে না। কিন্তু প্রতি বছর গ্রীষ্মের সময় এ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ দুটি এমনিতেই ওগাছটার দিকে চলে যায়। বছরের নির্ধারিত সময়ে প্রকৃতির আগুন রাঙা এই রূপটুকু দেখার এই মন্ত্র মুগ্ধ টান বড় অদ্ভুত!

রাস্তার পাশে নিমতলীর ভূইঁয়াদের পারিবারিক কবরস্থানে একদিন ছোট একটা নতুন কবর দেখে মনটা কেমন ছ্যাৎ করে উঠে হেলালের। অকালে কে মরল জানার জন্য মনটাও কেমন ব্যাকূল উঠে। এরপরে ঐ কবর খোলার পাশে এক মহিলাকে রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নির্বাক ভাবলেশহীন ভাবে অনেকদিন বসে থাকতে দেখে সে।

মাস কয়েক পর দেখে ঐ ছোট কবরটার পাশে আর একটা নুতন কবর! ভোঁ-কাট্টা ঘুড়ির মত রাস্তা ছেড়ে হেলাল ভুঁইয়া বাড়ীতে ঢুকে পড়ে। মর্মান্তিক! ১০/১২ বছর বয়সী সোহেল কুকুরের কাঁমড়ে মরেছে সেই শোককে সঙ্গী করে মাও ছেলের কাছে ফিরে গেছে! সন্তানের জন্য মায়ের ভালবাসা কত প্রকাণ্ড, নিজের জীবন কত তুচ্ছ- এ কথাটা হেলাল হয়ত কোনদিন উপলব্ধিই করতে পারত না যদি সে ভুঁইয়া বাড়ীর এই কবর খোলার পাশ দিয়ে নিয়মিত হেঁটে যেত।

জেলা শহরের রথখোলায় প্রতি বছর বৈশাখী মেলা হয়। পুতুল নাচের ঘর বসে, সার্কাস আসে। হেলালের সার্কাসের জোকার খুব ভাল লাগে। তুমি আমার মনের রাজা আমি তোমার রাণী- জাতীয় সুরের মুর্ছনায় সার্কাসের খেলার ফাঁকে ফাঁকে ডানা কাটা পরীদের বুকে ঝড় তোলা ঝুমুর ঝুমুর নাচও তার খুব প্রিয়।

একবার বন্ধু রাকিবকে নিয়ে হেলাল মেলায় যায়। বেশ সকাল সকাল দুজন হন হন করে যেন বাতাসের আগে আগে ছুটে চলে। ঠাট্টা মসকরায় মেতে উঠে মাঝে মাঝেই দুজন উচ্ছস্বিত হাসিতে ফেটে পড়ে। কখন যে ওরা মীরপাড়া পৌঁছে যায় কেউই বুঝে উঠতে পারে না।

দোস্ত জোরে পা চালা দেখি! মনে হয় সামনে একটা হলদিয়া পাখি আছে- হেলাল গলার স্বর নীচু করে রাকিবকে কথাগুলি বলে। রাকিব সামনে দৃষ্টি মেলে ধরে হেলালের সাথে তাল মিলিয়ে জোরে জোরে পা ফেলে।

ওরা খুব দ্রুত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। তারপর মেয়েটাকে অতিক্রম করে কিছুটা সামনে গিয়ে একটা গাছের নীচে দাঁড়ায়। উদ্দেশ্য মেয়েটাকে সামনে থেকে ভাল করে দেখে নেয়া। ছিপছিপে গড়নের ১৫/১৬ বছরের এক কিশোরী সাথে পাঁচ ছয় বছরের একটি মেয়ে থাকায় সে খুব দ্রুত পায়ে হাঁটতে পারছে না। কাল রঙের সালোয়ারের সাথে হলুদ জামায় মেয়েটাকে অসাধারণ মানিয়েছে। লম্বা বেণীর মাথায় লাল ফিতায় সুন্দর ফুল তোলা। কপালের বড় কাল টিপ, পাতলা ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক! গরমের দিন- দীর্ঘ পথ পদ চারণার ক্লেশে মেয়েটার পেলব গাল বেশ লাল হয়ে উঠেছে। খাড়া নাকের ডগার বিন্দু বিন্দু ঘাম- সব মিলিয়ে হেলালের কাছে মেয়েটাকে একেবার পরীর মত লাগে।

মেয়েটা ছোট বাচ্চা মেয়েটার হাত ধরে ওদেরকে অতিক্রম করে যায়। খানিকটা পিছনে পড়ে হেলাল আর রাকিব আবার হনহন করে মেয়েটাকে অতিক্রম করে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ইচ্ছে করেই আবার পিছনে পড়ে তারপর আবার সামনে ছুটে যায়। ওরা যেন অন্য রকম একটা খেলায় মেতে উঠে।

এক সময় মেয়েটাও বুঝে ফেলে পথ চলা ঠিকঠাক চলছে না। ছেলে দুজন বাজে মতলবে ওরকম করছে। এই রকম হ্যাংলামি মেয়েটার পছন্দ হয় না তাই সে মাঝে মধ্যেই ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দিকে কটমট করে শাসনের চোখে তাকাতে থাকে।

মেয়েটার নাগিনীর মত এই ফুঁসে উঠা হেলালের চোখে মেয়েটাকে আরও সুন্দর করে উপস্থাপন করে। সে আরও প্রগলভ হয়ে উঠে, নানা কথায় নানা ভঙ্গিমায় সে মেয়েটাকে তক্ত্য উত্যক্ত করে যেন মজা লুটতে থাকে।

দোস্ত জিনিসটাতো চিনা জানারে!- এক সময় রাকিব গলার স্বর নিচু করে বলে।
- মানে? হেলাল বেশ অবাক হয়।
-ভাব ধরো কেন বাপ! তোমার মত বোম্বাইয়া লেচু এই মাইয়া চিনে না, এই কথাও আমার বিশ্বাস করতে অইব! দামড়ারে আমড়া চিনাও, না?

হেলাল সত্যি মেয়েটাকে কোনদিন আর দেখেনি। সে রাকিবের একটা হাত চেপে ধরে। রাকিব চোখের তাঁরা নাচাতে নাচাতে বলে- এই যে হলুদিয়া পাখি দেখছ না, এই খান হইল গিয়া লক্ষ্মণটিলার হারুমুন্সীর ডুলা ঝারা!

রথখোলায় ঢুকার পথেই প্রচণ্ড ভিড়! মেয়েটা হারিয়ে যায়। হেলাল বেশ বুঝতে পারে মেয়েটা ইচ্ছে করেই ওরকমটা করেছে। ওর কেন জানি খারাপ লাগতে শুরু করে। মেয়েটার এই হারিয়ে যাওয়াটা একদম ভাল লাগে না। আরও কিছুক্ষণ পাশে থাকতে পারলেই যেন ভাল হত।

ভিড় ঠেলে এদিক ওদিক অনেকক্ষণ মেয়েটাকে খুঁজে বেড়ায় ওরা দুজন। না পেয়ে হেলালের মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়। রাকিব ভিতরে ভিতরে বেশ বিরক্ত হয়।

সার্কাস দেখার প্রতিও হেলালের খুব একটা আগ্রহ থাকে না। রাকিবের পীড়াপীড়িতে একসময় টিকেট কিনে সার্কাস দেখতে ঢুকে পড়ে।

সার্কাসের জোকার কিংবা ডানাকাটা পরী কিছুই হেলালের মনোযোগের বিষয় হয়ে উঠতে পারে না। মনটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মেয়েটার সাথে আরও কিছুটা সময় পথ চলতে পারলে বোধ হয় এর চেয়ে বেশী আনন্দ পাওয়া যেত।

রাকিব মাঝে মধ্যেই হাত তালি দিয়ে উঠে, চিৎকার করে হেলালকে উজ্জিবীত করার নিষ্ফল প্রয়াস চালায়।

মেলায় সার্কাস দেখে বাড়ি ফিরার আগে একটা সিনেমা দেখার কথাও আগেই স্থির করে রাখা ছিল। কিন্তু রাকিবকে অবাক করে দিয়ে হেলাল জেলা শহর থেকে জীবনে প্রথম সিনেমা না দেখে বাড়ী ফিরে আসে।


লক্ষ্মণ টিলার হারুমুন্সীর বাড়ির অদুরে রাস্তার উপর একটা ব্রিজ। মেলার পরের দিন ভর দুপুরে হেলালকে দেখা যায় মুন্সী বাড়ীর দিকে মুখ করে সেই ব্রীজের উপর দাড়িয়ে। এমনিতে প্রতিদিন বিকেলে ব্রিজটার উপরে এলাকার ছেলেপেলেরা আড্ডা মারে। দু একজন পথচারী দুপুরের ঠা ঠা রোদ মাথায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রুকুঞ্চিত করে তাকায়।

একদিন, দুদিন, তিনদিন ঘুরেও হেলাল হারু মুন্সীর কনিষ্ঠার ছায়াটির দর্শন না পেলেও নিরাশার আঁধার কালো আকাশে একটু আশার আলো দেখতে পায়। সে কৌশলে একটা খবর সংগ্রহ করে ফেলে। বেড়াতে আসা ভাগ্নিকে পৌঁছে দিতে মেলার দিন বড় আপার শ্বশুর বাড়ী গেছে- অজুফা!

ব্রিজটা ক্রমেই হেলালের কাছে প্রিয় হয়ে উঠে। ঘর গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যস্ত থাকলেও মনে মনে সে বিকেলে অন্তত একবার সেই ব্রিজটার উপর যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।

সপ্তাহ খানেক পরে বসে থেকে থেকে নিরাশ হয়ে ফিরে আসার সময় ঠিক সন্ধ্যার আলো আধারিতে একটু হলুদের ঝলকানিতে পৃথিবীর রঙটাই যেন বদলে যায়। আঃ কি যে প্রশান্তি! আকাশটায় ডানা মেলে উড়তে ইচ্ছে করে, খালের জলে লাফিয়ে পড়ে সাঁতার কাটতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছেগুলি এক সঙ্গে হেলালকে যেন পাগল করে দিতে চায়।

বেশ কয়েকদিন ধরে চলে এই দূর থেকে দেখাদেখি। এক সময় অতৃপ্ত ভাল লাগা আকর্ষণকে তুঙ্গে তুলে দেয়। হেলাল ব্রিজ ছেড়ে হেলাল নানা বাহানায় মুন্সী বাড়ীর আশে পাশে চক্কর দেয়া শুরু করে।

একদিন দুজনার মুখোমুখি দেখাও হয়ে যায়। অজুফা হঠাৎ ভূত দেখার মতই চমকে উঠে হেলালকে দেখে। পর মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে চেহারায় স্বভাব সুলভ রাগের আচরণটুকু ফুটিয়ে তূলে খুব কঠিনভাবে হেলালের চোখে চোখ রাখে। হেলাল বেশ ভড়কে গিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।

বেশ কয়েকদিন আর মুন্সী বাড়ীর আশে পাশে যায় না হেলাল। তবে নিয়মিত বিকেলে সেই ব্রিজটার উপর গিয়ে দাঁড়ায়। অচিরেই তার চোখে একটা পরিবর্তন ধরা পড়ে। ব্রিজটায় বসলে মুন্সী বাড়ীর যে পাশটা খুব বেশি নজরে আসে সে পাশটায় অজুফার আনাগোনা ক্রমশ যেন বেড়ে চলে!

হেলালের উপস্থিতিতে অজুফার বাড়ীর বাইরে অবস্থানটা এক সময় সার্বক্ষণিক হয়ে উঠে। গাইটা, ছাগলটা কিংবা অকারণে আমগাছটা জাম গাছটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখাটা যে বাহানা মাত্র হেলালের বুঝতে আর বাকী থাকে না।

প্রেম আরাধ্য বা সাধনার ফল। জগতের প্রায় সকল প্রেমিক প্রেমিকাকেই বাহানার ঘাড়ে ভর করে প্রেমের ভেলায় পা রাখতে হয়। মজার ব্যাপার হল বেশীরভাগ বাহানাই থাকে মিথ্যাচারের নামান্তর মাত্র! প্রেমে সাধনা আর মিথ্যাচারও একাকার হয়ে যায়- কী অদ্ভুত রসায়ন!

প্রেম রসে হেলাল আর অজুফাও মজে যায়। ধীরে ধীরে দুজনের সত্ত্বা একীভূত হতে হতে যেন পরস্পর হয়ে উঠে অবিচ্ছেদ্য।

এখানে ওখানে দেখা সাক্ষাত হয়। সুযোগ সুবিধা মত মাঝে মধ্যেই বাড়ি ডেকে নিয়ে অজুফা কাছে থেকে মনের মানুষকে দেখে চোখ জুড়ায়। আপ্রাণ চেষ্টায় আপ্যায়ন করার চেষ্টা চালায়। ফলে রাস্তা থেকে আঙ্গিনা হয়ে অজুফাদের ঘরে পর্যন্ত হেলালের জায়গা মিলে যায়।

এমনিভাবে সুযোগ বুঝে একবার হেলালকে অজুফা বাড়ী ডেকে নেয়। মন ভরে কাছে থেকে দেখে। যত্ন করে খেতে দেয়। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে চাপা স্বরে একটু আধটু হাসি ঠাট্টা হয়। খেতে খেতে হেলাল জানতে পারে বাড়িটা একেবারে ফাঁকা। পোলাও মাংস যেন আচানকই স্বাদ হারায়!

তলে তলে একটা চাহিদা কবে সীমা ছাড়িয়েছে হেলাল যেন নিজেও বুঝে উঠে পারেনি। সে ক্ষিপ্তভাবে অজুফাকে দানব হাতে বুকে চেপে ধরে। আগ্রাসী শরীর হায়েনার আচরণে উদ্যত হয়। কিংকর্তব্যবিমুর অজুফা মুহূর্তেই দাতস্থ হয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে হেলালের গালে সশব্দে কষে চড় মারে। প্রচণ্ড ঘৃণায় মুখ ভর্তি থুথু ছিটিয়ে আক্রোশের সাথে উচ্চারণ করে- ছিঃ!

প্রেম কাম নিয়ম রীতির থোড়াই কেয়ার করে- এ কথাটি আমাদের দেশের পুরুষদের বেলায় যতটা সত্য বলে ধরে নেয়া যায় নারীর বেলায় ঠিক ততটুকু পারা যায় না। রীতি, রেওয়াজ ধর্মীয় কায়দা কানুনের পরিপূর্ণতার মধ্য দিয়ে তারা একজন পুরুষকে একান্ত নিজের করে নেয়। তারপর নিজের সবটুকু, সবকিছু নির্দ্বিধায় বিলিয়ে দেয়। তাঁরা কামনা বাসনাগুলিকে লাগাম টেনে ধরে যত্নের সাথে ওই পরিণতি পর্যন্ত লালন করতেই ভালবাসে।

ছি: টা হেলালের কর্ণমুল বেয়ে বেয়ে সমস্ত শিরা উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ে। সে একেবারে স্থবির, নি:শ্চল হয়ে যায়। লজ্জায় চোখ তুলে অজুফার দিকে তাকাতে পারে না। মাথা নিচু করে কোন মতে পা টেনে টেনে বেরিয়ে যায়।

************


প্রবাস জীবন কতটা কষ্টের চোখ বন্ধ করে কল্পনা করতে করতে হেলাল বুকের উপর চেপে ধরা বউয়ের শরীরে হাত বুলাতে থাকে। বউও আদরটুকু গায়ে, মনে মেখে নিতে নিজেকে অপেক্ষাকৃত বেশী মেলে ধরতে চেষ্টা করে।
- এই শুনছেন? হেলালের বউ দেয়া নেয়ার মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দাঘাত করে।
ভাল লাগার ঘোরে বুদ হয়ে যাওয়া হেলালের এই মুহূর্তে কোন কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হেলালের বউ আবার ছন্দপতন ঘটায়- অজুফাটা মারা গেছে!


টগবগ করে উদগিরিত কামনার লাভাগুলি সহসাই জমে গিয়ে কেমন যেন হিম শীতল কঠিন শিলায় রূপান্তরিত হয়। হেলালের আঙ্গুলগুলি নির্জীব হয়ে যায়, দুজনের শরীরের বাঁধনটাও শিথিল হয়ে পড়ে।
-কোন অজুফা?
-মনে হয় যেন দুনিয়ার সব অজুফারেই চিনেন!
- ক্যামনে মরল? হেলালের গলা থেকে ব্যাকুলতা ঝরে পড়ে।
- ঢং দেহাইয়া! মানুষে কয় ঠিক মত খাইত না নাইত না।

নির্ঘুম মাঝ রাতে হেলাল চুপ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে অন্ধকারে বাড়ীর আঙ্গিনায় দাঁড়ায়। তার মনে পড়ে অজুফা একবার এক ঈদের আগের দিন নিজের একটা ছবি দিয়েছিল। অসাধারণ সুন্দর একটা ছবি। কালো জমিনের উপর শুধু মুখশ্রী! কালো চুলগুলিও জমিনের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।

প্রায় সারাক্ষণের সঙ্গী সেই ছবির পাতলা ঠোট, কমনীয় গোলাপি গাল তাকে বেশ লালায়িত করত। কামনার আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিত। বহুদিন পর প্রায় বিস্মৃত হয়ে যাওয়া সেই ছবির গুরুত্ব দিয়ে না দেখা এক জোড়া চোখ খুব স্পষ্ট হয়ে উঠে। সেই চোখ জোড়া তার ভিতর বাহিরটা অবিরাম, অপলকভাবে তাকে দেখে যায়। সেই চাহনী মর্মভেদী, খুব সুতীক্ষ্ণ!

অজুফার চাহনি হেলালকে এফোঁড় ওফোঁড় করতে থাকে সারা রাত- পরের দিন, তারও পরের দিন-রাত, মাস, বছর। সারা জীবন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অষ্টবসু ভালো লাগল।শুভেচ্ছা নিবেন।
Jontitu বরাবরই আপনি সেরা সেরা গল্পগুলো আমাদের জন্য লিখে যাচ্ছেন । খুব ভালো লাগলো।
নিরব নিশাচর আখতার ভাই, সম্পূর্ণ সততার সাথে গল্পটা পড়তে পারলাম না... অল্প সময়ে যতটুকু বুঝলাম সেটা বরাবরের মতই অসাধারণ... তবে পছন্দে তুলে রাখলাম ভবিষ্যতে সময় পেলে সবটুকু ভালো ভাবে পরে নেব... আনুমানিক ভাবে আপনার প্রাপ্য আপনার খাতায় তুলে দিলাম...
ফয়সাল বারী খুবই চমৎকার গল্প
আহমাদ ইউসুফ প্রেম ও কাম অন্গা অঙ্গী ভাবে জড়িত হলেও আমাদের বাঙালি মুসলিম পরিবারে এটা এখনো খুব একটা বিস্তার লাভ করতে পারেনি. জীবনের প্রথম প্রেমের স্মৃতি অম্লান . এ সত্য কথাটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আপনার লেখায়. প্রেমের বার্থতা যে মানুষকে এতটা কাতর করতে পারে এমন কি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে তার প্রমান পেলাম আপনার লাখে. ধন্যবাদ আপনাকে.
মোঃ শামছুল আরেফিন মন্ত্রমুগ্ধ হলাম ভাইয়া। গল্পের প্রথমে কাহিনী আর কিছু ঘটনাকে প্রাধান্য দিলেও শেষে এসে অনুভূতি নিয়ে খেলেছেন। ভালবাসা যে অবিনশ্বর, কখনো নিঃশেষ হয়না সেটা আবারো প্রমাণ করলেন গল্পে। ফিনিশিংটা অসাধারণ লেগেছে। হেলালের সাইকোলজি যেভাবে ফুটিয়ে তুললেন তার জন্য বোনাস পয়েন্ট তো আপনাকে অবশ্যই পেতে হবে। গল্প কবিতা সেই সিস্টেম রাখেনি। তাই প্রিয়তে যোগ করে নিলাম।
সুমন দাস মুন্না খুব সুন্দর গল্প, মন ছুয়ে গেল।
সুমননাহার (সুমি ) বরাবরের মত এই গল্পটি ও ভিশন ভালো লাগলো এমনি করে আমার একটি ভাইয়া সিনামা দেখার জন্য অনেক কিছু বিক্রি করে সিনামা দেকতো.তার কথা মনে পরে গেল ভাইয়া আপনার প্রতিটা লিখায় যেন বাস্তব বলে.
পারভেজ রূপক কি একটা প্রেমের গল্প, মুগ্ধ হলাম।
সেলিনা ইসলাম অনবদ্য গল্পের থিম ...অসাধারণ গল্প -শেষটা তৃপ্তির পূর্ণতা এনে দিল ।শুভেচ্ছা ও শুভকামনা নিরন্তর

২২ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪