দীক্ষা

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

মোঃ আক্তারুজ্জামান
  • ৭২
  • 0
লেখাপড়ার প্রতি পুত্রের অনীহা দেখিয়া গহর আলীর মন হতাশায় ডুবিয়া যাইতে লাগিল| শত চেষ্টা করিয়াও তিনি পুত্র মোহর আলীকে কোনক্রমেই লেখাপড়ার দিকে আকৃষ্ট করিতে পারিতেছেন না| এদিকে মোহরের বয়সও প্রাথমিক পাঠ নেওয়ার সময় অতিক্রান্ত করিয়াছে কিন্তু সে এখনও ভালো করিয়া অক্ষর জ্ঞান লাভ করিতে পারে নাই|

জজ ব্যারিস্টার না হউক কিন্তু একখানা 'মানুষ' হইতে যে লেখাপড়ার বিকল্প নাই তাহা চিন্তা করিতে করিতে গহর আলীর চিত্ত সর্বদা ব্যাকুল হইয়া থাকে| তাঁহার নিয়মিত বই পুস্তক পড়িবার অভ্যাস| একদিন একটা বই পড়িতে পড়িতে হাঁক দিয়া বলিলেন- বাবা মোহর, এদিকে একটু আয় দেখি|

তাইরে নাইরে- করিতে করিতে মোহর আসিয়া ধপাস করিয়া বাবার পাশে বসিল| গহর খুশি হইয়া পড়িতে লাগিলেন-

পিতা স্বর্গ: পিতা ধর্ম: পিতাহি পরমন্তপ:|
পিতৃ প্রীতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্ব দেবতা:||

বাবা, তুমি আমাকে এই চারালদের মন্ত্র শুনাইতে ডাকিয়াছ?- পুত্রের কথাগুলি কর্ণমূলে তপ্ত সীসার মত লাগিল| সহসাই গহর কোনো কথা বলিতে পারিলেন না|
বাবার মন নিরাশ হইতে চাহিল না, পুত্রের মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে গহর পরম মমতা ভরা গলায় বলিলেন- যে কথায় মানুষের মঙ্গল তাহা সার্বজনীন! আপ্ত্যবাক্য শুধু কোন বিশেষ ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জাতির জন্য হয় না|

মোহর বাবাকে আর কোন সময় দিল না| ধুপধাপ করিয়া দ্রুত সে একদিকে চলিয়া গেল| কোন কিছু গ্রহণ করিবার এক পথ- তাহা অন্তরস্থ করা| বর্জন করিবার পথ- শত, সহস্র! পুত্রের চলিয়া যাওয়া পথের দিকে তাকাইয়া গহর আলী দীর্ঘশ্বাস চাপিবার ব্যর্থ প্রয়াস চালাইলেন|

দিনে দিনে মোহর যৌবনে পদার্পণ করিল| গহর আলীর ভয়কে সত্যে রুপান্তরিত করিয়া সে চরম দুর্মুর্খ্য, বেতমিজ এক গোওয়ার যুবকে পরিণত হইল| তাহার নানা অপকর্মের জন্য লজ্জিত হইয়া গহর আলী এক রকম নিজ ঘরে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ থাকিতে শুরু করিলেন| জুতা মারিতে হয় না- বিবেকবান মানুষ মাত্রই নিজ অপকর্মের জন্য নিজে লজ্জিত হয়| গহর আলী নিজের জন্য নয় নিজের পুত্রের জন্য মাথা হেট করিয়া নামে মাত্র বাঁচিয়া রহিলেন, অন্তরে অন্তরে সর্বদা উপর ওয়ালার কাছে একটা আর্জিও পেশ করিতে লাগিলেন- হে আল্লাহ- একটু মেহেরবানী কর, মুক্তি দাও!

মোহর কাউকে কিছু না বলিয়া না কহিয়া হঠাত একদিন বাড়ী হইতে নিরুদ্দেশ হইল| সে কোথায় গেল, কোথায় গেল? গ্রামময় ঘুরিয়া, পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় আপনজনদের কাহারও কাছে কোন সংবাদ না পাইয়া গহর আলীও একসময় চিন্তিত হইয়া উঠিলেন- হাজার হইলেও পিতার মন বলিয়া কথা! কোথাও একটু খোঁচা লাগে বৈকি!

দিন কয়েক পরে গ্রামময় হাসির রোল পড়িয়া গেল| হাস্য কৌতুকের বিষয় যখন মোহরকে ঘিরিয়া তখন ব্যাপারটি একদিন গহর আলীর কানেও গেল| যাহা শুনিলেন তাহাতে আরও সংকুচিত হইলেন, মনে মনে আবার বলিলেন- আল্লাহ, আর কত? আমাকে এক্ষুণি তুলিয়া নাও!

'প্রাণ পতিগো আমি কোন বা প্রাণে তোমায় ছেড়ে যাই'- দুইদিনের খোঁচা খোঁচা বাসী দাঁড়ির উপর পাউডার মাখিয়া, পেশীবহুল শরীরের 'রুপবান' প্যান্ডেলের বাঁশে হেলান দিয়া পাশের গ্রামে এক রাত্রে মাতম করিয়াছিল| মোহর তাহা দেখিয়া ঐ যাত্রা দলের সাথে সেই ঐতিহাসিক বাঁশের বোঝা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে বহিয়া বেড়াইতেছে- এইরূপ খবরই ছিল গ্রামময় মানুষের হাস্য রসের কারণ|

উপায় অন্তর না দেখিয়া গহর আলী অসময়েই পুত্রকে বিবাহ করাইয়া দিলেন| মোহর চাঁদের মত সুন্দরী বউ পাইল কিন্তু নিজ গুণে নয় পিতার নামে, দামে| মনে মনে গহর খুব খুশি হইলেন এইবার হয়ত মোহর বদলাইবে! সংসারের মায়া জালে বাঁধা পড়িবে|

দিন কয়েক পরেই গহর আলী একটা মর্ম পীড়ায় ভুগিতে লাগিলেন, তাঁহার মনে হইতে লাগিল - মস্ত একটা ভুল, না ঠিক ভুল না, পাপ হইয়া গেল| নিজ পুত্রের জন্য একটা ফুলের মত মেয়ের জীবন নষ্ট করিয়া দিলেন| মোহর একটুও বদলায় নাই- তাঁড়ি গিলিয়া মধ্য রাতে বাড়ী ফিরিয়া অকারণে বউ এর উপর নির্যাতন করে| জুয়ার নেশায় বউযের অলংকার থেকে শুরু করিয়া ঘরের আসবাবপত্র সব উজাড় করিয়া সাজানো সংসার সে জাহান্নাম করিয়া তুলিতেছে|

শত চেষ্টায়ও কিছু কিছু দু:খ কষ্ট মানুষ ত্যাগ করিতে পারে না, গহর আলীও পারিলেন না| কিন্তু একদিন মুক্তি পাইলেন বটে! তাঁহার মুক্তিতে পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনে বাড়িঘর ভরিয়া গেল, মাটি মঞ্জিল হইল| নিজ নিজ ঘরে ফিরিয়া যাওয়ার আগে সকলেই হতভাগ্য পিতার জন্য খুব দু:খ করিলেন আর পুত্রের জন্য করিয়া গেলেন সীমাহীন আফসোস!






উপরের লেখাটি কোনো সাহিত্যিক কিংবা কথাশিল্পীর লেখা গল্প উপন্যাসের কথা নয়| কালের হাত ধরে সব কিছু বদলায়! আমি বদলেছি, আমার নিজের বেশভূষা থেকে শুরু করে ঘরের আসবাব পর্যন্ত প্রতি নিয়তই সব বদল হচ্ছে| কিন্তু আমার ঘরে রাখা ফুলতোলা একটা মরচে পরা টিনের স্যুটকেস আমি আজও বদলাতে পারিনি| স্যুটকেসটায় আমার পূর্বপুরুষদের জমিজিরাতের কাগজপত্র- দলিল দস্তাবেজ, ভাওয়াল রাজার খাজনার রশিদ ইত্যাদি আছে| আমার বাপ দাদার নিজ হাতে লেখা বিভিন্ন হিসাব পত্রের ফিরিস্তি- কোন মায়ায় জানি আমি এগুলি ছুড়ে ফেলতে পারিনি| বরং মাঝে মধেই আমি আমার পরলোকগত বাপ দাদার কথা মনে পড়লে স্যুটকেসটা খুলে বসি| একদিন অকারণে ঐসব কাগজ পত্র ঘাটতে ঘাটতে একটুকরা লালচে কাগজ আবিস্কার করি| ঐ কাগজটায় পেন্ছিলের টানে গুটি গুটি অক্ষরে লেখাটি আমার দাদার নিজ হাতের!

মানুষের মন বড় বিচিত্র| প্রতিনিয়তই মানুষের ভুলে যাওয়ার খাতায় কত ঘটনাই না যোগ হয়| কিন্তু এই এক টুকরা কাগজে আমার দাদার লেখাটার কথা আমি ভুলতে পারলাম না| কেন কি উদ্দেশ্যে লিখেছেন তার কিছুই আমি বুঝতে পারি না কিন্তু আমার মনে মোহর আলীকে দেখার একটা বাসনা প্রতিদিন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো|

ষাটের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমার পূর্ব পুরুষেরা ছিল ঢাকা জেলার তেজগাঁও থানার বাসিন্দা| বাবার মুখে শুনেছি তাঁদের গ্রামের নাম ছিল- মুসারটেক| আশেপাশের আরও কিছু গ্রামের নামের শেষ অংশ ছিল 'টেক' সমৃদ্ধ| যাহোক, মোহর আলী আর আমার বাবা সমবয়সী এবং একই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন| পাকিস্তান সরকার কুর্মিটোলা বিমান বন্দর নির্মান কল্পে ১৯৬৫/১৯৬৬ অর্থবছরে কযেকটি গ্রাম হুকুম দখল করে| ভেঙ্গে যায় অনেকের সাজানো সংসার, স্বপ্ন এমনকি নিজেদের জানা শোনা পরিচিত সমাজও| দলছুট পাখির মত এক এক জন এক এক দিকে ছড়ে ছিটে যায়| ইচ্ছায় অনিচ্ছায় হোক রাষ্ট্রের উন্নতি কল্পে জন সাধারণকে এমন তর কোরবানী দিতেই হয়|

আমার বাবা সরকারী চাকুরী সুত্রে ছিলেন সিলেটে| জন্মভিটা হাত ছাড়া হয়ে গেলে বাবা আমাদেরকে নিয়ে সিলেটেই স্থায়ী আস্থানা গাড়েন| এইসব সুত্র থেকে মোহর আলীকে খুঁজে বের করাটা আমার কাছে খুব দু:স্কর কিছু মনে হলো না|

অবশেষে আমি একদিন গাড়ী চড়ে বসলাম| চলে এলাম ঢাকায়| মোহর আলীর ঠিকানা খুঁজে পেতে আমার আদপেই কোনো কষ্ট হলো না| কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য তাঁর সাথে আমার দেখা হলো না| আর কখনো হওয়ার সুযোগও নাই সে পথটি উপরওয়ালা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন| কিভাবে, কখন তাই বলছি-

কাল পরিক্রমায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এখন হয়ে গেছে- হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর| এই বিমান বন্দরে জমি জিরাত হারিয়ে এক এক জন এক এক দিকে গেলেও সৌভাগ্যগুনে মোহর আলীকে খুব বেশি দূর যেতে হয়নি| তাদের বাড়িটি ছিল বিমান বন্দর এলাকার একেবারে পূর্ব পাশে| এরও পূব দিকে তাদের ছিল একটা বিশাল 'টেক'| ঢাকা অঞ্চলে টেক বলা হয় চালা জমি বা জলাশয় হতে বেশ উচু জমিকে| এই জমিগুলি গাছ-গাছালী, জংলি ফুলফলে, পশু পাখিতে একসময় পরিপূর্ণ ছিল| এইসব জমির প্রতি মানুষের খুব একটা নেকনজর ছিল না, মানুষের দৃষ্টি থাকত নিচু জমিতে যে জমিতে মুঠো মুঠো সোনা ফলত-ধান! এক খন্ড ধানী জমি তখনকার মানুষের কাছে সন্তান তুল্য ছিল| এখন ঢাকার একখন্ড উচু জমি মানেই সোনার ডিম দেয়া হাঁস| কোনো মত ইট কাঠের একটা খোয়ার বানাতে পারলেই মাস শেষে হাজার হাজার টাকা| আর যারা প্রাসাদ বানাতে পারেন তারা সবাই হাল আমলের শাহেনশা!

সরকারের হুকুম দখলের বাইরে পড়ে যাওয়া এক সময় শুধু গরু চড়ানো, কিছু ফলমূল, কাঠ, বাঁশ পাওয়া ছাড়া বিঘা পাঁচেকের যে টেকটা মোহর আলীদের কোনো কাজে লাগত না| সেই টেকই হয়ে উঠলো মোহর আলীর মাথা গোজার ঠিকানা| আর ততদিনে মোহর আলীও এক পুত্র সন্তানের বাপ হয়ে গেছেন|

বিমান বন্দরের হুকুম দখলে নেয়া জমির আংশিক মূল্য বাবদ যে সামান্য টাকা পেয়েছিলেন মোহর আলীর সে টাকা খরচ হয়ে যায় নতুন বাড়িঘর করতে আর মানুষের ধারের টাকা শোধ করতে গিয়ে| অল্প সময় পরেই দেশে শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতা যুদ্ধ|

দেশ স্বাধীন হয় শূন্য হাতে মোহর হয়ে পড়েন দিশেহারা| ক্ষুধার কামড়ের চেয়ে তীব্রতর কষ্টের আর কিছু পৃথিবীতে নেই| পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহার অর্ধাহারে তার দিন কাটতে থাকে| কিন্তু ভাগ্যের কাঁটা ঘড়ির কাঁটার মত নিয়ম মেনে এক দিকে ঘোরে না|

মোহর আলীর ভাগ্য ঘুরে যায়| আশির দশকের গোড়ার দিকে চালু হয়ে যায় বিমান বন্দর| এই অঞ্চলে আসা বহিরাগত কর্মজীবি মানুষেরা একটা ঘরের জন্য বাড়িওয়ালাদের দ্বারে দ্বারে হন্যে হয়ে ধর্ণা দিতে থাকে| এর পরের ঘটনা তো সবারই জানা| উন্নয়ন, নগরায়নের ধারাবাহিকতায় মোহর আলীর জঙ্গলময় টেক হয়ে উঠে প্রাসাদময়|

কাড়ি কাড়ি টাকা মোহর আলীকে অনেক অনেক সুখ এনে দেয়- দেয় নাম, দাম ইজ্জত| বিত্তের নিচে চাপা পড়ে যায় অতীত| সে হয়ে উঠে সমাজপতি| তাঁর কথায় অনেক কিছু হয়| কিন্তু অনেক অনেক হওয়ার মাঝে একটা জিনিস হয়ে উঠে না| মোহর আলীর ছেলে জামির আলী বড় হয়ে উঠে- কিন্তু মানুষ হয়ে উঠে না|

অকর্ম করাটাই যেন জামির আলীর কর্ম হয়ে উঠে| দেশের এমন কোনো নেশা নেই যার স্বাদ সে নেয়নি, নগরের এমন কোনো নষ্টা মেয়ে মানুষ নেই যাকে সে ছুঁয়ে দেখেনি| এলাকায় বহিরাগত কেউ সারা জীবনের তিল তিল সঞ্চিত অর্থ দিয়ে এক টুকরা জমি কিনেছে তো জামির সেখানে হাজির| তাঁর চাহিদা পূরণ করলে ভালো না করলে- জমিতে সমস্যা আছে| বাড়ী করতে গেলেও একই ব্যাপার| আরও আছে- ইট বালুর কাজটাও তাঁরই কোনো চ্যালাকে দিতে হবে| অপকর্মের বেড়াজালে আটকে তারা দশ ট্রাক বালু দিয়ে পনের ট্রাক বললেও টু শব্দটি করার উপায় নেই| কোন নিরীহ, কোন শিক্ষিত মানুষটা চায় প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তার উপর কেউ তার শার্টের কলার চেপে ধরুক?

এলাকার সকল ভাড়াটিয়ারা তাঁর 'ভাড়াইডা হালা'! কেনরে, এই গালি, এই তাচ্ছিল্য কেন? যাদের উছিলায় তোমাদের মুখে বিস্তৃত হাসি তাদের জন্য হৃদয় একটু প্রসারিত করা যায় না? স্রষ্টার কাছে দু'হাত তুলে এদের জন্য একটু আশীর্বাদ করলে ক্ষতি তো নেই| ভাড়াটিয়া সুখী থাকলে মোড়ের রিক্সাওয়ালা, মুদিয়ালা থেকে শুরু করে সকলেরই তো মঙ্গল|

শহরের সকল ভাড়াটিয়াতো আর চালচুলাহীন হয় না| তাদেরও অনেকের রয়েছে গ্রামে ছায়া সুনিবিড়, দক্ষিনমুখী একটা সুন্দর বাড়ি| কর্ম ক্ষেত্রের কারণে শুধু কত মানুষ দম বন্ধ হয়ে আসা এই ইট সিমেন্টের খোআরে কোনমতে দিন কাটায়| তাঁর উপর এই অপমান অপদস্তটুকু না করলেই কি চলে না?

যাহোক জামির আলীর মহল্লার কার ঘরে কখন কে আসে কে যায় এই সব নজর রাখার জন্যও রয়েছে এক গোয়েন্দা বাহিনী| কোনো ব্যাচেলরের ঘরে বিপরীত লিঙ্গের লোক পাওয়া গেলে আর যায় কোথায়- সে আত্মীয়ই হোক আর সহকর্মীই হোক| অপমান লাঞ্ছনার চূড়ান্ত যা কিছু আছে তার সবটুকু দেখিয়েই ছাড়ে| অবশ্য কিছু ধরিয়ে দিলে না জায়েজটাকেও সে জায়েজ করে ফেলে|

পিতা মোহর আলীর আশ্রয় প্রশ্রয়ে এভাবেই পুত্র জামির আলীর দিন কেটে যেতে থাকে| একরাত্রে জমির এলাকার কিছু নেশা খোরদের সাথে বসে মদ গিলছিল| এক সময় ওদেরই একজন ব্যাঙ্কক নিয়ে রসালো একটা ভ্রমন কাহিনী শোনায়| বিমান বন্দরের ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে শুরু করে হোটেলের আলো আঁধারিতে একরকম নিলামে তোলা নগ্ন মেয়ে মানুষের সব কিছুতে জামির আলী রোমাঞ্চ খুঁজে পায়| সে টলতে টলতে সেই আসরেই একটা ঘোষণা দিয়ে ফেলে- এক মাসের মধ্যে সে বাংকক যাবে|

জামির পরিকল্পনা মত কথাটা বাবার কানে তোলে| ছেলের কথা শুনে মোহর আলীর রীতিমত হৃদপিন্ডের স্পন্দন বন্ধ হবার যোগাড়| বেশ কয়েক বছর ধরে হজ্জে যাওয়ার চিন্তা করলেও বিরাট অংকের ব্যান্ক লোন পরিশোধ না করতে পারায় মোহর আলীর আর হজ্জে যাওয়া হয়ে উঠেনি | অথচ তার ছেলে ব্যাংকক ভ্রমণের স্বপ্ন দেখছে- এর বেশি কিছু আর ভাবতে পারলেন না, এমন কি পুত্রের এইরূপ অযৌক্তিক দাবীর প্রতিবাদও করতে পারলেন না|

দিন যায় বাবার উপর জামির আলী চাপ বাড়াতে থাকে| এরই মধ্যে সে একটা পাসপোর্টও বানিয়ে ফেলেছে| কিন্তু বাবার মৌনতায় সে বেশ চিন্তিত- শেষ পর্যন্ত বাবা খরচের টাকাটা দিবে তো? এ নিয়ে তার ভিতরে সব সময় একটা দু:শ্চিন্তা কাজ করে যায়| আবার বন্ধু বান্ধবের ক্রমাগত উস্কানিতে তার ক্ষিপ্ততার লেলিহান শিখাটি ক্রমাগতভাবে উর্ধমুখী হতে থাকে|

পরের মাসের প্রথম দিকের এক রাত্রে মোহর আলী বাড়ি ভাড়ার তোলা টাকা নিয়ে নিজ ঘরে বসে সবে ব্যাংকের কিস্তির টাকাটা গুনে আলাদা করেছেন তখনি জামির গিয়ে হাজির| বেশ চড়া গলায় সে বাবাকে বলল- এখান থেকে আমাকে এক লাখ টাকা দিয়ে দাও|

মোহর আলী তাড়াতাড়ি সবগুলি টাকা একসাথে করে লোহার সিন্দুকটায় ঠেলে দিয়ে তালা মারতে মারতে বললেন- তোকে একটা টাকাও দিব না| গত মাসে তোর পিছনে কত খরচ করেছি মনে পড়ে?

জামির আলীকে বেশ কয়েক বারই মাদকাসক্ত কেন্দ্রে যেতে হয়েছে| তার পিছনে বাবা বেশ মোটা টাকা খরচ করেছেন সত্য, সে কথা মনে করেই জামির সামান্য মাথা নিচু করলো| কিন্তু পিছপা হলো না| কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে আবার বলল- টাকাটা দিয়ে দাও|

গোআর্তুমি মোহর আলীর রক্তেও মিশে আছে সে কথে ভুলে গেলে চলবে না| সে নির্বিকার ভাবে পুত্রের দিকে তর্জনী উচিয়ে বলল- শুনে রাখ, তোকে একটা পয়সা যদি দেই তবে আমার নামই মোহর না!

অবক্ষয়ের ক্ষুধা সর্বগ্রাসী হয়| আস্কারা দিলে ব্যক্তি, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রকেও ধ্বংস করে ফেলে| হিতাহিত জ্ঞানশুন্য জামির চোখের পলকে চিতার মত ছুটে গিয়ে বাবা যে চেয়ারটায় বসে ছিল তাতে কষে একটা লাথি মেরে বসে|

মোহর আলী এরকম একটা কিছুর জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না| মেঝের স্বচ্ছ ঝকঝকে মোজাইক পাথরের উপর থেকে চেয়ারটা পিছলে গিয়ে পাশের দেয়ালের সাথে ধড়াম করে ধাক্কা খায়| মোহর আলী চেয়ার থেকে পড়ে গিয়ে আঘাত পান| যতটুকু না দেহে তার চেয়ে বেশি মনে| তাঁর দুচোখের কোল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে| সে যেন মনে মনে কিছু একটা হাতড়াতে থাকে| কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না| কন্ঠ থেকে অস্পষ্ট গোঙ্গানীর মত বার দুই একটা শব্দ বেরিয়ে যায়- পিতা, পিতা...........
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান ঝরা- আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ|
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ঝরা অনেক ভালো লিখেছেন।শিক্ষনীয় বটে।
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মোঃ আক্তারুজ্জামান দুর্ভাগ্য যে দাদার পিঠচাপড়ানী কপালে জুটল না কিন্তু গল্পটা লিখে আপনাদের দাবড়ানীও যে খেতে হয়নি তাতেই আমি অনেক খুশি| অনেক অনেক ধন্যবাদ|
ভালো লাগেনি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মোঃ আক্তারুজ্জামান খোরশেদুল আলম- আপনার মন্তব্যে অভিভূত হলাম| অনেক অনেক মঙ্গল কামনা রইলো| ধন্যবাদ|
ভালো লাগেনি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মনির মুকুল দাদার শুরু নাতীর শেষ। ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। দাদা বেঁচে থাকলে এই সুন্দর পরিসমাপ্তির জন্য একটা পিঠচাপড়ানী দিতেন। লেখাটায় কিছু ‍কিছু বাক্য বেশ অলংকার সমৃদ্ধ। কিছুটা কৌতুহলও ছিল। সব মিলিয়ে চমৎকার একটি রচনা। অনেক অনেক শুভকামনা রইল। (এই লেখাটার মত আমিও পড়তে শুরু করেছি এক সময় আর শেষ করলাম আরেক সময়। এর পেছনে কারণ হলো- গতকাল রাতে পড়ার মাঝে বিদ্যুৎ বাবাজী হিংসে করে ঘুমাতে বাধ্য করেছিল)।
ভালো লাগেনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১
খোরশেদুল আলম প্রথমেই একটা অংক করতে হবে আপনার বয়স হিসেব করে আপনার দাদার বয়স বের করা। দাদার সময়কাল আর লেখার মান এই হিসাব আরকি। যা পেলাম তাতে অবাক না হয়ে পারছি না দাদার ঐ সময়ের উচ্চ সাহিত্য জ্ঞান দেখে। আর বর্তমানে আপনার লেখার শেষ অংশ এবং এলাকা সমন্ধে আমার বেশ বাস্তব জ্ঞান আছে । বর্তমানে গল্পটি কত বাস্তব প্রয়োজনীয় আর শিক্ষনীয় তা কিছুটা হলেও বুজতে পেরছি। দাদার নিকট থেকেই আপনি লেখালেখির গুণটি পেয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আর শুভ কামনা থাকলো।
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মোঃ আক্তারুজ্জামান Khondaker Nahid হোসাইন, আসলে তোমার মন্তব্যের জবাবে কি বলব মাথায় আসছে না| আপাতত অনেক অনেক স্নেহাশীষ ও দোয়া রইলো|
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মোঃ আক্তারুজ্জামান ম্যারিনা নাসরিন সীমা, আবারও অভিনন্দন জানালাম এবং অনেক অনেক শুভ কামনা|
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মোঃ আক্তারুজ্জামান সময়গুলো কখনো মরে যায় না, ফিরে ফিরে আসে- জুয়েল দেব, তোমার মন্তব্য আমাকে অভিভূত করে ছেড়েছে|
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মোঃ আক্তারুজ্জামান রনীল- ছোটরা যদি 'মাসুম' হয় তবে তাদের দোয়ায় বিশুধ্বতা অনেক অনেক বেশি- তুমি ভাই আমার জন্য বেশি বেশি দোয়া করো|
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১

২২ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪