চিত্রার বন

কষ্ট (জুন ২০১১)

sraboni ahmed
  • ৭৪
  • 0
একদিন খুব ভোরে চলে গিয়েছিলাম সেই নদীটির কাছে। ঐ যে নীলাম্বরী নদীটি আমার ভালবাসার নীলাভ নদী। সেদিন কেমন জানি খুব মেঘ করেছিল আকাশে। ঝড় হবে বুঝি। ভীষণ বাতাস বইছিল। দমকা ঝড়ো হাওয়ার সেই দিনে আমি নদীর পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম তোমায় । তুমি হাসতে হাসতে ডুবে যাচ্ছিলে। আর বলছিলে চিত্রা আমায় ডুবিও না এর চেয়ে পুড়িয়ে ফেলো। ঠিকই বলেছিলে। তোমায় ডোবাতে পারিনি। না পারিনি। বাতাসের জন্য তোমার ফুসফুস ছটফট করছে তুমি ডুবে যাচ্ছো। আমি তো ভাল করেই জানি তুমি সাঁতার জানো না। মৃত্যুযন্ত্রনায় নীল হতে থাকা তোমার মুখ দেখে আমি কেন পারলাম না নিজেকে ধরে রাখতে? বলতে পারো? তোমার ওই মুখ যে আমার সমস্ত যন্ত্রণার কারন। ঐ মুখ আমি ভালবেসে কত কত বার ছুঁয়ে দেখেছি গভীর মমতায়। সেই নীলাভ মুখের দিকে চেয়ে মূর্খ হৃদয়ের আকুতি তোমায় তুলে আনল জলের তল থেকে। তুমি তো মরেই যেতে চেয়েছিলে। তবে এই অকারণ কষ্ট কেন হয় আমার?

চিত্রা তোমায় ভালবেসেছিলাম কেন? সর্বনাশা প্রেমে আমায় কেন ভাসালে? তোমার জন্য আমার সাজানো বাগান তছনছ করেছি। অর্থহীন সব ভাল লাগায় কেন ভাসালে আমায়? আমার পাপের রাজ্যে তুমি কেন এলে একরাশ বিশুদ্ধতা নিয়ে? মনে পড়ে সেই স্নিগ্ধ সকালের কথা? ওই যে সেইদিন যেদিন সকালের নরম রোদ গায়ে মেখে তুমি এসেছিলে আমার বাগানে। আমি তখন মাত্রই একটা তরতাজা প্রজাপতি খেয়ে ফুরফুরে মনে গাইছিলাম 'আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে ভোরের আলো মেঘের ফাঁকে ফাঁকে...' হঠাৎ দেখি তুমি মুগ্ধ হয়ে দেখছো আমায়। একটু বিব্রত হয়েছিলাম বুঝি একটু বিরক্তও। এই রকম চুপি চুপি কেউ আসে নাকি?! তুমি তখনও মুগ্ধ নয়নে দেখছো আমায়। বললে ' আপনি তো চমৎকার গান করেন!' একটু লজ্জা পেলাম। লজ্জা আমি পাই না কখনও এতো তুমি জানো। কিন্তু সেই স্বর্ণ সকালে কেমন জানি একটু লজ্জা লজ্জা করছিল। তোমার মুগ্ধ চোখের দিকে চেয়ে চেয়ে আমি তখন ভাবছিলাম কি করে তোমাকে বন্দী করা যায় আমার মোহজালে। তুমি এতই বোকা যে কিছুই করতে হয়নি আমার। নিজে নিজেই ধরা দিলে আমার ইন্দ্রজালে। আমি তোমার সব নিয়ে নিলাম অনায়াসে। তুমি খুব সাধারণ। এমন কিছুই তোমার ছিল না মহা মূল্যবান, একখন্ড সোনালী অরন্য ছাড়া। যেদিন ওই অরন্যে প্রথম পা ফেলেছিলাম। মনের ভিতর বাস করা পাপীটা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। সারাটাক্ষণ কানের কাছে গুন গুন করে বলতে লাগল ' এমন উজ্জ্বল অরন্য আর কোথাও পাবে না হে। আর মেয়েটাও ভীষন বোকা। তাড়াতাড়ি হাতিয়ে নাও।' হুম তাই তো এমন সুন্দর একটা অরন্য আমার দখলে থাকবে। এ জিনিস আমার ভান্ডারেই মানায়। আমি আরো সম্পদশালী হবার নেশায় তোমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদটুকু কেড়ে নিলাম। ঠিক কেড়ে নয় ছলচাতুরী করে হাতিয়ে নিলাম। কিন্তু কেন নিয়েছিলাম? আমার তো অঢেল আছে। ঐটুকুন অরন্য আমার বিশাল সম্পদের তলায় চাপা পড়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই তো দিতে পারেনি আমায়। তবু আমার চাই। আমার সর্বগ্রাসী লোভের কাছে কারোরই ক্ষমা নেই। নির্বিচারে নিধন করে গেছি সেই স্বর্ণালী বনের ফুল, পাখি, হ্রদ। এর কি প্রয়োজন ছিল চিত্রা? আমি জানি না।





আমি তোমায় ভালবেসেছিলাম অনিরুদ্ধ। সর্বস্ব উজ়াড় করে ভালবেসেছিলাম। স্ফটিক স্বচ্ছ সেই ভালবাসার অর্ঘ্য পেতে পেতে তুমি এমনই হয়ে গেলে যে আমায় তোমার দাসী ছাড়া বুঝি আর কিছু ভাবতে না। দিন দিন তোমার আচরণ হয়ে গেল রুঢ় থেকে রুঢ়তর। মনিব যেমন করে তার ভৃত্যকে হুকুম করে ঠিক তেমনই করে তুমি আমায় হুকুম করেছিলে আমার একমাত্র সম্বল সারাজীবনের তিলে তিলে গড়ে তোলা সোনালী অরন্যটুকু তোমার পায়ে সঁপে দেবার জন্য। নইলে তুমি হারাবে চিরতরে। তোমায় হারাবার ভয় সেই অরন্য হাতছাড়া করার চাইতেও বেশি হয়ে বাজল বুকে। চোখের জলে ভাসতে ভাসতে তোমায় দিলাম আমার ভালবাসার শেষ উপহার। শুধু একটাই অনুরোধ করেছিলাম কান্না গোপন করে ' বড় যত্নের এই অরন্য। এর অমর্যাদা করো না অনিরুদ্ধ।' তুমি হেসেছিলে। তোমার মুখের সেই ক্রুর হাসি দেখে বুকের ভেতর যেন কুডাক দিল। আর তা সত্যি করতে তুমি একমুহুর্তও দেরী করো নি। লুটেরার দল নিয়ে হৈ হৈ করে অরন্যে ঢুকে সব করলে ধ্বংস। আমার বুক ভাঙ্গা কান্নায় বাতাস ভারী হয়েছিল শুনে কানে হাতচাপা দিয়েছিলে।
এত কিছুর পর সেই তুমি আজ মরতে এলে কেন আমার কাছে? তোমার মৃত্যু আমি কামনা করেছি প্রতিদিন। অথচ আজ যখন মরতে এলে। সেই আমারই বুকে কেন জেগে উঠল তোমার জন্য ভালবাসা?!


চিত্রা সেই অরন্য ধ্বংসের দিন তোমার অবিরাম বিলাপের সুর সারাটাক্ষণ কানে বাজতে থাকে আমার। আমার পাপের রাজ্যে এই প্রথম যেন একটা ফাটল ধরল। আমি কিছুতেই শান্তি পাইনা। কিছুতেই না। সব কিছু ভেঙ্গে তছনছ করেছি। নিজেকে নিঃস্ব করেছি। তবু আমার শান্তি নেই। সেই স্বর্ণালী বনে আমি আর যেতে পারিনি। ওখানে যেন বাতাসও বিলাপ করছে। আমি আর পারছি না এই যন্ত্রণা সইতে। চিত্রা আমায় তুমি মুক্তি দাও! আমায় মৃত্যু দাও ! কিন্তু তুমি এ কি করলে চিত্রা?! কেন আমায় বাঁচালে? কেন আমায় মরতে দিলে না?

অনিরুদ্ধ তুমি বলছিলে তোমায় পুড়িয়ে মারতে। তোমার দেহ নীলাভ নদীটিও নিতে চাইল না।
তোমার জন্য আমি তাও করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আজ এমন বৃষ্টি আর মেঘলা দিন যে অনেক খুঁজেও একটু আগুন কোথাও পেলাম না। আর সত্যি বলতে কি আমিও চাই না তোমার পুড়ে যাওয়া মুখ দেখতে।
তাই অনেক ভেবে তোমায় এই দন্ড দিলাম প্রিয় আমার। যতদিন এই অরন্য থাকবে ততদিন তুমি জ্বলে পুড়ে খাক হবে তাকে ধ্বংস করার আগুনে।

বেশ তবে তাই হোক। তোমায় যা দিইনি কোনদিন সেই ভালবাসা আজ দিয়ে গেলাম তোমার পদতলে...

চিত্রার বনে আজো জ্বলছে অনিরুদ্ধের শিখা। যে আগুনে পুড়ছে অনিরুদ্ধ নিশিদিন...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
sraboni ahmed @সূর্য ধন্যবাদ পড়ার জন্য। এই সংখ্যায় লেখা দিতে পারিনি ব্যস্ততার জন্য।দেখি সামনের সংখ্যায় দিব।
sraboni ahmed @উপকুল অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
sraboni ahmed @আমিনা অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
sraboni ahmed @ মাহমুদা অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
sraboni ahmed @ জুয়েল দেব পাঠে কৃতজ্ঞতা জানবেন।আপনার মন্তব্য অনেক অনুপ্ত্রাণিত করেছে আমাকে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
sraboni ahmed @নিভৃতে স্বপ্নচারী (পিটল) অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য.
sraboni ahmed @আপন অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য.
sraboni ahmed @ আহমেদ সাবের পাঠে কৃতজ্ঞতা জানবেন। আপনার অসাধারণ মন্তব্য অনেক অনুপ্ত্রাণিত করেছে আমাকে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
sraboni ahmed @তুহিন পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
sraboni ahmed @শিশির পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু বুঝলেন না কেন বুঝলাম না।:(

০৪ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী