অঙ্কুরেই বিনাশ

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

আহমাদ ইউসুফ
  • ২২
স্যার আপনার কোন বান্ধবী নাই! প্রশ্নটা শুনে চমকে ওঠে সোহেল। বুকটা আগের চেয়ে বেশি হারে কাপতে থাকে। কেমন যেন একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায় সোহেল প্রশ্নটা শুনে। স্বাভাবিক হতে সময় নেয় একটু।
নাতো! তেমন কেউ নেই, স্বাভাবিক কন্ঠেই নির্লিপ্ত জবাব দেয় সোহেল।
জয়িতার কণ্ঠে বিস্ময়, সত্যি নেই!
হ্যা সত্যিই নেই। সোহেলের দৃঢ় জবাব। এবার মনে হয় আস্থি হল জয়িতা।
যাক বাবা বাচালেন। সেকি তোমার আবার হল কি? সোহেলের কণ্ঠে কৌতুক।
না মানে বড় ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম আর কি!
মানে। বুঝলাম না, একটু বুঝিয়ে বলতো ব্যাপারটা কি?
স্যার ব্যাপার একটা আছে, তবে এক শর্তে বলতে পারি। বলেন রাজি কিনা। জয়িতার চোখে মুখে রহস্যময় হাসির কারন উদঘাটন করার চেষ্টা করে সোহেল। কিন্তু বড় জটিল ধাতুতে গড়া এ পুচকে মেয়েটা। কে জানে কোন শর্ত পালন করাবে।

আচ্ছা আমি রাজি। এবার বল ব্যাপারটা কি? জিজ্ঞেস করে সোহেল।
স্যার এই নিন বলেই একটা পিনমারা কাগজ এগিয়ে দেয় সোহেলের দিকে। সম্ভবত চিঠিপত্র কিছু হবে। সোহেল ধাঁধায় পড়ে যায়। সে কি! এতটুকু বাচ্চা মেয়ে স্যারকে প্রেমপত্র দিচ্ছে। তাও বা সম্ভব কিভাবে? মাত্র ক্লাস এইটে পড়ে। নাকি অন্য কারো। সোহেল বুঝতে পারেনা ব্যাপারটা। চিঠিটা পকেটে রেখেই উঠে দাড়ায়। শর্ত মোতাবেক এই মুহুর্তে ছুটি জয়িতার। অগ্যতা সোহেলকে উঠতে হয়।

রিকশায় বসে ব্যাপারটা নিয়ে অনেক্ষিন ভেবেও কোন কুল কিনারা পেল না সোহেল। অবশেষে রিকশায় বসেই চিঠিটা খোলার সিদ্ধান্ত নিল সে। চিঠিটায় বেশ কয়েকটা পিন মারা। সোহেল গুনে দেখল মোট পিনের সংখ্যা সাতটি। আতকে উঠল সোহেল। সর্বনাশ এযে দেখছি জয়িতার কান্ড। চিঠিটা খুলে আরও অবাক হল সোহেল চিঠির হেডিং দেখে। প্রিয়তম সম্বোধন করে সোহেলকে ভালবাসার অনেক নিদর্শনসহ ভবিষ্যত জীবনের একটা নিটোল স্কেচও একে ফেলেছে জয়িতা নামের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। এতো বড় সাংঘাতিক ব্যাপার। সোহেল যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ল এই ভেবে যে, এই বুঝি তার টিউশনিটা গেল।

গরীব বাবা মার ছেলে, টিউশনির টাকায় তার যাবতীয় প্রয়োজন মেটে। প্রেম রোমান্স করার সময় কোথায়? আর চাইনিজ রেস্তোরার বিল দিতে অক্ষমতা দেখে অনেকেই ইতি উতি করে শেষ পর্যন্ত কেটে পড়েছে। আর তাইতো সোহেল আরমান আজও একা। বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা নেহাতও কম নয়। তবে সেই রকম হৃদয় ঘটিত ব্যাপার তার জীবনে ঘটেনি বললেই চলে। এহেন বৈচিত্রহীন নিরস জীবনে জয়িতার রহস্যময় উপস্থিতি সোহেলের অন্তরকে নাড়া দেয়। তবুও সামাজিকতা ও নৈতিকতার বেড়াজালে বন্দী সোহেল এসব পাত্তা দেয় না। আর দেয়ই বা কি করে? মাত্র তের বছরের বালিকার সাথে প্রেম! এযে অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাই সত্যি হল দেখছি। আরে ধ্যাৎ! সোহেল একি ভাবছে! তাও বা সম্ভব কি ভাবে। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে সোহেল।

কিন্তু চিন্তিত হতে হল সোহেলকে। চিঠির জবাবটা কি হবে? ফিরতি প্রেম পত্রটা লিখবে নাকি সোহেল? ২৬ বছরের সোহেলের ১৬ বছরের তরুন হতে খুব একটা সময় লাগবে না নিশ্চয়ই। কিন্তু না। সোহেল তা পারবে না। অন্তত টিউশনিটার কথা ভেবে প্রেমপত্র লেখার চিন্তাটা বাদ দিতে হল সোহেলকে। এর জন্য আফসোস ও কম হল না। জীবনে এমন সুযোগ আর কি আসবে? ছাত্রী হোক আর যাই হোক কোন মেয়ের এই প্রথম আহবান। নাহ ! আর বুঝি হল না। এমন উদীয়মান প্রেমটা শেষ পর্যন্ত এভাবে অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে গেল। ভাবতে ভাবতে কখন যে হলের গেটে রিকশা এসে থামল তা টেরই পেলনা সোহেল। রিকশাওয়ালার ডাকে সম্বিত ফিরে পেল সোহেল। ভাড়া মিটিয়ে রুমে এসে ঢুকল।

পড়াশুনার চাপ নেই। মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। রেজাল্ট কবে বেরুবে তার ঠিক নেই। ইতোমধ্যে দু চার জায়গায় ইন্টাভ্যু দিয়েছে সোহেল। ভাগ্যের শিকে ছিড়েনি কোথাও। তবুও চেষ্টা করে তো দেখতে হবে। সন্ধ্যা সাতটা। শরীরটা বিশেষ ভাল নেই অজুহাতে বাইরে থেকে এসেই বিছানায় শুয়েছে সোহেল। চোখের সামনে ভেসে উঠছে কেবল জয়িতার মুখটা। বড় পবিত্র, বড় নিষ্কলুষ একটা মুখ। সুন্দরী স্বাস্থ্যবতী জয়িতার বয়স তের। সতের বছরের তরুনী বলে অনায়াশেই চালিয়ে দেয়া যাবে এ মেয়েকে। চমৎকার বুদ্ধিমত্তা ও সংবেদনশীলতায় অনন্য জয়িতা, এককথায় অসাধারন। নাহ! আর ভাবতে পারে না সোহেল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ..............................সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন একটা গল্প, ভাল লাগল। শুভেচ্ছা রইল।
মনির মুকুল সরলতার প্রকাশ একটু কম হলেও অণূগল্পটি সুন্দর।
মোঃ সাইফুল্লাহ সুন্দর গল্প ----------------- শুভ কামনা অনেক//
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ ইউসুফ ভাই ,আপনার গল্প মনোযোগ দিয়ে পড়লাম ------ বেশ গতি এবং সুন্দর কাহিনী ! শুভ কামনা ।
মামুন ম. আজিজ পরিচ্ছন্ন সুন্দর ঢংয়ে লেখা সুন্দর ছোট গল্প
ধন্যবাদ আপনাকে/ আপনার জন্য শুভো কামনা/
শুভ রাহমান বাহ দারুন তো....."সোহেল যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ল এই ভেবে যে, এই বুঝি তার টিউশনিটা গেল। " দারুন..শেষ হইয়া-ও হিল না শেষ...
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য/ ভালো থাকবেন/
আশিক বিন রহিম amar moner kicu kotha apnar kolomer mukhe fute uthece..johok kobir-o kolomer
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য/ আমি আসলে চাইছিলাম choto গল্পের আবহ তৈরী করতে/ কত টুকু সফল হতে পেরেছি তা পাঠক ই বলতে পারবেন/
মোঃ মুস্তাগীর রহমান সুন্দর গল্প ...তোমার জন্য শুভকামনা.....
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য/ আমি আসলে চাইছিলাম choto গল্পের আবহ তৈরী করতে/ কত টুকু সফল হতে পেরেছি তা পাঠক ই বলতে পারবেন/
ইউশা হামিদ চমৎকার শব্দ চয়ন ও কাহিনী ! খুব ভাল লাগলো গল্প । শুভ কামনা ।
ধন্যবাদ/ আপনার জন্য শুভো কামনা/
Lutful Bari Panna বাহ জীবনের ছোট্ট এক টুকরো রোমান্টিক আবহ...
ধন্যবাদ ভাইয়া / ভালো থাকবেন/ আপনার জন্য শুভো কামনা রইলো/

২২ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী