একটি অসমাপ্ত দেশ ও প্রেমের কাহিনী

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১১)

আহমাদ ইউসুফ
  • ১৬
  • 0
  • ৪০
মাইসার কথাটা মোটেও ভালোলাগেনি সায়মার। কেমন সন্দেহ আর অবিশ্বাস সায়মার চোখে মুখে। মাইসা সায়মার মনোভাব বুঝতে পেরে কানের কাছে মুখ এনে গলাটা আর একটু খাটো করে পুরো বিষয়টা ব্যাখ্যা করে। সায়মা আশ্বস্থ হয় তবে এর কোন যৌক্তিকতা খুজে পায়না। কেন এত ঝামেলা বাধানো। দরকার কি এইসব গোপন বৈঠক আর শলা পরামর্শের। সায়মা ভেবে অবাক হয় যে, আবু যুহাইফার মতো মেধাবী তরম্ননও এই সর্বনাশা খেলায় মেতেছে। আতঙ্কে তার হৃদপিন্ড কেপে ওঠে। লৌহমানব আহমাদ বিন মুসার দৃঢ়কঠিন চেহারা ভেসে ওঠে মনের পর্দায়। প্রবল আত্নবিশ্বাসী, একগুয়ে আর বজ্রকঠিন শাসক প্রেসিডেন্ট আহমাদ বিন মুসা সায়মার আদর্শ। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে সায়মা তার প্রিয় প্রেসিডেন্টকে। সায়মা যতদুর জানে তিনি কোন অন্যায় বরদাশত করেন না। আর অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন না। তিনি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার মাধ্যমে দেশকে এক ঈর্ষনীয় সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিয়েছেন। ইকোনোমিঙ্রে ছাত্রী সায়মার একথাও অজানা নয় যে, তার দেশের কোন বৈদেশিক ঋণ নেই এমনকি খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ এবং অর্থনৈতিক সম্পদে সম্পদশালী একটি দেশ তার। কিন্তু মাইসার মতো আবু যুহাইফারও একই কথা।

ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ার এককোণে বসে আছে আবু যুহাইফা। সায়মার সাথে এখনই কথা বলা দরকার তার। সায়মার নম্বরে ডায়াল করল আবু যুহাইফা।

"শোন, তোমার সাথে আমার জরম্নরি কথা আছে। কফি হাউসের দোতলার ১৮ নং টেবিলে চলে আস। আর হ্যা শোন, তোমার সময় দশ মিনিট। সায়মা কিছু বলার আগেই ফোন রেখে দেয় আবু যুহাইফা।

সায়মা কিছুটা হলেও অাঁচ করতে পাওে, যুহাইফা কি বলতে চায়। আর যুহাইফার সম্পর্কে ও তার যথেষ্ট ভালো ধারনা আছে। কিন্তু ওর ইদানীংকার গতিবিধি সায়মার কাছে বেশ সন্দেহজনক মনে হয়। যাই হোক দশ মিনিটের মাথায় সায়মা ক্যাফেটেরিয়ার দোতলায় পৌছে যায়। আবু যুহাইফা কেমন অন্যমনস্ক, উদাস নিস্প্রান চোখে তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। সায়মার চেয়ার টেনে বসার শব্দে চমকে ওঠে যুহাইফা।
কেমন আছো? প্রশ্ন করে সায়মা।

আলহামদুলিলস্নাহ, ভালো আছি, তুমি কেমন আছ পাল্টা প্রশ্ন করে যুহাইফা।

জি্ব ভালো, কিন্তু তোমাকে খুব চিনত্দিত মনে হচ্ছে। তোমার কি শরীর খারাপ?

কই নাতো? আমি তো দিব্যি ঠিক আছি। মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে বলে যুহাইফা।

আসলেই কি তাই! সায়মার কন্ঠে কৌতুকের সুর। যাই হোক কেন ডেকেছ বল। আমার হাতে সময় কম। আমাকে দুটার আগেই বাসায় ফিরতে হবে।

আচ্ছা বলছি। শোন তোমাকে হয়তো মাইসা বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছে। আমি আর অত বিশেস্নষনে যাবনা। সহজ কথায় বলতে গেলে আমরা একটা আন্দোলন গড়ে তুলব। আমরা প্রেসিডেন্টের অপসারন চাই। আশা করি তুমিও আমাদের সাথে থাকবে।

মানে বুঝলাম না তোমরা কিসের আন্দোলন করতে চাও? প্রশ্ন করে সায়মা।

আসলে আন্দোলন টান্দোলন কিছু না আমরা বিদ্রোহ করতে চাই। দৃঢ় কন্ঠে বলে আবু যুহাইফা।

সর্বনাশ আতকে ওঠে সায়মা। তুমি এসব কি বলছ। একবার ও ভেবেছ এর পরিনতি কত ভয়াবহ হতে পারে। তোমরা তো সফল নাও হতে পারো বলে সায়মা।

হ্যা তা ঠিক, তবে আমরা আশাবাদী। আর একটা কারন---------হঠাৎ থেমে যায় আবু যুহাইফা।

বারে থামলে কেন? কি বলতে চাইছিলে। প্রশ্ন করে সায়মা।

নাহ! অন্য আর একটা প্রসংগ এসে গেল। আবু যুহাইফা এড়াতে চায় কথাটা।

না। না। আমি ওটাই বল। আমি তোমার সব কথাই শুনতে চাই। সায়মা পিড়াপিড়ি করতে লাগল।

আবু যুহাইফা দ্বিধায় পড়ে গেল। সায়মার সম্পর্কে যতদূর জানে তাতে তার উপর আস্থা রাখার মতো মেয়ে সে। তারপরও এমন গোপনীয় তথ্য ফাস করার দায়িত্ব কাধে নিতে সায় দিচ্ছে না। আবু যুহাইফা সায়মার এক দুরসম্পর্কীয় কাজিন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে ওরা। আবু যুহাইফা তড়িৎ প্রকৌশলে সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র। আর সায়মা ইকোনোমিঙ্ েদ্বিতীয় বর্ষ। প্রাথমিক পরিচয় আর ভালোলাগা ছাপিয়ে আজ ওদের এক অসাধারন বোঝাপড়া ও মধুর সম্পকের রসায়ন চলছে। একটু ভাবে ও। সায়মা তার একানত্দ কাছের মানুষ, হৃদয়ের একজন। তার কাছে লুকানোর কোন মানে হয়না। অহেতুক সন্দেহ আর কি।

ও হ্যা যা বলছিলাম। কারনটা হল আজ আর আমরা একা নই। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রও আমাদেরকে সবরকম সাহায্য সহযোগীতা করবে। তারাও আহমাদ বিন মুসাকে পছন্দ করেনা। তারাও আমাদের প্রেসিডেন্টের অপসারন চায়।
কেন করেনা তা কি তুমি বুঝতে পেরেছ। সায়মার প্রশ্ন।

হ্যা পছন্দ না করার কারন তো আছেই। আমাদের প্রেসিডেন্ট অহংকারী, একরোখা ও একনায়ক। তিনি সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করেছেন। সবের্াপরি তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। এছাড়াও তিনি ১১.১১.১১ বিমান হামলার জন্য প্রধান সন্দেহভাজন। তাই তাকে এবার উৎখাত হতেই হবে। দৃঢ় কন্ঠ আবু যুহাইফার।

কিন্তু তুমি কি ভেবে দেখেছ তার কিছু খারাপ গুনাবলির সাথে বেশ কিছু ভালো গুনাবলিও আছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে, সামরিক ও যোগাযোগক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদান আমরা অস্বীকার করতে পারিনা বলে সাময়া।

হ্যা। তা ঠিক আছে। তবে এসবই তার একনায়কতন্ত্রকে দীর্ঘস্থায়ী করার অপকৌশল মাত্র।

কিন্তু আমাদের দেশে কেউতো আর বেকার নেই, কাউকে না খেয়ে থাকতে হয়না। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের নাম সাধারন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। তাহলে আমরা কেন বিদ্রোহ করব? কেন এমন শানত্দিপূর্ণ দেশে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করব? সায়মার প্রশ্ন।

হ্যা। আমরা বিদ্রোহ করব এই কারনে যে আমরা পরিবর্তন চাই। প্রেসিডেন্টের মান্ধাতার আমলের রাষ্ট্রীয় নিয়ম নীতিতে আমরা পরিবর্তন আনতে চাই। সর্বোপরি আমরা গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চাই। আমরা একনায়ক তন্ত্রে বিশ্বাস করিনা। থামল আবু যুহাইফা।

কিন্তু পরিবর্তন সবসময় সুফলদায়ক নাও তো হতে পারে। সায়মার যুক্তি।

হ্যা পারে। তবে আমাদের তরম্ননদেরকেই পরিবর্তনের ডাক দিতে হবে। আমি তোমার সহযোগীতা চাই সায়মা। তোমাকে আমার পাশে চাই কাতর কন্ঠে বলল আবু যুহাইফা।

কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝিনা যুহাইফা, তোমরা আন্দোলন কারীরা সবাই ছাত্র ও তরম্নন যুবক। তোমরা কি করে একটা শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরম্নদ্ধে সফল হবে?

সে চিনত্দা তোমার নয় সায়মা। আমাদের চিত্রনাট্য তৈরি করাই আছে। আমরা সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করতে পারলেই হলো।
মানে কি বলতে চাও তুমি? সায়মার কন্ঠে উদ্বেগ।

বিষয়টা হল সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশ আমাদের সাথে আছে। অস্ত্র শস্ত্রের সংস্থান তো আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রই করবে। আর আমাদের স্টুডেন্ট ফ্রিডম কাউন্সিল তো আছেই। আবু যুহাইফা বিষয়টা ব্যাখ্যা করে এভাবে।

সর্বনাশ তাই নাকি। তার মানে তোমরা শানত্দিপুর্ন আন্দোলন করবে না। সায়মা জিজ্ঞেস করে।

নাহ! আমরা অন্যান্য দেশের মতো মিছিল সমাবেশ করে সময় নষ্ট করব না। আমরা চাই প্রেসিডেন্টের উৎখাত এবং সেইসাথে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা।

না! না! এ অন্যায় যাই বল না কেন তুমি। সাধারন মানুষের সমর্থন তোমরা কিছুতেই পাবেনা। আহমাদ বিন মুসার জনপ্রিয়তা এখনো গগনচুম্বী।

আহ! সায়মা তুমি বুঝতে পারছ না। সাধারন মানুষের কথা তুমি বাদ দাও। সাধারন মানুষ চিরকালই সাধারন। তারা কখনোই অসাধারন হয়ে উঠতে পারেনা। এই যে, আমাকে দেখ আমি একজন ভার্সিটির ছাত্র। সরকার পরিবর্তন হলে আমি রাতারাতি একজন মন্ত্রী হয়ে যাব। মিনিমাম এমপি তো হবোই। বলে আবু যুহাইফা।

কিন্তু তোমাদেরকে যারা এত সহযোগীতা করবে এমনকি বিদ্রোহের চিত্রনাট্যও তৈরি করে দিয়েছে তাদেরকে কিভাবে ম্যানেজ করবে? সায়মার প্রশ্ন। একসময় এরাই তো তোমাদের গলার কাটা হয়ে দাড়াবে।

না। না। এটা কোন সমস্যা হবে না। তাদের সাথে ওইভাবেই চুক্তি করা হয়েছে। তাদেরকে অবশ্য খনিজ সম্পদের একটা অংশ দিতে হবে।

ওহ! তাই বল। এটাই তাহলে আসল কথা। খনিজ সম্পদের দিকেই ওদের আসল টার্গেট।

তুমি বাড়িয়ে চিনত্দা করছ। ওরা আমাদের মানবিক দৃষ্টিকোন থেকেই সাহায্য করতে চায়। বলল আবু যুহাইফা।

না এটা অসম্ভব। দুঃখিত যু্হাইফা দেশের স্বার্থ বিরোধী কোন কর্মকান্ডে আমি তোমার সাথে একমত হতে পারলাম না। আমি বিদেশী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে দেশকে বিক্রি করে দিতে পারিনা। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। আমি কখনোই চাইব না এ সূখী সম্মৃদ্ধশালী অমাদের মাতৃভূমি বিদেশী শক্তির পদলেহী দাসে পরিনত হোক। না ! না ! এ আমি কিছুতেই পারব না। থামল সায়মা।


তোমাকে পারতে হবে সায়মা। তুমি শিক্ষিতা, আধুনিকা এবং সেইসাথে বুদ্ধিমতী মেয়ে। তুমি তরম্নন। তুমি কি চাওনা আমাদের দেশটা গনতন্ত্রের সুফল ভোগ করম্নক। বিশ্বের দরবারে দৃপ্ত পদচারনা করম্নক। বিশ্বসংস্থা আমাদের সদস্যপদ দেয়না। আমরা কোন আনত্দজর্াতিক পরিমন্ডলে ব্যবসা-বানিজ্য, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় অবদান রাখতে পারিনা। এটা শুধু গনতন্ত্রের অভাবে। আমরা বঞ্চিত হচ্ছি অপার সম্ভবনা থেকে। সুতরাং আমরা কেন এ জঞ্জাল পনিস্কার করব না। থামল আবু যুহাইফা।

কিন্তু তুমি যাই বলনা কেন আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। দেশের স্বার্থবিরোধী কোন কাজ আমি করতে পারব না। আমি তোমাদের সাথে নেই। দৃঢ় কন্ঠ সায়মার।

তুমি ভেবে চিনত্দে বলছ তো। আবু যুহাইফার সাবধান বানী।

হ্যা আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দেশের স্বার্থরক্ষায় যা করনীয় আমি তাই করব।

কিন্তু আমি তো তোমায় ভালোবাসি সায়মা। হ্যা আমি ও তোমায় ভালোবাসি যুহাইফা। তাহলে কেন আমরা চিনত্দা চেতনায় এক হতে পারছি না। প্রশ্ন যুহাইফার।

কারন তুমি লোভে পড়ে অন্ধ হয়ে গেছ। তুমি চাও ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি। তোমার মধ্যে দেশপ্রেম নেই যুহাইফা।

না! না! এ কথা ভুল সায়মা। আমি দেশকে ভালোবাসি। জালেম প্রেসিডেন্টের সৈরশাসন থেকে দেশকে তথা দেশের মানুষকে বাচাতে চাই। এই সহজ কথাটা তুমি কেন বুঝতে পারছ না।

আমি আর তোমার কোন কথাই বুঝতে চাইনা। তোমার নীতি আদর্শ তোমার কাছে আর আমারটা আমার কাছে।

তার মানে তুমি আমি আলাদা হয়ে গেলাম।

তুমি যদি মনে কর তবে তাই। আমরা যদি আবারো একই মতাদর্শ ও চিনত্দায় সহমত পোষন করতে পারি তবে তোমার সাথে আবারো আমার দেখা হবে বলল সায়মা।

সায়মার এমন রূঢ় ও ভাবলেশহীন কন্ঠে হতবিহবল হয়ে গেল আবু যুহাইফা। হায় এ কোন সায়মা তার সামনে। এমন ইস্পাত কঠিন মনোবল তো তার মধ্যে আগে ছিল না। যুহাইফাই সায়মার চিনত্দা ও দর্শনের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় বিতার্কিক ও জনপ্রিয় ছাত্রনেতা আবু যুহাইফার প্রত্যক্ষ সংস্পর্শেই সায়মার চিনত্দা জগতের এমন আমুল পরিবর্তন এসেছে।

আবু যুহাইফা ভেবে পেলনা এখন সে কি করবে। একদিকে বিপস্নবের এক মহান দায়িত্ব তার কাধে ন্যসত্দ। আর অন্যদিকে তারই একানত্দ সহকমর্ী, সহমমর্ী সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। সর্বোপরি ভালোবাসার এক মহিমান্বিত চেতনা। দ্রম্নত সিদ্ধানত্দ নিল আবু যুহাইফা। ভালোবাসার কাছে সে দেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দিতে পারেনা। তাই সায়মার ভালোবাসাই তার কাছে তুচ্ছ মনে হল। সর্বোপরি উজ্জল ভবিষ্যত জীবনের হাতছানি তাকে দেশ রক্ষার মহান আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করল।

আচ্ছা ঠিক তুমি যা বলেছ তবে তাই হোক। আমি তোমার জন্য অপেৰা করব সায়মা। ভালো থেক। আলস্নাহ হাফিজ বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিদ্রোহী কমান্ডার আবু যুহাইফা।

সায়মার বিষয়টা নিয়ে অনুশোচনা হল। ইস এভাবে হার্ডলাইনে না গেলেই হতো। কিন্তু না। সায়মা একজন সচেতন নাগারিক হিসাবে এটা সমর্থন করতেই পারেনা। কারন এটা বিপস্নব নয় এটা রীতিমত বিদ্রোহ। এর আইনী কোন ভিত্তি নেই। আর বিদ্রোহের শাসত্দি মৃতু্যদন্ড। সায়মা আত্কে ওঠে। আবু যুহাইফার অমঙ্গল আশঙ্কায় তার অনত্দরাত্না কেপে ওঠে। দ্রম্নত সামলে নেয় নিজেকে। আর ক্লাস করতে ভালোলাগছে না সায়মার। ব্যাগ গুছিয়ে বাসার পথ ধরল সে।

বিশ্ববিদ্যালয় গেট না পেরম্নতেই দুই পাশে দুজন সুদর্শন ও দীর্ঘদেহী যুবকের উপস্থিতি টের পেল সায়মা। অজানা আশঙ্কায় কেপে উঠল তার অনত্দর। কিছুদুর যেতেই তাদের একজন নিজেকে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিল। "আপনি মিস সায়মা" তাইতো।

হ্যা কেন বলুন তো । সায়মা ভয় ও উদ্বেগ নিয়ে জবাব দিল।

সরি আপনাকে ডিস্ট্রার্ব করলাম। আপনাকে আমাদের যেতে হবে। দৃঢ় অথচ শান্ত কন্ঠে বলল যুবকটি।

কেন ? আমি কি করেছি্ । আমার অপরাধ? কাপা কাপা কন্ঠে বলল সায়মা।

দুঃখিত মিস আপনার কি অপরাধ সেটা আমরা জানিনা। আমাদের উপর হুকুম আপনাকে আমাদের হেডকোয়াটর্ারে সসম্মানে পৌছে দেয়া। আশা করছি আপনার কোন অমর্যর্াদা হবে না। বলল সেই যুবকটি।

সায়মা কি করবে ভেবে পেলনা। গোয়েন্দার লোকেরা হঠাৎ তাকে টার্গেট করল কেন। তার কি অপরাধ। সেতো কোন মিছিল মিটিংয়ে যায়নি। কোথাও কোন গোপন সাভা সমাবেশেও অংশ নেয়নি। সায়মার প্রয়াত বাবা ছিলেন প্রেসিডেন্টের একজন সরকারী আমলা। সুতরাং তার উপর সন্দেহ পোষন করা অযৌক্তিক। শুধুমাত্র আজকের আবু যুহাইফার সাথে কথা বলা ছাড়া আর কোন ঘটনাই সায়মার কাছে অস্বাভাবিক মনে হল না। কিন্তু তাও বা সম্ভব কি করে। ভার্সিটি পড়ুয়া দুজন ছেলেমেয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় আড্ডা দেয়ার ঘটনা বাইরের লোক এত সন্দেহের চোখে দেখবে কেন? তাহলে গলদটা কোথায়? তাহলে কি ওরা আবু যুহাইফাকে চেনে। আবু যুহাইফার দিকে ওদের আগে থেকেই টার্গেট। আজকের ঘটনাও ওরা নিশ্চয় দুর থেকে লক্ষ্য করেছে। যদি তাই হয় তাহলে তো সর্বনাশ। আতঙ্কে বুকটা ধড়ফড় করতে লাগল সায়মার। সেতো অনেক বেশি জেনে ফেলেছে। সব কথা যদি তাকে বলতেই হয় তবে আবু যুহাইফার বিপদ হবে? মনে মনে প্রমাদ গোনে সায়মা।

সামরিক গোয়েন্দা পরিষদের প্রধান মেজর জেনারেল রম্নবাইয়্যাত-ই-নূরের সামনে হাজির করা হল সায়মাকে। বেশ রাশভারী প্রকান্ড চেহারার জেনারেলকে দেখেই ভিমরি খাওয়ার যোগাড় সায়মার। কিন্তু সায়মাকে অবাক করে দিয়ে জেনারেল শানত্দ ও সুমিষ্ট কন্ঠে সায়মার বাবার নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেন। সায়মা বাবার নাম বলতেই জেনারেল চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন।

ওহ! সীট তুমি আব্দুলস্নাহ বিন উমরের মেয়ে। গাধা গুলো তোমাকে ধরে এনেছে কেন? আমি তোমার বাবাকে চিনি। স্যার তো প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব ছিলেন। তাই না? বলল জেনারেল। সরি! সরি মা মনি তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য। তোমাকে আমার লোক বাসায় পৌছে দিবে।

সায়মা অবাক হয়ে গেল জেনারেলের কান্ড দেখে। না! না! আঙ্কেল দুঃখিত হওয়ার কি আছে। আমি একাই যেতে পারব। বলে হাফ ছেড়ে বাচল সায়মা।

সায়মা উঠতে যাবে এমন সময় ফোন বেজে উঠল জেনারেলের। স্বভাবসুলভ কর্তৃত্তের সুরে কাকে যেন নিয়ে আসতে বলে ফোন রেখে দিল জেনারেল। মনে মনে আলস্নাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিল সায়মা। ভাগ্যিস আবু যুহাইফার বলা গোপন কথাগুলো তাকে আর বলতে হয়নি। কিন্তু সায়মা বিন উমর জানতেও পারল না অঘটন যা ঘটার তাতো আগেই ঘটে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরম্ননোর পথেই সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের চৌকস কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়ল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিদ্রোহী কমান্ডার আবু যুহাইফা বিন জুবায়ের। গোয়েন্দাদের কাছে আগে থেকেই সব তথ্য ছিল বিদ্রোহীদের। সুযোগের অপেক্ষায় ছিল তারা। আবু যুহাইফার ভাগ্য খারাপ আর তাইতো সে এখন সামরিক আদালতের কাঠগড়ায় বিচারের সম্মুখীন। আবু যুহাইফার সাথে একে একে অন্যান্য বিদ্রোহীরাও ধরা পড়তে লাগলেন। তাদের দেশপ্রেম ও দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাও শেষ পর্যনত্দ তাদেরকে সামরিক আদালতের কোর্ট মাশর্ালের রায় থেকে অব্যাহতি দিতে পারল না। অন্যান্য সহযোগীর সাথে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘি্নত ও প্রচলিত রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার বিরম্নদ্ধে বিদ্রোহ প্রমানিত হওয়ায় অন্যান্যের সাথে আবু যুহাইফাকে মৃতু্যদন্ডে দন্ডিত করা হল। সায়মার আর কিছুই করার থাকল না প্রিয়তম মানুষটার জন্য অশ্রম্ন বিসর্জন দেয়া ছাড়া।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রজাপতি মন ি পড়লাম.... তবে বাংলাদেশের লেখা মনে হল না....অনেক ছোট বেলায় সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক আহমেদ মুসা না কি যেন এক লেখা পড়েছিলাম (যতদুর মনে পড়ছে)..... সেরকম লাগলো.........লেখাতে আমি ঠিক বাংলার প্রাণ পাইনি....ভুল বলে থাকলে দুঃক্ষিত... ************************* সহমত।
আসন্ন আশফাক somosamoyik বিসয়, আমার কাসে ভালো লাগলো
আহমাদ ইউসুফ আপনাদের মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ. আপনাদের মতামত আমার জন্য পাথেয়.
হোসেন মোশাররফ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেশ প্রেম নিয়ে লেখা ......
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি আহমেদ ইউসুফ ভাই বাংলা দেশের প্রেম নিয়েই বাঁচিনা আপনি আবার মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যেতে চান? কেন ভাই এত সুন্দর কাহিনীটাকে বাংরায় কি ধরে রাখা যায়না? চেষ্টা করে দেখবেন আপনার হবে।ফাতেমা প্রমি আর আমি এখন মানষিক দোদুল্যেমানের রোগে ভুগছি। তাই আমারো যতদুর মনে পড়ছে...কিআর বলবো.............ধন্যবাদ............চালিয়ে যান..........
মামুন ম. আজিজ বিষয় দেশপ্রমে সেটা বাংলাদেশ কেন্দ্রীক হতেই হবে এমনটা কোথাও বলা নেই। //////সে হিসেবে ঠিকাছে। কাহিনীর উপজীব্য তব কোন দেশ--মিশর? লিবিয়া?..জানিনা। ....আর দেশপ্রেমিক ঠিক কে এখানে.....বিজয় সম্পূর্ণ না হলে দেশপ্রমিকের সাইট নেয়াটা কটিন হয় পড়ে।
আশা সায়মা এবং যুহাইফা উভয়ের যুক্তিতেই তারা দেশপ্রেমিক। সেই দেশপ্রেম নিয়ে দ্বন্দ্বের ফলে তাদের প্রেমজীবনে নেমে এল সমাপ্তি। বেশ লাগল গল্পটি। তবে অসংখ্য টাইপিং মিসটেক লক্ষ করলাম। লেখকে একটু সতর্ক হওয়ার জন্য অনুরোধ না করে পারছি না। কারণ; সুন্দর ঝরঝরে লেখা পড়তে খুব বেশি ভালো লাগে। সবশেষে শুভকামনা রেখে গেলাম আপনার জন্যে। ভালো থাকুন সব সময়।
M.A.HALIM ভালো লাগলো । বন্ধুর জন্য শুভ কামনা রইলো।
বশির আহমেদ মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক কাহিনীর ঘটনা বিন্যাস । সায়মার দেশপ্রেম সর্বকালীন সর্বদেশ ব্যপি । ধন্যবাদ লেখককে ।

২২ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী