!

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১১)

Azaha Sultan
  • ৩৪
  • 0
একদিন আমি ব্যাংককার্যসম্পাদ্যে বাইর হলেম- আমার বাহন ছিল মোটরবাইক। ব্যাংকভবনের সামনে- রাস্তার অপরপাশে ফুটপাত ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে কুলুপ-আটা একটি ভ্যানগাড়ি। ভ্যানটার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে কালোরঙের একটা মোটরকার। ভ্যানটার পিছনে একেবারে ফুটপাত ঘেঁষে আমি দাঁড় করালাম আমার বাইক। যেহেতু আমারও এই দাঁড়ানোটা বৈধ আইনে পড়ে না, তার পরেও অন্যোপায় না দেখে এ অপরাধটা আমাকেও করতে হল ক্ষণিকের জন্য। কথায় আছে, হাওয়া যেদিকে চলে ছাতা সেদিকে ধরতে হয়; তবে, বিপরীতদিকে ধরলে ছত্রভঙ্গের আশঙ্কা দৃঢ়- এ কথাটাও সকলে জানে। তার পরেও- দশজন যেদিকে ছুটে আমরা বাকিরাও সেদিকে ছুটি, একবারও জানার গরজ বোধ করি না যে, ওরা ছুটছেই বা কেন? হচ্ছেই বা কি? ...ভাল কি বা মন্দ? ও কেন করল, আমি করলে ক্ষতি কি। এভাবেই চলছে অপরাধ : বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা-

সম্মুখে বের হওয়ার জন্য আমার কোনও পথ খোলা নেই। সামনে আমাকে অগ্রসর হতে হলে, হয় তো স্থানচ্যুত হতে হবে কারগাড়িটা আর না হয় তো ভ্যানগাড়িটা। পিছনদিকে তবে ঢের উন্মুক্ত স্থান। এ মর্মে আমি বাইকটা পার্ক করি যথাস্থানে-
কোথাও বইছে না আর বসন্তের মৃদুমধুর হাওয়া। এখন গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ্দর বিচরণ করছে সবখানে। জ্যৈষ্ঠের তপ্তদুপুর। নানান রকম ফলের সুগন্ধ নিয়ে বেড়াচ্ছে বায়ুবান্ধব। আমি মিনিট বিশেক পর ফিরে এসে দেখি, আমার বাইকের পশ্চাৎ ছুঁই ছুঁই আরেকটা সাদারঙের মোটরকার দাঁড়ানো! কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক সবদিকে দৃষ্টিপাত করলাম : একজন পথিককে জিজ্ঞেস করলাম- উপায় কি। ভদ্রলোক পথিক একটুখানি দাঁড়াল : সমাধানে উত্তীর্ণ হতে অক্ষম- অতঃপর বোকার মতো হেসে চলে গেল। একটু দূরত্বে জন দুয়েক... ...ভ্যানচালকের মতো লাগছে... ...আলাপচারিতায় মশগুল। ডেকে বললাম, ভ্যানটা তোমাদের কারও কি? ওরা কাছে এসে বলল, আমরা ভ্যানচালক নই জনাব। ওহ্‌...আমি... ...দুঃখিত। বলতে পার, এ মহাশয়রা কে কোথায় গেছে? না স্যার, আমরা এদিকে খেয়াল করি নি। কি আর করি- নিরুপায়- তেতাল্লিশ ডিগ্রি রৌদ্রের নিচে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি! ... ...ভেঁপু? অনেক বাজিয়েছি বাপু- কারও সাড়াশব্দ নেই।

প্রায় ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে : ইউটার্ণের মাথায় কালো গাড়িটা- যত গাড়ি টার্ণ করতে যাচ্ছে সকলেই ব্যাঘাতের সম্মুখ হচ্ছে! কোনও ভদ্রলোক হলে সভ্যগালি দিয়ে যাচ্ছে আর অভদ্র হলে অশ্লীল... ...তবে তাদের এই গালিটা ওই ভদ্রজনের ন্যায্যপ্রাপ্য এমুহূর্তে। কারণ, গাড়ি যথাস্থানে রাখার নির্দিষ্ট একটা স্থান সব দেশে আছে। এ ব্যাপারে সব দেশে একটা কার্যকরি আইনও আছে। এটা কারও অজানা বিষয়- তাও মনে হয় না। সুতরাং যারা গাড়ির মালিক তারা একটা ড্রাভলাইসেন্সেরও মালিক। আর এ-ই লাইসেন্স নিতে হলে বেশ কয়েকবার পরিক্ষাদিরও সম্মুখীন হতে হয়- অতএব, এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করার কোনও সুযোগ নেই। এশিয়া মহাদেশের হাতেগুনা দুয়েকটা দেশ ছাড়া বিশ্বের সবখানে এ আইনের কঠোর প্রয়োগ আছে। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্ক করলে কঠোর শাস্তি এবং মোটাঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়- সে যত বড় সম্মানি ব্যক্তিইবা হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আর আমাদের দেশে পুলিশের সামনে একজন গাড়িওয়ালা অবৈধভাবে তার গাড়ি পার্ক করে চলে যাচ্ছে! পুলিশ তাকে কিছু বলবে দূরের কথা- দেখা যাচ্ছে, সালাম ঠুকছে! যেন এ রাস্তার মালিক ওই গাড়িওয়ালা : এ রাজ্য তার পিতৃদেবের- উত্তরাধিকারসূত্রে সে-ই প্রাপ্য একদিন! যারা এ সমস্ত গাড়ির মালিক বা কোনক্রমে একটা দামি গাড়ি কিনতে পারল, তার চোখ তখন আকাশ দেখে- এ মাটির জনগণকে তারা মনে করে কীটপোকা- তাদের সংস্পর্শে যেন শত আবর্জনার ছোঁয়া! এক জরিপে দেখা গেছে, উচ্চবিত্তরা মধ্যবিত্তদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না- গড়ে তোলা ত দূরের কথা। তা হলে চিন্তা কর এবার, নিম্নদের স্থান কোথায়। বিত্তশালীরা সব সময় অহংকারী হয়। তারা ছোটজন কারও সঙ্গে কথা বললে বিরক্ত বোধ করে। আত্মীয় ছোট হলে তাদের সঙ্গে আত্মীয়তা বজায় রাখতে চায় না কখনও। এমন আত্মীয়ের আগমনে অস্বস্তি বোধ করে, কথা বলতেও মন চায় না; যদিওবা বলতে বাধ্য, তা হলে খুব সীমিত। এ হল বিত্তবানদের সদাচরণ।

নগরির ব্যস্ততম এ সড়কগুলোতে যানবাহনের যেমন ব্যস্ত চলাচল, তেমনই পথিকেরও চলাচল কোনও অংশে কম দেখা যায় না। আমি এসব অবলোকন করছি আর ভাবছি... ...জনৈক দোকানি তাঁর দোকানের কোষাগারে বসে বারবার আমাকে নজরদারি করছেন : কখনও কখনও বোধ হচ্ছে কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন ভদ্রলোক- আমি কাছে গেলাম। সালাম- বিনিময়ে করমর্দন করলাম। বেচারা আমাকে তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া এমনই এক দুঃখের কাহিনী শুনালেন। গল্প সুদীর্ঘ না হলেও তবে অত্যন্ত করুণ বটে। দোকানি ভদ্রলোক দেখি একই কথা বলতে চাচ্ছেন : গাড়িমালিকের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার মালিকও তারা। কথাটা অসমীচীন নয়। আজকাল যেই অনুপাতে ধনী বাড়ছে সেই অনুপাতে যদি মানুষের মানবিক আচরণের উন্নতি হত, তা হলে বিশ্বমানবতা আজ অশান্তির দাবানলে পুড়তে হত না। আজ শিক্ষানীতিতে দেখি তো, নীতির কোনও শিক্ষা নেই : ছাত্রীকে ধর্ষণ করছে শিক্ষক! আবার দেখা যাচ্ছে, শিক্ষককে নাজেহাল করছে ছাত্র! সমাজনীতিতে চলছে অনৈতিক কার্যকলাপ : সমাজপতিরা হচ্ছে অর্থপতির পূজারি- প্রভাব কাটাচ্ছে সহায়সম্বলহীনদের উপর! মৌলবাদীরা ফতোয়া জারি করছে অভিনবকায়দায়! ভণ্ডপীরদের ভণ্ডামিতে মুগ্ধ হচ্ছে নব নব ভক্ত! অর্থনীতিতে চলছে লুটপাট! রাজনীতিতে চলছে হানাহানি! আইনের দেবতা চলছে বে-আইনের পথে! তা হলে, আইন কোথায়? মানুষ নোংরামি করতে একবিন্দু দ্বিধাবোধ করছে না! সৃষ্টিকর্তা আঠার হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন মাত্র ছয় দিনে! কিন্তু, মানুষ সৃষ্টি করতে না জানি কত যুগ সাধনা করতে হয়েছে : আজ নিচে দেখে তো কীটপতঙ্গই দেখে আর বিদ্রূপের হাসি হাসে : লজ্জা অনুভব করে- বলে, সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি করেছিলেম মানুষ! কিন্তু নিম্নে দেখি তো সবচেয়ে অসুন্দর আচরণে অবতরণ করছে মানুষ। আহা রে মানুষ! ... ...

অতঃপর চল্লিশোর্ধ্ব এক ভদ্রলোক : ‘ভদ্রলোক’ বললে বোধহয় পাছে ভদ্রলোকের অপমান হয়- হাঁ, আলালের বিকৃত দুলাল বললে তবে ওর সুনাম বাড়ে- খোঁচা খোঁচা দাড়িগোঁফ, পায়ে ক্যাস্‌, পরনে বাদামিজিন্স আর সাদার উপর কালোদাড়ি শার্ট এবং চোখে রৌদ্রচশমা : সহজেই বুঝা যাচ্ছে গোঁয়ার প্রকৃতির লোক- তর্জনিতে চাবির একটা রিং ঘুরাতে ঘুরাতে এদিক-ওদিক লক্ষ্য না করে সাদারঙের গাড়িটার দিকে আসতে দেখা যাচ্ছে। দোকানি ভদ্রলোক আঙুলপ্রদর্শনে বললেন, এ নবাবজাদারই ত বোধহয় ওই সাদা গাড়িটা?
আমি বললাম, হাঁ! হাঁ! ওরই ত নিশ্চয়- কিছু একটা বলি?
দোকানি ভদ্রলোক বাধা দিয়ে বললেন, কোনও লাভ হবে না দাদা, পাছে আপনাকেই দু-চার কথা শুনতে হবে; এর চেয়ে নীরব থাকা উত্তম।
আমি দুঃখ প্রকাশ করে বললাম, তা হলে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতেই হবে?
দোকানদার ভদ্রলোক বললেন, কোনও উপায় নেই। আপনি ন্যায়ের কথা বলে দেখেন, কয়জনের সঙ্গ পান; আর অন্যায়ের কথা বলে দেখেন, কত বাহবা পান! ...আইনের কথা বলেও কোনও লাভ হবে না! আইন কোথায়? ...মা-বাপ কে? ...নিয়ন্তা কে? নিশ্চয় বিধাতা নয়। বিধাতা আর দেবতার মধ্যে যেমন একটা বিশাল প্রভেদ, তেমনই দেবতা ও মানবের মধ্যেও বিরাট ব্যবধান। মানুষ যেখানে আইনের নিয়ন্তা সেখানে কোনও সুফল আশা করা যায় না- সত্য বললাম কি না?
-অবশ্য সত্য কথাটাই বলছেন। কিন্তু আজকাল এমন তিক্তসত্য বললেও বিপদ আছে!
-সে কি আর সবার কাছে প্রকাশ করি, আপনি শিক্ষিতজন বুঝেই ব্যক্ত করলাম। (ভদ্রলোক হাসতে হাসতে জবাব দিলেন)

...সামনে- রাস্তার মধ্যে একজন ট্রাফিক গাড়িকে নির্দেশনা দিচ্ছে- কালো গাড়িটার পাশে দু-জন পুলিশকর্তা দাঁড়িয়ে আছে; বোধহয় সার্জেন্ট। একটুপর একজন বাইকওয়ালাকে দাঁড় করিয়ে অসম্ভব রকমের আচরণ করছে! বাইকমালিক একের পর এক দলিলাদি শো করেও তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না : স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এবং একের পর এক- নানান রকমের প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা ভদ্রলোককে কাবু করার চেষ্টা চালাচ্ছে! কিছুক্ষণপর দেখি, সার্জেন্টদ্বয়ের হাতেপায়ে ধরে : মোটাঙ্ক গুঁজে দিয়ে ভদ্রলোক জ্যান্তরূপ অনুভব করে! আমার দলিলপত্র সবকিছু সচল থাকাতে আমি সজীবতা বোধ করছি এবং বুক ফুলিয়ে বাইকে চড়ে বসে আছি; আর মনে মনে চিন্তা করে রাখছি, আমার কাগজপত্র তদন্ত করতে আসলেই হল : হোক আমার জেল অথবা ফাঁসি- একেবারে ষোলোকলার হিসেবনিকেশ উদ্ধার করেই তবে নিস্তার! কোন্‌ আইনের নথিভুক্ত, যেখানে-সেখানে এক জন বা দুই জন পুলিশকর্মচারি দাঁড়িয়ে ডকিউমেন্টস্‌-যাচাইয়ের নামে অর্থাদায় : অনাদায়ে কাউকে নাজেহাল বা হেনস্তা করা! আর করছেই তো করছে : অটোরিক্‌শা-মোটরবাইক ছোটখাটো দুয়েকটা গাড়ি কেন! আমরা সকলে জানি ভ্রাম্যমান আদালত কাকে বলে। এখানে বুঝার কিছু অবশিষ্ট নেই... ...কারমালিককে ‌‌'কি' শব্দও জিজ্ঞেস করল না! নবাবজাদা কিঞ্চিৎ ভ্রুক্ষেপ না করেই চালকাসনে বসেই দিল ভোঁ! সে তো করছেই জঘন্য অপরাধ : প্রায়ই অর্ধসড়কজুড়ে অবৈধভাবে দাঁড় করেছে গাড়ি- স্বয়ং অপরাধী- অপরকেও শিক্ষা দিচ্ছে- আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এমন অপরাধ করার! কারণ মানুষ একে দেখার অভ্যস্ত! নিজের বুদ্ধিবিবেচনা খাটিয়ে বিচার করে দেখে না যে, সে যা করছে তা কি ভাল- কি বা মন্দ? ...বিচারাসরে বসি ত দেখি, জনৈক মান্যবর কি বলল তাঁর মন্তব্যের উপর ভিত্তি করে সকলে প্রায়ই একই মন্তব্য করছে! বক্তৃতামঞ্চে দেখি, এক নেতা বা নেত্রী যেই বক্তব্য পেশ করছে পরপর অন্যরাও একই কথা ঘুরেফিরে দৌড়াচ্ছে! আমাদের নিজস্ব কোনও জ্ঞান নেই! আমরা অনুকরণ বা অনুসরণে আদি। আমাদের কাণ্ডজ্ঞান এতই নিকৃষ্ট যে, আমরা কুপথ ছাড়া সুপথ কখনও অবলম্বন করতে পারি না! শুধু পারি গর্ব আর নিন্দা এবং সমালোচনা করতে। সিনেমা দেখে সন্তানের নাম রাখি নায়ক-নায়িকার নামানুসারে! অথবা কোনও সমরনায়ক- রাষ্ট্রপ্রধান- বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের আখ্যানুসারে! ভেবে দেখি না যে, কানা ছেলে সব সময় কানাই থাকবে পদ্মলোচন রাখলেই বা কি, না রাখলেই বা কি। তার চেয়ে কানাই মন্দ কি! নিজের স্বতন্ত্র একটা পরিচয় ত আছে। আমরা উত্তমকে সব সময় অধম মনে করি! কারণ, বেজাল আমাদেরকে এমনভাবে গ্রাস করেছে, আসলকে চিহ্নিত করা কঠিন। মিথ্যার মোহিতশক্তি সব সময় বেশি!

আরও কিছু বলতে হয় সে ভদ্রবেশি গোঁয়ারসম্বন্ধে- তার বিবেকাত্মা এতই খাটো হয়ে গেল যে, তার কি একবারও দেখার অথবা ভাবার উচিৎ হয় না? ‘আমি গাড়িটা রাখছি কোথায় এবং ওই গাড়িটা- হোকবা ক্ষুদ্র, কীভাবে যে বের হয়। আমি ত চলে যাচ্ছি আমার আয়াসখানায় : কখন যে ফিরি তার হদিস আমার কাছেও জানা নেই বা থাকলেও- এ বেচারা তো যেকোন মুহূর্তে আসতে পারে এবং যেতে হবে তাকে- তা হলে তার জন্যে একটু সুযোগ কেন রেখে যাই না।’ একটু চিন্তা করলে ক্ষতিটা কোথায়? এসব চিন্তাভাবনায় তো আর অর্থকড়ি ব্যয়ের সম্ভাবনা নেই। এমন সচেতন নাগরিকের আশা কি এদেশ কখনও করতে পারে না? অবশ্যই পারে, তার জন্যে কড়া আইন প্রয়োগ করতে হবে। ভাবা যাক্‌, এমন আইনের কঠোর প্রয়োগ যদি এদেশে বলবৎ থাকত, তা হলে এখন অবৈধপার্ক করা গাড়িমালিকের কিংবা তার গাড়ির পরিণতি কেমন হত? ইউরোপে যখন একজন নগরপিতা খোদ এমনই এক অবৈধপার্ক করা গাড়িকে সাজা দেয়, তখন ওই গাড়িমালিকের অপমান- মৃত্যুদণ্ডসমান। এস্থানে কিন্তু আমাদের কোনও অপমান নেই! আছে বললে যা বলতে হয় : তা হিংসাবিদ্বেষ। বহির্দেশে প্রত্যেক নাগরিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; তারা এমন কোনও কাজ করবে না, যা আইনের নথিবহির্ভূত।
আর আমাদের দেশের মানুষচলাচলের সামান্য ফুটপাত পর্যন্ত দখলে নিয়েছে নবাবদের এসব গাড়ি! পথচারী অসতর্ক হলে টোকর খেয়ে পড়ছে নালানর্দমায়- ভাঙছে হাত-পা- নাহয় তো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পাচ্ছে আঘাত! পথচারী ভাঙুক অথবা মরুক সাহেবদের গাড়ি ঠিক থাকা চায়! তাতে যদি একটু আঁচড় লাগে তা হলে সাহেবের মহা ক্ষতি হয়- তাই পথিকগণ নিজের অঙ্গহানি করেও সাহেবদের এসব গাড়ি বাঁচাতে হয়। তা নাহলে সাহেবদের দন্ততলে চর্বন হতে রক্ষে কে।

দিন দিন মানুষ যেহারে শহরমুখী হচ্ছে- কেউ জীবনের তাগিদে, কেউ জীবিকার তাগিদে, কেউ ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষিতের মাধ্যমে পূর্ণরূপে মানুষ গড়ার তাগিদে; একেকজনের উদ্দেশ্য একেক- কেউ সফল হচ্ছে তো কেউ বিফল। এককালে মানুষ গ্রামগঞ্জের প্রতি মুগ্ধ ছিল; কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, যুগের সঙ্গে সঙ্গে মানুষেরও মনমানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। দিন যতই অগ্রসর হচ্ছে ততই পৃথিবীরীতিরূপের সঙ্গে সঙ্গে মানুষেরও মনের রূপ পাল্টে যাচ্ছে! গ্রামের মানুষজনকে আর সহজ-সরল-বোকা ভাবার কোনও সুযোগ নেই। আজকাল দেখা যাচ্ছে, গ্রামের লোকেরাই বেশির ভাগ দেশবিদেশ ভ্রমণ করছে- অনেক কিছু দেখছে- অনেক কিছু অর্জন করতে পারছে- হোক বা অশিক্ষিত- অল্পশিক্ষিত। বহুদেশ ভ্রমণকারী একজন মানুষ যত বেশি অভিজ্ঞ : অপরজন স্বস্থানে অবস্থানকারী সুশিক্ষিত ব্যক্তি তত বেশি অভিজ্ঞ নয়। জন্ম থেকে যেই নয়ন বাইরের আলো দেখে নি, সেই নয়ন অন্ধই বটে; আর যে অন্ধজন বিশ্বভ্রমণ করতে পেরেছে, সেজন জ্ঞানরাজ্যের দর্শন পেয়েছে। স্বহস্তে করা এবং পরহস্তে করার মধ্যে যেমন একটা তফাৎ থাকবে, তেমনই প্রত্যক্ষদর্শন আর পরোক্ষদর্শনের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ সব সময় থাকবে।

আমরা সকলই সুনাগরিক : দেশপ্রেমিক- কিন্তু এ নাগরিকত্বের দায়িত্ববোধটা কয়জনের ভিতর বিদ্যমান? হাজারগনা দুয়েকজনের মধ্যে পাওয়া যায় কিনা সংশয় আছে! রাষ্ট্রকর্তা হতে একজন চাপরাশি পর্যন্ত যেদেশের মানুষ নিজস্বার্থের বাইরে এক পা বাড়ায় না, সেদেশ আর কতইবা উন্নত হতে পারে! একজন মানুষের মৃত্যুদুর্ঘটনা নিয়ে যেদেশের জনগণ গাড়ি-বাড়ি-ট্রেনে অগ্নিসংযোজন করতে পারে, সেদেশের জনগণ কতই আর নিজস্বার্থ ত্যাগ করতে পারে! একজন মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত নিজজ্ঞানের কাছে অক্ষম, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে পৃথিবীর কোনও জ্ঞানবান পণ্ডিত জ্ঞান দিতে পারে না। স্বীয় রাষ্ট্রসম্পদকে যে নাগরিক নিজের বলে গণ্য করবে না, ততক্ষণাবধি সে নাগরিক নাগরিকত্বের পূর্ণাধিকারিত্ব দাবি করতে পারে না। আমি ভ্রাতাহত্যার অথবা মৃত্যুদুর্ঘটনার রোষানলে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে বিশ্ব যদিওবা দহন করি, আমার ভ্রাতা ফিরে আসবে কি? এই যে রাষ্ট্রসম্পদগুলোর বিনষ্ট করছি আমরা! এ সম্পদগুলো কার? নিশ্চয় তোমার আমার : সমস্ত জনগণের। কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের একার সম্পদ নয় এই। যে রাষ্ট্রসম্পদের বিনাশ করে, নিঃসন্দেহে সে তার নিজসম্পদের অপচয় করে। তাদের প্রতি কি প্রশ্ন করব, না আশ্চর্যবোধ প্রকাশ করব; আমার বুদ্ধিতে কুলোয় না আর!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Azaha Sultan লুৎফুল বারি পান্না, আনিসুর রহমান জুতি ভাই ও নিরব অসংখ্য ধন্যবাদসহকারে অষেশ আন্তরিকতা এবং যারা এ লেখাটি কষ্ট করে পড়েছে তাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে অনেক অনেক ধন্যবাদ......
নিরব নিশাচর দাদা , আপনার গল্প না পরে তো মাস শেষ করতে পারব না তাই ফিরে এলাম... বিবেক্তারে নারা দিয়ে গেল আপনার গল্প... আমাদেরকে আরো বৃহত পরিসরে চিন্তা করার মানুষিকতা অর্জন করতে হবে... চমত্কার গল্প এবং গল্পের বুনন...
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।আসলেই তো এই সব খুটি নাটি বিষয় গুলো দিয়েও দেশপ্রেমিক হওয়া সম্ভব। আমরা যে যার অবস্থানে থেকে যদি সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি তবেতো দেশ প্রেম অনেকটাই এগিয়ে যায়। ধন্যবাদ আযাহা আপনাকে.........প্রাপ্যটা দিয়ে দিলাম।
Lutful Bari Panna এমন লেখা খুব প্রয়োজন কিন্তু মানুষ কি সতর্ক হবে?
Azaha Sultan হালিম ভাই, সূর্য, সুমি বোন, প্রজাপতিমন, মেহদী ও খোরশেদ ভাই আপনাদের কমেন্ট পড়ে আমি আবেগাপ্লুত......সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এবং আন্তরিকতা......
খোরশেদুল আলম আমাদের ব্যস্ত নগর জীবন, দেশের আইন, ব্যক্তি জীবনের অনেক ঘ্টনা তুলেধরেছেন আপনার লেখা ! গল্পে। ধনীগরীবের ব্যাপার তো আছেই আমাদের সমাজে। আমরা প্রত্যেকেই যেন দেশপ্রেমিক হিসাবে পরিচয় দেই। ভালো লাগলো দাদার গল্প। ধন্যবাদ।
মেহদী অনেক সুন্দর লাগলো আপনার গল্প
প্রজাপতি মন ভাল লাগলো। বিবেককে নাড়া দেওয়ার ,মত লেখা।
সুমননাহার (সুমি ) অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া সুভকামনা রইলো আমি ভালো আছি আপনি কেমন আছেন ? আপনার কথা অনেক মনে পরে নিজের শরীরের প্রতি খিয়াল রাকবেন আমার জন্য দওয়া করবেন
সূর্য বেশি কথা বলার প্রয়োজন নেই, গল্পের আচ্ছাদনে সত্যগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন দাদা। অনেক ভাল হয়েছে।

০২ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪