শাস্তি

মুক্তির চেতনা (মার্চ ২০১২)

shishir ahmed
  • ১২
  • ১৪
এই মুহূর্তে রবিনের মেজাজ যথেষ্ট খারাপ । মেজাজ খারাপ এর বড় একটা কারণ আছে । তা হল ক্লাস টিচার জামাল উদ্দিন দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধাদের নিয়ে অনেক কথা বলেছেন । তাঁরা নাকি দেশ শেষ করে ফেলেছে । যদি পূর্ব পাকিস্তান থাকতো তাইলে দেশটা এখন অনেক উন্নত থাকতো । মুক্তিযুদ্ধারা নাকি কোন যুদ্ধই করে নাই । সব নাকি ইন্ডিয়া করেছে এবং দেশটাকে এখন ভোগ করে খাচ্ছে । মুক্তিযুদ্ধারা নাকি ইন্ডিয়ার দালাল । এইসব কথা শোনার পর যে কারো মেজাজ খারাপ হবার কথা । রবিন এর মেজাজ খারাপ হল দুটি কারণে । প্রথমত জামাল স্যার কে সে খুব পছন্দ করে । দ্বিতীয়ত তার বাবা একজন মুক্তিযুদ্ধা । জামাল স্যার কেন মুক্তিযুদ্ধা সম্পর্কে এমন কথা বলল রবিন ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না । স্কুল শেষে রবিন কিছুক্ষণ একা একা হাঁটল । সে ভেবে বের করলো তার বাবা কখনো ইন্ডিয়ার দালাল হতে পারেনা । জামাল স্যার ভুল বলেছেন । সে তার বাবার কাছে কত কিছু শুনেছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে । রবিনের একটি বারের জন্য মনে হইনি তার বাবা কোন ভুল বলছে । কিন্তু আজ জামাল স্যার এর কথা শুনে তার মনে একটি ঘৃণা জন্ম নিলো জামাল স্যার এর প্রতি । এই সব ভাবতে ভাবতে রবিন তার বাসায় এলো । রবিনের বাবার নাম মাহমুদ মিয়া । ছোটখাটো ধরনের মানুষ । চিন্তা ভাবনা অন্য সব মানুষ থেকে আলাদা । রবিনের মা রবিনের বাবার মতই । রবিনের সব বন্ধুরা বলে রবিনের বাবা-মা নাকি পৃথিবীর সেরা বাবা-মা । রবিনের শুনতে অনেক ভালো লাগে । কিন্তু জামাল স্যার কথাগুলা আজকে তার অনেক খারাপ লেগেছে । এই বিষয়ে অবশ্যই বাবার সাথে কথা বলতে হবে মনে মনে ভাবল । বিকালে সে খেলতে গেলো । খেলা শেষ করে বাসায় ফিরল । তার আর জামাল স্যার এর কথা মনেই রইল না । পরের দিন ছুটির দিন । রবিন অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠল । কেউ তার ঘুম ভাঙ্গাল না । অথচ তার অন্য বন্ধুরা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে এখন খুব পড়াশুনা করছে । রবিনের বাবা-মা তাকে পড়াশোনার ব্যাপারে কোন কিছু বলে না । অবশ্য রবিন খুব মেধাবী ছাত্র । কিন্তু সুমন ও মেধাবী ছাত্র সব সময় দ্বিতীয় হয় । রবিন কে পিছনে ফেলতে পারে না বলে তার বাবা মায়ের কাছে প্রতি বছর বকা খেতে হয় । রবিন জানে সে যদি কখনো প্রথম না হয়ে দশম হয় তবু তার বাবা মা তাকে কিছু বলবে না । এই জন্য এ হইত সব বন্ধুরা তার বাবা মাকে পৃথিবীর সেরা বাবা-মা বলে । রবিন ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিল অ্যা গেলো । তখন তার বাবা বলল কী খবর বাবু ? রবিনের বাবা রবিন কে বাবু বলে ডাকে । রবিন বলল
ভালই
পড়াশুনা কেমন চলছে ?
ভালো চলছে বাবা । বাবা তোমার মুক্তিযুদ্ধের গল্প বল ।
এক গল্প আর কতবার শুনবি ।
তোমাকে বলতে বলছি বল ।
রবিনের বাবা গল্প বলা শুরু করলেন । রবিন মুগ্ধ শ্রোতা ।
আমার বয়স তখন ১৮ । পড়াশোনা করতে ভালো লাগেনা । আড্ডা দিয়ে সময় কাটায় । তখন আমাদের পাড়ায় আসলেন শাফিক ভাই । ইউনিভার্সিটি তে পরেন । অনেক ভালো মানুষ । আমি অনেক তাড়াতাড়ি তাঁর ভক্ত হয়ে গেলাম । শাফিক ভাই এর কাছে জানতে পারলাম ১৯৭০ সালের সাধারন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জাতীয় পরিষদে ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে বিজয়ী হাওয়া সত্ত্বেও তখন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার ঘটন করতে দিচ্ছে না । বরং ষড়যন্ত্র করছে । উনি বলতেন আমরা যুদ্ধ করে ওদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাবো । আমাদের একটা নুতন দেশ হবে । ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন । ২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তানীরা রাতের আঁধারে শুরু করলো নির্মম অত্যাচার । আমি দিশেহারা হয়ে শাফিক ভাই এর কাছে ছুটে গেলাম । শাফিক ভাই বলল সময় নাই । আমাদের যুদ্ধে নামতে হবে । আমি বললাম আমিও যাবো । শাফিক ভাই একটা হাসি দিলেন । বললেন তুমি অনেক ছোট তুমি কি পারবে ? অবশ্যই । আমার কথা আশ্বস্ত হয়ে শাফিক ভাই আমাকে সাথে নিলেন । শুরু হল নুতন জীবন । শাফিক ভাই এর সাথে আমি অনেকগুলো অপারেশন এ ছিলাম । তাঁর সাহস দেখে আমি বারবার বলেছি সাবাস বাঘের বাচ্চা । ১০ ই জুন আমাদের একটি অপারেশান আছে । অনেক কঠিন একটা কাজ । পাকিস্তানি হানাদার বাহিনির একটা লঞ্চ আমরা উড়িয়ে দিবো । আমাদের বর্তমান অবস্থান ভৈরব এ । মেঘনা নদীতে অপারেশান টা হবে । শাফিক ভাই আমাদের সব কিছু বুঝিয়ে দিলেন । সন্ধ্যা সময় শুরু হল তমুল গোলাগুলি । যখন আমরা প্রায় ওদের সবাইকে শেষ করে দিয়েছি তখন একটা গুলি এসে লাগলো শাফিক ভাই এর বুকে । শাফিক ভাই আমার কাঁদে মাথা রেখে শহীদ হলেন । রবিন অবাক হল কারণ তার বাবা কাঁদছে । তখনই তার জামাল স্যার এর কথা মনে হল । রবিন সব কিছু গুছিয়ে তার বাবাকে বলল । তার বাবা শুনে একটা থুথু ফেলে বলল । ঐ হারামির বাচ্চার জন্য আমার আজ এক পা নাই । মানে ? রবিন কিছুই বুঝল না । রবিনের বাবা বলল । উনি তাঁর মায়ের সাথে দেখা করতে এসে জামাল রাজাকার এর কারণে পাকিস্থানিদের হাতে ধরা পরেছিলেন । অনেক নির্যাতন করে শেষ পর্যন্ত গুলি করে মেরে ফেলার জন্য । তাঁর পায়েগুলি লাগে কিন্তু উনি বেঁচে যান । রবিনের কাছে এখন সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যায় । জামাল স্যার আসলে একজন রাজাকার ছিলে । কিন্তু স্বাধীনতার এতো পরেও জামাল স্যার এর বিচার হইনি কেন ? রবিন এর প্রশ্ন । কিন্তু মাহমুদ মিয়া চুপ করে রইলেন । তিনি তার ছেলের চোখে যেই আগুন দেখতে পাচ্ছেন সেই আগুন দেখেছিলেন শাফিক নামক এক সাহসী লোকের চোখে । মাহমুদ মিয়া জানে জামাল রাজাকার এর এখন শাস্তি হবেই তাঁর ছেলেই সব কিছু করবে । কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে অনেকে জামাল আছে তাদের শাস্তি কে দিবে ? তিনি নিজেই উত্তর দিলেন আরও অনেক শাফিক জন্ম নিবে । বাঙ্গালি জাতি হারতে জানে না ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক নতুন প্রজন্মের শানিত অংগীকার...অনেক ভালো লেগেছে...
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ গল্পের থিমটা বেশ পরিপাটী ও গোছানো। বলার ধরনটাও চমৎকার। জন্ম নিক লক্ষকোটি শফিক। আলোর বন্যায় ভাসুক আমার দেশ। শুভকামনা শিশির আহমেদ।
আহমেদ সাবের সুন্দর কাহিনী। তবে, গল্প হিসাবে গোছালো ভাবটা আসেনি। বক্তব্য নিয়ে দুটো কথা বলবো। কেউ কেউ বলেন স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে কথা বললে নাকি আমাদের জাতীয় ঐক্য নষ্ট হবে। আমি একটু দ্বিধায় আছি। দু-চারজন স্বাধীনতা বিরোধী কেমন করে এত শক্তিশালী হল যে, তাদের জন্য সারা দেশের মানুষ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাবে? আমাদের দেশের মুক্তির জন্য যারা সর্বস্ব হারিয়েছেন, তাদের প্রতি যদি আমাদের সত্যিকার ভালবাসা থাকত, তা হলে বোধ হয় উল্টোটাই হত।
আসলে আমি কখনো গল্প লিখি নাই আগে । তাই কিছুটা অগোছালো । আসলে আমাদের দেশে রাজনীতি হল দূষিত রাজনীতি । আমি ফেসবুক নামক একটা সামাজিক সাইট এ দেখেছি শতকরা ৯০% এর প্রোফাইল এ আছে তারা রাজনীতি ঘৃণা করে এবং বাস্তব জীবনেও তাই । এইভাবে গনতান্ত্রিক দেশ ক্রমেই রাজাতান্ত্রিক দেশ পরিনত হয়ে যাচ্ছে হইত গেছে । এখানে কেউ আছেন বাবার হত্যার বিচার নিয়ে কেউ আছেন স্বাধীনতা ঘোষক স্বামী নিয়ে । এখন সবাই যদি নিজেদের চিন্তাই মগ্ন থাকে তাইলে দু-চারজন স্বাধীনতা বিরোধী দু-চার কোটি হয়ে যাবে । আর আমরা জনগণ শুধু দেখবো...
মারুফ মুস্তাফা আযাদ ভায়া শিশির;/ শাস্তিদাতা হও তুমি, একাত্তরের দোষীর...
এইটাই আমার প্রতিবাদের ভাষা ।
মাহবুব খান ভালো লাগলো
অনেক ধন্যবাদ ভাই ।
আনিসুর রহমান মানিক ভালো লাগলো /
অনেক ধন্যবাদ ভাই ।
Abu Umar Saifullah ভালো লাগার মত
অনেক ধন্যবাদ ভাই ।
শাহ আকরাম রিয়াদ ভালো লাগলো..........বাঙ্গালি জাতি হারতে জানে না ।
ধন্যবাদ ভাই । আমরা হারতে শিখিনী ।
Lutful Bari Panna সাম্প্রতিক প্রেক্সাপটে অনেক আবেগী একটা গল্প।
অনেক ধন্যবাদ ভাই ।
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# ভালো হয়েছে, অনেক আবেগ দিয়ে লেখা।
অনেক ধন্যবাদ ভাই ।

০১ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪