ভালবাসা খালিস্থান পুরন করে

বন্ধু (জুলাই ২০১১)

মোঃ আনিসুর রহমান
  • ২৩
  • 0
দেশ স্বাধীন হয়েছে, চারিদিকে সাজসাজ রব। আমিও আনন্দিত কিন্তু বাড়িতে আনন্দ করতে পারিনি কারণ মা প্রায় বড় ভাই এর জন্য কান্না কাটি করত। আমার বড় ভাইকে, মেজো মামাকে এবং আর একজন মামার পরিচিত মানুষকে পাকবাহানিরা ধরে নিয়ে যায় এবং মেরেফেলে। কয়েক বছর পর একদিন ছোট মামার বাড়িতে এক পরিবার কে দেখলাম এবং জানতে পারলাম এই মহিলার স্বামী রাজা মিয়া যিনি মামার সাথে মারা গেছেন। এই মহিলা তার স্বামীর জায়গা বিক্রি করতে এসেছেন । মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কারণ এই জায়গাটা বিক্রি হয়ে গেলে আগামীতে এখানে হবার কথা থাকা ‘সন্ধা সিনেমা’ হলটি আর হবেনা। একদিন জানতে পারলাম অপর সিনেমা হল যেটাতে সিনেমা দেখতাম তাও ছিল রাজামিয়ার এবং সেটা এখন এক বিহারী আখতার ইমামের দখলে।
এর পর অনেক বছর চলে গেছে । আমি আর্মি অফিসার হয়ে একদিন ট্রেনে চড়ে যাচ্ছি। এক জনের সাথে কথা হতে হতে জানতে পারলাম তিনি রাজামিয়ার ছেলে নাম কচি ভাই। মনে পড়ল আমার শৈশবের অনেক কথা। আমার মা ইতিমধ্যে মারা গেছেন। তাই আমার মনে হলো রাজামিয়ার স্ত্রীর সাথে দেখা করা খুবই উচিত। তিনিও নিশ্চই আমার ছেলে হারা মায়ের মত দুঃখী স্বামী হারিয়ে৷ কচি ভাইয়ের সাথে তাদের বাড়ি গেলাম। একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দিল। কচি ভাই পরিচয় করিয়ে দিল এই মেয়েটি তার এক মাত্র বোন৷ আমার মনে পড়ল মামার বাড়িতে দেখা অতীতের সেই মহিলাটির কথা এবং এই মেয়েটির কথা যাকে তার মায়ের কলে দেখেছিলাম। এই মেয়েটিকে দেখে মনটা হটাৎ মায়ায় ভরে গেল। ছয় ভায়ের এক বোন বাবার কতই না আদরের ছিল। আথচ আজ এই মেয়েটির তথা পরিবারের কি এক করুন অবস্থা। এটাই কি প্রাপ্য ছিলো তাদের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার, রাজাকারদের পক্ষে না যাওয়ার। মনটা আরো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল যখন তার মায়ের সাথে কথা হলো, অনেক না জানা তত্ত্ব জানা হলো। আমার মায়ের কথা আমার ভাইয়ের কথা মনে পরছিল।
আমি সিধান্ত নিলাম আমার কিছু করা দরকার। এরপর আমি খুজে বেড় করেছি সেই সব রাজাকারদের যারা আমার ভাই সহ অনেক স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা করেছে, সেই বিহারি যে রাজামিয়ার একটা সিনেমা হল দখল করেছে এবং অন্ন্যটি বিক্রি করতে বাধ্য করেছে।আমি তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারিনি রাজনৈতিক কারনে যদিও আমি ছিলাম তখন একজন আর্মি অফিসার। আমি অনেকবার সেই বাড়িতে গিয়েছি এবং সেই মলিন মুখের মেয়েটিকে বারবার দেখেছি। এক সময় তার মনটা কিছুটা ভালো করার জন্য দিনের‌‌‌ পর দিন অনেক অনেক গল্প করি। তার এবং আমার সকল ছোট ছোট দুঃখ গুলো আমরা নিজেদের মাঝে শেয়ার করতে থাকি।
চাকরির কারনে সাড়া দেশ জুড়ে ঘুরতে থাকতাম। তবে যেখানেই‌‌ থাকতাম তার মলিন মুখটা সারাক্ষনই আমার সামনে ভেসে উঠতো। সেনাবাহিনীর চাকরির কারণে ছুটি খুবই কম পেতাম তার পরও ছুটি পেলেই ছুটে যেতাম তাদের বাড়িতে। তখন মোবাইল ছিলনা তবু টেলিফোনে রাতের পর রাত কথা হতে থাকে। ছায়া ছবির গল্প,উপন্যাসের কাহানী এবং আমার আর্মি জীবনের নানা ঘটনাই ছিল আমাদের আলোচ্য বিষয়। আমার আর্মি জীবনের প্রতি তার আগ্রহ ছিল একটু বেশী। আর আমার আর্মি জীবনের আগে আমি লেখাপড়া করেছি ক্যাডেট কলেজে, যা ছিল অনেকটা আর্মি জীবনের মতই। এর সুবাদে আমার গল্পের মাত্রা একটু বেশীই ছিল। আমার গল্পের সে ছিল খুব ভালো শ্রোতা। বলা যায় নির্বাক শ্রোতা তবে মাঝে মাঝে তার রিনিঝিনি হাসিটা শুনাই ছিল আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
হাসির মাত্রা একটু করে বাড়তে থাকে আর একটু একটু করে কবে যেন আমরা একে অপরকে ভালোবাসতে শুরু করি। একদিন তাকে‌ বাইরে পার্কে দেখা করতে বলি । ‌‌‌অনেক‌ ভয়ে ভয়ে কলেজের‌ কথা‌ বলে ‌তাও‌ আবার ছোট‌‌‌ ভাইকে নিয়ে আসতে সে রাজি হয়।তবে পার্কে নয়, আসবে একটি চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে।নব্বই সালের দিকে ঢাকার বাইরের শহর গুলোতে তেমন ফুলের তোড়া পাওয়া যেতোনা। কোথা থেকে যে এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল পাই সে চিন্তাই রাতে ঘুম হচ্ছিল না। সকাল হতেই দৌড় দিলাম বাজারে কিন্তু কোথাও ফুল পেলাম না। কয়েকটা বাসা বাড়ীতেও গেলাম কিন্তু সেখানেও ফুল জুটলো না। বেলা এগারটাই সে এসে যাবে, সময় বাকি আর মাত্র ত্রিশ মিনিট, কি করি বুজতে পারছিলাম না।
অবশেষে মিউজিয়ামের বাগানে গিয়ে মালিকে সত্যি কথাটা বলেই ফেললাম, নিজের পরিচয়টাও দিলাম। উনি কিচ্ছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে বললো স্যার নেন বলে একটা লাল বড় গোলাপ এগিয়ে দিল। ঐ একটা গোলাপ দিয়েছে তাতেই ধন্যবাদ দিয়ে দৌড় দিলাম। কারন ততক্ষণে এগারটা বেজে গেছে। চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের সামনে পৌছে দেখি কেউ নাই, কিছুটা স্বস্তি পেলাম। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে রেষ্টুরেন্টের ভিতরে খোঁজ নিলাম, না আসেনি। এবার শুরু অপেক্ষার পালা, বিশ পঁচিশ সময় যাচ্ছিলনা। বেলা তখন বারটা পার হয়েছে, ছায়া দেখা গেল, মনটা আন্ন্দে ভরে উঠলো। রেষ্টুরেন্টের আলো আধাঁরি পরিবেশে এত কাছ থেকে তাকে দেখতে অন্ন্য রকম লাগছিলো।খাবার খেয়েই তার ভাই চলে গেল। এখন আমরা টুনাটুনি, এই প্রথম তাকে নিয়ে বাইরে এসেছি, অথচ মনে হচ্ছিল অনেক দিনের অনেক পরিচিত আপন একটি মানুষ আমার পাশে বসে আছে।এবার শপথ নেবার পালা। কি বলবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। অনেক কথা হলেও বলা হলো না, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমার ছুটি শেষে আবার চাকরিতে যোগ দিলাম। কিন্তু চাকরিতে তখন আর মন বসছিলনা, তার কথা, তার চেহারা, তার হাসি তার সব কিছুই সারাক্ষন মনে পরছিল। দিনে অফিসে কথা বলার সুযোগ হতনা তাইতো সারা রাত চুটিয়ে কথা চলতো। ঐ রাত ছিল তার এবং আমার। ভালো্বাসা না দেখা না ছুয়া এক অদৃশ্য শক্তি। মনটা কেন যেন কোথায় পড়ে ছিল। কি করলে ভাল লাগবে সেটা বুজতে পারলেও ছুটি না পাওয়াই তার সাথে দেখা করতে পারছিলাম না। সপ্তাহান্তে একটা সুযোগ নিয়ে নিলাম তাকে একটু অবাক করতে। যা কথা তাই কাজ। মটরসাইকেল যোগে ছুটলাম তাদের বাসাতে। এই ভাবে বছর চলে যায়, মেয়ের সাথে সাথে তার মায়েরও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হই। ইদানিং বৈঠক খানাতেই গল্প চলে,ভালবাসা বাসি ভাগাভাগি করতে সাহস পাই। এবার বলেই ফেললাম তাকে বিয়ে করতে চাই।
বিষয়টা পরিবারের পক্ষ থেকে আসা উচিত বলে মনে হলেও মা না থাকাই কাজটা সহজ হচ্ছিল না। আমি আমার বড় আপাকে বিষয়টা বলি এবং তার মায়ের কাছে প্রস্তাব দিতে বলি। সব আনুষ্টানিকতা শেষ হয়, আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। এর পরের দিন গুলো আরো কাছের আরো ভালবাসার মাঝ দিয়ে যায়। ভালবাসার পুর্নতা যে বেয়ের মধ্যে দিয়ে তা খুব ভাল ভাবেই বুজতে পারি। তার সেই মলিন মুখ খানা এখন আনন্দে উজ্জল হয়ে ছিল। কিন্তু সে আনন্দ আমাদের বেশি দিন থাকলো না। আমি মানবতার কাজে জাতি সংঘ শান্তি বাহিনীতে যোগ দিয়ে চলে যাই রুয়ান্ডা। সেখানে প্রথমটা ভাল থাকলেও কিছু দিনের মধ্যেই যুদ্ধের মধ্যে পরি। আমার স্ত্রীর কান্না আর দোয়াই আমি আপন ঘরে ফিরে আসি। এবার বুজতে পারি ভালবাসা কেমন করে কাছে টানে। ভালবাসা সৃষ্টি করে ভালবাসার শ্রেষ্ট উপহার সন্তান। যারা চলে গেছে তাদের স্থান পুরন করে এই সে ভালবাসা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Akther Hossain (আকাশ) অতনজিবনী মূলক কাহিনী ভালো লাগলো !
শাহ্‌নাজ আক্তার একটি মিষ্টি সত্যি কাহিনী আমাদের কে বলার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ |
মোঃ আক্তারুজ্জামান অনেক ভালো লাগলো তাই অনেক অনেক শুভ কামনা|
নুসরাত শামান্তা খুবভালো লাগলো।
মিজানুর রহমান রানা ভালবাসা সৃষ্টি করে ভালবাসার শ্রেষ্ট উপহার সন্তান। যারা চলে গেছে তাদের স্থান পুরন করে এই সে ভালবাসা।---খুব সুন্দর----খুব ভালো লাগলো |
সেলিনা ইসলাম গল্পের মাঝে ভালবাসার ছোয়াটাই বেশি পেলাম । বন্ধুত্বের যে সংজ্ঞা তা গল্পে অনুপস্থিত তবে ভাল লেগেছে যদিও কয়েকটা যায়গায় একটু ঘটকার স্রষ্টি করেছে । যেমন সিনেমা হলের ব্যাপারটা অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে । সব কিছু মিলিয়ে ভাল লিখেছেন ।ধন্যবাদ
এমদাদ হোসেন নয়ন Jebon kahinita beson sundar lekhachan. Bhalo laglo.
প্রজাপতি মন ভালো লাগল আপনার আত্মকাহিনী পড়ে, তবে এখানে বন্ধুত্বের তেমন কোনো ছায়া দেখলাম না, যা দেখলাম তা ভালবাসা. শুভকামনা আপনাদের জন্য.

০১ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪