শাড়ী.........

শাড়ী (সেপ্টেম্বর ২০১২)

এই মেঘ এই রোদ্দুর
  • ২২
ভালবেসে বিয়ে করেছিল অন্বেষা আর আরিফ । তাদের কথা নিয়েই আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা । যদিও আমি কখনো গল্প লিখি নাই । ভুল ত্রুটি মার্জনীয় ।
==========================================

-এই শুন আজ আমাদের অফিসের একটা পার্টি আছে সন্ধ্যায় । তুমি রেডি থেকো। আমি সন্ধ্যায় এসে তোমাকে নিয়ে যাব ।

-ঠিক আছে । কি পড়ে যাব? থ্রি পিচ না শাড়ী ?

-শাড়ী পড় । শাড়ীতেই তোমাকে বেশী ভাল লাগে

-ঠিক আছে

কথাগুলো বলে আরিফ চলে গেল অফিসে ।

সারাদিন বাসার রান্নাবান্নার কাজ সেরে সন্ধ্যায় অন্বেষা আলমারি খুলে শাড়ী বাছাই করতে লাগল । তার পছন্দের রং গোলাপি । তাই বেছে গোলাপি শাড়ীই সিলেক্ট করল, সাথে গোলাপি কানের দুল হাতে গোলাপি চুড়ি গলায় হালকা নীল অর্নামেন্ট। আয়নায় নিজেকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল অন্বেষা। আহ কি ভাল লাগছে তাকে। নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ ।

যথারীতি আরিফ সন্ধ্যায় অফিস হতে এসে অন্বেষাকে নিয়ে অফিস পার্টিতে গেল ।

চোখ ধাঁধানো আলোয় অন্বেষার চোখ ধাঁধিয়ে গেল । জমকালো অনুষ্ঠানে সে এই প্রথম এসেছে ।

ভিতরে ঢুকতেই আরিফের বন্ধুরা তাদেরকে ঘিরে দাঁড়াল ।

-শালা এতদিন বউরে লুকিয়ে রাখছিলি ক্যান?
-না তেমন কোন অকেশনে যাওয়া হয়নি তো তাই
অন্য এক বন্ধু বলল
-দোস্ত তো বউ তো দারুণ সুন্দরী রে ।
আর একজন বলল
-শাড়ীতে ভাবীকে যে অপ্সরা লাগছে । ওফ দারুণ লাগছে ভাবী আপনাকে । আপনাদের বাসায় কিন্তু বার বার হানা দিব । চা খাওয়াতে হবে কিন্তু ।
-জি । অবশ্যই আসবেন ।

সবাই অন্বেষার রূপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, এসব শুনে আরিফের মাথায় আগুন ধরে গেল। কোনমতে বন্ধুদের এড়িয়ে কাউকে কিছু না বলেই অন্বেষার হাত ধরে টানতে টানতে বাসায় ফিরে এলো ।

-কি ব্যাপার, এভাবে হটাৎ চলে আসলে যে?

-আসব না । যে রূপ নিয়ে জন্মেছ সবাই যে গিলে ফেলবে । কেন এত রূপ তোমার? খবরদার আর কোনদিন তুমি শাড়ী পড়বে না । জামা-ই পড়বে তুমি ।

-অযথাই রাগছ কিন্তু । আর আমার রূপ আছে এটা কি আমার দোষ?
-হ্যাঁ, এটাই তোমার দোষ । যাও চোখের সামনে থেকে যাও । যাও বলছি । রাগে গড় গড় করতে থাকে আরিফ ।

অন্বেষা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল টেরই পায়নি অন্বেষা । ঘুমের মধ্যেই সে চলে গেল আগের দিনগুলোতে।
অন্বেষা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে । লম্বা ৫.৪ ইঞ্চি । সবদিক দিয়েই তাকে সুন্দরী বলা চলে । পড়াশুনার পাশাপাশি একটা চাকুরীও পেয়ে যায় । কল সেন্টারে তার চাকুরী হয় । লম্বা আর সুন্দরী হওয়াতে অনায়াসেই সে চাকুরী পেয়ে যায় ।

কল সেন্টারে চাকুরী করার সময় আরিফের সাথে পরিচয় । একদিন আরিফই ফোন করেছিল কল সেন্টারে তার মোবাইল সেবা চেয়ে । প্রথম

কথোপকথনেই ভাল লেগে যায় অন্বেষার কণ্ঠস্বর । এভাবেই দিনের পর দিন কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে প্রেম হয়ে যায়। এমনি একদিন তারা ঠিক করল দেখা করবে । কেউ কাউকেই দেখেনি । ফোন করেই তারা জায়গা ঠিক করে নিল ধানমণ্ডির একটা রেস্টুরেন্টে ।

অন্বেষা ফোন করে বলে দিল যে তার পরনে থাকবে গোলাপি শাড়ী, হাতে গোলাপি গোলাপ ।

আর আরিফের পরনে থাকবে নীল টিশার্ট, আর হাতে লাল গোলাপ ।

যথাসময়ের আগেই অন্বেষা পৌঁছে গেল সেখানে ।

আরিফ পৌঁছল ২০ মিনিট পর। অপেক্ষা যে কি জিনিস অন্বেষা এখন বুঝতে পারছে। ঘড়ির প্রতিটা মিনিট অন্বেষার কাছে মনে হচ্ছে এক একটা বছর। অন্বেষার সামনে একটা ছেলে এসে বলছে তুমি কি অন্বেষা। অনেকটা বিরক্ত হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখে আরে ও যে আরিফ। অনেক্ষন চেয়ে চেয়ে দেখল আর ভাবল সে যা ভেবেছিল তার চেয়েও অনেক স্মার্ট আরিফ। অন্বেষা ভাবছে আরিফ যেন তাকে নিয়ে কি ভাবছে?

আরিফ হালকা খাবারের অর্ডার দিল। খেতে খেতে তাদের ভাললাগা আর মন্দ লাগা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হল। দেখা হওয়ার পর আরিফই অন্বেষাকে বাসায় পৌছিয়ে দিল ।

এভাবেই সময় গড়িয়ে তাদের বিয়ের ক্ষণ ঠিক হল । দুই পরিবারের মতেই তাদের বিয়ে হয়ে গেল ।

-এই শোন । তুমি কিন্তু সব সময় শাড়ী পড়েই আমার সামনে থাকবে।
-আচ্ছা । শাড়ীই পড়ব ।

এভাবেই কয়েকমাস তাদের আনন্দে কেটে যায় ।

একদিন আরিফ বলল শোন তোমার আর চাকরি করার দরকার নেই। মা বাবা তোমার চাকরিকে ভাল চোখে দেখছেন না আর তা ছাড়া আমি তো বেশ কামাচ্ছি। আমাদের সংসার ভালই চলে যাবে। তুমি বাসায় মা, বাবা আর ঘর-সংসারের দিকে খেয়াল রাখ। এখন থেকেই ঘর গুছিয়ে নাও নিজের মত করে। অন্বেষা বুঝতে পারল না আরিফ কেন তাকে চাকরি ছাড়তে বলল। যাক অবশেষে আরিফের কথা রাখে অন্বেষা, চাকরিটা ছেড়েই দিল।

অন্বেষার এখন সময় কাটে ঘরে বসে । শাশুড়ি ননদের যাচ্ছেতাই ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে তার দিনগুলো কেটে যায় ।

আরিফ সারাদনি শেষে রাতে বাসায় ফিরে । তখন আর কোন কিছুই বলার সময় থাকে না অন্বেষার।

সপ্তাহে একটা দিন ছুটি থাকে আরিফের কিন্তু সেই দিন আরিফ নিজেকে আর তার বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কেন জানি আরিফের অন্বেষা প্রতি নজর দিচ্ছে না। অনেক কষ্ট হয় এসব কথা মনে করে অন্বেষা তবুও নীরবেই সহ্য করতে থাকে সব কিছু ।

অন্বেষা ভাবতেই পারেনি বিয়ের পর আরিফ এভাবে পাল্টে যাবে। অন্বেষার এখন মনে হয় আরিফ তাকে ভালবাসেনি তার সাথে রাত কাটানোর সঙ্গী হয়েছে মাত্র। ছি ছি নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকে অন্বেষা ।

ঘুম ভেঙে গেল আরিফের দরজায় ধাক্কার ফলে
-কি হল । রাতে কি আমি খাব না?
-হুম । আসছি
-তোমার কি কোন কান্ড জ্ঞান নেই । এত রাত পর্যন্ত খাইনি তা কি তুমি জান না । আশ্চর্য ।
-সরি । চোখ লেগে গিয়েছিল ।
-এখন কত বাহানা খুজতেছো। আচ্ছা তোমার এত রূপ কেন? পুরুষদের মাথা খারাপ করা মেয়ে ।
-আরিফ, মুখ সামলে কথা বল
-বলব না, কি করবে তুমি?
-সহ্যের একটা সীমা আছে । এত রাতে চেঁচামেচি করোনা প্লিজ। যাও খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
-করব, একশবার করব । আজ তোমার সব রূপ পুড়িয়ে শেষ করে দিব ।
-আরিফ আমাকে আর তোমার সহ্য না হলে আমাকে তালাক দিয়ে দাও
-হ তালাক দিমু আর তুমি নতুন নাগর নিয়া ঘুরবা।
-ছি আরিফ, তোমার মন এত ছোট কেন? ছিহ

অন্বেষা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ।

অনেক রাত পর্যন্ত চলল তাদের ঝগড়া, শেষে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ল দুইজন ।

সকালেও না খেয়ে আরিফ অফিসে চলে গেছে ।

অন্বেষা কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না ।

আরিফ অফিসে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ননদ আর শাশুড়ি অন্বেষাকে অনেক কথা শুনাল।

নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল অন্বেষা । কিছুই করার নাই তার । কি করবে? কোথায় যাবে? কার কাছে বলবে তার করুণ কাহিনী।

এসব ভেবে ভেবে তার আলমারি খুলে শাড়ীগুলো দেখতে লাগল । আর চোখ গড়িয়ে জল পড়তে লাগল ।

আরিফ কেন এমন হল । কেন? কি দোষ তার..........

এইতো সেদিনই ফোনে আলাপকালে অন্বেষা জিজ্ঞেস করেছিল, আরিফ কেন তুমি আমাকে ভালবাস? তুমি তো আমাকে দেখনি? জানও না । কেন? বলতো
তখন আরিফ বলল- আমি জানি আমি তোমাকে কোনদিন দেখিনি, পারসনালি চিনি না, এমনকি জানিও না। তোমার সাথে আমার দেখাও হয়নি। তবুও এই অল্প কয়েকদিনের অনলি কথা বলার মাধ্যমে আমি তোমাকে অন্তত কিছুটা হলেও বুঝার চেষ্টা করেছি অথবা বুঝতে পেরেছি । আই থিংক আমি একটু বেশী ইমোশনাল। যাই হোক আমি তোমার কেউ না বা তুমিও আমার কেউ না তাও আমার তোমার সাথে কথা বলতে ভাল লাগে, কথা বলতে ইচ্ছা জাগে,

তুমি কথা না বললে মন খারাপ হয়।

আই নো আমি তোমাকে কিছুটা হলেও ফিল করি এন্ড আই ক্লিয়ারলি নো দেট ইটস কলড ওয়ান কাইন্ড অফ লাভ........

হ্যা আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি, বাট কেন ভালবাসি বা কি হিসাবে ভালবাসি অর আমি এই ভালবাসাকে কে কোন অর্থে বুঝাব সেটা আসলেই আমার জানা নেই ।

অন্বেষা আমি কি তোমাকে বুঝাতে পেরেছি ।

অন্বেষা চিন্তা করে দেখল কত গভীরতা ভালবাসার মধ্যে । কত টান তার জন্য আরিফের । আরিফের এমন কথা শুনে অন্বেষা সত্যিই মনপ্রাণ দিয়ে ভালবেসে ফেলল আরিফকে ।

বিছানায় বালিশে মাথা রেখে এসব কথা ভাবছে আর অন্বেষার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে। বুকের ভেতরটা কেমন জানি ফাকা ফাকা লাগছে। অনেক প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে মনের জানালায়। এই গল্পের শেষ কোথায় ভেবে পাচ্ছে না অন্বেষা। অন্বেষাকে কি চলে যেতে হবে আরিফ কে ছেড়ে? না এভাবেই দিনের পর দিন কষ্ট করবে আরিফের জন্য না সব কিছুর সেই আগের মত হবে .....
===============================================

ধন্যবাদ সবাইকে কষ্ট করে পড়ার জন্য


আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি গতানুগতিক দন্দপীড়ন মধ্যবিত্ত প্রেম উপাক্ষ্যান, তবে চিন্তা চেতনায় কিছুটা ভিন্নতা তো আছেই ...বেশ লাগল। ছবি আপা আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ......
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২
মোঃ আক্তারুজ্জামান সুন্দর ভাবনার গল্প সুন্দর লিখেছেন| ধন্যবাদ|
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ ভাল লাগল কথার শিল্প। ধন্যবাদ ও শুভকামনা অশেষ ।
ভালো লাগেনি ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১২
আশিক বিন রহিম GOLPO VHALO HOYCE...Sovhokamona
ভালো লাগেনি ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১২
মোহাঃ সাইদুল হক খুব সুন্দর লেগেছে গল্পটি।শুভকামনা রইলো ।
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২
জগজিৎ এই গল্পের শেষ কোথায়,,,ভালো লাগলো
পারভেজ রূপক ভাল লাগল
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২
আহমেদ সাবের খুব সুন্দর গল্প। আরিফের প্রাক-বিবাহ এবং বিবাহ পরবর্তী চারিত্রিক বিশ্লেষণ খুব চমৎকার ভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বেশ ভাল লাগল গল্প এবং আশা করব, গল্পকার গল্প লেখা ছেড়ে দেবেন না।
ভালো লাগেনি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
রোদের ছায়া সুন্দর হয়েছে গল্প লেখা , আমাদের সমাজে র এক করুন চিত্র , আরিফের মত কিছু মানুষ থাকে যারা সব কিছু খুব বেশি নিজের করে পেতে চায় .....যা আসলে সমস্যায় সৃষ্টি করে .....
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২
ম তাজিমুল ইসলাম বেশ ভাল লিখেছেন
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২

০১ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৫২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪