উপলব্ধি...

মা (মে ২০১১)

অদৃশ্য
  • ১৯
  • 0
  • ৭৬
খাবার টেবিলে ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছে তৃষা। একদম খেতে মন চাইছে না ওর।
‘কি হোল খাচ্ছ না কেন?’ মা জিজ্ঞাসা করলেন।
‘খেতে ইচ্ছা করছে না।’
‘খেতে ইচ্ছা করছে না তো এতগুলো ভাত নিলে কেন?ভাত খেয়ে শেষ কর প্রতিদিন ভাত নষ্ট করা এক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তোমার’।
‘আমি কি ইচ্ছা করে নষ্ট করি না কি?প্রতিদিন ভাত তরকারী আর ডাল খেতে আমার আর ভাল লাগে না’।
‘এই তোমার এক বাহানা হয়েছে। আমি কত কষ্ট করে রান্না করি আর প্রত্যেকদিনই এটা খাবনা সেটা খাবনা। ফাস্টফুড দেখলে তো এসব কথা মাথায় আসে না’। এবার বেশ রেগে গিয়েই মা বললেন।
মার কড়া কথা শুনে বেশ রাগ হল তৃষার। ভাতের থালা ফেলে হাত ধুয়ে ফেলল সে। তারপর চুপচাপ খাবার ঘর থেকে সামনের বারান্দায় চলে গেল।
না হয় ও প্রতিদিন একটু ভাত প্লেটে রেখে দেয় তা নিয়ে মা কেন যে এত রাগ করে বুঝতে পারে না ও।
বাইরে গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ। সামনেই একটা বাড়ি বানানোর কাজ চলছে। একটানা ইট ভাঙা আর ঢালাই এর শব্দ। তৃষাদের একতালার বারান্দার সামনেই দুই তিনজন ইট ভাঙানি মহিলা কাজ করছে। বারান্দায় বসে তাদের কাজই দেখছিল তৃষা। আসলে মার সাথে রাগ করে ওর নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছিল। এমন সময় মা এসে ওর পাশে বসলেন।
বললেন-‘আমি যা বলি তোর ভালর জন্যই তো বলি। সেটা নিয়ে এত রাগ করলে হয়। এই যে প্রতিদিন ভাত নষ্ট করিস এটা কি ভাল মা? অল্প করে খাবি কিন্তু পুরোটা খাবি আমি তো তোকে বেশী খাবার জন্য জোর করছি না’।
তৃষা কোন কথা বলছে না দেখে মা একটু পরে আবার বললেন-‘তোর যে বয়স এখন আমার সব কথাই তোর কাছে খারাপ লাগবে। যাই হোক ঠিকমত তো দুপুরের খাবার খেলি না। যদি ক্ষুধা লাগে তবে খাবার টেবিলে মাল্টা আছে কেটে খাস’।
মা চলে যাবার পর আরও কিছুক্ষণ বারান্দায় বসে থেকে যখন তৃষা ঘরে ঢুকতে যাবে তখন এক ইট ভাঙানি মহিলা বারান্দার কাছে এসে বলল-‘আফা এক গেলাস পানি দিবেন? তেষ্টায় গলাটা ফাইট্টা গেল’।
‘আচ্ছা দাঁড়ান নিয়ে আসছি’ বলে ভিতরে পানি আনতে গেল তৃষা। জগ থেকে পানি ঢালার সময় মাল্টাগুলোর দিকে চোখ পড়ায় তৃষার মনে হল ওই মহিলাকে কয়েকটা মাল্টা দেয়া যায়, বেচারি সকাল থেকে ইট ভাঙছে। মাকে বললে মাও খুশী হবে আর ওর ওপর মার রাগও কিছুটা কমবে।
যেই ভাবা সেই কাজ পানির গ্লাস আর দুটো মাল্টা সহ বারান্দায় ফিরে প্রথমে পানি খেতে দিল মহিলাকে। পানি খাওয়া শেষ করে মহিলা যখন চলে যাচ্ছিল তখন তৃষা ডেকে তার হাতে মাল্টা দুটো তুলে দিল।
কিছুক্ষণ তৃষার দিকে তাকিয়ে থেকে মহিলা জিজ্ঞাসা করল-‘আফা এই গুলা কেমনে খামু?’
‘কিভাবে খাবেন মানে? মাল্টা কিভাবে খাবেন জানেন না?’
‘আফা এই গুলা তো খালি ফলের দোকানে দেখি, খালি জানি এই গুলা বিদেশী কমলা অনেক দাম। এগুলা কি কমলার মত ছিলা খামু আফা?’
হতভম্ব হয়ে তৃষা বলে-‘না না এগুলো চার টুকরা করে কেটে খাবেন’। তারপর কৌতূহল সামলাতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে-‘আপনি সত্যিই কখনও মাল্টা খান নি?’
করুণ হাসি হেসে মহিলা বলে-‘আফা দুই বেলা ভাতই জোটেনা ঠিকমত, মাল্টা কই পামু। তয় আজকে আমার মাইয়া দুইটা অনেক খুশি হইব ওরা অনেক দিন ধইরা এই গুলা খাওনের বায়না ধরছিল’। এই বলে মহিলা আবার ইট ভাঙতে চলে গেল আর হতবাক তৃষা শূন্য দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিষণ্ন সুমন গল্পটা সুন্দর, দারুন একটা মেসেজ আছে. লিখার গতি বেশ সাবলীল, আসলে এই লিখায় সমালোচনার কোনো অবকাশ নেই. শুভকামনা রইল
শিশির সিক্ত পল্লব গল্পটা ভাল লাগলো.........অনেক সুন্দর.............ভোটও করলাম
ফাতেমা প্রমি খুব ছোট গল্প কিন্তু অনেকটা আবেগ এনে দেয়.....আসলেই তো আমরা দরিদ্রদের জীবন নিয়ে কতটুকু ভাবি??বিষয়বস্তু সুন্দর,গল্পটা ভালই....
খন্দকার নাহিদ হোসেন মেয়ে, ছোট, সুন্দর এবং হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আপনার লেখা আর অবশ্যই অন্যরকম।
sakil ভালো লেগেছে . আরো চেষ্টা করবেন ভালো লেগেছে .
মামুন ম. আজিজ বিচ্ছিন্ পরিসরের তুচ্ছ অথচ কত সত্য ঘটনা। বেশ লিখেছেন।
আবু ফয়সাল আহমেদ গল্পের মূল মেসেজটা কি?

২০ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী