পদত্যাগ
অধ্যায় ১: শেষ দিনের সূচনা
রফিক আজ অফিসে এসে মনে করছিলো, হয়তো আজ তার কর্মজীবনের সবচেয়ে কঠিন দিন হবে। দশ বছর কেটে গেছে এই কোম্পানির ছত্রছায়ায় কাজ করতে। ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা, স্বপ্ন দেখার জায়গাটা আজ তাকে ক্লান্ত করে দিয়েছে।
সকাল থেকেই অফিসে একটু অন্যরকম অবস্থা। সবাই জানে, রফিক আজ পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। কিছু সহকর্মী চোখে লজ্জা-মিশ্রিত করুণতা দেখাচ্ছিলো, আবার কেউ কেউ ছিলো নিরব শ্রদ্ধায় ভরা।
রফিকের চোখে বেঁকে উঠলো সেই প্রথম দিনটার স্মৃতি — যখন সে ঢুকেছিলো অফিসের দরজায় এক নতুন কর্মী হিসেবে। আজ সে সেই কর্মী নয়, আজ সে সেই ব্যক্তি যিনি নিজের গন্তব্য বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অধ্যায় ২: সিদ্ধান্তের নেপথ্যে
রফিকের জীবনে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আসেনি হঠাৎ। বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা হতাশা, কাজের চাপ আর নিজের মূল্যায়নের অভাব তাকে এই পথে নিয়ে এসেছে।
একসময় অফিসের ছোটখাটো কাজ করতে করতে নিজের স্বপ্নের কথা ভোলা শুরু করেছিলো। তার ভিতর ছিলো বড় কিছু করার বাসনা, কিন্তু প্রতিদিনের ডেডলাইন আর রিপোর্টের চাপে সব কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে।
সেই সাথে ব্যক্তিগত জীবনের নানা জটিলতা, পরিবারের চাপ—সব মিলিয়ে সে বুঝতে পারছিলো আর এভাবেই চলতে পারবেনা।
সে নিজেই নিজের জন্য একটা নতুন সুযোগ তৈরি করবে। নতুন জায়গায় নতুন কাজ। নতুন স্বপ্ন।
অধ্যায় ৩: শেষ দিনের মনোভাব
অফিসের দরজায় প্রবেশের আগে রফিক কয়েকবার গভীর শ্বাস নিলো। তার হাতে ছিলো কালো রঙের একটি খাতায় মোড়ানো এক ফোল্ডার, যার মধ্যে ছিলো তার পদত্যাগপত্র।
অফিসের সিলেন্স ভেঙে সে ম্যানেজারের কক্ষে প্রবেশ করল।
“স্যার, আমি আমার পদত্যাগপত্র জমা দিতে এসেছি,” রফিক বিনয়ের সঙ্গে বলল।
ম্যানেজার চোখে সামান্য অবাক ভাব নিয়ে কিন্তু শান্ত স্বরে বললেন, “আমি জানতাম একদিন এটা আসবে। তুমি আমাদের সেরা কর্মীদের একজন ছিলে, কিন্তু জীবনে এগিয়ে যেতে এই ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
অধ্যায় ৪: প্রত্যাশার ছায়া
রফিক ম্যানেজারের কথা শুনে কিছুটা সহজ বোধ করল, কিন্তু তার হৃদয়ে গভীর উদ্বেগ ছিলো। তার মনে প্রশ্ন এসেছে— নতুন কাজ, নতুন পরিবেশ, সেখানে কি সে ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে পারবে?
বহু বছর ধরে গড়ে তোলা সেই পরিচিত অফিস জীবনের ছায়া তাকে যেন ছাড়ছে না। নতুন সূচনা যদিও প্রয়োজন, কিন্তু সেই অজানা পথটায় পা দেওয়া ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছিলো।
তবুও, সে জানে এটাই তার সঠিক সিদ্ধান্ত। নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার সময় এসেছে।
অধ্যায় ৫: বিদায়ের প্রস্তুতি
দিন গড়িয়ে গেলো। সহকর্মীরা এক এক করে রফিকের কাছে আসতে লাগল। কেউ উৎসাহ দিল, কেউ বিদায়ের অশ্রু গোপন করতে পারল না।
রফিক নিজেও অনেক স্মৃতি নিয়ে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তার ডেস্কে ঝরঝর করে সবকিছু সজ্জিত করল।
তার মন মাঝে মাঝে ফিরে যেতো প্রথম দিনের সেই উচ্ছ্বাসের দিকে, তখনকার স্বপ্নগুলোকে সযত্নে সংরক্ষণ করে।
অধ্যায় ৬: নতুন পথের সূচনা
শেষ দিনের সন্ধ্যায়, রফিক অফিস থেকে বেরিয়ে এসে মনে করল, জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। যা কিছু হয়েছিলো, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে, নতুন ভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
তার চোখে এক নতুন আশা জাগল, এক নতুন আত্মবিশ্বাস। পদত্যাগ ছিলো শুধু এক দরজা বন্ধ করার নাম, কিন্তু এক নতুন দরজা খুলে দেওয়ার নাম।
অধ্যায় ৭: পরিবারে দ্বন্দ্ব
রফিকের পদত্যাগের খবর তার পরিবারে পৌঁছলে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিলো। তার বাবা মা আশঙ্কিত, ভাইবোনরা বিরক্ত। তারা চাচ্ছিলো রফিক স্থির থাকুক, নিরাপদ কাজ করুক।
“তুই এত বছর ধরে যা করছিস, কেন হঠাৎ সব ছেড়ে দিবি?” তার বড় ভাই প্রশ্ন করল।
রফিক বুঝালো, “আমি কিছুদিন আগেই বুঝেছি, এই কাজ আমাকে আর খুশি দেয় না। আমি নিজের জন্য কিছু বড় করার চেষ্টা করছি।”
তবে পরিবারের কেউ তাতে রাজি হলো না। তারা বলল, “এই অজানা পথে চললে কী হবে?”
রফিক বুঝতে পারল, জীবনের বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সবাইকে খুশি করা যায় না। তার পথটা সে নিজেই বেছে নেবে।
অধ্যায় ৮: নতুন সুযোগের সন্ধান
পদত্যাগের পর রফিক শুরু করল নিজের ক্যারিয়ার খোঁজার। বিভিন্ন চাকরির জন্য আবেদন করল, আবার কিছু ফ্রিল্যান্সিং কাজও শুরু করল।
কঠিন সময় এসেছিলো, আবার হতাশাও আসলো। তবে সে থামেনি। তার স্বপ্নের পেছনে লেগে থাকল।
একদিন একটা ছোট কোম্পানি থেকে ডাক এলো। তারা তার দক্ষতা দেখে তাকে কাজ করার প্রস্তাব দিলো।
রফিকের মুখে হাসি ফিরে এলো। এটাই ছিল তার জীবনের নতুন সূচনা।
অধ্যায় ৯: আত্মবিশ্বাসের বীজ
নতুন কাজে রফিক পুরো মনোযোগ দিয়ে কাজ করল। আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সে নিজেকে প্রমাণ করল।
সহকর্মীরা তাকে সম্মান দিলো, নতুন ম্যানেজার তার প্রশংসা করল। রফিক বুঝল, পদত্যাগ মানে শেষ নয়, বরং নতুন এক আত্মবিশ্বাসের শুরু।
অধ্যায় ১০: নতুন জীবন গড়া
রফিকের নতুন কর্মজীবন দিন দিন সুন্দর হয়ে উঠতে লাগলো। আগের দিনের হতাশা ও দুঃখ ধীরে ধীরে পেছনে পড়ে যাচ্ছিল। নতুন সুযোগ তাকে নতুন করে জীবনের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলো।
সে বুঝেছিল, জীবনে পদত্যাগ মানে স্রেফ ছাড়াছাড়ি নয়, বরং নিজের ক্ষমতার সীমা পরীক্ষা করার সাহস।
রফিক প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল, নিজেকে বিকাশ করল। তার পরিবারও ধীরে ধীরে তার পরিবর্তিত অবস্থার প্রশংসা করতে শুরু করল।
অধ্যায় ১১: আত্মসম্মান ও সম্মান
সময় পেরিয়ে রফিক জীবনে আত্মসম্মান ও সম্মানের স্বাদ পেতে শুরু করল। তার কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য তাকে সফলতার শিখরে নিয়ে গিয়েছিল।
তার চারপাশের মানুষরা তাকে প্রেরণার উৎস হিসেবে দেখলো। রফিকও বুঝল, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সাহসিকতা জরুরি।
অধ্যায় ১২: শিক্ষা ও উপদেশ
রফিক নতুন কর্মজীবনে অনেক শিক্ষা অর্জন করল। সে বুঝল, কখনো কখনো জীবনে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আর পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
সে তার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্যান্যদেরও উৎসাহিত করতে লাগল।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
হ্যাঁ, এই গল্পে বিষয় সামঞ্জস্যতা রয়েছে।
কেন?
শুরু থেকে গল্পের মূল থিম “পদত্যাগ” এটাই ছিলো — একজন কর্মজীবী রফিকের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত এবং তার পরিণতি।
প্রতিটি অধ্যায়ে ধারাবাহিকভাবে পদত্যাগের প্রেক্ষাপট, তার কারণ, অনুভূতি, পরিবার ও কর্মজীবনের প্রভাব এবং পরবর্তী নতুন সূচনা সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে।
গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রফিকের মানসিক পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং সাফল্যের পথ সুসংগতভাবে ফুটে উঠেছে।
অতএব, বিষয় সামঞ্জস্য আছে এবং গল্পের প্লট ভালোভাবে ধারাবাহিক।
২০ এপ্রিল - ২০২৫
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুলাই,২০২৫