ইমন স্যারের খবরটা শুনে সবাই অবাক হয়।স্যার তাহলে চলে যাচ্ছেন! যে স্যার দেশ নিয়ে বড় বড় কথা বলতেন,তিনিও দেশ ছেড়ে সুখের আশায় পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে।কেউ কেউ বলে, স্যারতো উচ্চ শিক্ষার জন্য যাচ্ছেন। হ্যা সেটা ঠিক। কিন্তু কজনেই বা ফিরে? ইমন স্যার সে রকম নয়।স্যার নিশ্চয়ই ফিরবেন।স্যারতো বলেছেনই তিনি শিক্ষাছুটি শেষ হলেই ফিরে আসবেন। তাঁর কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।তাঁর প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের মাঝে। ওরকম সবাই বলে।কিন্তু তাঁদের মনে থাকে অন্য এক উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন।বিদেশে গিয়ে সেটা প্রকাশ হয়ে পড়ে। হয়তোবা ইমন স্যার সেরকম নাও হতে পারেন। হ্যা,হবে হয়তো।,সেরকম না হলেই ভাল হয়।যে ছাত্ররা তাদের ইমন স্যারকে অনেক অনেক ভালবাসে সে ছাত্ররা স্যার না ফিরে এলে কষ্ট পাবে। কিন্তু অনেক শিক্ষকইতো ফিরেননা। আমাদের ইমন স্যার সেরকমই না। তিনি নিশ্চয়ই ফিরবেন। তার দেশের প্রতি ভালবাসা আছে। দায়িত্ববোধ আছে। তিনি ছাত্রছাত্রীদের অনেক ভালবাসেন। ফিরলেতো অবশ্যই ভালো।তাতে শুধুৃ তিনি শ্রদ্ধার পাত্র হবেননা দেশ লাভবান হবে।
ইমন স্যারের বিদেশ যাওয়ার খবর শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা এভাবেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে থাকে।ছাত্রছাত্রীদের অনেক প্রিয় ইমন স্যার যেন শিক্ষাছুটি শেষে তাঁর কর্মস্থলে ফিরে আসেন এটা সবাই চায়।আর চাইবেইনা বা কেন! যে স্যার অত্যন্ত কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোয় ব্যস্ত থাকেন,তাতে তো ছাত্রছাত্রীরা ভালবাসবেই।
ছাত্রছাত্রীদের আশংকা আরো বেড়ে গেল,যখন কিছুদিনের মধ্যেই ইমন স্যার তাঁর স্ত্রীকে বিদেশে তাঁর কাছে নিয়ে গেলেন।এবার সবাই বুঝে গেল স্যার আর ফিরবেন না। অন্য অনেক শিক্ষকের মতই স্যার তাঁর ছাত্রছাত্রী, প্রতিষ্ঠান সর্বোপরি দেশের কথা না ভেবে নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিলেন। নিশ্চয়ই বিদেশে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।হতাশ হয়ে পড়লো তার বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
-আরে আপনি বোকা নাকি? সহকর্মীর কথায় অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন শিহাবুর রহমান ইমন -মানে? -মানে মানুষ বিদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কত কিছুই না করে। আর আপনি? এ দেশের নাগরিকত্ব ছুড়ে ফেলছেন।আপনাকে বোকা বলবো নয়তো কাকে! -ঠিক বুঝলাম না। -আরে বাছা! আপনার স্ত্রীর বাচ্চা হবে। আর আপনি তাকে নিয়ে দেশে যাচ্ছেন। -হ্যা এটাইতো স্বাভাবিক। নয় কি! দেখেন না আমাদের দেশে বউয়ের বাচ্চা হওয়ার সময় বউকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। -আরে ইমন সাহেব এটা আর সেটা এক হল।আপনি হেলায় সুযোগ হারাচ্ছেন।বাচ্চা এখানে জম্ম হলে এখানকার নাগরিকত্ব পাবে। আর আপনি তাকে... আপনি আসলেই বোকা।
-হ্যা আমি যদি বোকা হই তাহলে বোকাই। আমি সহজ সরল হিসাব বুঝি। আমি তাকে জন্মসূত্রে সেই দেশের নাগরিকত্ব দিতে চাই যেদেশের জন্ম হয়েছিল ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। তারাও নিশ্চযই বোকা ছিল না। যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছিল। তানভীর সাহেব আমি আমার দেশকে ভালবাসি। আমি চাই আমার সন্তানের জন্ম নিজের দেশের মাটিতে হোক। আর সে কারনেই আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে অতি শীঘ্রই দেশে রেখে আসতে যাচ্ছি।আর আমার শিক্ষাছুটি শেষ হলেই আমিও দেশে ফিরে যাব। আমি আপনার মত এদেশে থেকে যাওয়ার কোন উপায় বের করার চেষ্টায় থাকব না।
অস্থির হয়ে পড়ে ইমন। বিমানেই স্ত্রীর প্রসববেদনা উঠবে এটা কল্পনাও করেনি ইমন।ইডিডি হিসাব করেই দেশে ফেরা তবুও ব্যথাটা যেন আগেই এসে গেল। বিমানেই ডেলিভারির ব্যবস্থা চলতে থাকে। তার অস্থিরতা বাড়তে থাকে। এখনো বাংলাদেশের আকাশসীমানায় ঢোকেনি তাদের বহনকারী বিমানটি। ক্রুদের কাছে বারবার জানতে চায় আর কতক্ষন লাগবে বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকতে।ক্রুরা বিরক্ত হয়। কি ব্যাপার আপনি আপনার স্ত্রী, অনাগত সন্তানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হয়ে বাংলাদেশের সীমানা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কি করে বোঝাবে ইমন যে সে তার প্রিয় জন্মভূমিকে অনেক অনেক ভালবাসে।সে চায় তার সন্তান জন্মসূত্রে এ দেশের নাগরিক হোক। সে ক্রুকে জিজ্ঞেস করে বাচ্চা কি হয়েছে? না এখনও হয়নি। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে । হে আল্লাহ তুমি বাংলাদেশের সীমানায় আমার সন্তানের জন্ম দিয়ে দাও।
ক্রু হাসিমুখে এগিয়ে আসে।এগিয়ে যায় ইমন। আপনার সন্তান হয়েছে।ছেলে সন্তান। মুখটা চুপসে যায় ইমনের। কি ব্যাপার আপনি খুশী হননি? না মানে.. হ্যালো স্যার,হ্যালো কি ভাবছেন ? অমন করে কি তাকিয়ে দেখছেন ? ক্রুর কথায় সম্বিত ফিরে পায় ইমন। জ্বী? ক্রু হাসতে হাসতে বলে বিমান বাংলাদেশের আকাশে প্রবেশ করেছে। আর আমার সন্তান? আশাহত মন নিয়ে প্রশ্ন করে ইমন। এখনও হয়নি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায় ইমন।
একটু পরেই খবরটা আসে। তার কন্যা সন্তান হয়েছে। খুশীতে তার চোখে জল চলে আসে। তার সন্তানের জন্ম এ দেশে হয়েছে।মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানায়। মনে মনে বলে,আমিও শিক্ষা ছুটি শেষে আমার প্রিয় ছাত্রছাত্রীর মাঝে আমার প্রিয় দেশের কাছে ফিরে আসবো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।