রিঙ্া থেকে নেমেই দৌড়ে বড় গেটটার ভিতরে ঢোকে নাহিদ। বৃষ্টিতে ভিজছে আবিদ ও তার বোন অনন্যা।বাহিরের বারান্দায় উঠে সে। বাহির থেকেই আবিদ চিৎকার করে,পান্না স্যার এসেছে,স্যারকে তোয়ালে এনে দে। তোয়ালে নিয়ে আসে পান্না। নাহিদ তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে,হাত মুছে। বাইরের গেট হতে বারান্দা পর্যন্ত আসতেই অনেকটাই ভিজে গেছে সে। -উঠে আসো আবিদ। পড়বে না ! নাহিদ বলে। -আর একটু ভিজি স্যার।আবিদ জবাব দেয়। গ্রীলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আবিদ আর অনন্যার বৃষ্টিতে ভেজা দেখতে থাকে নাহিদ। দু'ভাইবোন কতই না মজা করছে । -স্যার কখনো বৃষ্টিতে ভিজেছেন?আবিদ গল্প জুড়ে দেয় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই। -এইতো ভিজলাম? -না এরকম না। কখনো বৃষ্টিতে গোসল করেছেন? -ঠিক সেভাবে করা হয়নি।গোসলের জন্য বৃষ্টিতে নামা,এরকম হয়নি । তবে বৃষ্টিতে ভিজা হয়েছে। -জানেন আপুনা বৃষ্টি এলেই ভিজবে। আপুর বৃষ্টিতে গোসল করা চাই-ই-চাই। অনন্যা বাধা দেয় এই চুপ কর। কি হল তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছ?পড়ার রুমে গিয়ে বস।আবিদের মার কথায় চমকে ওঠে নাহিদ।মনে মনে ভাবে আরে তাইতো ! একজন অষ্টাদশী মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে আর সে কিনা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। জ্বী যাচ্ছি। ভেতরে পড়ার ঘরে গিয়ে বসে সে। -এই তাড়াতাড়ি উঠে আয় পড়তে হবেনা!মা আবিদকে বলেন। - আর একটু ভিজি না।আবদারের সুরে বলে আবিদ। অনন্যা বলে মা স্যারকে চা দিয়ে আজ বিদায় করে দাও।আজ আমরা বৃষ্টিতে ভিজব। যত্ত সব অন্যায় আবদার।আর পারিনা।রাগে গজগজ করতে করতে ঘরের ভিতর ঢোকেন মা। বারান্দায় বেরিয়ে আসে নাহিদ।সাথে পান্না ছাতা হাতে। চা খেলেননা স্যার?অনন্যা বলে ওঠে। না আজ যাই। কি করে যাবেন স্যার,বৃষ্টির মধ্যে।আবিদ বলে। -রিঙ্া নিয়ে নেব। পান্না ছাতা নিয়ে নাহিদের সাথে রিঙ্ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা।যদিও দুএকটা রিঙ্া চলছে সেগুলোতে যাত্রী ভরা। -ঠিক আছে পান্না তুমি যাও। আমি চলে যাই। -রিঙ্া যে নাই কিসে যাবেন? -পেয়ে যাব রিঙ্া ,একটু হাটলেই। -বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন যে! -কিছু হবেনা। -আপনি বৃষ্টিতে ভিজবেন?পান্না অবাক হয়ে বলে। -তুমি আবিদদের কিছু বলো না।বলো রিঙ্া পেয়েছে,কেমন!
পান্না ছাতা নিয়ে বাসার ভিতরে ঢোকে। ফুটপাথ ধরে হাটতে থাকে নাহিদ। আশে পাশের দোকান হতে লোকজন ওর দিকে তাকিয়ে আছে ওকে দেখছে।তারা নিশ্চয়ই ভাবছে ছেলেটার কি মাথা খারাপ নাকি!না হলে প্যান্ট শার্ট জুতা পড়ে কেউ বৃষ্টির মধ্যে ভিজে। লোকজন কি ভাবে ভাবুক। সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না নাহিদ। তার ভাবনা জুড়ে এখন কেবলই অনন্যা।কি সুন্দরই না লাগছিল মেয়েটিকে।বৃষ্টিতে ভিজলে কি সব মেয়েকেই এত সুন্দর লাগে?কখনো আসলে ওভাবে কোন মেয়ের বৃষ্টিতে ভিজা তাকিয়ে দেখেনিতো তাই সে মিলাতে পারেনা।
বেশ ভাল লাগছে নাহিদের বৃষ্টিতে ভিজতে।রাস্তায় কতগুলো কিশোর ফুটবল খেলছে।ইচ্ছে করছে ওদের সাথে খেলতে,পানিতে লাফাতে। পরদিন জ্বর এসে যায় নাহিদের।সাথে শরীর ব্যথা।আবিদকে জানায় তার অসুখের কথা।আজ পড়াতে আসতে পারবেনা সেটা বলে। পরের দিন বিকেলে তার মেসে এসে উপস্থিত আবিদ সাথে অনন্যা। -কেমন আছেন স্যার? -তোমরা ? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে নাহিদ। -আপু দেখতে চাইল তাই এলাম। -কি বলছিস এসব?আবিদের পিঠে চাপড় দিয়ে থামিয়ে দেয় অনন্যা। -কেমন আছেন আপনি?অনন্যা প্রশ্ন করে। -ভাল এই একটু ঠান্ডা লেগেছিল। -তা বৃষ্টিতে ভিজতে গেলেন কেন?অনন্যা বলে। -নিশ্চয়ই পান্না বলেছে।্ -হ্যা। -ভাল লাগছিল। -কাকে?আবিদ প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,আমাকে না আপুকে? লজ্জায় মাথা নীচু করে অনন্যা। ক্লাস সেভেনেই খুব পেকে গেছিস,ধমকের সুরে বলে অনন্যা। -কি বললেন না স্যার কাকে ভাল লাগছিল?আবিদ আবারো জানতে চায়। -বৃষ্টিতে ভিজতে।ছোট্ট কওে জবাব দেয় নাহিদ। -ও তাই বলুন। আমি ভাবছিলাম আপুকে নয়তো আমাকে। -তোমাদের দুজনকেই ভাল লাগছিল।সত্যি বলতে কি তোমাদেরকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে আমারও বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে হচ্ছিল। -তা ভিজেননি কেন?আবিদ বলে। -ভিজেছিলামতো ! -আমাদের সাথে.. -চল এখন যাই।আবিদকে টেনে ধরে অনন্যা।আমরা আসি ভাল থাকবেন। দুদিন পর পড়াতে আসে নাহিদ আবিদকে।তখনো ঠান্ডা লেগে আছে।জ্বর সেরেছে,কিন্তু কাশি আছে।পড়ার ঘরে ঢোকে অপরিচিত এক ছেলে। -স্যার পরিচয় করিয়ে দেই।ইনি আমার খালাতো ভাই। আর ভাইয়া উনি আমার স্যার। হাত বড়িয়ে দিয়ে ছেলেটি বলে ওঠে আমি ইমরান। আমি নাহিদ। ভাইয়া স্যারের ঠান্ডা লেগেছে একটু দেখে দাওনা। -আমি কি ডাক্তার নাকি? -দুদিন পরইতো হচ্ছো। -আপনি মেডিকেল এ পড়েন। -জ্বী চতুর্থ বর্ষে? -আপনি? -আমি ম্যানেজমেন্ট এ তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। পরদিন পড়াতে গেলে আবিদ বলে স্যার ভাইয়াকে কেমন দেখলেন? কেমন দেখলাম মানে?অনেক হ্যান্ডসাম,ভালো।অনেক সুন্দর। -আসলেই ভাইয়া খুব ভাল আর দেখতেও বেশ সুন্দর। পরের কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না নাহিদ।জানেন স্যার ইমরান ভাইয়ার সাথে আপুর বিয়ে হবে। -কি বললে? -হ্যা ভাইয়ার সাথে আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।ভাইয়া পাশ করে বেরুলেই বিয়ে হবে।সেভাবেই মা খালা ঠিক করে রেখেছেন। -তোমার আপু জানেন? -জানবে না কেন? সেতো অনন্যাকে নিয়ে কোনসময় সেভাবে কিছু কল্পনাও করেনি কিংবা তার মনে অনন্যাকে নিয়ে ভালবাসার স্বপ্নও বাসা বাধেনি। অথচ কথাটি শোনার পর থেকে কেমন যেন এক অস্থিরতা লক্ষ্য করছে নিজের মনের মধ্যে।সেটাকি বৃষ্টিতে ভেজা অস্টাদশী অনন্যাকে দেখার পর থেকে ভাললাগা অনুভূতি তৈরী হয়েছে।হয়তোবা..।
রুটিনমাফিক আবিদকে পড়াতে যায় নাহিদ।ইদানিং সে যেটা লক্ষ্য করছে অনন্যা তার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে পড়ার ঘরে আসে। আগ বাড়িয়ে নিজে থেকে কথা বলে।আগে যেভাবে স্যার স্যার বলে সম্বোধন করত এখন কোন কিছু বলে সম্বোধন করেনা।তবে কি অনন্যা নাহিদের প্রেমে পড়েছে! নাহিদ বোঝে তার এড়িয়ে চলা উচিত।যেখানে অনন্যার বিয়ের পাত্র ঠিক করা আছে। ইমরান অপছন্দ করার মত পাত্র নয়।ইমরানের যোগ্যতা তার চাইতে অনেক অনেক গুন বেশী।আর দেখতেও অনেক সুন্দর।
বর্ষাকাল।কাজেই বৃষ্টি লেগেই আছে।সকালে নেইতো বিকেলে,কিংবা আজ নেইতো কাল।বৃষ্টি চলছেই। সকাল থেকেই আকাশে বেশ মেঘ জমে আছে।যে কোন মুহুর্তে বৃষ্টি নামবে। মেসে এখন নাহিদ একা। ক্লাস নেই তাই ভার্সিটিতে যাওয়া হয়নি তার।একা থাকলে সিডি প্লেয়ারে গান শোনে। আজ অবশ্য মেঘলাদিন । তাই সে পুরনো দিনের গান শুনছে। অনন্যাকে দেখে চমকে ওঠে সে। -একি তুমি? -এলাম। -একা ? কি মনে করে? -এমনি, আসতে মন চাইলো তাই এলাম। -কি বলছো কিছুইতো বুঝছি না। বেশ রাগত স্বরে এবার বলে অনন্যা,আপনি বাংলা কথা বোঝেননা? -তুমি তাড়াতাড়ি চলে যাও,যে কোন মুহুর্তে বৃষ্টি নেমে পড়বে। -সেজন্যেইতো এসেছি। -তার মানে? -বৃষ্টিতে ভিজবো বলে এসেছি। -এখানে ?কি আবোলতাবোল বলছ? -আমি ঠিক বলছি।আমরা দুজন বৃষ্টিতে ভিজব। -তুমি শীগগীর চলে যাও। কেউ দেখে ফেললে কেলেংকারী হবে। এমন সময় বৃষ্টি পড়া শুরু হয়।প্রথমে ফোটা ফোটা এরপর মুষলধারে। নাহিদের হাত ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে অনন্যা।বৃষ্টিতে টেনে নামায়। -কি পাগলামী করছ?বাধা দিতে চেষ্টা করে ।পারে না। -হ্যা,আমি পাগলামী করছি। আমি তোমাকে ভালবাসি।চুপ করে যায় অনন্যা। নাহিদ অনন্যার কথায় চমকে ওঠে। একি বলছে অনন্যা! মুষলধারে বৃষ্টি পড়তে থাকে।অনন্যার মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নাহিদ।মুখোমুখি দুজন মানুষ। -তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।ইমরান তোমায় ভালবাসে।সে অনেক ভাল ছেলে,যোগ্যতাসম্পন্ন । নাহিদ অনন্যাকে বলে। -হ্যা সব ঠিক। সে ভাল। কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। -এটা ক্ষনিকের পাগলামি। -না বিশ্বাস কর আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।নাহিদের হাতদুটো ধরে সে বলতে থাকে তোমাকে ভালবাসি বলেই সে ভালবাসার টানেই আমি ছুটে এসেছি।তোমাকে সাথে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবো বলেই আমার এত পরিকল্পনা, সাথে শুকনো কাপড় নিয়ে এসেছি। কি বলবে নাহিদ।সেও যে অনন্যাকে ভালবেসে ফেলেছে।আজ এত কাছে পেয়ে কি করে সে তাকে দুরে সরিয়ে দেবে। -কি দেখছ অমন করে?অনন্যার কথায় চমকে ওঠে সে। -তোমাকে, আমার ভালবাসার মানুষকে।
এমন সময় অনন্যার মোবাইলের রিং বেজে ওঠে।এখান হতে শব্দ শুনতে পায়। নাহিদ বলে তোমার মোবাইল বাজছে? বাজতে দাও। ধরবে না? না। ইমরানের ফোন? হ্যা।
তারা দুজনে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। মোবাইলের রিংও অনবরত বেজেই চলেছে।সেদিকে যেন দুজনের কারোরই কোন মনোযোগ দেবার তাড়া নেই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।