রুদ্র সকাল বেলা হাটতে হাটতে অফিস যাচ্ছে । অফিসটা তার একটু কাছেই । তাই রিকশা না নিয়ে সকাল বেলা হাটতে হাটতে অফিসে চলে আসে । যেন কারাগারে ঢুকার আগে একটু আলো-বাতাস । আহা পড়া লেখা শিখে প্রথম শ্রেণীর কেরানি হওয়ার পদ্ধতিটা যে কে বের করেছে ।
আজও অন্য দিনের মতই হাটছিল। মনটা উদাস ,প্রত্যেক দিন আর অফিস ভাল লাগে ? কেমন , বোরিং । তবু যেতে হয় । আজ আবার জুতাটা পালিস করতে হবে। মুঁচি খুঁজতে খুঁজতে এক জায়গায় পেল।
মুচিওয়লাও খুব খোস মেজাজে আছে। গান গাচ্ছে আর জুতো পালিস করছে । মুচির পাশে বসে আছে রুদ্র । মানুষ দেখছে ।কেউ হোটেলে পরাটা বানাচ্ছে , কেউ দোকান খুলছে, কেউ ব্যায়াম করছে, দুটো টোকাই লাঠি দিয়ে রিকশার চাকা ঘুরাচ্ছে ,কিছু মেয়েরা কোচিং যাচ্ছে। সবাই ব্যস্ত । একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
রুদ্র আনমনে টোকাই গুলোর চাকা চালানো দেখছে ,এমন সময় টোকাই একটা হোচট খেল। চাকাটা ভারসম্যহীন হয়ে গেল। হঠাৎ রুদ্র লাফিয়ে উঠে লাঠিটা নিল। চাকাটা পর পর অবস্থায় সে লাঠি দিয়ে চাকাটা ধরে ফেলল। চাকা দৌড়াচ্ছে ,রুদ্র্ও দৌড়াচ্ছে। চাকা চালানো সহজ কথা নয়। রুদ্র আগে চালাত। সাবধানে পাথর দেখে চালাতে হয়। সামান্য ভারসাম্যহীনতা মানেই পতন। সামনে একটা বড় পাথর ,একটু ডান দিক দিয়ে ঘুরে ওগুলো কাটাল। ওগুলো কাটাবার পর পড়ল দুটো মেয়ে। দুজন এমন ভাবে হাটছে যে ডানেও যাওয়া যাবে না ,বামেও না। মাঝখানে সামান্য জায়গা। রুদ্র তখন চিন্তা করছে কিছুতেই চাকা ছাড়বেনা । সে মেয়ে দুটোর মাঝখান বরাবর চাকাটা ছেড়ে দিল। আর সে নিজে দৌড়ে মেয়েগুলোর সামনে গিয়ে দাড়ল । চাকাটা মাঝখান দিয়ে আসতে দেখে ভয়ে মেয়েগুলো দুপাশে সরে গেল। চাকাটা সামনে আসতেই রুদ্র সেখ্না থেকে চাকাটা আবার ধরল। এবার চাকা নিয়ে সে সামনে এগুতে লাগল। গাড়ি ,দোকানপাট , লোকজন সবাইকে ফেলে দিয়ে । দৌড় আর দৌড় । সব কিছু ফেলে। রিকশা গুলোকে পাশ কাটাল। মোটর গাড়ির পাশ দিয়ে এগাতে লাগল। চাকা চালাবার সময় কাঠিটা সঠিক নিয়মে ধরতে হয় ,একটু তেরছা করে। রুদ্রর মনে পড়ে গেল ছোট বেলায় কত দক্ষতার সাথেই না সে চাকা চালাত। সামনে একটা মাঝারি ধরনের গর্ত। নিচের দিক থেকে চাকায় হাল্কা একটা চাপ লাগল। এমনি চাকাটা লাফ দিয়ে গর্তটা পার হয়ে সামনে চলে গেল। চাকা চলতে লাগল ।
সামনে একটা রেললাইন। নিচ থেকে একটু উচু হয়ে রেললাইনটা তৈরি হয়েছে । একটু জোরে চাপ দিলে চাকাটা লাফিয়ে সামনে চলে যাবে । রুদ্র রেললাইন লক্ষ করে এগাতে লাগল ।
রেললাইন পার হবার জন্য রুদ্র আশেপাশের গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনের অবস্থা বুঝে নিতে লাগল। সকাল হওয়ায় এখনও গাড়ির জ্যাম লাগেনি । রাস্তাটা মোটামুটি খালিই বলা যায় । পার হতে যাবে এমন সময় ও রাস্তার পাশে একটা গাড়ি খেয়াল করল। গাড়িটা একটু চেনা চেনা মনে হল।চোখ তুলে দেখল ---সর্বনাশ। এম ডি স্যার অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । রুদ্র ভ্যাবাচেকা খেল । আজ বকা বাধ্যতামূলক,সাথে টিপ্পনী ফাউ । সাথে সাথে লাঠি ফেলে দিয়ে আকাশ বাতাস দেখতে লাগল। যেন সে কিছুই করে নি । চাকাটা রেল লাইনটা ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে পার হয়ে গেল । চাকাটার টালমাতাল অবস্থা । এক্ষুণি পড়ে যাবে । ওর ইচ্ছা হচ্ছে এক দৌড়ে চাকাটা ধরে । গলা চেপে সে ইচ্ছাটাকে দমন করল । এমন সময় গাড়িটা ওকে ফেলে এগিয়ে গেল । আর দেখল ওই টোকাই কোথ থেকে এসে চাকা টা ধরে ফেলেছে । চাকাটা পড়ে নি । রুদ্র হাসতে লাগল । টোকাই আর্থিক সচ্ছলতা পায় নি ,কিন্তু তার চাকা চলাবার স্বাধীনতা আছে,আর রুদ্রর আর্থিক সচ্ছলতা আছে কিন্তু চাকা চালাবার স্বাধীনতা নেই ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।