হৃদয় ছুঁয়ে

ভালবাসায় গল্পের শুরু (ফেব্রুয়ারী ২০২৩)

মোঃ মাইদুল সরকার
  • ১০
  • ২৫২
বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে তুমুল বৃষ্টি। মেহরাব ক্লাসে বসে আছে। কুমিল্লা সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছে।

ক্লাস নিচ্ছেন জনাব শিহাব স্যার । তিনি মার্কেটিং পড়াচ্ছেন। পণ্যের জীবন চক্র বিষয়টি তিনি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন । স্যারের অভিনব উদাহরন শুনে হঠাৎ করেই পুরো ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীরা হেসে উঠলো। মেহরাব মেহরাব প্রথম দিকে মনোযোগ দিলেও শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।

মধ্যে বিত্তের জীবন চক্রের হিসাবটা যেন হঠাৎ তার চোখের সামনে এসে ঘুরপাক খেতে লাগলো। সেটা শেষ না হতেই বাহিরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে বিকালের টিউশনিটা পড়াতে যেতে পারবে কিনা ভাবছিল । তাই সে স্যারের উদাহরনের বিষয়টি তেমন মনোযোগ দিয়ে শুনছিল না । হঠাৎ হাসির শব্দে সে চমকিত হয় হাসির কারণটা না বুঝলেও অন্যদের দেখাদেখি অজান্তে তার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। হাসি সংক্রামক একজন হাসলে অন্যজন হাসে ।সেটা বুঝে হোক না বুঝে হোক।

বর্ষাকালের বৃষ্টি অঝোর ধারায় ঝড়ছে। সহজে থামার লক্ষণ নেই। মেসে যেতে হবে, ভাত খেতে হবে তারপর টিউশনিতে যাওয়া লাগবে এই চিন্তাটা মাথা থেকে কিছুতেই সরাতে পারছে না মেহরাব।

টিউশনিতে যেতে না পারলে পরের দিন দেখা যাবে ছাত্রের মায়ের মুখ পাতিলের তলার মত কালো হয়ে আছে। সেই মুখে নেই হাসি, নেই কোন আনন্দ। গোমরা মুখটি বুঝিয়ে দেয়-তুমি গতকাল টিউশনিতে আসেনি, না আসাতে আমরা তোমার উপর সন্তুষ্ট নই।

টিউশনি করে নিজের লেখাপড়াটা চাইলে নিতে হচ্ছে মেহরাবকে। কারণ বাবা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তাদের আর্থিক অবস্থা পরতির দিকে।

সকালে, বিকালে ও রাত্রে টিউশনি করে যা পায় তা দিয়ে মেহরাব নিজের খরচ মিটিয়েও বাড়িতে কিছু টাকা পাঠায়। না পাঠিয়ে কোন উপায় নেই। সংসারে বড় ছেলে সে। বড় ছেলে মানেই দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিতে হয়।

উর্মিলা, শ্রাবন্তী আর চাঁদনী ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে কিছু খাওয়ার জন্য। কারণ বাসায় ফিরতে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে। তারা যাওয়ার সময় খেয়াল করল নাদিম, শোয়েব, মিনার আরো অনেকে গল্পগুজব করলেও মেহরাব বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

উর্মিলা মেহরাব কে বলল, কি ব্যাপার মিস্টার জিনিয়াস দাঁড়িয়ে আছ কেন ? কি নিয়ে ভাবছেন, বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখবেন নাকি ?

-না মানে এমনি দাঁড়িয়ে আছি । কবিতা নিয়ে আদিখ্যেতা করা কি আমাদের মত মধ্যবৃত্ত ছেলেদের সাঝে ! বৃষ্টি ছারবে মেসে যাব ক’টা ভাত খেয়ে টিউশনিতে যাব সেই চিন্তাই করছি।

-আরে অত চিন্তা করে লাভ নেই চলো ক্যান্টিনে চল। গরম গরম সিঙ্গারা, পিয়াজু আর চা খেয়ে একটু আড্ডা দেওয়া যাক তারপর বৃষ্টি কমলে যে যার মত কেটে পরব।

মেহরাব কি করবে বুঝতে পারল না। পকেটে আছে মাত্র একশত টাকা। চারজনের নাস্তা যদি একশত টাকায় না হয় তবে লজ্জায় পড়তে হবে।

উর্মিলা মেহরাবকে উতস্তত করতে দেখে বলল- আরে চলতো, এত ভাবাভাবি কিসের?

এর আগেও মেহরাব ওদের এ ধরনের প্রস্তাব বেশ কয়েকবার ফিরিয়ে দিয়েছে। আজ আর ফেরাতে পারল না । একে তো সকালে নাস্তা করেনি খিদের জ্বালা তার উপর বারবার না করলে ওরা মনে করবে বিল দেওয়ার ভয়ে বুঝি সে যায় না।

মেহরাব ওদের সাথে যেতে যেতে মনে মনে বলে- তোমরা তো বাপের হোটেলে খাও আর রিকশায় চড়ে কলেজে আসো তোমাদের তো আর কোন চিন্তা নেই। আমার মত অবস্থায় থাকলে বুঝতে কত ধানে কত চাল।

একটা টেবিলে চারজন বসে নাস্তা আর চা অর্ডার করে বেশ গল্প জুড়ে দিয়েছে মেয়েগুলো। উর্মিলা বলল, মেহরাব তুমি শুধু হাঁ হু করছো, কিছু বলছো না যে।

-কি বলবো বলো।

-কিছু বলার নেই ?

শ্রাবন্তী বলে উঠলো, আরে আমরা তিনটি সুন্দরী মেয়ে তোমার সাথে আছি আর তুমি কিছু বলবে না সেটা কি হয়।

-ওরে বাবা ! তা তিন সুন্দরীর নামে স্তুতি গাইবো নাকি।

চাঁদনী বলল, একটা গান ধরলে মন্দ হয় না।

উর্মিলা বলল, এই ভর দুপুরে খিদে পেটে কিসের গান। তারচেয়ে ওর ভাল রেজাল্টের পিছনে সিক্রিটটা কি সেটা জানতে পারলে মন্দ হয়না।

-তুমি এত ভালো রেজাল্ট কি করে করো ? রাতে কয়টা পর্যন্ত পড়া শোনা কর।

-আমি তো আসলে পড়ার সময়ই পাই না । যেটুকু সময় পাই মন দিয়ে পড়ি। ব্যস এটুকুই । ভালো রেজাল্টের পিছনে আমার অন্য কোন গল্প নেই।

চাঁদনী গালে হাত দিযে বলল, ওমা তাই নাকি আর আমরা সকাল বিকাল পরেও ভালো রেজাল্ট তো দূরের কথা পাস করতেই টানাটানি।

এজন্যই তো তোমাকে বলি জিনিয়াস।

আরো কিছুক্ষণ কথা চলল এভাবে এলোমেলো, টুকরো টুকরো সাথে হাসি ইয়ার্কি। এদিকে বৃষ্টি ধরে এসেছে মেহরাব ওঠার জন্য খুসখুস করছে। অবশেষে বলল, বৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে আমার একটু তারা আছে, যেতে হবে। বিলটা আমি দিয়ে দিচ্ছি।

বিলের কথা শুনে তিনি সুন্দরী হা হা করে উঠলো।

তোমার কি মাথা নষ্ট আমরা তোমাকে বিল দিতে দেব। এমনিতেই তোমাকে আমাদের সাথে ক্যান্টিনে আনতে পারিনা আজ যে এসেছ সেটাই তো আমাদের সৌভাগ্য।

উর্মিলা বিল দিয়ে বান্ধবীদের সাথে কলেজ থেকে বের হলো। মেহরাব আগেই চলে গেছে। উর্মিলা আর চোখে মেহরাবের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল।

মেহরাব কে তার ভালো লাগে। অবশ্য ভালোলাগার কথাটা সে এখনো জানায়নি। কলেজে সেই প্রথম দিন থেকেই মেহেরাব তার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

সেই এক চিলতে হৃদয় ছোঁয়ার অনুভূতিটা আজও ভুলতে পারেনা উর্মিলা।

প্রথম দিন কলেজে বেশ নার্ভাস ছিল উর্মিলা । সে কলেজ গেটে রিকশা থেকে নামতে গিয়ে পড়ে যায় মেহরাব পিছন থেকে উর্মিলার পতন ঠেকায়। প্রথম কোন পুরুষের স্পর্শ পেয়ে আর মেহরাবের চোখের দিকে তাকিয়ে এক অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি উর্মিলার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।


উর্মিলা বিভিন্ন উছিলায় মেহরাবের কাছে যেতে চায় কিন্তু মেহরাব বুঝেও না বুঝার ভান করে। সে চায়না প্রেমে জড়িয়ে তার ভবিষ্যৎ পথচলাকে পিচ্ছিল করতে।

উর্মিলাকে আবার বেশ কয়েকজন পছন্দ করে। ইদানিং ফাইনাল ইয়ারের ইমরোজ বেশ জ্বালাতন করছে। হুন্ডা নিয়ে উর্মিলাকে ফলো করতে করতে তাদের বাসার গেইট পর্যন্ত চলে আসে।

এতদিন চুপ করে থাকলেও সে ব্যাপারটা মেহরাবকে জানায়। মেহরাব বলে ঠিক আছে ব্যাপারটা আমি দেখবো আর তুমি বাসায়ও জানিয়ে রাখতে পারো যাতে কোন সমস্যায় পড়লে ঘরের লোকেরা তোমাকে দোষারোপ করতে না পারে।

এ ধরনের প্রেম ঘটিত ব্যাপারে মেয়েরা পরিবারকে কিছু জানায়না বলে সমস্যায় পড়লে উল্টো পরিবার মেয়েটিকে বলে তুমি কেন আগে আমাদের জানাওনি।

মেহবারেবে কথা শুনে উর্মিলা সাহস পায়। সে তার মাকে জানিয়ে রাখবে বলে কথা দেয়।

সাপ্তাহ খানেক পড়ে মেহরাব কলেজের পাশের দোকান থেকে কলম কিনার সময় খেয়াল করে উর্মিলার রিক্সার পিছনে ইমরোজ তার হুন্ডা চালিয়ে উর্মি উর্মি বলে চিৎকার করছে। উর্মিলার গলায় ঝুলানো বাতাসে উড়তে থাকা ওলনাটা ধরার চেষ্টা করছে। ইমরোজের এই অসভ্যতা দেখে রাগে মেহরাব ফুলতে লাগলো।

দেখতে দেখতেই সামনের মোড়ে সিগন্যালে আটকা পড়ল উর্মিলা আর ইমরোজ। হঠাৎ কি যে হল মেহরাবের দিক ভ্রান্ত প্রজাপরিত মত সে যেন উড়ে চলল। দৌড়ি পিছন থেকে ইমরোজকে হুন্ডা থেকে ফেলে দিয়ে এলোপাথারি কিল ঘুষি মারতে লাগলো।

হঠাৎ আক্রমনের শীকার হয়ে ইমরোজ কোনঠাসা হয়ে পালিয়ে বাঁচল। এদিকে উর্মিলা রিক্সা থেকে নেমে মেহরাবকে থামানোর জন্য অনেক চেষ্টা করলো। চারদিকে লোক জড়ো হয়ে গেল যেন তারা ছায়াছবির শুটিং দেখছে। শত শত চোখের বিষ্ময় উপেক্ষা করে মেহরাব উর্মিলার হাত ধরে রিক্সায় চাপল।

রিক্সায় দু’জন পাশাপাশি বসে থাকলেও কারো মুখে কোন কথা নেই। উর্মিলাকে বাসায় পৌছে দিয়ে মেহরাব চলে যেতে চাইলে উর্মিলা জোড় করে তাকে বাসায় নিয়ে গেল।

সব শুনে উর্মিলার বাবা-মা মেহরাবকে বললেন, বাবা তুমি ছিলে বলেই মেয়ে আমার রক্ষা পেয়েছে আশা করি তুমি ও পাশে থাকবে ভবিষ্যতেও।

সেদিন উর্মিলাদের বাসায় দুপুরের খাবার খেয়ে তবেই মেসে ফিরেছে মেহরাব। সেই থেকে শুরু হলে উর্মিলা আর মেহরাবের ভালোবাসার গল্প।

হৃদয়, মন ছুঁয়ে অল্প অল্প করে সে ভালোবাসার গল্প এগিয়ে যায় আর একদিন তাদের সম্পর্ক প্রেম থেকে পরিণয়ে গড়ায় ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান এ গল্প দিয়ে গল্প পড়া শুরু।শুরুটা ভালোছিল,শেষদিকে কাছুটা দুর্বল মনে হলো। তবে লেখার ভালো লাগলো। ভোট রইলো।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ওহ্ ভোট দিতে পেলাম না।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
মাঝে মাঝে ভোটের অপশন দেখায়না।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত হলাম।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
Dipok Kumar Bhadra সুন্দর লিখেছেন।
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
Muhammadullah Bin Mostofa খুব ভালো লেখেছেন। ফেসবুকে “সত্যবাণী প্রকাশনী” সার্চ করে “কলমকার” ম্যাগাজিনে লেখা দিয়েন।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ধন্যবাদ। চেষ্টা করবো ভাই।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ফয়জুল মহী অতুলনীয় প্রকাশ
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ভার্সিটিতে পড়া দুটি তরুন তরুনীর প্রেমে পড়া নিয়ে গল্পের কাহিনী এগিয়েছে সামনের দিকে।

২৪ আগষ্ট - ২০২০ গল্প/কবিতা: ৮৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪