প্রত্যাশার সিঁড়ি ভাঙা অঙ্ক

প্রত্যাশা (আগষ্ট ২০২০)

দীপঙ্কর বেরা
  • ১১০
অনিন্দ্য রেজাল্ট নিতে স্কুলে যাছে। রাস্তায় গ্রামের মৃদুল ডাক্তারের সঙ্গে দেখা। বলল - তোর রেজাল্ট নিতে গিয়ে কাজ নেই। তুই তো ফার্স্ট হবি সবাই জানে। লাজুক হেসেছিল অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অনিন্দ্য।
তারপর বাদবাকী রাস্তা শুধু মনে দূরু দুরু ভাব। যদি ফার্স্ট না হই। যদি মোহন ফার্স্ট হয়ে যায়। অর বাবা স্কুলের প্রেসিডেণ্ট। যদি অধীর ফার্স্ট হয়। ওর বাবা মৃণালবাবু আমাদের শিক্ষক।
কিন্তু সমস্ত নিরাশা দূর করে পূর্ণ প্রত্যাশায় বাংলার শিক্ষক ক্লাস টিচার সরোজবাবু রেজাল্ট ঘোষনা করলেন - অনিন্দ্য প্রথম।
তারপরে মোহন সুরেশ অধীর মিলন পর পর নাম আসে। সপ্তম শ্রেণির প্রথম নাম ঘোষনা হতেই তার বাবার সে কি উল্লাস। ছেলেকে কোলে তুলে নিল। মিষ্টি খাওয়াল। নবম শ্রেণির ফল ঘোষনা হতেই তার বাবাও লাফিয়ে উঠল। এমন কি অধীরের বাবা মোহনের মাও ছেলেকে জড়িয়ে ধরল। অনিন্দ্য একা বসে। ওর বাবা মা কেউ আসে নি। সবাই মাঠের কাজে গেছে।
বিকেলে ফিরে দেখে বাবা মা সবে খেয়ে উঠল। ছোড় দি ঘরের সামনে ঘুঁতে তুলছে। দাদা ঘরে নেই। অনিন্দ্য বলল - মা, আজ রেজাল্ট বেরিয়েছে।
বাবা একটা হাই তুলে বলল - আয় কাছে আয়।
মাও কাছে বসে বলল - অনির পড়া বন্ধ করা যাবে না। সবাইকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যাবেই যাবে।
অনিন্দ্যের কি যে ভাল লাগল। কোন প্রত্যাশা নেই। ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড যাই হোক না কেন মাথা ভাল আছে এগিয়ে যাবে। বাবা মায়ের আরও কিছুক্ষণ বসে অনিন্দ্য ভাবল বড় হতেই হবে। এভাবেই পড়া ধরে রাখতে হবে।
কিন্তু বড় হওয়া মানে নি? পাড়ার সিধু জ্যেঠুর কাছে গিয়ে মাঝে মাঝেই বসে। তিনি বললেন - বড় হওয়া মানে বড় ডাক্তার। বড় ইঞ্জিনিয়ার। বড় বিজ্ঞানী। বড় খেলোয়াড়।
অনিন্দ্য একটু ভাবে। বলে - জ্যেঠু, এই বড় তো একজন দুজন চারজন ছজন। এর বেশি তো নয়। আমাদের এই চালা ঘর ছিটে বেড়া, পুকুর ধার, গালাগাল খিস্তি, পরচর্চা, পরনিন্দা থেকে বেরিয়ে এত বড় হতে কি পারব?
সিধু জ্যেঠু পোড় খাওয়া মানুষ। বেশ কিছুক্ষণ জরিপ করল অনিন্দ্যকে। তারপ্র বলল - খুব বড় বড় কথা শিখেছিস যে। তাহলে সবার মত আগে টার্গেট রাখ বড় হওয়া মানে দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার নিশ্চয়তা। শুধু তুই খেলে হবে না। তোর মা বাবা দিদি দাদা সবাই যেন খেতে পায়। এখন তো তোদের সংসার চলে না। মহাজনের কাছে ধার। ক্লাসের পুরো বই কিনতে পারিস নি। খাতা নেই অঙ্ক করার জন্য। বৃষ্টির দিনে ঘরে জল পড়ে। আগে এইসব থেকে বেরোতে তোর বাবা মা গায়ে গতরে খাটছে। কিন্তু পারছে না। তুই দেখ না এই পড়াশুনা করে তুই ওদের বের করতে পারিস কি না? সেটাই হবে সবচেয়ে বড়, বড় হওয়া।
রাতে বাবার চোখে ক্লান্তি দেখে, হাজা লেগে থাকা হাত পা দেখে, মায়ের উনুন জ্বলা ঘাম মুখ দেখে, দাদা দিদির কষতের মাঝেও হাসি দেখে অনিন্দ্যের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। অথচ কেউ তার প্রত্যাশকে উসকে দিচ্ছে না। কিন্তু অন্যের উসকে দেওয়া আগুনে ভেতর থেকে জ্বলন তৈরি হয় কি না অনিন্দ্য জানে না। কিন্তু নিজের ভেতরে এই প্রত্যাশার এক জ্বলন তৈরি হচ্ছে কি সেটাই মূখ্য।
অনিন্দ্য রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালের নতুন সূর্য দেখে। মা বাবা দিদি দাদা মাঠে যায়। নতুন ধান চাষ। নিজেও মাঠে যায়। লাঙল দেয়। মাটিকে কাদা করে। চারা রোপন করে। জল সেচন করে। স্কুল যাওয়ার সময় হলে দাদা স্কুলে যায়। দিদি যায়। অনিন্দ্যও যায়। মা তার ফাঁকে রান্না করে দেয়। বাবা মাঠে আল দেয়। ঘাস পরিস্কার করে। আলে বসে মার সঙ্গে গল্প করতে করতে জল ঢালা পান্তা ভাত খায়। অনিন্দ্য দূরে তাকিয়ে বাস রাস্তা দেয়। বাসে করে অনেকে অনেক দূরে যায়। তারপরে ট্রেন ধরে। তারপরে প্লেন ধরে। এসব অনিন্দ্যের মত কেউ না চড়ে।
রাতে কুপী জ্বালিয়ে পড়তে পড়তে অনিন্দ্য এসব ভাবে। পড়া হয়ে যায়। পড়তে পড়তে পাড়ার এক দাদা এসে বলে, অনি কিছু টেকনিক্যাল পড়।চাকরী পাবই। না হলে কিছু কাজ তো পাবই। এক নিশ্বাসে সেই টেকনিক্যালে দরখাস্ত করে দেয়। বাংলা পড়ত ভাল লাগত। ইতিহাসের উত্থান পতন ভাল লাগত। অঙ্কের সূত্র ছিল জলবততরঙ্গ। ভূগোল মাথায় নাড়াচাড়া করত। দেওয়াল পত্রিকায় লেখা বের হত। এসব অনিন্দ্যের মনের মধ্যে কোনদিন আসতই না। কিছু কাজ পাবে, সেটা কি কাজ অনিন্দ্য তাও জানত না। কাজ পেলে সেও ইস্ত্রি করা জামা প্যান্ট পরে বাসে করে কাজে যাবে। হাতে থাকবে ব্যাগ। দাদা খেতে পাবে দিদি খেতে পাবে। মা বাবা পায়ের উপরে পা রেখে আয়েস করবে। এটুকুই প্রত্যাশা।
সেই প্রত্যাশা পূরণের জন্য ডাক আসে। অনিন্দ্য টেকনিক্যালে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।
আর এক পাড়ার দাদা এসে বলে - অনি , যাস না তুই এখানে আরো পড়াশুনা করে গবেষ্ণা কর। এসব কাজে কেউ যায়।
অনি জিজ্ঞেস করে - আপনি জানেন এই কাজটা ভাল না? তাছাড়া না খেতে পাওয়ার গবেষণা যেখানে রোজ করছি সেখানে আলাদা গবেষণায় কিছু পাব কি? অনিন্দ্য বাস ধরে। তারপর ট্রেন। তারপরে প্লেন।
আজ অনিন্দ্য সেই প্রেনের জানলায় বসে হাত নাড়ে। দেখে সবুজ পৃথিবী। দূরে দেখা, না দেখা। ভাবে সত্যিই কি সে বড় হতে পারল?
সিধু জ্যেঠুর কথা মনে পড়ল। মনে পড়ল বাবা মা আয়েস করার আগেই গত হয়েছে। দাদা দিদিরা নিজেদের মত আছে। অনিন্দ্য তাদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রাখে। অনিন্দ্য এখন মনের সেই ভূগোল ইতিহাস অঙ্ক ফিজিক্স নাড়াচাড়া করে। গল্প লেখে। কবিতা লেখে। অফিস কলিগকে শোনায়।
অথচ জীবনের সেই অঙ্কভাঙা সিঁড়ির শুরুতে কারো কোন প্রত্যাশা ছিল এমন কি অনিন্দ্যের মনে কোন জীবনের প্যাশান প্রত্যাশা জাগে নি। এম ইন লাইফের এই হব ওই হব নিজে ভাবে নি। কেউ ভাবতে বলে নি এই হতে হবে ওই হতে হবে। তাই অনিন্দ্য নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনের প্রত্যাশা পুরণ করতে পেরেছে।
তবু কত অনিন্দ্যের এমন প্রত্যাশা তৈরি হয় জীবনের সাদা মাঠা রোদ্দুরে কাদা মাটি মেখে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মাইদুল সরকার সুন্দর।
ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
ফয়জুল মহী নিপুণ  রচনাশৈলী ভীষণ ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ জানালাম ।ভালো থাকবেন ।

২৬ মে - ২০২০ গল্প/কবিতা: ২৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪