কি বাহে

২১শে ফেব্রুয়ারী (ফেব্রুয়ারী ২০১২)

এফ, আই , জুয়েল
  • ২৯
  • 0
  • ৯৮
লালের সমাহারে পোষাকের বাহারী বিলাসিতায় রানীমাতাকে অপরুপ লাগছে । যেন----, " লাল দোপাট্টা মল মল কা-------, লাল দোপাট্টা মল---মল " ।
একঝাঁক কচি-কাঁচা তরুন-তরুনীর কাছে রানীমাতা জানতে চাচ্ছে----, " ফেব্রুয়ারী মাস কিসের জন্য বিখ্যাত ?

তারা বলছেঃ প্রেমের জন্য ।

একথা শুনে রানীমাতা অন্তরে একটা ধাক্কা অনুভব করলো । তাহলে তাকে কি Love you-এর মর্ম নোতুন করে বুঝতে হবে ?

রানীমাতা তাদেরকে বোঝাবার জন্য বলতে লাগলোঃ " ১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে অনেক আন্দোলন হয়েছিল । সেই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ছালাম , রফিক , বরকত , জব্বার সহ আরো অনেকেই শহীদ হয়েছিল । ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে মেনে নিয়েছিল । সেই থেকে আমরা প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারীকে ভাষা দিবস হিসাবে পালন করে আসছি । এরপর অর্ধ-শতাব্দীরও বেশী সময় পার হলে---, জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারীকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দান করে । জাতী , ভাষা ও রাষ্ট্রীয় দিক বিবেচনায় আমাদের জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারীর গুরুত্ব অপরিসীম । একে ইতিহাসের একটি চলমান ধারা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে ।"

রাণীমাতার কথা শুনে তরুন-তরুনীদের হাসী যেন আর থামে না ।
তারা বলতে থাকেঃ----, ১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে যে আন্দোলন হয়েছিল----, তা সফল হয়েছিল । এখন আমাদের করনীয় কি ? আর আমরা করছিই বা কি ? শহীদদের স্মৃতি রক্ষার জন্য যে সৌধ-----, তার নাম " শহীদ মিনার " । আরবী আর ফারসী শব্দ মিলে এটি গঠিত । বাংলাকে বাদ দিয়ে কেন এই দুই ভাষার শব্দ নিয়ে এটা করা হলো----, তার উত্তর সহজে মিলবে না । কিন্তু এটাও ইতিহাসের এক অন্যরকম বাস্তবতা ।
বাংলা গানের বদলে অন্য ভাষার গান । বাংলা সিনেমার বদলে অন্য ভাষার সিনেমা । বাংলা শব্দের পরিবর্তে অন্য ভাষার শব্দ ব্যবহার করা এখন একটা ফ্যাশানে পরিনত হয়ে গেছে ।

তারা আরো বলছেঃ---, ১৪-ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের নামে গোটা জাতি এক অন্য রকম আবেগী শিহরনে মেতে উঠে । অথচ একুশের চেতনায় সেইভাবে জাতী জাগতে পারছে কি'না ?--তা ভেবে দেখার সময় এসে গেছে ।
রানীমাতা-----, আপনি শুনলে অবাক হবেন---, জন্মদিন উপলক্ষ্যে গান গাওয়া হয়----, " জন্মদিনে কি আর দিব তোমায় উপহার ? বাংলায় নাও ভালবাসা----, হিন্দিতে নাও পেয়ার ।" ---গানে গানে এরকম প্রকাশভঙ্গি থাকলেও বাস্তবে কিন্তু Love you শব্দটাই ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এই Love you-এর তীব্র স্রোত প্রবল হয়ে সমাজ জীবনকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে । We Love you রানীমাতা---, We Love you .

তরুন-তরুনীদের এই অবস্থা দেখে রানীমাতা থমকে গেছে । অবাক হয়ে ভাবছে----, এ জাতীর মুরুব্বীরা এদেরকে কি শেখাচ্ছে ? কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে ? সব মিলে গোটা জাতী কিসের জোয়াড়ে ভাসছে ?


শীলাদেবী সহ আমরা কয়েকজন শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছি । পথের ধারে এক দম্পতীর ঝগড়া শুরু হয়ে গেছে । স্বামী বলছে---, ফুল দেয়াতো হলো--, চলো বাড়ী যাই । বাচ্চা দুটি মনে হয় কাঁন্নাকাটি করছে । স্ত্রী বলছে----, না । আর একটু ঘুরাফেরা করি ----বুয়া আছে---অসুবিধা নাই । স্বামী রাগ হয়ে বলছে---, এখানে যদি পুরুষ মানুষ না থাকতো---তাহলে এক মুহুর্তও থাকতে না । কিসের কি ফুল দেয়া----, তোমাদের সব কিছু বাহানা । স্ত্রী বলছেঃ---, চুপ করো । আগে বাড়ী যাই---মজা দেখাব ।

এই ঘটনাকে এড়িয়ে সামনে অগ্রসর হতেই লীলাবতীর সাথে দেখা । সে তার বান্ধবীদের সাথে ফুল দিতে এসেছিল । লীলাবতী হলো শীলাদেবীর ছোট বোন । লীলাবতী একটা গোলাপ কিনে দেয়ার জন্য আমার কাছে বায়না ধরলো । শীলাদেবীর মুখের দিকে বাঁকা চোখে দেখে নিয়ে বললাম----, ফুল শুকিয়ে যাবে । নষ্ট হবে । তার চেয়ে ঐ টাকাটা তোর মোবাইলে লোড দিয়ে দিব । এতে টাকাটা নষ্ট হবে না । কেউ না কেউ সুফল পাবে । লীলাবতী মুখ ভেংচিয়ে বলেছিল--" ছোটলোক "--, কোথাকার ?

শীলাদেবীর সাথে আমরা সামনের দিকে চলতে লাগলাম । সবাই কম-বেশী কিছু না কিছু উপহার দিল । বেশীর ভাগই ফুল দিল । আমি তাকে একটি ফুলের গাছ দিতে চাইলাম । সে কিছুটা ধমকের সুরে বললো---, সব কিছুকে অহেতুক প্রতিযোগিতার হালকা পথে চলতে দেয়া ঠিক নয় । তোমার সাথে আমার সর্ম্পক কি ফুল আর গাছের বাঁধনের সাথে সর্ম্পকিত ? সাধনার পথে বার বার দেখা হবে--- নোতুন ভাবে । সেই উপলব্ধিগত অবস্থার চেয়ে আনন্দদায়ক উপহার আর কি হতে পারে ?
আমি কথা আর বাড়ালাম না । তার সাথে চলতে থাকলাম মিথ্যা-মহলের দিকে । যেখানে গুরুমাতা সাধনার অনেক সবক দিবেন ।

যেতে যেতে দেখি এক অবাক কান্ড । এক নেতা একুশের ফুল কেনার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে খুব চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে । ছেলে-মেয়ে গুলো বিরুক্তিসহ শুনছে । এরুপ অবস্থা দেখে এক গ্রাম্য মহিলা হুংকার দিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলোঃ----,

" কি বাহে------/ কি হইছে---? আরে শুন কেনে বাহে---? লাল-লাল , ঢুলু-ঢুলু চোখ । অভ্যাস নাই তা ,---- রাইতোত কেনে , দিনোত তো ফুল দিবার পারনেন হয় । থাউক ঐগুলা কথা ।
ফুল তো দিনেন,---- তা লাভ কার হইল ? তোমার ? না, যামার জন্যে দেনেন , তামার ? মুই জানো ! তোমরা কবার পাবার নান । কেনেনা লাভ-লোখসানের আসল হিসাব তো আর স্কুল , কলেজ আর কোচিং সেন্টারোত শিখায় না ।

আচ্ছা বাহে কন তো । ভাষা আন্দোলন হইছে সেই ১৯৫২ সালে । আইজ প্রায় আধখান শতাব্দী যায় যায় অবস্থা । তাও কেনে এই দেশটার বেশীর ভাগ মানুষ ফুল দিবার পারে না ? যত শহীদ মিনার---, খালি শহরোত চোখে পরে । কই ---, গ্রামোত তো মাইলের পর মাইল হাটলেও শহীদ মিনার পাওয়া যায় না । তা হইলে গ্রামের মানুষগুলা যদি শহীদ মিনারোত ফুল দিবার আশা করে । তাহলে ওমার আশা পূরন হইতে আরো কয়খান শতাব্দী নাগবে ?

আচ্ছা বাহে---,। শহীদ মিনারোত ফুল দিবার জন্যে বছরে বছরে লোক বাড়তে আছে । এই মানুষগুলা যদি বছরে বছরে একটা-দুইটা করি শুদ্ধ বাংলা শিখিল হয়---, তা হইলে তো এতদিনে মেলা মানুষ মেলা শুদ্ধ বাংলা শিখবার পাইলে হয় ।

আচ্ছা বাহে---, । হামার ছাওয়াগুলা তো ফুল দেওয়া-নেওয়ার জন্যে রক্ত দেয় নাই । ওমরা রক্ত দেছে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করবার জন্যে । তা হইলে হামরা কেনে খালি ফুল , মিছিল আর নাচ-গান নিয়া পরি আছি ? মাতৃভাষর মর্যাদা রক্ষা করবার জন্যে হামার চেষ্টা নাই কেনে ? হামরা শুদ্ধ বাংলা শিখবার চাই না কেনে ? শুদ্ধ বাংলা কইতে , লিখতে হামার এত অনিহা কেনে ? কেন----, শুদ্ধ বাংলা কইতে কি সবাকে শরম নাগে ?
কি বাহে----, কতায় কইস না যে । তোর হইল কী , ী, ী, ী,----- ??? অসম শালা । অসম শালা ।।

[ = আগের লেখাগুলো পড়া থাকলে এটি বুঝা অনেক সহজ হবে । = ]
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নিলাঞ্জনা নীল বিশুদ্ধ বাংলার চর্চা করা উচিত...... সুন্দর লিখেছেন
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ তা হইলে হামরা কেনে খালি ফুল , মিছিল আর নাচ-গান নিয়া পরি আছি ? মাতৃভাষর মর্যাদা রক্ষা করবার জন্যে হামার চেষ্টা নাই কেনে ? হামরা শুদ্ধ বাংলা শিখবার চাই না কেনে ? শুদ্ধ বাংলা কইতে , লিখতে হামার এত অনিহা কেনে ? কেন----, শুদ্ধ বাংলা কইতে কি সবাকে শরম নাগে ? // ----------- এ প্রশ্নগুলো সবাই যদি চিন্তা করে, ইতিবাচক সাড়া জাগবে নিশ্চয় । ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য।
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
Azaha Sultan কি বাহে.............আমার পানে কেবা চাহে.........আমি জুয়েল ভাইরে দিমু ভরে ডালা.....ওরে দেখে যা রে কালা, কি বাহে........!!
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সূর্য জুয়েল ভাই অনেক সুন্দর একটা আলোচনার অবতারণা করেছেন। প্রতিটি ভাষা তার নিজস্ব কৃষ্টি, ভৌগলিক অবস্থান, সংস্কৃতি নতুনত্ব দিয়ে সমৃদ্ধ হয়। যেমন আমেরিকায় প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়ায় অনেক নতুন নাম, কর্মবাচক শব্দ যুক্ত হয়েছে। সেদিক বিবেচনায় বাংলায় এ শব্দগুলো পাওয়ার চেষ্টা গুড়ে বালি। তাই এহেন শব্দগুলেকে ধারণ করার মানষে বাংলা ব্যকরণে "বিদেশি" শব্দ নামে একটা অধ্যায় রয়েছে। ভাষা হলো প্রবহমান জলধারার মতো আশেপাশের ক্ষুদ্র জলকণা নিয়ে যেমন বৃহৎ জলরাশির চলমান ধারা সমৃদ্ধ হয় ঠিক তেমনই ভাষায় নিত্যনতুন শব্দ যুক্ত হয়ে সমৃদ্ধ হয়। অনেক ব্যাপারে আমাদের নিজস্বতায় বিভেদের দেয়াল তোলার প্রচেষ্টা লক্ষ্যনীয়। ভাষার ব্যাপারে সেটা আরো প্রকট। ভাষা আন্দোলনে কোথাও ঊর্দূকে বাতিলের দাবী তোলা হয়নি শুধু দাবী ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে যেন বাংলাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে নানাজনের মন্তব্য দেখলে নতুন প্রজন্ম ভেবেই নিতে পারে "৫২'র ভাষা আন্দোলনটা ছিল তাবত দুনিয়ার সকল ভাষার বিরুদ্ধে বাংলা ভাষার জিহাদ" ............... আমি একটা কথা বলতে প্রায়ই ভুলে গিয়েছিলাম আপনার এই গল্পটা অনেকের জন্যই বুঝতে সহায়ক এবং অনেক ভাল লাগার মতো হয়েছে।......☼
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মিজানুর রহমান রানা চমৎকার গল্প লিখেছেন আমার বন্ধু জুয়েল ভাই। ৫ দিয়ে দিলাম।
ভালো লাগেনি ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
রোদের ছায়া আপনার বাড়ি উত্তরবঙ্গে কিনা জানি না ..........গল্পে রংপুরের ভাষা কিন্তু পুরোপুরি আসে নাই ......আর এটাকে ঠিক গল্প বলে মনেও হচ্ছে না ( একান্তই আমার ব্যক্তিগত ধারণা ) তবে আগের দুটো লেখা পড়া ছিল বলে বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় নাই ......বক্তব্য ও অনেক জোরালো...
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) ei গল্পের নামটাই অনেক দারুন! লেখনি অন্যধাচের! শুভেচ্ছা সাথে love you
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মোঃ আক্তারুজ্জামান ফুলের টাকা মোবাইলে দিলে যদি সুফল পাওয়া যায় তবে দুধ বেচে মদ খাওয়াই যায়......জুয়েল ভাই, খুব ভাল লিখেছেন। গান মনে পরে গেল- চিনলি না চিনলি না মাঝিরে............................................................................
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি Asolei....Oshomsala..........bishes kore Rong purer ancholik vasar babohar....onek sundor......Khub valo laglo jewel vai........suvo ratrri..........
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
পাঁচ হাজার কি বাহে!!! অসাম ছালা................ হা হা হা। ভাল লাগাটা আপনার গল্পের ডায়লগেই বললাম।
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

১৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী