নির্বাসন

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০২০)

  • ৫৩০
১।
রিহান স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে তার হৃদস্পন্দনের হার বাড়ছে। যেকোনো মুহূর্তে স্পেস শাটলের দরজা খুলবে আর সম্পূর্ণ নতুন একটি গ্রহ সে দেখতে পাবে। কেমন হবে সে গ্রহ? গ্রহটির নাম পৃথিবী। একসময় মানুষ থাকতো। এখন রোবটের আধিক্য। হাতে গোনা বিশ জন মানুষকে এই গ্রহে রাখা হয়েছে যাতে মানুষের অস্তিত্ব পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে না যায়। বসবাসের উপযোগী না থাকায় মানুষ পৃথিবী ছেড়ে মিটোরিতে চলে যায়। অথচ রিহানের ক্ষেত্রে উলটা। সে মিটোরি থেকে পৃথিবীতে আসছে।
আপনাকে স্বাগতম, স্যার রিহান। পৃথিবীবাসী আপনার আগমনে আনন্দিত।
ধন্যবাদ, এখানে আসতে পেরে আমিও আনন্দিত।
যদিও রিহানের খুব ক্লান্ত লাগছে আর এটা মানুষ না রোবট তা নিয়ে তার মনে সন্দেহ আছে তারপরও নিতান্তই ভদ্রতার জন্য হাসিমুখে কথা বলা। তার জন্য ৭-৮ জনের একটা দল পাঠানো হয়েছে এইটুকু ভদ্রতা না করলেই নয়।
আমি আসমা, আপনার সবরকমের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যে দলটি পাঠানো হয়েছে আমি তার প্রধান। আশা করি আপনার কোনো সমস্যা হবে না। লাইব্রেরির পাশেই আপনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে গবেষণা করতে কোন অসুবিধা না হয়।
আমি কৃতজ্ঞ। এখন থাকার জায়গায় যেতে চাই। খুব ক্লান্ত । কিছুক্ষণ একা থাকব।
অবশ্যই। নিশি, তুমি উনাকে নিয়ে যাও
সোনালী চুলের একটা মেয়ে হাসিমুখে সামনে এগিয়ে এল।

২।
সূর্যের আলো চোখে এসে পড়াউ ঘুম ভেঙ্গে গেলো। রিহানের ক্লান্তি এখন অনেকটাই কম। একটু লিখতে পারলে ভালো লাগতো। সকাল সকাল তার লিখার অভ্যাস! খাতার কথা মনে পড়তেই সে শাটলের দিকে রওনা হলো। লিখার জিনিসপত্র আনতে ভুলে গেছে। কাউকে পাঠিয়ে দিলেই হতো! কিন্তু রিহানের একটু ঘুরে দেখার ইচ্ছে হলো বলে নিজেই বেরিয়ে পড়লো। স্পেস শাটল খুব বেশি দূরে না। হঠাৎ সে দেখলো একটা মেয়ে তার রাফ করা খাতাগুলো নিয়ে ফিরছে। সে বললো,
দুঃখিত স্যার, অন্যান্য জিনিস নেওয়া হলেও খাতাগুলো রয়ে গিয়েছিলো।
না, সমস্যা নেই। আমি নিতেই আসছিলাম। আর আজকে লিখতেও আর ইচ্ছে করছে না।
আপনার কবিতাগুলো খুব সুন্দর । যেমন আশা করেছিলাম তেমনই। কিছু মনে করবেন না। মিটোরির বিখ্যাত লেখকের লেখা না পড়ে থাকতে পারলাম না।
রিহান অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো। এই রোবটটা তার ব্যাপারে কতটুকু জানে?

৩।
প্রায় একমাস হয়ে গেলো। পৃথিবীতে রিহানের ভালো লাগছে না। মিটোরিতে থাকলেও সে সবসময় নিজের ঘরেই থাকতো, লিখত ইচ্ছেমতো। কিন্তু এখানে ব্যাপারটা আলাদা। চারপাশে অনেকেই আছে কিন্তু রক্তমাংসের মানুষের বড়ই অভাব।
স্যার, আসতে পারি?
রিহান কল্পনা বাদ দিয়ে তাকালো। বললো,
এসো।
আপনাকে বিরক্ত করতে চাই না, কিন্তু আমি খুব চিন্তিত।
তোমার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি। আগেরবারও আমার কবিতা পড়ে তোমার চেহারায় এমন ভাব এসেছিলো। তোমার নাম কি?
আমি নীলা।
তুমি চিন্তিত কেন?
স্যার আপনার স্পেস শাটল মিটোরির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করছে, আপনাকে না নিয়েই!
আমি ফিরে যাবো না, নীলা।
কি বলছেন এসব? আপনি পুরনো সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করতে এসেছিলেন। ঠিক যেমন অন্যরা আসে মিটোরি থেকে। তারপর আবার চলেও যায়।
আমি গবেষণা করতে আসি নি।
এইজন্যই কি আপনি কখনো লাইব্রেরিতে যান নি?
তুমি ঠিক বলেছো!
তাহলে কেন এসেছেন?
নীলা, আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করছি তুমি একজন মানুষ।
তাতে কিছু আসে যায় না। মানুষের থেকে রোবট অনেক বেশি কর্মক্ষম। এখানে মানুষের কোন মুল্য নেই।
এখন আমি নিশ্চিত তুমি মানুষ।
আপনি কেন এসেছেন এখানে? বাকি মানুষদেরও হত্যা করতে? এখানে মাত্র ২০ জন মানুষ আছে। ছোটবেলায় মিটোরি থেকে এখানে আসার পর আমি একজন মানুষও দেখিনি। তারা কোথায় জানি না। আদও আছে কিনা তাও জানি না।
রিহান একটু হাসল। এই মেয়েটা মুখ কঠিন করে রেখেছে। যে মানুষের জন্য তার এতো দরদ তাদের সাথে ওর দেখাও হয়নি। মানুষ খুব অদ্ভুত! সে বলল,
আমি হত্যা করতে আসিনি। বরং নিজেই সাজাপ্রাপ্ত।
মানে?
মানে আমি নির্বাসিত। বাকি জীবনটা পৃথিবীতে কাটাতে হবে। মিটোরিতে ফিরে যাবার অনুমতি নেই আমার।
রিহান লক্ষ্য করলো মেয়েটির মুখে কাঠিন্য নেই আর। অন্যের বিপদে বোধহয় সে কাঠিন্য ধরে রাখতে পারে না। নীলা বলল,
আপনি কেন নির্বাসিত? এতো বিখ্যাত লেখক আপনি! পৃথিবী থেকেও আপনার নাম শোনা যায়। আপনি কি করেছেন?
মিটোরির বিচারব্যবস্থা বলে কিছু নেই। আমার লেখায় সে বিষয়ে ইঙ্গিত ছিলো। এটা বুঝতে পেরে মিটোরির প্রধান বিচারপতি আমাকে নির্বাসন দিয়েছে। তবে সবাই জানে আমি এখানে গবেষণা করতে এসেছি। আমার সম্মানের জন্য সত্যিটা লুকানো হয়েছে।
কিন্তু রোবট্রা যদি জেনে যায়! স্পেস শাটল চলে গেলেই ওরা কি ভাববে কে জানে! আপনার আতিথেয়তা হয়ত তখনই শেষ। আর সম্মান দিবে না আপনাকে।
রিহান বলল, তাহলে আর কি! বাকি জীবনটা সাধারণভাবেই কাটাবো। ভয়ে ছিলাম মানুষের দেখা হয়ত আর পাবোনা। কিন্তু দেখো! তোমাকে পেয়ে গেলাম! আমি কৃতজ্ঞ থাকবো তোমার কাছে।
নীলার অনুভূতিও একই রকম। এতদিন রোবটের মাঝেই থেকেছে সে। রিহানের আসার খবর পেয়ে রক্তমাংসের মানুষ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলো।

৪।
শ্রদ্ধেয় বিচারপতি, আপনি রিহানকে কেন বেঁচে থাকতে দিলেন? এমন অপরাধে মৃত্যুদন্ডই স্বাভাবিক।
তোমার কি মনে হয়- আমি অবিচার করেছি?
না, শ্রদ্ধেয় বিচারপতি। নিতান্তই কৌতুহল থেকে জিজ্ঞেস করছি।
রিহান যা লিখেছে তার সবই সত্যি। তবে আমি মানুষকে শিক্ষা দিতে চাই। তারা পৃথিবীর সাথে অন্যায় করেছে এখন মিটোরির সাথেও করছে। মিটোরিতে যে অনিয়ম চলছে তা চলতে থাকুক। যুদ্ধ শুরু হবে অচিরেই। তখন সবাই ধ্বংস হবে। রিহান নিরালায় পৃথিবীতে লিখতে থাকুক এসব গল্প-কবিতা। যাতে বেঁচে যাওয়া অল্পসংখ্যক মানুষ শিক্ষা নিতে পারে। আর কোন অবিচার না করে।
আপনি তাই চান- যুদ্ধ শুরু হোক? মানুষকে কি তার আগেই শিক্ষা দেওয়া যায় না যাতে সবাই শুধরে নিতে পারে?
সবকিছুর জন্যই একটা সময় থাকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মাইদুল সরকার অতীত থেকে শিক্ষা না নিলে যা হবার তাই হয়। +++
Dipok Kumar Bhadra খুব সুন্দর লিখেছেন।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

একজন নির্বাসিত লেখকের গল্প বলতে চেয়েছি। নতুন গ্রহ, নতুন পরিবেশ। কিন্তু সে কি কখনও মানুষের দেখা পাবে? আর নির্বাসনের কারণটাই বা কি?

২৫ এপ্রিল - ২০২০ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪